জীববৈচিত্র্য

সপ্তম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - বিজ্ঞান - বিজ্ঞান অনুসন্ধানী পাঠ | NCTB BOOK

এই অধ্যায়ের শেষে শিক্ষার্থীরা নিম্নোক্ত বিষয়গুলো শিখতে পারবে—

  • জীববৈচিত্র্য কী
  • জীববৈচিত্র্যের উদ্ভব
  • জীববৈচিত্র্যের স্বরূপ
  • জীবের পারস্পরিক সম্পর্ক
  • জীববৈচিত্র্য পরিমাপের উপায়
  • বাংলাদেশের জীববৈচিত্র্য
  • জীববৈচিত্র্যের ঝুঁকি ও প্রতিকার

যদি প্রশ্ন করা হয়, এই পৃথিবী কেন সুন্দর? তবে নানান উত্তর আসতে পারে। কিন্তু যদি আমাদের জানা অন্যান্য গ্রহের সঙ্গে তুলনা করি, তবে বুঝতে পারব পৃথিবীর এই সৌন্দর্যের পেছনে নিশ্চিত করেই ভূমিকা রাখছে এর বিচিত্র জীবজগৎ। মঙ্গলগ্রহ, বৃহস্পতি কিংবা চাঁদ এসব গ্রহ-উপগ্রহ যেগুলোর কথাই আমরা বলি না কেন, সেগুলোর রুক্ষ প্রাণহীন একটি পরিবেশ। তার তুলনায় পৃথিবীর এই সজীব, প্রাণময় পরিবেশ আমাদের মধ্যে সম্পূর্ণ ভিন্ন একটি অনুভূতি তৈরি করে।

মানুষসহ এই পৃথিবীতে নানান বৈশিষ্ট্যের কোটি কোটি জীব আছে। সেগুলোর আকার, আকৃতি, রং, বাসস্থান, খাদ্য ইত্যাদি সবকছুতেই রয়েছে বৈচিত্র্য। বিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা ক্ষেত্র হচ্ছে জীবের এই বৈচিত্র সম্পর্কে জানা। কীভাবে ভিন্ন ভিন্ন জীব ভিন্ন ভিন্ন পরিবেশে টিকে থাকে, সেগুলোর প্রজনন বা সংখ্যাবৃদ্ধি কীভাবে নিয়ন্ত্রিত হয়, সেগুলোর পুষ্টি বা খাদ্যের বিষয়টি কীভাবে তারা নিশ্চিত করে, বিজ্ঞানীরা এর সবকিছু জানতে চান। তীব্র ঠান্ডা মেরু অঞ্চলে, উত্তপ্ত বালুকাময় মরুভূমিতে কিংবা সূর্যের আলোর নিশানাহীন সমুদ্রের গভীর তলদেশের পরিবেশে যেভাবে খাপ খাইয়ে নানান ধরনের জীব বেঁচে থাকছে, তা এক অপার বিস্ময়ের বিষয়।

আমরা এই অধ্যায়ে এই বিস্ময়কর জীববৈচিত্র্য নিয়ে প্রাথমিক ধারণা গ্রহণ করব। উপরের শ্রেণিতে ধীরে ধীরে আরো বিস্তারিতভাবে তোমরা এসব বিষয় জানতে পারবে।

Content added By

জীববৈচিত্র্য বা Biodiversity শব্দ দ্বারা পৃথিবীতে জীবনের বিপুল বৈচিত্র্য বর্ণনা করা হয়। জীববৈচিত্র্য বলতে উদ্ভিদ, প্রাণী, অণুজীবসহ সকল জীবের মধ্যে বিদ্যমান বৈচিত্র্যকে বুঝায়। পৃথিবীতে ঠিক কত সংখ্যক ভিন্ন ভিন্ন জীব আছে তা নিশ্চিত করে এখানো আমাদের জানা নেই। তবে বিজ্ঞানীরা অনুমান করেছেন যে, প্রায় ৮-১৪ মিলিয়ন (৮০ থেকে ১৪০ লক্ষ) বিভিন্ন প্রজাতির জীব এই পৃথিবীতে রয়েছে। কারো কারো ধারণা মতে সংখ্যাটা আরো বেশি। তবে সংখ্যা যাই হোক না কেন, এসব জীবের বেশিরভাগই আমাদের অজানা। এখন পর্যন্ত মাত্র ১.২ মিলিয়ন (১২ লক্ষ) প্রজাতি শনাক্ত এবং বর্ণনা করা হয়েছে, যার অধিকাংশই অবশ্য পোকামাকড়। এর অর্থ দাড়ায় এই যে, কোটি কোটি অন্যান্য জীব এখনো আমাদের কাছে রহস্যময়, অজানা।

