⇒তোমাদের আশপাশে কতরকম বস্তুই তো তোমরা দেখো, এগুলো সব কি দেখতে একই রকম? নিশ্চয়ই নয়? আবার সব বস্তু সবরকম কাজে লাগানোও যায় না। একটু ভেবে দেখো তো, কোন বস্তুর বৈশিষ্ট্য কেমন?
⇒প্রথম সেশনের শুরুতেই তোমরা বাসাবাড়িতে, রান্নাঘরে, শ্রেণিকক্ষের ভেতরে বা আশপাশে যে সব বস্তু তোমরা দেখো সেগুলোর তালিকা করবে এবং তাদের বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী শ্রেণিবদ্ধ করবে।
⇒তালিকা তৈরি করতে তোমরা ছক-১ পূরণ করবে।
ছক-১
বস্তুর নাম | বস্তুটি যে পদার্থ দিয়ে তৈরি | বস্তুটির বাহ্যিক অবস্থা (কঠিন/ তরল/ বায়বীয়) | বস্তুটির বৈশিষ্ট্য কী কী? ভঙ্গুর কিনা, আঘাত করলে ঝনঝন শব্দ হয় কিনা, চকচকে কিনা ইত্যাদি) | বস্তুটি কী কাজে লাগে? |
---|---|---|---|---|
|
⇒ছকের তথ্য নিয়ে এবার একটু দলে বসে আলোচনা করো। আলোচনার মধ্য দিয়ে খুঁজে বের করার চেষ্টা করো, কোন ধরনের বৈশিষ্ট্য থাকলে কোনো বস্তু কোন নির্দিষ্ট কাজে লাগে। যেমন রান্নাবান্নায় ধাতব হাঁড়ি পাতিল ব্যবহার করা হয়, কিন্তু কাঠ বা প্লাস্টিকের পাতিল ব্যবহার করা হয় না। আবার গরম হাঁড়িপাতিল ধরতে গেলে কাঠের হাতল বা কাপড়ের হাতা ব্যবহার করা হয়, কেন? একইভাবে বিদ্যুৎ পরিবহনের জন্য যে তার ব্যবহার করা হয় তার উপরের স্তর প্লাস্টিকের হলেও ভেতরে তামার তার ব্যবহৃত হয়, সেটাই বা কেন? কেন কাঠ, প্লাস্টিক বা কাপড় যে বৈশিষ্ট্য প্রদর্শন করে, তার থেকে অ্যালুমিনিয়াম, স্টিল, লোহা, তামা এদের ধর্ম আলাদা হয়?
⇒উপরের ছকের বস্তুগুলোকে আলোচনার মাধ্যমে নিচের শর্ত অনুযায়ী শ্রেণিবদ্ধ করো-
বস্তুর নাম | কী দিয়ে তৈরি? | ধাতু নাকি অধাতু | তাপ পরিবহন করে কিনা | বিদ্যুৎ পরিবহন করে কিনা |
---|---|---|---|---|
⇒এবার একটু চিন্তা করে দেখো, যেসব পদার্থ বিদ্যুৎ ও তাপ পরিবহন করে, তাদের বাহ্যিক বৈশিষ্ট্যগুলো কী। কেন কিছু কিছু পদার্থ দিয়ে তৈরি বস্তু তাপ পরিবহন করে আবার কিছু বস্তু করে না? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে আগে পদার্থের গঠন ও বিন্যাস সম্পর্কে বিস্তারিত জানা থাকা জরুরি। ক্ষুদ্রতর পর্যায়ে কোনো পদার্থের গঠন কেমন তা জেনে নেয়া যাক ।
⇒তোমার দলের সবাই একসাথে বসে অনুসন্ধানী পাঠ বইটির ‘অণু পরমাণু' অধ্যায়টি পড়ো। মৌলিক পদার্থ, ইলেক্ট্রন, প্রোটন নিউট্রন, পরমাণুর গঠন ইত্যাদি বিষয় পড়ে নিজেরা আলাপ করো ও বিষয়গুলো বুঝতে চেষ্টা করো। প্রতিটি মৌলিক পদার্থের যে একটা পারমাণবিক সংখ্যা থাকে তা কীভাবে হিসাব করা হয় তাও পড়ো এবং আলোচনা করো।
