ঈশ্বর ও মানুষ

অষ্টম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - খ্রিষ্টান ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা - | NCTB BOOK
1

তৃতীয় অধ্যায়

ঈশ্বর ও মানুষ

আদিপুস্তকে বর্ণিত সৃষ্টি কাহিনীতে আমরা দেখতে পাই ঈশ্বর একের পর এক সবকিছু সৃষ্টি করলেন। প্রতি দিনই তিনি তাঁর সৃষ্টির প্রতি তাকিয়ে দেখলেন তা উত্তম হয়েছে। ষষ্ঠ দিনে তিনি। বললেন,“এবার মানুষকে গড়ে তোলা যাক আমাদের প্রতিমূর্তিতে, আমাদেরই সাদৃশ্যে।" তিনি তাই করলেন। এভাবে ঈশ্বরের আপন প্রতিমূর্তিতে মানুষ সৃষ্ট হলো। সকল কিছুর উপর প্রভুত্ব করার দায়িত্ব তিনি মানুষকে দিলেন ।

ঈশ্বর ও মানুষের মিলন

এই অধ্যায় পাঠ শেষে আমরা

• মানুষ ঈশ্বরের সেবাকর্মী- এই ধারণাটি বিশ্লেষণ করতে পারব:

• ঈশ্বরের সাথে মানুষের এবং মানুষের সাথে মানুষের সুসম্পর্ক বজায় রাখার প্রয়োজনীয়তা ও সম্পর্কের ফল বর্ণনা করতে পারব;

• ঈশ্বরের সাথে মানুষের এবং মানুষের সাথে মানুষের সুসম্পর্ক বজায় রাখার উপায়সমূহ বর্ণনা করতে পারব;

• মানুষের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখার মাধ্যমে ঈশ্বরের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখব

 

 

 

ঈশ্বর ও মানুষ

পাঠ ১ : ঈশ্বরের সৃষ্টির সেবাকর্মী মানুষ

মানুষ ঈশ্বরের শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি ও ভালোবাসার প্রকাশ। মানুষ সৃষ্টির পিছনে ঈশ্বরের একটি মহৎ পরিকল্পনা ছিল। মানুষের সাথে তিনি গড়ে তুলতে চেয়েছেন নিবিড় সম্পর্ক। তার মধ্যে তিনি দেখতে চেয়েছেন তাঁর আত্মপ্রকাশ। মানুষকে তিনি দিয়েছেন শ্রেষ্ঠত্ব এবং সৃষ্টির উপর প্রভুত্ব করার ক্ষমতা। মানুষ সৃষ্টির পর ঈশ্বর মানুষকে আশীর্বাদ করে বলেছিলেন, “ফলবান হও, বংশবৃদ্ধি কর। তোমরা পৃথিবীকে ভরিয়ে তোল, তাকে বশীভূত কর। সমুদ্রের মাছ, আকাশের পাখি এবং পৃথিবীর বুকে চলাফেরা করে যত প্রাণী, তাদের সকলের উপর তোমরা প্রভুত্ব কর" (আদি: ১:২৮)। এই আশিস-বাণীর মধ্যেই মানুষ সৃষ্টির উদ্দেশ্য সুস্পষ্ট। আমরা আগে জেনেছি যে, ঈশ্বরের প্রশংসা ও গৌরব কীর্তন করার জন্য তিনি আমাদের সৃষ্টি করেছেন। কিন্তু শুধু তাই নয়। তিনি মানুষের উপর দিয়েছেন সৃষ্টির সমস্ত দায়িত্বভার। মানুষ ঈশ্বরের সেবাকর্মী। আমরা এবার জানব মানুষ কেন ও কীভাবে ঈশ্বরের সেবাকর্মী হতে পারে। অর্থাৎ সেবাকর্মী হওয়ার অর্থ কী

