পাঞ্চকার্ড

- তথ্য প্রযুক্তি - কম্পিউটার (Computer) | | NCTB BOOK

পাঞ্চকার্ড হলো একটি পুরনো ডাটা ইনপুট মাধ্যম যা প্রাথমিক কম্পিউটার এবং গণনা যন্ত্রে ব্যবহৃত হতো। এটি একটি কার্ড, যার উপর তথ্য পাঞ্চ বা ছিদ্র করা হতো এবং সেই ছিদ্রের প্যাটার্ন কম্পিউটারে ডেটা বা নির্দেশনা হিসেবে পাঠানো হতো। পাঞ্চকার্ডের উদ্ভাবন এবং ব্যবহার আধুনিক কম্পিউটার প্রযুক্তির বিকাশের একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ ছিল।

পাঞ্চকার্ডের ইতিহাস:

  • পাঞ্চকার্ডের ধারণাটি প্রথম আসে ১৮০০ সালের শুরুর দিকে, যখন জ্যাকুয়ার্ড লুম (Jacquard Loom) নামক বয়ন যন্ত্রে এটি ব্যবহৃত হয়েছিল। জোসেফ মেরি জ্যাকুয়ার্ড (Joseph Marie Jacquard) এই পদ্ধতি উদ্ভাবন করেন, যা কাপড়ে জটিল ডিজাইন বোনার জন্য ব্যবহৃত হতো। পাঞ্চকার্ডের মাধ্যমে লুমটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে ডিজাইন অনুযায়ী কাজ করত।
  • ১৮৯০ সালে হারমান হলেরিথ (Herman Hollerith) মার্কিন জনগণনা (US Census) পরিচালনার জন্য একটি পাঞ্চকার্ড-ভিত্তিক মেশিন তৈরি করেন। তার মেশিনটি মার্কিন জনগণনার ডেটা বিশ্লেষণে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়েছিল এবং পাঞ্চকার্ড ব্যবহারের নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে।
  • পরে, ১৯৫০ এবং ১৯৬০-এর দশকে, পাঞ্চকার্ড আধুনিক কম্পিউটার এবং ডেটা প্রসেসিং সিস্টেমে ইনপুট, প্রোগ্রামিং, এবং স্টোরেজ মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হতে থাকে।

পাঞ্চকার্ডের গঠন:

  • পাঞ্চকার্ড সাধারণত কাগজ বা পাতলা কার্ডবোর্ড দিয়ে তৈরি একটি আয়তাকার কার্ড, যেখানে সারি এবং কলাম আকারে ছিদ্র করার স্থান থাকে।
  • প্রতিটি ছিদ্র বা পাঞ্চ কম্পিউটারের জন্য একটি বাইনারি নির্দেশনা (১ বা ০) প্রদান করে। ছিদ্রযুক্ত স্থানে "১" এবং ছিদ্রহীন স্থানে "০" হিসাব করা হয়।
  • পাঞ্চকার্ডের উপর নির্দেশনা বা ডেটা লেখা হতো এবং পরে এটি একটি পাঞ্চকার্ড রিডার মেশিনে প্রবেশ করানো হতো। মেশিনটি কার্ডে পাঞ্চ করা তথ্য অনুযায়ী কাজ করত।

পাঞ্চকার্ডের ব্যবহার:

  • ডেটা ইনপুট: পাঞ্চকার্ড প্রাথমিকভাবে ডেটা ইনপুটের জন্য ব্যবহার করা হতো। ব্যবহারকারীরা পাঞ্চ মেশিনের সাহায্যে ডেটা বা প্রোগ্রাম পাঞ্চ করত এবং কম্পিউটারে ইনপুট দিত।
  • প্রোগ্রামিং: পাঞ্চকার্ডের মাধ্যমে প্রাথমিক কম্পিউটার প্রোগ্রাম তৈরি করা হতো। প্রোগ্রামাররা পাঞ্চকার্ডে কোড পাঞ্চ করত এবং সেটি কম্পিউটার মেশিনে ইনপুট দিত।
  • ডেটা স্টোরেজ: পাঞ্চকার্ড কিছু ক্ষেত্রে ডেটা স্টোরেজ মাধ্যম হিসেবেও ব্যবহৃত হতো, যেখানে একাধিক কার্ড একত্রে তথ্য সংরক্ষণ এবং প্রসেসিংয়ের জন্য রাখা হতো।

পাঞ্চকার্ডের গুরুত্ব:

  • পাঞ্চকার্ড আধুনিক কম্পিউটার এবং ডেটা প্রসেসিংয়ের ভিত্তি স্থাপন করে। এটি প্রথমবারের মতো মেশিনে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ডেটা ইনপুট এবং প্রসেসিংয়ের একটি কার্যকরী মাধ্যম তৈরি করেছিল।
  • পাঞ্চকার্ড ব্যবহারের মাধ্যমে গণনা এবং ডেটা প্রসেসিং অনেক দ্রুত এবং নির্ভুল হয়ে ওঠে, যা পরবর্তী সময়ে আধুনিক ক্যালকুলেটর এবং কম্পিউটারের বিকাশে সহায়ক হয়।
  • পাঞ্চকার্ডের মাধ্যমে কোড লেখা, প্রোগ্রাম তৈরি, এবং ডেটা বিশ্লেষণ একটি নতুন মাত্রায় পৌঁছে যায়, যা প্রাথমিক কম্পিউটার বিজ্ঞানীদের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।

পাঞ্চকার্ডের সীমাবদ্ধতা এবং পতন:

  • পাঞ্চকার্ড ছিল ধীর এবং সীমিত ক্ষমতাসম্পন্ন, কারণ এটি প্রচুর সময় এবং প্রচেষ্টা প্রয়োজন করত।
  • প্রতিটি পাঞ্চকার্ড শুধুমাত্র নির্দিষ্ট পরিমাণ ডেটা ধারণ করতে পারত, ফলে বড় প্রোগ্রাম বা ডেটার জন্য অনেকগুলো পাঞ্চকার্ডের প্রয়োজন হতো।
  • ১৯৭০-এর দশকে কম্পিউটারে ম্যাগনেটিক টেপ এবং ডিস্কের মতো উন্নত স্টোরেজ মাধ্যম আসার পরে পাঞ্চকার্ডের ব্যবহার কমতে থাকে এবং ধীরে ধীরে তা বন্ধ হয়ে যায়।

সারসংক্ষেপ:

পাঞ্চকার্ড কম্পিউটার প্রযুক্তির ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ ছিল। এটি ডেটা ইনপুট, প্রোগ্রামিং, এবং প্রসেসিংয়ের একটি মূল মাধ্যম হিসেবে বিবেচিত হয়। আধুনিক কম্পিউটার এবং ডেটাবেস ব্যবস্থাপনার জন্য পাঞ্চকার্ডের উদ্ভাবন ও ব্যবহার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে এবং আজকের তথ্য প্রযুক্তির বিকাশে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

Content updated By
Promotion