ব্যায়াম করার আগে প্রত্যেকের নিজ দেহ সম্পর্কে জ্ঞান থাকা দরকার। স্বাস্থ্যরক্ষার প্রয়োজনে এই জ্ঞান আরও জরুরি। প্রত্যেকেরই শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ও তন্ত্রগুলো সম্পর্কে ধারণা থাকলে অঙ্গের উন্নতির জন্য নির্দিষ্ট ব্যায়াম বেছে অনুশীলন করা যায়। মাংসপেশির গতি সঞ্চালনের জন্য পাঁচ ধরনের শারীরিক সক্ষমতার দ্বারা শরীরকে উপযুক্ত করে গঠন করা যায়। যেমন—
১. শক্তি ২. গতি ৩. দম ৪. ক্ষিপ্রতা ৫. নমনীয়তা
১. শক্তি (Strength) : শক্তি বলতে হাতের মাংসপেশির উন্নতির মাধ্যমে হাতের শক্তি বৃদ্ধি করাকে বোঝায়। নিচে হাতের শক্তি বৃদ্ধি করার কয়েকটি ব্যায়াম উল্লেখ করা হলো-
ক. ডাম্বেল হাত দিয়ে ধরে উপরে উঠানো ও নামানো।
খ. চিত হয়ে শুয়ে ভার উপরে তোলা ও নামানো
গ. মাটিতে দু'হাত কাঁধ বরাবর ফাঁক রেখে পুশ আপ। আস্তে
ঘ. মেডিসিন বল ছোড়া।
আস্তে এক পা উপরের দিকে তুলে পুশ আপ ৷
ঙ. মাল্টি জিমে বিভিন্ন প্রকার হাতের ব্যায়াম করা। উল্লিখিত ব্যায়ামগুলো প্রশিক্ষকের নির্দেশে নিয়ম মাফিক করলে হাত ও কাঁধের শক্তি বৃদ্ধি পাবে।
২. গতি (Speed) : গতি বলতে দ্রুততা বোঝায়। যে যত বেশি দ্রুততার সাথে যেতে পারে তার গতি বেশি বলে ধরা হয়। গতি বৃদ্ধির জন্য পায়ের মাংসপেশির শক্তি বাড়ানোর ব্যায়াম করা প্রয়োজন। যেমন—
ক. চিত হয়ে শুয়ে পায়ের পাতার উপর ভার নিয়ে পা উপরে উঠানামা করাতে হবে।
খ. জিমনেশিয়ামে পা দ্বারা লোহার ভারকে ঠেলে ভিতরে ও বাইরে নিতে হবে।
গ. ২৫ মিটার, ৫০ মিটার দৌড় বারবার অনুশীলন করতে হবে।
ঘ. ট্রেডমিলের উপর দাঁড়িয়ে দৌড় অনুশীলন করতে হবে।
ঙ. বালির মধ্যে কিছুক্ষণ দৌড়ালেও মাংসপেশি সবল হয় ।
এভাবে অনুশীলন করলে পায়ের মাংসপেশি সবল ও বৃদ্ধি পায়। ফলে তার গতি বৃদ্ধি পাবে।
৩. দম (Stamina) : সব খেলার জন্য দম প্রয়োজন। তবে ফুটবল, লম্বা দূরত্বের দৌড়, ম্যারাথন, বাস্কেটবল এ খেলাগুলোতে দম সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। দম বাড়ানোর ব্যায়াম হলো-
ক. আস্তে আস্তে দৌড়, তবে বেশি সময় ধরে দৌড়াতে হবে।
খ. উঁচু-নিচু জায়গা দিয়ে বা অসমতল জায়গা দিয়ে দৌড়াতে হবে।
গ. প্রথম দিন ১ কিলোমিটার, ৩ দিন পর ১ কিলোমিটার, তার ৭ দিন পর ২ কিলোমিটার, এভাবে দূরত্ব বাড়িয়ে দৌড়াতে হবে।
৪. ক্ষিপ্রতা (Agility) : শরীরের ভারসাম্য বজায় রেখে অল্প জায়গার মধ্যে কে কত দ্রুততার সাথে কাজ করতে পারে তাকেই ক্ষিপ্রতা বলে।
ক. দ্রুত দৌড়ে যাওয়া ও বাঁশির সংকেতে থামা।
খ. ১০ মিটার দৌড় অত্যন্ত ক্ষিপ্রতার সাথে দৌড় দিয়ে দাগ ছুঁয়ে আসা ও যাওয়া। এভাবে সময় ধরে দৌড় অনুশীলন করতে হবে।
গ. ২০ মিটার দৌড়ের জন্য দুই মিনিট সময় নির্ধারণ করতে হবে। এই সময়ের মধ্যে কে কতবার দৌড়াতে পারে তা জেনে যে ভালো করেছে সে বিজয়ী হবে। এভাবে পায়ের শক্তি বৃদ্ধি পাবে।
৫. নমনীয়তা (Flexibility) : শরীরের নমনীয়তা বৃদ্ধি করার জন্য এই শারীরিক ব্যায়ামগুলো করতে
হবে, যেমন—
ক. একটি উঁচু বেঞ্চের উপর দাঁড়িয়ে পা সোজা রেখে শরীর বাঁকিয়ে দু'হাত কানের সাথে রেখে আস্তে আস্তে সামনের দিকে শরীর বাঁকাতে হবে। যার শরীর যত বেশি বাঁকা হবে তার নমনীয়তা তত বেশি ।
খ. চিত হয়ে শুয়ে দুই কানের কাছে দুই হাত রেখে হাঁটু ভাঁজ করে শরীর উপরের দিকে তোলা ও নামানো । একে আর্চিং বলা হয় ।
গ. মাটিতে বসে দু'পা সামনে সোজা করে রেখে দু'হাত কানের সাথে লাগিয়ে পায়ের আঙ্গুল ছোঁয়ার চেষ্টা করা। কোনো শিক্ষার্থী যদি এই ৫টি গুণ অর্জন করতে পারে তাহলে তার শারীরিক সক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে, কাজে কর্মে উৎসাহ ও পড়াশোনায় মন বসবে।
কাজ-১ : শক্তি বাড়ানোর ব্যায়ামগুলো পোস্টার পেপারে লিখে টাঙ্গিয়ে দাও । কাজ-২ : দম বাড়ানোর ব্যায়ামগুলো ধারাবাহিকভাবে বোর্ডে লিখে ব্যাখ্যা কর। |
আরও দেখুন...