আমাদের চারপাশ ঘিরে আছে পানি। প্রাকৃতিক উৎস যেমন— বৃষ্টি, নদী, সমুদ্র ইত্যাদি থেকে আমরা পানি পাই। মানুষের তৈরি উৎস যেমন— দিঘি, পুকুর, কূপ, নলকূপ ইত্যাদি থেকেও পানি পাওয়া যায়। পানি ছাড়া আমরা বেঁচে থাকতে পারি না ।
প্রশ্ন : উদ্ভিদ ও প্রাণীর কেন পানি প্রয়োজন ?
কাজ : পানির ব্যবহার
কী করতে হবে :
১. নিচের ছকের মতো খাতায় একটি ছক তৈরি করি।
কীভাবে পানি ব্যবহার করে | |
---|---|
উদ্ভিদ | |
প্ৰাণী |
২. উদ্ভিদ ও প্রাণী কীভাবে পানি ব্যবহার করে ছকে তার একটি তালিকা তৈরি করি।
৩. কাজটি নিয়ে সহপাঠীদের সাথে আলোচনা করি।
জীবের জন্য পানি অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। পানি ছাড়া জীব বাঁচতে পারে না ৷
উদ্ভিদের বেঁচে থাকার জন্য পানি প্রয়োজন। উদ্ভিদের দেহের প্রায় ৯০ ভাগ পানি। উদ্ভিদ খাদ্য তৈরিতেও পানি ব্যবহার করে। মাটি থেকে পুষ্টি উপাদান সংগ্রহ ও বিভিন্ন অংশে পরিবহনের জন্য উদ্ভিদের পানি প্রয়োজন। পানি ছাড়া উদ্ভিদ মাটি থেকে পুষ্টি উপাদান শোষণ করতে পারে না। প্রচণ্ড গরমে পানি উদ্ভিদের দেহ শীতল করতে সাহায্য করে।
বেঁচে থাকার জন্য প্রাণীদেরও পানি প্রয়োজন। মানবদেহের ৬০-৭০ ভাগ পানি। পানি ছাড়া কোনো প্রাণীই বেঁচে থাকতে পারে না। আমরা যখন খাদ্য। গ্রহণ করি তখন পানি সেই খাদ্য পরিপাকে সাহায্য করে। পুষ্টি উপাদান শোষণ ও দেহের প্রত্যেকটি অঙ্গে পরিবহনের জন্য পানি প্রয়োজন। পানি আমাদের দেহের স্বাভাবিক তাপমাত্রা বজায় রাখতে সাহায্য করে।
আমরা কি কখনো সকালে ঘাসের উপর বিন্দু বিন্দু পানি জমে থাকতে দেখেছি? এই পানির বিন্দুগুলো কোথা থেকে আসে ?
প্রশ্ন : পানির ফোঁটাগুলো কীভাবে তৈরি হয় ?
কাজ : গ্লাসের গায়ে পানির বিন্দু
কী করতে হবে :
১. দুইটি পরিষ্কার গ্লাস, পানি ও বরফ নিই ।
২. নিচের ছকের মতো খাতায় একটি ছক তৈরি করি।
৩. দুইটি গ্লাসেই কক্ষ তাপমাত্রার পানি ঢালি এবং একটিতে কয়েক খণ্ড বরফ নিই।
৪. কিছুক্ষণ পর গ্লাস দুইটির বাইরের পৃষ্ঠ পর্যবেক্ষণ করি এবং ছকে তার ছবি আঁকি ।
৫. কাজটি নিয়ে সহপাঠীদের সাথে আলোচনা করি।
আমরা গ্লাস খ এর বাইরের পৃষ্ঠে পানির ফোঁটা দেখতে পেলাম। অপরদিকে, গ্লাস ক এর বাইরের পৃষ্ঠে কোনো পানির ফোঁটা দেখতে পেলাম না ।
ফলাফলের ভিত্তিতে নিচের বিষয়গুলো চিন্তা করি
১. দুইটি গ্লাসের মধ্যে পার্থক্য কী ?
