গ্রিকসভ্যতা

নবম-দশম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - বাংলাদেশের ইতিহাস ও বিশ্বসভ্যতা - বিশ্বসভ্যতা (মিশর, সিন্ধু, গ্রিক ও রোম) | NCTB BOOK

পটভূমি: গ্রিসের মহাকবি হোমারের 'ইলিয়াড' ও 'ওডিসি' মহাকাব্য দুটিতে বর্ণিত চমকপ্রদ কাহিনির মধ্যে লুকিয়ে থাকা সত্যকে খুঁজে বের করার অদম্য ইচ্ছা উৎসাহিত করে তোলে প্রত্নতত্ত্ববিদদের । উনিশ শতকের শেষে হোমারের কাহিনি আর কবিতায়ই তা সীমাবদ্ধ থাকে না, বেরিয়ে আসে এর ভিতরের সঠিক ইতিহাস । ইজিয়ান সাগরের দ্বীপপুঞ্জে এবং এশিয়া মাইনরের পশ্চিম উপকূলে আবিষ্কৃত হয় উন্নত এক প্রাচীন নগর সভ্যতা । সন্ধান মেলে মহাকাব্যের ট্রয় নগরীসহ একশ' নগরীর ধ্বংসস্তূপের। যাকে বলা হয় ইজিয়ান সভ্যতা বা প্রাক-ক্লাসিক্যাল গ্রিকসভ্যতা । ক্রিট দ্বীপ, গ্রিস উপদ্বীপের মূল ভূখণ্ড, এশিয়া মাইনরের পশ্চিম উপকূলে এবং ইজিয়ান সাগরের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দ্বীপ নিয়ে গড়ে ওঠে এই সভ্যতা। এই সভ্যতার অধিবাসীরা ছিল সমৃদ্ধশালী সংস্কৃতি-ঐতিহ্যের অধিকারী । এই সভ্যতাকে দুইটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে । যথা-

১. মিনিয়ন সভ্যতা : ক্রিট দ্বীপে যে সভ্যতার উদ্ভব এর স্থায়িত্ব ধরা হয়েছে ৩০০০ থেকে ১৪০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ পর্যন্ত।

২. দ্বিতীয়টি হচ্ছে মাইসিনিয় বা ইজিয়ান সভ্যতা : গ্রিসের মূল ভূখণ্ডে দক্ষিণ অঞ্চলে অবস্থিত মাইসিনি নগরের নাম অনুসারে এর নামকরণ হয়। এই সভ্যতার স্থায়িত্ব ছিল ১৬০০ থেকে ১১০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ পর্যন্ত । ধারণা করা হয় বন্যা অথবা বিদেশি আক্রমণের ফলে এই সভ্যতার অবসান ঘটে । 

ভৌগোলিক অবস্থান ও সময়কাল : গ্রিস দেশটি আড্রিয়াটিক সাগর, ভূমধ্যসাগর ও ইজিয়ান সাগর দ্বারা পরিবেষ্টিত। গ্রিকসভ্যতার সঙ্গে দুইটি সংস্কৃতির নাম জড়িত । একটি ‘হেলেনিক' অপরটি ‘হেলেনিস্টিক’। গ্রিক উপদ্বীপের প্রধান শহর এথেন্সকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে ‘হেলেনিক সংস্কৃতি' । অপরদিকে গ্রিক বীর আলেকজান্ডারের নেতৃত্বে মিশরের আলেজান্দ্রিয়াকে কেন্দ্র করে গ্রিক ও অ-গ্রিক সংস্কৃতির মিশ্রণে জন্ম হয় নতুন এক সংস্কৃতির । ইতিহাসে এ সংস্কৃতি ‘হেলেনিস্টিক সংস্কৃতি' নামে পরিচিত ।

 

