কঠিন পদার্থের প্রসারণ

নবম-দশম শ্রেণি (মাধ্যমিক ২০২৫) - পদার্থবিজ্ঞান বস্তুর ওপর তাপের প্রভাব | - | NCTB BOOK
284
284

তাপ দিলে প্রায় সব পদার্থের আয়তনই একটু বেড়ে যায়। তাপ তাপমাত্রা এই বিষয়গুলো যদি আমরা আমাদের আণবিক মডেল দিয়ে ব্যাখ্যা করি তাহলে এর কারণটা বোঝা কঠিন নয়। একটা কঠিন পদার্থকে আমরা অনেকগুলো অণু হিসেবে কল্পনা করতে পারি। তাদের ভেতর যে আণবিক বল সেটাকে আমরা স্প্রিংয়ের সাথে তুলনা করতে পারি। কঠিন পদার্থে অণুগুলো কীভাবে থাকে সেটা দেখানোর জন্য আমরা অণুগুলোর মাঝে একটা স্প্রিং কল্পনা করেছি । কঠিন পদার্থটিকে উত্তপ্ত করলে অণুগুলো কাঁপতে থাকবে। তাপমাত্রা যত বেশি হবে অণুগুলো তত বেশি কাঁপবে। সত্যিকারের কঠিন পদার্থের প্রকৃতি ব্যাখ্যা করতে হলে আমাদের এই স্প্রিং মডেলটাকে একটুখানি উন্নত করতে হবে। স্প্রিংয়ের বেলায় আমরা দেখেছি একটা স্প্রিংকে কোনো নির্দিষ্ট দূরত্বে প্রসারিত করলে সেটি যে পরিমাণ বলে টানতে থাকে সেই একই দূরত্বে সংকুচিত করলে এটি ঠিক একই বলে ঠেলতে থাকে। কঠিন পদার্থের অণুগুলোর জন্য এটি পুরোপুরি সত্যি নয়। অণুগুলোকে একটি বেশি দূরত্বে সরিয়ে নিলে এটা যে পরিমাণ বলে টানতে থাকে সেই একই দূরত্বে কাছাকাছি আনলে অনেক বেশি বলে ঠেলতে থাকে। অর্থাৎ স্প্রিংটি যেন একটি বিশেষ ধরনের স্প্রিং। এটা প্রসারিত করতে কম বল প্রয়োগ করতে হয় কিন্তু সংকুচিত করতে বেশি বল প্রয়োগ করতে হয়। 

এখন তুমি কল্পনা করে নাও একটি নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় থাকার কারণে অণুগুলো কাঁপছে। বিশেষ ধরনের স্প্রিং হওয়ার কারণে কাঁপার সময় অপুগুলো  কাছাকাছি যায় কম কিন্তু দূরে সরে যায় বেশি। এবারে কঠিন পদার্থটিকে আরো উত্তপ্ত করা হলো, অণুগুলো আরো বেশি কাঁপতে থাকবে এবং তোমরা বুঝতেই পারছ অণুগুলো এই বিশেষ ধরনের স্প্রিংয়ের জন্য যেহেতু বেশি কাছে যেতে পারে না কিন্তু সহজেই বেশি দূরে যেতে পারে তাই অণুগুলো একে অন্যের থেকে একটু দূরে সরে নতুন একটা সাম্য অবস্থা তৈরি করবে। সব অণু যখন একে অন্য থেকে দূরে সরে যাবে তখন আমাদের কাছে পুরো কঠিন বস্তুটাই একটু প্রসারিত হয়ে গেছে বলে মনে হবে। 

তাপ প্রয়োগ করলে কঠিন কস্তুর দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও উচ্চতা তিন দিকেই সমানভাবে প্রসারিত হয়। পদার্থের এই প্রসারণকে বিশ্লেষণ করার জন্য দৈর্ঘ্য, ক্ষেত্রফল আর আয়তন প্রসারণ সহগ নামে তিনটি রাশি তৈরি করা হয়েছে। 

T1T1 তাপমাত্রার কোনো বস্তুর দৈর্ঘ্য যদি হয় এবং তাপমাত্রা বৃদ্ধি করে সেটি T2 করার পর যদি দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি পেয়ে সেটি L2 হয় তাহলে দৈর্ঘ্য প্রসারণ সহগ α হচ্ছে: 

                                              α=(L2-L1)/L1T2-T1

কাজেই 

                                           L2=L1+αL1(T2-T1)

একইভাবে T1 তাপমাত্রায় কোনো বস্তুর ক্ষেত্রফল যদি A1 হয় এবং ভাপমাত্রা বৃদ্ধি করে T2 করার পর ক্ষেত্রফলও যদি বেড়ে A2 হয় তাহলে ক্ষেত্রফল প্রসারণ সহগ β হচ্ছে: 

                                                  β=(A2-A1)/A1T2-T1

কাজেই 

                                                 A2=A1+βA1(T2-T1)

ঠিক একইভাবে T1 তাপমাত্রায় যদি আয়তন V1হয় এবং তাপমাত্রা বৃদ্ধি করে T2 করার পর যদি আয়তন বেড়ে V2 হয় তাহলে আয়তন প্রসারণ সহগ γ হচ্ছে: 

                                               γ=(V2-V1)/V1T2-T1

কাজেই 

 

                                           V2=V1+γV1(T2-T1)

