পূর্বের সেশনগুলোতে আমরা বিভিন্ন ধরনের সাইবার অপরাধ এবং সেগুলোর ঝুঁকি সম্পর্কে জেনেছি। সাধারণত সাইবার অপরাধের কোনো ভৌগোলিক সীমারেখা থাকে না, ফলে কোনো একটি নির্দিষ্ট দেশের আইন দিয়ে তার বিচার করা অনেক ক্ষেত্রেই কঠিন। তারপরেও সাইবার অপরাধ দমনে আমাদের দেশে বেশ কয়েকটি আইন রয়েছে। বাংলাদেশে বেশ কয়েকটি আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীতে একটি বিশেষায়িত সাইবার ইউনিট রয়েছে। এই সকল ইউনিট সাইবার অপরাধীদের ডিজিটাল ফুট প্রিন্ট সনাক্ত করে অপরাধীদের আইনের আওতায় নিয়ে আসে এবং ভুক্তভোগীদের আইনি সহায়তা দেয়।
এবার আমরা কয়েকটি ঘটনা পড়ে দেখি-
ঘটনা: ৪ জনাব সোহেল পেশায় একজন ব্যবসায়ী। তাকে কেউ একজন মোবাইলে ফোন করে বলে যে তার মোবাইল ব্যাংকিং-এর অ্যাকাউন্টটি সাময়িকভাবে লকড অবস্থায় আছে। তা আনলক করার জন্য কোড পাঠানোর পর ফোনের অপরপ্রান্ত থেকে ঐ ব্যক্তি সেই কোড জানতে চায়। সত্যিই সে মোবাইল ব্যাংকিং-এর অফিস থেকে ফোন করেছে বলে বিশ্বাস করে সোহেল কোডটি বলে দেয়। কিছুক্ষণ পর খোয়া যায় তার অ্যাকাউন্টটিতে থাকা প্রায় সকল অর্থ।
|
ঘটনা: ৫ সাব্বির সাহেব অনলাইনে কেনাবেচা করা যায় এমন একটি ওয়েবসাইটে তার মোবাইল ফোন বিক্রি করেছেন। কিন্তু বিক্রি করার সময় তিনি তার মোবাইলে ব্যবহৃত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং ইমেইল থেকে লগ আউট করতে ভুলে যান। ফলে সেই মোবাইল ফোনটির নতুন মালিক সেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে এবং ইমেইলে সংযুক্ত সাব্বির সাহেবের পরিচিত বিভিন্ন মোবাইল নম্বরে অর্থ ধার চাচ্ছিল। এতে করে সাব্বির সাহেব বেশ বিড়ম্বনায় পড়ে যায়।
|
ঘটনা: ৬ আশরাফ নামের একজন সরকারি কর্মকর্তা একদিন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্কুল করতে করতে একটি ই-কমার্স সাইটের বিজ্ঞাপন দেখতে পায়। সাইটটি থেকে সে ১৫০০ টাকা মূল্যের একটি জলপাই রঙের শার্ট অর্ডার করে সাথে সাথে মোবাইল ব্যাংকিং সার্ভিসের মাধ্যমে মূল্য পরিশোধ করেন। এর চারদিন পর প্রোডাক্টটি ডেলিভারি পেয়ে দেখা গেল শার্টটির রং কালো এবং কাপড় অত্যন্ত নিম্নমানের, যা অনলাইনে বর্ণনার সম্পূর্ণ বিপরীত। আশরাফ ই-কমার্স সাইটটির সাথে যোগাযোগ করে প্রোডাক্টটি পরিবর্তন অথবা মূল্য ফেরত দিতে বলেন কিন্তু তারা তা করতে অস্বীকৃতি জানায়।
|
আগের সেশনের তিনটি ঘটনা এবং এই তিনটি ঘটনা আমাদের অনেকের জীবনের সাথেই মিলে যেতে পারে। আমরা যে কেউ যে কোনো সময় এই ধরণের ব্যক্তিগত তথ্য হারানোর ঝুঁকিতে এবং সাইবার আক্রমণের শিকার হতে পারি।
এবার চলো আমরা উপরোক্ত এই ছয়টি ঘটনার শিকার হলে ছকটিতে প্রদত্ত কোন কোন পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে তার একটি অনুশীলন করি।
পদক্ষেপের নাম | ঘটনার ক্রমিক নং |
১। যত দ্রুত সম্ভব ন্যাশনাল হেল্পলাইন ১০৯, ন্যাশনাল ইমার্জেন্সি সার্ভিস ৯৯৯ অথবা আইসিটি হেল্পলাইন-এ যোগাযোগ করব। | |
২। পাশের বাড়ির প্রযুক্তিতে দক্ষ কারো সাহায্য নিব। | |
৩। প্রমানকসহ www.rab.gov.bd ওয়েবসাইটে অভিযোগ পাঠাব। | |
৪। পিতা-মাতা বা পরিবারের সাথে শেয়ার করব। | |
৫। ডিজিটাল ডিভাইস বন্ধ করে দিব। | |
৬। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (BTRC)-তে লিখিত অভিযোগ জানাব। | |
