ধর্মীয় উপাখ্যানে নৈতিক শিক্ষা

অষ্টম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - হিন্দুধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা - NCTB BOOK

ষষ্ঠ অধ্যায়

ধর্মীয় উপাখ্যানে নৈতিক শিক্ষা

নীতি সম্পর্কিত শিক্ষাকে নৈতিক শিক্ষা বলে। নীতি বা নৈতিকতা ধর্মের অঙ্গ। তাই নৈতিক শিক্ষাও ধর্মের অঙ্গ যত শিক্ষাই গ্রহণ করা হোক না কেন, যদি নৈতিকতা অর্জিত না হয়, তাহলে সে শিক্ষা মূল্যহীন। হিন্দু ধর্মবিষয়ক গ্রন্থসমূহে উপাখ্যানের মধ্য দিয়েও নৈতিক শিক্ষা প্রদান করা হয়েছে। এ অধ্যায়ে আমরা দেশপ্রেম ও নৈতিক গুণের ধারণা, উক্ত বিষয়ে ধর্মীয় উপাখ্যান এবং ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনে দেশপ্রেম ও অধ্যবসায়ের গুরুত্ব সম্পর্কে জা

এ অধ্যায়শেষে আমরা

• দেশপ্রেম ও অধ্যবসায় ধারণা দুটি ব্যাখ্যা করতে পারব

• ধর্মগ্রন্থ থেকে দেশপ্রেম ও অধ্যবসায়ের দৃষ্টান্তমূলক উপাখ্যান বর্ণনা করতে পারব

• উপাখ্যানে বর্ণিত ঘটনার নৈতিক শিক্ষা ব্যাখ্যা করতে পারব

• ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনে দেশপ্রেম ও অধ্যবসায়ের গুরুত্ব ব্যাখ্যা করতে পারব

• দেশপ্রেম ও অধ্যবসায়ের গুরুত্ব উপলব্ধি করে নিজ আচরণে তার প্রতিফলন ঘটাতে পারব।

 

 

হিন্দুধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা

পাঠ ১ : দেশপ্রেম

দেশপ্রেম বলতে বোঝায় দেশের প্রতি ভালোবাসা। মানুষ যে দেশে জন্মগ্রহণ করে, তার মাটি-জল- আলো-বাতাস তার দেহকে পুষ্ট করে, তাকে বাঁচিয়ে রাখে। বড় হয়ে মানুষ তার মাতৃভূমির প্রতি মমত্ব অনুভব করে। মাতৃভূমির প্রতি এই মমত্ববোধই দেশপ্রেম। দেশ ও জাতির মঙ্গলের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করার নামই দেশপ্রেম। দেশপ্রেম ধর্মের অঙ্গ। ধর্মগ্রন্থে বলা হয়েছে 'জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরীয়সী।' অর্থাৎ জননী ও জন্মভূমি স্বর্গের চেয়েও বড়। তাই যিনি দেশপ্রেমিক, তিনি দেশের স্বার্থকে ব্যক্তিস্বার্থের ঊর্ধ্বে স্থান দেন। তিনি সবসময় দেশ ও দেশবাসীর কল্যাণের জন্য কাজ করেন। দেশের কোনো বিপদে দেশপ্রেমিক কখনো নীরব থাকতে পারেন না। নিজের জীবনের বিনিময়েও তিনি সে বিপদে ঝাঁপিয়ে পড়েন। দেশের মঙ্গলের জন্য প্রয়োজন হলে নিজের জীবন বিসর্জন দিতেও দ্বিধাবোধ করেন না। দেশপ্রেম মানব জীবনের একটি মহৎ গুণ। পৃথিবীতে যত মহাপুরুষ জন্মগ্রহণ করেছেন, সকলেই ছিলেন দেশপ্রেমিক ।

পৌরাণিক যুগে জনা, বিদুলা, কার্তবীর্যার্জুন প্রমুখ দেশপ্রেমের পরিচয় দিয়েছেন। একালে এ মহাদেশে মহাত্মা গান্ধী, ক্ষুদিরাম, মাস্টারদা সূর্যসেন, প্রীতিলতা, রাণী রাসমণি, চিত্তরঞ্জন দাস, বাঘা যতীন, রফিক, সালাম, বরকত, জব্বার, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জাহানারা ইমামসহ আরও অনেকের নাম উল্লেখ করা যায়, যাঁরা দেশপ্রেমের পরিচয় দিয়েছেন। দেশ ও জাতির জন্য তাঁদের অবদান স্বর্ণাক্ষরে ইতিহাসের পাতায় লেখা রয়েছে। মানুষ তাঁদের স্মরণ করে, তাঁদের প্রদর্শিত পথে চলতে চেষ্টা করে।

