নবম অধ্যায়
পবিত্র আত্মার অবতরণ
দীক্ষাস্নানের সময় আমরা পবিত্র আত্মাকে লাভ করেছি। হস্তার্পণে পবিত্র আত্মায় আরও বেশি পরিপক্বতা অর্জন করেছি। পবিত্র আত্মার সাতটি দান ও বারোটি ফল সম্পর্কে আমরা ইতিপূর্বে বিস্তারিত জেনেছি। প্রেরিতশিষ্যদের উপর পবিত্র আত্মা কীভাবে নেমে এসেছিলেন তা এবার আমরা জেনে নেব। পবিত্র আত্মাকে পেয়ে শিষ্যদের মধ্যে যেসব পরিবর্তন এসেছিল সেগুলো আমরা জানব। এরপর আমরা মঙ্গলবাণী প্রচারকাজের শুরুর কথাগুলো নিয়েও আলোচনা করব।
পবিত্র আত্মার অবতরণের ঘটনা
প্রভু যীশু তাঁর যাতনাভোগ, মৃত্যু ও পুনরুত্থানের পর চল্লিশ দিন পর্যন্ত শারীরিকভাবে শিষ্যদের কাছাকাছি ছিলেন। তখন তিনি তাঁদের কাছে অনেকবার দেখা দিয়েছিলেন। এরপর তিনি স্বর্গে আরোহণ করেন। যাওয়ার আগে শিষ্যদের তিনি বলেছিলেন,“তিনি তাঁদের একা ফেলে যাবেন না। একজন সহায়ককে তিনি তাঁদের জন্য পাঠিয়ে দিবেন। তিনি এসে তাঁদের পরিচালনা করবেন। তাঁদের সাথে সর্বদাই থাকবেন।” আর সেই কথানুসারেই ঈশ্বরের আত্মা প্রেরিতশিষ্যদের ওপর নেমে এসেছিলেন।
এই ঘটনাটি ঘটেছিল যীশুর স্বর্গারোহণের দশদিন পরে, পঞ্চাশত্তমী পর্বের দিনে। ‘পঞ্চাশত্তম’ কথার অর্থ এই ৫০ সংখ্যার পরিপূরক। পঞ্চাশত্তমী অর্থ হলো ৫০ দিন অতিবাহিত হওয়ার পরদিন। এটি ইহুদিদের একটি বিশেষ পর্ব ছিল। সিনাই পর্বতে মোশীর হাতে ঈশ্বর যে দশ আজ্ঞা দিয়েছিলেন তা তারা এই বিশেষ দিনটিতে স্মরণ করত।
সেদিন যীশুর সকল শিষ্যগণ যেরুসালেমের একটি ঘরে একসাথে বসা ছিলেন। তখন সকাল নয়টা মাত্র। তখন স্বর্গ থেকে হঠাৎ প্রচণ্ড বাতাস বয়ে যাওয়ার মতো শব্দ এলো। যে ঘরে তাঁরা ছিলেন সেই ঘরটি ঐ শব্দে পরিপূর্ণ হয়ে গেল। আর সব শিষ্যের উপর আগুনের জিহ্বার মতো কী যেন নেমে এসে তাঁদের মাথার উপর জ্বলতে লাগল। তখন তাঁরা সবাই পবিত্র আত্মায় পরিপূর্ণ হয়ে উঠলেন। আগুনের জিহ্বার আকারে পবিত্র আত্মা নেমে আসায় শিষ্যদের মনে পড়ে গেল প্রভু যীশুর প্রতিশ্রুতির কথা। তিনি বলেছিলেন, তিনি তাঁদের জন্য পবিত্র আত্মাকে অর্থাৎ একজন সহায়ককে পাঠিয়ে দেবেন। তাঁদের আরও মনে পড়ল, যীশু তাঁদের পাপ ক্ষমার কথা বলেছিলেন। তিনি তাঁদের উপর ফুঁ দিয়ে বলেছিলেন, তোমরা পবিত্র আত্মাকে গ্রহণ কর। যার পাপ তোমরা ক্ষমা করবে তাদের পাপ স্বর্গেও ক্ষমা করা হবে। যার পাপ তোমরা ধরে রাখবে তার পাপ স্বর্গেও ধরা থাকবে। সেই পবিত্র আত্মা প্রেমের আগুন দিয়ে সবার পাপ ক্ষমা করবেন। তাঁরই শক্তিতে শিষ্যগণও পাপ ক্ষমা করবেন।
