প্রথম পত্র (নবম শ্রেণি)

এসএসসি(ভোকেশনাল) - উইভিং-১ - | NCTB BOOK
Please, contribute by adding content to প্রথম পত্র (নবম শ্রেণি).
Content

টেক্সটাইল ফাইবার

ভূমিকা (Introduction)-

আমাদের দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে টেক্সটাইল পণ্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। পোশাকশিল্প, পাটজাত পণ্য, কাপড় ও কাঁচা পাট ইত্যাদি আমাদের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে প্রধান খাত। অন্ন, বস্ত্র, আশ্রয়, মানুষের এই তিনটি মৌলিক চাহিদার মধ্যে বস্ত্রের স্থান দ্বিতীয়। বস্ত্র ছাড়া সভ্য মানুষ এক মুহূর্তও চলতে পারে না। কাজেই মানবজীবনে বস্ত্রের গুরুত্ব অপরিসীম। আর এই বস্ত্র তৈরির জন্য বিভিন্ন ধাপ অতিক্রম করে ফাইবার হতে পরিধান উপযোগী কাপড় ও পোশাক তৈরি করা হয়। টেক্সটাইল শিক্ষায় বস্ত্র তৈরির ধাপসমূহকে চারটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। ইয়ার্ন ম্যানুফ্যাকচারিং, ফেব্রিক ম্যানুফ্যাকচারিং, ওয়েট প্রসেসিং এবং গার্মেন্টস প্রোডাকশন।

ইয়ার্ন ম্যানুফ্যাকচারে টেক্সটাইল ফাইবার থেকে সুতা প্রস্তুত, ফেব্রিক ম্যানুফ্যাকচারে সুতা থেকে কাপড় প্রস্তুত, ওয়েট প্রসেসিং-এ গ্রে কাপড়কে ব্যবহার উপযোগী ফিনিসড কাপড়ে পরিণত এবং গার্মেন্টস প্রোডাকশনে ফিনিসড কাপড় থেকে পোশাক প্রস্তুতকরণ বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। উইভিং ট্রেড নলেজ বিষয়ে ফাইবার হতে সুতা প্রস্তুতসহ ব্যবহার উপযোগী ফিনিসড কাপড় প্রস্তুতের ধারণা প্রদান করা হয়েছে। শিক্ষার্থীরা এই বই অধ্যয়ন করে টেক্সটাইল শিক্ষা সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা পাবে সে উদ্দেশ্যেই এই পাঠ্য সূচি তৈরি করা হয়েছে। কাপড় তৈরি করার কাঁচামাল হিসেবে সুতার প্রয়োজন এবং সুতা তৈরির কাঁচামাল হিসেবে টেক্সটাইল গুণাগুণসম্পন্ন আঁশ বা ফাইবারের প্রয়োজন। কাজেই শিক্ষার্থীর সুতা বা কাপড় তৈরির পূর্বে টেক্সটাইল ফাইবার সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা থাকা প্রয়োজন।

সাধারণত আঁশ বা ফাইবারের প্রস্থ এর চেয়ে দৈর্ঘ্য অনেক বেশি। পৃথিবীতে অনেক ধরনের আঁশ পাওয়া সম্ভব। কিন্তু টেক্সটাইল সুতা বা বস্ত্র তৈরির গুণাগুণ রয়েছে এ রকম ফাইবার মাত্র কিছু সংখ্যক ফাইবারের মধ্যে রয়েছে। আঁশের মধ্যে সর্বপ্রথম যে সমস্ত গুণাগুণ থাকা প্রয়োজন তার মধ্যে প্রধান গুণাগুণ হলো আঁশের দৈর্ঘ্য ও শক্তি। দৈর্ঘ্য ও শক্তি ছাড়া কোনো টেক্সটাইল পণ্য উৎপাদন করা সম্ভব নয়। তবে ম্যানমেড ফাইবারের ক্ষেত্রে দৈর্ঘ্য কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয়। কারণ সুতা তৈরি করার সময় প্রয়োজনীয় দৈর্ঘ্য অনুযায়ী কেটে নিলেই হয়। বর্তমান বিশ্বে প্রাকৃতিক ও কৃত্রিম উভয় প্রকার ফাইবারই বাণিজ্যিক ভিত্তিতে প্রচুর পরিমাণ ব্যবহৃত হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে কটন ফাইবারের তৈরি সুতা, কাপড় ও পোশাক-এর একটা উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রয়েছে। তবে আমাদের দেশে কটন ফাইবার অর্থাৎ তুলা প্রচুর পরিমাণে জন্মে না। তাছাড়া যা জন্মে তাও কোয়ালিটির দিক থেকে উন্নতমানের নয়। আঁশের দৈর্ঘ্য কম, শক্তিও তেমন ভালো নয়। কাজেই ভালো তুলার জন্য আমাদের বিদেশের উপর নির্ভর করতে হয়। ফলে বৈদেশিক মুদ্রার অপচয় হয়। পাশাপাশি অধিকমূল্যের কাঁচামাল ক্রয় করার জন্য উৎপাদন খরচও বেড়ে যায়। ফলে পার্শ্ববর্তী দেশসমূহের সাথে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়ে।

এক সময়ের বাংলাদেশের গোল্ডেন ফাইবার নামে পরিচিত পাটও বাংলাদেশ থেকে আস্তে আস্তে হ্রাস পেতে শুরু করছে। পাটের আঁশ মোটা হলেও এ আঁশ দ্বারা যে কাপড় তৈরি হয় তার ব্যবহার বহুবিধ এবং মূল্যও অনেক কম। এছাড়া জুট ফাইবার দ্বারা তোয়ালে, সুতা, বস্তা, ব্যাগ, হেসিয়ান ও স্যাকিং কাপড় ইত্যাদি তৈরি হচ্ছে। এই প্রাকৃতিক আঁশ পরিবেশের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়ায় এবং পরিবেশের শত্রু পলিথিনের ব্যবহার নিষিদ্ধ হওয়ায় সাধারণ মানুষ জুট ফাইবারের তৈরি সামগ্রী ব্যবহারের দিকে কিছুটা দৃষ্টি দিয়েছে। ফলে পাটজাত পণ্য পাটশিল্প বিলুপ্ত হওয়া থেকে রক্ষা পেয়েছে। এ ছাড়া বর্তমান সরকার পাটশিল্প রক্ষার জন্য ২০১০ সালে 'পণ্যে পাটজাত মোড়কের বাধ্যতামূলক ব্যবহার আইন ২০১০' প্রবর্তন করেছে। যার ফলে পাটশিল্প রক্ষা পাবে, পাশাপাশি পাটের বহুমুখী ব্যবহার বৃদ্ধি পাবে এবং যেহেতু পাট পরিবেশবান্ধব, কাজেই পরিবেশের সাথে ক্ষতিকারক কৃত্রিম আঁশ পরিহার করে পণ্যে পাটজাত মোড়কের বাধ্যতামূলক ব্যবহারের কারণে পাটশিল্পও ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা পাবে। বর্তমান বিশ্বে বাংলাদেশ পাট রপ্তানিতে প্রথম ও উৎপাদনে দ্বিতীয় স্থানে।

টেক্সটাইল ফাইবার (Textile Fibre)-

আমাদের দৈনন্দিন জীবনের সাথে টেক্সটাইল শব্দটি ওতপ্রোতভাবে জড়িত। কাজেই টেক্সটাইল সম্বন্ধে প্রত্যেকের কিছু না কিছু জানা দরকার। তাতে ব্যবহারকারীগণ অর্থাৎ আমরা কিছুটা লাভবান হব।

কাপড় তৈরির জন্য সুতা প্রয়োজন। আর সুতা তৈরিতে কাঁচামাল হিসেবে ফাইবার ব্যবহার করা হয়। আমরা প্রাকৃতিকভাবে অনেক আঁশ দেখতে পাই। কিন্তু সমস্ত আঁশই টেক্সটাইল ফাইবার নয়। টেক্সটাইল ফাইবার হতে হলে ফাইবার বা আঁশে কিছু গুণাবলি থাকা প্রয়োজন ।

যেসব ফাইবারে ন্যূনতম দৈর্ঘ্য, শক্তি, সূক্ষ্মতা, নমনীয়তা, সমতা ও আর্দ্রতা ধারণক্ষমতা আছে, সর্বোপরি সুতা পাকানোর গুণাবলি বিদ্যমান তাকেই টেক্সটাইল ফাইবার বলে।

