কৃত্রিম ফাইবার

এসএসসি(ভোকেশনাল) - উইভিং-১ - দ্বিতীয় পত্র (দশম শ্রেণি) | | NCTB BOOK

যেসব ফাইবার প্রাকৃতিকভাবে জন্মায়নি কিন্তু বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থের সংমিশ্রণ ঘটিয়ে কৃত্রিমভাবে তৈরি করা হয়, এ সমস্ত ফাইবারকে কৃত্রিম ফাইবার বলে। ঘন থকথকে জেলির মতো রাসায়নিক পদার্থ দ্বারা অত্যধিক চাপে খুব সূক্ষ্ম অসংখ্য ছিদ্রবিশিষ্ট নজেলের মধ্য দিয়ে বের করে ড্রাই, ওয়েট অথবা মেন্ট পদ্ধতিতে কৃত্রিম ফাইবারের ফিলামেন্ট সংগ্রহ করা হয়।

কৃত্রিম আঁশের উৎসসমূহ 
কৃত্রিম বা সিনথেটিক ফাইবারের মূল উৎসই পেট্রোলিয়াম, গ্যাস ও কয়লা। পেট্রোলিয়াম থেকে বায়বীয়, তরল ও কঠিন হাইড্রো কার্বন পাওয়া যায় যা দ্বারা কৃত্রিম আঁশ তৈরি করা সম্ভব। তবে কোলটার থেকে বৃহৎ পরিমাণে অ্যারোমেটিক কম্পাউন্ড পাওয়া যায়।

কৃত্রিম আঁশের বৈশিষ্ট্য 

প্রাকৃতিক আঁশের মতো কৃত্রিম আঁশও প্রায় একই গুণাগুণসম্পন্ন হয়ে থাকে। তবে নিম্নলিখিত বৈশিষ্ট্যসমূহ কৃত্রিম আঁশে প্রাকৃতিক আঁশের থেকে সামান্য আলাদা । 

* যে কোনো রাসায়নিক পদার্থের সাথে প্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন। 
* মাইক্রো অর্গানিজম অর্থাৎ পোকামাকড়ের প্রতি প্রতিরোধক্ষমতা ভালো।
* দাহ্যতা কম। 
* উচ্চ ইলাস্টিক গুণসম্পন্ন। 
* ক্রিজিং-এ প্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন। 
* ঘর্ষণ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভালো।

কৃত্রিম ফাইবারের শ্রেণিবিভাগ (Classification of synthetic fibre) 
সম্পূর্ণ কৃত্রিম ফাইবারকে এর কাঁচামালের উপর ভিত্তি করে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে। 
১) আংশিক কৃত্রিম ও 
২) পূর্ণ কৃত্রিম ।

আংশিক কৃত্রিম (Partial synthetic fibre) 
প্রাকৃতিক বিভিন্ন সেলুলোজিক পদার্থকে অবস্থা ও গুণাগুণের পরিবর্তন ঘটিয়ে যে নতুন ফাইবার তৈরি করা হয় তাকে আংশিক কৃত্রিম ফাইবার বলে। উদাহরণ- ভিসকোস রেয়ন, কিউপ্রোমোনিয়াম রেয়ন, অ্যাসিটেড রেয়ন, ট্রাই অ্যাসিটেড রেয়ন ইত্যাদি।

পূর্ণ কৃত্রিম (Fully synthetic fibre) 
সম্পূর্ণ কৃত্রিম অর্থাৎ বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থকে পলিমারাইজেশন করে ১০০ ভাগ কৃত্রিম ফাইবার তৈরি করা হয়। উদাহরণ- নাইলন, পলিয়েস্টার, একরাইলিক, স্পানডেক্স।

কৃত্রিম ফাইবারের শ্রেণিবিভাগ (Classification of synthetic fibre) - 
কৃত্রিম ফাইবারের শ্রেণিবিভাগ নিম্নের ছক আকারে দেওয়া হলো

নবম শ্রেণিতে ফাইবারের শ্রেণিবিভাগ ৩ ও ৪ পৃষ্ঠায় বিস্তারিত দেয়া হয়েছে।

ফিলামেন্ট তৈরির স্পিনিং পদ্ধতি (Spinning system of making filament) 