২. পানির ফোঁটাগুলো কোথা থেকে এলো বা কেমন করে এলো?
রাতে ঘাস, গাছপালা ইত্যাদির উপর যে বিন্দু বিন্দু পানি জমে তাকে শিশির বলে। বায়ু যখন ঠান্ডা কোনো বস্তুর সংস্পর্শে আসে, তখন বায়ুতে থাকা জলীয় বাষ্প ঠান্ডা হয়ে পানির ফোঁটা হিসেবে জমা হয়।
বাতাসের জলীয় বাষ্প ঠান্ডা হয়ে পানিতে পরিণত হয়। বাষ্প থেকে তরলে পরিণত হওয়াকে ঘনীভবন বলে। পানিকে যখন তাপ দেওয়া হয়, তখন তা জলীয় বাষ্পে পরিণত হয়। তরল থেকে বাষ্পে পরিণত হওয়ার প্রক্রিয়াই হচ্ছে বাষ্পীভবন।
তাপ প্রয়োগ ও ঠান্ডা করার মাধ্যমে পানি এক অবস্থা থেকে অন্য অবস্থায় পরিবর্তিত হয়। বরফকে তাপ দিলে তা পানিতে পরিণত হয়। পানিকে তাপ দিলে তা জলীয় বাষ্পে পরিণত হয়। জলীয় বাষ্পকে ঠান্ডা করা হলে তা ঘনীভূত হয়ে পানিতে পরিণত হয়। যখন পানিকে শীতল করা হয়, তখন তা জমে কঠিন বরফে পরিণত হয়।
বৃষ্টির পর মাটিতে পানি জমে থাকতে দেখা যায়। কিছুক্ষণ পর সেই পানি অদৃশ্য হয়ে যায়। পানি কোথায় চলে যায় ?
প্রশ্ন : পানি কোথা থেকে আসে এবং কোথায় চলে যায় ?
কাজ : বায়ুতে পানি আছে
কী করতে হবে :
১. একটি পরিষ্কার প্লাস্টিকের ব্যাগ এবং বরফসহ পানি ভর্তি একটি পাত্র নেই।
২. নিচের ছকের মতো খাতায় একটি ছক তৈরি করি।
ব্যাগের ভিতরের গায়ে যা দেখতে পেলাম |
|
৩. পরিষ্কার প্লাস্টিকের ব্যাগ বায়ু দ্বারা পূর্ণ করি এবং মুখ শক্ত করে বাঁধি ।
৪. ব্যাগটি কিছুক্ষণের জন্য বরফসহ পানির পাত্রে ডুবিয়ে রাখি এবং কিছুক্ষণ পর সরিয়ে ফেলি।
৫. ব্যাগের ভেতরে কী পরিবর্তন ঘটতে পারে তা অনুমান করি ।
৬. ব্যাগের ভিতরের অংশটি পর্যবেক্ষণ করি এবং ছবি আঁকি।
৭. কাজটি নিয়ে সহপাঠীদের সাথে আলোচনা করি।
পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে নিচের বিষয়গুলো চিন্তা করি ৷
১. ব্যাগের ভেতর কী ঘটছে ? কেন ঘটেছে ?
২. আমরা কি অনুমান করতে পারি বায়ুতে কী আছে ?
