সম্পূরক খাদ্য তৈরিতে খাদ্য উপকরণগুলোর শতকরা হার অনুযায়ী পরিমাপ করে ভালো করে মিশ্রিত করতে হয়। মিশ্রণের পরিমাণ নির্ভর করে খামারের আয়তন অনুযায়ী কি পরিমাণ খাদ্য তৈরি করা হবে তার ওপর। উপকরণগুলো যথাসম্ভব চালনি দিয়ে চেলে নেয়া উচিত যাতে উপাদানগুলো সঠিকভাবে মিশ্রিত হয়। মিশ্রণকে শক্ত বড়ি বা পিলেট আকারে তৈরি করার জন্য বাইন্ডিং এজেন্ট হিসেবে চিটাগুড় বা বাইন্ডার পানিতে মিশিয়ে গরম করে নেয়া হয় এবং ক্রমাগত মিশ্রিত করে আঠার মতো করে নেওয়া হয়। তারপর খাদ্য উপাদানগুলো মেশিনের মাধ্যমে পিলেট আকারে তৈরি করা হয়। এ ছাড়া ভেজা পদ্ধতিতেও চিংড়ি খামারে খাদ্য প্রয়োগ করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে মিশ্রিত সম্পূরক খাদ্য প্রতি দিনের মাত্রা বা পরিমাণ অনুযায়ী পানিতে এমনভাবে মিশাতে হয় যেন ছোট গোলাকার বলের মতো তৈরি করা যায়। পরে তৈরিকৃত বল জলাশয়ের নির্দিষ্ট স্থানে আস্তে আস্তে সরবরাহ করতে হয়। বাগদা চিংড়ির সম্পূরক খাদ্য তৈরির জন্য উদাহরণস্বরূপ নিচের সারণি ব্যবহার করা যেতে পারে।
সারণি: সম্পুরক খাদ্য তৈরির জন্য ব্যবহৃত উপকরণের পরিমাণ (নমুনা)
বাণিজ্যিক ভিত্তিতে উৎপাদিত চিংড়ি খাদ্য ব্যবহার
মৎস্য খাদ্য ও পশু খাদ্য আইন ২০১০ এবং মৎস্য খাদ্য বিধিমালা ২০১১ অনুসরণ করে খাদ্য উৎপাদনকারী কারখানা বা কোম্পানি থেকে খাদ্য ক্রয় করে প্রয়োগ করা যেতে পারে। উৎপাদিত খাদ্যের বস্তার উপরে লেবেলিং-এ কোন প্রজাতির চিংড়ির মান্য, খাদ্যের ধরন, খাদ্য উপাদানের তালিকা, ব্রান্ডের নাম, উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের নাম, ঠিকানা ও লাইসেন্স নম্বর, পুষ্টি উপাদানের বিবরণ, প্রস্তুত এবং সেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখ, ব্যাচ নম্বর ইত্যাদি থাকতে হবে।
তৈরি খাদ্য ও খাদ্য উপাদান গুদামজাতকরণ ও সংরক্ষণে অনুসরণীয় বিষয়াদিঃ
১) শুকনা পিলেট খাদ্য মুখ বন্ধ বায়ুরোধী পলিথিন বস্তা বা পাত্রে শুষ্ক, ঠান্ডা ও বায়ু চলাচল করা স্থানে গুদামজাত/সংরক্ষণ করতে হবে।
২) গুদাম ঘরে খাদ্য সরাসরি মেঝে বা দেয়ালের সাথে না রেখে কাঠ বা বাঁশের পাটাতনের উপরে রাখতে হবে।
৩) গুদাম ঘরে খাদ্যের বস্তা একটির উপরে একটি (১০টির বেশি নয়) রাখতে হবে।
৪) প্রতিটি সারির বস্তার মাঝে কমপক্ষে ৩০ সেমি দুরত্ব রাখতে হবে যাতে সহজেই পর্যাপ্ত বাতাস চলাচল করতে পারে।
৫) সংরক্ষিত খাদ্যে আর্দ্রতার পরিমাণ ১০ শতাংশের নীচে রাখতে হবে (মাঝে মাঝে রোদে শুকিয়ে রাখতে হবে)।
৬) শুষ্ক পিলেট খাবার প্লাষ্টিকের ব্যাগে বায়ুশুন্য অবস্থায় বেশিদিন সংরক্ষণ করা যায়।
৭) খাদ্য ও খাদ্য উপাদান সরাসরি সূর্যালোক, বৃষ্টি এবং অতিরিক্ত তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা থেকে রক্ষা পায় এমন স্থানে সংরক্ষণ করতে হবে।
৮) সংরক্ষিত পিলেট খাদ্য ১-২ মাসের মধ্যে ব্যবহার করে ফেলা উচিত। তবে খাদ্যে এন্টিফাঙ্গাল এজেন্ট/অ্যান্টি অক্সিডেন্ট ব্যবহার করলে ২-৩ মাস পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যায়।
৯) খাদ্য গুদাম অবশ্যই ইদুর, ছুচো, বিড়াল ও তেলাপোকাসহ এ জাতীয় অন্যান্য প্রাণিমুক্ত হতে হবে।
১০) এন্টিফাঙ্গাল এজেন্ট/অ্যান্টি অক্সিডেন্ট ব্যবহার করলে পিলেট খাদ্য ২-৩ মাস পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যায়।
১১) খাদ্য ব্যবহারে আগের খাদ্য আগে ব্যবহার এবং মেয়াদ উত্তীর্ণ খাদ্য ব্যবহার করা যাবে না।
আরও দেখুন...