পবিত্র আত্মার আগমনে প্রেরিতশিষ্যদের মধ্যে পরিবর্তন
শিষ্যগণ পবিত্র আত্মাকে গ্রহণ করার পর তাঁদের মধ্য থেকে ভয় দূর হয়ে গেল। তাঁদের অন্তরে এমন এক সাহস এলো যা আগে কোনোদিন ছিল না। তাঁরা তখন বিভিন্ন ভাষায় কথা বলতে লাগলেন। তাছাড়া গভীর এক আনন্দে তাদের অন্তর ভরে গেল। সেই দিন পঞ্চাশত্তমী পর্ব উপলক্ষে বিভিন্ন দেশ থেকে ইহুদিরা যেরুসালেমে উপস্থিত ছিল। ঐ ঘরটির উপর বাতাসের প্রচণ্ড শব্দ শুনে বহু দেশ থেকে আগত ইহুদিরা সেখানে উপস্থিত হলো। তারা নিজ নিজ দেশের ভাষায় প্রেরিতশিষ্যদের কথা বলতে শুনে আশ্চর্য হয়ে গেল। তারা মনে করল প্রেরিতশিষ্যগণ মদ খেয়ে মাতাল হয়েছেন। কিন্তু পিতর দাঁড়িয়ে ঐ লোকদের বললেন, তাঁরা মদ খান নি বরং পবিত্র আত্মাকে তাঁরা লাভ করেছেন। তিনি যীশুর বিষয়ে সাক্ষ্য দিয়ে লম্বা একটি ভাষণ দিলেন। তিনি বললেন, যীশু ছিলেন খ্রিষ্ট। তাঁকে ঈশ্বর নিজে পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু লোকেরা যীশুকে । হত্যা করে বড় ভুল করেছে। এর দ্বারা তারা মহাপাপ করেছে। তাঁর কথা শুনে লোকেরা অনুতপ্ত হলো ও মন পরিবর্তন করল। সেদিন তিন হাজার লোক যীশুর সেদিন স্বর্গ থেকে নেমে এসে মণ্ডলীতে থাকলেন। তিনি সকল শিষ্য, কুমারী মারীয়া ও দীক্ষাস্নাত সকল খ্রিষ্টভক্তের অন্তরে রইলেন। এরপর নিম্নলিখিত পরিবর্তনগুলো দেখা গেল: ১। দীক্ষাস্নাত সবাই প্রেরিতদের শিক্ষা, সহভাগিতা, রুটিভাঙার অনুষ্ঠান ও প্রার্থনায় মনোযোগী হলো।
পবিত্র আত্মাকে লাভের পর পিতরের ভাষণ নামে দীক্ষাস্নান গ্রহণ করল। পবিত্র আত্মা
২। প্রেরিতদের দ্বারা অনেক আশ্চর্য ঘটনা ঘটতে লাগল ।
৩। সবার অন্তরে একটা ঈশ্বরভীতি অর্থাৎ ঈশ্বরের প্রতি বাধ্যতা কাজ করতে লাগল।
৪। সকল ভক্তেরা নিজ নিজ সম্পত্তি বিক্রি করে সমস্ত টাকাপয়সা এনে প্রেরিতদের কাছে জমা করতে লাগল। নিজ নিজ প্রয়োজন অনুসারে তারা ব্যয় করত।
৫। সবাই একমন ও একপ্রাণ হয়ে প্রার্থনা, ঈশ্বরের প্রশংসা ও ভোজে যোগ দিতে লাগল ।
৬। দিন দিন অগণিত মানুষ তাঁদের দলে যোগদান করতে লাগল।
৭। মণ্ডলীর যাত্রা শুরু হলো।