আধুনিককালে প্রযুক্তির বিকাশের সাথে সাথে টেক্সটাইল ফাইবারের ও টেক্সটাইল সামগ্রীর প্রভূত উন্নতি এবং ব্যবহারকারীদের কাছে টেক্সটাইল সামগ্রী সহজলভ্য হচ্ছে।

টেক্সটাইল ফাইবারের শ্রেণি বিভাগ (Classification of Textile Fibre)-

মানুষের চাহিদার সাথে টেক্সটাইল ফাইবারের উৎপাদনও পরিবর্তন হচ্ছে। সাধারণত প্রাকৃতিকভাবে যে সমস্ত টেক্সটাইল ফাইবার পাওয়া যায় তার চাহিদা বেশি আবার ইহা অনেকটা স্বাস্থ্যসম্মত, কিন্তু মূল্যের দিক থেকে কৃত্রিম আঁশ অনেক কম ও সহজলভ্য। শনাক্তকরণ ও বোঝার সুবিধার্থে টেক্সটাইল ফাইবারের শ্রেণিবিভাগ দুইভাবে ছক আকারে দেখানো হলো :

Content added By

প্রাকৃতিক ফাইবার

প্রাকৃতিক ফাইবারের সংজ্ঞা

বিভিন্ন উৎস থেকে ফাইবার পাওয়া যায়। এদের মধ্যে গাছ, ফল, পোকা, জন্তু ইত্যাদি উৎস থেকেও ফাইবার পাওয়া যায় । কাজেই প্রকৃতি থেকে অথবা প্রকৃতিতে জন্মে এসব গাছ, পাতা, ফুল, ফল, ছাল, প্রাণী, খনি ইত্যাদি থেকে টেক্সটাইল পণ্য উৎপাদনের উপযোগী যে ফাইবার পাওয়া যায় তাকে প্রাকৃতিক ফাইবার বলে।

প্রাকৃতিক ফাইবারের বৈশিষ্ট্য

যদি কোনো ফাইবার কোনো সম্ভাব্য টেক্সটাইল সামগ্রী হিসেবে তৈরির জন্য ব্যবহার করা হয় তবে উক্ত ফাইবারের নির্দিষ্ট কতগুলো ভৌত ও রাসায়নিক গুণাবলি থাকা প্রয়োজন। এটি ব্যবহারকারীর চাহিদার উপর টেক্সটাইল সামগ্রীর সফলতা নির্ভর করে। ব্যবহারকারীর চাহিদা তখনই বৃদ্ধি পাবে যখন এটি বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা, বিভিন্ন রাসায়নিক বিক্রিয়া ইত্যাদি অর্থাৎ সংকোচন, প্রসারণ, টুইস্ট দেওয়া, অ্যাসিড, অ্যালকালি বা বিভিন্ন অক্সিডাইজিং রিডিউসিং এজেন্ট, উচ্চ তাপ, উচ্চ চাপ ইত্যাদি সহ্য করে ফিনিশ কাপড় হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে । কাজেই প্রতিটি টেক্সটাইল ফাইবারেরই নির্দিষ্ট কিছু গুণাবলি থাকা প্রয়োজন। একটি প্রাকৃতিক টেক্সটাইল ফাইবারের সম্পূর্ণ গুণাবলি জানতে হলে এর দৈর্ঘ্য, আর্দ্রতা ধারণক্ষমতা, শক্তি, ছিঁড়ে যাওয়ার পূর্বে প্রসারণ, ঘনত্ব, অ্যাসিডে বিক্রিয়া, অ্যালকালিতে বিক্রিয়া ইত্যাদি জানতে হবে। নিচে প্রাকৃতিক ফাইবারের একটি সংক্ষিপ্ত বৈশিষ্ট্য প্রদত্ত হলো।

প্রাকৃতিক ফাইবারের দৈর্ঘ্য

ফাইবারের দৈর্ঘ্যের উপর আঁশের গুণাগুণ অনেকাংশে নির্ভর করে। সাধারণত দৈর্ঘ্যে বড় আঁশ অপেক্ষাকৃত মসৃণ ও শক্ত হয়ে থাকে। আবার ছোট দৈর্ঘ্যের সুতা তৈরির ক্ষমতা কম থাকে। দৈর্ঘ্য অবশ্যই তার ব্যাস থেকে কয়েক হাজার গুণ বেশি হতে হবে। সূক্ষ্ম সুতা অর্থাৎ চিকন কাউন্টের সুতা তৈরির জন্য আঁশের দৈর্ঘ্য অবশ্যই ভালো হতে হবে। আবার মোটা সুতা তৈরির ক্ষেত্রে আঁশের দৈর্ঘ্য মোটামুটি হলেও চলবে।

ফাইবারের শক্তি

ফাইবারের শক্তি হচ্ছে ফাইবার কতটুকু টান প্রতিরোধ করে। দুর্বল ফাইবার দ্বারা কখনও শক্ত সুতা প্রস্তুত করা সম্ভব হয় না। ফাইবার দ্বারা সুতা তৈরির জন্য প্রতিটি আলাদা আলাদা ফাইবারের নির্দিষ্ট শক্তি থাকা প্রয়োজন। ফাইবারের শক্তিকে টেনজাইল স্ট্রেস্থ বলে। যার একক হচ্ছে পাউন্ডস / বর্গইঞ্চি। সংক্ষেপে পিএসআই। ফাইবারের শক্তি মাত্রাতিরিক্ত কম হলে উক্ত ফাইবার দ্বারা সুতা তৈরি করা সম্ভব নয়। বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় ছেঁড়ার হার বৃদ্ধি পাবে এবং উৎপাদন কম হবে। কাজেই সুতা তৈরির ক্ষেত্রেও ফাইবারের শক্তি একটা বিশেষ ভূমিকা রাখে । এক কথায় বলা যায় শক্তিবিহীন ফাইবারের জন্য সর্বগুণই অর্থহীন।

ফাইবারের সুক্ষ্মতা

কোনো বস্তুর সূক্ষ্মতা তার ব্যাস বা প্রস্থচ্ছেদের সাথে সম্পর্কযুক্ত, আঁশের ক্রস সেকশনের দৈর্ঘ্য ও প্রস্থের অনুপাতকেই সূক্ষ্মতা বলা হয়। মোটা আঁশের ক্ষেত্রে দৈর্ঘ্য এটির ব্যাসের চেয়ে ৭০০ গুণ বেশি হয়। কিন্তু ভালো বা সূক্ষ্ম আঁশের ক্ষেত্রে এটি ৫০০০ গুণ বেশি হয়। একমাত্র ভালো সূক্ষ্ম আঁশই ভালো সুতা তৈরি করতে পারে। প্রাকৃতিক আঁশের ক্ষেত্রে সূক্ষ্মতা, ব্যাস ও আঁশে উপস্থিত সেলুলোজ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। তবে বলা যায়, ছোট দৈর্ঘ্যের আঁশ মোটা এবং লম্বা আঁশ সূক্ষ্ম অর্থাৎ চিকন হয়। চিকন আঁশ হতে উচ্চ কাউন্টের ও গুণগত দিক থেকে উন্নতমানের সুতা তৈরি করা সম্ভব।

সুষমতা

সুষমতা বলতে প্রতিটি আলাদা আলাদা ফাইবার তার দৈর্ঘ্য ও ব্যাসের দিক থেকে সুষম হয়। আঁশ যত সুষম হবে, শক্তি তত বেশি হবে। তাছাড়া সুষম সুতা প্রস্তুতের ক্ষেত্রে উপরোক্ত বৈশিষ্ট্য একটা ভালো ভূমিকা রাখে।

ক্রিম্প

ফাইবারের ঢেউ খেলানো অবস্থাকে ক্রিম্প বলে। এটি মেরিনো উলের একটি প্রাকৃতিক গুণ। ভালো গুণের সূক্ষ্ম উলে এই গুণাবলি বেশি। মোটা উলের ক্রিম্পের চেয়ে কুঁচকানো ভাব বেশি থাকে। স্ট্রেচবিহীন আঁশের দৈর্ঘ্যের সাথে সাথে এটি শতকরা হারে প্রকাশ করা হয়। উপরোক্ত গুণাবলির জন্য প্রাকৃতিক আঁশ একটির সাথে অন্যটি জড়িয়ে থাকে। ফলে উৎপাদিত সুতার শক্তি বেশি হয়। তাছাড়া সুতা তৈরির সময় এ গুণাবলি খুব সাহায্য করে। টুইস্টবিহীন স্লাইবার উপরোক্ত গুণের কারণে খুলে আলাদা হয়ে যায় না।