১। ঈশ্বরের সেবাকর্মী হওয়া মানুষের জন্য একটি আহ্বান এই সেবা কর্মের মধ্য দিয়েই তার নিজের মর্যাদা প্রকাশিত ও বিকশিত হয়। যুগে যুগে তাই মানুষকে তিনি ডাকেন। তাই আমরা বলতে পারি সেবাকর্মী হয়ে উঠার অর্থ হলো ঈশ্বরের প্রতি বাধ্য থাকা, তাঁর আহ্বানে সাড়া দেওয়া বালক সামুয়েলকে ঈশ্বর যখন ডেকেছিলেন তখন এলি তাঁকে শিখিয়ে দিয়েছিলেন, এভাবে উত্তর দিতে "বলুন-প্রভু আপনার দাস শুনছে।" যুগে যুগে ঈশ্বরের কাজে অংশগ্রহণ করার জন্য তিনি বিভিন্ন মানুষকে বা প্রবক্তাদের ডেকেছেন, যাঁরা তাঁর প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেছেন, তারা ঈশ্বরের পক্ষে কথা বলেছেন। আজও তিনি আমাদের এভাবে ডাকেন তাঁর কাজের জন্য ।

২। সেবাকর্মী হওয়ার অর্থ ঈশ্বরের নামে যত্ন নেওয়া বা পরিচালনা করা। ঈশ্বরকে আমরা দেখতে পাই না। কিন্তু মানুষকে তিনি সৃষ্টি করেছেন নিজের প্রতিমূর্তিতে। মানুষকে তিনি দিয়েছেন। অসাধারণ গুণ, বুদ্ধি ও ক্ষমতা। ঈশ্বরের দেওয়া এই সকল গুণ ও বুদ্ধি ব্যবহার করে মানুষ তার দায়িত্ব কর্তব্য পালন করছে।

৩। ঈশ্বর ভালবেসে মানুষকে সৃষ্টি করেছেন এবং ভালোবাসার ক্ষমতা ও আদেশ দিয়েছেন। মানুষের মধ্য দিয়ে, মানুষের পারস্পরিক সেবা ও ভালোবাসার মধ্যে ঈশ্বর নিজেকে ও তাঁর ভালোবাসাকে প্রকাশ করতে চান। তাই আমরা বলতে পারি নিজের কিছু কিছু গুণ ঈশ্বর মানুষের মধ্যে দিয়েছেন। মানুষ ঈশ্বর প্রদত্ত সেই গুণ ব্যবহার করে ঈশ্বরের ও সৃষ্টির সেবা করে।

৪। ঈশ্বর মানুষ সৃষ্টি করেছেন। তিনি জীবনদাতা, পালনকর্তা ও রক্ষাকর্তা। তিনি মানুষকে সুযোগ দেন তাঁর সৃষ্টির যত্ন নেওয়া ও প্রতিপালনের কাজে অংশগ্রহণ করার। উদাহরণ স্বরূপ ডাক্তারগণ মানুষের নানারকম জটিল রোগের চিকিৎসা করে থাকেন। ঈশ্বর হলেন আসল নিরাময়কারী ডাক্তার উপলক্ষ। ঈশ্বরের দেওয়া বুদ্ধি ও শক্তি বলেই ডাক্তার তার দায়িত্ব খ্রিষ্টধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা

পালন করেন। পিতামাতার মধ্য দিয়ে তিনি পৃথিবীতে নতুন জীবন দান করেন। এভাবে তাঁরা হয়ে উঠছেন ঈশ্বরের সেবাকর্মী।

৫। যীশু নিজেই বলেছেন আমি তোমাদের আর দাস বলছি না বরং বন্ধু বলছি। বন্ধুর জন্য প্রাণ দেবার চেয়ে বড় ভালোবাসা আর নাই। এর থেকে আমরা সহজেই বুঝতে পারি আমরা ঈশ্বরের বন্ধু হতে আহূত। আর বন্ধু হিসাবেই তিনি সবকিছু আমাদের সাথে সহভাগিতা করেন। পুরাতন নিয়মে আব্রাহামকে বলা হয় “ঈশ্বরের বন্ধু” ।

৬। আপন প্রতিমূর্তিতে মানুষ সৃষ্টি করে তিনি মানুষের জন্য সবচেয়ে বড় দান অর্থাৎ স্বাধীনতা দিয়েছেন। মানুষ তার স্বাধীনতা ব্যবহার করে ঈশ্বরের কাজে অংশ গ্রহণ করতে পারে। নিজের জীবন দিয়ে স্বাধীনভাবে ঈশ্বরের ইচ্ছা পালনের মাধ্যমেই মানুষ সবচেয়ে বড় সেবাকর্মী হয়ে উঠে।

| কাজ তুমি কীভাবে নিজেকে ঈশ্বরের সেবাকর্মী হিসেবে দেখ, তার তিনটি দিক দলে সহভাগিতা কর

