আমাদের চারপাশে ছড়িয়ে আছে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ। যাদের কাজের মাঝেই লুকিয়ে আছে শিল্প। আমাদের প্রায় সকলের বাড়িতে ব্যবহার হয় বাঁশ ও বেতের তৈরি নানা সরঞ্জাম ও আসবাবপত্র। মাটি দিয়ে তৈরি ঘর সাজানোর সামগ্রী ও তৈজসপত্র কম বেশি আমরা সকলের ব্যবহার করি। এসো জেনে নেই এমন কিছু কাজের কথা যার মাঝে শিল্প লুকিয়ে আছে-
মৃৎশিল্প
আমাদের দেশের সবচেয়ে প্রাচীন শিল্পের মধ্যে একটি হচ্ছে মৃৎশিল্প। মাটির তৈরি শিল্পকর্মকে আমরা বলি মৃৎশিল্প। কারণ এ শিল্পের প্রধান উপকরণ হলো মাটি। তবে সব মাটি দিয়ে যে এ কাজ হয় তা নয়। এ কাজে পরিষ্কার এঁটেল মাটির প্রয়োজন হয়। যারা মাটি দিয়ে বিভিন্ন জিনিসপত্র তৈরি করেন তাদেরকে কুম্ভকার বা চলিত বাংলায় কুমার বলা হয়। মাটির তৈরি কলসি, ফুলের টব, সরা, বাসন, সাজের হাঁড়ি, মাটির ব্যাংক, শিশুদের বিভিন্ন খেলনাসমগ্রী, নানা ধরনের তৈজসপত্র তৈরি করে কুমারেরা। মাটির তৈরি রকমারি তৈজসপত্র, ঘর সাজানোর জিনিস, খেলনাসমগ্রী ইত্যাদির আজ প্রচুর চাহিদা লক্ষণীয়। তাছাড়া মেয়েদের বিভিন্ন মাটির তৈরি গয়না সহজেই চোখে পড়ে দেশের মেলাগুলোতে ও বিভিন্ন দোকানে। মৃৎশিল্প আমাদের ঐতিহ্যের অংশ।
তাঁতশিল্প
বাংলাদেশের তাঁতশিল্প ও তাঁতিরা আমাদের ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক। এই শিল্পের সাথে জড়িয়ে আছে এদেশের সংস্কৃতি। আদিকাল থেকে ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে চলে আসা আমাদের তাঁতশিল্প দেশে ও বিদেশে সমভাবে সমাদৃত। এই অঞ্চলে উৎপাদিত ফুটিকার্পাস-এর কারণে একসময় হাতে কাটা সূক্ষ্ম সুতা হতো। সেই সুতা দিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে হস্তচালিত তাঁতের কাপড় বোনা হতো। বাংলার জগদ্বিখ্যাত মসলিন সারা বিশ্বে বাংলার গৌরব বৃদ্ধি করেছিল। এখনও দেশের তাঁতশিল্পীদের তৈরি নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ের ঐতিহ্যবাহী জামদানি, রাজশাহীর রেশম বা সিল্ক, টাঙ্গাইলের শাড়ি, কুমিল্লার খাদি বা খদ্দর, সিরাজগঞ্জের লুঙ্গি ও গামছা, ঢাকার মিরপুরের বেনারসি, সিলেট ও মৌলভীবাজারের মণিপুরি তাঁত ও বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রামের তাঁতের কাপড়ের রয়েছে বিশ্বব্যাপী চাহিদা ও কদর।
বাঁশ-বেতশিল্প