একক কাজ: তোমার জানা একজন দেশপ্রেমিকের অবদান সম্পর্কে পাঁচটি বাক্য লেখ।

নতুন শব্দ: মমত্ববোধ, স্বর্গাদপি গরীয়সী, বিসর্জন, স্বর্ণাক্ষর, প্রদর্শিত

পাঠ ২ ও ৩ : কার্তবীর্যার্জনের দেশপ্রেম

প্রাচীনকালে চন্দ্রবংশীয় এক রাজা ছিলেন। তাঁর নাম কার্তবীর্যার্জুন। তিনি ছিলেন যেমন কর্তব্যপরায়ণ, তেমনি বীর ও দেশপ্রেমিক। রাজকার্যের ক্লান্তি দূর করার জন্য তিনি একবার রাজধানীর বাইরে অবকাশ যাপন করছিলেন।

গুপ্তচরের মুখে এ খবর পেয়ে লঙ্কার রাজা রাবণ সুযোগ বুঝে তাঁর রাজ্য আক্রমণ করলেন । কার্তবীর্যার্জনের এক সেনানায়কের নেতৃত্বে ঘোর যুদ্ধ শুরু হলো। এরই মধ্যে সংবাদ পৌঁছানো হলো মহারাজ কার্তবীর্যার্জুনের কাছে। শুনে মহারাজ ক্রোধে আগুনের মতো জ্বলে উঠলেন: কি। আমার রাজ্য আক্রান্ত। আমার মাতৃভূমি শত্রুর বিষাক্ত নিঃশ্বাসে বিপর্যস্ত। আমি এখনই যুদ্ধে যাব। একথা ভেবে রাজা কার্তবীর্যার্জন অবকাশ যাপন স্থগিত করে সোজা যুদ্ধক্ষেত্রে চলে গেলেন। ভীষণ যুদ্ধ শুরু হলো।

ধর্মীয় উপাখ্যানে নৈতিক শিক্ষা

একপক্ষ আক্রমণকারী। আরেক পক্ষ আক্রান্ত, কিন্তু দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ। পরাজিত হলে দেশ হবে পরাধীন। তাই সৈন্যগণ কার্তবীর্যার্টুনের নেতৃত্বে প্রাণপণ যুদ্ধ করতে লাগল। অবশেষে জয় হলো কার্তবীর্যার্জনের। রাবণ পরাজিত হয়ে বন্দি হলেন। স্বর্গে এই বার্তা পৌঁছে গেল। কথাটা মহামুনি পুসত্যের কানে গেল। এ সময় তিনি স্বর্ণলোকে ছিলেন। রাবণ পুলস্থ্যের নাকি। তাই তাঁর খুব দুঃখ হলো। তিনি স্বর্গ থেকে চলে এলেন কার্তবীর্যীনের রাজসভার কার্তবীর্যার্জন পুলভাকে দেখে যোগ্য মর্যাদা দিয়ে বললেন, "কি সৌভাগ্য আমার, মেঘ না চাইতেই জল।' এই বলে তিনি পুলভাকে সাষ্টাঙ্গে প্রণাম করলেন।

কার্তবীর্যার্জনের প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে পুলস্ত্য মুনি বললেন, 'তুমি দেবতাদের প্রিয়। ত্রিভূবন তোমার যণকীর্তনে মুখরিত। রাবণ আমার নাতি তাকে পরাজিত করে তুমি বন্দি করে কারাগারে রেখেছ। আমি তার মুক্তি চাই,

কার্তবীর্যার্জুন বললেন, 'রাবণ আমার রাজ্য আক্রমণ করেছিল। আমার দেশপ্রেমিক যোদ্ধারা তাকে প্রতিহত করেছে।

গুনে পুণ্ড্য বললেন, 'তোমার গভীর দেশপ্রেম আর বীরত্বের কাছে রাবণ পরাজিত হয়েছে। কাতৰীর্যার্জুন বললেন, 'আপনি পরম প্রশ্নের। আপনি যখন রাবণের মুক্তি চাইছেন, তখন তাকে মুক্তি

দিয়ে আমি ধন্য হতে চাই।'

রাবণ মুক্তি পেলেন।

রাবণ তাঁর অপরাধ স্বীকার করলেন এবং অবনত মস্তকে দাঁড়িয়ে রইলেন।

পুলস্ত্য বললেন, 'তোমাদের উভয়ের কল্যাণ হোক।' পুলস্ত্যের মাধ্যমে অগ্নিসাক্ষী করে কার্তবীর্যার্জনের সাথে রাবণের মৈত্রী স্থাপিত হলো। পুলস্ত্য বিদায় চাইলেন তাঁদের কাছে। কার্তবীর্যার্জুন আর রাবণ সাষ্টাঙ্গে প্রণাম করে বিদায় জানালেন মহামুনি পুলস্ত্যকে।