স্থিতিস্থাপকতা

ফাইবারের উপর শক্তি প্রয়োগ করলে ফাইবার প্রসারিত হয় এবং শক্তিমুক্ত করলে আবার ফাইবার পূর্বের অবস্থানে ফিরে আসে। প্রাকৃতিক ফাইবারের এই প্রসারিত হওয়া এবং ফিরে যাওয়ার ক্ষমতাকে স্থিতিস্থাপকতা বলে । ফাইবারের এই গুণাগুণের কারণে কাপড় পরিধান আরামদায়ক ও সহজ মনে হয়।

সংশক্তি প্রবণতা

একটি ফাইবারের সাথে অন্য ফাইবারের জড়িয়ে বা লেগে থাকার প্রবণতাকে সংশক্তি প্রবণতা বলে। স্পিনিং প্রসেসের জন্য ফাইবারের এ গুণটি থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ গুণ থাকার কারণে কার্ডিং ও ড্রইং মেশিনে কোনো পাঁক ছাড়া স্লাইভারসমূহ পরবর্তী প্রসেসের জন্য প্রক্রিয়াজাত থাকে। ফাইবারসমূহ নিচে পড়ে যায় না। তবে ফিলামেন্ট ফাইবারের ক্ষেত্রে এ গুণ তেমন গুরুত্বপূর্ণ নয়।

ঘনত্ব

একক আয়তনের ওজনকে ঘনত্ব বলে। এটি সাধারণত গ্রাম/সিসি হিসেবে প্রকাশ করা হয়। অলিফিন বাদে সমস্ত টেক্সটাইল ফাইবারই পানির চেয়ে ভারী। অলিফিন পানির উপরে ভাসে। গ্লাস ও অ্যাসবেস্টস ফাইবারের ঘনত্ব বেশি, নাইলন ও সিল্কের ঘনত্ব অত্যন্ত কম। হালকা ওজনের ফাইবার সাধারণত কিছুটা উষ্ণ হয় এবং ভারী ওজনের ফাইবার সাধারণত ঠান্ডা প্রকৃতির হয়। প্রাকৃতিক ফাইবার উল যেহেতু উঞ্চ সেহেতু হালকা, কজেই উল ফাইবার দ্বারা গরম কম্বল ও সোয়েটার তৈরি হয়।

প্লাস্টিসিটি

তাপে সে সমস্ত ফাইবার নমনীয় হয় সে সমস্ত ফাইবারকে থার্মোপ্লাস্টিক ফাইবার বলে। তাপ প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে ফাইবারকে স্থায়ী আকার দেওয়া সম্ভব। প্লাস্টিসিটি গুণাবলি কাপড়ের সৌন্দর্য্য রক্ষা, যত্ন নেওয়া এবং স্থায়িত্বতার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। সব থার্মোপ্লাস্টিক ফাইবারই তাপ স্পর্শকাতর। এ ধরনের ফাইবারের তৈরি কাপড় কম তাপমাত্রায় ইস্ত্রি করা যায় এবং ঈষৎ উষ্ণ পানিতে ধৌত করা যায়।

বিশ্লেষণ

বেশির ভাগ প্রাকৃতিক টেক্সটাইল ফাইবার বাতাস হতে আর্দ্রতা গ্রহণ করে। ফাইবারের আর্দ্রতা গ্রহণ করার ক্ষমতাকে বিশ্লেষণ বলে। বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ বেশি হলে বা আঁশ বাতাস হতে আর্দ্রতা গ্রহণ করে ওজনে ভারী হয়। এক্ষেত্রে ক্রেতা ফাইবার কিনতে গেলে ঠকে যাবে। কাজেই এ অবস্থা দূরীকরণের জন্য ক্রয়- বিক্রয়ের ক্ষেত্রে ওভেন ড্রাই ওয়েট করে উক্ত ওজনের সাথে আর্দ্রতার শতকরা হার যোগ করে ফাইবার ক্রয়- বিক্রয় করা হয়ে থাকে। এতে ক্রেতা-বিক্রেতা কেউ ঠকবে না। উলের ময়েশ্চার ধারণক্ষমতা সবচেয়ে বেশি। আবার কৃত্রিম ফাইবার পলিয়েস্টারের ময়েশ্চার ধারণক্ষমতা সবচেয়ে কম। যেসব ফাইবারের বিশ্লেষণ ক্ষমতা বেশি সেসব ফাইবারের তৈরি পোশাক পরিধানের জন্য খুবই আরামদায়ক। কারণ উক্ত পোশাক সহজেই ঘাম শোষণ করেতে পারে এবং স্থির বিদ্যুৎ তৈরি হওয়া রোধ করতে পারে।

রেসিলিয়েন্সি

ফাইবার বা কাপড় বিভিন্ন সময়ে ব্যবহারের কারণে বিকৃত হওয়ার আশঙ্কা থাকা, কাপড় ভাঁজ করা, টান খাওয়া ইত্যাদির কারণে কাপড় বিকৃত না হয়ে আবার পূর্বের অবস্থায় ফিরে যায়। কাপড় বা ফাইবারের এ ধরনের গুণাবলিকে রেসিলিয়েন্সি বলে। কাপড়ের কুঁচকানো স্বভাব দূর করা এবং কাপড়ের স্থায়িত্ব, যত্ন ও সৌন্দর্য রক্ষার জন্য রেসিলিয়েন্সি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য।

রং

বিভিন্ন প্রাকৃতিক ফাইবারের কিছু না কিছু রং থাকে। উদাহরণ স্বরূপ- সিল্কের হলুদ ও তামাটে, উলের রং সাদা ও ধূসর, কটন ফাইবারের রং ক্রিম সাদা ও হালকা বাদামি। বেশির ভাগ কৃত্রিম আঁশ হালকা ক্রিম অথবা হলুদাভ রঙের হয় । কাজেই সাদা ফাইবার পাওয়ার জন্য বেশির ভাগ প্রাকৃতিক ফাইবারকেই ব্লিচিং করা হয়। বিভিন্ন এলাকা ও বিভিন্ন দেশের আঁশের রং স্থানভেদে বিভিন্ন হয়ে থাকে।

চাকচিক্য

ফাইবার থেকে কী পরিমাণ আলোর প্রতিফলন হয় তার উপর নির্ভর করে ফাইবারের চাকচিক্য নির্ণয় করা হয়। এ গুণাগুণ ফাইবারের পৃষ্ঠদেশীর অবস্থানের উপর নির্ভর করে। মসৃন পৃষ্ঠ অমসৃণ পৃষ্ঠের চেয়ে বেশি আলো প্রতিফলিত করে, ফলে মসৃণ পৃষ্ঠ বেশি উজ্জ্বল দেখায়। আবার গোলাকার ফাইবার চেষ্টা ফাইবার থেকে বেশি আলো প্রতিফলিত করে। সাধারণ কটনের চেয়ে মার্সেরাইজড কটন বেশি চাকচিক্য সম্পন্ন হয়। সিল্কের অপেক্ষাকৃত সুষম পৃষ্ঠীয় গঠনের জন্য আলোর সুষম প্রতিফলন হয়। ফলে কটন ও উল থেকে সিল্ক বেশি উজ্জ্বল।

প্রাকৃতিক ফাইবারের শ্রেণিবিভাগ

প্রকৃতিতে পাওয়া যায় বা প্রকৃতিতে জন্মে এসব গাছ, পাতা, ছাল, ফুল, প্রাণী, খনি ইত্যাদি থেকে যে ফাইবার সংগ্রহ করা হয় তা প্রাকৃতিক ফাইবার। উৎপত্তির উপর ভিত্তি করে এ ফাইবারকে আবার তিন ভাগে ভাগ করা হয়।

১। উদ্ভিজ ফাইবার (Vegetable Fibre) 
২। প্রাণিজ ফাইবার (Animal Fibre) 
৩। খনিজ ফাইবার (Mineral Fibre)

১। উদ্ভিজ ফাইবার (Vegetable Fibre)

গাছের ছাল, গাছের পাতা, বীজ ইত্যাদি হতে যে ফাইবার পাওয়া যায় তা উদ্ভিজ ফাইবার। পৃথিবীতে যে ফাইবার সবচেয়ে জনপ্রিয় ও বেশি ব্যবহৃত হয় অর্থাৎ কটন ফাইবার হলো উদ্ভিজ ফাইবার। এটি উদ্ভিজ বীজ হতে সংগ্রহ করা হয়। পুনরায় উৎপত্তির উপর ভিত্তি করে একে তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। 

ক) বীজ ফাইবার (Seed Fibre) 
খ) বাস্ট ফাইবার (Bast Fibre) 
গ) লিফ ফাইবার (Leaf Fibre)

