পরম গতি ও আপেক্ষিক গতি

একাদশ- দ্বাদশ শ্রেণি - পদার্থবিদ্যা - পদার্থবিজ্ঞান – ১ম পত্র | | NCTB BOOK

কোনো বস্তু স্থিতিশীল না গতিশীল তা বোঝার জন্য বস্তুর আশপাশ থেকে আর একটা বস্তুকে নিতে হয় যাকে বলা হয় প্রসঙ্গ বস্তু। এ প্রসঙ্গ বস্তু ও আমাদের আলোচ্য বস্তুর অবস্থান যদি সময়ের সাথে অপরিবর্তিত থাকে তাহলে আলোচ্য বস্তুটি প্রসঙ্গ বস্তুর সাপেক্ষে স্থির বলে ধরা হয়। আলোচ্য বস্তু ও প্রসঙ্গ বস্তু যদি একই দিকে একই বেগে চলতে থাকে তাহলেও কিন্তু সময়ের সাথে বস্তুদ্বয়ের মধ্যবর্তী দূরত্বের কোনো পরিবর্তন হবে না, যদিও প্রকৃতপক্ষে বস্তুটি গতিশীল। চলন্ত ট্রেনের কামরার দুই বন্ধু যদি মুখোমুখি বসে থাকে, তবে একজনের সাপেক্ষে অন্যের অবস্থানের কোনো পরিবর্তন হয় না। সুতরাং বলা যেতে পারে, একজনের সাপেক্ষে অন্যজন স্থির। কিন্তু যদি ট্রেন লাইনের পাশে দাঁড়ানো কোনো ব্যক্তি তাদেরকে দেখেন তবে ঐ ব্যক্তির সাপেক্ষে তাদের অবস্থানের পরিবর্তন হচ্ছে। অর্থাৎ লাইনের পাশে দাঁড়ানো ব্যক্তির সাপেক্ষে তারা উভয়ই গতিশীল।

তাহলে আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, কোনো বস্তু প্রকৃতপক্ষে স্থির কিনা তা নির্ভর করছে প্রসঙ্গ বস্তুর উপর। প্রসঙ্গ বস্তু যদি প্রকৃতপক্ষে স্থির হয় তাহলে তার সাপেক্ষে যে বস্তু স্থিতিশীল রয়েছে সেও প্রকৃতপক্ষে স্থির। এ ধরনের স্থিতিকে আমরা পরম স্থিতি বলতে পারি। অর্থাৎ প্রসঙ্গ বস্তুটি যদি পরম স্থিতিতে থাকে তাহলেই শুধু কোনো বস্তু তার সাপেক্ষে স্থির থাকলে সে বস্তুকে পরম স্থিতিশীল বলা যেতে পারে। সেরূপ পরম স্থিতিশীল প্রসঙ্গ বস্তুর সাপেক্ষে কোনো বস্তুর গতিকে আমরা পরম গতি বলি । কিন্তু এ মহাবিশ্বে এমন কোনো প্রসঙ্গ বস্তু পাওয়া সম্ভব নয়, যা প্রকৃতপক্ষে স্থির রয়েছে। কারণ পৃথিবী প্রতিনিয়ত সূর্যের চারদিকে ঘুরছে, সূর্যও তার গ্রহ, উপগ্রহ নিয়ে ছায়াপথে গতিশীল। কাজেই আমরা যখন কোনো বস্তুকে স্থিতিশীল বা গতিশীল বলি তা আমরা কোনো আপাত স্থিতিশীল বস্তুর সাপেক্ষে বলে থাকি। কাজেই আমরা বলতে পারি, এ মহাবিশ্বে সকল স্থিতিই আপেক্ষিক সকল গতিই আপেক্ষিক। কোনো গতিই পরম নয়, পরম নয় কোনো স্থিতিই।