পুলস্ত্য চলে গেলেন স্বর্গে। রাবণ ফিরে গেলেন তাঁর নিজের রাজ্যে।

48

হিন্দুধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা

কার্তবীর্যার্জুন চেয়ে রইলেন তাঁদের গমন পথের দিকে। তাঁর চোখে পড়ল শ্যামল প্রান্তর। এই তাঁর দেশ, তাঁর স্বাধীন রাজ্য। আনন্দে আবেগে ভরে উঠল কার্তবীর্যার্জনের হৃদয় । উপাখ্যানের শিক্ষা: দেশের স্বাধীনতার জন্য স্বার্থত্যাগ করে যাঁরা যুদ্ধ করেন, তাঁরা দেশপ্রেমিক

দলীয় কাজ: কার্তবীর্যাজুনের দেশপ্রেম উপাখ্যানের শিক্ষার প্রায়োগিক দিক চিহ্নিত কর। নতুন শব্দ: কার্তবীর্যার্জুন, গুপ্তচর, অবকাশ, উদ্বুদ্ধ, বার্তা, পুলস্ত্য, সাষ্টাঙ্গে

পাঠ ৪ : সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনে দেশপ্রেমের গুরুত্ব

দেশপ্রেম ধর্মের অঙ্গ। দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ মানুষ দেশ ও সমাজের মঙ্গলের জন্য স্বার্থচিন্তার ওপরে উঠে পরের হিতার্থে কাজ করেন। এটাই তাঁর জীবনের ব্রত। দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে মানুষ তাঁর ধন-জন এমনকি জীবন পর্যন্ত উৎসর্গ করতে দ্বিধাবোধ করেন না। দেশের যখন সংকটকাল উপস্থিত হয়, দেশ যখন বহিঃশত্রুর দ্বারা আক্রান্ত হয়, দেশের স্বাধীনতা যখন বিপর্যন্ত হয়, যখন পরাধীনতা মানুষকে শৃঙ্খলিত করতে চায়, যখন বিদেশি শাসক দেশ ও জাতিকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেয়, তখনই মানুষ দেশপ্রেমের অগ্নিমন্ত্রে দীক্ষা নিয়ে দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য ঝাঁপিয়ে পড়েন এবং দেশের মর্যাদা রক্ষায় অকাতরে জীবন বিসর্জন দেন।

স্বাধীন চিন্তা ও জাতীয়তাবোধ হলো দেশপ্রেমের প্রধান উৎস। স্বাধীনতার জন্য কত বীরের আত্মবলিদানে স্বদেশের মাটি হয় রক্তে রঞ্জিত। ১৯৭১ সনে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস তো দেশপ্রেমেরই এক জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত। দেশপ্রেমের অগ্নিমন্ত্রই লক্ষ-লক্ষ বাঙালিকে তাঁদের জীবন উৎসর্গ করতে উদ্বুদ্ধ করেছিল ।

স্বদেশের যে-কোনো গৌরবে দেশপ্রেমিকমাত্রই গর্ববোধ করেন। তেমনি দেশের দুর্দিনে শঙ্কিত চিত্তে উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং নিঃশর্তে আত্মত্যাগ করতেও কুণ্ঠিত হন না। দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় নির্দ্বিধায় জীবনকে উৎসর্গ করেন। যুগে যুগে দেশপ্রেমিকরা দেশের জন্য, সমাজের মঙ্গলের জন্য নিজেদের জীবন উৎসর্গ করার মহৎ দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন। হিন্দু ধর্মগ্রন্থে দেশপ্রেমকে অত্যন্ত গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছে ।

শুধু বহিঃশত্রুর আক্রমণ থেকে দেশকে রক্ষা করাই নয়, দেশের মঙ্গলের জন্য কাজ করাও দেশপ্রেম। দেশের সম্পদ রক্ষা করাও দেশপ্রেম। দেশের উন্নতির জন্য দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করার মধ্য দিয়েও দেশপ্রেমের প্রকাশ ঘটে। রাষ্ট্র যাতে সঠিকভাবে শৃঙ্খলার মধ্য দিয়ে পরিচালিত হয়, সেজন্য যোগ্য নাগরিক হিসেবে দেশপ্রেমিক বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেন। নিজের দেশের কল্যাণের জন্য দক্ষ নাগরিক হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলতে হয়। কেবল নিজের বা নিজের পরিবারের স্বার্থ দেখলেই চলে না, সমাজ ও রাষ্ট্রের কল্যাণের কথাও ভাবতে হয়। সমাজ তথা রাষ্ট্রের উন্নয়নের জন্য সদা সচেষ্ট থাকতে হয়। এর নামও দেশপ্রেম। ত্যাগ ও ধর্মীয় উপাখ্যানে নৈতিক শিক্ষা