Content added By

জীববৈচিত্র্যের উদ্ভব

বর্তমানে জীবিত সকল প্রজাতির অনন্য বৈশিষ্ট্যগুলো হাজার হাজার বছরে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে বিকশিত হয়েছে। একটি জীব তার পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর জন্য যেসব কৌশল ও পদ্ধতি অনুসরণ করে তাকে বলা হয় অভিযোজন (Adaptation)। অপরদিকে নির্দিষ্ট কোনো কারণ ছাড়াই জীবের এক প্রজন্ম থেকে পরের প্রজন্মে যাবার সময় কিছু পরিবর্তন ঘটে। যে কারণে আমরা দেখতে হুবহু আমাদের মা বাবার মতো না হয়ে একটু হলেও আলাদা হই! যমজ না হলে ভাইবোনদের চেহারাও হুবহু একই হয় না, যদিও তারা একই বাবা মায়ের সন্তান! মা বাবা থেকে সন্তান—এই এক প্রজন্মে চেহারার এই পার্থক্য খুব ছোট পরিবর্তন। কিন্তু লক্ষ লক্ষ বছর ধরে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে এই ছোট পরিবর্তনগুলো ঘটতে ঘটতে এক পর্যায়ে এমন বৈশিষ্ট্যের নতুন জীব দেখা দেয় যা সেগুলোর আদি পূর্বপুরুষ থেকে অনেক আলাদা। এইভাবে দীর্ঘ সময় ধরে জীবের মধ্যে পরিবর্তন ঘটার যে প্রক্রিয়া, তাকে বলা হয় বিবর্তন। বিবর্তন এবং অভিযোজন প্রক্রিয়ায় প্রাপ্ত বৈশিষ্ট্যই জীবজগতের সদস্যদের একে অন্যের কাছ থেকে আলাদা করে তুলেছে। যেকোনো প্রাণী তার জীবদ্দশায় নিজের প্রতিরূপ সৃষ্টির মাধ্যমে তার প্রজতিকে বাঁচিয়ে রাখে। যা আমরা প্রজনন হিসেবে জানি। যে জীবগুলো সময়ের সঙ্গে বিবর্তিত ও অভিযোজিত হয়ে হয়ে একে অপরের থেকে এতটাই আলাদা হয়ে গেছে যে, যে সেগুলো আর একে অপরের সঙ্গে প্রজননে অংশ নিতে পারে না, সেগুলোর আলাদা প্রজাতি (Species) হিসেবে বিবেচনা করা হয়। যেসব জীব একে অপরের সাথে প্রজনন করতে পারে, সেগুলোকে সাধারণত একই প্রজাতির ভেতরে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

Content added By

জীববৈচিত্র্যের স্বরুপ

বিশ্বজুড়ে কতটা জীববৈচিত্র্য রয়েছে তা নিয়ে জানতে বিজ্ঞানীদের আগ্রহ সীমাহীন, কারণ, এখনও সেগুলোর অনেক জীববৈচিত্র্য আবিষ্কার করা বাকি আছে। পৃথিবীতে ভিন্ন ভিন্ন অঞ্চলে ভিন্ন ভিন্ন জীব ওই অঞ্চলের পরিবেশ অনুযায়ী অভিযোজিত হয়। অঞ্চলভিত্তিক এই জীবগোষ্ঠী এবং তার পরিবেশের জড় উপাদান মিলে যে সিস্টেম তৈরি হয়, তাকে বলা হয় ইকোসিস্টেম (Ecosystem) বা বাস্তুতন্ত্র। এই বাস্তুতন্ত্র কে “বায়োম”ও (Biome) বলা হয়ে থাকে। পৃথিবীর ভিন্ন ভিন্ন অঞ্চলে ভিন্ন ভিন্ন বাস্তুতন্ত্র গড়ে ওঠে। যেমন- সবুজ বনভূমিতে, বরফে ঢাকা তুন্দ্রা অঞ্চলে, কিংবা পুকুর, হ্রদ বা সাগরের পানির নিচে বাস্তুতন্ত্রের ধরন একে অপরের চেয়ে অনেক আলাদা। যেসব প্রজাতির বৈশিষ্ট্য কোনো নির্দিষ্ট অঞ্চলের পরিবেশে খাপ খাওয়াতে বেশি উপযোগী সেগুলো সেখানে টিকে থাকে এবং সফলভাবে বংশবৃদ্ধি করে।