৩.৪। আপেক্ষিক গতি Relative Motion

কোনো বস্তু স্থির না সচল তা বোঝার জন্য আমরা কোনো স্থির বস্তুর সাথে তুলনা করে থাকি। যেহেতু এ মহাবিশ্বে পরম স্থিতিশীল কোনো বস্তু পাওয়া যায় না তাই আমাদেরকে কোনো বস্তুর গতি অপর গতিশীল বস্তুর গতির সাথে তুলনা করে বুঝতে হয়। তাই বলা যায়, এ মহাবিশ্বে সকল গতিই আপেক্ষিক। পাশাপাশি থেমে থাকা দুটি ট্রেনের একটি চলতে শুরু করলে গতিশীল ট্রেনের যাত্রীর কাছে মনে হবে যেন পাশের ট্রেনটি বিপরীত দিকে চলতে শুরু করেছে। আসলে ট্রেন দুটির মধ্যবর্তী পারস্পরিক গতির জন্য এরূপ মনে হয়। চলমান যাত্রীর সাপেক্ষে থেমে থাকা গাড়ির এই মনে হওয়া গতিই হচ্ছে আপেক্ষিক গতি। সুতরাং আমরা বলতে পারি, দুটি চলমান বস্তুর একটির সাপেক্ষে অপরটির গতিকে আপেক্ষিক গতি বলে ।

এমনকি প্রসঙ্গ কাঠামোর উপর ভিত্তি করে কোনো বস্তুর এ আপেক্ষিক গতির প্রকৃতি বা গতিপথও ভিন্ন হতে পারে উদাহরণ হিসেবে সুষম বেগে গতিশীল কোনো ট্রেনের কথা বিবেচনা করা যাক। ট্রেনে বসে থাকা একজন যাত্রী ট্রেনের জানালা দিয়ে একটি পাথর ফেলে দিলেন। এ যাত্রীর নিকট মনে হবে যে পাথরটি খাড়া নিচের দিকে পড়ছে। কিন্তু রেল লাইনের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা একজন পর্যবেক্ষকের নিকট মনে হবে যে পাথরটি পরাবৃত্তাকার (parabolic) পথে পড়ছে।

৩.৫। গতি বিষয়ক কতগুলো রাশি 

Few Quntities relating Motion

অবস্থান ভেক্টর (Position Vector)

 

সংজ্ঞা : প্রসঙ্গ কাঠামোর মূলবিন্দুর সাপেক্ষে যে ভেক্টর দিয়ে কোনো বিন্দুর অবস্থান নির্দেশ করা হয় তাকে অবস্থান ভেক্টর বলে। 

ব্যাখ্যা : একমাত্রিক গতির ক্ষেত্রে প্রসঙ্গ কাঠামোর মূলবিন্দু থেকে ধনাত্মক X-অক্ষ বরাবর x দূরত্বে কোনো বিন্দু অবস্থিত হলে তার অবস্থান ভেক্টর হবে,

r=xi^

ত্রিমাত্রিক বা সাধারণ ক্ষেত্রে অবস্থান ভেক্টর হলো r=xi^ +yj ^+zk^  (3.1)

মাত্রা ও একক : অবস্থান ভেক্টরের মাত্রা হচ্ছে দৈর্ঘ্যের মাত্রা L এবং এর একক হচ্ছে মিটার (m)।

সরণ (Displacement )

কোনো বস্তুর অবস্থানের পরিবর্তন হলে সরণ ঘটে।

সংজ্ঞা : কোনো বস্তুর অবস্থান ভেক্টরের পরিবর্তনকে সরণ বলে।

 ব্যাখ্যা : কোনো বস্তুর শেষ অবস্থান ভেক্টর rf এবং আদি অবস্থান ভেক্টর ri এর পার্থক্যই হচ্ছে সরণ r

r=rf-ri  … (3.2)

X-অক্ষ বরাবর একমাত্রিক গতির ক্ষেত্রে সরণের মান হবে x =xf-xi

 সরণ একটি ভেক্টর রাশি।

কোনো বস্তুর আদি অবস্থান ও শেষ অবস্থানের মধ্যবর্তী ন্যূনতম দূরত্ব অর্থাৎ সরলরৈখিক দূরত্বই হচ্ছে সরণের মান এবং সরণের দিক হচ্ছে বস্তুর আদি অবস্থান থেকে শেষ অবস্থানের দিকে।