সামরিক নগররাষ্ট্র স্পার্টা : প্রাচীন গ্রিসে যে অসংখ্য নগররাষ্ট্র গড়ে উঠেছিল তার একটি ছিল স্পার্টা । এ নগররাষ্ট্রের অবস্থান ছিল দক্ষিণ গ্রিসের পেলোপনেসাস নামক অঞ্চলে। অন্যান্য নগররাষ্ট্র থেকে স্পার্টা ছিল আলাদা । স্পার্টানদের প্রকৃতি বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, সমরতন্ত্র দ্বারা তারা প্রভাবিত ছিল । মানুষের মানবিক উন্নতির দিকে নজর না দিয়ে সামরিক শক্তি সঞ্চয়ের দিকে তাদের দৃষ্টি ছিল বেশি। ৮০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে দীর্ঘ যুদ্ধের পর ডোরিয় যোদ্ধারা স্পার্টা দখল করতে সক্ষম হয়েছিল । এই পরাজিত স্থানীয় অধিবাসীদের ভূমিদাস বা হেলট বলা হতো । এরা সুযোগ পেলেই বিদ্রোহ করত । পরাজিত অধিবাসী যারা ভূমিদাস হতে বাধ্য হয়েছিল তাদের সংখ্যা ছিল অনেক বেশি। ফলে ক্ষমতা টিকিয়ে রাখা আর বিদ্রোহ দমন ছাড়া স্পার্টার রাজাদের মাথায় আর কোনো চিন্তা ছিল না । স্পার্টানদের জীবন স্পার্টা রক্ষার জন্যই নিয়োজিত ছিল । স্পার্টার সমাজ তৈরি হয়েছিল যুদ্ধের প্রয়োজনকে ঘিরে। সরকারের মূল উদ্দেশ্য ছিল যুদ্ধের জন্য নাগরিকদের প্রস্তুত করা ও যুদ্ধ পরিচালনা করা । সামরিক দিকে অত্যধিক মনোযোগ দেওয়ার কারণে সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে তারা ছিল অনগ্রসর ।

 

গণতান্ত্রিক নগররাষ্ট্র এথেন্স : প্রাচীন গ্রিসে প্রথম গণতন্ত্রের সূচনা হয় এথেন্সে। তবে, প্রথম দিকে এথেন্সে ছিল রাজতন্ত্র । খ্রিষ্টপূর্ব সপ্তম শতকে রাজতন্ত্রের পরিবর্তে এক ধরনের অভিজাততন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয় । ক্ষমতা চলে আসে অভিজাতদের হাতে। দেশ শাসনের নামে তারা শুধু নিজের স্বার্থই দেখত। ফলে সাধারণ মানুষের মনে ক্ষোভের সৃষ্টি হয় । যদিও তাদের পক্ষে ক্ষমতা দখল করা সম্ভব হয়নি । কিন্তু তাদের নামে কিছু লোক ক্ষমতা হাতে নিয়ে নেয় । তাদের বলা হতো 'টাইরান্ট' । জনগণের মধ্যে অসন্তোষ এবং বঞ্চিত কৃষকদের মধ্যে বিদ্রোহের আশঙ্কা দেখা দেয়। ফলে সপ্তম খ্রিষ্টপূর্বাব্দের মাঝামাঝি সময়ে রাষ্ট্রব্যবস্থায় এক পরিবর্তন আসে । আগে অভিজাত পরিবারের সন্তান অভিজাত বলে গণ্য হতো । এখন অর্থের মানদণ্ডে অভিজাত হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হলো ।

দেশে মারাত্মক সংকটের সময়ে সব শ্রেণি সর্বসম্মতভাবে কয়েকজনকে সংস্কারের জন্য আহ্বান জানায় । তার মধ্যে সবচেয়ে খ্যতিমান ছিলেন অভিজাত বংশে জন্ম নেয়া ‘সোলন' । তিনি কিছু নতুন আইন প্রণয়ন করেন এবং গ্রিক আইনের কঠোরতা হ্রাস করেন । তিনি ঋণ থেকে কৃষকদের মুক্ত করার জন্য আইন পাস করেন । তাঁর সময় অনেক অর্থনৈতিক সংস্কারও করা হয় । সোলনের পর জনগণের কল্যাণে তাদের অধিকার দেওয়ার জন্য এগিয়ে আসেন পিসিসট্রেটাস এবং ক্লিসথেনিস । তারা জনগণের কল্যাণের জন্য অনেক আইন পাস করেন । তবে চূড়ান্ত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হয় পেরিক্লিসের সময়। তার সময়কে গ্রিকসভ্যতার ‘স্বর্ণযুগ' বলা হয়ে থাকে । ৪৬০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে ক্ষমতায় এসে তিনি ৩০ বছর রাজত্ব করেন। তিনি নাগরিকদের সব রাজনৈতিক অধিকারের দাবি মেনে নেন ।