বীজ ফাইবার (Seed Fibre)

আঁশসমূহ বীজের চারপাশে থাকে বলে এ আঁশকে বীজ ফাইবার বলা হয়। কটন অর্থাৎ তুলা হলো বীজ ফাইবারের উৎকৃষ্ট উদাহরণ। এ ছাড়া শিমুল ক্যাপকও বীজ ফাইবার।

বাস্ট ফাইবার (Bast Fibre)

এ জাতীয় ফাইবার উদ্ভিদের ফল অথবা বাকল হতে পাওয়া যায়। পাট (Jute) হলো বাস্ট ফাইবারের অন্যতম উদাহরণ। এ ছাড়া লিনেন, শন (Hemp), র‍্যামিও বাস্ট ফাইবার।

লিফ ফাইবার (Leaf Fibre)

গাছের পাতা মূল বা ডাঁটা হতে যে ফাইবার পাওয়া যায় তা লিফ ফাইবার। উদাহরণ সিসাল, পাইন আপেল ইত্যাদি।

প্রাণিজ ফাইবার (Animal Fibre)

প্রাণী হতে সরাসরি যে ফাইবার পাওয়া যায় তা প্রাণিজ ফাইবার। বিভিন্ন প্রজাতির ভেড়া বা ভেড়া জাতীয় প্রাণীর পশম হতে উল ফাইবার পাওয়া যায়। আবার পলু পোকা নামক এক প্রকার পোকার তৈরি গুটি থেকে ফিলামেন্টের আকারে যে ফাইবার পাওয়া যায় তা রেশম বা সিল্ক ।

খনিজ ফাইবার (Mineral Fibre)

খনি থেকে যে সমস্ত ফাইবারের উৎপত্তি তা খনিজ ফাইবার। উদাহরণস্বরূপ, গ্যাস, অ্যাসবেস্টস, ইত্যাদি। কঠিন শিলা মাটির তলদেশে স্তরে স্তরে জমা হয়ে এক প্রকার আঁশ উৎপন্ন করে। গ্যাস ও সিরামিক ফাইবার, খনিজ ফাইবার— এগুলোকে কৃত্রিমভাবে সংগ্রহ করা হয় বলে এগুলোকে কৃত্রিম ফাইবার হিসেবেও আখ্যায়িত করা হয়।

প্রাকৃতিক ফাইবারের শ্রেণিবিভাগ: 

প্রাকৃতিক ফাইবার প্রধানত তিন প্রকার

১) উদ্ভিজ ফাইবার

ক) বীজ ফাইবার- তুলা, ক্যাপক, নারিকেলের ছোবড়া ইত্যাদি 
খ) বাস্ট ফাইবার- জুট, লিনেন, হেম্প, রেমি, কেনাফ ইত্যাদি। 
গ) লিফ ফাইবার- অ্যাবাকা, সিসাল মেনিলা হেম্প, পাইন আপেল ইত্যাদি।

২) প্রাণীজ ফাইবার

উল, রেশম, মোহেয়ার, রেবিট হেয়ার, ভিকুনা, আলপাকা ইত্যাদি।

৩) খনিজ ফাইবার

গ্যাস, অ্যাসবেস্টস ইত্যাদি।

প্রাকৃতিক ফাইবারের ব্যবহার

প্রাকৃতিক ফাইবারের ব্যবহার বহুবিধ। যেহেতু প্রকৃতিতে পাওয়া যায় এবং আর্দ্রতা ধারণ ক্ষমতা প্রাকৃতিক ফাইবারের অনেক বেশি। কাজেই জনপ্রিয়তাও প্রাকৃতিক ফাইবারের বেশি এবং ব্যবহারের দিক থেকে আরামদায়ক ও স্বাস্থ্যসম্মত।

* সব ধরনের কাপড় তৈরিতে প্রাকৃতিক ফাইবার ব্যবহৃত হয়। 
* পুরুষ ও মহিলা উভয়ের জন্যই গ্রীষ্মকালীন পোশাক তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। 
* বাড়িতে ফার্নিশিং ক্লথ হিসেবে ব্যবহারের জন্য, যেমন- বিছানার চাদর, টাওয়েল, ছোট গালিচা ও কার্পেট তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। 
* ব্যাগ, থলে, ম্যাট, কম্বল, দড়ি, সুতলি, কর্ডেজ ইত্যাদি তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। 
* নিটেড অ্যাপারেল, শার্টিং, সুটিং, ওভারকোট, সোয়েটার ইত্যাদি গরম পোশাক তৈরিতে ব্যবহৃত হয় । 
* চাকচিক্যময় ড্রেস তৈরিতে ব্যবহৃত হয় । 
* শাড়ি যেমন- জর্জেট, শিপন ইত্যাদি তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। 
* খেলাধুলার পোশাক তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। 
* ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফেব্রিক তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।

Content added || updated By

কটন ফাইবার

আরবি ভাষায় কুতুম শব্দ থেকে কটন শব্দের আবির্ভাব। ইংরেজিতে যাকে বলে কটন, বাংলায় আমরা তাকে তুলা বলি। আরবগণই সর্বপ্রথম বাণিজ্যিকভাবে তুলা চাষ শুরু করেন এবং বাণিজ্যিক দ্রব্য হিসেবে বাজারে তুলা ব্যবসার প্রচলন করেন। কয়েক শতাব্দী থেকে আরবগণই ছিল আন্তর্জাতিক তুলা ব্যবসায়ী জাতি। স্পিনিং অর্থাৎ সুতা প্রস্তুতকরণ মিলসমূহে কাঁচামাল হিসেবে তুলা ব্যবহৃত হচ্ছে।

বর্তমানে প্রাকৃতিক আঁশসমূহের মধ্যে তুলার স্থান প্রথম। অর্থাৎ এক নম্বর আঁশ হিসেবে তুলাকে ধরা হয় । তুলার দ্বারা তৈরি বস্ত্র ও পোশাক সামগ্রীর চাহিদা বর্তমান বিশ্বে প্রায় ৬৫ শতাংশ কারণ তুলা দ্বারা তৈরি বস্তু ও পোশাক খুবই আরামদায়ক ও স্বাস্থ্যসম্মত। ইহা ত্বকে কোনো ক্ষতি করে না।

বাংলাদেশে প্রাচীনকাল থেকেই তুলার চাষ হয়ে আসছে। তবে আঁশের মানের কারণে বাণিজ্যিকভাবে সুতা প্রস্তুত করা সম্ভব হয়নি। আমাদের দেশের তৈরি তুলা আঁশের দৈর্ঘ্য ও শক্তি কম থাকার কারণে উৎপাদিত তুলা যারা ভালো মানের সুতা প্রস্তুত করা সম্ভব হয় না। তবে বর্তমানে তুলা উন্নয়ন বোর্ড আমেরিকা থেকে তুলা বীজ এনে তা দ্বারা শংকর বীজ তৈরি করে বাংলাদেশে বাণিজ্যিকভাবে তুলা চাষ শুরু করেছে। যা স্পিনিং মিলসমূহে নিম্নমানের সুতা তৈরির ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হচ্ছে।

তুলার বোটানিক্যাল নাম Botanical Name of Cotton)
উদ্ভিদ শ্রেণি হিসেবে তুলা গোসিপিয়াম (Gossypium) শ্রেণিভুক্ত। গোসিপিয়াম শ্রেণির মধ্যে নিম্নোক্ত প্রজাতির তুলা বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। 
(১) গোসিপিয়াম হারব্যাকাম (Gossypium Herbaceum) (২) গোসিপিয়াম আরবোরিয়াম (Gossypium Arboreum) (৩) গোসিপিয়াম হিরসুটাম (Gossypium Hirsutum) (৪) গোসিপিয়াম বারবাডেন্স (Gossypium Barbedense )

গোসিপিয়াম হারব্যাকাম (Gossypium Herbaceum)
 এ প্রজাতির গাছ ভারত, পাকিস্তান, চীন ও বাংলাদেশে জন্মে। আঁশের দৈর্ঘ্য ২০ থেকে ২৬ মিলি মিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে ।

গোসিপিয়াম আরবোরিয়াম (Gossypium Arboreum)
 ভারত, পাকিস্তান, চীন ও রাশিয়ায় এ প্রজাতির গাছ চাষ হয়। তবে আমেরিকায় ইহার চাষ সর্বাধিক। আঁশের দৈর্ঘ্য ১৫ থেকে ৩০ মিলি মিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে।

