গ্রাফিক্স ডিজাইনের ধারণা ও গুরুত্ব

এইচএসসি (বিএমটি) ভোকেশনাল - ডিজিটাল টেকনোলজি ইন বিজনেস-২ - গ্রাফিক্স ডিজাইন Graphics Design | | NCTB BOOK

■ গ্রাফিক্স (Graphics)

গ্রাফিক্স শব্দটি গ্রিক শব্দ Graphikos (গ্রাফিকস) থেকে এসেছে, যার অর্থ অঙ্কন বিষয়ক জ্ঞান বা কোনো পৃষ্ঠে রেখা টানা বা ড্রইং করা। অর্থাৎ গ্রাফিক্স অর্থ হলো রেখার ভিত্তিতে কোনো নকশা প্রণয়ন করা, যা পরবর্তীতে ছাপা বা প্রকাশের জন্য তৈরি করা হয়।

চিত্র: গ্রাফিক্স সফটওয়্যারসমূহ

গ্রাফিক্স হলো এমন একটি সদৃশ মাধ্যম যার দ্বারা কোনো পৃষ্ঠের উপর (যেমন— একটি ওয়ালের উপর, একটি ক্যানভাসের উপর, একটি পর্দার উপর কিংবা একটি কাগজের উপর) কিছু ছবি বা নকশা আঁকাকে বোঝায়। এটি মূলত ব্যবহার করা হয় কোনো উপাত্ত (ডেটা) প্রকাশের উদ্দেশ্যে। যেমন— কম্পিউটার বিষয়ক নকশা বা শিল্পজাতকরণে, গ্রাফিক্স আর্ট বা ছাপাখানায় অক্ষর বিন্যাসে অথবা শিক্ষামূলক বা বিনোদনমূলক সফটওয়্যার নির্মাণে। যখন কম্পিউটার দ্বারা কোনো নকশা ডিজাইন করা হয় তখন তাকে কম্পিউটার গ্রাফিক্স বলে। ফটোগ্রাফ, লাইন আর্ট, ড্রয়িং, গ্রাফ, ডায়াগ্রাম, টাইপোগ্রাফি, সংখ্যা, প্রতীক, জ্যামিতিক নকশা, ম্যাপ, ইঞ্জিনিয়ারিং ড্রয়িং অথবা অন্যান্য ছবি সংশ্লিষ্ট বিষয়কে গ্রাফিক্সের উৎকৃষ্ট উদাহরণ বলা যায়। অক্ষর, চিত্রালংকরণ (ইলাস্ট্রেশন), রঙ হলো একটি গ্রাফিক্সের প্রধান উপাদান। কম্পিউটার গ্রাফিক্সের মাধ্যমে নিজের ইচ্ছাকৃত ডিজাইন, নতুনত্ব আনয়ন, অক্ষরের সু-সন্নিবেশিত রূপ প্রদান করা সম্ভব।

■ গ্রাফিক্স ডিজাইন (Graphics Design) 

গ্রাফিক্স ডিজাইন হচ্ছে ভিজ্যুয়াল আর্ট। বিভিন্ন ছবি, মিউজিক, ভিডিও বা টেক্সটের মাধ্যমে কোনো একটি প্রোডাক্ট, প্রজেক্ট বা ইভেন্টের মেসেজ গ্রাহকের কাছে ভিজ্যুয়ালি পৌঁছে দেয়াই হচ্ছে গ্রাফিক্স ডিজাইন । যেহেতু মেসেজ পৌঁছে দেয়ার কাজ করা হয়, তাই এটাকে কমিউনিকেশন ডিজাইনও বলা যেতে পারে। গ্রাফিক্স ডিজাইন মূলত এমন একটি শিল্প যেখানে আর্ট ও প্রযুক্তির সমন্বয়ে দৃশ্যমান ছবি বা নকশা তৈরি করা হয়। বর্তমান সময়ে কম্পিউটারের মাধ্যমে তৈরি করা দৃশ্যমান ডিজাইনকে গ্রাফিক্স ডিজাইন বলা হয়। সৃজনশীল উপায়ে কোনো কাজকে ভিজ্যুয়াল এলিমেন্ট যেমন— ছবি, রং, রেখা ও ফর্মের সমন্বয়ে সুষম বিন্যাসের মাধ্যমে কোনো ক্রিয়েটিভ আইডিয়াকে দর্শনীয়ভাবে উপস্থাপন করাই হলো গ্রাফিক্স ডিজাইন। গ্রাফিক্স ডিজাইন হলো এমন একটি প্রক্রিয়া যেখানে নিজের ধারণা, শিল্প (art) এবং দক্ষতা (skills) ব্যবহার করে ছবি (pictures) শব্দ (words), পাঠ (text) এবং ধারণার মিশ্রণ (combine) করে একটি আলাদা এবং নতুন ছবি (picture) তৈরি করা হয়।