তিনি এ সময় প্রশাসন, আইন ও বিচার বিভাগে নাগরিকদের অবাধ অংশগ্রহণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করেন। নাগরিকদের মধ্য থেকে নিযুক্ত জুরি বিচারের দায়িত্ব পালন করত । পেরিক্লিসের যুগে এথেন্স সর্বক্ষেত্রে উন্নতির শিখরে আরোহণ করে । ৪৩০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে এথেন্সের ভয়াবহ মহামারিতে এক-চতুর্থাংশ লোক মৃত্যুবরণ করে । এই মহামারিতে পেরিক্লিসেরও মৃত্যু ঘটে । তাঁর মৃত্যুর পর পরই এথেন্সের দুর্ভোগ শুরু হয় ।
জ্ঞান-বিজ্ঞান, দর্শন, সাহিত্য ও রাজনীতি সর্বক্ষেত্রে বিশ্বসভ্যতায় অবিস্মরণীয় অবদান রাখা নগররাষ্ট্র এথেন্সের পতন হয় সামরিক নগররাষ্ট্র স্পার্টার কাছে । উভয় রাষ্ট্রের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদি যে যুদ্ধ সংঘটিত হয় তা ইতিহাসে পেলোপনেসিয়ার যুদ্ধ নামে পরিচিত। ৪৬০ থেকে ৪০৪ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ পর্যন্ত মোট তিনবার এই যুদ্ধ সংঘটিত হয় । এই যুদ্ধে দুই রাষ্ট্র পরস্পরের মিত্রদের নিয়ে জোট গঠন করে । এথেন্সের মিত্র রাষ্ট্র নিয়ে গঠিত জোটের নাম ছিল ‘ডেলিয়ান লীগ'। অপরদিকে স্পার্টা তার মিত্রদের নিয়ে যে জোট গঠন করে, তার নাম ছিল ‘পেলোপনেসীয় লীগ” । এই মরণপণ যুদ্ধে এথেন্সের মান-মর্যাদা ও স্বাধীনতা বিলীন হয়ে যায় । ৩৬৯ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ এথেন্স চলে যায় স্পার্টার অধীনে । এরপর নগররাষ্ট্র থি অধিকার করে নেয় এথেন্স । ৩৩৮ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ মেসিডোনের (গ্রিস) রাজা ফিলিপ থিরাস দখল করে নিলে এথেন্স মেসিডোনের অধীনে চলে যায় ।

 

সভ্যতায় গ্রিসের অবদান: ভৌগোলিক কারণে গ্রিক নগর রাষ্ট্রগুলো একে অপরের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকলেও তাদের সংস্কৃতি ছিল অভিন্ন । রাজনৈতিক অনৈক্য থাকা সত্ত্বেও তারা একই সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের উত্তরাধিকারী বলে মনে করত । তাদের ভাষা, ধর্ম, সাহিত্য, খেলাধুলা – সবকিছু এক সংস্কৃতির বন্ধনে আবদ্ধ করে রেখেছিল। এই সংস্কৃতির বিভিন্ন ক্ষেত্রে মূল অবদান ছিল এথেন্সের । আর এই সংস্কৃতির নাম হচ্ছে হেলেনীয় সংস্কৃতি ।

শিক্ষা : শিক্ষা সম্পর্কে গ্রিক জ্ঞানী-গুণীরা বিভিন্ন ধারণা পোষণ করতেন । তারা নৈতিক ও ধর্মীয় শিক্ষার প্রতি গুরুত্ব দিয়েছেন । তাদের কেউ কেউ মনে করতেন সুশিক্ষিত নাগরিকের হাতেই শাসনভার দেওয়া উচিত । সরকারের চাহিদা ও লক্ষ্য অনুযায়ী শিক্ষাব্যবস্থা থাকা উচিত। শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য ছিল আনুগত্য ও শৃঙ্খলা শিক্ষা দেওয়া । স্বাধীন গ্রিসবাসীর ছেলেরা সাত বছর বয়স থেকে পাঠশালায় যাওয়া-আসা করত । ধনী ব্যক্তিদের ছেলেদের ১৮ বছর পর্যন্ত লেখাপড়া করতে হতো। কারিগর আর কৃষকের ছেলেরা প্রাথমিক শিক্ষা পেত। দাসদের সন্তানের জন্য বিদ্যালয়ে যাওয়া নিষিদ্ধ ছিল । মেয়েরাও কোনো প্রতিষ্ঠানে গিয়ে লেখাপড়া করতে পারত না ।