মাত্রার একক : এর মাত্রা L এবং একক m

বেগ ও দ্রুতি (Velocity and Speed)

কোনো বস্তুর অবস্থান ভেক্টর থেকে আমরা জানতে পারি বস্তুটি প্রসঙ্গ কাঠামোর সাপেক্ষে কোন দিকে কত দূরে অবস্থিত, সরণ থেকে জানতে পারি বস্তু কোন দিকে কত দূরত্ব অতিক্রম করেছে। আর বেগ থেকে আমরা জানতে পারবো বস্তুটি প্রসঙ্গ কাঠামোর সাপেক্ষে কোন দিকে কত দ্রুত যাচ্ছে। বেগের সংজ্ঞার আগে গড় বেগের সংজ্ঞা আলোচনা করা যাক। 

গড় বেগের সংজ্ঞা: যেকোনো সময় ব্যবধানে বস্তুর গড়ে প্রতি একক সময়ে যে সরণ হয় তাকে বস্তুটির গড় বেগ বলে।

ব্যাখ্যা : t সময় ব্যবধানে বস্তুর সরণ r  হলে গড় বেগ

v¯=rt

X-অক্ষ বরাবর একমাত্রিক গতির ক্ষেত্রে গড় বেগ হবে

v¯=xt

গড় বেগ একটি নির্দিষ্ট সময় ব্যবধানে কোনো বস্তু কত দ্রুত এবং কোন দিকে চলছে তা নির্দেশ করে। এখন আমরা বেগের সংজ্ঞা দেব—যা নির্দেশ করবে কোনো একটি বিশেষ মুহূর্তে বস্তুটি কত দ্রুত এবং কোন দিকে চলছে। যেহেতু এ বেগ কোনো গতিশীল বস্তুর কোনো একটি বিশেষ ক্ষণের বেগ নির্দেশ করে এজন্য এ বেগকে তাৎক্ষণিক বেগও বলা হয়। 

বেগ বা তাৎক্ষণিক বেগের সংজ্ঞা: সময় ব্যবধান শূন্যের কাছাকাছি হলে সময়ের সাথে বস্তুর সরণের হারকে বেগ বা তাৎক্ষণিক বেগ বলে।

বেগের মাত্রা ও একক : বেগের মাত্রা হলো LT এবং একক ms-1

দ্রুতির সংজ্ঞা : বস্তু একক সময়ে যে দূরত্ব অতিক্রম করে তাকে দ্রুতি বলে। 

 কোনো বস্তুর বেগের মানই হচ্ছে তার ও পতিক্রম করে তাকে প্রতি দ্রুতির পরিমাপ। 

  দ্রুতির মাত্রা ও একক যথাক্রমে বেগের মাত্রা ও এককের অনুরূপ।

বেগ ও সময়: 

কোনো বস্তুর বেগ সময়ের উপর নির্ভর করতে পারে আবার নাও করতে পারে। অর্থাৎ কোনো বস্তুর বেগ সমবেগ হতে পারে আবার অসমবেগও হতে পারে। সময়ের উপর বেগ নির্ভর না করলে তা হবে সমবেগ আর নির্ভর করলে তা হবে অসমবেগ।

সমবেগ : 

 যদি কোনো বস্তুর গতিকালে তার বেগের মান ও দিক অপরিবর্তিত থাকে তাহলে সেই বস্তুর বেগকে সমবেগ বলে। অর্থাৎ কোনো বস্তু যদি নির্দিষ্ট দিকে সমান সময়ে সমান পথ অতিক্রম করে তাহলে বস্তুর বেগকে সমবেগ বলে।

