দেখে এলাম নায়াগ্রা

পঞ্চম শ্রেণি (ইবতেদায়ী) - আমার বাংলা বই - | NCTB BOOK

দেখে এলাম নায়াগ্রা

তোমরা নিশ্চয়ই জলপ্রপাতের কথা শুনেছ? জলপ্রপাত দেখার সৌভাগ্য একবার আমার হয়েছিল। নিজের দেশে নয়, বিদেশের মাটিতে। কানাডায় গিয়েছি। সেখানকার খুব বড় শহর টরন্টোতে। একদিন বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে গল্পের মজলিসে কথা উঠল—সবাই মিলে নায়াগ্রা দেখতে গেলে কেমন হয়। তখনি সকলে রাচ্ছি। কোনদিন যাওয়া হবে তাও ঠিক হলো।

কোথাও যাব বললেই তো হয় না, কীভাবে যাব তা ভাবতে হয়। বাসে করে যাওয়া যায়। কিন্তু বাসে চেপে গেলে নিজের ইচ্ছেমতো যেখানে সেখানে থামা যায় না। অতএব ঠিক হলো যে, কোনো বন্ধুর একটা গাড়ি নিয়ে যাওয়া হবে।

তাই যাওয়া গেল একদিন। আমেরিকায় কিংবা কানাডায় প্রায় সকলেরই নিজের গাড়ি থাকে আমার বন্ধুরও ছিল। বন্ধুরই এক বিশাল গাড়িতে একদিন চড়ে বসলাম। চলো নায়াগ্রা, চলো নায়াগ্রা। আহ্, দেশে ফিরে গিয়ে কী গল্পটাই না করা যাবে।

শাঁ শাঁ করে পাড়ি ছুটতে লাগল। এখানে রাস্তা মোটেই আঁকাবাঁকা থাকে না, রেললাইনের মতো সোজা। ফলে দ্রুতগতিতে গাড়ি চালানো সম্ভব হয়।

কিন্তু এত জায়গা থাকতে নায়াগ্রা দেখতেই যেতে হবে কেন? নায়াগ্রা হলো জলপ্রপাত। জলপ্রপাত তো কখনো দেখি নি। শুধু জেনে এসেছি, ঝর্ণার মতো পাহাড়ের ওপর থেকে পানি নিচে সমতল ভূমিতে গড়িয়ে পড়ে। তবে আকারে অনেক বিশাল। বর্ণা ছোট, আর জলপ্রপাত বড়- এটুকু যা তফাত। উপর থেকে নিচে জল পতনের ব্যাপার দুই জায়গাতেই ঘটছে। জল যদি না-ই পড়ে, তা হলে ঝর্ণাও হবে না, জলপ্রপাতও হবে না। কিন্তু জল যে নিচে পড়ছে, পড়ে যাচ্ছেটা কোথায় ? জলের ধর্ম তো গড়িয়ে যাওয়া। ঝর্ণার জলও গড়াতে পড়াতে ক্রমশ নদী হয়ে যায়।

এখন অন্য কথায় আসি। জলপ্রপাত দেখতে যাব, কিন্তু পাহাড় দেখব না- একি কখনো সম্ভব? সম্ভব নয়। কারণ পাহাড় বেয়ে জলের নিচে নামাটা না দেখে উপায় তো নেই।

কিন্তু বিশ্ব-ভূমণ্ডল বড়ই বিচিত্র! কত অসম্ভব ব্যাপারই যে ঘটে! পৃথিবীতে সবচেয়ে বৃহৎ জলপ্রপাত বলা হয় নায়াগ্রাকে। এই জলপ্রপাত পাহাড় থেকে নামে নি।

সমতলের ওপর দিয়ে একটি খরস্রোতা নদী বইছে। সামনের সবকিছু তো ভাসিয়ে নিয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু কই? কিছুই তো ভাসছে না! তার কারণ, যে মাটির ওপর দিয়ে এই খরস্রোতা নদীটি প্রবাহিত হচ্ছে সেখানে হঠাৎ করেই এক বিশাল ফাটল। দুই দিকের মাটির মধ্যে এক বিরাট ফাঁক একটা নদী যতখানি চওড়া হতে পারে ততখানি ফাঁক। নায়াগ্রার জল ঐ ফাঁকের ভিতরে চলে যাচ্ছে। এটাও তো প্রপাত, কারণ পানি পড়ছে। তবে, সাধারণ জলপ্রপাতের মতো পাহাড় থেকে নিচে পড়ছে না। পড়ছে, সমতল থেকে বিশাল ফাটলের গহ্বরে। কিন্তু পানিটা ফাটলের মধ্যে পড়ে যাচ্ছে কোথায় ?

নায়াগ্রা তাই একেবারে ভিন্ন রকমের জলপ্রপাত ।

Content added By

অনুশীলনী

১. শব্দগুলো পাঠ থেকে খুঁজে বের করি। অর্থ বলি। 

কানাডা   দ্রুতগতিতে   পতন   সমতল   ভূমি   প্রবাহিত   হওয়া   গহ্বর

 

২. ঘরের ভিতরের শব্দগুলো খালি জায়গায় বসিয়ে বাক্য তৈরি করি।

 

কানাডা দ্রুত গতিতে  পতন সমতল ভূমিতে প্রবাহিত গহ্বর

ক. হোঁচট খেলে……………..ঠেকানো দায় ৷

খ. নদীর জল ……………………হয়ে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় চলে যায় ৷ 

গ. পাহাড়ের গায়ে গর্ত থাকলে তাকে আমরা…………………….বলি ।

ঘ. আমরা………………..হাঁটতে পারি । 

ঙ. ……………………একটি বড় দেশ।

চ. ঢাকা শহর গড়ে উঠেছে……………………, কিন্তু চট্টগ্রাম শহর সে রকম নয় ৷

 

৩. প্রশ্নগুলোর উত্তর লিখি ও বলি।

ক. নায়াগ্রা কোথায় অবস্থিত?