সাহিত্য : সাহিত্যের ক্ষেত্রে প্রাচীন গ্রিসের সৃষ্টি আজও মানবসমাজে মূল্যবান সম্পদ। হোমারের ইলিয়াড’ ও ‘ওডিসি' মহাকাব্য তার অপূর্ব নিদর্শন। সাহিত্য ক্ষেত্রে চূড়ান্ত বিকাশ ঘটেছিল নাটক রচনায়। বিয়োগান্ত নাটক রচনায় গ্রিকরা বিশেষ পারদর্শী ছিল। এসকাইলাসকে এই ধরনের নাটকের জনক বলা হয় । তাঁর রচিত নাটকের নাম 'প্রমিথিউস বাউন্ড'। গ্রিসের শ্রেষ্ঠ নাট্যকার ছিলেন সোফোক্লিস। তিনি একশ'টিরও বেশি নাটক রচনা করেন। তাঁর বিখ্যাত নাটকের মধ্যে রাজা ইডিপাস, আন্তিগোনে ও ইলেকট্রা অন্যতম। আর একজন বিখ্যাত নাট্যকারের নাম ইউরিপিদিস। এরিস্টোফেনেসের মিলনান্তক ও ব্যঙ্গ রচনায় বিশেষ খ্যাতি ছিল।
ইতিহাস রচনায়ও গ্রিকরা কৃতিত্ব দেখিয়েছিল। হেরোডটাস ইতিহাসের জনক নামে পরিচিত ছিলেন। হেরোডটাস রচিত ইতিহাস-সংক্রান্ত প্রথম বইটি ছিল গ্রিস ও পারস্যের মধ্যে যুদ্ধ নিয়ে। থকিডাইডেস ছিলেন বিজ্ঞানসম্মত ইতিহাসের জনক। তাঁর বইটির শিরোনাম ছিল 'দ্য পেলোপনেসিয়ান ওয়র' ।

ধর্ম : গ্রিকদের বারোটি দেব-দেবী ছিল। বিভিন্ন প্রাকৃতিক শক্তির পূজা ছাড়াও তারা বীরযোদ্ধাদের পূজা করত । জিউস ছিল দেবতাদের রাজা। অ্যাপোলো ছিলেন সূর্য দেবতা, পোসিডন ছিলেন সাগরের দেবতা। এথেনা ছিলেন জ্ঞানের দেবী । বারোজনের মধ্যে এই চারজন ছিলেন শ্রেষ্ঠ। রাষ্ট্রের নির্দেশে পুরোহিতরা ধর্মীয় দায়িত্ব পালন করতেন। ডেলোস দ্বীপে অবস্থিত ডেলফির মন্দিরে বিভিন্ন নগররাষ্ট্রের মানুষ সমবেত হয়ে এক সঙ্গে অ্যাপোলো দেবতার পূজা করত।

দর্শন: দার্শনিক চিন্তার ক্ষেত্রে গ্রিসে অভূতপূর্ব উন্নতি হয়েছিল । পৃথিবী কীভাবে সৃষ্টি হয়েছে, প্রতিদিন কীভাবে এর পরিবর্তন ঘটছে—এসব ভাবতে গিয়ে গ্রিসে দর্শনচর্চার সূত্রপাত। থালেস ছিলেন প্রথম দিককার দার্শনিক। তিনিই প্রথম সূর্যগ্রহণের প্রাকৃতিক কারণ ব্যাখ্যা করেন। এরপর গ্রিসে যুক্তিবাদী দার্শনিকের আবির্ভাব ঘটে। তাঁদের বলা হতো সফিস্ট। তাঁরা বিশ্বাস করতেন যে, চূড়ান্ত সত্য বলে কিছু নেই। পেরিক্লিস তাঁদের অনুসারী ছিলেন। সক্রেটিস ছিলেন এ দার্শনিকদের মধ্যে সবচেয়ে খ্যাতিমান । তার শিক্ষার মূল দিক ছিল আদর্শ রাষ্ট্র ও সৎ নাগরিক গড়ে তোলা । অন্যায় শাসনের প্রতিবাদ করার শিক্ষাও তিনি দেন। সক্রেটিসের শিষ্য প্লেটো গ্রিক দর্শনকে চরম উন্নতির দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সক্ষম হন। প্লেটোর শিষ্য অ্যারিস্টটলও একজন বড় দার্শনিক ছিলেন ।