লোলিপিয়াম ফিটাম (Gossyplum Hirsutum) 
এ প্রজাতির গাছ চাষের জন্য দক্ষিণ আমেরিকা অন্যতম। তবে ভারত, পাকিস্তান ও রাশিয়ায় এ প্রজাতির তুলার চাষ হয়ে থাকে। তবে আমেরিকার ইহার চাষ সর্বাধিক। এর আঁশের দৈর্ঘ্য ১৫ থেকে ৩০ মিলি মিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে। 

গোসিলিয়াম ৰাৱবাভেল (Gossypium Barbedense) 
মিসরীর সি আইল্যান্ড (Sea Island) t এ প্রজাতির অন্তর্গত। আগের দৈর্ঘ্য ৩০ থেকে ৬০ মিলি মিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে ।

কটন ফাইবারের শ্রেণিবিভাগ (Classification of cotton fiber) 
উৎপত্তি ও স্টাপল লেহ-এর উপর নির্ভর করে বাণিজ্যিক ভাবে কটন ফাইবারের শ্রেণিবিভাগ করা হয়। সাধারণত ৬ প্রকারের কটন পাওয়া যায়। 
১. সি - আইল্যান্ড কটন (Sea Isaland cotton) 
২. ইজিপশিয়ান কটন (Egyptian cotton) 
৩. ব্রাজিলিয়ান ফটন (Brazilian cotton) 
৪. আমেরিকান কটন (American cotton) 
৫. ইন্ডিয়ান কটন (Indian cotton) 
৬. চায়না কটন (China cotton)

সি আইল্যান্ড কটন (Sea Isaland cotton) 
মূলত সি আইল্যান্ড কটন বাৱৰাডোল থেকে এসেছে। কাজেই এ ধরনের কটনের নাম হয়েছে গোলিপিয়াম ৰাৱবাডেল। এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ কটন। আমেরিকা, কানাডা, ক্যারোলিনা, জর্জিয়া ও ফ্লোরিডায় এ ধরনের কটন জন্মে। এটি খুবই লম্বা, সূক্ষ্ম, নরম, সিল্কি সর্বোপরি ভালো শক্তিসম্পন্ন ফাইবার। এটি খুবই সুষম ও লো এবং টুইস্ট ভেরিয়েশন খুবই কম। রং হালকা ক্রিম সাদা। স্টাপল লেংথ ৩.০ সে মি (সেন্টি মিটার) বা তর্দূধ্ব।

ইজিপশিয়ান কটন (Egyptian cotton) 
মিসর ও মিডল ইস্ট-এর দেশসমূহে এ ধরনের কটন পাওয়া যায়। এ ফাইবারও সি- আইল্যান্ড কটনের মতো লম্বা, সুক্ষ্ম, নরম সিল্কি। কিন্তু সামান্য নিম্নমানের। এ ফাইবারের স্টাপল লেন্থ ৩৭ হতে ৪.৫ সেমি (সেন্টি মিটার)। 

ব্রাজিলিয়ান কটন (Brazilian cotton) 
এ কটনকে পেরুলিয়ান কটনও বলা হয়। এ ধরনের কটন মূলত পেরুতে জনে। পরে ব্রাজিলেও প্রচুর পরিমাণে এ ধরনের কটন জন্মানোর কারণে এ ভ্যারাইটি কটন ব্রাজিলিয়ান কটন হিসেবে পরিচিত। রং সাধারণত হালকা সাদা থেকে ক্রিম। কিছু কিছু ক্ষেত্রে হালকা সোনালি। ফাইবার কিছুটা কর্কশ কিন্তু স্থিতিস্থাপক গুণসম্পন্ন। স্টাপল লেন্থ ৩ থেকে ৪ সে মি (সেন্টি মিটার)।

আমেরিকান কটন (American cotton)
আমেরিকা অথবা উত্তর আমেরিকায় এ ধরনের কটন জন্মে। এ কোয়ালিটির কটনের স্টাপল লেন্থ ২.৫ হতে ৩.৫ সেমি (সেন্টি মিটার)।

ইন্ডিয়ান কটন (Indian cotton)
এ কটন ভারতবর্ষে পাওয়া যায়। সাধারণত নিম্নমানের। স্টাপল লেন্থ কম ও ব্যাস বেশি অর্থাৎ মৌা। রং সাধারণত সাদা। স্টাপল লেন্থ ২ থেকে ৩ সে মি (সেন্টি মিটার)।

চায়না কটন (China cotton)
শুধু চীনে এ কটন পাওয়া যায়। খুবই নিম্নমানের। ভালো মানের সুতা ও কাপড় তৈরি করতে ব্যবহৃত হয় না । স্টাপল লেন্থ ১.৫ থেকে ২ সে মি (সেন্টি মিটার)।

কটন উৎপাদনকারী দেশসমূহের নাম

পৃথিবীর বহু দেশে কটন জন্মে। তবে কটন ফাইবারের দৈর্ঘ্য বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন হয়ে থাকে। নিচে কটন উৎপাদনকারী দেশসমূহের নাম দেওয়া হলো।

  • মিসর, আমেরিকা, ক্যারোলিনা, জর্জিয়া, ফ্লোরিডা।  
  • ভারত, পাকিস্তান, রাশিয়া। 
  • চায়না, ব্রাজিল, মেক্সিকো, সুদান। 
  • তুরস্ক, আর্জেন্টিনা, স্পেন, সিরিয়া, পেরু, গ্রিস, কলম্বিয়া। 
  • বাংলাদেশ।

তুলার গ্রেডিং (Grading of Cotton) 
তুলা আঁশের গ্রেডিং মূলত তুলার ট্রাসের পরিমাণের উপর নির্ভর করে। ট্রাস বলতে সাধারণত তুলার মধ্যে তুলা ছাড়া অন্যান্য অপ্রয়োজনীয় দ্রব্য যেমন- ভাঙা পাতা, মরা পাতা, কুঁড়ি, ধুলাবালি, ময়লা, বীজের ভাঙা টুকরা ইত্যাদিকে বোঝায়। তুলা থেকে উন্নতমানের সুতা প্রস্তুত করতে হলে ট্রাস ও ক্ষুদ্র আঁশের পরিমাণ কমাতে হবে। তেমনি তুলাকে গ্রেডিং করতে হবে, ট্রাসের পরিমাণ জানতে হবে। তুলার কতটুকু ট্রাস উপস্থিত তা জানার জন্য মেশিনের সাহায্য নিতে হবে। সাধারণত যে যন্ত্রের সাহায্যে ট্রাসের পরিমাপ করা হয় তার নাম শার্লি এনালাইজার। কয়েকটি দেশের তুলার গ্রেডিং নিম্নে দেওয়া হলো।

(১)  ইজিপশিয়ান তুলা- 
এক্সট্রা ফাইন (Extra Fine ) 
ফাইন (Fine) গুড (Good) 
ফুললি গুড ফেয়ার (Fully Good Fair) 
গুড ফেয়ার (Good Fair) 
ফেয়ার (Fair)

(২) ভারতীয় তুলা- 
সুপার চয়েস (Supper Choice ) 
চয়েস (Choice ) 
সুপার ফাইন (Supper Fine ) 
ফুললি গুড (Fully Good) 
ফাইন (Fine ) 
গুড (Good) 
ফুললি গুড ফেয়ার (Fully Good Fair)

উপরোক্ত গ্রেডিং বা শ্রেণি বিভাগ সাধারণত: তুলার অপদ্রব্য এবং রং-এর উপর নির্ভর করে করা হয়। এই গ্রেড তুলা আঁশের দৈর্ঘ্যর উপর ভিত্তি করে করা হয় না। উদাহরণস্বরূপ মিডলিং গ্রেডের আঁশের দৈর্ঘ্য ২৫ মি মি (১') ৩২ মি মি (১) এবং ৩৫ মি মি (১) হতে পারে। অবশ্য এটাও ঠিক যে, লম্বা আঁশের তুলার সাথে অপদ্রব্যের পরিমাণ কম থাকে। উপরে উল্লেখিত গ্রেডিং-এ পাকিস্তানি ও বাংলাদেশি তুলার গ্রেডিং করা হয়নি। তবে, পাকিস্তানি ও বাংলাদেশি তুলার নিজস্ব কোনো গ্রেডিং করা হয় না। আমেরিকান তুলার গ্রেডিংকেই পাকিস্তানি ও বাংলাদেশি গ্রেডিং হিসেবে ধরা হয়।

                                                                                                                                        তুলার চাষ (Cultivation of Cotton)

