পোল্ট্রি রিয়ারিং অ্যান্ড ফার্মিং-২

টার্কির বিভিন্ন রোগের কারণ, সংক্রমণ, লক্ষণ, রোগের চিকিৎসা ও রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা

এসএসসি(ভোকেশনাল) - পোল্ট্রি রিয়ারিং অ্যান্ড ফার্মিং-২ - দ্বিতীয় পত্র (দশম শ্রেণি) | NCTB BOOK

টার্কির বিভিন্ন রোগের কারণ, সংক্রমণ, লক্ষণ, রোগের চিকিৎসা ও রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা 

টার্কির রাণীক্ষেত রোগ 

রাণীক্ষেত টার্কির ভাইরাসজনিত তীব্র ছোঁয়াচে রোগ। পৃথিবীর কম বেশি প্রত্যেক দেশে এ রোগের প্রকোপ রয়েছে। বাংলাদেশের টার্কির রোগগুলোর মধ্যে রাণীক্ষেত সবচেয়ে মারাত্বক ও গুরুত্বপূর্ণ। প্রতি বছর এ রোগে দেশের বিরাট অর্থনৈতিক ক্ষতি সাধিত হয়। এ রোগের ব্যাপকতা এবং ক্ষরক্ষতির পরিমাণ এত বেশি যে, টার্কি পালনের জন্য রাণীক্ষেত রোগ একটি প্রধান অন্তরার। বয়স্ক অপেক্ষা বাচ্চা টার্কি এতে বেশি মারাত্মক আক্রান্ত হয়। সাধারনত শুল্ক আবহাওয়ায়, যেমন- শীত ও বসন্ত কালে এ রোগটি বেশি দেখা যায়।

রোগের কারণঃ প্যারামিক্সোভিরিডি পরিবারের নিউক্যাসল ডিজিজ ভাইরাস নামক এক প্রজাতির প্যারামিক্সো ভাইরাস এ রোগের কারণ ।

রোগ সংক্রমণ 

নিম্নলিখিতভাবে এ রোগের জীবাণু সংক্রমিত হতে পারে। যেমন-

  • বাতাসের মাধ্যমে আক্রান্ত স্থান থেকে অন্যস্থানে জীবাণু ছড়াতে পারে। 
  • অসুস্থ বা বাহুক পাখির সর্দি, হাঁচি-কাশি থেকে অন্যস্থানে জীবাণু ছড়াতে পারে। 
  • আক্রান্ত এবং অতিথি পাখি আমদানির মাধ্যমে। 
  • মৃত মুরগি বা পাখি যেখানে সেখানে ফেললে। 
  • বন্য পশুপাখির মাধ্যমে। 
  • পরিচর্যাকারী বা দর্শনার্থী মানুষের জামা, হুতা বা খামারের ঘ্যাপাতির মাধ্যমে। 
  • খাদ্য, পানি ও লিটারের মাধ্যমে।

রাণীক্ষেত রোগের লক্ষণ 

রাণীক্ষেত রোগ অনেক সময় অত্যন্ত দ্রুত জীবাণু সংক্রমণের ফলে লক্ষণ প্রকাশের পূর্বেই টার্কি মারা যেতে পারে। তবে তা না হলে নিম্নলিখিত লক্ষণগুলো প্রকাশ পায়। যেমন-