$

তিতিক্ষার মধ্য দিয়ে দেশপ্রেম নামক নৈতিক গুণটি অর্জন করতে হয় । দেশপ্রেম মানুষকে উদার করে, দেশের মানুষকে ভালোবাসতে উদ্বুদ্ধ করে, আত্মসুখ বিসর্জন দেয়ার প্রেরণা দান করে । দেশপ্রেম মনুষ্যত্বের পরিচায়ক। যার মধ্যে দেশপ্রেম নেই তাকে যথার্থ মানুষ বলা যায় না। আত্মকেন্দ্রিক মানুষ কখনো দেশপ্রেমিক হতে পারে না। দেশপ্রেমিক দেশের সম্পদ, দেশের স্বার্থ, দেশের মর্যাদা প্রভৃতিকে নিজের সম্পদ, নিজের স্বার্থ ও নিজের মর্যাদা বলে মনে করেন। তাই দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য, দেশের মর্যাদা রক্ষার জন্য আত্মোৎসর্গ করতেও পিছপা হন না। দেশের মর্যাদা রক্ষা করতে যুদ্ধে শহিদ হলে অক্ষয় স্বর্গ লাভ হয়।

পরাধীনতা ব্যক্তিকে শৃঙ্খলিত করে রাখে । সমাজের অগ্রগতি তাতে ব্যাহত হয়। রাষ্ট্রীয় কর্মকাণ্ডে পরাধীন ব্যক্তির কোনো ভূমিকা থাকে না। তাই রাষ্ট্রীয় জীবনে দেশপ্রেমের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ।

সুতরাং আমরা দেশপ্রেমিক হব এবং দেশের জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করতে প্রস্তুত থাকব। দেশের জন্য, দেশের মানুষের মঙ্গলের জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করতেও কুণ্ঠিত হব না।

একক কাজ সমাজ ও স্বদেশের জন্য তোমার করণীয়গুলো লেখ।

নতুন শব্দ: হিতার্থে, উৎসর্গ, শৃঙ্খলিত, আত্মবলিদান ।

পাঠ ৫ : অধ্যবসায়

কোনো লক্ষ্য অর্জনে বিশেষ যত্ন সহকারে কঠোর সাধনার মধ্য দিয়ে বারবার চেষ্টা করার নামই অধ্যবসায়। অধ্যবসায় হচ্ছে কতিপয় গুণের সমষ্টি। চেষ্টা, উদ্যোগ, আন্তরিকতা, পরিশ্রম, ধৈর্য, সহিষ্ণুতা, একাগ্রতা ইত্যাদি গুণের সমন্বয়ে অধ্যবসায় নামক নৈতিক গুণটি গড়ে ওঠে। কঠোর পরিশ্রম আর ধৈর্যের মধ্য দিয়ে ঈপ্সিত লক্ষ্যে পৌঁছানোর মধ্যেই অধ্যবসায়ের সার্থকতা নিহিত। অধ্যবসায়ের গুণেই মানুষ বড় হয়। অসাধ্য সাধন করতে পারে। অধ্যবসায় ধর্মেরও অঙ্গ। ধর্মগ্রন্থে অধ্যবসায়কে একটি বিশেষ চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য হিসেবে গণ্য করা হয়েছে।

ছাত্রজীবনে অধ্যবসায়ের গুরুত্ব সর্বাধিক। ছাত্রজীবন আর অধ্যবসায় একই সূত্রে গাঁথা। বিদ্যার্জনের পথ কুসুমাস্তীর্ণ নয়। অলস, কর্মবিমুখ ও হতাশ শিক্ষার্থী কখনো বিদ্যালাভে সফল হতে পারে না। একজন অধ্যবসায়ী শিক্ষার্থী অল্প মেধাসম্পন্ন হলেও তার পক্ষে সাফল্য অর্জন করা কঠিন নয়। কাজেই অকৃতকার্য শিক্ষার্থীকে হতাশ না হয়ে পুনরায় দ্বিগুণ উৎসাহ নিয়ে অধ্যবসায়ে মনোনিবেশ করা উচিত। যে-ব্যক্তি অধ্যবসায়ী নয়, সে জীবনের হিন্দুধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা

কোনো সাধারণ কাজেও সফলতা লাভ করতে পারে না। জীবনের সফলতা এবং বিফলতা অনেকাংশে অধ্যবসায়ের ওপরই নির্ভর করে। মনে রাখতে হবে, জীবনসংগ্রামে সাফল্য লাভের মূলমন্ত্র হচ্ছে অধ্যবসায় । শুধু অধ্যবসায়ের বলেই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, জগদীশচন্দ্র বসু, কাজী নজরুল ইসলাম, নেপোলিয়ন বোনাপার্ট, রবার্ট ব্রুস প্রমুখ মনীষী জগতে বিখ্যাত হয়ে আছেন । তাই আমাদের সকলেরই উচিত অধ্যবসায়ের মতো মহৎ গুণটি আয়ত্ত করা।

দলীয় কাজ: অধ্যবসায় গুণটির প্রভাব লিখে একটি পোস্টার তৈরি কর ।

নতুন শব্দ: সহিঞ্চুতা, মনোনিবেশ, কুসুমাস্তীর্ণ ।

পাঠ ৬ : অধ্যবসায়ী একলব্য

অনেককাল আগের কথা। তখন হস্তিনাপুরের কাছে এক গভীর অরণ্য ছিল। সেখানে বাস করতেন নিষাদদের রাজা হিরণ্যধনু। তাঁর পুত্র একলব্য। একলব্যের ইচ্ছে হলো, হস্তিনাপুরে গিয়ে অস্ত্রগুরু দ্রোণাচার্যের কাছ থেকে অস্ত্রবিদ্যা শিখবেন।

সে সময়ে হস্তিনাপুরের রাজা ছিলেন ধৃতরাষ্ট্র। যুধিষ্ঠির, ভীম, অর্জুন, নকুল ও সহদেব এই পাণ্ডুপুত্রগণ

এবং দুর্যোধন, দুঃশাসনসহ ধৃতরাষ্ট্রের শতপুত্রকে অস্ত্রবিদ্যা শিক্ষা দিতেন দ্রোণাচার্য। ধৃতরাষ্ট্রের

পুত্রদের বলা হয় কৌরব আর পাণ্ডুর পুত্রদের বলা হয় পাণ্ডব ।

একদিন দ্রোণাচার্য কৌরব এবং পাণ্ডবদের অস্ত্রশিক্ষা দিচ্ছেন। এমন সময় সেখানে একলব্য এসে উপস্থিত। তাঁর কাঁধে ধনুক, হাতে তীর, মাথায় পাখির পালক আর পরনে বন্ধল। তিনি দ্রোণাচার্যকে

সাষ্টাঙ্গে প্রণাম করে বললেন, 'গুরুদেব, আমি আপনার নিকট অস্ত্রবিদ্যা শিখতে চাই।' দ্রোণাচার্য তাঁর দিকে তাকিয়ে বললেন, 'তোমার পরিচয় কী, বৎস ?

একলব্য বললেন, 'আমি নিষাদ বংশীয়। লোকে আমাদের ব্যাধ বলে এখান থেকে দূরে অরণ্যে আমাদের বাস। দ্রোণাচার্য বললেন, 'বৎস, এখানে আমি শুধু রাজপুত্রদের অস্ত্রবিদ্যা শিক্ষা দেই। তোমাকে অস্ত্রবিদ্যা শিক্ষা দেয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয় ।

একথা শুনে একলব্য ভীষণভাবে দুঃখিত ও মর্মাহত হলেন। মনের দুঃখে তিনি বনে ফিরে গেলেন । গভীর বনে প্রবেশ করে একলব্য লতা-পাতা দিয়ে একটি ফুটির নির্মাণ করলেন। তারপর তিনি মাটি দিয়ে দ্রোণাচার্যের একটি মূর্তি নির্মাণ করলেন। দ্রোণাচার্যকে মনে-মনে শুরু মেনে তাঁর মূর্তির সম্মুখে তিনি অহর্নিশ তীর-ধনুক নিয়ে অস্ত্রবিদ্যা শিক্ষা করতে লাগলেন। কঠোর অধ্যবসায়, নিরলস পরিশ্রম আর ক্রমাগত অনুশীলনের দ্বারা তিনি ধনুর্বিদ্যার প্রায় সকল কলাকৌশল আয়ত্ত করে ফেললেন ।

 

Content added || updated By
বিদেশিদের মঙ্গলের জন্য
দেশ ও সমাজের মঙ্গলের জন্য
পিতা-মাতার মঙ্গলের জন্য
পরিবারের মঙ্গলের জন্য

আরও দেখুন...

Promotion