ফিলামেন্ট তৈরির জন্য ফিলামেন্টের কাঁচামাল রাসায়নিক পদার্থকে প্রথমে গলিত ঘন থকথকে জেলির মতো পদার্থে রূপান্তর করা হয় এবং পরবর্তীতে অত্যধিক চাপে স্পিনারেট নামক ডিভাইসের মধ্য দিয়ে চালনা করা হয়। যেমন- ওয়েট, ড্রাই ও মেন্টেড পদ্ধতিতে সংগ্রহ করা হয়। যে ডিভাইসের মাধ্যমে অত্যধিক চাপে গলিত পদার্থকে ফিলামেন্ট রূপে রূপান্তরিত করা হয় তাকে স্পিনারেট বলে। যে পদ্ধতিতে এই কৃত্রিম ফিলামেন্ট তৈরি ও সংগ্রহ করা হয় তাকে বলা হয় স্পিনিং পদ্ধতি। এটা সাধারণ পদ্ধতি। শর্ট স্ট্যাপল অথবা লং স্ট্যাপল স্পিনিং পদ্ধতির মতো নয়। প্রাকৃতিক ফাইবার থেকে সুতা পাকানোর পদ্ধতিকে সাধারণ স্পিনিং বলা হয় এবং কৃত্রিম ফাইবার বা আঁশ তৈরি পদ্ধতি অর্থাৎ স্পিনিং সে অর্থে ভিন্নধর্মী। কখনো কখনো ফিলামেন্ট স্পিনিংকে কেমিক্যাল স্পিনিংও বলা হয়। যেহেতু বিভিন্ন কেমিক্যাল থেকে ফিলামেন্ট তৈরি করা হয় সেহেতু এ ধরনের স্পিনিংকে কেমিক্যাল স্পিনিং বলা হয়।

স্পিনারেট (Spinnerate) 

ফিলামেন্ট তৈরির জন্য স্পিনারেট স্পিনিং মেশিনারির অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। স্পিনারেটের মধ্যে যে ছিদ্র থাকে তা এতই সূক্ষ্ম যে তার ব্যাসার্ধ মানুষের চুলের ব্যাসার্ধের থেকেও কম। সূক্ষ্ম ছিদ্রগুলো প্লাটিনাম বা এ জাতীয় ধাতব পদার্থ দ্বারা তৈরি হয়। যাতে উক্ত ছিদ্রগুলো ফিলামেন্টের ঘর্ষণের ফলে কম ক্ষয়প্রাপ্ত হয় এবং ব্যবহৃত রাসায়নিক পদার্থ দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। স্পিনারেটগুলো অত্যন্ত ব্যয়বহুল। একটি স্পিনারেটে ৩০০ -এর মতো ছিদ্র থাকে। আবার যেসব স্পিনারেট স্ট্যাপল ফাইবার তৈরির জন্য ব্যবহার করা হয়, তাতে প্রায় ৩০০০ -এর মতো ছিদ্র থাকে। কারণ, স্ট্যাপল ফাইবার তৈরির জন্য যত বেশি ফিলামেন্ট একসংঙ্গে স্পিনারেট থেকে বের হবে তত বেশি স্ট্যাপল ফাইবার একসংঙ্গে পাওয়া যাবে। স্পিনারেট থেকে ফিলামেন্ট বের হওয়ার সাথে সাথে প্রয়োজনমতো দৈর্ঘ্যের স্ট্যাপল ফাইবার কেটে নেওয়া যায়। মনোফিলামেন্টের জন্য স্পিনারেটে একটি মাত্র ছিদ্র থাকে এবং মাল্টিফিলামেন্টের জন্য স্পিনারেটে অসংখ্য সূক্ষ্ম ছিদ্র থাকে।

ফিলামেন্ট তৈরির জন্য স্পিনিং পদ্ধতির প্রকারভেদ ফিলামেন্ট তৈরির জন্য স্পিনিং পদ্ধতি ৩ প্রকার। যথা- 
১) ওয়েট স্পিনিং (Wet spinning ) 
২) ড্রাই স্পিনিং (Dry spinning )
৩) মেল্ট স্পিনিং (Melt spinning )