পাঠ ২ : এদেন উদ্যানে ঈশ্বর ও মানুষের সুসম্পর্ক

ঈশ্বর আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টি করলেন। সে সময় পৃথিবীর জমিতে কোনো গাছপালা বা ঝোপঝাড় কিছুই ছিল না। তখন ঈশ্বর পৃথিবীর উপর বৃষ্টি নামিয়ে আনলেন। মাটি ভিজিয়ে রাখার জন্য একটি জলধারা নামিয়ে আনলেন। কিন্তু জমিতে চাষাবাদ করার জন্য কোনো মানুষ তখনো ছিল না । ঈশ্বর মাটি থেকে একমুঠো ধুলো তুলে নিলেন। তা থেকে তিনি গড়ে তুললেন একজন মানুষ। তার নাকে ফুঁ দিয়ে তার মধ্যে প্রাণবায়ু অর্থাৎ নিঃশ্বাস প্রবেশ করিয়ে দিলেন। তখন মানুষ হয়ে উঠল এক সজীব প্রাণী । তিনি তার নাম রাখলেন আদম অর্থাৎ মানুষ।

মানুষকে সৃষ্টি করে ঈশ্বর তাঁদের পরম সুন্দর ও সুখের স্থানে রাখলেন। এই জায়গাটির নাম হলো এদেন বাগান। মানুষের আনন্দ ও সুখের জন্য তিনি সব কিছু তৈরি করলেন। তাঁর সমস্ত কিছু ভোগ করার অধিকারও দিলেন। এখানকার সব গাছপালা খুবই চমৎকার। ফলগুলোও ছিল খুব সুমিষ্ট। বাগানের মাঝখানে তখন বেড়ে উঠল ভালোমন্দ জ্ঞানের বৃক্ষ।

মানুষকে ঈশ্বর এই বাগানের অধিকারী করে তুললেন। তিনি চাইলেন মানুষ যেন এদেন বাগানের দেখাশুনা করে। তিনি তাঁকে ভালোমন্দ জ্ঞানের যে গাছটি রয়েছে তার ফল খেতে বারণ করেছিলেন। তারপর একসময় ঈশ্বর দেখলেন আদম বড় একাকী। ঈশ্বর বললেন: “মানুষের একা থাকা ভালো নয়। তাই আমি এখন তার জন্য এমনই একজনকে গড়ে তুলব, যে তাকে সাহায্য করবে, তার ঈশ্বর ও মানুষ

যোগ্য সঙ্গী হবে।" তারপর প্রভু ঈশ্বর মানুষের উপর নামিয়ে আনলেন এক তন্দ্রার আবেশ। একসময় সে ঘুমিয়ে পড়ল। তার বুক থেকে একটি পাঁজর খুলে নিয়ে তিনি গড়ে তুললেন একজন নারীকে। সে হয়ে উঠল মানুষের যোগ্য সঙ্গী। মানুষ অর্থাৎ আদম বুঝতে পারলেন যে তাঁর সঙ্গে হবার দেহমনের আত্মীয়তা রয়েছে। তারা দুইজনেই সমানভাবে মানব সত্তার অধিকারী। তারা দুইজনেই বুঝতে পারলেন যে তাঁরা সমানভাবে একে অন্যের পরিপূরক কিন্তু একইভাবে নয়। আর তাই তারা মিলিত জীবনের দিকে প্রবল আকর্ষণ বোধ করেন। কী অপার সুখে ঈশ্বরের নিবিড় সান্নিধ্যে ও পরস্পরের প্রতি মিলনের আকাঙ্ক্ষায় মানুষ স্বর্গে বাস করছিল। তাঁরা উলঙ্গ ছিলেন কিন্তু তাদের মধ্যে ছিল না কোনো লজ্জাবোধ পরস্পরের সাথে এরূপ সম্পর্কের মধ্য দিয়েই মানুষ ঈশ্বরের সাথে সম্পর্কযুক্ত ছিল।