সহজ কথায় বললে গ্রাফিক্স ডিজাইন হলো এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে যে কোন তথ্য বা ছবি শৈল্পিক উপায়ে উপস্থাপন করা হয়। 

গ্রাফিক্স ডিজাইনের উপাদান

গ্রাফিক্স ডিজাইনের উপাদানগুলোর মধ্যে রয়েছে লাইন, রঙ, আকৃতি, স্থান, টেক্সচার, টাইপোগ্রাফি, স্কেল, ডোমিনেন্স এবং এম্ফাসিস। এসকল উপাদানসমূহ একত্রিত হয়ে আকর্ষণীয় দৃশ্য তৈরি করে, যা একটি বার্তা বহন করে।

১. পয়েন্ট, লাইন ও শেইপ (Point, Line and Shape ) : যেকোনো ডিজাইনের মূল ভিত্তি পয়েন্ট, লাইন ও শেইপের উপর নির্ভর করে। আর এগুলোর মাধ্যমেই আপনি আপনার মনের মাধুরী মিশিয়ে ডিজাইন করতে সক্ষম হন। দুইটি পয়েন্ট একত্রিত করলে একটি লাইন তৈরি হয়। পুনরায় এই দুটির সাথে আরেকটি পয়েন্ট যুক্ত করলে একটি ত্রিভুজাকার শেইপ তৈরি হবে। ঠিক একইভাবে অনেকগুলো লাইনের সমন্বয়ে একটি ডিজাইন পূর্ণতা পায়। ত্রি ডাইমেনশনাল আকারের মডেলগুলোও ঠিক একইভাবে একটি প্রাথমিক পর্যায় থেকে পরিপূর্ণতা লাভ করে।

২. রঙ (Color) : মানুষ সাধারণত ১০ লক্ষেরও অধিক রঙ বোঝতে পারে। আর প্রতিটি রঙের আলাদা আলাদা অর্থ রয়েছে। ট্রাফিকে যে তিনটি রঙ ব্যবহৃত হয় তা দিয়েই আমরা ভালোভাবে বোঝতে পারি এই বিষয়টি। লাল বাতি মানে থেমে যাওয়া, সবুজ মানে চলা আর হলুদ অর্থ অপেক্ষা করা। একইভাবে ডিজাইনের ক্ষেত্রেও বিভিন্ন রঙ বিভিন্ন চিহ্ন প্রকাশে সাহায্য করে। তাই কোনো ডিজাইনে যত্রতত্র রঙ ব্যবহার করা উচিত নয়। গ্রাফিক্স ডিজাইনারদেরও বিভিন্ন কালার স্কিম ও প্যালেট থেকে সঠিক কালার বাছাই করার মতো সক্ষমতা অর্জন করতে হবে। কারণ, অনেক ডিজাইনের কাঠামোর চেয়ে মূল ভুমিকা রাখে রঙ।

৩. টাইপোগ্রাফি (Typography) : ডিজাইনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে টাইপোগ্রাফি। একটি ডিজাইনের টেক্সটগুলো দেখতে কেমন হবে তা এই টাইপোগ্রাফির উপর নির্ভরশীল। অনেক ফন্ট স্টাইল থেকে নির্দিষ্ট কিছু ফন্ট নিয়ে টেক্সটগুলো লেখা হয়। বিষয়ের তারতম্যের সাথে সাথে এটিরও পরিবর্তন ঘটে। হাজার হাজার টাইপফেসের (ফন্ট স্টাইল) ভিতর থেকে একজন ডিজাইনারকে ডিজাইনের কাজের জন্য সুন্দর ও আকর্ষণীয় ফন্টফেস বাছাই করতে পারাটা একজন দক্ষ গ্রাফিক্স ডিজাইনারের কাজ।