পরীক্ষাটি থেকে জেনেছি যে, বায়ুতে জলীয় বাষ্প আছে। ভূপৃষ্ঠের পানির অনেকটাই সূর্যের তাপে বাষ্পীভূত হয় এবং বায়ুতে মিশে যায়। তার মানে হচ্ছে পানি তরল অবস্থা থেকে জলীয় বাষ্পে পরিণত হয় ।
যে প্রক্রিয়ায় পানি বিভিন্ন অবস্থায় পরিবর্তিত হয়ে ভূপৃষ্ঠ ও বায়ুমণ্ডলের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে তাই পানি চক্র। এই চক্রের মাধ্যমে সর্বদাই পানির অবস্থার পরিবর্তন ঘটছে। সাগর ও নদীর পানি বাষ্পীভূত হয়ে জলীয় বাষ্পে পরিণত হয়। বাষ্পীভূত পানি উপরে উঠে ঠান্ডা ও ঘনীভূত হয়ে পানির বিন্দুতে পরিণত হয়। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পানির বিন্দু একত্রিত হয়ে মেঘ সৃষ্টি করে। এই মেঘের পানিকণা বড় হয়ে বৃষ্টিপাত হিসেবে আবার ভূপৃষ্ঠে ফিরে আসে। শীত প্রধান দেশে তুষারও মেঘ থেকেই পৃথিবীতে পড়ে। বৃষ্টির পানি সাধারণত মাটিতে শোষিত হয় অথবা নদীতে গড়িয়ে পড়ে। মাটিতে শোষিত পানি ভূগর্ভস্থ পানি হিসেবে জমা থাকে। নদীতে গড়িয়ে পড়া পানি সমুদ্রে প্রবাহিত হয় এবং বাষ্পীভূত হয়ে আবার বায়ুতে ফিরে যায়।
প্রাকৃতিক পানিতে বিভিন্ন ক্ষতিকর পদার্থ মিশে পানি দূষিত হয়। পানি দূষণ জীবের জন্য ক্ষতিকর।
মানুষের কর্মকাণ্ড পানি দূষণের প্রধান কারণ। কৃষিকাজে ব্যবহৃত কীটনাশক, কলকারখানার রাসায়নিক দ্রব্য, গৃহস্থালির বর্জ্যের মাধ্যমে পানি দূষিত হয়। এছাড়া নদী বা পুকুরে গরু-ছাগল গোসল করানো এবং কাপড়চোপড় ধোয়ার কারণেও পানি দূষিত হয় ।
পানি দূষণের ফলে জলজ প্রাণী মারা যাচ্ছে এবং জলজ খাদ্য শৃঙ্খলের ব্যাঘাত ঘটছে। এই দূষণের প্রভাব মানুষের উপরও পড়ছে। দূষিত পানি পান করে মানুষ ডায়রিয়া বা কলেরার মতো পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।
কৃষিতে কীটনাশক এবং রাসায়নিক সারের ব্যবহার কমিয়ে আমরা পানি দূষণ প্রতিরোধ করতে পারি। এছাড়া রান্নাঘরের নিষ্কাশন নালায় ও টয়লেটে বর্জ্য এবং তেল না ফেলে দূষণ রোধ করতে পারি। পুকুর, নদী, হ্রদ কিংবা সাগরে ময়লা- আবর্জনা না ফেলে পানি দূষণ কমাতে পারি। সমুদ্রসৈকতে পড়ে থাকা ময়লা এবং খাল-বিল কিংবা নদীতে ভাসমান ময়লা আবর্জনা কুড়িয়ে আমরা পানি পরিষ্কার রাখতে পারি।
আমরা কীভাবে পানি দূষণ প্রতিরোধ করতে পারি ?
