ঘনবস্তুতে দ্বিপদী ও ত্রিপদী রাশি খুঁজি

অষ্টম শ্রেণি (মাধ্যমিক ২০২৪) - গণিত - Mathematics - NCTB BOOK

 

ঘনবস্তুতে দ্বিপদী ও ত্রিপদী রাশি খুঁজি

পূর্বের শ্রেণিতে তোমরা তোমাদের অভিজ্ঞতা অর্জনে চলক, বীজগাণিতিক রাশি, পদ, বীজগাণিতিক রাশির উৎপাদক, লসাগু, গসাগু ইত্যাদি ব্যবহার করেছ। বাস্তব জীবনে সমস্যা সমাধানে বীজগাণিতিক রাশি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তোমরা বর্গক্ষেত্র এবং আয়তক্ষেত্রের বিষয়ে দ্বিপদী এবং ত্রিপদী রাশির ব্যবহার শিখেছ। তোমরা শিখেছ, আয়তক্ষেত্র একটি দ্বিমাত্রিক আকৃতি। অর্থাৎ এটি পরিমাপের দুটি মাত্রা- দৈর্ঘ্য এবং প্রস্থ। বর্গক্ষেত্র আয়তক্ষেত্রের একটি বিশেষ অবস্থা। বর্গক্ষেত্রের দৈর্ঘ্য এবং প্রস্থ সমান। মজার ব্যাপার হলো, আমাদের চারপার্শ্বে দ্বিমাত্রিক বস্তুর চেয়ে ত্রিমাত্রিক বস্তুই বেশি। যেমন- বই, খাতা, আলমারি, শোকেস, বুকশেল্ফ ইত্যাদি। ত্রিমাত্রিক বস্তুতে দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ছাড়াও একটি মাত্রা যোগ হয়, সেটি হলো- উচ্চতা। দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ সম্বলিত দ্বিমাত্রিক বস্তুকে আমরা যেমন আয়তাকার বলি, তেমনি দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও উচ্চতা সম্বলিত ত্রিমাত্রিক বস্তুকে ঘনক আকার বলি। এই অভিজ্ঞতায় আমরা এ সকল ঘনবস্তুর মাধ্যমে দ্বিপদী এবং ত্রিপদী রাশির ব্যবহার শিখব। এসো আমরা প্রথমে জেনে নিই কীভাবে দ্বিমাত্রিক বস্তু থেকে দ্বিপদী রাশি গঠন করা যায়।

 

 

পর্যবেক্ষণ

প্যাটার্ন গণিতের একটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তোমরা কি জানো গণিতবিদরা বা বিজ্ঞানীগণ কোনো তত্ত্ব দেওয়ার আগে এবং প্রমাণের আগে কী করেন? তারা যে বিষয়ে তত্ত্ব দিবেন সেই বিষয়ের কিছু ঘটনা গভীর মনোযোগ দিয়ে পর্যবেক্ষণ করেন। ঘটনাগুলোর একটি প্যাটার্ন বের করেন এবং সেই প্যাটার্ন অনুযায়ী একটি তত্ত্ব দেন এবং পরবর্তীতে গাণিতিক যুক্তির মাধ্যমে বা ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষার মাধ্যমে সেই তত্ত্ব প্রমাণ করেন। একজন গণিতবিদের মতো আমরাও ঘনবস্তুর আয়তনের সম্পর্কের প্যাটার্ন পর্যবেক্ষণ করে দ্বিপদী রাশির ঘন এর সূত্র বের করব এবং সূত্র প্রমাণ করব।

 

 

ত্রিপদী রাশির ঘন

দ্বিপদী রাশির ঘন এর মতো এসো আমরা কাগজে ডিজাইন করে নিচের চিত্রের মতো ঘনকের একটি মডেল তৈরি করি। এক্ষেত্রে ঘনকের প্রতি বাহুর মাঝখানে দুটি করে কাগজের তাক দেওয়া আছে। ধরো ঘনকটির প্রতি বাহু বরাবর প্রথমে ৪ ইঞ্চি পরে 3 ইঞ্চি এবং শেষে 5 ইঞ্চি করে জায়গা আছে। এবার একটু চিন্তা করে নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর লেখো।

 

