প্রতিটি মৌলের আলাদা আলাদা পরমাণু রয়েছে, যেমন হাইড্রোজেন গ্যাসের পরমাণু অক্সিজেন গ্যাসের পরমাণু থেকে আলাদা। একটি মৌলের পরমাণু থেকে আরেকটি মৌলের পরমাণুর মধ্যে আকার, ভর ও ধর্মে পার্থক্য হয়ে থাকে। কেন এই পার্থক্য? পরমাণুতে প্রোটন বা ইলেকট্রনের সংখ্যার পার্থক্যের কারণে পরমাণুসমূহের মধ্যে পার্থক্য হয়ে থাকে। পরমাণুতে ইলেকট্রন ও প্রোটনের সংখ্যা সমান থাকে। তবে কোনো মৌলের পরমাণুর বৈশিষ্ট্যকে বোঝানোর জন্য প্রোটনের সংখ্যা ব্যবহার করা হয়।
কোনো মৌলের একটি পরমাণুতে প্রোটনের সংখ্যাকে পারমাণবিক সংখ্যা বলা হয়। হাইড্রোজেনের একটি পরমাণুতে একটি প্রোটন আছে। তাই হাইড্রোজেনের পারমাণবিক সংখ্যা ১। অক্সিজেনের একটি পরমাণুতে ৮টি প্রোটন আছে। তাই অক্সিজেনের পারমাণবিক সংখ্যা ৮। পারমাণবিক সংখ্যা থেকে কী কী তথ্য পাওয়া যায় বলতে পার?
কার্বনের পারমাণবিক সংখ্যা ৬, এ থেকে কী তথ্য পাওয়া যায়? পারমাণবিক সংখ্যা যেহেতু কোনো মৌলের প্রোটনের সংখ্যা, তাই বোঝা যায় কার্বনের একটি পরমাণুতে ৬টি প্রোটন আছে। একটি পরমাণুতে যেহেতু প্রোটন আর ইলেকট্রনের সংখ্যা সমান, তাই বোঝা যায় কার্বনের একটি পরমাণুতে ৬টি ইলেকট্রন আছে।
কোনো মৌলের পারমাণবিক সংখ্যা থেকে বোঝা যায় কি ঐ মৌলের পরমাণুতে কয়টি নিউট্রন আছে? না, নিউট্রন সংখ্যা জানা যায় না। নিউট্রন সংখ্যা জানতে হলে মৌলের পারমাণবিক সংখ্যা ও ভরসংখ্যা জানতে হবে। একটি পরমাণুতে ইলেকট্রনের ভর নগণ্য। পরমাণুর প্রায় সবটুকু ভর তার নিউক্লিয়াসে থাকে। অর্থাৎ কোনো পরমাণুর ভর তার প্রোটন ও নিউট্রনের ভর। আবার নিউট্রন ও প্রোটনের ভর প্রায় সমান। কোনো মৌলের পরমাণুতে প্রোটন ও নিউট্রনের সমষ্টিকে ভরসংখ্যা হিসাবে প্রকাশ করা হয়। অর্থাৎ
কোনো মৌলের ভরসংখ্যা ঐ মৌলের পরমাণুতে প্রোটনের সংখ্যা + নিউট্রনের সংখ্যা
যেমন অক্সিজেন পরমাণুতে ৮টি প্রোটন আর ৮টি নিউট্রন থাকে। তাই অক্সিজেনের ভরসংখ্যা ১৬। আবার সোডিয়ামের একটি পরমাণুতে ১১টি প্রোটন আর ১২টি নিউট্রন আছে। তাই সোডিয়ামের ভরসংখ্যা ১১+১২=২৩। পূর্বেই বলা হয়েছে যে, পারমাণবিক সংখ্যা ও ভরসংখ্যা জানা থাকলে নিউট্রন সংখ্যা জানা যায়। নিচের উদাহরণ থেকে তোমরা এটি ভালোভাবে বুঝতে পারবে।
উদাহরণ : ক নামক একটি মৌলের পারমাণবিক সংখ্যা ১৭ ও ভরসংখ্যা ৩৫। ঐ মৌলের একটি পরমাণুতে কয়টি করে ইলেকট্রন, প্রোটন ও নিউট্রন আছে?
সমাধান : ক মৌলটির পারমাণবিক সংখ্যা ১৭। কোনো মৌলের পারমাণবিক সংখ্যা আসলে ঐ মৌলের একটি পরমাণুতে প্রোটনের সংখ্যা। তাই এক্ষেত্রে ক মৌলটির পরমাণুতে প্রোটন আছে ১৭টি।
আবার কোনো পরমাণুতে প্রোটন আর ইলেকট্রনের সংখ্যা সমান। তাই ক মৌলের একটি পরমাণুতে ইলেকট্রন রয়েছে ১৭টি।
কোনো পরমাণুর প্রোটনের সংখ্যা + নিউট্রনের সংখ্যা ঐ মৌলের ভরসংখ্যা
অর্থাৎ ক মৌলের নিউট্রনের সংখ্যা = ক মৌলের ভরসংখ্যা – ক মৌলের প্রোটন সংখ্যা
অতএব, ক মৌলের নিউট্রনের সংখ্যা = ৩৫ – ১৭ = ১৮
আইসোটোপ : তোমরা ইতোমধ্যেই জেনেছ যে, একটি মৌলের প্রতিটি পরমাণুতে নির্দিষ্ট সংখ্যক প্রোটন ও ইলেকট্রন থাকে। কিন্তু একটি মৌলের সকল পরমাণুর ভর এক নাও হতে পারে। কারণ একটি মৌলের পরমাণুতে বিভিন্ন সংখ্যায় নিউট্রন থাকতে পারে। যেমন হাইড্রোজেনের সকল পরমাণুতে একটি করে প্রোটন ও ইলেকট্রন থাকে। নিচের চিত্রগুলো দেখ।
হাইড্রোজেনের বেশিরভাগ পরমাণুতে কোনো নিউট্রন নেই (ক চিত্রের পরমাণু)। তাই এদের ভরসংখ্যা ১ । কিন্তু খ চিত্রের পরমাণুটির মতো হাইড্রোজেনের কিছু পরমাণুতে একটি নিউট্রন থাকে। এদের ভরসংখ্যা ২। আবার গ চিত্রের পরমাণুটির মতো হাইড্রোজেনের কিছু পরমাণুতে দুটি নিউট্রন থাকে। এদের ভরসংখ্যা ৩। চিত্রের তিনটি পরমাণু হাইড্রোজেনের তিনটি আইসোটোপ। এরকমভাবে, কোনো মৌলের ভিন্ন ধরনের পরমাণু
যাদের প্রোটন বা পারমাণবিক সংখ্যা সমান কিন্তু ভরসংখ্যা ভিন্ন তাদেরকে ঐ মৌলের আইসোটোপ বলে।
কার্বনের বেশিরভাগ পরমাণুতে ৬টি প্রোটন ও ৬টি নিউট্রন রয়েছে। কিন্তু কার্বনের কিছু পরমাণুতে ৭টি বা ৮টি নিউট্রনও থাকে। তাই কার্বনের তিনটি আইসোটোপ রয়েছে।
আরও দেখুন...