উদাহরণ : শব্দের বেগ, আলোর বেগ প্রভৃতি সমবেগের প্রকৃষ্ট প্রাকৃতিক উদাহরণ। শব্দ নির্দিষ্ট দিকে সমান সময়ে সমান পথ অতিক্রম করে আর তা হচ্ছে 0 C তাপমাত্রায় বায়ুতে প্রতি সেকেন্ডে 332m। শব্দ কোনো নির্দিষ্ট দিকে প্রথম সেকেন্ডে 332 m, দ্বিতীয় সেকেন্ডে 332m এবং এরূপে প্রতি সেকেন্ডে 332 m করে চলতে থাকে। এখানে শব্দের বেগের মান ও দিক একই থাকায় শব্দের বেগ 332ms-1 হলো সমবেগ।

সমবেগ সম্পন্ন কোনো বস্তুর গতি সমবেগ গতি বা সুষম গতি। সুতরাং শব্দের গতি, আলোর গতি প্রভৃতি সুষম গতি ।

অসম বেগ : কোনো বস্তুর গতিকালে যদি তার বেগের মান বা দিক বা উভয়ই পরিবর্তিত হয় তাহলে সেই বেগকে অসম বেগ বলে।

উদাহরণ : আমরা সচরাচর যে সব যানবাহনের বা বস্তুর গতি দেখে থাকি সেগুলোর গতি অসম বেগ গতি ।

আপেক্ষিক বেগ:

দুটি চলমান বস্তুর একটির সাপেক্ষে অপরটির বেগকে আপেক্ষিক বেগ বলে।

আপেক্ষিক বেগ নির্ণয় পদ্ধতি : দুটি বস্তুর মধ্যবর্তী আপেক্ষিক বেগ নিচের পদ্ধতিতে বের করা যায়। যদি দুটি বস্তু A এবং B উভয়ের স্থান পরিবর্তিত হয়, তাহলে B-এর সাপেক্ষে A-এর আপেক্ষিক বেগ নির্ণয় করতে গেলে A-এর বেগের সাথে B-এর সমান ও বিপরীতমুখী বেগ যোগ করতে হবে। এ দুটি বেগের লব্ধিই হবে B-এর সাপেক্ষে A-এর আপেক্ষিক বেগ।

(ক) যখন বস্তু দুটি একই দিকে যায় : 

ধরা যাক, A ও B বস্তু দুটি যথাক্রমে v1 ও v2 বেগে পশ্চিম দিক থেকে পূর্ব দিকে যাচ্ছে। তাহলে B-এর সাপেক্ষে A এর আপেক্ষিক বেগ হবে (V1 - V2 )

একই রকমভাবে A-এর সাপেক্ষে B-এর আপেক্ষিক বেগ হবে (V2 - V1) বা ( - V1- V2 ) । যদি A এর বেগ B এর চেয়ে বেশি হয় তবে A দেখবে, B পূর্ব দিক থেকে পশ্চিম দিকে (v1 - v2) বেগে যাচ্ছে যদিও এর প্রকৃত বেগ পশ্চিম দিক থেকে পূর্ব দিকে। 

(খ) যখন বস্তু দুটি বিপরীত দিকে যায় : 

ধরা যাক, A ও B বস্তু দুটি যথাক্রমে v1 এবং v2 বেগে বিপরীত দিকে চলছে। এ অবস্থায় B-এর সাপেক্ষে A-এর আপেক্ষিক বেগ হবে v1 - ( - v2 ) = (V1+ v2)। একইভাবে A-এর সাপেক্ষে B-এর আপেক্ষিক বেগ হবে v2 - ( - V1) = (v2 + v1)। অর্থাৎ প্রত্যেকে দেখবে যেন অপর বস্তুটি বস্তুদ্বয়ের মিলিত বেগ নিয়ে চলছে ।

চিত্র : ৩.২

(গ) যখন বস্তু দুটি যেকোনো দুই দিকে যায় :

ধরা যাক, দুটি বস্তু A ও B যথাক্রমে v1 ও v2 বেগ সহকারে α কোণে আনত অবস্থায় OP ও Q অভিমুখে চলছে (চিত্র ৩.২) । OA ও OB যথাক্রমে ঐ বেগ দুটির মান ও দিক প্রকাশ করছে। এখন B এর সাপেক্ষে A এর আপেক্ষিক বেগ নির্ণয় করতে হলে BO রেখাকে B পর্যন্ত বর্ধিত করা হলো যেন OB = OB' হয়। এখন OB তাহলে- v2 এর মান ও দিক নির্দেশ করছে।