৪. স্পেস (Space) : স্পেস ডিজাইনের একটি মৌলিক অংশ। তাই মাঝেমধ্যে নেগেটিভ স্পেসেরও দরকার রয়েছে। স্পেসকে ডিজাইনের একটি মৌলিক অংশ হিসেবে ধরে নিতে পারলে তা ডিজাইনারদের জন্যই বেশ সুফল বয়ে আনবে। ডিজাইন শেষ না হওয়ার আগ পর্যন্ত এটি সুষ্ঠুভাবে ব্যবহার করা উচিত।

৫. ব্যালেন্স, রিদম ও কন্ট্রাস্ট (Balance, Rhythm and Contrast) : আমরা যখন কোনো আকর্ষণীয় ডিজাইন করতে চাই তখন এইগুলোকে অবশ্যই মেনে চলতে হবে। প্রত্যেকটি উপাদানের মধ্যে ব্যালেন্স রাখা, ভিজ্যুয়াল ওয়েট অনুযায়ী ডিজাইন পরিবর্তন প্রভৃতি বিষয়গুলো মাথায় রাখতে হবে। কিছু ডিজাইনের উপাদানের এলিমেন্টসের মধ্যে আলাদা একটি গুরুত্ব প্রদান করা উচিত যাতে সেটি ডিজাইনের অন্যান্য বিষয়গুলোকে ছাপিয়ে যেতে পারে।

৬. স্কেল (Scale ) : ক্রম বজায় রাখতে স্কেল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। একটি ডিজাইনে সবগুলো বিষয়ই সমান গুরুত্বপূর্ণ থাকে না। তবে ডিজাইনের বিভিন্ন উপাদানের ভূমিকা বেশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে থাকে। ধরা যাক, কোনো সংবাদপত্রের টাইটেল থেকে শুরু করে বিস্তারিত নিউজগুলোর ফন্টগুলো বেশ ছোট। কিন্তু এক্ষেত্রে স্কেল এর ভূমিকার কারণে তা প্রত্যেক পাঠকের কাছে সেই সংবাদটি পঠনযোগ্যতা পেয়েছে।

৭. গ্রিড ও অ্যালাইনমেন্ট (Grid and Alignment): একটি অদৃশ্য জাদুময়তার মতো গ্রিড ও অ্যালাইনমেন্ট ডিজাইনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। কারণ এটি ডিজাইনের কাঠামো প্রদানে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। কোনো সংবাদপত্র বা বই পড়ার ক্ষেত্রে টেক্সটগুলো খুব সাজানো গোছানো এবং একটি নির্দিষ্ট ক্রম অনুসারে পাওয়া যায় এই গ্রিড ও অ্যালাইনমেন্টের কারণেই। টেক্সটের সাথে অ্যালাইনমেন্টের একটি গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে। যেমন— মানুষ সাধারণত কোনো বই বা পোস্টারে বাম দিক থেকে ডানদিকেই পড়ে থাকে, কিন্তু কোনো পোস্টারের উপর থেকে নিচের দিকে টেক্সট থাকলে তা পাঠকের পড়ায় বিড়ম্বনা ঘটায়।

৮. ফ্রেমিং (Framing) : এটি ফটোগ্রাফির ব্যবহারের বিষয় হলেও ভিজ্যুয়াল ডিজাইনের ক্ষেত্রে এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ধরা যাক, আপনি কোনো ইমেজ বা ইলাস্ট্রেশন নিয়ে কাজ করছেন। এক্ষেত্রে ফ্রেমিং এর যথাযথ ব্যবহার আপনার ডিজাইনকে অন্যান্য ডিজাইন থেকে আলাদা করে তুলবে। তাই প্রত্যেকটা ডিজাইনে বা ইমেজে মূল অংশ কোনটি সেটা আগে বের করতে হবে। আর এভাবেই ফ্রেমিং এর ব্যবহার করা হয় ।