⇒পরমাণুর কেন্দ্রে থাকে প্রোটন আর নিউট্রন, আর তাদের ঘিরে ইলেক্ট্রনগুলো ঘুরতে থাকে এটা তো জেনেছই। এবার বইয়ের একই অধ্যায়ের পরের অংশে পরমাণুতে এই ইলেকট্রনগুলো কীভাবে বিন্যস্ত থাকে, আবার পরমাণুর কেন্দ্রে যে নিউক্লিয়াস থাকে এই সম্পর্কে পড়ে নাও। দলে বসে আলোচনা করো।
⇒পরের সেশনে প্রতিটি দল থেকে পরমাণুতে ইলেকট্রন বিন্যাসের মডেল তৈরি করে নিয়ে আসতে হবে। তোমার দলের সাথে বসে পরিকল্পনা করো কী কী উপকরণ ব্যবহার করতে চাও। হাতের কাছেই পাওয়া যায় এমন জিনিস যেমন- কাগজ, আটার মণ্ড, মাটি, দেশলাই কাঠি, সুতা ইত্যাদি ব্যবহার করতে পারো। বোঝার সুবিধার্থে বইয়ের ছবিগুলো দেখতে পারো।
⇒তোমাদের দলের পরমাণুর মডেল তৈরি? কী কী ব্যবহার করেছ মডেল তৈরি করতে গিয়ে, নিচের ছকে লিখে ফেলো, পাশে তোমাদের বানানো পরমাণুর মডেলের ছবিও এঁকে দিতে ভুলো না! তোমাদের বানানো মডেলের পরমাণুর ইলেকট্রন কয়টি কক্ষপথে সাজানো আছে, আর তার পারমাণবিক ভর কত, তাও নিচে লিখে রাখো।
মডেল তৈরিতে ব্যবহৃত উপকরণের তালিকা-
| পরমাণুর মডেলের ছবি-
|
পারমাণবিক ভর- | ইলেক্ট্রনের কক্ষপথের সংখ্যা- |
⇒এখন সব দলের শিক্ষার্থীরা মিলে সবগুলো দলের করা পরমাণুর মডেল শ্রেণিকক্ষে সাজিয়ে রাখো ও ঘুরে ঘুরে দেখো সবাই কেমন বানিয়েছে। অন্যদের করা মডেল দেখে ওই পরমাণুর পারমাণবিক ভর কত তা অনুমান করার চেষ্টা করো। অন্যরা তোমাদের মডেল দেখে পারমাণবিক ভর অনুমান করতে পারে কিনা জিজ্ঞেস করে দেখো।
⇒এরপর চাইলে একটা ভূমিকাভিনয়ের আয়োজনও করতে পারো, যেখানে বিভিন্ন দলের শিক্ষার্থীরা প্রোটন, নিউট্রন ও ইলেক্ট্রনের ভূমিকা নেবে। প্রোটন আর নিউট্রনের ভূমিকায় থাকা শিক্ষার্থীরা নিউক্লিয়াসের মতো একত্র হয়ে দাঁড়িয়ে থাকবে, আর ইলেক্ট্রনের ভূমিকায় থাকা শিক্ষার্থীরা নির্দিষ্ট কক্ষপথে তাদেরকে ঘিরে ঘুরবে।
⇒এই কাজগুলোর মাধ্যমে বুঝতেই পারছ, আমাদের চারপাশে আমরা যে বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের অসংখ্য বস্তু দেখি তার সবগুলোর গঠনের মূলেই রয়েছে এই হাতেগোনা কয়েকটি কণিকা! পরমাণুতে প্রোটন, নিউট্রন আর ইলেকট্রনগুলো কীভাবে সাজানো আছে তার উপর ভিত্তি করেই একেক পদার্থের একেক রকম বৈশিষ্ট্য নির্ধারিত হয়। আর এই ইলেকট্রনগুলোও অগোছালোভাবে নয়, বরং একটা নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে সাজানো থাকে।