সহজভাবে বলা যায়, বায়োম হলো একটি বিশাল এলাকা যা এই এলাকার গাছপালা, মাটি, জলবায়ু এবং বন্যপ্রাণী দ্বারা চিহ্নিত করা হয়। পাঁচটি প্রধান ধরনের বায়োম রয়েছে: জলজ, তৃণভূমি, বন, মরুভূমি এবং তুন্দ্রা, যদিও এই বায়োমগুলোর মধ্যে কয়েকটিকে আরও নির্দিষ্ট বিভাগে বিভক্ত করা যেতে পারে, যেমন মিষ্টি জল, সামুদ্রিক, ঘনবর্ষণ বনাঞ্চল (Rainforest) যা গ্রীষ্মমণ্ডলীয় বা নাতিশীতোষ্ণ হয়ে থাকে এবং জলাভূমিময় পাইনগাছের বন বা তাইগা।

একটি পুকুরের পাশ দিয়ে হেঁটে গেলে সেখানে মাছ, ব্যাঙ, মাছরাঙা, ফড়িং এবং আরও নানা রকম পোকামাকড় দেখতে পাবে। তৃণভূমিতে ইঁদুর, সাপ, কেঁচো ইত্যাদি প্রজাতি থাকতে পারে, আর নানা ধরনের পোকা-মাকড় তো থাকবেই। আবার বাংলাদেশের একটি তৃণভূমির সঙ্গে কানাডার একটি তৃনভূমি তুলনা করলে দেখেবে সেগুলোর জীববৈচিত্র ভিন্ন। সবচেয়ে বেশি জীববৈচিত্র্য ধারণ করা বাস্তুতন্ত্রগুলোতে সেখানকার প্রাণী, উদ্ভিদ, অণুজীবের সংখ্যা বৃদ্ধির জন্য আদর্শ পরিবেশগত অবস্থা থাকে।

বিশ্বের কিছু অঞ্চল, যেমন মেক্সিকো, দক্ষিণ আফ্রিকা, ব্রাজিল, দক্ষিণ-পশ্চিম মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং মাদাগাস্কারের অঞ্চলে অন্যদের চেয়ে বেশি জীববৈচিত্র্য রয়েছে। বিশ্বের এসব জায়গায় প্রচুর পরিমাণে স্থানীয় প্রজাতি রয়েছে। স্থানীয় প্রজাতি হচ্ছে সেগুলো, যেগুলো শুধু কোনো নির্দিষ্ট জায়গায় বিদ্যমান। যেমন- দক্ষিণ আফ্রিকার কেপ ফ্লোরিস্টিক (Cape Floristic) অঞ্চলে প্রায় ৬২০০টি উদ্ভিদ প্রজাতি রয়েছে, যা বিশ্বের আর কোথাও পাওয়া যায় না। স্থানীয় প্রজাতির উচ্চ সংখ্যার অঞ্চলগুলোকে জীববৈচিত্র্যের হটস্পট (Hotspot) বলা হয়৷

Content added By

জীবের পারস্পারিক সম্পর্ক

পৃথিবীর সমস্ত প্রজাতি বেঁচে থাকার জন্য এবং সেগুলোর বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য একসঙ্গে কাজ করে। উদাহরণস্বরূপ, চারণভূমির ঘাস গবাদি পশু খায়। গবাদি পশু যে মল ত্যাগ করে, তা সার তৈরি করে যা মাটিতে পুষ্টি ফেরত দেয়, যা আরও ঘাস জন্মাতে সাহায্য করে। এই সার ফসলি জমিতে প্রয়োগ করার জন্যও ব্যবহার করা যেতে পারে। পৃথিবীর অনেক প্রজাতি খাদ্য, পোশাক এবং ওষুধ সহ নানা উপকরণ প্রদান করে মানুষের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

