তুমি নিশ্চয়ই ঈশ্বরের দশ আজ্ঞা মেনে চলো। এ আড্ডাগুলো খ্রীষ্টধর্মের বিধি-বিধানের মূল ভিত্তি। এই আড্ডাগুলোতে ঈশ্বর ও মানুষকে ভালোবাসতে বলা হয়েছে। যীশুখ্রীষ্ট এ পৃথিবীতে এসে আমাদের পরোপকারী, নিঃস্বার্থপর ও দয়াশীল হওয়ার শিক্ষা দিয়েছেন।
চলো দেখি, পবিত্র বাইবেলে পরোপকার ও দানশীলতার বিষয়ে যীশু আমাদের কী শিক্ষা দিয়েছেন।
যীশু আবার যখন পথে বের হলেন তখন একজন লোক দৌড়ে তাঁর কাছে আসল এবং তাঁর সামনে হাঁটু পেতে বলল, “হে গুরু, আপনি একজন ভাল লোক। আমাকে বলুন, অনন্ত জীবন লাভ করবার জন্য আমি কি করব?” যীশু তাকে বললেন, “আমাকে ভাল বলছ কেন? ঈশ্বর ছাড়া আর কেউই ভাল নয়। তুমি তো আদেশগুলো জান, খুন কোরো না, ব্যভিচার কোরো না, চুরি কোরো না, মিথ্যা সাক্ষ্য দিয়ো না, ঠকিয়ো না, মা-বাবাকে সম্মান করো।' লোকটি যীশুকে বলল, “গুরু ছোটবেলা থেকে আমি এই সব পালন করে আসছি। এতে যীশু তার দিকে তাকিয়ে চেয়ে দেখলেন এবং ভালবাসায় পূর্ণ হয়ে তাকে বললেন,” একটা জিনিস তোমার বাকী আছে। যাও, তোমার যা কিছু আছে তা বিক্রি করে গরীবদের দান কর। তাতে স্বর্গে ধন পাবে। তারপরে এসে আমার শিষা হও।” এই কথা শুনে লোকটির মুখ ম্লান হয়ে গেল। তার অনেক ধনসম্পত্তি ছিল বলে সে দুঃখিত হয়ে চলে গেল।
তোমাকে একটু সহজ করে বলি
আদর্শ খ্রীষ্টিয় জীবন লাভের জন্য দশ আজ্ঞা হলো মৌলিক বিধিমালা। এই ধনী লোকটি বিশ্বস্ততার সাথে এই দশ আজ্ঞা পালন করছে। কিন্তু যীশু চান যে আমরা যেন এসব পালনের সাথে সাথে
মানুষকে ভালোবাসি, ধনসম্পদের প্রতি লোভ সংবরণ করে মানুষের কল্যাণ চিন্তা করি। ধনী লোকটি তার সম্পদ বিক্রি করে গরিবদের দিতে রাজি হয়নি কারণ ধনসম্পদের প্রতি মোহ ত্যাগ করা তার পক্ষে সম্ভব হয়নি। এই ধনী যুবকের জীবন আধ্যাত্মিকতায় পূর্ণ, তাই যীশু তাকে ভালোবেসে আহ্বান করেছিলেন তার ঐশীরাজ্য স্থাপনে। অন্তরে ঈশ্বর ও মানুষের জন্য ভালোবাসা না থাকলে যীশুর ডাকে আমরা সাড়া দিতে পারি না। অনন্ত জীবন বলতে বুঝায় মৃত্যুর পর আমাদের আত্মা বেঁচে থাকবে এবং স্বর্গে ঈশ্বরের সাথে মিলিত হবে। অনন্ত জীবন পেতে হলে মানুষকে ভালোবাসতে হবে নিজের সর্বস্ব ত্যাগ করে। পরোপকার ও দানশীলতার মাধ্যমে আমরা পরস্পরকে ভালোবাসি।
এইজন্য যখন তুমি গরীবদের কিছু দাও তখন ভন্ডদের মত কোরো না। তারা তো লোকদের প্রশংসা পাবার জন্য সমাজ-ঘরে এবং পথে পথে ঢাক-ঢোল বাজিয়ে ভিক্ষা দেয়। আমি তোমাদের সত্যিই বলছি, তারা তাদের পুরস্কার পেয়ে গেছে।
তুমি যখন গরীবদের কিছু দাও তখন তোমার ডান হাত কি করছে তা তোমার বাঁ হাতকে জানতে দিয়ো না।
প্রিয় শিক্ষার্থী, যীশু তাঁর কর্মজীবনে গারিব, অসহায় ও নির্যাতিতদের জন্য অনেক কাজ করেছেন। আর আমাদেরও উপদেশ দিয়েছেন যেন আমরা গরিব প্রতিবেশীদের প্রতি দয়ালু ও সেবাপরায়ণ হই। চলো দেখি বাইবেলে যীশু কী বলেছেন।
যিনি তাঁকে দাওয়াত করেছিলেন পরে যীশু তাঁকে বললেন, “যখন আপনি খাওয়া দাওয়ার আয়োজন করাবেন বা ভোজ দেবেন তখন আপনার বন্ধুদের বা ভাইদের কিংবা আত্ম-স্বজনদের বা ধর্মী প্রতিবেশীদের নিমন্ত্রণ করবেন না। তা করলে হয়ত তারাও এর বদলে আপনাকে নিমন্ত্রণ করবেন আর এই ভাবে আপনার নিমন্ত্রণ শোষ হয়ে যাবে। কিন্তু আপনি যখন ভোজ দেবেন তখন গরীব, নুলা, খোঁড়া এবং অন্ধদের ডাকবেন। তাতে আপনি ঈশ্বরের আশীর্বাদ পাবেন, কারণ তারা সেই নিমন্ত্রণের শোধ দিতে পারবেন না। যখন মৃত্যু থেকে নির্দোষ লোকদের জীবিত করা হবে তখন আপনি এর শোধ পাবেন।
তোমাকে একটু সহজ করে বলি
যীশু চান আমরা যে উপকার ও দানের কাজ করি তার বিনিময়ে যেন কিছু আশা না করি। আমাদের সমাজে যারা গরিব, শারীরিক ও মানসিকভাবে অসহায় তাদের আমরা সাহায্য করব। আমাদের এ কাজের জন্য শেষ বিচারের দিন ঈশ্বর আমাদের পুরস্কৃত করবেন।
যীশু অন্ধকে দৃষ্টি দিয়েছেন, খোঁড়াকে হাঁটার শক্তি দিয়েছেন। আমরা যীশুর মতো অলৌকিক কাজ করতে পারি না। কিন্তু আমরা গরিব প্রতিবেশীকে সাহায্য করতে পারি, অন্ধকে হাত ধরে রাস্তা পার করে দিতে পারি অথবা টাকার অভাবে যে চিকিৎসা পাচ্ছে না সামর্থ্য থাকলে তাকে আর্থিক সাহায্য নিতে পারি অথবা পাশে বসে সেবা করতে পারি। আমরা অপরকে অসংখ্য উপায়ে সেবা করতে পারি। পরের পৃষ্ঠায় দেওয়া ছবিগুলোতে কয়েকটি বাস্তব উদাহরণ দেখতে পারো।
আরও দেখুন...