  • প্রথমদিকে আসনত টার্কি দলছাড়া হয়ে ঝিমাতে থাকে। 
  • শরীরে কাপুনি হয়, ঘন ঘন শ্বাস গ্রহণ করে। 
  • সাদাটে সবুজ পাতলা পায়খানা করে ও দুর্বল হয়ে পড়ে। 
  • মুখ হা করে রাখে, কাশতে থাকে এবং নাকমুখ দিয়ে শ্লেষ্মা ঝরে। 
  • শরীর শুকিয়ে যায় ।
  • মাথার খুঁটি ও গলার ফুল কালচে হয় এবং চোখ মুখ ফুলে যায়। 
  • ডিমপাড়া মুরগির ডিম উৎপাদন কমে যায়, ডিমের খোসা পাতলা ও খসখসে হয়। 
  • তাছাড়া অপুষ্ট ডিম উৎপন্ন হয়। 
  • ক্ষুধামন্দা দেখা দেয়। 
  • ডিম উৎপাদন কমে যায়। 
  • পানির কাশি হয় ও মুখ হা করে নিঃশ্বাস নেয়। 
  • হলদে সবুজ রঙের পাতলা পায়খানা করে।
  • জীবাণু আক্রমনের দুই সপ্তাহ পর স্নায়ুর আক্রান্ত হয়। ফলে মাথা ঘুরায় ও পা অবস হয়ে যায় । 
  • মাথা একপাশে থেকে যেতে পারে, কখনো মাথা দুপায়ের মাঝখানে চলে আসে অথবা সোজা ঘাড় বরাবর পিছন দিকে বেঁকে যেতে পারে।
  • শ্বাস কম আক্রান্ত হওয়ায় এ ভরের লক্ষণ কম প্রকাশ পায়। 
  • সামান্য কাশি থাকে।

রোগ নির্ণয় : 

ময়না তদন্তে নিম্নলিখিত লক্ষণ দেখে

  • শ্বাসনালীতে রক্তাধিক্য ও রক্ত সঞ্চারন। 
  • স্বরা ও শ্বাসনালীতে রক্তাম্বু । 
  • গ্রীষ্ম বড় হয়ে যায়। 
  • খাদ্য অস্ত্রে, বিশেষ করে প্রভেটিকুলাস ও গিজার্ভে রক্ষক্ষরিত পচা ক্ষত । 
  • আগের শেষভাগে পাতলা সাদাটে মন।

চিকিৎসা: 

ভাইরাস রোগ বিধায় এ রোগের কোনো চিকিৎসা নেই। তবে, আক্রান্ত টার্কিতে ব্যাকটেরিয়ার মাধ্যমিক সংক্রমণ রোধে অ্যান্টিবায়োটিক বা সালফোনেমাইড জাতীয় ওষুধ ব্যবহার করা যেতে পারে। এছাড়াও ০.০১% পটাসিয়াম পারম্যাঙ্গানেট পানির সঙ্গে মিশিয়ে আক্রান্ত পাখিকে দৈনিক ২/৩ বার খাওয়ানো যেতে পারে।

রোগ প্রতিরোধ 

রাণীক্ষেত রোগ প্রতিরোধে দুই ধরনের টিকা ব্যবহার করা হয়। যথা- বি. সি. আর. ডি. ডি. এবং আর. ডি. ভি ।

বি.সি.আর.ডি.ভি. : এ টিকাবীজের প্রতিটি শিশি বা ভাষালে হিম শুষ্ক অবস্থায় ১ মি. পি. মূল টিকাবীজ থাকে। প্রতিটি শিশির টিকাবীজ ও মি.লি. পাতিত পানিতে ভালোভাবে মিশাতে হয়। এরপর ৭ দিন ও ২১ দিन বয়সের প্রতিটি বাচ্চা টার্কির এক চোখে এক ফোটা করে ড্রপারের সাহায্যে প্রয়োগ করতে হবে।

আর, ডি, ভি এ টিকাবীদের প্রতিটি ভারালে ০.৩ মি.লি. মূল টিকাবীজ হিমক অবস্থার থাকে। এ টিকা দুমাসের অধিক বয়সের টার্কির জন্য উপযোগী। প্রথমে তারালের টিকাবাজ ১০০ লি.লি. পাতিত পানির সাথে ভালভাবে মিশিয়ে নিতে হবে। এরপর তা থেকে ১ মি.লি. করে নিয়ে প্রতিটি টার্কির রানের মাংসে ইনজেকশনের মাধ্যমে প্রয়োগ করতে হবে। হয় মাস পরপর এ টিকা প্রয়োগ করতে হবে।

