আমাদের জীবনের সবক্ষেত্রেই যেহেতু ইন্টারনেটের একটি প্রভাব আছে তাই শিক্ষাক্ষেত্রেও তার একটি বড় প্রভাব থাকৰে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। তোমরা যারা স্কুলে লেখাপড়া করছ, তারা হয়তো ইতোমধ্যেই সেটি লক্ষ করেছ। তোমরা এ মুহূর্তে যে বইটি পড়ছ, সেটি প্রস্তুত করার সময় ইন্টারনেটকে ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, এ বই এবং অন্য সকল পাঠ্যবই এনসিটিবির ওয়েবসাইটে রাখা আছে। কোনো কারণে তোমার বইটি হারিয়ে গেলে যেকোনো মুহূর্তে বইটি নিজের ব্যবহারের জন্য তুমি ডাউনলোড করে নিজে পারবে।
আমাদের দেশে শিক্ষার ব্যাপারে ইন্টারনেটকে ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হয়। তোমরা তোমাদের জেএসসি পরীক্ষা শেষে পরীক্ষার ফলাফল সরাসরি ইন্টারনেট থেকে পেয়ে যাবে। পরীক্ষার পর ভর্তির জন্যও ইন্টারনেট ব্যবহার করা হয়। বিভিন্ন স্কুল কলেজের তথ্যও ইন্টারনেট থেকে পাওয়া যায়। দেশের অসংখ্য স্কুলকে পরিচালনা করার জন্যও ইন্টারনেটকে ব্যবহার করা হয়।
শিক্ষাব্যবস্থা পরিচালনা করা ছাড়াও সরাসরি শিক্ষার ব্যাপারে ইন্টারনেটের বড় ভূমিকা রয়েছে। তোমার পাঠ্যবইয়ের কোনো একটি নির্দিষ্ট বিষয় বুঝতে না পারলে তুমি ইন্টারনেটের সাহায্য নিতে পারবে, সেখানে কোথাও না কোথাও তুমি সেই বিষয়টি সম্পর্কে তথ্য পেয়ে যাবে। কোনো কারণে তথ্য না পেলে ইন্টারনেটে ভূমি কাউকে না কাউকে সেই প্রশ্নটি করতে পারবে। ইন্টারনেটে এক বা একাধিক মানুষ তোমাকে উত্তরটি দিতে পারবে। এক সময় ইন্টারনেটে তথ্য খোঁজার জন্য সবকিছু ইংরেজিতে লিখতে হতো এবং তথ্যগুলো থাকতো ইংরেজিতে। কিন্তু এখন আর সেটি সত্যি নয়। আমাদের বাংলাদেশে পিপীলিকা নামে বাংলা সার্চ ইঞ্জিন তৈরি হয়েছে এবং তোমরা ইচ্ছে করলে বাংলাতে লিখেই তোমাদের প্রয়োজনীয় কিছু ইন্টারনেট থেকে খুঁজে নিতে পারবে। বাংলার তথ্য দেওয়া নেওয়ার জন্য ইন্টারনেটের বাংলা তথ্যভাণ্ডারকে অনেক সমৃদ্ধ করতে হবে। অনেকের প্রচেষ্টায় ধীরে ধীরে তার কাজ এগিয়ে যাচ্ছে।
২০২০ এর শুরুর দিকে বিশ্বব্যাপি করোনা মহামারীর কারণে জনগণের নিরাপত্তার স্বার্থে সরকার সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সরাসরি শিক্ষা কার্যক্রম সাময়িকভাবে বন্ধ ঘোষণা করে। এই সময় ইন্টারনেট প্রযুক্তি ব্যবহার করে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণে অনলাইনে ক্লাসসমূহ সুচারুভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব হয়। এতে শিক্ষার্থীরা তাদের পড়াশোনা চালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। তথ্য প্রযুক্তির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ যে অভূতপূর্ব অগ্রগতি অর্জন করেছে, এটি তারই অবদান।
শিক্ষার বিশেষ করে বিজ্ঞান শিক্ষার আমাদের নানা ধরনের পরীক্ষা বা এক্সপেরিমেন্ট করতে হয়। অনেক ক্ষেত্রে পরীক্ষাটি কীভাবে করা যায় তার একটি কাল্পনিক (Virtual) প্রদর্শন করা সম্ভব। এই বিষয়গুলো ব্যক্তিগতভাবে একজন বা একটি প্রতিষ্ঠানের পক্ষে গড়ে তোলা সব নগ্ন। সম্মিলিতভাবে গড়ে তোলা জ্ঞানভাণ্ডার ইন্টারনেটে রয়েছে, তাই বিজ্ঞানের অনেক এক্সপেরিমেন্ট যেটি আগে তোমার পক্ষে করা স্য ছিল না এখন তুমি সেটি করার একটি সুযোগ পেতে পারবে।
ইন্টারনেটের কারণে এখন শুধু তোমাদের ক্লাসরুম কিংবা স্কুলের শিক্ষকদের মাঝে সীমাবদ্ধ থাকতে হবে না। আজকাল অসংখ্য চমকপ্রদ কোর্স ইন্টারনেটে দেওয়া আছে এবং যে কেউ সেই কোর্সগুলো গ্রহণ করতে পারে। শুধু স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে কোর্স দেওয়া হয় তা নয়। মহাকাশে যে স্পেস স্টেশন রয়েছে, সেখানেও শিক্ষার্থীরা মহাকাশযাত্রীদের ভরশূন্য পরিবেশে কোনো একটি পরীক্ষা করে দেখাতে অনুরোধ করতে পারে। মহাকাশচারীরা আনন্দের সাথে সেটি করে দেখান। শিক্ষার্থীরা সেগুলো দেখে নতুন কিছু শিখতে পারে। তোমরা বুঝতেই পারছ ইন্টারনেট এখন শুধু পৃথিবীৰ্য্যাপী লয়, পৃথিবীকে ছাপিয়ে মহাকাশ পর্যন্ত কিস্তৃত হয়েছে।
আমরা এখন কাগজে ছাপা বইয়ে অভ্যস্ত। কিন্তু খুব দ্রুত ই-বুক কাগজে ছাপা এ-বইগুলোর জায়গা দখল করে নিতে যাচ্ছে। পৃথিবীর যাবতীর বই ই-বুক আকারে সংরক্ষিত থাকবে এবং একজন সেই বইগুলো তার ই-বুক রিডারে ডাউনলোড করে নিতে পারবে। এক সময় একজন মানুষকে শুধু যে কয়টা বই বহন করতে পারত সে কয়টা বই নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হতো। এখন মানুষ যে কোনো মুহূর্তে ইন্টারনেটের কারণে তার প্রয়োজনীয় বইয়ের সাথে যোগাযোগ রাখতে পারে। শুনে অবিশ্বাস্য মনে হতে পারে, ইচ্ছে করলে তুমি তোমার পকেটে একটি বই নয় আস্ত একটা লাইব্রেরি রেখে দিতে পারবে।
দলগত কাজ : তোমাদের স্কুলে একটি ই-বুক ক্লাব গড়ে তোলার জন্য কী কী বিষয় প্রয়োজন তার একটি তালিকা তৈরি কর।
নতুন শিখলাম : সার্চ ইঞ্জিন, স্পেস স্টেশন।
Read more