⇒পদার্থের বৈশিষ্ট্য নিয়ে আলোচনার সূত্র ধরে আবার আগের সেশনের প্রসঙ্গে ফিরে যাওয়া যাক। আগের সেশনে আমরা দেখেছি, ধাতু ও অধাতুর মধ্যে বেশ কিছু পার্থক্য রয়েছে, বিশেষত তাপ ও বিদ্যুৎ পরিবহনের ক্ষেত্রে এই পার্থক্য মোটামুটি স্পষ্ট ধরা পড়ে। এখন যেহেতু পরমাণুর গঠন সম্পর্কে তোমাদের বেশ বিস্তারিত ধারণা হয়ে গিয়েছে, ধাতু-অধাতুর এই পার্থক্যের কারণটা খোঁজা যাক।
⇒দলে বসে অনুসন্ধানী পাঠ বই থেকে পরিবাহী, অপরিবাহী ও অর্ধপরিবাহী অংশটুকু পড়ে আলোচনা করো। ইলেকট্রন বিন্যাসের কোনো পার্থক্যের কারণে ধাতু বেশি তাপ ও বিদ্যুৎ পরিবাহী হয় তা খুঁজে বের করো।
⇒এবার একটু আলোচনা করে নিচের ছকে দৈনন্দিন জীবনে তাপ ও বিদ্যুৎ সম্পর্কিত কাজের কয়েকটি উদাহরণ লিখো, তারপর ঠিক করো কোনো কাজের জন্য ধাতু বা অধাতু কোনটা বেশি উপযোগী-
(বোঝার সুবিধার জন্য একটা উদাহরণ দেয়া হলো)
যে কাজে প্রয়োজন (উদাহরণ) চুলায় রান্না | ধাতু/অধাতু কোনটি বেশি উপযোগী? (উদাহরণ) ধাতু; যেমন- অ্যালুমিনিয়াম, স্টিল, লোহা ইত্যাদি |
---|---|
⇒তোমরা তো এই সেশনে পরমাণুর গঠন, পরমাণুর ভেতরে কণাগুলোর বিন্যাস, এই বিষয়গুলো সম্পর্কে জানলে। বিশ্বের সকল পদার্থ হাতে গোনা কয়েকটি মৌলিক পদার্থ দিয়ে তৈরি তাও তোমরা এখন জানো । কিন্তু পদার্থের ভেতরে এই পরমাণুগুলো কীভাবে একসাথে থাকে, তা কিভাবে দেখেছ? কঠিন, তরল বা বায়বীয় পদার্থের ক্ষেত্রে বিষয়গুলো কি একইরকম?
⇒দলে বসে একই অধ্যায় থেকে ‘অণু’ বিষয়ক অংশটি পড়ে নাও। কঠিন, তরল ও বায়বীয় পদার্থের ক্ষেত্রে কণাগুলোর বিন্যাস কেমন হয় তাও জেনে নাও। এরপর ক্লাসের সবার সাথে মুক্ত আলোচনার মাধ্যমে ধারণা স্পষ্ট করার চেষ্টা করো। তোমার কোনো প্রশ্ন থাকলে তা নিয়েও আলোচনা করো।
⇒আমাদের চারপাশে আমরা যে বিভিন্ন বস্তু দেখি তাদের বৈশিষ্ট্যের অনেক পার্থক্য তো তোমরা দেখেছ। এই বৈশিষ্ট্য মাথায় রেখেই একেক বস্তু একেক কাজে লাগানো হয়। যেমন- রান্নার সময় আগুনের ওপর অ্যালুমিনিয়ামের হাঁড়ি নিশ্চিন্তে বসানো যায়, অথচ প্লাস্টিকের হাঁড়ি ব্যবহারের কথা চিন্তাই করা যায় না; রান্না তো হবেই না বরং হাঁড়ি আগুনে গলে যাবে।