বাংলাদেশের যে কয়েকটি প্রাকৃতিক উপাদান লোকজীবনের সঙ্গে মিশে আছে, বাঁশ-বেত তাদের অন্যতম। বাংলাদেশের জনজীবনের খুব কম দিকই আছে যেখানে বাঁশ ও বেতের তৈরি সামগ্রী ব্যবহৃত হয় না। বাঁশ ও বেতের তৈরি কুলা, চালুন, খাঁচা, মই, চাটাই, ধানের গোলা, ঝুড়ি, মোড়া, মাছ ধরার চাঁই, মাথাল, সোফা, র্যাকসহ বিভিন্ন আসবাবপত্র আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহার হয়। তাছাড়া বাঁশের ঘর, বেড়া, ঝাপ, দরমাসহ বাঁশের ও বেতের তৈরি নানা জিনিস বাংলাদেশের নিজস্ব শিল্প-সংস্কৃতির প্রতীক। দৈনন্দিন কাজে ব্যবহৃত বাঁশের তৈরি গৃহস্থালি পাত্রসমূহ খুবই আকর্ষণীয়। এসব পাত্র বা ঝুড়িতে বুননের মাধ্যমে নানা ধরনের নকশা ফুটিয়ে তোলা হয়। বাঁশিসহ আরও অনেক লোকবাদ্যযন্ত্র বাঁশ দিয়ে তৈরি হয়। ইদানীং নগরজীবনে বাঁশের তৈরি আসবাব, ছাইদানি, ফুলদানি, প্রসাধনী বাক্স, ছবির ফ্রেম, আয়নার ফ্রেম, কলম ইত্যাদিও লক্ষ করা যায়।
এবার আমরা ফিরে আসি আমাদের কাজে।
যা করব—
■ আমরা জানার চেষ্টা করব, আমরা যে এলাকাটিতে বা মহল্লাতে কিংবা গ্রামে বসবাস করছি সেখানে এমন কোনো শিল্প বা পেশাজীবীর পরিবার বা গোষ্ঠী আছে কি না অনুসন্ধান করব এবং তার তালিকা তৈরি করব।
■ এবার এর মধ্য থেকে কয়েকটি শিল্পভিত্তিক পেশাকে বাছাই করে সেই পেশাগুলোকে নিয়ে কিছুটা গভীরভাবে ভাববার চেষ্টা করব। এই ভাবনার মূল উদ্দেশ্য, শিল্পও যে জীবিকা নির্বাহে সহায়ক হয় এবং এটিও মর্যাদাপূর্ণ কাজ তা উপলব্ধি করা।
■ এরপর ঐ নির্দিষ্ট পেশার পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পর্কে জানতে হবে ও বন্ধুখাতায় লিপিবদ্ধ করে নিতে হবে।
■ দলে ভাগ হয়ে কয়েকটি শিল্পভিত্তিক পেশাজীবীদের কাজকে আরও জানার জন্য তাদের কাজ পরিদর্শন করা বা তাকে বিদ্যালয়ে আমন্ত্রণ জানিয়ে তার কাজটি শিখব।
উদাহরণ হিসেবে আমার মৃৎ শিল্পীদের মতো মাটি দিয়ে কিছু বানানর চেষ্টা করে দেখতে পারি।
ঘর সাজানোর জন্য মাটির ফলক দিয়ে রিলিফ নকশা তৈরির করতে পারি।
মাটি দিয়ে ফলক তৈরির জন্য আঠালো মাটি বিশেষভাবে উপযোগী।
মাটির ফলক তৈরি যা যা লাগবে—
■ আঠালো মাটি
■ চোখা মাথার একটি ছুরি/ বাঁশের ছোটো ফলা।
■ কালি ছাড়া বল পয়েন্ট কলম
■ একটি স্কেল
■ পানি রাখার পাত্র
■ হাত মোছার ন্যাকড়া
যেভাবে করব—
■ মাটি থেকে যতটা সম্ভব অন্যান্য উপাদান (নুড়ি, আগাছা, ঘাস ইত্যাদি) বেছে ফেলে দিতে হবে।
■ যেকোনো শিল্পকর্ম তৈরির আগে তার একটি খসড়া নকশা করা জরুরি। বন্ধু খাতায় আমরা একটি খসড়া নকশা করে নিব। নকশায় সঠিক মাপ উল্লেখ করতে পারলে খুব ভালো হয়। প্রতিটি কাজ সেই নকশা অনুসারে করার চেষ্টা করব।
