পেঁপে চাষ পদ্ধতি (পাঠ ৬)

সপ্তম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - কৃষিশিক্ষা কৃষিজ উৎপাদন | - | NCTB BOOK
79
79

পেঁপে অত্যন্ত সুস্বাদু, পুষ্টিকর ও ঔষধি গুণসম্পন্ন ফল। কাঁচা অবস্থায় তরকারি এবং পাকা অবস্থায় ফল হিসেবে খাওয়া হয়। সারা বছর পেঁপে পাওয়া যায়।

পেঁপের জাত: আমাদের দেশে শাহী, রাঁচি, ওয়াশিংটন, হানিডিউ, পুষা এবং বিদেশ থেকে আমদানি করা বিভিন্ন ধরনের হাইব্রিড জাতের পেঁপে চাষ করা হয়।

জমি নির্বাচন ও তৈরি : উঁচু ও মাঝারি উঁচু দোআঁশ বা বেলে দোআঁশ মাটি পেঁপে চাষের জন্য উত্তম। তবে উপযুক্ত পরিচর্যার দ্বারা প্রায় সব ধরনের মাটিতেই পেঁপের চাষ করা যায়। জমি ৩/৪ বার উত্তমরূপে চাষ দিতে হয়। পেঁপে জলাবদ্ধতা সহ্য করতে পারে না।

চারা তৈরি: ভালো মিষ্টি পেঁপে থেকে বীজ সংগ্রহ করে বীজের উপরের সাদা আবরণ সরিয়ে টাটকা অবস্থায় বীজতলায় বা পলিথিন ব্যাগের মাটিতে বীজ বপন করতে হয়। বীজ বপনের পর প্রয়োজনীয় পানি সেচ দিতে হয়। ১৫-২০ দিনের মধ্যে চারা গজায়।

চারা রোপণ পদ্ধতি: পেঁপে সারা বছর চাষ করা যায়। তবে বাণিজ্যিকভাবে চাষের জন্য আশ্বিন-কার্তিক বা ফাল্গুন-চৈত্র মাস উত্তম সময়। নির্বাচিত সময়ের দুই মাস আগে চারা তৈরির জন্য বীজ বপন করতে হয়। দেড় থেকে দুইমাস বয়সের চারা রোপণ করা হয়। ২ মিটার দূরে দূরে ৬০ সেমি × ৬০ সেমি × ৬০ সেমি আকারের মাদা তৈরি করে চারা রোপণ করা হয়। রোপণের ১৫ দিন পূর্বে মাদার মাটিতে সার মেশাতে হয়।

সার প্রয়োগ পদ্ধতি: প্রতিটি মাদায় ৫০০ গ্রাম টিএসপি, ২৫০ গ্রাম জিপসাম, ২৫ গ্রাম বোরাক্স, ২০ গ্রাম জিংক সালফেট এবং ১৫ কেজি জৈব সার মাটির সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে দিতে হবে। চারা লাগানোর পর গাছে নতুন পাতা এলে ইউরিয়া ও এমওপি সার ৫০ গ্রাম করে প্রতি এক মাস অন্তর প্রয়োগ করতে হবে। গাছে ফুল এলে এ মাত্রা দ্বিগুণ করা হয়। শেষ ফল সংগ্রহের এক মাস পূর্বেও এমওপি ও ইউরিয়া সার প্রয়োগ করতে হয়।

অন্তর্বর্তীকালীন পরিচর্যা: একলিঙ্গ জাতের ক্ষেত্রে প্রতি মাদায় ৩টি চারা রোপণ করা হয়। ফুল এলে ১টি সত্রী গাছ রেখে বাকি গাছ তুলে ফেলতে হবে। পরাগায়নের সুবিধার জন্য বাগানে ১০% পুরুষ গাছ রাখা হয়। ফুল হতে ফল ধরা নিশ্চিত মনে হলে একটি বোঁটায় একটি ফল রেখে বাকিগুলো ছিঁড়ে ফেলতে হয়। গাছ যাতে ঝড়ে না ভাঙে তার জন্য বাঁশের খুটি দিয়ে গাছ বেঁধে দিতে হবে।

রোগ-পোকা ও প্রতিকার : বীজতলা বা পলিব্যাগের মাটি সেঁতসেঁতে থাকলে চারার ঢলে পড়া এবং সুষ্ঠু নিকাশ ব্যবস্থার অভাবে বর্ষার সময় মাঠে বয়ষ্ক গাছে কান্ড পচা রোগ দেখা দিতে পারে। ছত্রাকজনিত এ রোগ দমনের জন্য গাছের গোড়ার পানি নিকাশের ভালো ব্যবস্থা রাখতে হয়, রোগাক্রান্ত চারা গাছ মাটি থেকে উঠিয়ে পুড়িয়ে ফেলতে হয়। পেঁপে গাছে মোজাইক ভাইরাস ও পাতা কোঁকড়ানো ভাইরাস রোগ দেখা দিতে পারে। মোজাইক রোগে পাতা হলদেভাব ও মোজাইকের মতো মনে হয়। এসব রোগে পাতার ফলক পুরু ও ভঙ্গুর হয়ে যায়। বাগানে কোনো গাছে ভাইরাস দেখা দিলে তা সাথে সাথে উপড়িয়ে পুঁতে ফেলতে হবে।

ফল সংগ্রহ: ফলের কষ জলীয়ভাব ধারণ করলে সবজি হিসেবে সংগ্রহ করা যায়। ফলের ত্বক হালকা হলদে বর্ণ ধারণ করলে পাকা ফল হিসেবে সংগ্রহ করা হয়। জাত ভেদে ফলনে পার্থক্য দেখা যায়। তবে শাহী পেঁপের ফলন প্রতি হেক্টরে ৪০-৫০ টন হয়।

কাজ: পেঁপের চারা উৎপাদন ও চারা রোপণ পদ্ধতি সম্পর্কে খাতায় লেখ এবং শ্রেণিকক্ষে উপস্থাপন কর।

নতুন শব্দ: বোরাক্স সার, ভাইরাস রোগ, মাদা তৈরি

Content added By
Promotion