 

টিকা ছাড়া খামার থেকে রোগ দমনের জন্য নিম্নলিখিত বিষয়গুলো মেনে চলতে হবে। যথা- 

ক) রাণীক্ষেত রোগে মৃত পাখিকে গুড়িরে ফেলতে হবে বা মাটিচাপা দিতে হবে।

খ) খামারের যাবতীয় সরঞ্জাম ও যন্ত্রপাতি জীবাণুনাশক ওষুধ (যেমন- আয়োসান, সুপারসেপ্ট ইত্যাদি প্রস্তুতকারি প্রতিষ্ঠানের নির্দেশিত মাত্রায়) দিয়ে পরিচ্ছন্ন ও জীবাণুমুক্ত করতে হবে।

টার্কির ফাউল কলেরা রোগ 

টার্কির ফাউল কলেরা রোগের কারণ: 

এটি ব্যাকটেরিয়া জনিত ছোঁয়াচে রোগ। যা সাধারণত গৃহপালিত ও বন্য পাখিকে আক্রান্ত করে । এ রোগ সেপ্টিসেমিক রোগ, যার ফলে আক্রান্ত পাখিতে উচ্চ আক্রান্ত হার ও উচ্চ মৃত্যুহার পরিলিক্ষত হয় । এ রোগের অন্যতম প্রধান কারণ হলো পাশুরেলা মাল্টোসিডা নামক ব্যাকটেরিয়া ।

ফাউল কলেরা রোগের বিস্তার: মুক্তভাবে চলাফেরা করে এমন সব পাখি বিশেষ করে চড়ুই, কবুতর,বয়স্ক পাখি ও ইঁদুর এ রোগের অন্যতম বাহক হিসেবে কাজ করে। তীব্র সংক্রমণের ক্ষেত্রে ইঁদুরের ভূমিকা ১০% । চড়ুই পাখি ও কবুতর কোন রকম লক্ষণ প্রকাশ ছাড়াই এ রোগের বাহক হিসেবে কাজ করে। এ ছাড়াও আক্রান্ত খামারের খাদ্য, খাদ্যের ব্যাগ ও অন্যান্য সরঞ্জাম এ রোগের ক্যারিয়ার হিসেবে কাজ করে।

  • গৃহপালিত পাখি, গেম বার্ড, ছোট বন্য পাখি বিশেষ করে চড়ুই পাখি, কাক । 
  • মুরগি, হাঁস, রাজহাঁসের মধ্যে এ রোগের প্রাদুর্ভাব সবচেয়ে বেশি । 
  • অনেকেই মনে করেন, পরিবেশগত ধকল বিশেষ করে জলবায়ুর পরিবর্তন, পুষ্টি, অতিরিক্ত গরম ও ঠান্ডা জনিত ধকল ইত্যাদি এ রোগকে প্রভাবিত করে।

ফাউল কলেরা রোগের লক্ষণ:

  • তীব্র প্রকৃতির সংক্রমণ ঘটলে টার্কি কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই মারা যায়। 
  • এ রোগে আক্রান্ত হলে মৃত্যুই হলো প্রথম লক্ষণ। 
  • পরবর্তীতে জ্বর, পালক ঝুলে পড়া, মুখ দিয়ে লালা ঝড়া, ডায়রিয়া, ঝিমানোভাব এ রোগের লক্ষণ। 
  • শ্বাস প্রশ্বাসের গতি বেড়ে যায়, মৃত্যুর পূর্বে পালকবিহীন স্থান বিশেষ করে মাথার ঝুটি ও ওয়াটলে সায়ানোসিস পরিলক্ষিত হবে। 
  • বিষ্ঠা প্রাথমিকভাবে পাতলা ও পর সাদাটে হবে। পরবর্তীতে সবুজাভাব পায়খানার সাথে অতিরিক্ত মিউকাস থাকবে।