■ একটি মাটির দলা নিয়ে তাতে পরিমাণমতো পানি দিয়ে তা ভালোভাবে মাখাতে হবে। লক্ষ রাখতে হবে যেন পানির পরিমাণ বেশি না হয়ে যায়। মাটি বেশি নরম হয়ে গেলে কাজ করতে অসুবিধে হয়। মাখাতে মাখাতে যখন দেখা যাবে মাটি আর হাতে লেগে থাকছে না, তখনই বোঝা যাবে – মাটিগুলো এখন কাজের জন্য উপযোগী হয়েছে।
■ প্রথমে আমরা মাটি দিয়ে ছোটো ছোটো বল বানিয়ে সেগুলো হাতের আঙ্গুল দিয়ে টিপে টিপে একটা চেপ্টা ফলক বা স্ল্যাব তৈরি করব। ফলকটির উপরের অংশ আমরা স্কেল দিয়ে অথবা বাঁশ বা কাঠের ছোট টুকরো দিয়ে সমান করে নিতে পারি। এই ফলকটার নাম হবে বেইজ স্ল্যাব বা ভিত্তি ফলক অর্থাৎ যে স্ল্যাবটার উপর আমরা নকশাটি বসাব। স্ল্যাবটার উপরের দিকে আমরা দুটি ছোটো ছিদ্র করে নিব যাতে পরবর্তীতে সে ছিদ্র দিয়ে সুতা ঢুকিয়ে তা ঝুলানোর উপযোগী করতে পারি।
■ আমাদের বেইজ স্ল্যাবটার সাইজ হবে নুন্যতম দৈর্ঘ্যে ছয় ইঞ্চি, প্রস্থে চার ইঞ্চি আর এক ইঞ্চি পুরুত্বের।
■ ঠিক বেইজ স্ল্যাবের মতো আমরা আরেকটি স্ল্যাব তৈরি করব যার নাম হবে কাটিং স্ল্যাব। এটার সাইজ হবে নুন্যতম দৈর্ঘ্যে ছয় ইঞ্চি, প্রস্থে চার ইঞ্চি আর আধা ইঞ্চি পুরুত্বের। আমরা কাটিং স্ল্যাব থেকে আমাদের প্রয়োজনীয় নকশাগুলো কেটে নিব।
■ আমরা এবার কাগজের উপরে ইচ্ছেমতো নকশা যেমন-ফুল, পাতা, পাখি ইত্যাদি এঁকে নিব। আঁকার সময় আমরা খেয়াল করে এমন ভাবে মেপে করব যেন সম্পূর্ণ নকশাটা বেইজ স্ল্যাব থেকে বড় না হয়ে যায়।
■ এবার কাগজের নকশাটা কাটিং স্ল্যাবটার উপর রেখে কালি ছাড়া বল পয়েন্ট কলম দিয়ে হাল্কা চাপ দিয়ে কাটিং স্ল্যাবটার উপর ছাপ দিয়ে এঁকে নিব।
■ তারপর চোখা মাথার একটি ছুরি/ বাঁশের ছোট ফলা দিয়ে নকশাটা কাটিং স্লেব থেকে কেটে নিব।
■ এবার কেটে নেয়া নকশাগুলো পরিকল্পনা অনুসারে বেইজ স্ল্যাবটার উপর বসানোর পালা। তবে বসানোর আগে একটা জরুরী কাজ করতে হবে তা হলো নকশাগুলোর পিছনের অংশে আর বেইজ স্ল্যাবের যে অংশে নকশা বসাবো সে অংশে ছুরি/ বাঁশের ফলা দিয়ে কিছু আঁচড় কেটে দিব এবং অল্প মাটি মিশ্রিত পানি দিয়ে ভিজিয়ে নিব যাতে নকশার টুকরোগুলো বেইজ স্ল্যাবটার সাথে ভালোভাবে আটকে যায় এবং শুকানোর পরে তা ছুটে না যায়।
■ নকশাযুক্ত ফলকটি তৈরি হয়ে গেলে তা ছায়ায় শুকিয়ে নেব। অন্তত দু'দিন শুকাতে হবে।
■ নকশাযুক্ত ফলকটি শক্ত হয়ে এলে আমরা পছন্দমতো রং করতে পারব। তবে প্রথমে একটা সাদা রঙের প্রলেপদিয়ে নিলে অন্য রংগুলো উজ্জ্বল হয়ে ফুটে উঠবে।
■ রং দেয়া হয়ে গেলে আবারও ছায়ায় ফলকটি শুকিয়ে নেব।
■ তবে চাইলে রং না দিয়েও তা সুন্দরভাবে উপস্থাপন করা যায়।