আচ্ছা, একটু ভেবে দেখো তো, আগুন লেগে গেলে কোন পদার্থের ক্ষেত্রে কী ঘটে? মোম বা প্লাস্টিক হলে গলে যায়, আবার কাগজ বা কাঠ হলে পুড়ে যায়, দেখেছ নিশ্চয়ই। আমরা নিঃশ্বাসের সাথে যে অক্সিজেন নিই, তা কিন্তু খুবই দাহ্য পদার্থ, তোমরা অনেকেই হয়তো তা জানো। সত্যি বলতে, আগুন বলতে আমরা যা দেখি তা আসলে বাতাসে উপস্থিত অক্সিজেনের সাথে কোনো দাহ্য পদার্থের রাসায়নিক বিক্রিয়ার ফলেই হয়। আগুন নেভাতে আমরা কী ব্যবহার করি বলতে পারো? হ্যাঁ, সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করি পানি। তবে তারচেয়েও বেশি ব্যবহার করি নিঃশ্বাসের সাথে নির্গত বাতাস, ফুঁ দিয়ে মোমবাতি বা দেশলাইয়ের কাঠি নিভিয়েছ নিশ্চয়ই! নিঃশ্বাসের সাথে আমাদের নাক মুখ দিয়ে কোন গ্যাস ত্যাগ করি তোমরা ইতোমধ্যেই জানো- কার্বন ডাই অক্সাইড, যা কিনা আগুন নেভাতে সাহায্য করে।
এখন পানির অণু তৈরি হয় হাইড্রোজেন আর অক্সিজেন মিলে, আবার কার্বন ডাই অক্সাইড তৈরি হয় কার্বন আর অক্সিজেন মিলে। একটা বিষয় খেয়াল করো- যেই উপাদানটি এই দুইটি বস্তুর মধ্যেই বিদ্যমান তা হলো অক্সিজেন। তোমাদের মনে কি প্রশ্ন এসেছে, অক্সিজেন যেখানে একটি দাহ্য পদার্থ, সেখান অক্সিজেন একটি উপাদান হওয়া সত্ত্বেও পানি বা কার্বন ডাই অক্সাইড কীভাবে আগুন নেভাতে সাহায্য করে?
⇒কার্বন, অক্সিজেন বা হাইড্রোজেন হলো মৌলিক পদার্থ, যাদের ভাঙলে একই পদার্থের পরমাণুই শুধু পাওয়া যায়। অন্যদিকে কার্বন ডাই অক্সাইড বা পানির অণু ভাঙলে একাধিক মৌলিক পদার্থের পরমাণু পাওয়া যায়। একাধিক মৌলিক পদার্থ যুক্ত হয়ে তৈরি হয় বলে এদের বলে যৌগিক পদার্থ। বন্ধুদের সাথে আলোচনা করে নিচে এই পদার্থগুলোর বাহ্যিক বৈশিষ্ট্যগুলো নোট করো (কোনো তথ্য না জানলে শিক্ষকের সাহায্য নিতে পারো।)
পদার্থ | স্বাভাবিক তাপমাত্রায় অবস্থা (কঠিন/ তরল/ বায়বীয়) | আগুনে দাহ্য কিনা | অন্যান্য বৈশিষ্ট্য (স্বাদ / গন্ধ/ বর্ণ) যদি জানা থাকে |
---|---|---|---|
পানি | |||
হাইড্রোজেন | |||
অক্সিজেন | |||
কার্বন ডাই অক্সাইড | |||
কার্বন | |||
অক্সিজেন |
⇒খেয়াল করে দেখো, পানি বা কার্বন ডাই অক্সাইড একেবারেই ভিন্ন বৈশিষ্ট্যের পদার্থ, এদের উপাদান মৌলিক পদার্থগুলোর বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে এদের মিল খুঁজে পাওয়া মুশকিল। আবার একাধিক পদার্থ দিয়ে তৈরি হবার পরেও চাইলেই এদের মৌলিক উপাদানগুলোকে আলাদা করা যায় না। তুমি কি চাইলেই সহজে পানি থেকে হাইড্রোজেন আর অক্সিজেনকে আলাদা করতে পারবে?