৯. টেক্সচার ও প্যাটার্ন (Texture and Pattern) : বিভিন্ন টেক্সচার ও প্যাটার্ন যেকোনো ডিজাইনের একটি অত্যাবশ্যকীয় অংশের মতো। হয়তো এগুলো কোনো ডিজাইনের সম্পূর্ণ অংশ জুড়ে থাকবে না, কিন্তু বেশ ভালো একটা ভূমিকা রাখবে। অনেকে ডিজাইনে টেক্সচারকে খুব একটা গুরুত্ব না দিলেও এটা ডিজাইনের যে ভিন্নমাত্রা দিয়ে থাকে সত্যিই তা আকর্ষণীয়। Bevel. Emboss অথবা UV Varnish এর মতো টেক্সচার প্রদানে যেকোনো ডিজাইন একটি ভিন্নমাত্রা পায়। তাই ভিজ্যুয়াল ডিজাইনের ক্ষেত্রে এই টেক্সচার ও প্যাটার্নের ভূমিকা অনস্বীকার্য।

১০. ভিজ্যুয়াল কনসেপ্ট (Visual Concept) : এই নীতিটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। প্রতিটি ডিজাইনের ভেতরের খবর বলে দেয় এই ভিজ্যুয়াল কনসেপ্ট। এমনভাবে ডিজাইন করা উচিত যাতে ডিজাইনে থাকা প্রতিটি বিষয় একে অপরের সাথে ভালোভাবে সংযুক্ত হতে পারে। এভাবে আপনি খুব সহজেই আপনার ক্লায়েন্টের প্রয়োজনীয়তা অনুযায়ী সফলতা অর্জন করতে পারবেন। এছাড়া একটি পরিপূর্ণ ডিজাইন অনেকদিন পর্যন্ত মানুষের মনে জায়গা করে থাকে।

🚻 শ্রেণির কাজ : ছকে বিভিন্ন গ্রাফিক্স ডিজাইনের উপাদানগুলোর নাম দেওয়া আছে। এগুলোর মধ্য থেকে বিভিন্ন ধরনের গ্রাফিক্স ডিজাইনের উপাদানের কাজ লিখ। একটি করে দেখানো হলো ।

ডিজাইনের উপাদানের নামকাজ
পয়েন্ট, লাইন ও শেইপদুইটি পয়েন্ট একত্রিত করলে একটি লাইন তৈরি হয়। আবার এই দুটির সাথে আরেকটি পয়েন্ট যুক্ত করলে একটি ত্রিভুজাকার শেইপ তৈরি হবে।
রঙ 
টাইপোগ্রাফি 
ব্যালান্স, রিদম ও কন্ট্রাস্ট 
স্কেল 
গ্রিড ও অ্যালাইনমেন্ট 
ফ্রেমিং 
টেক্সচার ও প্যাটার্ন 
ভিজ্যুয়াল কনসেপ্ট 

গ্রাফিক্স ডিজাইনের মূলনীতি

গ্রাফিক্স ডিজাইনাররাও ডিজাইনের নীতিগুলো মেনে চলে। এই মৌলিক নীতিগুলো ডিজাইনিং কাজের অংশের জন্য ভারসাম্য এবং স্থিতিশীলতা তৈরি করতে সহায়তা করে।

১. ডোমিন্যান্স এন্ড অ্যামফেসিস (Dominance and Emphasis ) : এটি একটি নকশার কেন্দ্রবিন্দু গঠন করে। এটি ডিজাইন প্রবাহে সাহায্য করে এবং ব্যবহারকারীদের ডিজাইনের অন্যান্য অংশে সহায়তা করতে পারে।

২. ব্যালেন্স (Balance) : গ্রাফিক্স ডিজাইনারদের বিবেচনা করতে হবে কীভাবে ডিজাইন উপাদান প্রদান করা হয়। ভারসাম্যপূর্ণ নকশা স্থিতিশীলতা প্রদান করে, ফলে ভারসাম্যহীন নকশা গতিশীল হতে পারে। আকৃতি, রঙ, টেক্সচার, লাইন এবং অন্যান্য উপাদানের মাধ্যমে ভারসাম্য অর্জন করা হয়।