কাজ : এদেন বাগানে ঈশ্বরের সাথে আদম ও হবার সম্পর্ক নিজের ভাষায় বর্ণনা কর

পাঠ ৩ : অবাধ্যতার পাপ

এদেন বাগানে মানুষ ঈশ্বরের সঙ্গে মহাসুখে বাস করছিল। ঈশ্বরের সাথে মানুষের এই সুসম্পর্ক শয়তান কোনোভাবেই সহ্য করতে পারছিল না। এই সম্পর্ক নষ্ট করার জন্য শয়তান সুযোগ খুঁজতে লাগল। স্থলভূমিতে সবচেয়ে চালাক প্রাণী হলো সাপ। শয়তান একদিন সাপের বেশে এসে নারীকে বলল, ঈশ্বর কি সত্যিই এই কথা বলেছেন: এই বাগানের কোনো গাছের ফল তুমি খাবে না?” নারী সাপকে উত্তর দিল : আমরা এই বাগানের যে কোনো গাছের ফল খেতে পারি; শুধুমাত্র যে গাছটি বাগানের মাঝখানে রয়েছে, সেটির সম্পর্কে ঈশ্বর বলেছেন, “তোমরা তা খাবেও না ছোঁবেও না। যদি তা খাও তাহলে তোমরা মরবেই মরবে।"

তখন সাপ নারীকে বলল : কক্ষনো না, তোমরা মরবেই না। ঈশ্বর তো ভালোভাবেই জানেন, যেদিন তোমরা ওই ফল খাবে, সেদিন তোমাদের চোখ যেন খুলেই যাবে, তোমরা দেবতার মতোই হয়ে উঠবে ভালোমন্দ জানতেই পারবে তোমরা! তখন নারী দেখলেন, ওই গাছের ফল খাদ্য হিসেবে ভালোই আর তা দেখতেও ভারি সুন্দর। তাছাড়া বোধবুদ্ধি পাবার ব্যাপারে তার তো একটা আকর্ষণও রয়েছে। তাই তিনি গাছ থেকে ফল পেড়ে নিজে খেলেন ও তার স্বামীকেও দিলেন তখন তাদের দুইজনেরই চোখ খুলে গেল। তারা বুঝতে পারলেন তাঁরা উলঙ্গ। আথ্রীর গাছের পাতা একসঙ্গে জুড়ে নিয়ে তারা নিজেদের জন্য আবরণ তৈরি করলেন। বুঝতে পারলেন, তারা ঈশ্বরের অবাধ্য হয়েছেন এবং ঈশ্বরের বিরুদ্ধে পাপ করেছেন।

ঈশ্বরের পায়ের শব্দ শুনে তারা ভয় পেলেন। তারা ঈশ্বরকে দেখে লুকিয়ে পড়লেন। তাদের মনের নির্মল নিষ্পাপ পবিত্রতা নষ্ট হয়ে গেল। এতদিন ঈশ্বরের সাথে তাঁদের অতি সহজ, স্বাভাবিক ও সুখময় সম্পর্ক ছিল। এখন কিন্তু তারা ঈশ্বরের সান্নিধ্য আর সহ্য করতেই পারছিলেন না। ঈশ্বরকে তারা ভয় পেতে শুরু করলেন । তাঁদের মধ্যে তীব্র অপরাধ বোধ শুরু হলো ও মানুষের পতন হলো। ঈশ্বরের সাথে খ্রিষ্টধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা

মানুষের সুসম্পর্ক নষ্ট হলো। আদম তাঁর পাপের জন্য হবাকে দোষারোপ করলেন আর হবা দোষারোপ করলেন সাপকে ঈশ্বর সাপকে ও নরনারীকে শাস্তি দিলেন মানুষ স্বর্গ থেকে বিতাড়িত হয়ে পৃথিবীতে এলো। স্বর্গসুখ ও স্বর্গের দরজা মানুষের জন্য বন্ধ হয়ে গেল ।