বিজ্ঞান : গ্রিকরা প্রথম বিজ্ঞানচর্চার সূত্রপাত করে ৬০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে পৃথিবীর মানচিত্র প্রথম অঙ্কন করেন গ্রিক বিজ্ঞানীরা। তারাই প্রথম প্রমাণ করেন যে, পৃথিবী একটি গ্রহ এবং তা নিজ কক্ষপথে আবর্তিত হয় । গ্রিক জ্যোতির্বিদরা সূর্য ও চন্দ্রগ্রহণের কারণ নির্ণয় করতে সক্ষম হন। চাঁদের নিজস্ব কোনো আলো নেই। বস্ত্র ও বিদ্যুৎ জিউসের ক্রোধের কারণে নয়, প্রাকৃতিক কারণে ঘটে – এই সত্য তারাই প্রথম আবিষ্কার করেন। জ্যামিতির পণ্ডিত ইউক্লিড পদার্থবিদ্যায়ও পারদর্শী ছিলেন। বিখ্যাত গণিতবিদ পিথাগোরাস ও চিকিৎসা বিজ্ঞানী হিপোক্রেটসের যথেষ্ট খ্যাতি ছিল ।

স্থাপত্য ও ভাস্কর্য : গ্রিক শিল্পের বিশেষ করে স্থাপত্য ও ভাস্কর্যে বিশেষ উন্নতি হয়েছিল। গ্রিক চিত্রশিল্পের নিদর্শন মৃৎপাত্রে আঁকা চিত্রের মধ্যে দেখা যায় । স্থাপত্যের সুন্দর সুন্দর নিদর্শন গ্রিসের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে আছে । বড় বড় স্তম্ভের উপর তারা প্রাসাদ তৈরি করত । আর প্রাসাদের স্তম্ভগুলো থাকত অপূর্ব কারুকার্যখচিত । পার্থেনন মন্দির বা দেবী এথেনার মন্দির স্থাপত্য কীর্তির অন্যতম নিদর্শন। এথেন্সের অ্যাক্রোপলিসে স্থাপত্যের সুন্দর নিদর্শনের ভগ্নাবশেষ এখনও চোখে পড়ে । গ্রিক ভাস্কর্য পৃথিবীর শিল্পকলার ইতিহাসে এক স্বর্ণযুগের জন্ম দিয়েছিল । সে যুগের প্রখ্যাত ভাস্কর্য শিল্পী ছিলেন মাইরন, ফিদিয়াস ও প্রাকসিটেলেস ।

খেলাধুলা : শিশুদের খেলাধুলার প্রতি বিশেষ নজর দেওয়া হতো। বিদ্যালয়ে তাদের খেলাধুলার হাতেখড়ি হতো। শরীরচর্চা খেলাধুলার প্রতি গ্রিকদের যথেষ্ট আগ্রহ ছিল। উৎসবের দিনে গ্রিসে নানা ধরনের ক্রীড়া প্রতিযোগিতা হতো। এর মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত ছিল দেবতা জিউসের সম্মানে অনুষ্ঠিত প্রতিযোগিতা । অলিম্পিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় গ্রিসের শ্রেষ্ঠ ক্রীড়াবিদরা অংশ নিত। এতে দৌড়ঝাঁপ, মল্লযুদ্ধ, ঢাকা নিক্ষেপ, বর্শা ছোড়া, মুষ্টিযুদ্ধ ইত্যাদি বিষয় প্রতিযোগিতার ব্যবস্থা থাকত । বিজয়ীদের জলপাই গাছের ডাল- পাতায় তৈরি মালা দিয়ে পুরস্কৃত করা হতো। প্রতি চার বছর পরপর এই খেলা অনুষ্ঠিত হতো। এ খেলায় বিভিন্ন নগররাষ্ট্রের খেলোয়াড়রা অংশ নিত। এই খেলাকে ঘিরে গ্রিক নগররাষ্ট্রগুলোর মধ্যে শত্রুতার বদলে সৌহার্দ্যপূর্ণ মনোভাব গড়ে ওঠে।

Content added By

আরও দেখুন...

Promotion

Promotion