শিক্ষকের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করো। সবাই মিলে নিচের গানটি গাও-
যীশুর, ঘৃণার রাজ্যে এনেছ, তোমার প্রেম
এই প্রেমে, প্রভু, আমাদের কর প্রবুদ্ধ।।
১। যীশু, হিংসার রাজ্যে এনেছ তোমার শান্তি
এই শান্তিতে, প্রভু, আমাদের কর প্রবুদ্ধ।।
২। যীশু, আঁধার রাজ্যে এনেছ তোমার জ্যোতি
এই জ্যোতিতে, প্রভু, আমাদের কর প্রবুদ্ধ
৩। যীশু, পাপের রাজ্যে এনেছ তোমার ক্রুশ এই ক্রুশে,
প্রভু, আমাদের কর প্রবুদ্ধ।।
(গীতাবলী ১৯৫) অথবা ধর্মসংগীত/খ্রীষ্টসংগীত থেকে সমতুল্য গান গাওয়া যাবে)
এ সেশনে শিক্ষক তোমাকে দশ আজ্ঞার অন্তর্নিহিত তাৎপর্য বুঝিয়ে বলবেন। শিক্ষকের কথা মনোযোগ দিয়ে শুনবে। তুমি দৈনন্দিন জীবনে দশ আজ্ঞা পালন করবে। এজন্য তোমাকে আজ্ঞাগুলোর নৈতিক শিক্ষা ও মূল্যবোধ অনুধাবন করতে হবে। শিক্ষকের কথা বলা শেষ হলে তোমাকে এ বিষয়ে একক বক্তৃতা দিতে হবে। তুমি কোন আজ্ঞাটি সম্পর্কে বক্তৃতা দিবে তা লটারির মাধ্যমে ঠিক করা হবে। লটারির জন্য কাগজের টুকরায় আজ্ঞা নং নির্দেশিত সংখ্যা লিখে শিক্ষক সেগুলো একটি বাক্সে রাখবেন। শিক্ষার্থী সংখ্যা বেশি হলে একই সংখ্যা লেখা কাগজের টুকরা একাধিক হবে।
এবার চলো দশ আজ্ঞার অন্তর্নিহিত তাৎপর্য সম্পর্কে জানি।
১. ঈশ্বরের প্রতি পালনীয় আজ্ঞাসমূহ
দশ আজ্ঞার প্রথম তিনটি/চারটি আজ্ঞা একমাত্র ঈশ্বরকে ভালোবাসা, আরাধনা ও সেবা করার নির্দেশ দিয়েছে। আমরা কেবল ঈশ্বরের পূজা করব, অন্য কারো পূজা করব না। জাগতিক বিষয়ের প্রতি অতিরিক্ত আকর্ষণ প্রতিমা পূজার সঙ্গে তুলনা করা যায়। আমরা অনেক সময় ঈশ্বরকে ভক্তি ও অনুরাগ নিবেদন না করে অন্য কিছুতে আসক্ত হয়ে পড়ি। যখন আমাদের ভালোবাসা, সময়, জীবন, ভক্তি, লক্ষ্য, সবকিছুই অর্থ-উপার্জন, বিলাসিতা, ফ্যাশন, গান-বাজনা ইত্যাদিতে সমর্পণ করি, তখন আমাদের হৃদয়ে ঈশ্বরের জন্য ভক্তি ও ভালোবাসা থাকে না।
আমরা ঈশ্বরের নামের সম্মান করব। অনর্থক ঈশ্বরের নাম নিব না। তাঁর 'পবিত্র নাম' উচ্চারণ করে মিথ্যা শপথ করব না।
বিশ্রামবার বা প্রভুর দিন আমরা পবিত্রভাবে পালন করব। ঈশ্বর ছয় দিনে সমস্ত কাজ করে সপ্তম দিনে বিশ্রাম নিয়েছেন। তিনি যেমন এ দিনটিকে বিশেষ মূল্য দিয়েছেন, আমাদেরও উচিত এ পবিত্র দিনটি বিশেষ মর্যাদা সহকারে পালন করা। সমস্ত কর্মব্যস্ততা থেকে বিরতি নিয়ে আমরা স্বস্তি ও প্রশান্তি নিয়ে ঈশ্বরের সঙ্গে একাত্ম হব। এ আজ্ঞাটি পালনের বিষয়ে মণ্ডলী নির্দেশ দেয় যে বিশ্রামবার বা রবিবার দিন আমরা খ্রীষ্ট প্রভুর ভোজে অংশগ্রহণ করব। এজন্য আমরা সমস্ত দৈহিক শ্রম থেকে বিরত থেকে প্রার্থনা ও ভালো কাজে নিয়োজিত থাকব। সপ্তাহের একটি দিন আমরা জাগতিক কাজকর্ম হতে বিরত থেকে ঈশ্বর-চিন্তায় মনোনিবেশ করব। এ বিশ্রাম আমাদের আধ্যাত্মিক দিক থেকে নবীকৃত হয়ে নতুন আরেকটি সপ্তাহ শুরু করতে সাহায্য করবে। প্রভু যীশুখ্রীষ্ট নিজেও নিয়মিত বিশ্রামবারে উপাসনা অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন। তিনি বিশ্রামবারে অসুস্থদের সুস্থতা দান করে এ দিনটির গুরুত্ব বৃদ্ধি করেছেন। তিনি বলেছেন, 'বিশ্রামবার মানুষের জন্য, মানুষ বিশ্রামবারের জন্য নয়।'
২. মানুষের প্রতি পালনীয় আজ্ঞাসমূহ
সন্তানেরা তাদের জীবনের জন্য মা-বাবার কাছে ঋণী। মা-বাবাকে সম্মান করার মধ্য দিয়ে আমরা ঈশ্বরকে সম্মান করি।