১. পানি দূষণ প্রতিরোধে আমাদের করণীয় কী তা খাতায় লিখি ।
২. সহপাঠীদের সাথে আলোচনা করে কাজটি সম্পন্ন করি।
সুস্থ থাকার জন্য শুধু উদ্ভিদ ও প্রাণীই নয়, মানুষেরও নিরাপদ পানি প্রয়োজন।
কাজ : সরল ছাঁকনি
কী করতে হবে :
১. কোনো পুকুর বা নদী থেকে সংগ্রহ করা ময়লা পানি, প্লাস্টিকের বোতল, পাতলা কাপড় বালি, ছোট ছোট পাথরের টুকরো এবং পরিষ্কার গ্লাস নিই।
২. নিচে দেখানো ছকের মতো খাতায় একটি ছক তৈরি করি।
৩. পুকুর বা ডোবা থেকে সংগ্রহ করা ময়লা পানি পর্যবেক্ষণ করে বাম পাশের কলামে ছবি আঁকি।
৪. ডান পাশের ছবির মতো করে একটি পানির ফিল্টার প্রস্তুত করি।
৫. ফিল্টারে ময়লা পানি ঢালি।
৬. ফিল্টার থেকে নির্গত পানি পর্যবেক্ষণ করি এবং ছকের ডান পাশের কলামে ছবি আঁকি ।
৭. কাজটি নিয়ে সহপাঠীদের সাথে আলোচনা করি ।
মানুষের জন্য ক্ষতিকর নয় এমন পানিই হলো নিরাপদ পানি। কিছু পানি মানুষের জন্য নিরাপদ। যেমন— নলকূপের পানি। আবার কিছু পানি মানুষের পানের জন্য নিরাপদ নয়। যেমন— পুকুর বা নদীর পানি । তাই পান করা এবং রান্নার কাজে ব্যবহার করার পূর্বে পানি নিরাপদ করা প্রয়োজন। মানুষের ব্যবহারের জন্য পানিকে গ্রহণযোগ্য এবং নিরাপদ করার ব্যবস্থাই হলো পানি বিশুদ্ধকরণ।
নিচে পানি নিরাপদ করার কিছু উপায় বর্ণনা করা হলো—
ছাঁকনি দিয়ে ছেঁকে পানি পরিষ্কার করার প্রক্রিয়াই হলো ছাঁকন। পাতলা কাপড় বা ছাঁকনি দিয়ে ছেঁকে পানি পরিষ্কার করা যায়। তবে এই প্রক্রিয়ায় প্রাপ্ত পানি পরিষ্কার হলেও তা জীবাণুমুক্ত নয়। তাই নিরাপদ পানির জন্য এই পানিকে ফুটিয়ে জীবাণুমুক্ত করতে হবে।
একটি কলস বা পাত্রে নদী বা পুকুরের পানি নিয়ে রেখে দেই। কিছুক্ষণ পর দেখা যাবে পাত্রের তলায় তলানি জমেছে। উপরের অংশের পানি পরিষ্কার হয়েছে। পানিতে থাকা ময়লা যেমন— বালি, কাদা ইত্যাদি সরানোর এই প্রক্রিয়াই হলো থিতানো।
পানি জীবাণুমুক্ত করার একটি ভালো উপায় হলো ফুটানো। জীবাণুমুক্ত নিরাপদ পানির জন্য ২০ মিনিটের বেশি সময় ধরে পানি ফুটাতে হবে।
অনেক সময় বন্যা বা জলোচ্ছ্বাসের কারণে পানি ফুটানো সম্ভব হয় না। এ ক্ষেত্রে ফিটকিরি, ব্লিচিং পাউডার, পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট ইত্যাদি পরিমাণমতো মিশিয়ে আমরা পানি নিরাপদ করতে পারি। তবে মনে রাখতে হবে আর্সেনিকযুক্ত পানি এ সকল প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নিরাপদ করা যায় না ।
১) পানিচক্র কী ?
২) পানি দূষণ প্রতিরোধের ৩টি উদাহরণ দাও।
৩) অনিরাপদ পানি থেকে নিরাপদ পানি পাওয়ার চারটি উপায় লেখ ৷
৪) বৃষ্টির পর মাটিতে পানি জমা হয়। কিছুক্ষণ পর সেই পানি অদৃশ্য হয়ে যায়। ওই পানি কোথায় যায় ?
৫) পানির তিনটি অবস্থা কী কী ?
১) বরফসহ পানির গ্লাসের বাইরের পৃষ্ঠ কেন ভিজে যায় তা ব্যাখ্যা কর।
২) পানিচক্র ব্যাখ্যা কর।
৩) জীবের কেন পানি প্রয়োজন ?
৪) বাতাসে পানি আছে তা আমরা কীভাবে ব্যাখ্যা করতে পারি?
৫) পুকুরের পানি থেকে আমরা কীভাবে নিরাপদ পানি পেতে পারি ?
৬) ঠাণ্ডা পানির গ্লাসের গায়ে লেগে থাকা পানির কণা এবং শিশির কেন একই রকম ?
আরও দেখুন...