খ. নায়াগ্রা জলপ্রপাত এবং ঝর্ণার মধ্যে পার্থক্য বুঝিয়ে লেখ ?

গ. নায়াগ্রা জলপ্রপাতের বিশেষত্ব কী ?

ঘ. নায়াগ্রার জল কোথায় যায় ?

ঙ. 'বিশ্ব ভূমণ্ডল বড়ই বিচিত্র'- ব্যাখ্যা কর।

চ. সাধারণ জলপ্রপাতের সঙ্গে নায়াগ্রা জলপ্রপাতের তুলনামূলক আলোচনা কর ।

 

৪. ঠিক উত্তরটিতে টিক (√) চিহ্ন দিই।

ক. নায়াগ্রা কোথায় অবস্থিত?

১. জাপান    ২. ভারত

৩. কানাডা   ৪. রাশিয়া

খ. নায়াগ্রা জলপ্রপাত পড়ছে—

১. পাহাড় থেকে     ২. সমতল ভূমি থেকে

৩. কোন উঁচু স্থান থেকে    ৪. পাহাড়ি ঢল থেকে

গ. জলপ্রপাত দেখতে বাসে না যাবার কারণ কী?

১. বাসের ভাড়া বেশি           ২. সেখানে বাস যায় না

৩. বাসে ইচ্ছেমতো ধামা যায় না   ৪. বাসে সময় বেশি লাগে

৫. ডান দিক থেকে ঠিক শব্দ বেছে নিয়ে খালি জায়গায় লিখি।

 

সৌভাগ্য

ফাটল

খরস্রোতা

নায়াগ্রা

বন্ধুবান্ধবদের

 

ক. তখন আমিও পড়েছি ........ জলপ্রপাতের কথা ।

খ. জলপ্রপাত দেখার একবার…………….হয়েছিল।

গ. একদিন………………সঙ্গে গল্পের মজলিসে কথা উঠলো।

ঘ. যে মাটির ওপর দিয়ে এই…………..নদীটি প্রবাহিত হচ্ছে 

সেখানে হঠাৎ করেই এক বিশাল……………….।

 

৬. কথাগুলো বুঝে নিই।

জলপ্রপাত - পাহাড়ের ওপর থেকে নিচে সমতল ভূমিতে বিশাল পরিধি নিয়ে জল পড়া।

মজলিস  - গল্পগুজব করার আসর ।

জলের ধর্ম - জলের স্বভাব, জলের চরিত্র। 

বিশ্ব-ভূমণ্ডল  - জগৎ, দুনিয়া।

 

 

৭. কর্ম-অনুশীলন।

আমি কোথায় কোথায় বেড়াতে বা ঘুরতে গিয়েছি- তা মনে করার চেষ্টা করি। এর মধ্য থেকে যেকোনো একটি জায়গার বর্ণনা দিয়ে বন্ধুর কাছে চিঠি লিখি (কোথায় গিয়েছিলাম, কবে গিয়েছিলাম, কীভাবে গিয়েছিলাম, কী কী দেখেছিলাম, কী করেছিলাম, কী খেয়েছিলাম, কেমন করে ফিরে এসেছিলাম)।

 

৮. নিচের অনুচ্ছেদটি পড়ি এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর লিখি।

বিশ্ব-ভূমণ্ডল বড়ই বিচিত্র। কত অসম্ভব ব্যাপারই যে ঘটে! পৃথিবীতে সবচেয়ে বৃহৎ জলপ্রপাত বলা হয় নায়াগ্রাকে। এই জলপ্রপাত পাহাড় থেকে নামে নি। সমতলের ওপর দিয়ে একটি খরস্রোতা নদী বইছে। যে মাটির ওপর দিয়ে এই খরস্রোতা নদীটি প্রবাহিত হচ্ছে সেখানে হঠাৎ করেই এক বিশাল ফাটল। একটা নদী যতখানি চওড়া হতে পারে ততখানি ফাঁক। নায়াগ্রার জল ঐ ফাঁকের ভিতরে চলে যাচ্ছে। এটাও তো প্রপাত, কারণ পানি পড়ছে। তবে, সাধারণ জলপ্রপাতের মতো পাহাড় থেকে নিচে পড়ছে না। পড়ছে, সমতল থেকে বিশাল ফাটলের গহ্বরে। নায়াগ্রা তাই একেবারে ভিন্ন রকমের জলপ্রপাত।

ক. পৃথিবীর বৃহৎ জলপ্রপাত বলা হয় কোনটিকে?

খ. নায়াগ্রা জলপ্রপাতের বৈশিষ্ট্য কী?

গ. নায়াগ্রা জলপ্রপাত কোথা থেকে প্রবাহিত হয়?

ঘ. নায়াগ্রাকে ভিন্ন রকমের জলপ্রপাত বলা হয়েছে কেন ?

Content added By
Promotion