পোস্ট মর্টেম পরীক্ষা

  • সাধারণত এবডোমিনাল ভিসারার শিরায় হাইপারেমিয়া থাকবে । 
  • পেটিকিয়াল ও ইকাইমোটিক হেমোরেজ দেখা যাবে। বিশেষ করে সাবইপিকার্ডিয়াল ও সাবসিরোসাল হেমোরেজ ফুসফুস, এবডোমিনাল ফ্যাট, ইনটেস্টাইনাল মিউকোসায় পরিলক্ষিত হবে। 
  • পেরিকার্ডিয়াল ও পেরিটোনিয়াল ফ্লুইড বেড়ে যাবে। 
  • লিভার ফুলে যাবে ও আকারে বড় হবে। লিভারে নেক্রোটিক ফোকাই থাকবে। 
  • টার্কির ফুসফুস ব্যাপকভাবে আক্রান্ত হবে। টার্কিতে নিউমোনিয়া দেখা দিতে পারে।
  • ডাইজেস্টিভট্রাক্ট, ফ্যারিংস, ক্রোপ এবং ইনটেস্টাইনে প্রচুর পরিমাণে থকথকে মিউকাস থাকবে । 
  • ডিম পাড়া মুরগির ক্ষেত্রে, ডিম পাড়া মুরগির ওভারিয়ান ফলিকল ফেটে যাবে, ইয়োক মেটেরিয়াল পেরিটোনিয়াল ক্যাভিটিতে প্রবেশ করবে।

চিকিৎসা

  • এ রোগের জীবাণু গ্রাম নেগেটিভ। তাই গ্রাম নেগেটিভ ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে কাজ করে এমন এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করতে হবে।
  • এছাড়াও সালফোনেমাইড জাতীয় উপাদান ব্যবহার করলে ভালো ফলাফল পাওয়া যেতে পারে ।

প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা - 

উন্নত খামার ব্যবস্থাপনা, উপযুক্ত স্যানিটেশন, খামারের পরিবেশ পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখা, খামারে ইঁদুর ও টিকটিকির উপদ্রব ঠেকানো, বয়স্ক পাখি যথাসময়ে কালিং করা ইত্যাদি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। খামারের আশেপাশে কুকুর, শেয়াল, বিড়াল, শূকর ইত্যাদি প্রাণির ঘোরাফেরা সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করতে হবে। টার্কি জোনের ক্ষেত্রে, যে অঞ্চলে টার্কির আধিক্য বেশি সেখানে টার্কি খামারের অভ্যন্তরে মুক্তভাবে চলাফেরা করে এমন সব পাখির আনাগোনা বন্ধ করতে হবে। অসুস্থ টার্কি দ্রুতই সুস্থ টার্কি থেকে অন্যত্র সরিয়ে দিতে হবে। মৃত টার্কি মাটির নিচে পুঁতে রাখতে হবে কিংবা মৃত টার্কি পুড়িয়ে ফেলতে হবে। নতুন করে টার্কি বাচ্চা তুলতে হলে খামার ভালো করে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে জীবাণুনাশক দ্বারা স্প্রে করে খামারের অভ্যন্তরে ও বাইরের জীবাণু ধ্বংস করতে হবে।

 

টার্কির ফাউল পক্স রোগ 

টার্কি ফাউল পক্স একটি ভাইরাসজনিত ছোঁয়াচে রোগ। সব বয়সের সব প্রজাতির পাখি এতে আক্রান্ত হতে পারে। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে এ রোগের প্রাদুর্ভাব ব্যপকতা লাভ করে। তখন মৃত্যুহার অত্যন্ত বেড়ে যায়। যদিও ফাউল পক্স বলতে সব পাখির বসন্ত রোগকেই বুঝায় তথাপি বর্তমানে আলাদা নামেও, যেমন- পিজিয়ন পক্স, টার্কি পক্স, ক্যানারি পক্স প্রভৃতি ডাকা হয়। পৃথিবীর প্রায় পোল্ট্রি উৎপাদনকারী দেশেই বসন্ত রোগ দেখা যায়। এ রোগের পাখির দেহের বিভিন্ন স্থানে, বিশেষত উন্মুক্ত স্থানে এবং অভ্যন্তরীণ অঙ্গে ক্ষুদ্র লালচে নডিউল সৃষ্টি হয় যা বসন্তের গুটি নামে পরিচিত ।

