প্রিয় শিক্ষার্থী, তোমরা হয়তো তাকদির সম্পর্কে পূর্বে থেকেই জানো। তাকদির সম্পর্কে পাঠ্য বইয়ের মূল আলোচনা শুরুর আগে চলো আমরা নিম্নোক্ত শিরোনামের আলোকে জোড়ায় আলোচনায় অংশ নেই।
জোড়ায় আলোচনা ২. ______________ ৩. ________________ ৪. _____________________ |
তাকদির আরবি শব্দ। এর অর্থ নির্ধারণ করা, নির্দিষ্ট করা, ধার্য করা, নিয়তি, ভাগ্য ইত্যাদি। এ মহাবিশ্বে যা কিছু ঘটবে, প্রজ্ঞাময় আল্লাহ তা'আলা তাঁর পূর্বজ্ঞান ও প্রজ্ঞা অনুযায়ী সেসব নির্ধারণ করে রেখেছেন। আল্লাহ প্রত্যেক বস্তুকে তাকদিরসহ সৃষ্টি করেছেন। পৃথিবীর কোথায়, কোন সময় কী ঘটবে এবং কীভাবে ঘটবে আল্লাহ তা'আলা কর্তৃক তা পূর্ব নির্ধারিত। পৃথিবীতে এবং ব্যক্তিগতভাবে মানুষের উপর যত বিপদ আসে তা জগৎ সৃষ্টির পূর্বেই কিভাবে (তাকদিরে) লিপিবদ্ধ আছে। এটা আল্লাহর পক্ষে সহজ। অতএব কোনো কিছু হারিয়ে গেলে আফসোস করা যাবে না। আবার ভালো কিছু পাওয়ায় আনন্দে আত্মহারা হওয়া যাবে না। সকল ক্ষেত্রে মহান আল্লাহর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে হবে। কারণ ভালো-মন্দ সবকিছুই আল্লাহ তা'আলার পক্ষ থেকে হয়। তাকদিরের বাইরে কোনো কিছুই নেই। সবকিছুই তাকদির অনুযায়ী সংঘটিত হয়, এমনকি অক্ষমতা এবং বুদ্ধিমত্তাও।
তাকদিরের প্রতি বিশ্বাস করা ইমানের অবিচ্ছেদ্য অংশ। প্রকৃত মুমিন হতে হলে অবশ্যই তাকদির বিশ্বাস করতে হবে। তাকদিরের ওপর সন্তুষ্ট থাকা প্রত্যেক মুমিনের জন্য অত্যাবশ্যক।
তাকদিরের প্রকারভেদ
তাকদির দুই প্রকার। যথা:
১. তাকদিরে মুবরাম অর্থাৎ অপরিবর্তনীয় তাকদির ও
২. তাকদিরে মুআল্লাক অর্থাৎ পরিবর্তনযোগ্য তাকদির।
তাকদিরে মুবরাম কখনোই পরিবর্তিত হয় না। আর তাকদিরে মুআল্লাক বান্দার নেক আমল, দোয়া ইত্যাদির মাধ্যমে পরিবর্তিত হয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, 'দোয়া ভাগ্যকে পরিবর্তন করাতে পারে। আর নেক আমল বয়সকে বৃদ্ধি করাতে পারে।' (তিরমিযি)
তাকদিরে লিপিবদ্ধ আছে বলেই মানুষ ভালো-মন্দ ইত্যাদি কাজ করছে বিষয়টি এমন নয়। আল্লাহ তা'আলা আলিমুল গায়েব। আমরা কখন কী করব, কী খাব, কোথায় কী ঘটবে-এগুলো আল্লাহ তা'আলা পূর্ব থেকেই জানেন। ফলে তিনি তা লিপিবন্ধ করে রেখেছেন। অনেকে প্রশ্ন করেন মানুষ ভালো-মন্দ যত কাজ করে তা আল্লাহর ইচ্ছায় ও তাকদিরে লিপিবদ্ধ থাকার কারণে করে। তাহলে মানুষের কী দোষ? কেন আল্লাহ মন্দ কাজের জন্য শাস্তি দিবেন? আসলে মহান আল্লাহ মানুষকে ভালো এবং মন্দ দুটি সুস্পষ্ট পথ দেখিয়েছেন। তিনি তাঁর বান্দার প্রতি যুলুম করেন না। মহান আল্লাহ বলেন,