কাজের মাঝে শিল্প খোঁজার এই যাত্রায় আমরা এবার আরেকটা শিল্প সম্পর্কে আনুসন্ধান করব আর তা হল নাচ। নাচের যে ভঙ্গিটা সম্পর্কে আমরা জানব তা হল শ্রমভঙ্গি।
শ্রমভঙ্গি : প্রতিদিন কাজের মধ্যে আমরা নিজেদের অজান্তেই অনেকগুলো দেহ ভঙ্গি করে থাকি। একটি ভঙ্গি থেকে আরেকটি ভঙ্গি বেশ ভিন্ন। সাধারনত আমি কি কাজ করছি তার উপর নির্ভর করে আমার ভঙ্গি কেমন হবে। কাজ করার ভঙ্গিগুলোকেই আমরা বলছি শ্ৰমভঙ্গি।
যেমন: কুমোরের মাটির জিনিস পত্র তৈরির ভঙ্গি, কামারের আগুন বাতাস দিয়ে লোহা নরম করার ভঙ্গি, মাটি কাটার ভঙ্গি, তাঁত বোনার ভঙ্গি, ছাদ পেটানোর ভঙ্গি, কয়লা উত্তোলন, ইট ভাঙ্গার ভঙ্গি, কাঠ চেরা ইত্যাদি।
শ্রম ভঙ্গিগুলোকে যদি তালের সাথে মিলানো যায় তবেতো মজার একটা শিল্প সৃষ্টি হতে পারে। তাহলে এবার আমরা একটা তাল সম্পর্কে জানি। আমরা কিন্তু হাতের তালির সাহায্যে খুব সহজে তালের ধারণা পেতে পারি। এই পাঠে আমরা দাদরা তাল সম্পর্কে জানব।
দাদরা : দাদরা তালটি ছয় মাত্রার যা ‘তিন তিন' মাত্রার সমান দু'টি ছন্দে বিভক্ত একটি সমপদী তাল। এইবার আমরা দেখব কিভাবে তালটি সহজে বুঝতে পারি।
আমরা তো ১,২,৩, গুনতে পারি, তাইনা? এভাবে পর পর ১,২,৩।১,২,৩, অথবা ১,২,৩ । ৪,৫,৬, গুণেই কিন্তু আমরা দাদরা তালের মাত্রা ৩।৩ ছন্দ প্রকাশ করতে পারি। প্রথম মাত্রায় তালি দিয়ে ১,২,৩ এবং চতুর্থ মাত্রায় খালি বা ফাঁকা (তালি না দিয়ে) ৪,৫,৬ গুণব। প্রথম মাত্রায় তালি দেওয়াকে বলা হয় ‘সোম’ এবং চতুর্থ মাত্রায় হাতে তালি না দিয়ে সরিয়ে ফাঁকা রাখাকে বলা হয় ফাঁক। বিভিন্ন পশু পাখির চলনেও আলাদা আলাদা ছন্দ দেখা যায় যেমন হাতি ত্রিমাত্রিক, ঘোড়া চতুর্মাত্রিক প্রভৃতি।
এবার চলো আমরা হাতে তালির সাহায্যে দাদরা তালের সাথে ভঙ্গি মিলিয়ে কবি কাজী নজরুল ইসলামের নিচের কবিতাটি আবৃত্তি করে মনের অনুভুতিটা প্রকাশ করি।
আজ সৃষ্টি সুখের উল্লাসে—
মোর মুখ হাসে মোর চোখ হাসে মোর টগবগিয়ে খুন হাসে
আজ সৃষ্টি-সুখের উল্লাসে।
আজকে আমার রুদ্ধ প্রাণের পল্বলে -
বান ডেকে ঐ জাগল জোয়ার দুয়ার – ভাঙা কল্লোলে ।
আসল হাসি, আসল কাঁদন
মুক্তি এলো, আসল বাঁধন,
মুখ ফুটে আজ বুক ফাটে মোর তিক্ত দুখের সুখ আসে।
ঐ রিক্ত বুকের দুখ আসে -
আজ সৃষ্টি-সুখের উল্লাসে!
…………………………………………….
……………………………………………..
আজ হাসল আগুন, শ্বসল ফাগুন,
মদন মারে খুন-মাখা তূণ
পলাশ অশোক শিমুল ঘায়েল
ফাগ লাগে ঐ দিক-বাসে
গো দিগ বালিকার পীতবাসে;
আজ রঙ্গন এলো রক্তপ্রাণের অঙ্গনে মোর চারপাশে
আজ সৃষ্টি সুখের উল্লাসে!