রোগের কারণ: 

পক্সভিরিডি পরিবারের ফাউল পক্স ভাইরাস নামক ভাইরাস বসন্ত রোগের কারণ।

সংক্রমণঃ নিন্মলিখিতভাবে এ রোগ সংক্রমিত হতে পারে। যথা-

  • রোগাক্রান্ত পাখির প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সংস্পর্শে সুস্থ পাখিতে এ রোগ ছড়াতে পারে । 
  • ত্বকের ক্ষত বা কাটা ছেঁড়ার মাধ্যমে। 
  • কিউলেক্স ও অ্যাডিস মশার মাধ্যমে। 
  • তাছাড়া কখনো কখনো রক্তশোষক মাছি, ফ্লি ও আঠালির মাধ্যমেও ছড়াতে পারে।

রোগের লক্ষণঃ

 বসন্ত রোগ প্রধানত দুই প্রকৃতিতে দেখা যায়। যথা-

ক. ত্বকীয় বা হেড ফর্ম : এ প্রকৃতিতে আক্রান্ত পাখির মুখমণ্ডলে বসন্তের গুটি দেখা যায়। আক্রান্ত পাখির ক্ষুধামন্দা, দৈহিক ওজন হ্রাস ও ডিম উৎপাদন কমে যাওয়া প্রধান বৈশিষ্ট্য। এটিকে শুষ্ক বসন্তও বলা হয়।

খ. ডিপথেরিটিক প্রকৃতি : 

এ প্রকৃতিতে প্রথমে আক্রান্ত পাখির জিহ্বায় ক্ষত দেখা যায়। এ ক্ষত পরে শ্বাসনালী ও ফুসফুসে বিস্তার লাভ করে। ব্যাকটেরিয়ার মাধ্যমিক সংক্রমণে অবশেষে পাখির মৃত্যু ঘটে। এ প্রকৃতির বসন্ত আর্দ্র বসন্ত নামে পরিচিত।

এ দুই প্রকৃতির বসন্তে আবার পাখিতে মৃদু ও তীব্র আকারে রোপ লক্ষণ প্রকাশ করতে পারে। 

যেমন-

মৃদু প্রকৃতির বসন্তে-

  • পাখির উন্মুক্ত ত্বকে বসন্তের ফোসকা দেখা যায়। এটিই এ প্রকৃতির প্রধান বৈশিষ্ট্য। 
  • টার্কির ঝুটি, গলকম্বল, পা, পায়ের আঙ্গুল ও পায়ুর চারপাশে বসন্তের গুটি বা ফুলকুঁড়ি দেখা যায়। এগুলো কিছুটা কালচে বাদামি রঙের হয় । 
  • চোখের চারপাশে বসন্তে ফুসকুঁড়ির ফলে চোখ বন্দ হয়ে যায়।

তীব্র প্রকৃতির বসন্তে

  • দেহের মুখগহ্বর, স্বরক্ষা, শ্বাসনালী ও অস্ত্রের দেয়ালেও কাঙ্কের ক্ষত দেখা দিতে পারে। 
  • শ্বাসনালী আক্রান্তের ফলে পাখির শ্বাসকষ্ট হয় ও পাখি শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মারা যায়। 
  • এতে ডিম পাড়া টার্কি ডিম উৎপাদন কমে যায়। 
  • এতে পাখির মৃত্যু হার ৫০% পর্যন্ত হতে পারে।

