ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সঞ্চয়ের মাধ্যমে ভবিষ্যৎ উন্নয়নের জন্য আমাদের শিক্ষার্থীদের স্কুল ব্যাংকিং-এ উৎসাহিত করা হয়েছে। স্কুল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা ক্ষুদ্র পরিমাণের অর্থ ব্যাংকে জমা রেখে নিয়ম মাফিক মুনাফা পেতে পারে। বিভিন্ন সময়ের সঞ্চয়ের যথাযথ হিসাব রাখা এবং সঞ্চয় বিনিয়োগের মাধ্যমে মুনাফা নির্ণয় করার জন্য গাণিতিক হিসাব জানা গুরুত্বপূর্ণ। এই অধ্যয়ে আমরা সঞ্চয়ের হিসাব রাখা এবং মুনাফা নির্ণয়ের পদ্ধতি আলোচনা করব।
অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী শান্তা মঝে মধ্যে তার মা, বাবা ও নিকটাত্মীয়ের কাছ থেকে উপহার হিসেবে কিছু টাকা হাতে পায়। শান্তা চিন্তা করোল সে টাকা সঞ্চয় করবে, এবং এজন্য তার মায়ের সঙ্গে সে কাছেই একটি ব্যাংকে গেল একটি স্কুল ব্যাংকিং সঞ্চয়ী একাউন্ট খুলতে। ব্যাংক কর্মকর্তাকে শান্তা বলল, সে একটি একাউন্ট খুলতে চায় এবং সেখানে সে প্রতি মাসে ২০০ টাকা সঞ্চয় করতে চায়। ব্যাংক কর্মকর্তা জানালেন যে, হিসাব খুলতে তাকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র এবং প্রারম্ভিক ১০০ টাকা জমা দিয়ে একাউন্ট খুলতে হবে। সেইসঙ্গে প্রথম মাসের কিস্তি বাবদ আরও ২০০ টাকা জমা দিতে হবে। এরপর প্রতিমাসে কিস্তি ২০০ টাকা নিয়মিত জমা দিতে হবে। এই জমা টাকার উপরে ব্যাংক ৭% হারে মুনাফা যোগ হবে। এই মুনাফার হার পরিবর্তন হতে পারে। শান্তা ব্যাংকের নিয়ম মেনে একটি সঞ্চয়ী স্কুল ব্যাংকিং একাউন্ট খুলল।
তুমি কি জানো কিস্তি কী এবং ৭% হারে সরল মুনাফা কী? নির্দিষ্ট সময় পরপর যে টাকা জমা দিতে হবে, সেটিই হলো কিস্তি। ৭% হারে মুনাফার অর্থ হলো, ১০০ টাকা জমা রাখলে ১ বছর পর ব্যাংক তাকে ৭ টাকা মুনাফা দেবে।
তুমি কি বলতে পারবে,
১. প্রথম মাসে শান্তার মোট জমা কত?
২. দ্বিতীয় মাস শেষে শান্তার মোট জমা কত হবে?
৩. তৃতীয় মাস শেষে শান্তার মোট জমা কত হবে?
তোমার উত্তর এখানে লিখে রাখো।
শান্তা তার নোটবুকে জমার পরিমাণের হিসাব রাখার জন্য নিচের ছকটি প্রস্তুত করল। তুমি শান্তার একবছরে মোট জমার হিসাবটা নিচের ছকে পূরণ করো।
ব্যাংকে সঞ্চয়ী হিসাব খুললে নির্দিষ্ট হারে মুনাফা পাওয়া যায়। যেহেতু শান্তা নিয়মিত ব্যাংকে সঞ্চয় করে, তাই সে ব্যাংক থেকে মুনাফা পাবে। মুনাফা দুই ধরনের হতে পারে, সরল মুনাফা (simple interest) এবং চক্রবৃদ্ধি (compound) মুনাফা। আমরা প্রথমে সরল মুনাফা, তারপর চক্রবৃদ্ধি মুনাফার হিসাব করব এবং দেখব কোন ধরনের মুনাফাতে শান্তা অধিক লাভ পেতে পারে।
আমরা শান্তার জমা বা সঞ্চয়ের হিসাব করেছি। এবার তার ব্যাংক থেকে প্রাপ্য সরল মুনাফার হিসাব করব। প্রথমে আমরা মুনাফা নির্ণয়ের কিছু নিয়ম জেনে নেব, তারপর শান্তার মুনাফার হিসাব করব।
শুধু প্রারম্ভিক মূলধনের উপর যে মুনাফা দেওয়া হয়, তাকে সরল মুনাফা বলে। যেমন- কেউ যদি ১০০টাকা ব্যাংকে জমা রাখে এবং ঐ ব্যাংক তাকে ৭% হারে সরল মুনাফা দেয়, তবে এক বছরে পর তার মুনাফা হবে ৭ টাকা, দুই বছর পর হবে ১৪ টাকা এবং তিন বছর পর মুনাফা হবে ২১ টাকা। অর্থাৎ প্রতি ১০০ টাকায় প্রতিবছর একই হারে মুনাফা পাবে। এটিই সরল মুনাফা।
সাধারণত, সঞ্চয়ী একাউন্টে জমা টাকার পরিমানের উপর বাংকগুলো নির্দিষ্ট সময়ের জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ মুনাফা দিয়ে থাকে। মুনাফার পরিমাণ বিভিন্ন ব্যাংকে ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে। যদি কোনো ব্যাংক বলে যে তারা ৭% মুনাফা দেয়, তাহলে এর অর্থ দাঁড়াবে, ১০০ টাকা জমা করলে তারা এক বছরে ৭ টাকা মুনাফা দিবে। নিচে কিছু উদাহরণ দেওয়া হলো।
উপরের উদাহরণ থেকে সহজেই সরল মুনাফার হিসাব করা যায়। কিন্তু শান্তার সঞ্চয়ের ভিত্তিতে একবছরে কত সরল মুনাফা পাওয়া যাবে?