তুলা চাষ পদ্ধতি বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন রকমের ও বিভিন্ন সময়ে হয়ে থাকে। এক এক দেশ ও অঞ্চ ভেদে চাষ পদ্ধতি আলাদা আলাদা হয়ে থাকে। তবে সাধারণ শর্তসমূহ হলো তুলা বীজ বপন থেকে শুরু করে ফসল উঠতে ৫ থেকে ৭ মাস সময় লাগে। বিভিন্ন দেশের আবহাওয়া বিভিন্ন ও জমির উর্বরতাও বিভিন্ন হয়ে থাকে। কাজেই, চাষ পদ্ধতি ও সময়ও বিভিন্ন হয়ে থাকে। 

প্রায় সব রকমের মাটিতে তুলা জন্মে। তবে বেশি হালকা বেলে মাটি তুলা চাষের উপযোগী নয়। তুলা চাষের জন্য সবচেয়ে উৎকৃষ্ট মাটি হলো বেলে দো-আঁশ মাটি ও দো-আঁশ মাটি। এছাড়া এঁটেল দো-আঁশ ও পলিযুক্ত এঁটেল বা দো-আঁশ মাটিতেও তুলা চাষ করা যায়। যেসব উঁচু জমিতে বন্যার পানি উঠে না বা বৃষ্টির পানি জমে থাকে না এরূপ জমি তুলা চাষের জন্য উপযুক্ত। যে জমি ছায়াযুক্ত স্যাঁতসেঁতে অথবা বৃষ্টির পানি ২-৬ ঘণ্টার মধ্যে নেমে যায় না এরূপ জমি কখনও তুলা চাষের জন্য নির্বাচন করা উচিত নয়। তুলা চাষের আদর্শ pH এর মাত্রা হলো- ৬.০-৭.৫। PH-৬ এর নিচে নেমে এলে অম্লত্ব কমানোর জন্য চুন ব্যবহার করার প্রয়োজন হয়।

তুলার জমি তৈরির সময় হচ্ছে বর্ষাকাল। তখন প্রায়ই বৃষ্টি লেগে থাকে। বৃষ্টির ফাঁক বুঝে জো (চাষের জন্য উপযোগী সময়) অবস্থায় ৩-৪টি চাষ ও ম‍ই দিয়ে মাটি ঝুরে ও সমতল করে তৈরি করতে হবে। সে সাথে আগাছা ও আবর্জনা থাকলে তা বেছে পরিষ্কার করে নিতে হবে। উল্লেখ্য তুলার বীজ বপনের সময় খুবই সীমিত। তাই যদি হাতে সময় না থাকে তাহলে চাষ না দিয়ে নিড়ানির সাহায্যে মাটি আলগা করে এবং আগাছা থাকলে তা পরিষ্কার করে বীজ বপন করা যায় । তুলার জমিতে জৈব সার ব্যবহার করা উত্তম। সম্ভব হলে একরপ্রতি প্রায় ৫৫.৬৫ মণ পচা গোবর বা আবর্জনা পচা সার ব্যবহার করা যেতে পারে। এতে মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি পেয়ে যেমন ফলন বাড়ে, তেমনি আনুপাতিক হারে রাসায়নিক সারও কম ব্যবহার করা চলে। এছাড়া জৈব সার ব্যবহার করলে দস্তা, বোরন, অ্যাসনেসিয়াম এসব আনুপাদ্য উপাদানের ঘাটতি কমিয়ে দেয়। অম্লযুক্ত লাল মাটিতে তুলার ভালো ফলন পাওয়ার জন্য একরপ্রতি প্রায় ২২ মণ চুন ব্যবহার করা হয়। জৈব সার জমি তৈরির প্রথম দিকে প্রয়োগ করে মাটির সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে দিতে হবে। 

এ পর্যন্ত তুলা চাষের যত উন্নত প্রযুক্তি বের হয়েছে তন্মধ্যে সময়মতো বীজ বপন অন্যতম। সময়মতো বীজ বুনলে আশানুরূপ ফসল পাওয়া যায়। 

আগাম শীত এলাকায় বিশেষ করে রংপুর, দিনাজপুর এলাকায় শ্রাবণ মাস হতে ভাদ্রের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে অবশ্যই বীজ বোনার কাজ শেষ করতে হবে। অন্যান্য এলাকায় শ্রাবণের মাঝামাঝি হতে ভাদ্রের মাঝামাঝি পর্যস্তবীজ বোনার উপযুক্ত সময়। তবে মধ্য শ্রাবণের দিকে বীজ বোনা ভালো । 

বপনের সুবিধার জন্য বীজ ৩/৪ ঘণ্টা পানিতে ভিজিয়ে নিয়ে তা ঝুরঝুরে মাটি বা শুকনো গোবর অথবা ছাই দিয়ে এমনভাবে ঘষে নিতে হবে যাতে আঁশগুলো বীজের গায়ে লেগে না যায় এবং বীজ একটা থেকে অন্যটা আলাদা হয়ে যায়। এছাড়া সালফিউরিক অ্যাসিড দিয়ে বীজ আঁশমুক্ত করেও বোনা যায়। এতে বীজের গায়ে লেগে থাকা রোগজীবানু পোকার ডিমও বিনষ্ট হয়ে থাকে। 

স্বাভাবিক অবস্থায় ভূলা বীজ সারিতে বপন করতে হয়। হাত লাঙল দিয়ে হালকাভাবে সারি টেনে অনুমোদিত সার প্রতি সারিতে ভাগ করে নিয়ে তা প্রয়োগ করে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে। এরপর নির্ধারিত দূরত্বে (১.২৪ সে মি অথবা ই থেকে ১") গভীরে ৩/৪টি বীজ মাটি দিয়ে ঢেকে দিতে হবে । প্রতিকূল আবহাওয়া জমি চাষ করা সম্ভব না হলে পলিব্যাগে চারা উৎপন্ন করে ২০-৩০ দিন বয়সের চারা রোপণ করা যায়।

সাধারণত: সারি থেকে সারির দূরত্ব ১০০ সে মি (৩.৩ ফুট) ও গাছ থেকে গাছের দূরত্ব ৫০-৬০ সে মি (প্রায় ২ ফুট) রাখতে হবে। চারা গজানোর দশ দিনের মধ্যে প্রথমবার চারা পাতলা করা প্রয়োজন। ঐ সময় দুটি ভালো চারা রেখে অবশিষ্ট চারাগুলো তুলে ফেলতে হবে। চারার বয়স ২০-২৫ দিন হলে শেষবার চারা পাতলা করতে হবে। এ সময় একটি ভালো ও সবল চারা রেখে অবশিষ্ট চারা তুলে ফেলতে হবে। চারা পাতলা করার সময় প্রয়োজন হলে আগাছা সাফ করতে হবে।

জমি ভালোভাবে তৈরি করে নিলে শেষ চারা পাতলা করার সময় প্রথমবার নিড়ানি দিলেই চলবে। অবস্থা ভেদে ও আগাছার পরিমাণ লক্ষ্য করে ২/৩ বার তুলা ক্ষেতে নিড়ানি দেওয়ার প্রয়োজন হতে পারে।

তুলা ফসলে বিভিন্ন প্রকার পোকামাকড়ের আক্রমণ হয়ে থাকে। এসবের মধ্যে জ্যাসিড, বোল-ওয়ার্ম ও জাব পোকা উল্লেখ্যযোগ্য ।

ক্ষেত্রের বোল ভালোভাবে কেটে বের হলে পরিষ্কার শুকনো দিনে বীজ তুলা ওঠাতে হয়। সাধারণত ৩ বারে ভুলা ওঠাতে হয় । প্রথমবার এমন সময় ওঠাতে হবে যেন মোট ফসলের অর্ধেক (শতকরা ৫০ ভাগ) তুলা ওঠানো যায়। দ্বিতীয় ও তৃতীয় বারে ৩০ ভাগ ও ২০ ভাগ তুলা ওঠাতে হবে। তবে তুলা ওঠানোর সময় খেয়াল রাখতে হবে ময়লা, মরা পাতা ও পোকায় আক্রান্ত খারাপ অপুষ্ট তুলা যেন না আসে। ভালো তুলা আলাদাভাবে উঠিয়ে তা আলাদাভাবে ৩/৪ বার ভালো করে রোদে শুকিয়ে গুদামজাত করতে হবে। খারাপ ও নষ্ট বীজ তুলা আলাদা ওঠানো দরকার। কোনো সময়ই ভালো ও খারাপ তুলা একত্রে মেশানো ঠিক নয়।

স্বাভাবিক অবস্থায় হেক্টরপ্রতি ১২০০-১৫০০ কেজি বীজ তুলা পাওয়া যায়।

তুলার দোষত্রুটি (Faults of Cotton)