ওয়েট স্পিনিং (Wet spinning)- 

মানুষের তৈরি আঁশ অর্থাৎ কৃত্রিম আঁশ তৈরির ক্ষেত্রে সর্বপ্রথম যে পদ্ধতি সাফল্যজনকভাবে ব্যবহৃত হয়েছে, তাই ওয়েট স্পিনিং (Wet spinning)। এ পদ্ধতি সর্বপ্রথম রেয়ন ফাইবারের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়। এ পদ্ধতি বর্তমানেও ব্যবহার হচ্ছে। প্রথমে কৃত্রিম ফাইবার তৈরির পলিমারকে গলিয়ে ঘন ভিসকোস আকারে নেওয়া হয় এবং পাম্পের সাহায্যে উচ্চ চাপে স্পিনারেটের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত করা হয়। স্পিনারেটের অসংখ্য ছিদ্রের মধ্য দিয়ে উক্ত পলিমারকে ফিলামেন্ট আকারে বের করার সাথে সাথে একটি কেমিক্যাল বাথে ফেলা হয় এবং ফিলামেন্টগুলো উক্ত কেমিক্যাল বাথে কেমিক্যালের সংস্পর্শে আসার সাথে সাথে শক্ত হয়ে সুতার আকারে রূপ নেয়। কেমিক্যাল বাথকে কোগুলেটেড বাথও (Coulugated bath) বলা হয়। কোগুলেটিং বাথে বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থের মিশ্রণ থাকে যার সংস্পর্শে নরম ফিলামেন্ট আসার সাথে সাথে শক্ত হয়ে যায়। পরবর্তীতে ধোয়া ও শুকানোর পর স্কুলে জড়ানো হয়।

ড্রাই স্পিনিং (Dry spinning ) 

এ পদ্ধতিতে প্রয়োজনীয় তরল পলিমার / দ্রবণ স্পিনারেটের ছিদ্র দিয়ে অত্যধিক জোরে পাম্প করে বের করার পর ওয়েট স্পিনিং -এর মতো কেমিক্যাল বাথের পরিবর্তে গরম এয়ার চেম্বারের মধ্য দিয়ে টানা হয়। ফলে স্পিনারেট থেকে বের হওয়া নরম ফিলামেন্টগুলো গরম বাতাসের সংস্পর্শে আসার সাথে সাথে জলীয় বাষ্প বের করে দিয়ে শক্ত হয়ে যায়। পরে উক্ত ফিলামেন্টগুলো টুইস্টিং ও ওয়াইন্ডিং করে সংগ্রহ করা হয়। স্ট্যাপল ফাইবারের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় দৈর্ঘ্য অনুযায়ী কেটে টুকরো টুকরো করে সংগ্রহ করা হয়।

মেন্ট স্পিনিং (Melt Spinning ) 

সর্বশেষ ও তৃতীয় যে পদ্ধতিতে কৃত্রিম ফাইবার প্রস্তুত করা হয় তাই মেন্ট স্পিনিং। এ পদ্ধতিতে চিপস অথবা পলিমারকে গলিয়ে স্পিনারেটের ছিদ্র দিয়ে পাম্প করে বের করা হয়। এবং এয়ার চেম্বারের মধ্য দিয়ে ঠান্ডা জমাট বাঁধিয়ে শক্ত করে ফিলামেন্টগুলো পূর্বের মতো সংগ্রহ করা হয়। এ পদ্ধতি সরাসরি প্রক্রিয়া এবং সবচেয়ে কম খরচ। এতে বাথ, কোনো দ্রাবক বা ধোয়ার কোনো প্রয়োজন পড়ে না । উপরোক্ত স্পিনিং পদ্ধতি ছাড়াও আর কিছু স্পিনিং পদ্ধতি আধুনিকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। যেমন- বাইকম্পোনেন্ট স্পিনিং, বাইকনস্টিটিয়েন্ট স্পিনিং, ফ্লিম স্পিনিং পদ্ধতি ইত্যাদি ।

Content added || updated By
Promotion