পৃথিবীতে আমরা আকাশে সারা বছর বিভিন্ন রকম মেঘ দেখতে পাই। বর্ষাকালে আকাশ একটু বেশি মেঘলা থাকে এবং এলাকাভেদে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। এর কারণ হলো, পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের মেঘ মূলত পানির অতি ক্ষুদ্র কণা দ্বারা গঠিত। তবে পৃথিবীর বাইরে মহাকাশেও এক ধরনের মেঘ রয়েছে, যাকে নেবুলা (Nebula) বলা হয়। এসব নেবুলা পৃথিবীর মেঘের, পৃথিবীর কিংবা সূর্য বা সৌরজগত থেকেও অনেক বড় আকারের হয়ে থাকে। নেবুলা মূলত তৈরি হয়েছিল হাইড্রোজেন ও হিলিয়াম গ্যাস দিয়ে, তার সঙ্গে সামান্য পরিমাণে অন্যান্য মৌলও থাকে। সৌরজগতের সৃষ্টি হয়েছে এমনই এক নেবুলা থেকে। সেই নেবুলার অধিকাংশ নিয়ে প্রায় ৫০০ কোটি বছর আগে সৃষ্টি হয়েছে সৌর জগতের একমাত্র নক্ষত্র সূর্য। সূর্য গঠিত হওয়ার সময় বা তার কিছু পরে নেবুলার বাকি উপাদান নিয়ে তৈরি হয় পৃথিবী ও অন্যান্য গ্রহ, উপগ্রহ, উল্কা, ধূমকেতু ইত্যাদি।
এখন আমাদের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে যে, নেবুলা থেকে সৌরজগতের সৃষ্টি হয়েছে কীভাবে। মহাবিশ্বের প্রত্যেকটি বস্তু অন্য আরেকটি বস্তুকে মহাকর্ষ বল দিয়ে আকর্ষণ করে। এই আকর্ষণ নির্ভর করে বস্তুগুলোর ভর এবং সেগুলোর মধ্যে দূরত্বের উপর। এই আকর্ষণের কারণে আমরা উপরে লাফ দিলেও আবার মাটিতে এসে পড়ি কিংবা একটি ঢিল আকাশের দিকে ছুড়ে মারলেও তা আবার নিচে এসে পড়ে। নেবুলার ক্ষেত্রেও কেন্দ্রে যেখানে গ্যাস ঘন অবস্থায় ছিল বা গ্যাসের অণু পরমাণুগুলো কাছাকাছি ছিল, মহাকর্ষ বলের কারণে সেখানে বাকি গ্যাস জড়ো হতে শুরু করে। নেবুলার গ্যাস ক্রমাগত জড়ো হওয়ার কারণে কেন্দ্রে ভর বাড়তে থাকে এবং তখন সেখানে আরো বেশি গ্যাস ও মহাজাগতিক ধূলিকণা আকর্ষণ করতে থাকে। একপর্যায়ে সেখানে তাপ ও চাপ এত বেড়ে যায় যে ফিউশন (fusion) নামক বিক্রিয়ার মাধ্যমে তাপ ও আলো সৃষ্টি হতে থাকে এবং সূর্য একটি নক্ষত্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। বাকি যে গ্যাস ও ধূলিকণা অবশিষ্ট থাকে, সেগুলো সূর্যকে কেন্দ্র করে ঘুরতে থাকে এবং এক পর্যায়ে পৃথিবীসহ অন্যান্য গ্রহ সৃষ্টি হয়। এই পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে শুরু করেছে আজ থেকে অন্তত ৪৫০ কোটি বছর আগে। প্রাথমিক অবস্থায় পৃথিবী অনেক উত্তপ্ত ছিল। সেই সময় পৃথিবীর উপরিভাগ ছিল তরল এবং প্রবহমান। সময় প্রবাহের সঙ্গে সঙ্গে পৃথিবী ঠান্ডা হতে থাকে। এর বাইরের অংশ শক্ত হয়ে তৈরি হয় ভূত্বক। ভূত্বক আবার অনেকগুলো ছোট বড় প্লেটে বিভক্ত যা ক্রমাগত অতি ধীরে নড়াচড়া করছে।
আরও দেখুন...