লক্ষ করো শান্তার প্রথম কিস্তির ২০০ টাকা ১ বছর বা ১২ মাস ব্যাংকে জমা থেকেছে, কিন্তু দ্বিতীয় কিস্তির ২০০ টাকা ১১ মাস ব্যাংকে জমা থেকেছে। এভাবে পরের কিস্তির টাকাগুলো আরও কম সময় ব্যাংকে জমা থেকেছে। ব্যাংকের সরল মুনাফার হার ৭% হলে শান্তা কি তার মোট সঞ্চয়ের পুরো টাকার উপর ৭% মুনাফা পাবে? কী মনে হয় তোমাদের? তোমার উত্তর যুক্তিসহ লেখো।
শান্তার এক বছরের সরল মুনাফার হিসাব নিচের ছকে আংশিক করে দেওয়া আছে। তোমার একজন সহপাঠীর সঙ্গে জোড়ায় আলোচনা করে নিচের ছকের ফাঁকা অংশগুলো পূরণ করো।
উপরের ছকের ফাঁকা ঘরগুলো পূরণ করে তোমরা মোট প্রাপ্য মুনাফা নির্ণয় করতে পার। তোমাদের এই কাজ সহপাঠীদের সঙ্গে মিলিয়ে নাও এবং শিক্ষককে দেখিয়ে প্রয়োজনীয় সংশোধন করে নাও।
একক কাজ
সুমীর মা প্রতিমাসে একটি ব্যাংকে তার সঞ্চয়ী হিসেবে ১৫০০ টাকা করে জমা রাখে। তিনি ৪ মাস নিয়মিত জমা দিলেন, কিন্তু বিশেষ প্রয়োজনে তিনি পঞ্চম মাস শেষ হওয়ার আগেই সকল টাকা তুলে নিলেন। সরল মুনাফার হার ১০% হলে তিনি ব্যাংক থেকে মোট কত টাকা পেলেন?
চক্রবৃদ্ধি মুনাফা (Compound Interest)
সরল মুনাফায় আমরা দেখেছি যে, যত বছরই সঞ্চয় করা হোক না কেন, শুধুমাত্র প্রারম্ভিক মূলধনের উপর মুনাফা নির্ণয় করা হয়। কিন্তু চক্রবৃদ্ধি মুনাফা নির্ণয়ে প্রতিবছর বা মেয়াদান্তে যে মুনাফা পাওয়া যায়, তা পূর্বের মূলধনের সঙ্গে যোগ করে নতুন মূলধন নির্ধারণ করা হয় এবং এই নতুন মূলধনের উপর পরবর্তী মেয়াদের মুনাফা নির্ণয় করা হয়। প্রত্যেক সময়কাল শেষে মূলধনের সঙ্গে মুনাফা যোগ করে নতুন মূলধন হিসেব করে সর্বশেষ যে মুনাফা পাওয়া যায় তাকে চক্রবৃদ্ধি মুনাফা বলে। চক্রবৃদ্ধি মুনাফাকে প্রতীক দ্বারা প্রকাশ করা হয়। একটি নির্দিষ্ট সময়কাল শেষে নতুন মূলধনকে চক্রবৃদ্ধি মূলধন বলে। চক্রবৃদ্ধি মূলধনকে A প্রতীক দ্বারা প্রকাশ করা হয়। যে মূলধন নিয়ে শুরু করা হয় তাকে প্রারম্ভিক মূলধন বলে। প্রারম্ভিক মূলধনকে P প্রতীক দ্বারা প্রকাশ করা হয়। নিচের উদাহরণ থেকে চক্রবৃদ্ধি মুনাফা নির্ণয়ের পদ্ধতি আলোচনা করা হলো।
এখন, উপরে বর্ণিত প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় বছরের চক্রবৃদ্ধি মূলধন নির্ণয়ের (১), (৩) ও (৫) নম্বর সমীকরণ তিনটির প্যাটার্ন ভালো করে লক্ষ করো। তুমি কি A, P, r এবং সময়কালের সংখ্যার (n) পরিবর্তনের মধ্যে কোনো সম্পর্ক খুঁজে পাও? তোমার উত্তর প্রদত্ত ছকে লেখো।
তোমরা নিশ্চয় লক্ষ করেছ যে তিনটি সমীকরণই দেখতে প্রায়ই একই, শুধু সূচকের মানে পরিবর্তন হয়েছে এবং এই সূচকের মানের সঙ্গে n এর একটি সম্পর্ক আছে। সমীকরণগুলো পর্যবেক্ষণ করে তুমি কি উদাহরণ ৬ অনুসারে পঞ্চম বছরের চক্রবৃদ্ধি মূলধন নির্ণয় করতে পারবে? নিচের ফাঁকা অংশে এর সমাধান করে শিক্ষককে দেখাও।
মুনাফা সাধারণত বাৎসরিক হারে দেওয়া হয়ে থাকে। কিন্তু চক্রবৃদ্ধি মুনাফা প্রদানের সময়কাল এক বছর নাও হতে পারে; এক বছরের কম বা বছরের ভগ্নাংশ হতে পারে। সেক্ষেত্রে মুনাফার হারকে সময়কাল অনুসারে বছরের আনুপাতিক অংশে পরিবর্তন করে নিতে হয়। একই সঙ্গে সময়কালকে বছরের আনুপাতিক হারে পরিবর্তন করতে হয়। নিচের উদাহরণ থেকে এই ধারণাটি ব্যাখ্যা করা হলো।
আরও দেখুন...