কাজ : আদি পুস্তক ৩ অধ্যায় পাঠ করে মানুষের পতনের কাহিনীটি অভিনয় করে দেখাও।

পাঠ ৪ : সম্পর্ক পুনঃস্থাপন

ঈশ্বর মানুষকে এত ভালোবাসলেও মানুষ বারংবার তাঁর প্রতি অবিশ্বস্ত হয়েছে। পৃথিবীতে মানুষ পাপের জীবন যাপন করতে লাগল। কিন্তু তিনি মানুষকে রক্ষা করতে চান। মানুষের পাপের কারণে নষ্ট হয়ে যাওয়া সম্পর্ক পুনরায় স্থাপন করার জন্য তিনি বারংবার উদ্যোগ নিলেন মানব ইতিহাসে তিনি প্রবেশ করলেন। পুনরায় সম্পর্ক স্থাপনের জন্য ইতিহাসের বিভিন্ন সময়ে ঈশ্বর যে উদ্যোগ নিয়েছেন এবার আমরা সে বিষয়গুলো জানব।

আমরা আগেই জেনেছি যে মানুষ অবাধ্য হয়ে পাপ করলেও ঈশ্বর মানুষকে একেবারে ত্যাগ করেননি।

তাকে তিনি পাপ থেকে রক্ষা করার প্রতিশ্রুতি দিলেন। তিনি তাঁর পুত্রকে পাঠাবার কথা বললেন। তাঁর পুত্রকে মানুষ করে পৃথিবীতে পাঠাবার জন্য তিনি একটি জাতিকে মনোনীত করলেন ঈশ্বরের মনোনীত জাতি হলো ইসায়েল জাতি। ইস্রায়েল জাতির বিভিন্ন ব্যক্তি, রাজা ও প্রবক্তাকে তিনি বেছে নিলেন তাঁর প্রতিশ্রুতি ও পরিকল্পনা পূর্ণ করার জন্য

আব্রাহামকে তিনি করলেন মনোনীত জাতির পিতা, বিশ্বাসীদের পিতা। তিনি তাঁর সঙ্গে একটি

সন্ধি স্থাপন করলেন। তিনি বললেন, “আমি এখন আমার ও তোমার মধ্যে একটি সন্ধি স্থাপন করছি:

তোমার বংশধরদের সংখ্যা আমি সুবিপুল করে তুলব।"

পৃথিবী যখন পাপে পূর্ণ হয়ে গিয়েছিল, তখন তিনি জলপ্লাবন দিয়ে পৃথিবী ধ্বংস করেছিলেন কিন্তু তিনি নোয়ার মধ্য দিয়ে মানবজাতির সঙ্গে একটি সন্ধি স্থাপন করেছিলেন। তখন তিনি আকাশে একটি রঙধনু স্থাপন করেছিলেন এই সন্ধির প্রতীক হিসেবে। তিনি প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, মানুষকে তিনি আর এভাবে ধ্বংস করবেন না ।

যোশীকে ঈশ্বর আহ্বান করেছিলেন মিশর দেশের দাসত্ব থেকে ইস্রায়েল জাতিকে যুক্ত করার জন্য। মোশীর নেতৃত্বে ইস্রায়েল জাতি প্রতিশ্রুত দেশের দিকে যাত্রা আরম্ভ করেছিল। মিশর দেশ থেকে কানান দেশে যাত্রাকালে ইস্রায়েল জাতি বিভিন্নভাবে ঈশ্বরের উপস্থিতি উপলব্ধি করেছে। ইস্রায়েল জাতিকে ঈশ্বর বার বার বলেছেন, তোমরা আমার আপন জাতি আর আমি তোমাদের আপন ঈশ্বর

তারপর তিনি রাজা ও প্রবক্তাদের বেছে নিলেন । রাজা দাউদকে তিনি বেছে নিয়েছিলেন। পরে

এই বংশে তাঁর পুত্র জন্ম নিয়েছিলেন। প্রবক্তা ইসাইয়া মুক্তিদাতার আগমন সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী ঈশ্বর ও মানুষ