৩. হারমনি (Harmony) : হারমনি গ্রাফিক্স ডিজাইনের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য। একটি ভালো ডিজাইনের জন্য প্রতিটি উপাদানকে একসাথে কাজ করতে হবে এবং একে অপরের পরিপূরক হতে হবে। যাইহোক, সবকিছু সমান হলে, নকশা একঘেয়ে হয়ে যেতে পারে। নকশাগুলোকে সাদৃশ্য এবং বৈসাদৃশ্যের মধ্যে একটি সূক্ষ্ম ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে।

৪. কন্ট্রাস্ট (Contrast) : ডিজাইনের নির্দিষ্ট কিছু দিককে জোর দেওয়ার জন্য কন্ট্রাস্টিং ব্যবহার করে থাকেন। কন্ট্রাস্টে ব্যবহার করা উপাদানগুলোর মধ্যে পার্থক্য করতে ডিজাইনের মূল উপাদানগুলোকে হাইলাইট করে, যা আলাদা হয়ে থাকে।

■ গ্রাফিক্স ডিজাইনার

গ্রাফিক্স ডিজাইনার হলেন একজন ব্যক্তি যিনি বিভিন্ন ধারণা বা আইডিয়া এবং তথ্যকে বিভিন্ন পদ্ধতিতে ব্যবহারের মাধ্যমে, বিভিন্ন শব্দসমূহ, প্রতীক এবং ছবিকে একত্রিত করে দৃশ্যমান করে তোলেন। এই সমস্ত কাজ করার জন্য গ্রাফিক্স ডিজাইনার অক্ষরের কম্বিনেশন, ভিজ্যুয়াল আর্টস এবং পেইজ লেআউট পদ্ধতি ব্যবহার করে থাকেন।

■ গ্রাফিক্স ডিজাইনের গুরুত্ব

গ্রাফিক্স ডিজাইনের গুরুত্ব অপরিসীম। কেননা, গ্রাফিক্স ডিজাইনের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের ছবি তৈরি করা, পরিবর্তন করা, পরিবর্ধন করা, সংযোজন করা, ছবির উপর বিভিন্ন লেখা বসানো, ছবি ছোট বা বড় করা, ছবির অপ্রয়োজনীয় অংশ কেটে ফেলা, কয়েকটি ছবিকে একত্রিত করে একটি ছবিতে রূপান্তর করা ইত্যাদি যাবতীয় কাজ করা যায়। তাছাড়াও ছবিতে বিভিন্ন ধরনের ইফেক্ট প্রয়োগ করা ও নিজের আইডিয়া থেকে ছবিকে পরিবর্তন ও পরিবর্ধন করা সম্ভব।

■ গ্রাফিক্স ডিজাইনের প্রকারভেদ

গ্রাফিক্স ডিজাইনের ক্ষেত্রটি অনেক বড় এবং দিন দিন এর চাহিদা আরো বেড়েই চলেছে। গ্রাফিক্স ডিজাইন সাধারণত বিভিন্ন প্রকারের হয়ে থাকে, তবে কাজের ধরন এবং চাহিদাগতভাবে গ্রাফিক্স ডিজাইন সাধারণত ২ প্রকার। যথা-

১. প্রকৌশলী ড্রয়িং (Engineering Drawing) : প্রকৌশলী ড্রয়িং হলো নিজ হাতে বিশেষ কোন রঙ বা কালি ব্যবহার করে কাগজে অথবা দেয়ালে ড্রয়িং করা। এটাও গ্রাফিক্স ডিজাইনের অন্তর্ভুক্ত। এটি প্রাচীনকাল থেকেই শিল্প হিসেবে চলে আসছে। বর্তমানে প্রকৌশলী ড্রয়িং এর চাহিদা অনেক।

