পিতা-মাতার খেদমত

পঞ্চম শ্রেণি (প্রাথমিক) - ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা - আখলাক বা চরিত্র ও নৈতিক মূল্যবোধ | | NCTB BOOK
33
33

এই পৃথিবীতে পিতা-মাতার চেয়ে আপনজন আমাদের আর কেউ নেই। পিতামাতার ওছিলাতেই আমরা দুনিয়াতে এসেছি। তাঁদের স্নেহ ও আদরে আমরা লালিত-পালিত এবং বড় হয়েছি। তাঁরা ভালোবাসা ও মমতা দিয়ে আমাদের বড় করে তোলেন। শিশুকালে আমাদের মলমূত্র পরিষ্কার করেন। আমাদের অসুখ-বিসুখ হলে অনেক সেবাযত্ন করেন । আমাদের আনন্দে তাঁরা আনন্দ পান। আমাদের দুঃখ-কষ্টে তাঁরাও দুঃখ-কষ্ট পান। তাঁরা সব সময় আমাদের কল্যাণ ও মঙ্গল কামনা করেন। আমাদের সুস্থতা ও সুখ-সমৃদ্ধির জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করেন। এহেন হিতাকাঙ্ক্ষী পিতা-মাতার প্রতি আমাদের অনেক দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে।

আমরা সবসময় পিতা-মাতার খেদমত করব। পিতা-মাতার সাথে ভালো ব্যবহার করব। তাঁদের আদেশ-নিষেধ শুনব এবং মেনে চলব। তাঁদের সম্মান দেখাব। তাঁদের সেবাযত্ন করব। তাঁরা অসুস্থ হলে সেবা করব। চিকিৎসার ব্যবস্থা করব। তাঁরা যাতে সুখে- শান্তিতে জীবনযাপন করতে পারেন, সেদিকে খেয়াল রাখব। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন,

অর্থ: তোমরা পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার কর।

আমরা পিতা-মাতার মনে সামান্যতম কষ্ট দেব না। দুঃখ দেব না। তাঁদের সামনে গালিগালাজ করব না। তাঁদের কটু কথা বলব না এবং গালি দেব না । তাঁদের মন্দ বলব না। তিরস্কার করব না। তাঁদের সাথে খারাপ ব্যবহার করব না। আমরা তাঁদের সামনে বা অগোচরে এমন কথা বলব এবং এমন কাজ করব যা তাঁরা দেখলে বা শুনলে খুশি হন। তাঁরা খুশি হলে আল্লাহও আমাদের ওপর খুশি হবেন। মহানবি (স) বলেছেন-

অর্থ: পিতার সন্তুষ্টিতে প্রতিপালকের সন্তুষ্টি আর পিতার অসন্তুষ্টিতে প্রতিপালকের অসন্তুষ্টি।

পিতা-মাতা বৃদ্ধ হয়ে গেলে সন্তানের ওপর বেশি নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। এ সময় যাতে তাঁদের সামান্যতম দুঃখ-কষ্ট ও অসুবিধা না হয়, সেদিকে সব সময় খেয়াল রাখব। তাঁদের মৃত্যুর পর তাঁদের জন্য আল্লাহর ওয়াস্তে দান-খয়রাত করব। তাঁদের মাগফিরাতের জন্য আল্লাহর কাছে সর্বদা নিম্নোক্ত দোয়া করব:

অর্থ: হে আমার প্রতিপালক। পিতা-মাতা আমাকে যেমন শৈশবে স্নেহ-যত্নে লালন-পালন করেছেন, আপনি তাঁদের প্রতি ঠিক তেমনি দয়া করুন ।

এখন আমরা পিতা-মাতার খেদমতের ব্যাপারে একটি আদর্শ কাহিনী জানব :

হযরত বায়েজিদ বোস্তামী (র) ইরানের অধিবাসী ছিলেন। তিনি আম্মাকে সব সময় খেদমত করতেন। সেবাযত্ন করতেন। তাঁর আম্মাও তাকে খুবই আদর-স্নেহ করতেন। একদা তাঁর আম্মা অসুস্থ ছিলেন। তিনি তাঁর পুত্রের কাছে পানি চাইলেন। পুত্র বায়েজিদ আশপাশে কোথাও পানি পেলেন না। অবশেষে নদী থেকে পানি আনলেন। পানি নিয়ে আসতে একটু দেরি হয়েছে। তাঁর আম্মা ঘুমিয়ে পড়েছেন। শীতের সময় ছিল তখন। বায়েজিদ (র) ভাবলেন আম্মাকে ঘুম থেকে জাগিয়ে উঠালে তিনি কষ্ট পাবেন। তাঁর ঘুমের ব্যাঘাত হবে, তাই তিনি সারারাত পানির পাত্র হাতে নিয়ে মায়ের শিয়রে দাঁড়িয়ে থাকলেন। কনকনে শীত। শীতে তার হাত অবশ হয়ে আসছিল। কিন্তু তবু তিনি আম্মাকে ডাকলেন না । ঘুম ভাঙালেন না। দাঁড়িয়ে রইলেন।

শেষ রাতে আম্মার ঘুম ভেঙে গেল। তিনি ঘুম থেকে জেগে উঠলেন। শিয়রে তাঁর ছেলেকে পানির পাত্র হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলেন। তিনি অবাক হলেন এবং খুব খুশি হলেন। তিনি প্রাণভরে ছেলের জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করলেন। আল্লাহ মায়ের দোয়া কবুল করলেন। পরবর্তীতে ছেলেটি আল্লাহর বিশ্ববিখ্যাত ওলি বায়েজিদ বোস্তামী নামে পরিচিত হলেন। আর এটাই নৈতিক মূল্যবোধের একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত ।

এভাবে পিতা-মাতার খেদমত করলে আল্লাহর রহমত লাভ করা যায়। পিতা-মাতার খেদমত ও সেবাযত্নের মধ্যে রয়েছে দুনিয়া ও আখিরাতের চরম সুখশান্তি। মহানবি (স) বলেছেন,

অর্থ: মায়ের পদতলে সন্তানের জান্নাত।

পরিকল্পিত কাজ : শিক্ষার্থীরা পিতা-মাতার খেদমত সম্পর্কে জানবে। পরস্পর আলোচনা করবে এবং খাতায় লিখবে।

Content added By
Promotion