তোমরা দেখতেই পাচ্ছ α,β এবং𝛾 তিনটি রাশির এককই হচ্ছে K-1 

মাত্রা [α] = [β] = [γ]=T-1

 

  কঠিন পদার্থের প্রসারণ সহগের মান আসলে খুবই কম। সে কারণে αβ এবং γ এই তিনটি ভিন্ন ভিন্ন সহগের কিন্তু প্রয়োজন ছিল না। আমরা কাজ চালানোর জন্য শুধু দৈর্ঘ্য প্রসারণ সহগটি ব্যাখ্যা করে নিলেই পারতাম। যেমন ধরা যাক ক্ষেত্রফল প্রসারণের ব্যাপারটি। আমরা দেখেছি: 

                                           A2=A1+βA1(T2-T1)

কিন্তু ক্ষেত্রফল A1 আসলে দৈর্ঘ্য এবং প্রস্থের গুণফল যদি এবং আমরা বর্গাকৃতির ক্ষেত্রফল ধরে নিই যার বাহুর দৈর্ঘ্য L1 তাহলে তাপমাত্রা বাড়ালে তার ক্ষেত্রফল হবে 

                                          

কিংবা 

                                           A2=L21+2αL21(T2-T1)+α2A1(T2-T1)2

কিন্তু 

                                                    A1=L21

কাজেই 

                                        A2=A1+2αA1(T2-T1)+α2A1(T2-T1)2

আমরা দেখেছি . এর মান খুবই ছোট, কাজেই α2 এর মান আরও ছোট, সত্যি কথা বলতে কি এটি এত ছোট যে উপরের সমীকরণে α2 সহ পুরো অংশটুকু আমরা যদি পুরোপুরি বাদ দিই আমাদের বিশ্লেষণ বা হিসাবে এমন কিছু ক্ষতি বৃদ্ধি হবে না। তাই আমরা লিখতে পারি: 

                                             A2=A1+2αA1(T2-T1)

কিন্তু আমরা জানি 

                                             A2=A1+βA1(T2-T1)

কাজেই নিশ্চয়ই:

                                        β=2α

ঠিক একইভাবে আমরা L1 দৈর্ঘ্য, প্রস্থ, উচ্চতা নিয়ে একটা কিউব কল্পনা করতে পারি T1 তাপমাত্রায় যার আয়তন V1 এবং তাপমাত্রা বাড়িয়ে T2 করার পর যার আয়তন হয়েছে V2 কাজেই 

                                  

একই যুক্তিতে এখানেও যদি α2 এবং α3 সহ অংশগুলোকে বাদ দিই আমাদের বিশ্লেষণ বা হিসাবের এমন কোনো ক্ষতি বৃদ্ধি হবে না। কাজেই শুধু প্রথম দুটি অংশ থাকবে অর্থাৎ 

                                      V2=L31+3αL31(T2-T1)

কিন্তু আমরা জানি 

                                             V2=L31

অর্থাৎ 

                                       V2=V1+3αV1(T2-T1)

কাজেই 

                                    V2=V1+γV1(T2-T1)

কাজেই নিশ্চয়ই: 

                                         γ=3α

বাস্তব জীবনে আমাদের কঠিন পদার্থের প্রসারণের বিষয়টা সব সময়ই মনে রাখতে হয়। তোমরা নিশ্চয়ই রেললাইনের মাঝে ফাঁকাটি দেখেছ। তাপমাত্রার প্রসারণকে মনে রেখে এটা করা হয়েছে। প্রসারণের এই সুযোগটি না দিলে উত্তপ্ত দিনে রেললাইন আঁকাবাঁকা হয়ে যেতে পারত। বেশি মিষ্টি খেয়ে এবং নিয়মিত দাঁত ব্রাশ না করে তোমাদের যাদের দাঁতে কেভিটি হয়েছে তারা যখন ডেন্টিস্টের কাছে গিয়েছ তারা হয়তো লক্ষ করেছ একটা বিশেষ পদার্থ দিয়ে দাঁতের গর্তটি বুজে দেওয়া হয়েছে। এই পদার্থটির প্রসারণ সহগ অনেক যত্ন করে দাঁতের প্রসারণ সহগের সমান করা হয়েছে। যদি প্রসারণ সহগ দাঁত থেকে কম হতো তাহলে গরম কিছু খাওয়ার সময় এটা দাঁতের সমান প্রসারিত না হয়ে খুলে আসত। আবার প্রসারণ সহগ বেশি হলে ঠাণ্ডা কিছু খাওয়ার সময় বেশি ছোট হয়ে দাঁত থেকে খুলে আসত। পদার্থবিজ্ঞান না পড়েও অনেক সাধারণ মানুষও তাপমাত্রায় প্রসারণের বিষয়টা জানে। তোমরা লক্ষ করে দেখবে কোনো কৌটার মুখ আটকে গেলে সেটাতে গরম পানি ঢালা হয়। যেন এটা প্রসারিত হয়ে সহজে খুলে আসে। 

 

Content added By
Content updated By
টপ রেটেড অ্যাপ

স্যাট অ্যাকাডেমী অ্যাপ

আমাদের অল-ইন-ওয়ান মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে সীমাহীন শেখার সুযোগ উপভোগ করুন।

ভিডিও
লাইভ ক্লাস
এক্সাম
ডাউনলোড করুন
Promotion