⇒এবার আরেকটা উদাহরণ চিন্তা করা যাক। এক গ্লাস পানির সাথে এক চামচ লবণ বা চিনি মেশাও। মিশ্রণে পানি আর চিনি বা লবণকে চোখে দেখে কি আলাদা করতে পারছ? নিশ্চয়ই না। তাহলে আগের উদাহরণের মতো এই শরবতকেও কি যৌগিক পদার্থ বলা চলে?
এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে তোমাদের পর্যবেক্ষণের উপর ভিত্তি করে আগের মতো নিচের ছক পূরণ করো-
পদার্থ | স্বাভাবিক তাপমাত্রায় অবস্থা (কঠিন/ তরল/ বায়বীয়) | আগুনে দাহ্য কিনা (পানি ও শরবত দুইই দিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করে দেখতে পারো। তবে শিক্ষকের তত্ত্বাবধান ছাড়া আগুন নিয়ে পরীক্ষা করতে যেও না | অন্যান্য বৈশিষ্ট্য (স্বাদ / গন্ধ/ বৰ্ণ) |
পানি | |||
লবণ/চিনি (প্রযোজ্য উপাদানে টিক দাও) | |||
পানি ও লবণ/চিনি মিশ্রণে তৈরি শরবত |
⇒এবার উপরের ছকের তথ্যগুলো ভালোভাবে দেখে আগের ছকের সাথে তুলনা করো। পানি-চিনি/ লবণের মিশ্রণের ক্ষেত্রে উপাদানগুলোর বৈশিষ্ট্য কি অবিকৃত আছে নাকি আগের মতো একেবারে বদলে গেছে? তোমাদের পর্যবেক্ষণ নিয়ে সবার সাথে মুক্ত আলোচনায় যোগ দাও।
⇒খেয়াল করে দেখো, একাধিক উপাদান একসাথে মেশানো হলেও যৌগিক পদার্থের বৈশিষ্ট্যের সাথে এই মিশ্রণের ফারাক রয়েছে। দলের সদস্যরা একসাথে বসে অনুসন্ধানী পাঠ বইটির তৃতীয় অধ্যায় থেকে মৌলিক পদার্থ, যৌগিক পদার্থ, মিশ্রণ ও বিশুদ্ধ পদার্থ- এই অংশগুলো পড়ে নাও। এই তিন ক্ষেত্রেই অণু পরমাণুগুলো কীভাবে বিন্যস্ত থাকে তা নিয়ে বন্ধুদের সাথে আলোচনা করো। পরের সেশনে আগের মতোই সহজলভ্য উপকরণ দিয়ে দলের বাকিদের সাথে মিলে মৌলিক, যৌগিক পদার্থ এবং মিশ্রণে অণু পরমাণুর বিন্যাস উপস্থাপনের জন্য মডেল বানিয়ে নিয়ে এসো। বইয়ের ছবির সাহায্য নিতে পারো, আর শিক্ষক তো আছেনই!