২. কম্পিউটার গ্রাফিক্স (Computer Graphics ) : কম্পিউটার প্রযুক্তি আবির্ভাবের অনেক পরে কম্পিউটার গ্রাফিক্স শুরু হয়। বলা যায় ডিজিটাল যুগে এসে কম্পিউটার গ্রাফিক্স এর সূচনা হয়েছে। কম্পিউটার গ্রাফিক্স বলতে কম্পিউটারের সাহায্যে যে ধরনের গ্রাফিক্স ডিজাইন করা হয় তাকেই বোঝায়। কম্পিউটার গ্রাফিক্সকে ২টি বিশেষ ক্যাটাগরিতে বিভক্ত করা যায়। যথা—

ক. স্টিল ইমেজ গ্রাফিক্স (Still Image Graphics) : স্টিল ইমেজ গ্রাফিক্স বলতে 2D কোন ইমেজ বা ছবিকে বোঝানো হয়। অর্থাৎ যেই ধরনের ইমেজ কাগজে প্রিন্ট হয় এবং নিজ থেকে সে নড়াচড়া করতে পারে। যেমন— পোস্টার ডিজাইন, ব্যানার ডিজাইন, ফেস্টুন ডিজাইন ইত্যাদি। এই ধরনের ইমেজ বা ছবিকে স্টিল পিকচার / স্টিল ইমেজ / স্টিল গ্রাফিক্স বলে। আবার স্টিল ইমেজ গ্রাফিক্স তিন ভাগে বিভক্ত।

১. রাস্টার ইমেজ ( Ruster Image ) 

২. ভেক্টর ইমেজ (Vector Image )

৩. টাইপোগ্রাফি (Typography)।

খ. মোশন গ্রাফিক্স (Motion Graphics) : মোশন গ্রাফিক্স বলতে এক ধরনের ভিডিও চিত্রকে বোঝানো হয়। যেটা স্বাভাবিক ভাবে নড়াচড়া করে। মোশন গ্রাফিক্স সাধারণত 3D ক্যাটাগরির হয়ে থাকে। অর্থাৎ এটি এক ধরনের অ্যানিমেশন যাকে মোশন গ্রাফিক্স বলে।

মোশন গ্রাফিক্স আবার ২ প্রকার। যথা- ১. অ্যানিমেশন গ্রাফিক্স; ২. ভিডিও গ্রাফিক্স। এছাড়াও বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের ওপর ভিত্তি করে গ্রাফিক্স ডিজাইনকে আরো বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা যায়। নিচে বিভিন্ন ধরনের গ্রাফিক্স ডিজাইন সম্পর্কে আলোচনা করা হলো। যেমন-

i. ব্র্যান্ডিং গ্রাফিক্স ডিজাইন : ভিজ্যুয়াল আইডেন্টিটি গ্রাফিক্স ডিজাইন ব্র্যান্ডের ভিজ্যুয়াল উপাদানের উপর ফোকাস করে। এটির লক্ষ্য হলো ছবি, আকৃতি এবং রঙের মাধ্যমে একটি ব্র্যান্ডের পরিচয় উপস্থাপন করা। এর মাধ্যমে গ্রাফিক্স ডিজাইনাররা লোগো, টাইপোগ্রাফি, কালার প্যালেট এবং ইমেজ লাইব্রেরির মতো উপাদান তৈরি করে যা একটি ব্র্যান্ডের প্রতিনিধিত্ব করে। তারা সমস্ত ব্যবহার জুড়ে ব্র্যান্ডের সামঞ্জস্য নিশ্চিত করতে ভিজ্যুয়াল ব্র্যান্ডের নির্দেশিকাও তৈরি করে।

ii. মার্কেটিং ও বিজ্ঞাপন গ্রাফিক্স ডিজাইন : প্রিন্ট বিজ্ঞাপন যেমন— পোস্টার, বিলবোর্ড, ফ্লায়ার, ক্যাটালগ এবং প্যাকেজিং বা ডিজিটাল বিজ্ঞাপন, টেলিভিশন বিজ্ঞাপন, ভিডিও বিজ্ঞাপন, বা সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টগুলো মার্কেটিং এবং বিজ্ঞাপন গ্রাফিক্স ডিজাইন এর অন্তর্গত। এই ক্ষেত্রে গ্রাফিক্স ডিজাইনাররা ভোক্তাদের নিত্যদিনের পছন্দের বিষয়গুলো নিয়ে চিন্তাভাবনা করে এমন ডিজাইন তৈরি করে যা সকলকে আকৃষ্ট করে। এই ধরনের ডিজাইনে কিভাবে পণ্য বিক্রি করতে হয় এবং কীভাবে ভোক্তাদের প্রলুব্ধ করতে হয় সে সম্পর্কে প্রচুর জ্ঞান থাকতে হয়।