এবার OACB সামান্তরিকটি পূর্ণ করে ভেক্টরের সামান্তরিক সূত্র প্রয়োগ করলে OC কর্ণই হবে v1 ও -v2 এর লব্ধি ভেক্টরের মান ও দিক । অর্থাৎ OC কর্ণই B এর সাপেক্ষে A এর আপেক্ষিক বেগের মান ও দিক নির্দেশ করবে। আপেক্ষিক বেগ v হলে

v=v21+v22+2v1v2 cos (180°-α)

একই রকমভাবে A এর সাপেক্ষে B এর আপেক্ষিক বেগ নির্ণয় করতে হলে AO কে A' পর্যন্ত এমনভাবে বর্ধিত করতে হবে যেন OA = OA' হয় (চিত্রে দেখানো হয়নি)। তাহলে OA' হবে vi এর ঋণাত্মক ভেক্টর। এবার OBC'A' সামান্তরিকটি সম্পূর্ণ করে OC" কর্ণ আঁকলে এই কর্ণের মান ও দিক A এর সাপেক্ষে B এর আপেক্ষিক বেগ নির্দেশ করবে।

বৃষ্টির ফোঁটা চলন্ত গাড়ির সামনের কাচকে ভিজিয়ে দেয়, কিন্তু পেছনের কাচকে ভিজায় না

ধরা যাক, O বিন্দুতে একটি গাড়ি OA বরাবর vcবেগে গতিশীল (চিত্র : ৩.৩)। ঐ স্থানে বৃষ্টি খাড়া নিচের দিকে OB বরাবর দুই বেগে vrপড়ছে । এখন আপেক্ষিক বেগের সংজ্ঞানুসারে গাড়ির সাপেক্ষে বৃষ্টির বেগ v=vr-vcসামান্তরিকের সূত্রের সাহায্যে নির্ণয় v করতে হলে OA রেখাকে পেছন দিকে OC পর্যন্ত বর্ধিত করা হলো যেন OA = OC হয়। তাহলে OC নির্দেশ করবে vc  এর মান ও দিক । এবার OCDB সামান্তরিকটি পূর্ণ করে ভেক্টরের সামান্তরিকের সূত্র প্রয়োগ করলে OD কর্ণই হবে  vr ও  vcএর লব্ধি  v এর মান ও দিক । অর্থাৎ OD কর্ণ গাড়ির সাপেক্ষে বৃষ্টির বেগের মান ও দিক নির্দেশ করবে ।

চিত্র : ৩.৩

সুতরাং আপেক্ষিক বেগের কারণে গতিশীল গাড়ি তথা গাড়ির আরোহীরা দেখবেন বৃষ্টি খাড়া নিচের দিকে না পড়ে উল্লম্বের সাথে অনুভূমিকের দিকে ৪ কোণ করে তির্যকভাবে আসছে। ফলে গাড়ির সামনের কাচে বৃষ্টি তির্যকভাবে পড়বে এবং কাচকে ভিজাবে। কিন্তু পেছনের কাচের সামনে গাড়ির ছাদ থাকায় বৃষ্টি তির্যকভাবে ছাদে পড়বে, কাচে পড়তে পারবে না। ফলে পেছনের কাচকে ভিজাবে না।

