'উদার' শব্দটির অর্থ হচ্ছে মহান, সজ্জন বা সাধু। উদারতা শব্দটি উদারের ভাব বোঝায়। অর্থাৎ উদারতা হচ্ছে চরিত্রের মহত্ত্ব বা সাধুতা।
যাঁরা সাধু, মহান – তাঁরা সকল মানুষকে সমান মনে করেন। ধনী-নির্ধন, পণ্ডিত-মূর্খ-সবাই তাঁদের কাছে সমান মর্যাদা পায়। সকল ধর্মের সকল সম্প্রদায়ের মানুষ তাঁর কাছে সমান। উদার ব্যক্তির পরিচয় দিতে গিয়ে বলা হয়েছে উদারচরিতানাং তু বসুধৈব কুটুম্বকম্। এ কথার অর্থ হলো, উদারচরিত ব্যক্তিদের কাছে পৃথিবীর সকলেই ইষ্টিকুটুম (আত্মীয়)। কেউ পর নয়। উদারতার পরিচয় পাই কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের 'মানুষ জাতি' কবিতায়, তিনি লিখেছেন:
কালো আর ধলো বাহিরে কেবল
ভিতরে সবার সমান রাঙা।
এই যে, মানুষের মধ্যে ভেদাভেদহীন চেতনা একেই বলে উদারতা। সুতরাং উদারতা একটি নৈতিক গুণ এবং ধর্মের অঙ্গ। উদারতা ব্যক্তির চরিত্রকে উন্নত করে। উদার ব্যক্তি কখনও এটা পেলাম না, ওটা পেলাম না বলে হা-হুতাশ করেন না। তিনি নিজেকে কখনও বঞ্চিত বোধ করেন না। পাওয়াতে নয়, দেওয়াতেই তাঁর আনন্দ। উদারতা মনকে প্রশান্তিতে ভরিয়ে দেয়।
অন্যদিকে ব্যক্তিস্বার্থের চিন্তা আমাদের মনকে সংকীর্ণ করে তোলে। তখন আমরা সমাজের অন্যান্যদের স্বার্থের কথা, সুখের কথা এবং মঙ্গলের কথা ভুলে যাই। তাতে সমাজের উন্নতি ও অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত হয়। সুতরাং সমাজের ক্ষেত্রেও উদারতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
হিন্দুধর্মগ্রন্থসমূহে উদারতার অনেক উপাখ্যান রয়েছে। ঋষি বশিষ্ঠ বারবার বিশ্বামিত্রের প্রতি উদারতা দেখিয়েছেন। দেবতাদের মঙ্গলের জন্য দধীচি মুনির আত্মত্যাগের উদারতা স্বর্ণাক্ষরে লেখা রয়েছে।
আমরাও আমাদের আচরণে উদারতার পরিচয় দেব। অপরের সুখে সুখী হব, অপরের দুঃখে দুঃখী হব। তাহলে আমার ব্যক্তিচরিত্র উন্নত হবে। সমাজেরও মঙ্গল হবে।
একক কাজ: সমাজের দুজন উদার ব্যক্তি চিহ্নিত করে তাঁদের গুণগুলো লেখ। |