وَخَلَقَ اللهُ السَّمَوتِ وَالْأَرْضَ بِالْحَقِّ وَلِتَجْزى
كُلُّ نَفْسٍ بِمَا كَسَبَتْ وَهُمْ لَا يُظْلَمُونَ
অর্থ: 'আর আল্লাহ আসমানসমূহ ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন যথাযথভাবে এবং যাতে প্রত্যেক ব্যক্তিকে তার কাজ অনুযায়ী ফল দেওয়া যেতে পারে। আর তাদের প্রতি কোনো যুলুম করা হবে না।' (সুরা আল-জাছিয়া, আয়াত: ২২)
আল্লাহ মানুষকে কর্মনির্ভর করে সৃষ্টি করেছেন। এ পৃথিবীতে মানুষ চেষ্টা ছাড়া কোনো কিছুই পেতে পারে না। তিনি মানুষকে স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি দিয়েছেন আর ভালো ও মন্দ কাজ করার স্বাধীনতা দান করেছেন। ভালো এবং মন্দ কাজ মানুষ স্ব-জ্ঞানে ও নিজ ইচ্ছায় করে থাকে। মহান আল্লাহ নিজ ইচ্ছায় কাউকে ভালো বা মন্দ কাজ করার জন্য বাধ্য করেন না। যদি তিনি এরূপ করতেন তাহলে দুনিয়ার সকল মানুষ ইমানদার হয়ে যেত। আল্লাহ তা'আলা বলেন
وَلَوْ شَاءَ رَبُّكَ لَأمَنَ مَنْ فِي الْأَرْضِ كُلُّهُمْ جَمِيعًا
أَفَأَنْتَ تُكْرِهُ النَّاسَ حَتَّى يَكُونُوا مُؤْمِنِينَ
অর্থ: আর আপনার প্রতিপালক ইচ্ছা করলে পৃথিবীতে যারা আছে তারা সকলেই অবশ্যই ইমান আনতো। তবে কি আপনি মুমিন হওয়ার জন্য মানুষের ওপর জবরদস্তি করবেন?' (সুরা ইউনুস, আয়াত: ৯৯)
যে ব্যক্তি আল্লাহর দেখানো উত্তম পথে চেষ্টা সাধনা করে আল্লাহ তাকে হেদায়েত দান করেন। আর যে নিজেকে পথভ্রষ্ট করে তার জন্য কোনো সাহায্যকারী নেই। অতএব নিজেদের খারাপ কাজগুলো আল্লাহর ইচ্ছায় ও তাকদিরে লেখার কারণে হয়েছে এ ধরনের কথা বলে খারাপ কর্মের শাস্তি থেকে রেহাই পাওয়া যাবে না। তাকদিরের দোহাই দিয়ে জাহান্নাম থেকে মুক্তি বা জান্নাত লাভ করা যাবে না। এ ক্ষেত্রে ছোট একটা ঘটনা উল্লেখ করা যায়। উমর (রা.) এর খেলাফত আমলে এক লোক চুরির অভিযোগে অভিযুক্ত হলো এবং আদালতে তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রমাণিত হলো। শাস্তি হিসেবে তার হাত কাটার নির্দেশ দেওয়া হলো। লোকটি উমর (রা.) এর কাছে গিয়ে বলল, 'মুসলিম জাহানের হে মহান খলিফা। আল্লাহর ইচ্ছা ছাড়া কিছু হয় না। আমিও তো আল্লাহর ইচ্ছার বাইরে নই। আমি তাঁর ইচ্ছায়ই চুরি করেছি। আমার হাত কাটা যাবে কেন?' উমর (রা.) বললেন, ‘সবকিছু আল্লাহর ইচ্ছায় বা তাকদিরের কারণে হয়। তুমি যেমন আল্লাহর ইচ্ছায় চুরি করেছ, তেমনি তোমার হাত আল্লাহর ইচ্ছায়ই কাটা হবে।’
আরও দেখুন...