বিজ্ঞান

কোষ পরিচিতি

সপ্তম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - বিজ্ঞান - বিজ্ঞান অনুসন্ধানী পাঠ | NCTB BOOK

সকল জীবই কোষ নিয়ে গঠিত। বাংলা কোষ শব্দটির ইংরেজি প্রতিশব্দ হচ্ছে Cell, যার আক্ষরিক অর্থ ছোট ঘর বা প্রকোষ্ঠ। Cell নামকরণটি করেছেন বিজ্ঞানী রবার্ট হুক (Robert Hooke), যিনি অণুবীক্ষণযন্ত্রের (Microscope) আবিষ্কারক। তিনি অণুবীক্ষণযন্ত্র আবিষ্কারের পর একটি বোতলের কর্ক (Cork কাঠ থেকে তৈরি করা একধরনের ছিপি যা বোতলে মুখ বন্ধ করতে ব্যবহার করা হয়) পর্যবেক্ষণ করছিলেন। খালি চোখে যা দেখা যায় না, তাই তিনি দেখলেন অণুবীক্ষণযন্ত্রের ক্ষমতা ব্যবহার করে। কর্কের কাঠের কোষগুলো একের পর এক ছোট ছোট ঘরের মতো করে সাজানো দেখাচ্ছিল বলেই রবার্ট হুক এগুলোর নাম দিলেন সেল (Cell)।

রবার্ট হুক অণুবীক্ষণযন্ত্র ব্যবহার করে উদ্ভিদ কোষ পর্যবেক্ষণ করেছিলেন

আমরা ইটের পর ইটের গাঁথুনিতে যেমন একটি বড় বাড়ি তৈরি হতে দেখি, তেমনি কোষের পর কোষ যুক্ত হয়ে একটি বহুকোষী জীবদেহ তৈরি হয়। বহুকোষী জীবদেহে কোটি কোটি কোষ থাকতে পারে। তবে বিভিন্ন অঙ্গে অবস্থান ও জীবদেহের বৃদ্ধির বিভিন্ন পর্যায়ে কোষগুলোর মধ্যে আকৃতি ও কাজের ভিন্নতা থাকে। যেমন, মানব শরীরের মস্তিষ্ক ও কিডনির কোষগুলো দেখতে ভিন্ন ভিন্ন, সেগুলোর কাজও আলাদা। কিন্তু সেগুলোর গঠন উপাদান অনেকটা একইরকম। এসব উপাদান নিয়ে আমরা একটু পরেই আলোচনা করব।

কোষকে বলা হয় জীবের গঠন এবং কাজ সম্পাদনের একক (Structural and functional unit)। অর্থাৎ একটি জীবের শারীরিক গঠনের একক হচ্ছে কোষ, আবার তার যেকোনো কাজ সম্পন্ন হওয়ার প্রাথমিক জায়গাটাও হচ্ছে কোষ। কিছু কিছু জীব আছে যেগুলো এককোষী, যেমন- ব্যাকটেরিয়া (Bacteria), অ্যামিবা (Amoeba), ইস্ট (Yeast) ইত্যাদি। এককোষী জীব এতই ক্ষুদ্র যে, সাধারণত অণুবীক্ষণ যন্ত্র ছাড়া এগুলোকে দেখা যায় না। আমরা আমাদের খালি চোখে যত জীব দেখি, সেগুলো সবাই বহুকোষী। যেমন- গাছপালা, মানুষ, হাঁস-মুরগি ইত্যাদি বহুকোষী জীব। এসব জীব তৈরি হয় অনেক অনেক কোষ মিলে।

Zবিভিন্ন জীব দেখতে আলাদা হলেও সেগুলোর গঠন ও কাজ সম্পন্নকারী কোষগুলোর মৌলিক উপাদান একইরকম। সকল জীবের কোষই শর্করা বা কার্বহাইড্রেট (Carbohydrate), লিপিড (Lipid), প্রোটিন (Protein) নামের জৈব অণু দিয়ে তৈরি হয়।


শর্করা বা কার্বোহাইড্রেট হলো এক ধরনের জৈব রাসায়নিক পদার্থ যার প্রতিটি অণুতে কার্বনের (C) সঙ্গে হাইড্রোজেন (H) এবং অক্সিজেন (O) থাকে, যেখানে হাইড্রোজেন পরমাণুর সঙ্গে অক্সিজেন পরমাণুর অনুপাত হয় ঠিক পানির মতো ২:১। জীবদেহের শক্তির প্রধান উৎস হিসেবে কাজ করে।

লিপিড জীবদেহের একটি গুরুত্বপূর্ণ জৈব রাসায়নিক পদার্থের নাম, যা কার্বন, হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন নিয়ে গঠিত। লিপিডের প্রধান কাজ হচ্ছে শক্তি সঞ্চয় করে রাখা, কোষ পর্দার গাঠনিক উপাদান হিসেবে কাজ করা ইত্যাদি।

প্রোটিন হলো এক প্রকারের বৃহৎ আকারের জৈব অণু, যা একাধিক অ্যামিনো অ্যাসিডের (এক ধরনের জৈব অণু) মধ্যে রাসায়নিক সংযোগ বা বন্ধনের মাধ্যমে তৈরি হয়। বিভিন্ন প্রোটিন জীবদেহের ভেতরে নানা কাজ সম্পাদন ও নিয়ন্ত্রণ করে।


উপাদানের দিক থেকে একই হলেও ভিন্ন জীবের কোষগুলোর ভেতরে গঠনগত পার্থক্য থাকতে পারে। যেমন- উদ্ভিদ ও প্রাণী কোষের ভেতর গঠনগত কিছু পার্থক্য আছে। এমনকি মানুষের শরীরের বিভিন্ন অংশের কোষগুলোও গঠন ও কাজের দিক থেকে আলাদা বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন হয়। একটি কোষ যেসব ছোট ছোট অংশ নিয়ে গঠিত হয়, সেগুলোকে কোষের অঙ্গাণু (Organelle) বলা হয়। নিচে আমরা উদ্ভিদ ও প্রাণী কোষের বিভিন্ন অঙ্গাণুর কাজ সম্বন্ধে জানব।

 

Content added By

আরও দেখুন...

Promotion