বৃষ্টির মধ্যে ছাতা মাথায় হাঁটলে ছাতা হেলিয়ে ধরতে হয়

বৃষ্টির মধ্যে পথিক দাঁড়িয়ে থাকলে বৃষ্টি খাড়াভাবে তার গায়ে পড়বে, ফলে বৃষ্টি থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য তাকে ছাতা মাথার ওপরে খাড়া সোজা করে ধরে রাখতে হবে। কিন্তু যদি পথিক হাঁটা শুরু করেন তখন তার সাপেক্ষে বৃষ্টির আপেক্ষিক বেগ আর খাড়া নিচের দিকে থাকবে না । তিনি দেখবেন বৃষ্টি উল্লম্বের সাথে কোণ করে তির্যকভাবে সামনের দিক থেকে আসছে । ফলে বৃষ্টি থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য তাকে উল্লম্বের সাথে কোণ করে সামনের দিকে ছাতা ধরতে হবে । তিনি যত দ্রুত হাঁটবেন, বৃষ্টির আপেক্ষিক বেগ উল্লম্বের সাথে তত বেশি কোণ উৎপন্ন করবে। ফলে ছাতাকে বেশি কোণে হেলিয়ে ধরতে হবে ।

আমরা দেখি বৃষ্টির মধ্যে দ্রুতগামী মোটর সাইকেল আরোহীর কাছে বৃষ্টি প্রায় সামনের দিক থেকে আসছে এবং তাকে সামনের দিকে বেশি ভিজিয়ে দেয়। কারণ আরোহীর বেগ বেশি থাকায় তার সাপেক্ষে বৃষ্টির আপেক্ষিক বেগ উল্লম্বের সাথে বেশি কোণ উৎপন্ন করে।

বায়ু প্রবাহের দিকে দৌড়ালে বাতাসের বেগ কম মনে হয়

মনে করি কোনো একদিকে বাতাস vaবেগে প্রবাহিত হচ্ছে। কোনো ব্যক্তি বায়ু প্রবাহের দিকে vp বেগে দৌড়াচ্ছেন । সুতরাং উক্ত ব্যক্তির সাপেক্ষে বাতাসের আপেক্ষিক বেগ v  হবেv  = va -  vp যেহেতু দুটি বেগের দিক একই, - সুতরাং ভেক্টরের যোগ বিয়োগের নিয়ম অনুসারে তাদের বিয়োগ ফলের মান হবে বেগ দুটির মানের বিয়োগ ফলের সমান, 

v= va -  vp 

সুতরাং দেখা যাচ্ছে দৌড়বিদের সাপেক্ষে বাতাসের আপেক্ষিক বেগ বাতাসের বেগের চেয়ে কম । তাই বাতাসের প্রবাহের দিকে দৌড়ালে বাতাসের বেগ কম মনে হয় ।

ত্বরণ (Acceleration )

কোনো বস্তুর ত্বরণ দ্বারা বস্তুটির বেগের মান বা দিক বা উভয়ই কত দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে তা জানা যায়। ত্বরণ সময়ের সাথে বস্তুর বেগের পরিবর্তনের হার নির্দেশ করে। বেগের মতো আমরা ত্বরণের সংজ্ঞার আগে গড় ত্বরনের সংজ্ঞা আলোচনা করবো।

গড় ত্বরণের সংজ্ঞা : যেকোনো সময় ব্যবধানে বস্তুর গড়ে প্রতি একক সময়ে বেগের যে পরিবর্তন হয় তাকে বস্তুটির গড় ত্বরণ বলে।

 t সময় ব্যবধানে বস্তুর বেগের পরিবর্তন v হলে গড় ত্বরণ

a¯=vt

X-অক্ষ বরাবর একমাত্রিক গতির ক্ষেত্রে গড় ত্বরণ হবে

a=vt

গড় ত্বরণ একটি নির্দিষ্ট সময় ব্যবধানে কোনো বস্তুর বেগ কোন দিকে কত পরিবর্তিত হয়েছে তা নির্দেশ করে। এখন আমরা ত্বরণের সংজ্ঞা দেব — যা নির্দেশ করবে কোনো একটি বিশেষ মুহূর্তে বস্তুটির বেগ কোন দিকে কত পরিবর্তিত হচ্ছে। যেহেতু এ ত্বরণ গতিশীল বস্তুর কোনো একটি বিশেষ ক্ষণের ত্বরণ নির্দেশ করে এজন্য এ ত্বরণকে তাৎক্ষণিক ত্বরণও বলা হয়।

Content added || updated By

# বহুনির্বাচনী প্রশ্ন

Promotion