রোগ নির্ণয়-

  • আক্রান্ত স্থানে প্রথমে ছোট ছোট লাল দাগ হয়। 
  • পরবর্তীতে যা বড় হয়ে পুঁজপূর্ণ হয়, পেঁকে ঘা সৃষ্টি করে। এ ঘায়ে শেষে মাঘড়ি সৃষ্টি হয় ও তা পরবর্তীতে খসে পড়ে।

চিকিৎসা: 

এ রোগের কোনো কার্যকরী চিকিৎসা নেই। তবে আক্রান্ত ক্ষত জীবাণুনাষক ওষুধ (যেমন- মারকিউরিকক্রোম) দিয়ে পরিষ্কার করে তাতে সকেটিল, সালফানিলামাইড বা অন্য কোনো জীবাণুনাশক পাউডার লাগালে সুফল পাওয়া যায় । 

রোগ নিয়ন্ত্রণ 

রোগ প্রতিরোধের জন্য যথাসময়ে পাখিদের টিকা প্রদান করতে হবে। স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশের সৃষ্টি এবং মশা নিয়ন্ত্রণও জরুরি। বসন্ত প্রতিরোধের জন্য এ দেশে দুই ধরনের টিকা প্রয়োগ করা হয়। যথা-

১। পিজিয়ন পক্স টিকা: 

এটি ৩ মি.লি. পাতিত পানির সাথে মিশিয়ে দুই সপ্তাহের বাচ্চার ডানার পালকবিহীন অংশে বাইফকর্ড প্রিকিং নিডল বা সূঁচ দিয়ে খোঁচা মেরে প্রয়োগ করা হয় । 

২। ফাউল পক্স টিকা: 

এ টিকা হিমশুষ্ক অবস্থায় ০.৩ মি.লি. মাত্রায় কাঁচের অ্যাম্পুলে থাকে। এ পরিমান টিকা পরিশ্রুত পানিতে মিশিয়ে দুইশত পাখিতে প্রয়োগ করা যায়। পিজিয়ন পক্স টিকার মতো এ টিকাও এ পদ্ধতিতে বাইফকর্ড প্রিকিং নিডল দিয়ে পাখির ডানার পালকবিহীন স্থানে ৩ বার বিদ্ধ করতে হবে প্রতিবারই পরিসৃত পানিতে গুলানো টিকায় নিডল চুবিয়ে নিতে হবে। এ টিকা প্রয়োগের ৫,৭ ও ১০ তম দিনে টিকাবদ্ধ স্থানে বসন্তের গুটি দেখা গেলে এর কার্যকারিতা প্রমাণ হবে। এ টিকা এক মাসের বেশি বয়সের টার্কিকে প্রয়োগ করতে হবে। এছাড়াও বিদেশে প্রস্তুত বসন্ত রোগের টিকা পাওয়া যায়। যেমন- ওভোডিপথেরিন ফোর্ট (ইন্টারভেট) যা কোম্পানির নির্দেশমতো মাত্রায় প্রয়োগ করা হয়। বছরে একবার পাখিতে এ টিকা প্রয়োগ করা হয়।

 