করেছেন। সম্পর্ক পুনঃস্থাপনের চূড়ান্ত পর্যায় হলো ঈশ্বরপুত্র যীশু খ্রিষ্টের মানব হয়ে পৃথিবীতে জন্মগ্রহণ । রাজা দাউদের বংশধর হয়ে একজন নারীর গর্ভে যীশু মানুষরূপে জন্ম নিলেন মানুষকে পাপ থেকে মুক্ত করতে তিনি ক্রুশ মৃত্যুকে বরণ করে নিলেন। তৃতীয় দিনে পুনরুত্থিত হলেন । মৃত্যুকে জয় করে তিনি শয়তানের কবল থেকে মানুষকে পাপ থেকে রক্ষা করলেন মানুষকে তার হারানো মর্যাদা ফিরিয়ে দিলেন। তিনিই মশীহ। তিনি হলেন প্রতিশ্রুত মুক্তিদাতা। তাঁর মধ্য দিয়েই পূর্ণ হলো ঈশ্বরের প্রতিশ্রুতি ও পরিকল্পনা। ঈশ্বর ও মানুষের নষ্ট হয়ে যাওয়া সম্পর্ক আবার স্থাপিত হলো। যীশু হলেন নতুন আদম। এই সুসম্পর্ক রক্ষার্থে যীশু স্থাপন করলেন মণ্ডলী ও পুণ্য সংস্কারসমূহ দীক্ষাস্নানের মধ্য দিয়ে আমরা আদিপাপের ক্ষমা লাভ করি এবং মণ্ডলীতে প্রবেশ করে ঈশ্বরের সন্তান হয়ে উঠি। পাপস্বীকার সংস্কার গ্রহণ করে আমরা পাপের ক্ষমা লাভ করি এবং ঈশ্বরের কাছে ফিরে যাবার যোগ্য হয়ে উঠি ।

ইতিহাসের প্রভু এইভাবে অসীম ক্ষমা ও ভালোবাসায় মানুষকে রক্ষা করলেন মানুষের অবিশ্বস্ততা সত্ত্বেও তিনি নিজ উদ্যোগে মানুষের সাথে সম্পর্ক রক্ষা করেন ।

পাঠ ৫ : ঈশ্বরের সাথে মানুষের এবং মানুষের সাথে মানুষের সুসম্পর্ক বজায় রাখার উপায়

আমরা সবাই শান্তি চাই, সর্বদা আনন্দে থাকতে চাই। আমরা সঙ্গী চাই, বন্ধু চাই। ঈশ্বর মানুষের মধ্যে এরকমই একটি সহজাত প্রবণতা দিয়েছেন। আমরা সবাই কোনো না কোনোভাবে কারো না কারো সাথে সম্পর্কিত হতে চাই। এমনকি একটি ছোট্ট শিশুও তার মতো আর একজন শিশুকে পেলে খুব খুশি হয়। কেউ আমাদের ভালোবাসলে বা আমরা কাউকে ভালোবাসতে পারলে খুব আনন্দ পাই। ঈশ্বরও আমাদের সাথে সম্পর্ক গড়ার জন্যে প্রথমে উদ্যোগ নিয়েছেন। ঈশ্বরপুত্র যীশু আমাদের সাথে এক হবার জন্যে মানুষরূপে এই পৃথিবীতে এসেছিলেন। কীভাবে সুসম্পর্ক বজায় রাখা যায় এবার আমরা সে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করব।

১। যোগাযোগ সুসম্পর্ক বজায় রাখতে হলে যোগাযোগ রক্ষা করতে হয়। যোগাযোগ নানাভাবে হতে পারে। সরাসরি দেখা সাক্ষাৎ করে, কথা বলে, নানা রকম মাধ্যম ব্যবহার করে- যেমন, চিঠিপত্র, ইমেইল ও ফোন করার মাধ্যমে আমরা যোগাযোগ রক্ষা করে মানুষের সাথে সম্পর্ক বজায় রাখতে পারি।

২। মানবসেবা মানুষ ও ঈশ্বরের সাথে আমরা সবচেয়ে ভালো সম্পর্ক রচনা করতে পারি মানুষের সেবা করে বা মানুষের জন্য কল্যাণকর কিছু করার মাধ্যমে। কারণ যে মানুষকে আমরা চোখে দেখতে পাই তাকে ভালো না বেসে আমরা কখনোই অদৃশ্য ঈশ্বরকে ভালোবাসতে

পারি না। ৩। উপাসনা নিয়মিত ধ্যান, প্রার্থনা, উপাসনায় অংশগ্রহণ, বাইবেল পাঠ এবং সবকিছুতে ঈশ্বরের মঙ্গলময় উপস্থিতি অনুভব করে আমরা ঈশ্বরের সাথে যোগাযোগ রাখতে পারি। ঈশ্বরের সাথে খ্রিষ্টধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা

আমাদের সুসম্পর্ক থাকলে মানুষের সাথেও আমাদের সম্পর্ক ভালো হবে। আবার মানুষের সাথে সুসম্পর্ক থাকলে ঈশ্বরের সাথেও সম্পর্ক ভালো থাকবে ।

৪। আস্থা ও বিশ্বাস : পারস্পরিক আস্থা সুসম্পর্ক রক্ষার একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আমরা যখন কারো উপর আস্থা স্থাপন করি এবং কেউ যখন আমাদের উপর আস্থা রাখে তখন খুব সহজেই আমাদের সম্পর্কের উন্নতি ঘটে। ঈশ্বরের উপর আস্থা ও বিশ্বাস রেখে তাঁর সাথে

আমাদের সম্পর্ক নিবিড় হয় । ৫। সততা : সুসম্পর্কের ভিত্তি হলো সততা। সম্পর্কের আদান প্রদান ও ভাব বিনিময়ে আমরা যখন সৎ থাকি তখন সম্পর্ক সুদৃঢ় হয়। ছলচাতুরী বা মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে কখনো সুসম্পর্ক

স্থাপিত হতে পারে না।

৬। আপন করে নেওয়া আমরা দোষগুণ মিলিয়ে মানুষ। আমরা যখন কাউকে আপন করে নেই এবং কেউ যখন আমাদের আপন করে গ্রহণ করে তখন আমরা খুব আনন্দ পাই। পরস্পরকে গ্রহণীয়তার মধ্য দিয়ে আমরা একে অন্যের আপনজন হয়ে উঠি। মানুষ মনে প্রাণে পরস্পরের আপন হতে চায়। ঈশ্বর সব অবস্থায় আমাদের গ্রহণ করেন বলেই আমরা তাঁর কাছে ফিরে যেতে পারি।

৭। শ্রদ্ধা : পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের মধ্য দিয়ে আমরা সুসম্পর্ক গড়ে তুলি। মতামত প্রকাশের সুযোগ দান, কথায় গুরুত্ব দেওয়া এবং বিভিন্ন অবস্থার সময় পক্ষাবলম্বন করে আমরা একে অন্যের প্রতি শ্রদ্ধা দেখাতে পারি। প্রত্যেক মানুষ ভিন্ন বা আলাদা, একক ও অনন্য। মানুষের এ ভিন্নতার প্রতিও শ্রদ্ধাবোধ সম্পর্ক গঠনে বিশেষ সহায়ক। ঈশ্বর আমাদের সবার স্বাধীন ইচ্ছাকে মর্যাদা দেন

৮। সমঝোতা পরস্পরকে বোঝার মাধ্যমে একে অপরকে গ্রহণ করা, কোনো বিষয় নিয়ে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে আমরা সমঝোতায় আসতে পারি। এতে করে সুসম্পর্ক বজায় থাকে। ঈশ্বর আমাদের সব অবস্থা বোঝেন।

৯। সাহায্য সহযোগিতা: জীবনের বিশেষ অবস্থা ও সময়ে বিশেষ করে দুর্দিনে বা বিপদের সময় সাহায্য সহযোগিতা করলে ও পেলে আমরা শক্তি ও সাহস পাই। আনন্দ ও উৎসবের দিনেও আমরা উপস্থিত হয়ে নিজেরা খুশি হই এবং অন্যদেরও খুশি করি। এতে করেও আমাদের সম্পর্কের অনেক উন্নতি হয়। ঈশ্বর সব অবস্থায় আমাদের সাহায্য সহযোগিতা করেন বলেই আমরা তাঁর সাথে গভীরভাবে সম্পর্কিত।

১০। সাম্য বা সমান মর্যাদা ছোট-বড়, নারী-পুরুষ ও ধনী-গরিব ভেদাভেদ না করে সবাইকে সমান মর্যাদা দান করলেও সম্পর্ক গভীর হয়। ঈশ্বরের চোখে আমরা সবাই সমান । এভাবে মানুষ মানুষকে ভালোবেসে ও সম্পর্ক রক্ষা করে ঈশ্বরের সাথেও সুসম্পর্ক স্থাপন ও তা বজায় রাখতে পারে।

Content added || updated By
Promotion