Content added By

জীববৈচিত্র্য পরিমাপের উপায়

জীববৈচিত্র্য পরিমাপের একটি সাধারণ উপায় হলো একটি নির্দিষ্ট এলাকার মধ্যে বসবাসকারী প্রজাতির মোট সংখ্যা গণনা করা। গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চল, যেখানে সারা বছর উষ্ণ থাকে, সেখানে সবচেয়ে বেশি জীববৈচিত্র্য রয়েছে। নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চল, যেখানে উষ্ণ গ্রীষ্ম এবং ঠান্ডা শীত থাকে, সেখানে জীববৈচিত্র্য কম থাকে। পাহাড়ের চূড়া এবং মরুভূমির মতো শুষ্ক অঞ্চলগুলোতে জীববৈচিত্র্য আরও কম।

সাধারণত, বিষুবরেখার যত কাছে একটি অঞ্চল, জীববৈচিত্র্য তত বেশি। দক্ষিণ আমেরিকার আমাজন রেইন ফরেস্ট অন্তত ৪০,০০০ বিভিন্ন উদ্ভিদের প্রজাতি বাস করে। এটি আমাদের এই পৃথিবী নামের গ্রহের সবচেয়ে বৈচিত্র্যময় অঞ্চলগুলোর মধ্যে একটি। পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগর এবং ভারত মহাসাগরের উষ্ণ জলে নানা প্রজাতির মাছ, প্রবাল ইত্যাদির সমাহারে সবচেয়ে বৈচিত্র্যময় সামুদ্রিক পরিবেশ রয়েছে। অনেক প্রবাল মিলে প্রবাল প্রাচীর তৈরি করে, যেগুলো আরও শত শত প্রজাতির জীবের বাসস্থান। এসব প্রবাল প্রাচীরে ক্ষুদ্র সামুদ্রিক শৈবাল থেকে থেকে শুরু করে বড় হাঙর পর্যন্ত বাস করে।

জীববৈচিত্র্য পরিমাপের আরেকটি উপায় হলো জেনেটিক বৈচিত্র্য। পরবর্তী অধ্যায়গুলোতে আরো একটু বিস্তৃত ভাবে জানব, তবে এখন জেনে রাখি যে জীবকোষের নিউক্লিয়াসের ভেতরে থাকে এই জিন। তুমি দুপেয়ে মানুষ নাকি চারপেয়ে বিড়াল, তোমার চুল কোঁকড়া নাকি সোজা—এই সকল তথ্যই জমা থাকে তোমার কোষের মধ্যে লুকিয়ে থাকা কোনো না কোনো জিনে। কিছু প্রজাতির প্রায় ৪০০,০০০ (চার লক্ষ) জিন আছে। মানুষের জিনের সংখ্যা প্রায় ২৫,০০০ (পঁচিশ হাজার)। এই জিনগুলোর মধ্যে কিছু কিছু আছে যেগুলো একটি প্রজাতির সমস্ত সদস্যের জন্য একইরকম। এসব জিনই একটি গোলাপকে গোলাপ এবং একটি কুকুরকে কুকুর হিসেবে নির্ধারণ করে। কিন্তু একটি প্রজাতির জিনগুলোর মধ্যে কিছু কিছু জিন থাকে ভিন্ন। এই জেনেটিক পরিবর্তনের কারণেই কিছু গোলাপ হয় গোলাপি রঙের, আর কিছু হয় সাদা। আবার মানুষের ক্ষেত্রে বলা যায়, জিনের এরকম পার্থক্যের কারণেই কিছু লোকের চোখ বাদামি এবং কিছু লোকের চোখ নীল ।

প্রজাতির বৃহত্তর জেনেটিক বৈচিত্র্য গাছপালা এবং প্রাণীদের রোগ প্রতিরোধী করে তুলতে পারে। জেনেটিক বৈচিত্র্য প্রজাতিগুলোকে পরিবর্তনশীল পরিবেশের সঙ্গে আরও ভালোভাবে খাপ খাইয়ে নিতে দেয়।