⇒এই সেশনে তোমাদের দলের বানানো মৌলিক ও যৌগিক পদার্থ এবং মিশ্রণের মডেল দেখিয়ে ক্লাসের অন্য কোনো একটা দলের সাথে আলোচনা করো। এই তিন ক্ষেত্রে অণু পরমাণুগুলো কীভাবে বিন্যস্ত থাকে এবং এদের পার্থক্য কী তাও আলোচনা করো। অন্য দলটির বানানো মডেল দেখে তোমাদের মতামত দাও। এভাবে ক্লাসের প্রতি দুইটি বা তিনটি দল নিজেদের মধ্যে মডেল প্রদর্শন ও আলোচনা করতে পারে।
⇒মৌলিক ও যৌগিক পদার্থ, অর্থাৎ বিশুদ্ধ পদার্থের সাথে মিশ্রণের পার্থক্য তো জানলে। এখন বিশুদ্ধ পদার্থ শনাক্ত করার চেষ্টা করা যাক।
দুইটা একই রকম পাত্রের একটিতে পানি, আরেকটিতে একই পরিমাণ পানিতে লবণ মিশিয়ে রাখো। অন্য কোনো দলকে এই দুইটি পাত্র পরীক্ষা করে বলতে হবে কোনটা বিশুদ্ধ পানির পাত্র (মুখে দিয়ে স্বাদ নিয়ে বলা যাবে না কিন্তু!) তোমার দলকেও একইভাবে অন্য দলের দুই পাত্রের পানি আর মিশ্রণকে শনাক্ত করতে হবে। (কানে কানে একটা বুদ্ধি দিয়ে রাখি! বিশুদ্ধ পদার্থের সাথে কিছু মেশালে এর গলনাঙ্ক আর স্ফুটনাঙ্ক কিন্তু পালটে যায়। স্ফুটনাংক হিসাব করার মাধ্যমে কিন্তু এই প্রশ্নের উত্তর সহজেই বের করে ফেলা যায়! ভালোভাবে বুঝতে হলে এক কাজ করো, তোমাদের অনুসন্ধানী পাঠ বই থেকে বিশুদ্ধ পদার্থ শনাক্তকরণ অংশটুকু চট করে পড়ে নাও।) |
⇒মৌলিক, যৌগিক পদার্থ, মিশ্রণ ও বিশুদ্ধ পদার্থ এসব নানা কিছু নিয়ে তো আলোচনা হলো। এসবের কোন ক্ষেত্রে অণু পরমাণুগুলো কীভাবে একসাথে থাকে তাও তোমরা আগের কয়েকটা সেশনে জেনেছ। এবার আমরা অন্য একটা বিষয় নিয়ে আলোচনা করব, সেটা হল মৌলিক বা যৌগিক পদার্থকে আমরা কীভাবে প্রকাশ করি।
⇒প্রথমেই একটা ছোট্ট কাজ করা যাক। কাজটা খুবই সোজা, তোমাদের প্রতিটি দলকে কাগজ কেটে ফুল বানাতে হবে। প্রতিটি ফুলের থাকবে ৫টি পাপড়ি, আর এই পাপড়িগুলোর রং হবে লাল, নীল আর হলুদ (Red, Blue & Yellow) রঙের। কোন রঙের কয়টা পাপড়ি হবে তার কোনো ধরাবাঁধা নিয়ম নেই, তবে তিনটা রঙেরই অন্ততপক্ষে একটা করে পাপড়ি থাকতে হবে। একটা সাদা কাগজে আঠা দিয়ে পাঁচটা পাপড়ি সেঁটে নাও। তোমাদের দলের ফুল অন্যদের দেখাও। অন্যদেরগুলোও দেখো। খেয়াল করে দেখো কোন দলের ফুলে কোন রঙের কয়টা করে পাপড়ি আছে?
⇒এবার তোমার দলের ফুলটির রং অনুযায়ী নিচের ফুলের পাপড়িগুলো রং করে ফেলো।
তোমার দলের ফুলে এই তিন রঙের পাপড়ির সংখ্যা নিচে লেখো-
⇒ লাল রঙের পাপড়ি ………………….টি
⇒ নীল রঙের পাপড়ি………………….টি
⇒ হলুদ রঙের পাপড়ি………………….টি
এখন আমরা এরকম একটা ফুলকে কোড বা সংকেতের মাধ্যমে প্রকাশ করব যাতে এই সংকেত দেখেই বোঝা যায় এই ফুলে কোন রঙের কয়টা পাপড়ি। তিনটা রংকে যথাক্রমে R, B, Y দিয়ে বোঝানো যায়, আবার কোন নির্দিষ্ট রঙের কয়টা পাপড়ি তা বোঝানো যায় সংখ্যা দিয়ে; যেমন পাশের ছবির মতো লাল রঙের পাপড়ি দুইটা হলে তা বোঝানোর জন্য লিখতে পারো R2 । এরকমভাবে যেহেতু লাল রঙের দুইটি, নীল রঙের দুইটি আর হলুদ রঙের একটি পাপড়ি রয়েছে কাজেই এই ফুলের সংকেত হবে R2, B2, Y1 ।
তোমার দলের ফুলে কোন রঙের পাপড়ি কয়টা? তুমি যদি উপরের মত কোড বা সংকেতের মাধ্যমে এই ফুলকে প্রকাশ করতে চাও তাহলে কীভাবে লিখবে? নিচের ফাঁকা জায়গায় লেখো-
অন্য দলের সবাই নিশ্চয়ই তাদের ফুলগুলোকেও এভাবে সংকেত দিয়ে প্রকাশ করেছে। তাদের সংকেত দেখে অনুমান করার চেষ্টা কর, ওই ফুলের কোন রঙের পাপড়ি কয়টা?