iii. ওয়েব ডিজাইন : ওয়েব ডিজাইনের ক্ষেত্রে ওয়েবসাইটগুলোর নান্দনিকতা, বিন্যাস, গঠন এবং ডিজাইনের পরিকল্পনা এবং নির্মাণ জড়িত। ওয়েব ডিজাইনাররা আকর্ষণীয় ও ব্যবহারকারী সাইট এবং পেইজগুলো তৈরি করতে টেক্সট, ফটো, গ্রাফিক্স এবং ভিডিওর মতো বিভিন্ন ভিজ্যুয়াল উপাদানগুলোকে একত্রিত করে। ওয়েব ডিজাইন UX এবং UI ডিজাইনের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সংযুক্ত।

iv. প্রকাশনা গ্রাফিক্স ডিজাইন : প্রকাশনায় গ্রাফিক্স ডিজাইন লেআউট তৈরি, ফটোগ্রাফি, গ্রাফিক্স ও চিত্রসহ টাইপোগ্রাফি এবং আর্টওয়ার্ক নির্বাচন করার উপর ফোকাস করে। এই ক্ষেত্রে গ্রাফিক্স ডিজাইনাররা বই, সংবাদপত্র, ম্যাগাজিন এবং ক্যাটালগ নিয়ে কাজ করে। তাদের রঙ ব্যবস্থাপনা, মুদ্রণ এবং ডিজিটাল প্রকাশনা বোঝতে হয়।

v. প্যাকেজিং গ্রাফিক্স ডিজাইন : প্যাকেজিং শুধুমাত্র পণ্য রক্ষা করে না, এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিপণন সরঞ্জামও। যেকোনো মার্কেটজাত পণ্যের প্যাকেজিং ডিজাইন সুন্দর ও আকর্ষণীয় করতে হয়। প্যাকেজিং ডিজাইন যত স্ট্যান্ডার্ড হবে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের পণ্য সম্পর্কে একটি ভালো ধারণাও তৈরি হবে। এটি তৈরির সময় মনে রাখতে হবে যে, যা গ্রাহকের কাছে আলাদা। প্যাকেজিং গ্রাফিক্স ডিজাইনের জন্য প্রিন্ট প্রসেস, ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডিজাইন ও ম্যানুফ্যাকচারিং বোঝার প্রয়োজন।

vi. মোশন গ্রাফিক্স ডিজাইন : বর্তমান সময়ে Motion Graphics Design এর চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিভিন্ন ধরনের টেলিভিশন কার্টুন নির্মাণে এই ধরনের ডিজাইন উপযোগী। এছাড়াও অ্যানিমেশন, ব্যানার, টাইটেল সিকোয়েন্স, ট্রেলার বা ভিডিও গেম অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে।

vii. এনভায়রনমেন্টাল বা পরিবেশগত গ্রাফিক্স ডিজাইন : এনভায়রনমেন্টাল গ্রাফিক্স ডিজাইন হলো একটি মাল্টিডিসিপ্লিনারি গ্রাফিক্স যা আর্কিটেকচারাল, ইন্টেরিয়ার, ল্যান্ডস্কেপ এবং ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডিজাইনকে একত্রিত করে। সাধারণত এই ধরনের গ্রাফিক্স ডিজাইনে আর্কিটেকচারে একটি পটভূমি থাকবে। ডিজাইনারদের শিল্প নকশা এবং স্থাপত্য পরিকল্পনার বিষয়ে ধারণা থাকা উচিত। পাবলিক ট্রান্সপোর্টেশন নেভিগেশন, দোকানের নকশা, সাইনেজ এবং অফিস ব্র্যান্ডিংয়ের মতো প্রকল্পগুলোতে কাজ করতে পারে।

Content added || updated By
Promotion