দ্বিতীয় প্রজন্ম Second Generation (১৯৬০-১৯৬৪ খ্রি.)

- তথ্য প্রযুক্তি - কম্পিউটার (Computer) | | NCTB BOOK

দ্বিতীয় প্রজন্মের কম্পিউটার (১৯৬০-১৯৬৪) হলো এমন কম্পিউটার যা ট্রানজিস্টর ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছিল। প্রথম প্রজন্মের কম্পিউটারগুলোতে ভ্যাকুয়াম টিউব ব্যবহৃত হতো, যা ছিল বড়, ধীর এবং তাপ উৎপন্নকারী। দ্বিতীয় প্রজন্মের কম্পিউটারগুলোর মধ্যে ট্রানজিস্টরের ব্যবহার প্রথম প্রজন্মের তুলনায় কম্পিউটারগুলোকে ছোট, দ্রুততর, এবং আরও দক্ষ করে তোলে।

দ্বিতীয় প্রজন্মের কম্পিউটারের বৈশিষ্ট্য:

১. ট্রানজিস্টর প্রযুক্তি:

  • ট্রানজিস্টর ভ্যাকুয়াম টিউবের তুলনায় অনেক ছোট এবং কার্যকর ছিল। এটি কম বিদ্যুৎ খরচ করত এবং কম তাপ উৎপন্ন করত, যা কম্পিউটারের আকার এবং খরচ উভয়ই কমিয়ে আনে।
  • ট্রানজিস্টর কম্পিউটারগুলোর নির্ভরযোগ্যতা এবং গতিকে উন্নত করে, ফলে সেগুলি আরও জটিল কাজ সম্পাদন করতে সক্ষম হয়।

২. উন্নত স্টোরেজ এবং মেমোরি:

  • দ্বিতীয় প্রজন্মের কম্পিউটারগুলোতে ম্যাগনেটিক কোর মেমোরি ব্যবহৃত হতো, যা প্রথম প্রজন্মের ড্রাম মেমোরির তুলনায় দ্রুততর এবং কার্যকর ছিল।
  • ম্যাগনেটিক টেপ এবং ডিস্ক স্টোরেজ ব্যবহৃত হয়, যা ডেটা সংরক্ষণ এবং প্রক্রিয়াকরণে আরও উন্নত সমাধান দেয়।

৩. উচ্চ স্তরের প্রোগ্রামিং ভাষার ব্যবহার:

  • প্রথম প্রজন্মের কম্পিউটারগুলোতে মেশিন ভাষা (০ এবং ১) ব্যবহার করা হতো। দ্বিতীয় প্রজন্মের কম্পিউটারগুলোতে অ্যাসেম্বলি ভাষা, ফোর্ট্রান (FORTRAN) এবং কোবল (COBOL) এর মতো উচ্চ স্তরের প্রোগ্রামিং ভাষা ব্যবহৃত হতে থাকে, যা প্রোগ্রামিং এবং ডেটা প্রসেসিংকে আরও সহজ এবং দক্ষ করে তোলে।
  • এই ভাষাগুলো ব্যবহার করে প্রোগ্রাম তৈরি করা সহজ হয়ে যায় এবং কম্পিউটার ব্যবহারকারী বা প্রোগ্রামারদের সংখ্যা বাড়তে থাকে।

৪. ছোট আকার এবং উচ্চতর গতি:

  • দ্বিতীয় প্রজন্মের কম্পিউটারগুলো আকারে ছোট এবং দ্রুততর ছিল। সেগুলি কক্ষের আকারের পরিবর্তে ডেস্কের আকারে হতে থাকে, যা তাদের অফিস এবং ব্যবসায়িক কাজে ব্যবহারের জন্য উপযোগী করে তোলে।
  • ট্রানজিস্টর প্রযুক্তির কারণে প্রসেসিং গতি বৃদ্ধি পায়, যা জটিল গাণিতিক এবং বৈজ্ঞানিক কাজ দ্রুততার সাথে সম্পাদন করতে পারে।

দ্বিতীয় প্রজন্মের কম্পিউটারের উদাহরণ:

  • IBM 1401: দ্বিতীয় প্রজন্মের অন্যতম জনপ্রিয় কম্পিউটার যা ডেটা প্রসেসিং এবং বাণিজ্যিক কাজের জন্য ব্যবহৃত হয়েছিল।
  • IBM 7094: এটি একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কম্পিউটার যা বৈজ্ঞানিক এবং প্রযুক্তিগত গণনার জন্য ডিজাইন করা হয়েছিল।
  • UNIVAC II: UNIVAC সিরিজের একটি উন্নত সংস্করণ যা দ্বিতীয় প্রজন্মের ট্রানজিস্টর প্রযুক্তি ব্যবহার করে।

দ্বিতীয় প্রজন্মের কম্পিউটারের প্রভাব:

  • বাণিজ্যিক এবং শিল্পক্ষেত্রে বিস্তার: দ্বিতীয় প্রজন্মের কম্পিউটারগুলো বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে ব্যবহার বৃদ্ধি পায়, কারণ সেগুলি আরও নির্ভরযোগ্য এবং খরচ সাশ্রয়ী ছিল।
  • বিজ্ঞান এবং গবেষণায়: বৈজ্ঞানিক গবেষণা এবং প্রযুক্তিগত কাজের জন্য দ্বিতীয় প্রজন্মের কম্পিউটারগুলো ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়, যেমন মহাকাশ গবেষণা এবং গণিতের জটিল সমস্যার সমাধান।
  • প্রোগ্রামিং ভাষার বিকাশ: উচ্চ স্তরের প্রোগ্রামিং ভাষার ব্যবহারে প্রোগ্রামিংয়ের দক্ষতা বৃদ্ধি পায় এবং পরবর্তী প্রজন্মের কম্পিউটার ও সফটওয়্যার উন্নয়নে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।

সীমাবদ্ধতা:

  • যদিও ট্রানজিস্টর প্রযুক্তি অনেক উন্নত ছিল, তবে তা এখনও কিছু ত্রুটি এবং সীমাবদ্ধতা নিয়ে এসেছিল, যেমন তাপ উৎপন্ন করা এবং জটিল সার্কিট ডিজাইন।
  • পরবর্তী প্রজন্মে ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট (IC) প্রযুক্তির উদ্ভাবন দ্বিতীয় প্রজন্মের প্রযুক্তিকে আরও উন্নত করে এবং তৃতীয় প্রজন্মের কম্পিউটারের ভিত্তি স্থাপন করে।

সারসংক্ষেপ:

দ্বিতীয় প্রজন্মের কম্পিউটারগুলো ট্রানজিস্টর প্রযুক্তি ব্যবহার করে প্রথম প্রজন্মের তুলনায় আরও উন্নত, দ্রুত এবং কার্যকর হয়ে ওঠে। এই প্রজন্মটি আধুনিক কম্পিউটার প্রযুক্তির বিকাশে একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ ছিল, যা কম্পিউটার ব্যবহারের প্রাথমিক পর্যায় থেকে বাণিজ্যিক, বৈজ্ঞানিক, এবং শিল্পক্ষেত্রে একটি বিপ্লব সৃষ্টি করে।

Content updated By
Promotion