⇒একটা মজার বিষয় কি জানো? কোন পদার্থকে বোঝানোর জন্যেও একই কৌশল ব্যবহার করা হয়। উপরে তোমরা যেমন রঙের আদ্যক্ষর দিয়ে রং চেনালে, সেভাবেই কোনো পদার্থে কী কী মৌলিক পদার্থের পরমাণু আছে সেটা বোঝাতে মৌলগুলোর নামের আদ্যক্ষর ব্যবহার করা হয়। মৌলিক পদার্থের ক্ষেত্রে শুধু সেই মৌলের আদ্যক্ষর হলেই চলে। কিন্তু যৌগিক পদার্থের ক্ষেত্রে যেহেতু একাধিক মৌলের পরমাণু থাকে, কাজেই তোমাদের নানা রঙের ফুলের পাপড়ির মতোই, কোন মৌলের কয়টি পরমাণু পরস্পরের সাথে যুক্ত হয়ে পদার্থের সৃষ্টি করে তা সংকেত দেখেই বুঝতে পারা যায়। যেমন দুইটা কার্বন, দুইটা হাইড্রোজেন আর একটা অক্সিজেন পরমাণু মিলে যে যৌগ হয় তার সংকেত হল C2H2O ।
⇒আরও ভালোভাবে বোঝার জন্য দলে বসে তোমাদের রিসোর্স বা অনুসন্ধানী পাঠ বই থেকে পরমাণু, অণু এবং যৌগ, প্রতীক ও সংকেত, ইত্যাদিসহ তৃতীয় অধ্যায়ের বাকি অংশটুকু পড়ে নাও। পড়ার সময় দলে আলোচনা করো, প্রয়োজনে শিক্ষকের সহায়তাও নিতে পারো ।
⇒এবার নিচের সংকেতগুলো থেকে অনুমান করার চেষ্টা করো, এই পদার্থগুলোতে কোন কোন মৌলের কয়টি করে পরমাণু আছে। তোমাদের বইয়ে বেশ অনেকগুলো মৌলের প্রতীক দেয়া আছে, সেগুলোর সাহায্য নিতে পারো।
মৌল বা যৌগের সংকেত | কোন মৌলের কয়টি পরমাণু রয়েছে? |
CO | |
H2SO4 | |
O3 | |
N2O |
⇒তোমাদের মনে কি একটা প্রশ্ন জেগেছে, যে কোন মৌলের পরমাণু কার সাথে কীভাবে যুক্ত হয়ে নতুন পদার্থ তৈরি করবে তা কীভাবে জানা যায়? এটা কি একান্তই দৈবাৎ ঘটে, নাকি এরও কোনো নিয়ম আছে? নিজেরা চিন্তা করে দেখো। তবে এর উত্তর পেতে হলে তোমাদের আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে, আর একটু উঁচু ক্লাসে গেলেই দেখবে কত চমৎকার সব ঘটনা এই ক্ষুদ্র পরমাণুগুলোর ভেতরে ঘটে!
ততদিন প্রশ্নগুলো জমিয়ে রাখো না হয়?
⇒অভিনয় করতে, মডেল বানাতে এবং শরবত পরীক্ষা করতে তোমাদের কেমন লেগেছে?
…………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………
⇒এ কাজে তোমরা নতুন কী কী শিখেছ?
…………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………
Read more