Content added By

বাংলাদেশের জীববৈচিত্র্য

সিন্ধু-গঙ্গা সমতল ভূমির অংশ হিসেবে জীববৈচিত্র্যের এক অপূর্ব লীলাভূমি বাংলাদেশ। বাংলাদেশ সবুজে শ্যামলে ঘেরা এমনই একটি দেশ যেখানে মাটি, পানি, বন বনানী, প্রাকৃতিক পরিবেশ নানা ধরনের জীবের জীবনধারণের জন্য উপযোগী। নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়া ও জলবায়ু, উর্বর মাটি, বিষুবরেখার কাছাকাছি অবস্থানের কারণে পর্যাপ্ত সূর্যালোক, অধিক বৃষ্টিপাত আর সবুজ প্রকৃতি এদেশে নানা ধরনের প্রাণী ও জীবজগতের অভয়ারণ্যের মূল কারণ। সুন্দরবনের সুবিশাল জীব সম্প্রদায় এবং কক্সবাজার এবং সেন্টমার্টিনের সমুদ্রগর্ভের জলজ প্রাণী সবই এদেশের জীবসম্পদ।


সিন্ধু-গঙ্গা সমতল ভূমি

সিন্ধু-গঙ্গা সমতল ভূমি হলো একটি বিরাট উর্বর সমভূমি অঞ্চল যা পাকিস্তানের একটি অংশ, উত্তর ও পূর্ব ভারতের অধিকাংশ এবং প্রায় সম্পূর্ণ বাংলাদেশ জুড়ে অবস্থিত। অঞ্চলটির মধ্য দিয়ে প্রবাহিত সিন্ধু নদ ও গঙ্গা নদীর নামে এই অঞ্চলটির নামকরণ করা হয়েছে।


বাংলাদেশে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সপুষ্পক উদ্ভিদ, মাছ, উভচর প্রাণী, সরীসৃপ, পাখি ও স্তন্যপায়ী প্রাণীর একটি সমৃদ্ধ সংগ্রহ রয়েছে। দেশের প্রাকৃতিক বনাঞ্চলগুলোর অবস্থানগত কারণে জীববৈচিত্র্যময় সম্পদে ভরপুর। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় যে, বাংলাদেশের বনাঞ্চলগুলোতে ৫০০০ এর অধিক সপুষ্পক উদ্ভিদ প্রজাতি পাওয়া যায়। কেবল চট্টগ্রামের বনাঞ্চলে প্রায় ২,২৬০ টি উদ্ভিদ প্রজাতি রয়েছে। এসব উদ্ভিদের মধ্যে রয়েছে কাঠ উৎপাদনকারী উদ্ভিদ, আঁশ উৎপাদনকারী উদ্ভিদ এবং ঔষধি উদ্ভিদ।

বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত ১৩২ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ৫৭৮ প্রজাতির পাখি, ১৫৪ প্রজাতির সরীসৃপ এবং ১৯ প্রজাতির উভচর জীব শনাক্ত করা হয়েছে।

Content added || updated By

জীববৈচিত্র্যের ঝুঁকি ও প্রতিকার

পৃথিবীর বেশিরভাগ জীববৈচিত্র্য মানুষের ব্যবহার এবং অন্যান্য কর্মকাণ্ডের কারণে ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে, যা বাস্তুতন্ত্রকে বিশৃঙ্খল করে, এমনকি কখনো কখনো বিনষ্টও করে ফেলে। দূষণ, জলবায়ু পরিবর্তন এবং জনসংখ্যা বৃদ্ধি সবই জীববৈচিত্র্যের জন্য হুমকি। এই হুমকি প্রজাতি বিলুপ্তির পেছনে মূল ভূমিকা রাখছে। কিছু বিজ্ঞানী অনুমান করেছেন যে, আগামী শতাব্দীর মধ্যে পৃথিবীর সমস্ত প্রজাতির অর্ধেক নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে।

বাংলাদেশ জীববৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ হলেও এখানেও নানান প্রজাতি ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচার (IUCN) এর তথ্য মতে, বাংলাদেশের ২৩টি প্রজাতির বন্যপ্রাণীর অস্তিত্ব হুমকির সম্মুখীন। এছাড়াও এ দেশের প্রায় ২৯টি বন্যপ্রাণীর অস্তিত্ব বিপন্ন। মূলত নগরায়ন, খাদ্য ও বাসস্থানের সংস্থান, ওষুধ ও পরিধেয় বস্ত্রের উপাদান জোগাড় করার কারণে ধ্বংস করা হচ্ছে জীবের নিরাপদ আবাসস্থল ।

