জনসংখ্যা বৃদ্ধির বর্তমান হার কমিয়ে আনার জন্য সরকার নিম্নলিখিত উদ্যোগ গ্রহণ করেছে :
ক. নিরক্ষরতা দূরীকরণ ও সাক্ষরতার হার বাড়ানোর জন্য প্রাথমিক ও গণশিক্ষাকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। সরকার ২০১৪ সালের মধ্যে নিরক্ষরতা দূর ও ২০১৫ সালের মধ্যে সবার জন্য শিক্ষা নিশ্চিত করার পরিকল্পনা গ্রহণ করে। ইতোমধ্যে এই কর্মসূচি শতভাগ অর্জিত না হলেও প্রায় অর্জনের পথে ।
খ. সরকার নারীশিক্ষার প্রসারের জন্য ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। যেমন প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে পাঠ্যবই সরবরাহ এবং ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত মেয়েদের উপবৃত্তি প্রদান করা হচ্ছে।
গ. সরকার নাগরিকদের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করার পরিকল্পনা নিয়েছে। একই সঙ্গে পরিবার ছোট রাখার জন্য স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কার্যক্রম চালু রয়েছে।
ঘ. কাজি অফিসে বিয়ে রেজিস্ট্রেশনের উপর জোর দেওয়া হয়েছে।
ঙ. হাঁস-মুরগির খামার ও মাছ চাষের মতো আয়বৃদ্ধিমূলক কর্মসূচিতে নারীদের অংশগ্রহণের উপর সরকার গুরুত্ব আরোপ করেছে। তাছাড়া পোশাকশিল্প, কারুশিল্প এবং অন্যান্য হস্ত ও কুটিরশিল্পেও নারীরা বর্তমানে বেশি সংখ্যায় অংশ নিচ্ছে। এগুলো জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। শিশুমৃত্যু হ্রাসের ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জন করায় বাংলাদেশ ২০১০ সালে জাতিসংঘ পুরস্কার লাভ করেছে। এছাড়া নারীর ক্ষমতায়নের জন্য নারীদের শিক্ষকতাসহ নানা চাকরির ক্ষেত্রে কোটা প্রথা চালু রয়েছে।
কাজ- ১ : জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের কোন পদক্ষেপটি তোমার এলাকার জন্য বেশি কার্যকর বলে তুমি মনে কর? ব্যাখ্যা করো।
বেসরকারি উদ্যোগ
স্থানীয়, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাগুলো (NGO) বাংলাদেশের জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। মুক্তিযুদ্ধের পরে বাংলাদেশের মানুষকে পুনর্বাসনে সহায়তার মাধ্যমে তারা তাদের কাজ শুরু করে। বর্তমানে এই সংস্থাগুলোর কাজের একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র হচ্ছে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ ও পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রম। জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশে কর্মরত বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাগুলোর কার্যক্রম নিচে তুলে ধরা হলো :
ক. কমিউনিটিভিত্তিক পরিবার পরিকল্পনা প্রকল্প : এই প্রকল্পের আওতায় গ্রাম ও শহরের দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে পরিবার ছোট রাখার জন্য পরামর্শ দেওয়া হয়। পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি গ্রহণে তাদের উৎসাহ দেওয়া হয়। প্রকল্পের আওতায় মা ও শিশুর স্বাস্থ্য, টিকা, ইনজেকশন ও পুষ্টি শিক্ষা বিষয়েও সেবা প্রদান করা হয়।
খ. দুই সন্তানের পরিকল্পিত পরিবার গড়ার লক্ষ্য বাস্তবায়ন : বাংলাদেশ সরকার দুটি সন্তানের পরিবার গড়ার জাতীয় লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। বেসরকারি সংস্থাগুলো এই লক্ষ্য অর্জনে কাজ করছে। পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি গ্রহণে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করার জন্যও তারা কাজ করছে ।
গ. বাল্যবিবাহ রোধে উদ্বুদ্ধকরণ : দেশে বাল্যবিবাহ রোধ করার জন্য জনগণকে উদ্বুদ্ধ করার ক্ষেত্রে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে ।
ঘ. প্রশিক্ষণ কার্যক্রম : বেসরকারি সংস্থাগুলোর বিশেষজ্ঞরা মা ও শিশুর স্বাস্থ্য সেবা, টিকা দান ওপরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি সম্পর্কে জনগণকে প্রশিক্ষিত করছে।
ঙ. সচেতনতা কার্যক্রম : জনসংখ্যা সমস্যা মোকাবিলায় বেসরকারি সংস্থাগুলো জনগণকে সচেতন করার জন্য নানা রকম উপকরণ তৈরি ও ব্যবহার করে। যেমন: পরিবার পরিকল্পনা বিষয়ে সাময়িকী, পোস্টার, ক্যালেন্ডার, চার্ট, নিউজলেটার, ডকুমেন্টারি ফিল্ম ইত্যাদি।
চ. ধর্মীয় নেতাদের উদ্বুদ্ধকরণ কর্মসূচি : বেসরকারি সংস্থাগুলো স্থানীয় ধর্মীয় নেতাদের জন্য কর্মশালা আয়োজন করে তাঁদের এ ব্যাপারে উদ্বুদ্ধ করে। ধর্মীয় নেতারাও জনসংখ্যা হ্রাসের ক্ষেত্রে ভূমিকা পালন করেন।
কাজ : জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে বেসরকারি সংস্থার ভূমিকা সংক্ষেপে আলোচনা করো।
আরও দেখুন...