সাধারণত কাঁচা তুলায় নিম্নলিখিত দোষত্রুটি দেখতে পাওয়া যায়- 
১) ড্যাম্প কটন (Damp Cotton ) 
২) অপরিপক্ক আঁশ (Immatured Fibre) 
৩) ডেড ফাইবার বা মৃত আঁশ (Dead Fibre) 
৪) কেক ফরমেশন (Cake Formation ) 
৫) পেস্ট ফরমেশন (Paste Formation) 
৬) ফলস মিলডিউ বা গ্রে মিলডিউ (Flase mildew / Grey mildew ) 
৭) কটন রাস্ট বা তুলায় মরিচার দাগ ( Cotton rust) 
৮) পাউডারি বা গুঁড়া মিলডিউ (Powdery mildew ) 
৯) লিন্ট রট (Lint rot) 
১০) সেলুলোজ ডিগ্রেডেশন (Cellulose degredation)

ড্যাম্প কটন (Damp Cotton)-
ভিজা ও ঠান্ডা আবহাওয়ায় গাছ থেকে বীজ তুলা তুলে আনলে অথবা মাটির কারণে কিছু কিছু বীজতুলা খুব আস্তে আস্তে পরিপক্ক হয়, যা ভালো আঁশের সাথে মিশে যায়। বীজ তুলা তোলার সময় সাবধানতার সাথে সংগ্রহ করে পরবর্তীতে বেছে অপরিপক্ক পট বা বল আলাদা করে এবং রোদে শুকিয়ে এ ধরনের ত্রুটি দূর করা সম্ভব।

অপরিপক্ক আঁশ (Immatured Fibre) -
অনুর্বর মাটি বা একই মাঠে দু-একটি গাছ পোকায় আক্রমণ বা ব্যাকটেরিয়াল আক্রমণে ভালোভাবে বৃদ্ধি ঘটে না। গাছের সাথে সাথে আঁশ ও আশপাশের গাছের তুলনায় অপরিপক্ক থাকে। এছাড়াও একই পট বলেও কিছু কিছু অপরিপক্ক ফাইবার পাওয়া যায়। 

তুলা গাছের রোগাক্রান্ত হওয়ার সাথে সাথে উক্ত গাছ তুলে ফেলা বা পুড়িয়ে ফেলতে হবে। অথবা বীজ তুলা সংগ্রহ করার সময় সাবধানতা অবলম্বন করলে এ ধরনের ত্রুটি কিছুটা দূর করা সম্ভব।

ডেড ফাইবার বা মৃত আঁশ (Dead Fibre)-
কিছু কিছু গাছ যেমন অপরিপক্ক থাকে, তেমনি আবার কিছু কিছু গাছ বেশি পরিপক্ক হয়ে যায়। উক্ত গাছ বা বেশি পরিপক্ব পট থেকে যে আঁশ সংগ্রহ করা হয় তা বেশির ভাগ মৃত বা ডেড ফাইবার। ভালো আঁশের মধ্যেও কিছু পরিমাণ মৃত আঁশ পাওয়া যায়। মৃত আঁশের পরিমাণ বেশি থাকলে তাকে হোয়াইট ফ্লাইও (White fly) বলা হয় ।

কেক ফরমেশন (Cake Formation ) - 
আঁশ বল থেকে আলাদা করার পর কিছু কিছু আঁশ শক্ত হয়ে গুচ্ছ তৈরি করে। ইহা সাধারণত গাছে থাকাকালীন পোকামাকড়ের দংশনের কারণে হয়ে থাকে। গাছ থেকে বল সংগ্রহ করাকালীন ত্রুটিমুক্ত বল সংগ্রহ করলে এ ধরনের ত্রুটি থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

পেস্ট ফরমেশন (Paste Formation ) - 
ভুলা আঁশের মধ্যে কিছুটা সাদা অংশ পেস্ট-এর মতো পাওয়া যায়। গাছে থাকা অবস্থায় বিভিন্ন পোকামাকড়ের আক্রমণের কারণে এ ধরনের ত্রুটি পরিলক্ষিত হয়। গাছ থেকে বীজ তুলা সংগ্রহ করার পর বাছাই করে আলাদা করতে হবে।

ফলস মিলডিউ বা গ্রে মিলডিউ (Flase mildew / Grey mildew) - 
ইহা সাধারণত ফাংগাস আক্রমণের কারণে হয়ে থাকে। খারাপ আবহাওয়ার কারণেও এ ধরনের ত্রুটি অর্থাৎ সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম কালো অথবা বাদামি দাগ দেখা যায়।

কটন রাস্ট বা তুলায় মরিচার দাগ ( Cotton rust)- 
অত্যধিক শুকনো আবহাওয়া অথবা বৃষ্টির পরে চাষ করা হলে এ ত্রুটি দেখা যায়। তুলায় কখনও পাতার বা ঘাসের দাগ দেখতে পাওয়া যায়। ইহাই মরিচা বা রাস্ট।

পাউডারি বা গুঁড়া মিলডিউ ( Powdery mildew)- 
নির্দিষ্ট সময়ের পরে অথবা অত্যধিক শুকনো আবহাওয়ায় তুলা চাষ করলে এ ধরনের ত্রুটি পরিলক্ষিত হয়। আঁশের পৃষ্ঠে কালো বা বাদামি রং-এর গুঁড়োই এ ধরনের ত্রুটি।

লিন্ট রট (Lint rot) 
আঁশ হলুদ বা বাদামি হলুদ ধারণ করাকে লিন্ট রট বলে । খারাপ আবহাওয়া অথবা বীজ তুলা গাছ হতে তোলার পর ভিজা আবহাওয়ায় রেখে দিলে এ ধরনের ত্রুটি পরিলক্ষিত হয়।

স্টিকি কটন (Sticky Cotton)- 
এ ধরনের তুলা প্রথমে সাদা ও পরে আস্তে আস্তে কালো রং ধারণ করে। ভাঙা বীজ থেকে তৈলাক্ত ও গ্রিজি পদার্থ এসে আঁশকে স্টিকি করে দেয়, এছাড়া ফাংগাস আক্রমণে এ ধরনের ত্রুটি হতে পারে। 

সেলুলোজ ডিগ্রেডেশন (Cellulose degredation)- 
পোকামাকড়ের দংশনে অথবা পোকামাকড় নিধনের জন্য ব্যবহৃত ওষুধের মাত্রা বেশি হলে এবং তুলায় লেগে গেলে আঁশের সেলুলোজ নষ্ট হয়ে যায়।

                                                                                                                            তুলার ব্যবহার (Uses of Cotton)

* কটনের ব্যবহার বহুবিধ এবং চাহিদাও প্রচুর। নমনীয়, আর্দ্রতা ধারণক্ষমতা, বেশি আরামদায়ক বলে প্রায় সব ধরনের কাপড় তৈরিতে কটন আঁশ ব্যবহৃত হয়। 
* পুরুষ ও মহিলা উভয়ের জন্যই গ্রীষ্মকালীন পোশাক তৈরিতে কটন আঁশ ব্যবহৃত হয় 
* বাড়িতে ব্যবহৃত বিভিন্ন কাপড় যেমন- বিছানার চাদর, টাওয়েল, ছোট গালিচা ও কার্পেট তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। 
* ইন্ডাস্ট্রিয়াল বিভিন্ন কাজে যেমন- টায়ার কর্ড, ব্যাগ, কনভেয়র এবং মেডিক্যাল বিভিন্ন কাপড় যেমন ব্যান্ডেজ ইত্যাদিতে ব্যবহৃত হয়।

Content added || updated By

জুট ফাইবার

প্রাকৃতিক ফাইবারের মধ্যে জুট ফাইবার একটি সেলুলোজিক ফাইবার। তবে কটনের তুলনায় জুট ফাইবারে সেলুলোজের পরিমাণ অনেক কম। এই ফাইবারে সেলুলোজের পর হেমি সেলুলোজ ও লিগনিন বিদ্যমান। জুট ফাইবারে লিগনোসলুলোজ থাকার কারণে জুট ফাইবার কিছুটা শক্ত ও খসখসে। জুট ফাইবার অর্থাৎ পাট আঁশ এই শক্ত ও খসখসে থাকার কারণে সুতা তৈরির ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে হয়। সুতা তৈরির জন্য পাক দেওয়ার সাথে সাথে আঁশ ভেঙে যেতে পারে। কাজেই এ ভঙ্গুরতা দূর করার জন্য সুতা তৈরির পূর্বে ইমালশন প্রয়োগ করতে হয়। ইমালশন তৈল ও পানির মিশ্রণ। ইমালশন প্রয়োগের কারণে আঁশ নরম হয়ে সুতা তৈরির উপযোগী হয়। 