টার্কির ব্ল্যাকহেড বা হিস্টিমোনিয়াসিস রোগ

হিস্টিমোনাস মিলিয়ামিডিল নামক এককোষি প্যারালাইট এর কারণে ব্ল্যাকহেড ডিজিজ হয়ে থাকে। পরিপাকতন্ত্রের সিকামে বসবাসকারী হেটেরেকিস না न म ও লার্ভা এ রোগের বাহক। ছেটেরেকিস কৃমির ডিম ও পার্ভাতে হিন্টিযোনাস মিশিরাপ্রিডিস নামক এক কোষি প্যারাসাইট বসবাস করে। মেটেরেফিল কৃমির ডিম ও লার্ভা মাটিতে বসবাসকারি কেঁচোর মধ্যে ১২ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে। মুরগীর তুলনার টার্কিতে রাহের বিভিন্ন এর প্রভাব খুবই মারাত্মক এবং এর রোগের কারণে পুরো টার্কি খামারই ধ্বংশ হতে যেতে পারে। মেটেরেফিল কৃষির বিষ/মার্কা যুক্ত মুরগীর পারখানা খাওরার মাধ্যমে এবং এ কৃষির ডিম ও লার্ভা ধারণকারী কেঁচো, পোকা খাওয়ার মাধ্যমে টার্কিতে ব্ল্যাকহেড রোগের সংক্রমণ ঘটে। এটি প্রথমে টার্কির পরিপাকতন্ত্রের শিকার ক্ষত/আলসার সৃষ্টি করে এবং পাখি ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়। পরবর্তীতে এটি পাখির নিবার স্থান দিয়ে রক্তনালীতে প্রবেশ করে লিভারে পৌঁছায় এবং লিভারে ছোট ছোট হোল/গর্ভের সৃষ্টি করার মাধ্যমে লিভারকে অকার্যকর করে ফেলে। অবশেষে পাখি মারা যায় ।

টার্কির ব্ল্যাকহেড বা হিস্টিমোনিয়াসিস রোগের সংক্রমণ-

  • টার্কির খামারে থাকা বিভিন্ন প্রজাতির টার্কি, ফেন্সি আইটেম ও গেম বার্ড থেকে এ রোগের সংক্রণ ঘটে। 
  • টার্কির পাশাপাশি ঘামারে থাকা মুরগি ও গেম বার্ডের পরিপাকতন্ত্রের সিকামে বসবাসকারী হেটেৱেকিস নামক সিকল কৃষি এ রোগের ধারক ও বাহক। 
  • সংক্রমিত পাখির সংস্পর্ষে থেকে সুস্থ পাখিও সংক্রমিত হয় মূলত আক্রান্ত পাখির মল বা মলত খাবার পানি গ্রহন করার ফলে। 
  • টার্কি মাটিতে থাকা কেঁচো খেলে, কারণ হেটেরেকিস কৃমির ডিম ও লার্ভা মাটিতে বসবাসকারি কেঁচোর মধ্যে ১২ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে। 
  • লিটারে থাকা ভবেরে পোকা বা ক্ষৰৱে পোকার মতো অন্যান্য পোকা খেলেও টার্কির শরীরে এ রোগের সংক্রমণ ঘটে।

টার্কির ব্ল্যাকহেড বা হিস্টিমোনিয়াসিস রোগের লক্ষণ

  • সংক্রমিত হওয়ার ৭-১২ দিনের মধ্যে এ রোগের লক্ষণ প্রকাশ পেতে শুরু করে- 
  • আকস্মিক বা হঠাৎ মৃত্যু হয় । 
  • অবসাদগ্রস্থতা, ক্ষুধা হ্রাস পাবে এবং পিপাসা বৃদ্ধি পাবে। 
  • উজ্জ্বল হলুদাভাব ডায়েরিয়া, 
  • অনেক ক্ষেত্রে মাথার রং নীলাভ-কাল বর্ণ ধারণ করে থাকে । 
  • সিকার প্রাচীরে ক্ষত সৃষ্টি হয় (সিকা স্ফীত হয় আবার কোথাও ছোট ও পাতলা হয়)। 
  • খাবার হজম হয় না, খাদ্য থলিতে খাবার ও পানি জমা হয়ে থাকে । 
  • পাখা ঝুলে পরে এবং পালক উদ্ধু-খুস্কু হয়ে পড়ে । 
  • অপেক্ষাকৃত বয়স্ক পাখি মারা যাওয়ার আগে চরম মাত্রায় ওজন হ্রাস পাবে এবং শরীরের চর্বি এবং মাংশ পেশীগুলো শুকিয়ে আক্রান্ত টার্কি ২-৪ দিনেই মারা যায় ।