…………………………………………….
……………………………………………..
আজ জাগল সাগর, হাসল মরু
কাঁপল ভূধর, কানন তরু
বিশ্ব-ডুবান আসল তুফান, উছলে উজান
ভৈরবীদের গান ভাসে,
মোর ডাইনে শিশু সদ্যোজাত জরায়-মরা বামপাশে।
মন ছুটছে গো আজ বল্গাহারা অশ্ব যেন পাগলা সে।
আজ সৃষ্টি-সুখের উল্লাসে!
আজ সৃষ্টি-সুখের উল্লাসে!!
(সংকলিত)
বিভিন্ন পেশার শ্রমজীবী মানুষদের নিয়ে সবচেয়ে বেশি গান ও কবিতা লিখেছেন আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম। তাঁর কাব্যের বৃহৎ অংশজুড়ে রয়েছে খেটে খাওয়া মানুষের দিনলিপি।
কাজী নজরুল ইসলাম অবিভক্ত বাংলার সাহিত্য, সমাজ ও সংস্কৃতি ক্ষেত্রের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্ব। নজরুল ১৩০৬ বঙ্গাব্দের ১১ জ্যৈষ্ঠ (২৪ মে ১৮৯৯) পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার চুরুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। নজরুলের ডাক নাম ছিল ‘দুখু মিয়া’। বস্তুত তিনি গোঁড়ামি, রক্ষণশীলতা, ধর্মান্ধতা, কুসংস্কার ও আচারসর্বস্বতা থেকে দেশবাসীর মুক্তির জন্য আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন।
তিনি স্বদেশী গানকে স্বাধীনতা ও দেশাত্মবোধের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে সর্বহারা শ্রেণির গণসংগীতে রূপান্তরিত করেন। হুগলি জেলে বসে নজরুল রচনা করেন ‘এই শিকল-পরা ছল মোদের এ শিকল-পরা ছল', আর বহরমপুর জেলে ‘জাতের নামে বজ্জাতি সব জাত-জালিইয়াৎ খেলছে জুয়া' এ বিখ্যাত গান দুটি।
নজরুল তাঁর সৃষ্টিকর্মে হিন্দু-মুসলিম মিশ্র ঐতিহ্যের পরিচর্যা করেন। তিনি বাংলা গজলের স্রষ্টা আর শ্যামা সংগীতে যুক্ত করেছিলেন অনন্য মাত্রা। তাঁর অধিকাংশ গজলের বাণীই উৎকৃষ্ট কবিতা এবং তার সুর রাগভিত্তিক। আঙ্গিকের দিক থেকে সেগুলি উর্দু গজলের মতো তালযুক্ত ও তালছাড়া গীত। রেকর্ড, বেতার ও মঞ্চের পর নজরুল ১৯৩৪ সালে চলচ্চিত্রের সঙ্গে যুক্ত হন। তিনি প্রথমে যে ছায়াছবির জন্য কাজ করেন সেটি ছিল গিরিশচন্দ্র ঘোষের কাহিনি ভক্ত ধ্রুব (১৯৩৪)। এ ছায়াছবির পরিচালনা, সংগীত রচনা, সুর সংযোজনা ও সংগীত পরিচালনা এবং নারদের ভূমিকায় অভিনয় ও নারদের চারটি গানের প্লেব্যাক নজরুল নিজেই করেন।
এসো আমরা আমাদের খুঁজে বের করা শিল্পভিত্তিক পেশাজীবীদের সম্মান জানানোর জন্য বিদ্যালয় প্রাংগনে অনুষ্ঠান করার মাধ্যমে বিশ্বে সকল পেশাজীবীদের শ্রমিক দিবস পালন করি।
যা করব—
■ দাদরা তালের চর্চা করতে পারি।
■ বিভিন্ন রকম শ্রমভঙ্গির চর্চা করতে পারি।
■ তাল সহযোগে কবিতাটি চর্চা করতে পারি।
■ আমরা বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের সৃষ্টিকর্ম সম্পর্কে আরো জানার চেষ্টা করব।
আরও দেখুন...