শিক্ষক গীতসংহিতা/সামসঙ্গীত ১০৩:১-৫ পাঠ করে শ্রেণি কার্যক্রম শুরু করবেন। এ পাঠটি তুমিও পড়ে ভালো করে প্রস্তুতি নিয়ে রেখো। কারণ শিক্ষক তোমাকেও এ অংশটি পাঠ করতে বলতে পারেন। সামনে কোনো সেশনে তোমাকে ভূমিকাভিনয়ও করতে হবে। তোমার সুবিধার্থে বাইবেলের এ অংশটুকু নিচে দেয়া হলো-
"হে আমার প্রাণ, সদাপ্রভুর গৌরব কর;
হে আমার অন্তর, তাঁর পবিত্রতার গৌরব কর।
হে আমার প্রাণ, সদাপ্রভুর গৌরব কর;
তাঁর কোন উপকারের কথা ভুলে যেয়ো না।
তোমার সমস্ত পাপ তিনি ক্ষমা করেন।
তিনি তোমার সমস্ত রোগ ভাল করেন।
তিনি মৃতস্থান থেকে তোমার জীবন মুক্ত করেন;
তিনি তোমাকে অটল ভালবাসা ও মমতায় ঘিরে রাখেন।
যা মংগল আনে তেমন সব জিনিষ দিয়ে তিনি তোমাকে তৃপ্ত করেন;
তিনি ঈগল পাখীর মত তোমাকে নতুন যৌবন দেন।"
পূর্বের সেশনগুলোতে তুমি তোমার পরিচিত ব্যক্তিদের ও নিজের গুণ/ইতিবাচক দিক ও নেতিবাচক দিকসমূহ চিহ্নিত করেছো। ভেবে দেখো তো-
পবিত্র বাইবেল থেকে পাঠ
প্রিয় শিক্ষার্থী,
আমরা অন্যের দুর্বল দিকগুলো সহজেই খুঁজে পাই। কিন্তু নিজের দোষগুলো এতো সহজে খুঁজে পাই না। আবার একে অপরের সাথে অন্যের দোষগুলো নিয়ে আনন্দসহকারে আলোচনা করি; যাকে পরনিন্দা বলে। চলো দেখি মথি ৭:১-৫ পদে এ সম্বন্ধে কী বলা হয়েছে।
দোষ ধরবার বিষয়ে শিক্ষা
মথি ৭:১-৫
"তোমরা অন্যের দোষ ধরে বেড়িও না যেন তোমাদেরও দোষ ধরা না হয়, কারণ যেভাবে তোমরা অন্যের দোষ ধর সেইভাবে তোমাদেরও দোষ ধরা হবে, আর যেভাবে তোমরা মেপে দাও সেইভাবে তোমাদের জন্যেও মাপা হবে।
তোমার ভাইয়ের চোখে যে কুটা আছে কেবল তা-ই দেখছ, অথচ তোমার নিজের চোখের মধ্যে যে কড়িকাঠ আছে তা লক্ষ্য করছ না কেন? যখন তোমার নিজের চোখেই কড়িকাঠ রয়েছে তখন কি করে তোমার ভাইকে এই কথা বলছ, 'এস, তোমার চোখ থেকে কুটাটা বের করে দিই'? ভণ্ড! প্রথমে তোমার নিজের চোখ থেকে কড়িকাঠটা বের করে ফেল, তাতে তোমার ভাইয়ের চোখ থেকে কুটাটা বের করবার জন্যে স্পষ্ট দেখতে পাবে।"
তোমাকে একটু সহজ করে বলি
যীশুর সময়ে লোকেরা অন্যের দোষ ধরতো ও পরনিন্দা করতো। এজন্যেই যীশু অন্যের দোষ ধরতে নিষেধ করেছেন। আমরা যেভাবে অন্যের দোষ ধরি আমাদের দোষও সেভাবে ধরা হবে। কারও দোষ ধরা বা কাউকে কোনোভাবে ঠকানো ঠিক নয়। অন্যের দোষ দেখার আগে নিজের দোষ দেখা দরকার। কারণ কোনো কোনো ক্ষেত্রে অন্যের চেয়ে আমার নিজের দোষ বেশি। যীশু নিজের দোষ শনাক্ত করতে বলেছেন এবং অন্যের দোষ ধরা পরিহার করতে বলেছেন।
এবার বাইবেলের পঠিত অংশে পরনিন্দা সম্পর্কে কী বলা হয়েছে তা শিক্ষক তোমাদের জোড়ায়/দলগতভাবে আলোচনা করে লিখতে বলতে পারেন। শিক্ষকের নির্দেশনা অনুযায়ী কাজটি করবে।
পবিত্র বাইবেল থেকে পাঠ
পবিত্র বাইবেলের ইফিষীয় ৪:২৯-৩২ শ্রেণিকক্ষে ভক্তিসহকারে শুদ্ধ উচ্চারণে পাঠ করতে হবে। তোমরা অনেকেই বাইবেলের দু'একটি পদ পাঠের সুযোগ পেতে পারো। তুমি চাইলে আগে থেকে এ পদগুলো বাড়িতে অনুশীলন করতে পারো যাতে শ্রেণিকক্ষে নির্ভুলভাবে পাঠ করতে পারো। অন্যের দোষ ধরবার বিষয়ে যীশুর শিক্ষা আমরা শুনেছি। এবার এসো পরনিন্দা পরিহার বিষয়ে বাইবেলের ইফিষীয় ৪:২৯-৩২ পদে এ সম্বন্ধে কী বলা হয়েছে, দেখি।