ঈশ্বর তাঁর নিজ প্রতিমূর্তিতে মানুষ সৃষ্টি করেছেন। তাই সকল মানুষই আমাদের প্রতিবেশী। মানুষের মধ্যে আত্মপ্রেম প্রবল হলে সে অন্যকে ভালোবাসতে পারে না। প্রতিবেশীকে নিজের মতো ভালোবাসতে হবে। আমরা প্রতিবেশীর কষ্টে সমব্যথী ও তার আনন্দে আনন্দিত হব। আমাদের ব্যস্ত সময় থেকে প্রতিবেশীকে সময় দিব তাদের নিঃসঙ্গতা দূর করতে, প্রয়োজনে সাহায্য করতে এবং অসুস্থতায় সেবা দানের জন্য।
প্রতিবেশীর প্রতি সত্যিকারের ভালোবাসা থাকলে মানুষ অন্যের জিনিস চুরি করবে না, নরহত্যা করবে না, মিথ্যা সাক্ষ্য দিবে না, পরদ্রব্যে লোভ করবে না এবং পরস্বামী/স্ত্রীতে লোভ করবে না। আমরা প্রতিবেশীর কোনো কিছুর প্রতি লোভ করব না। প্রতিবেশীর নামে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে তাকে অপমানিত করব না।
বিবাহ সংস্কারের দ্বারা নর ও নারী, স্বামী-স্ত্রী সম্পর্কে আবদ্ধ হয়। ব্যভিচার হচ্ছে বিবাহ সংস্কারের প্রতি অবিশ্বস্ততা প্রদর্শন। নিজের স্ত্রী/স্বামীর প্রতি অবিশ্বস্ত হয়ে অন্যের স্ত্রী/স্বামীর বা অন্য নারী/পুরুষের সঙ্গে সম্পর্ক রাখাকে ব্যভিচার বলে। ব্যভিচার হচ্ছে মানুষের দেহ ও মনের শুচিতার বিরুদ্ধে পাপ।
ঈশ্বর মানুষকে জীবন দিয়েছেন। এ জীবন নাশ বা হত্যা করার অধিকার কারো নেই। তাই নরহত্যা মহাপাপ। আমরা নিজের জীবনকে ভালোবাসব এবং অন্যের জীবনের নিরাপত্তা দিব।
এবার শিক্ষক তোমাকে পাঁচ মিনিট সময় দিবেন ধ্যান করার জন্য। এ সময়ের মধ্যে তুমি 'শিক্ষক আজ্ঞাগুলো সম্পর্কে কী বলেছেন' তা নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করো এবং বক্তৃতার জন্য প্রস্তুতি নাও। ভয় পেয়ো না, লটারিতে যে আজ্ঞাই তোমার জন্য উঠুক না কেন তুমি সে বিষয়ে আত্মবিশ্বাস নিয়ে বলার চেষ্টা করবে।
লটারি ও উপস্থিত বক্তৃতা
শিক্ষক প্রস্তুতকৃত বিভিন্ন সংখ্যা লেখা কাগজের টুকরাগুলো একটি বাক্সে টেবিলের উপর রাখবেন। তোমরা পর্যায়ক্রমে একজন একজন করে বাক্স থেকে কাগজের টুকরা তুলবে এবং তাতে যে সংখ্যা লেখা থাকবে সে অনুযায়ী বক্তৃতা দিবে। ধরো তুমি '১' লেখা কাগজটি পেয়েছ তাহলে প্রথম আজ্ঞার অর্থ ব্যাখ্যা করবে। বক্তৃতা দেওয়ার সময় যথেষ্ট জোরে এবং সঠিক উচ্চারণে কথা বলবে। তোমার সহপাঠীরা যখন বক্তৃতা দিবে তুমি তখন মনোযোগ দিয়ে শুনবে। বক্তৃতার আগে ও পরে করতালি দিয়ে তাদের উৎসাহিত করবে।
প্রিয় শিক্ষার্থী, বক্তৃতা দেয়ার পর তোমার কেমন লাগছে? যে কোনো বিষয়ে সবার সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলার অভিজ্ঞতা কিন্তু দারুণ। এটা তোমার আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি করবে এবং সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলতে ভয় আর পাবে না।
বিশেষ নির্দেশনা
প্রিয় শিক্ষার্থী, পরিবার, মা-বাবা ও ধর্ম-শিক্ষকের নির্দেশনায় তুমি শৈশব থেকেই দশ আজ্ঞা পালন করে আসছো। পরবর্তী সেশনে শিক্ষক তোমাদের স্ক্র্যাপবুক/ডিজিটাল ডকুমেন্টারি তৈরি করার নির্দেশ দিবেন। যদি স্ক্র্যাপবুক তৈরি করো তবে তাতে তুমি কীভাবে দশ আজ্ঞা পালন করো তার সচিত্র বর্ণনা/প্রতিবেদন উপস্থাপন করবে। আর যদি ডিজিটাল ডকুমেন্টারি তৈরি করো তবে স্মার্টফোনে তুমি যেভাবে দশ আজ্ঞা পালন করো তার ভিডিও ধারণ করবে। পরবর্তী সেশনের পূর্বেই তোমাকে এসব প্রস্তুতি নিতে হবে।
আরও দেখুন...