'উৎপাদক' শব্দটির সঙ্গে তোমরা আগে থেকেই পরিচিত। তোমরা জানো, কোনো একটি সংখ্যার উৎপাদক আরেকটি সংখ্যা যাকে দিয়ে আগের সংখ্যাটিকে ভাগ করা যায়। যেমন, 5, 10 এর একটি উৎপাদক, কারণ, 10 কে 5 দিয়ে ভাগ করা যায়। আবার 2 ও 10 এর একটি উৎপাদক, কারণ, 10 কে 2 দিয়ে ভাগ করা যায়। এভাবে একটি সংখ্যার একাধিক উৎপাদক আছে। তোমরা জানো, 1 যে কোনো সংখ্যার একটি উৎপাদক। কারণ, যে কোনো সংখ্যাকে 1 দিয়ে ভাগ করা যায়। আবার যে কোনো সংখ্যা নিজেই তার একটি উৎপাদক। সুতরাং প্রত্যেকটি সংখ্যার কমপক্ষে 2টি উৎপাদক আছে। যেসকল সংখ্যার শুধু 2টি ভিন্ন উৎপাদক আছে সে সকল সংখ্যাই মৌলিক সংখ্যা। এবার আমরা সংখ্যারাশির ধারণা থেকে বীজগাণিতিক রাশির উৎপাদকের ধারণা পেতে পারি। কোনো একটি বীজগাণিতিক রাশির উৎপাদক আরেকটি বীজগাণিতিক রাশি যাকে দিয়ে আগের রাশিকে ভাগ করা যায়। যেমন, x - 1, বীজগাণিতিক রাশি x² - 1 এর একটি উৎপাদক, কারণ, x² - 1 কে x - 1 দিয়ে ভাগ করা যায়। আবার x² - 1 এর একটি উৎপাদক x +1, কারণ, x² - 1 কে x + 1 দিয়ে ভাগ করা যায়। যেহেতু যে কোনো বীজগাণিতিক রাশিকে 1 দিয়ে ভাগ করা যায়, সুতরাং 1 যে কোনো বীজগাণিতিক রাশির একটি উৎপাদক। আবার যে কোনো বীজগাণিতিক রাশি নিজেই তার একটি উৎপাদক। সুতরাং প্রত্যেকটি বীজগাণিতিক রাশির কমপক্ষে 2টি উৎপাদক আছে। এই অভিজ্ঞতায় আমরা দ্বিপদী এবং ত্রিপদী রাশির ঘন এর উৎপাদক এবং এর ব্যবহার নিয়ে আলোচনা করব।

এই ধারণাকে বীজগাণিতিক রাশির মাধ্যমে লিখলে আমরা লিখতে পারি, y দ্বারা x কে ভাগ করা যাবে যদি y, x এর একটি উৎপাদক হয়।

 

লক্ষ করে দেখো যে, তোমার লেখা আকারের মধ্যে 3 × 3 আকারের কোনো কেক নাই। সুতরাং 3 x 3, 12 × 10 এর উৎপাদক নয়।

12 × 10 এর উৎপাদকের আকারের সঙ্গে 12 × 10 আকারের কোনো সম্পর্ক খুঁজে পাও কি? পেলে এখানে লিখে রাখো।

 

 

সমান ভাগে ভাগ করা যাবে। এবার বলো তো, x এর মান 5 হলে, ঘনকটিকে কোন কোন আকারে সমান ভাগে ভাগ করা যাবে এবং প্রত্যেক আকারে কতটি সমান ভাগ হবে? আকার এবং ভাগ সংখ্যা এই বক্সে লিখে রাখো।

তোমরা দুই বা ততোধিক বীজগাণিতিক রাশির গরিষ্ঠ সাধারণ গুণনীয়ক (গসাগু) এবং লঘিষ্ঠ সাধারণ গুণিতক (লসাগু) সম্বন্ধে জেনেছ। দুই বা ততোধিক বীজগাণিতিক রাশির সকল (একাধিকবারসহ) সাধারণ মৌলিক উৎপাদকের গুণফলই ঐ দুই বা ততোধিক বীজগাণিতিক রাশিসমূহের গসাগু। অন্যদিকে কতগুলো বীজগাণিতিক রাশির সকল (একাধিকবার সহ) সাধারণ মৌলিক উৎপাদক, দুই বা ততোধিক বীজগাণিতিক রাশির সাধারণ মৌলিক উৎপাদক (সকল বীজগাণিতিক রাশি ব্যতিত, যদি থাকে) এবং অন্যান্য মৌলিক উৎপাদকসমূহের গুণফলই বীজগাণিতিক রাশি সমূহের লসাগু। একটি উদাহরণের মাধ্যমে বিষয়টি পরিষ্কার করা যাক।

রাফিদ 6 সেন্টিমিটার দৈর্ঘ্যবিশিষ্ট ঘনক আকৃতির বক্সসহ মগ এবং রাহিমা ৪ সেন্টিমিটার দৈর্ঘ্যবিশিষ্ট ঘনক আকৃতির বক্সসহ মগ কিনবে। তারা তাদের মগগুলো রাখার জন্য ঘনক আকৃতির একটি কাঠের বক্সও কিনতে চায়। সর্বনিম্ন কোন আকৃতির কাঠের বক্স কিনলে তারা তাদের মগগুলো কাঠের বক্সে সম্পূর্ণরূপে পূর্ণ করে রাখতে পারবে?

এক্ষেত্রে রাফিদকে কয়টি ঘনক আকৃতির বক্সসহ মগ কিনতে হবে?

রহিমাকে কয়টি ঘনক আকৃতির বক্সসহ মগ কিনতে হবে?

 

 

তোমরা বলো তো, 10 এবং 6 এর লসাগু কত হবে? তোমরা যে সংখ্যাটি বলবে সেটি সঠিক হলে সেই সংখ্যার ঘন, 10 এর ঘন এবং 6 এর ঘন এর লসাগু হবে।

 

Content added || updated By

আরও দেখুন...

Promotion