পরনিন্দা পরিহার বিষয়ে শিক্ষা
ইফিষীয় ৪:২৯-৩২
'তোমাদের মুখ থেকে কোনো বাজে কথা বের না হোক, বরং দরকার মত অন্যকে গড়ে তুলবার জন্যে যা ভাল তেমন কথাই বের হোক, যেন যারা তা শোনে তাতে তাদের উপকার হয়। তোমরা ঈশ্বরের পবিত্র আত্মাকে দুঃখ দিও না, যাঁকে দিয়ে ঈশ্বর মুক্তি পাবার দিন পর্যন্ত তোমাদের সীলমোহর করে রেখেছেন। সবরকম বিরক্তি প্রকাশ, মেজাজ দেখানো, রাগ, চিৎকার করে ঝগড়াঝাটি, গালাগালি, আর সব রকম হিংসা তোমাদের কাছ থেকে দূর কর। তোমরা একে অন্যের প্রতি দয়ালু হও, অন্যের দুঃখে দুঃখী হও, আর ঈশ্বর যেমন খ্রীষ্টের মধ্যদিয়ে তোমাদের ক্ষমা করেছেন তেমনি তোমরাও একে অন্যকে ক্ষমা কর।
তোমাকে একটু সহজ করে বলি
সাধু পৌল আমাদের অন্য লোকের বিষয়ে নিন্দা করতে ও দুর্বল দিক নিয়ে সমালোচনা করতে নিষেধ করেছেন। বরং অন্য মানুষের জন্যে মঙ্গল কামনা করে তাদের গড়ে তোলার জন্য ভালো কাজ করতে বলেছেন। আমাদের প্রত্যেককে পরনিন্দা পরিহার করে উৎসাহমূলক কথা বলতে হবে, যেন কেউ কষ্ট না পায়। আমাদের সব রকমের বিরক্তি প্রকাশ, রাগ, বাজে কথা বলা, ঝগড়া করা, চিৎকার-চেঁচামেচি কিংবা মেজাজ দেখানো পরিহার করতে বলেছেন। তিনি অন্যের প্রতি দয়ালু, অন্যের দুঃখে দুঃখী হতে ও ক্ষমা করতে পরামর্শ দিয়েছেন।
ভূমিকাভিনয়
পরনিন্দা পরিহার সম্পর্কে যীশু কতো গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেছেন তা তোমরা শুনেছো। এ জানার ভিত্তিতে তোমাদের একটি মজার কাজ করতে হবে। এ পর্যন্ত তোমরা যা যা শিখেছো তা ব্যবহার করে পরনিন্দা পরিহার করার বিষয়ে এমনভাবে দলগতভাবে ভূমিকাভিনয় করতে হবে যাতে খ্রীষ্টিয় শিক্ষার প্রতিফলন ঘটে।
ভূমিকাভিনয়ের জন্যে প্রথমে শিক্ষক তোমাদের দলে বিভক্ত করবেন। এরপর দলগতভাবে স্ক্রিপ্ট তৈরির জন্যে সময় নির্ধারণ করে দেবেন। প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে তিনি স্ক্রিপ্ট সংশোধন করে দেবেন। নিজেদের মধ্যে চরিত্রগুলো বিভাজন করে মহড়ার জন্যে তোমাদের সময় দেয়া হবে। মহড়া সম্পন্ন হলে পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন দলকে অভিনয়ের জন্যে আহ্বান করবেন।
ভূমিকাভিনয় শেষে তোমাদের অভিনীত বিভিন্ন ভূমিকা নিয়ে মুক্ত আলোচনা করা হবে। কোনো দলের ভূমিকায় যীশুর শিক্ষার প্রতিফলন না ঘটলে শিক্ষক সংশোধন করবেন। যে দল আন্তরিকতার সাথে অভিনয় করেছে তাদের উৎসাহিত করা হবে। তোমরা শিক্ষকের নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করো।
বাড়ির কাজ
মা-বাবা/অভিভাবকের কাছে তুমি তোমার নেতিবাচক দিকগুলো বলবে। তোমার কোন দুটি নেতিবাচক দিক ইতিবাচক দিকে রূপান্তরিত করতে চাও তা তাদের বলবে। কীভাবে এগুলো ইতিবাচক দিকে পরিণত করতে চাও তা তাদের সাথে share/আলোচনা করো এবং প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে তাদের পরামর্শও নিতে পারো।
সকলে সক্রিয় থেকে কাজটি করে শিক্ষককে সহায়তা করবে।
আরও দেখুন...