ডিফারেন্স ইঞ্জিন

- তথ্য প্রযুক্তি - কম্পিউটার (Computer) | NCTB BOOK

ডিফারেন্স ইঞ্জিন হলো প্রথম স্বয়ংক্রিয় যান্ত্রিক ক্যালকুলেটর যা গণিতবিদ চার্লস ব্যাবেজ (Charles Babbage) ১৮২০-এর দশকে ডিজাইন করেছিলেন। এটি গণিতের টেবিল যেমন লগারিদমিক ও ট্রিগোনোমেট্রিক টেবিল, স্বয়ংক্রিয়ভাবে গণনা ও প্রিন্ট করার জন্য তৈরি করা হয়েছিল। ডিফারেন্স ইঞ্জিনকে আধুনিক কম্পিউটারের পূর্বসূরি হিসেবে বিবেচনা করা হয়, এবং চার্লস ব্যাবেজকে "কম্পিউটারের জনক" বলা হয়।

ডিফারেন্স ইঞ্জিনের গঠন:

  • ডিফারেন্স ইঞ্জিন একটি বড় এবং জটিল যান্ত্রিক যন্ত্র, যা বিভিন্ন গিয়ার, শ্যাফট এবং লিভার দিয়ে তৈরি।
  • এটি মূলত বহুপর্যায়ের পলিনোমিয়াল ফাংশন গণনা করতে ডিজাইন করা হয়েছিল এবং এতে ব্যবহৃত গিয়ারগুলো গাণিতিক হিসাবগুলিকে পরিচালনা করত।
  • ডিফারেন্স ইঞ্জিনের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো এটি "ফিনিট ডিফারেন্স" পদ্ধতি ব্যবহার করে, যা কম্প্লেক্স ফাংশন গণনার একটি পদ্ধতি। এই পদ্ধতির মাধ্যমে গুণ বা ভাগের প্রয়োজন ছাড়াই জটিল হিসাব করা সম্ভব হয়।

ডিফারেন্স ইঞ্জিনের ইতিহাস:

  • চার্লস ব্যাবেজ প্রথমবারের মতো ১৮২২ সালে ব্রিটিশ সরকারকে এই যন্ত্রের ধারণা দেন এবং অর্থনৈতিক সহায়তা পান।
  • যদিও ব্যাবেজ এবং তার সহযোগীরা ডিফারেন্স ইঞ্জিন তৈরিতে প্রচুর সময় এবং অর্থ ব্যয় করেছিলেন, এটি সম্পূর্ণভাবে তৈরি করা সম্ভব হয়নি। এর প্রযুক্তিগত জটিলতা এবং অর্থায়নের ঘাটতির কারণে প্রকল্পটি বন্ধ হয়ে যায়।
  • ব্যাবেজ ডিফারেন্স ইঞ্জিন ২-এর (Difference Engine No. 2) একটি উন্নত সংস্করণও ডিজাইন করেছিলেন, যা ১৮৪৭-১৮৪৯ সালে তৈরি করা হয়, তবে সেটিও জীবদ্দশায় শেষ করা সম্ভব হয়নি।

ডিফারেন্স ইঞ্জিনের কার্যকারিতা:

  • ডিফারেন্স ইঞ্জিন মূলত গণিতের বিভিন্ন টেবিল যেমন লগারিদম, ট্রিগোনোমেট্রি, এবং বর্গমূল নির্ণয় করতে ডিজাইন করা হয়েছিল।
  • এই যন্ত্রটি সংখ্যাগুলোকে ইনপুট হিসেবে গ্রহণ করে, এবং যান্ত্রিক গিয়ার এবং লিভারের মাধ্যমে গণনা করে আউটপুট প্রদর্শন করত।
  • এর মাধ্যমে যান্ত্রিক পদ্ধতিতে স্বয়ংক্রিয়ভাবে বড় এবং জটিল সংখ্যাগুলি নির্ভুলভাবে হিসাব করা সম্ভব ছিল।

ডিফারেন্স ইঞ্জিনের গুরুত্ব:

  • ডিফারেন্স ইঞ্জিন আধুনিক কম্পিউটার প্রযুক্তির একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক, কারণ এটি প্রথমবারের মতো স্বয়ংক্রিয়, প্রোগ্রামেবল গণনার ধারণা প্রবর্তন করেছিল।
  • এটি গণিত এবং প্রকৌশলের ক্ষেত্রে একটি বিপ্লবী পদক্ষেপ ছিল, কারণ এটি ম্যানুয়াল গণনার ত্রুটি এবং সময়সাপেক্ষ কাজ কমিয়ে দেয়।
  • যদিও ব্যাবেজ জীবদ্দশায় ডিফারেন্স ইঞ্জিন সম্পূর্ণরূপে তৈরি করতে পারেননি, তার এই ধারণা পরবর্তী সময়ে কম্পিউটারের বিকাশে অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করে।

ডিফারেন্স ইঞ্জিনের সীমাবদ্ধতা:

  • প্রযুক্তির সীমাবদ্ধতা এবং জটিল মেকানিক্যাল ডিজাইন ডিফারেন্স ইঞ্জিন তৈরি করা কঠিন করে তুলেছিল।
  • অর্থের অভাবে এবং যথাযথ মেশিন তৈরির সরঞ্জামের অভাবে ব্যাবেজ তার প্রকল্প সম্পূর্ণ করতে পারেননি।
  • যন্ত্রটির আকার এবং ওজন খুব বড় হওয়ায় এটি ব্যবহার এবং রক্ষণাবেক্ষণও কঠিন ছিল।

ডিফারেন্স ইঞ্জিনের উত্তরাধিকার:

  • ১৯৯১ সালে লন্ডনের বিজ্ঞান জাদুঘর (Science Museum) ব্যাবেজের ডিফারেন্স ইঞ্জিন ২-এর ডিজাইন অনুযায়ী একটি পূর্ণ কার্যকরী মডেল তৈরি করে, যা প্রমাণ করে যে তার নকশাটি প্রযুক্তিগতভাবে সঠিক ছিল।
  • ব্যাবেজের ডিফারেন্স ইঞ্জিনের ধারণা আধুনিক কম্পিউটার এবং অন্যান্য গণনা যন্ত্রের বিকাশের ভিত্তি স্থাপন করে। এটি গণিতবিদ, বিজ্ঞানী, এবং প্রকৌশলীদের মধ্যে একটি বিপ্লবী ধারণা তৈরি করে যে গণনা যন্ত্রের মাধ্যমে জটিল সমস্যার সমাধান করা সম্ভব।

ডিফারেন্স ইঞ্জিনকে আধুনিক কম্পিউটার বিজ্ঞানের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্ভাবন হিসেবে ধরা হয়। ব্যাবেজের কাজ এবং তার স্বপ্ন আজকের কম্পিউটার প্রযুক্তির ভিত্তি হিসেবে বিবেচিত হয়, যা তার সময়ের অনেক আগেই ডিজাইন করা হয়েছিল।

Content added By
Content updated By
Promotion