৭। বিষয়টি গোপন রেখে কারো সাথেই শেয়ার করব না। | |
৮। নিকটস্থ থানায় সাধারণ ডায়েরি বা জিডি করব। | |
৯। ভোক্তা অধিকারের চর্চা করব। | |
১০। অপরাধের প্রমাণগুলো সংগ্রহ করব। |
বাংলাদেশে তথ্য নিরাপত্তা ও সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য বেশ কিছু নীতিমালা ও আইন রয়েছে। সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হচ্ছে-
আমরা এই সকল আইনের কথা মনে রাখব এবং যদি কখনো আমরা কোনো ব্যক্তিগত তথ্য হারানোর ঝুঁকিতে পড়ি অথবা সাইবার আক্রমণের শিকার হই তবে আমরা এই আইনগুলো জেনে সঠিকভাবে সচেতন হব। এই আইনগুলো থেকে আমাদের করণীয় সম্পর্কেও জানতে পারব।
এবার চলো আমরা জেনে নেই, বাংলাদেশে কেউ তার ব্যক্তিগত তথ্য হারানোর ঝুঁকিতে পড়লে কিংবা কোনো সাইবার অপরাধের শিকার হলে কী ধরেনের পদক্ষেপ নিতে হবে।
প্রথমেই আমরা এই ধরনের ঘটনার শিকার হলে তা নিজের মধ্যে না রেখে মা-বাবা এমনকি শিক্ষককে জানিয়ে খুব দ্রুত নিকটস্থ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করব।
এবার চলো একটি সাধারণ ডায়েরিতে (জিডি) আবেদনটি কীভাবে লেখতে হয় তা দেখে নেই।
আমাদের দেশে এখন অনলাইনেই জিডি বা সাধারণ ডায়েরি করা যায়, এবার আমরা সকলেই অনলাইনে একটি জিডি'র ফর্ম ফিল আপ করা অনুশীলন করব। এ জন্য আমাদের যে কোনো ইন্টারনেট ব্রাউজারের অ্যাড্রেস বার-এ https:// gd.police.gov.bd/ লিখে সার্চ করব।
নিচের ৩টি স্ক্রিনশটে আমরা অনলাইন জিডি করার ধাপগুলো দেখতে পাচ্ছি।
প্রথমে আমরা আমাদের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রদানের মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশন করব।
এর পর প্রয়োজনীয় নির্দেশনা অনুসরণ করে আমরা অনলাইনের জিডি'র ফর্মে নিজেদের তথ্যগুলো পূরণ করব।
সর্বশেষে নিজের প্রদানকৃত তথ্যগুলো যাচাই করে সাবমিট বাটনে ক্লিক করে আমরা অনলাইনে জিডিটি সাবমিট করব।
জেনে রাখি: আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিট যেমন: র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব), কাউন্টার টেররিজম ইউনিট (সিটি), অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) এবং মেট্রোপলিটন পুলিশসহ প্রায় সকল ইউনিটের মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যার (অ্যাপ) যেমন- Report to RAB, Hello CT App ইত্যাদি প্লে স্টোর থেকে ডাউনলোড করে নিজের মোবাইলে রেখে সময়মতো অপরাধ দমনে কাজে লাগাতে পারি।
|
সাইবার স্পেসে কেউ অপরাধের শিকার হলে নিকটস্থ থানায় জিডি করে জিডির কপি এবং নিচের তথ্যগুলো সহ Hello CT (Counter Terrorism) বা REPORT TO RAB অ্যাপ্লিকেশনে অপরাধের তথ্য দিয়ে, অথবা জিডির কপিসহ নিকটস্থ থানার সাইবার ক্রাইম হেল্পডেক্সে সরাসরি যোগাযোগ করব।
সরাসরি আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাথে যোগাযোগের ক্ষেত্রে যেসব তথ্য ও ডকুমেন্ট দিতে হবে, তার একটি তালিকা দেওয়া হলো:
আবেদনকারীর নাম: ঠিকানা: মোবাইল নম্বর: এনআইডি নম্বর: ঘটনার সংক্ষিপ্ত বিবরণ: উত্ত্যক্তকারী/ব্ল্যাকমেইলার/প্রতারক/হ্যাকার/অনলাইন জুয়া পরিচালনাকারীর আইডি লিংক: ঘটনার অন্তত ৫টি স্ক্রিনশট: সন্দেহভাজন ব্যক্তির (যদি থাকে) নাম পরিচয়:
|
এবার আমাদের ক্লাসের একজন বন্ধুর কাছ থেকে এই তথ্যগুলো নেওয়া এবং দেওয়ার একটি অনুশীলন করব।
আরও দেখুন...