মানব জাতি সকল প্রাকৃতিক সম্পদ, যেমন, জলাশয়, সমুদ্র, বনাঞ্চল উজাড় করছে সেগুলোর নিজস্ব স্বার্থ সংশ্লিষ্ট কাজে। সুন্দরবন এবং মধুপুর ও ভাওয়ালের গড়সহ বিভিন্ন বনভূমিতে বিদ্যমান প্রাণী ও জীবজন্তু, যেমন রয়েল বেঙ্গল টাইগার, চিত্রা হরিণ, সরীসৃপ, অজগর, বুনো হাঁস, কালো হাঁস, নীল গাই, রাজশকুন, বুনো মহিষ, মিঠা পানির কুমির, ঘড়িয়াল আজ প্রায় বিলুপ্ত হতে হতে চরম হুমকির মধ্যে জীবনধারণ করছে। বাংলাদেশের প্রায় ৩৯ প্রজাতির প্রাণী হুমকির সম্মুখীন। বনবিজ্ঞানীগণের মতে, বাংলাদেশে ১২৫টির মতো বৃক্ষ প্রজাতি বিপন্ন প্রায়।

জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ এবং একই বিপন্ন প্রজাতি এবং সেগুলোর আবাসস্থল রক্ষা করার জন্য আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন। বাংলাদেশসহ পৃথিবীর সকল দেশেই জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে এখন যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত। পরিবেশ দূষণ, বন্যপ্ৰাণী হত্যা করে সেগুলোর চামড়া বা হাড় দিয়ে পণ্য তৈরি, প্রাণী পাচার ইত্যাদি সমস্যার কারণে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা ব্যপকভাবে অনুভূত হয়েছে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক, আঞ্চলিক সংস্থা, সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা এবং দেশের বাইরের খ্যাতিমান সংস্থা, জাতিসংঘসহ নানা প্রতিষ্ঠান এই জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

জীববৈচিত্র্যের গুরুত্ব অনুধাবন করে জীববৈচিত্র্যের সংরক্ষণ ও বৃদ্ধিকে উৎসাহিত করতে হবে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে প্রাকৃতিক বনাঞ্চলকে সেখানকার অধিবাসী উদ্ভিদ ও বন্যপ্রাণীর নিরাপদ অভয়ারণ্য হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে, যেখানে জীববৈচিত্র্যকে অগ্রাধিকার দিয়ে প্রয়োজনে মানুষের গতিবিধি সীমিত রাখা হয়। বাংলাদেশেও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের জন্য সরকার দেশের বনাঞ্চলের কিছু অংশ সংরক্ষিত এলাকা হিসেবে ঘোষণা করেছে। এছাড়া জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের লক্ষ্যে সংরক্ষিত প্রাকৃতিক বনাঞ্চলের গাছ আহরণ বন্ধ রাখা ছাড়াও মানুষ সৃষ্ট বনায়নের পুরাতন গাছ আহরণ বন্ধ রাখা হয়েছে। বন্যপ্রাণী নিধন ও পাচার রোধে নতুন আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তৈরি করা হয়েছে। এরকম সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণের মাধ্যমে পৃথিবীর অনেকে দেশেই জীববৈচিত্র্য রক্ষায় নতুন আশার সঞ্চার হয়েছে। তবে বিজ্ঞানী এবং পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো এসব পদক্ষেপকে আরো জোরালো করতে বলেন। শুধু সরকারি উদ্যোগ এক্ষেত্রে যথেষ্ট নয়, বরং সেই সঙ্গে প্রয়োজন মানুষের সচেতনতা। সময়ের সঙ্গে যেসব জীব ইতোমধ্যে বিলুপ্ত হয়ে গেছে সেগুলোর হয়তো ফিরিয়ে আনা যাবে না, কিন্তু সবাই যত্নশীল হলে বর্তমান পৃথিবীর জীববৈচিত্র্য রক্ষা হয়তো সম্ভব হবে। সেদিকে সবারই মনোযোগ দেওয়া দরকার। তাহলেই হয়তো সুন্দর পৃথিবীর জীববৈচিত্র্য আবার সমৃদ্ধ ও বর্ণিল হয়ে উঠবে।

Content added By

১। বিষুবরেখার কাছাকাছি অঞ্চলে জীব বৈচিত্র্য বেশি কেন?

Content added By

আরও দেখুন...

Promotion