কী শিখলাম
প্রেরিতশিষ্যদের উপর পবিত্র আত্মার অবতরণের ঘটনাটি জানতে পারলাম। পবিত্র আত্মাকে লাভ করার পর শিষ্যদের ভয়ভীতি দূর হয়ে গেল। এরপর তাঁরা নির্ভয়ে পুনরুত্থিত যীশুর মঙ্গলবাণী প্রচার করতে শুরু করলেন। অনেক লোক বিশ্বাসী হলো ও দীক্ষাস্নাত হতে লাগল ।
পরিকল্পিত কাজ
পবিত্র আত্মার অবতরণের ছবিটি আঁক।
অনুশীলনী
১। শূন্যস্থান পূরণ কর
(ক) মৃত্যু ও পুনরুত্থানের পর…………..দিন পর্যন্ত যীশু শিষ্যদের সঙ্গে ছিলেন।
(খ) স্বর্গারোহণের …...... দিন পর শিষ্যদের উপর পবিত্র আত্মা নেমে এসেছিলেন।
(গ) পঞ্চাশত্তমী পর্বের দিনে শিষ্যদের উপর নেমে এসেছিলেন।
(ঘ) পিতরের ভাষণ শুনে তিন হাজার লোক যীশুর নামে ...... গ্রহণ করেছিল।
(ঙ) পবিত্র আত্মাকে লাভ করে শিষ্যদের…………………. দূরে হয়ে গেল।
৩। সঠিক উত্তরটিতে টিক (√) চিহ্ন দাও
৩.১ পুনরুত্থানের চল্লিশ দিন পর যীশু কী করলেন ?
(ক) বিশ্বময় ছড়িয়ে পড়লেন (গ) স্বর্গে আরোহণ করলেন
(খ) যেরুসালেমে মন্দিরে গেলেন (ঘ) নাজারেথে ফিরে গেলেন
৩.২ পবিত্র আত্মা এসে শিষ্যদের
(খ) পরিচালনা করলেন
(ঘ) শক্তি দিলেন
(ক) রক্ষা করলেন
(গ) পাপ ক্ষমা করলেন
৩.৩ পঞ্চাশত্তমী পর্ব উপলক্ষে ইহুদিরা এসে সমবেত হলো
(ক) গালিলেয়ায়
(গ) শমরীয়ায়
(খ) বেথলেহেমে
(ঘ) যেরুসালেমে
৩.৪ পিতর তাঁর বক্তব্যে বললেন যারা যীশুকে মেরেছে তারা
(ক) অন্যায় করেছে (গ) ক্ষতি করেছে
(খ) মহাপাপ করেছে
(ঘ) সর্বনাশ করেছে ।
৩.৫ পবিত্র আত্মা পাপ ক্ষমা করেন
(ক) পাপ স্বীকারের মাধ্যমে
(গ) আশীর্বাদ করে
(খ) প্রেমের আগুন দিয়ে
(ঘ) আগুনের জিহ্বার দ্বারা
৪। সংক্ষেপে নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও
(ক) পঞ্চাশত্তমী অর্থ কী?
(খ) শিষ্যদের কাছে যীশু কী প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন?
(গ) পবিত্র আত্মাকে লাভের পর প্রেরিতশিষ্যদের কথা শুনে ইহুদিরা কী মনে করেছিল?
(ঘ) কখন থেকে মণ্ডলীর যাত্রা শুরু হলো?
৫। নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও
(ক) পবিত্র আত্মার অবতরণের ঘটনাটি লেখ
(খ) পবিত্র আত্মাকে লাভ করে শিষ্যদের কী অবস্থা হয়েছিল ও তারা কী করেছিল?
(গ) পবিত্র আত্মাকে লাভ করে দীক্ষাস্নাত লোকদের মধ্যে কী কী পরিবর্তন হয়েছিল?
আরও দেখুন...