টার্কির ব্ল্যাকহেড বা হিস্টিমোনিয়াসিস রোগের চিকিৎসা 

এন্টিকক্সিডিয়ালি অথবা এন্টিবায়োটিক দ্বারা হিস্টোমানিয়াসিস ডিজিজ নিরাময় হয় না। এই এককোষী প্যারাসাইট হিস্টোমোনাস এর ইউনিক স্ট্রাকচার ও মেটাবলিজম এর কারণে কোন এন্টিকক্সিডিয়াল অথবা এন্টিবায়োটিক একে ধ্বংস করতে পারে না; তবে সেকেন্ডারি ব্যাক্টেরিয়াল ইনফেকশন এর ক্ষেতে কিছুটা উপকার পাওয়া যায় ৷

টার্কির ব্ল্যাকহেড বা হিস্টিমোনিয়াসিস রোগ প্রতিরোধ:-

১. এ রোগ নিরাময়ের জন্য এখনও পর্যন্ত কার্যকারি কোন ঔষধ না থাকায় সারা বিশ্বেই রোগ প্রতিরোধের জন্য কার্যকর ও যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ এবং আক্রান্ত পাখিকে সাথে সাথে সুস্থ পাখি থেকে সম্পূর্ণভাবে দূরে আলাদা রাখার ব্যবস্থাপনার উপর গুরুত্ব আরোপ করা হয় । 

২. খামারে টার্কির পাশাপাশি অন্যান্য মুরগী, ফেন্সি মুরগী এবং গেম বার্ড পালন করতে হলে অবশ্যই যথাযথাভাবে রুটিন মাফিক কৃমিনাশক ব্যবহার করতে হবে। কারণ কৃমিই এ রোগের ধারক ও বাহক 

৩. খামারের লিটার সবসময় পরিষ্কার ও পোকা মুক্ত রাখতে হবে। 

৪. পাখির চারণভূমিতে কেঁচোর পরিমাণ যাতে কম থাকে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে বা কেঁচো বসবাসকারী স্থানে টার্কির প্রবেশ রহিত করতে হবে। 

৫. অসুস্থ পাখিকে অবশ্যই সাথে সাথে দূরে আলাদা শেডে রেখে চিকিৎসা দিতে হবে। এতে করে অন্যান্য সুস্থ পাখিগুলো রক্ষা পাবে। ব্ল্যাকহেড রোগ প্রতিরোধ ও সংক্রমণ ঠেকাতে অসুস্থ পাখিকে আলাদা রাখাই সবচেয়ে কার্যকর কৌশল। এ পদক্ষেপটিই খামারকে বাঁচিয়ে দিবে।

টার্কি মুরগির একটি আদর্শ সংক্ষিপ্ত ভ্যাকসিন সিডিউল

 

ব্রিডার ফার্ম এর ক্ষেত্রে নিম্নলিখিত ভ্যাকসিন চার্টটি অনুসরন করা যেতে পারে। 

বিশেষ সতর্কতা

  • ভ্যাকসিনের আগে পরে এন্টিবায়োটিক ব্যাবহার না করাই উত্তম। তবে ভ্যাকসিনের পরে ভিটামিন সি দেয়া ভালো।
  • ৩৫-৪০ দিনে কৃমির ঔষধ প্রয়োগ করতে হবে এবং প্রতি ২ মাস অন্তর তা পুনরায় দিতে হবে । 
  • টার্কির করাইজা ভ্যাকসিন ও মুরগির করাইজা ভ্যাকসিন এক নয়। 
  • ৬ মাস অন্তর রাণীক্ষেত কিল্ড ভ্যাকসিন করা যেতে পারে। 
  • অবশ্যই স্থান ভেদে ভ্যাকসিন সিডিউল পরিবর্তন করা যেতে পারে।

 

 

Content added By
Promotion