কৃষিভিত্তিক বাংলাদেশে পাট আঁশ এককালে প্রধান অর্থকরি ফসল ছিল। পাট থেকে প্রচুর পরিমানে বৈদেশিক মুদ্রা আয় হতো বলে এই আঁশকে গোল্ডেন ফাইবার অব বাংলাদেশ বলা হতো। কিন্তু বর্তমানে পাট ও পাটজাত পণ্যের পূর্বের মতো রপ্তানি চাহিদা নেই। সিনথেটিক পণ্যের উৎপাদন ও বাজারজাতকরণে পাট ও পাটজাত দ্রব্যের রপ্তানি আয় নিম্নমুখী। 

পাট ও পাটজাত দ্রব্য পরিবেশের সহায়ক। কার্বন, হাইড্রোজেন, অক্সিজেন পাটের মূল রাসায়নিক উপাদান। পরিবেশগত কোনো দোষণীয় পদার্থ পাট ও পাটজাত দ্রব্যে নেই। তাই পাটজাত দ্রব্য ব্যবহারে পরিবেশ দূষিত হয় না। অন্য দিকে পাটজাত দ্রব্য অতি সহজেই পচনশীল, মাত্র ৩ থেকে ৫ মাসের মধ্যেই এটি মাটির সাথে মিশে যায়। পরিবেশের কোনো ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে না। অন্যদিকে পাটের মধ্যে সেলুলোজ, হেমিসেলুলোজ এবং লিগনিন থাকে এবং এই লিগনিন পচে জমিতে উর্বরতা বৃদ্ধি করে। উপরোক্ত কারণে পাট দ্বারা পরিবেশের কোনো ক্ষতি হয় না ।

পাটের বোটানিক্যাল নাম (Botanical name of jute)-

উদ্ভিদবিদ্যা মতে পাট করকোরাস (Corcorus) প্রজাতির। এই প্রজাতির ২টি ভাগ 
১)করকোরাস কেপসুলারিস (Corcorus Capsularis ) 
২) করকোরাস ওলিটোরিয়াস (Corcorus Olitorius) 

ইহা ছাড়াও বাংলাদেশে পাটসদৃশ্য একটি অ্যালাইড ফাইবার দেখতে পাওয়া যায়, যা মেস্তা নামে পরিচিত। যার বৈজ্ঞানিক নাম হিবিস্কাস ক্যানাবিনাস (Hibiscus Canabinus)

                                                                                                                                                    পাট এর গ্রেডিং (Grading of jute)

তোষা পাট (Tossa Jute ) - 
পাট-এর গোড়া কেটে পৃথক করার পর উক্ত পাটের পাক্কা গ্রেডে যাচাইতে নামকরণ করার জন্য বাংলা কথাটি যুক্ত থাকে।

পাটের শ্রেণি বিভাগ (Classification of Jute)- 
পাট প্রধানত দুই প্রকার 
১) দেশি বা সাদা পার্ট (White Jute ) 
২) বগী বা তোষা পাট (Tossa jute) 
তবে গটি ছাড়াও বাংলাদেশে পাট সদৃশ এক প্রকার অ্যালাইড ফাইবার পাওয়া যায়, ইহা মেস্তা। সাদা পাটের আঁশ অপেক্ষাকৃত মোটা ও ওজনে হালকা এবং ইহার রং সাদা ও খিয়া, কিন্তু তোষা পাট সিল্কি, আঁশ চিকন এবং ওজনে অপেক্ষাকৃত ভারী, তোষা পাটের রং মিয়া ও লালচে সোনালি। মেন্তার আঁশ অপেক্ষাকৃত মোটা কম তৈলযুক্ত, কিছুটা ভঙ্গুর ও কম শক্তিসম্পন্ন। পাটের আঁশ জালের মতো একটার সাথে অপরটি যুক্ত কিন্তু মেস্তার আঁশ তেমন জালের মতো থাকে না।

বাংলাদেশে এলাকাভিত্তিক ও স্পিনিং-এর উপযুক্ততা বিবেচনা করে পাটকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যেমন-

১. জাত পাট (Jat jute) 
২. ডিস্ট্রিক্ট পার্ট (District jute) 
৩. নর্দার্ন পাট (Northern jute)

১) জাত পাট- 

বৃহত্তর জেলা ঢাকা, কুমিল্লা, ময়মনসিংহ, জামালপুর ও টাঙ্গাইল এলাকায় জাত পাট জন্মে। সাদা ও তোষা উভয় প্রকার জাত পাটের আঁশ খুবই শক্ত ও শুষ্ক তারের মতো হয়। এই পাটের তৈলাক্ততা ও উজ্জ্বলতা অধিক থাকে। এই পাটের আঁশ খুব ঘন জালবিশিষ্ট, সূক্ষ্মতা ও দৈর্ঘ্যতা বেশি থাকে। কোয়ালিটি বা মানের দিক থেকে এই পাটকে সর্বশেষ্ঠ পার্ট বলে মনে হয়। বি-বাড়িয়ার মাধবপুর হরিণ এলাকার পাট পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ পাট। পাক্কা প্যাকিং-এর জন্য আরও উজ্জ্বল হয় এবং আঁশের শক্তি বেশি থাকে।

২) ডিস্ট্রিক্ট পার্ট- 

ডিস্ট্রিক্ট পাটকে সাধারণত তিন ভাগে ভাগ করা যায়। 
ক) হার্ড ডিস্ট্রিক্ট (Hard district ) 
খ) ডিস্ট্রিক্ট (District) 
গ) সফট ডিস্ট্রিক্ট (Soft district )

ক) হার্ড ডিস্ট্রিক্ট (Hard district)- 

এই পাট বৃহত্তর ফরিদপুর জেলায় জন্মে, ইহার মধ্যে তালমা, কানাইপুর, খলিলপুর, চরমুগুরিয়া, টেকেরহাট ইত্যাদি এলাকায় ভালো জাতের হার্ড ডিস্ট্রিক্ট পাট জন্মে। জাত পাটের পরই এই পাটের স্থান। হার্ড ডিস্ট্রিক্ট পাটের আঁশ জাত পাটের আঁশ থেকে সামান্য কম সূক্ষ্ম। কিন্তু অধিক শক্তিসম্পন্ন তৈলাক্ত এবং আঁশ ঘনজাল বিশিষ্ট হার্ড ডিস্ট্রিক্ট পার্ট রং-এর উজ্জ্বলতার জন্য বিখ্যাত। বিশেষত তোষা পাটের রং অত্যন্ত উজ্জ্বল কাঁচা স্বর্ণ বর্ণ হয়ে থাকে। এই পাট অনেক লম্বা হয় এবং কাটিং খুবই সামান্য পরিমাণ হয়। রং, আঁশের গুণ ও কম কাটিং-এর জন্য হার্ড ডিস্ট্রিক্ট পার্ট খুবই সমাদৃত। এই কারণে এই শ্রেণির পাটের চাহিদা ও মূল্য অন্যান্য অঞ্চলের পাটের তুলনায় অধিক থাকে। মূলত হার্ড ডিস্ট্রিক্ট এলাকায় তোষা পাটের উৎপাদন অনেক বেশি হয় । পাক্কা প্যাকিং-এ ইহার রং ও উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায়।

খ) ডিস্ট্রিক্ট (District)- 

ডিস্ট্রিক্ট পাট সাধারণত ব্রহ্মপুত্র নদীর পশ্চিম পারের নিম্নভূমিতে জন্মে। মূলত বৃহত্তর পাবনা জেলায় উৎপাদিত সাদা ও তোষা পাট ডিস্ট্রিক্ট পাট। এছাড়া বৃহত্তর সিলেট, নোয়াখালী ও পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের পাটকে ডিস্ট্রিক্ট পার্ট বলা হয়ে থাকে। ডিস্ট্রিক্ট পাটের আঁশ জাত পাটের আঁশ থেকে কিছুটা মোটা ও ওজনে হালকা, উজ্জ্বলতা ও তৈলাক্ততা কিছুটা কম। আঁশের শক্তি ও জাল সাদৃশ্য ঘনত্ব ও জাত পাটের তুলনায় কম । সাদা পাটের রং সাধারণত সাদাটে এবং তোষা পাটের রং বাদামি বা ফ্যাকাসে লাল হয়ে থাকে।

গ) সফট ডিস্ট্রিক্ট (Soft district ) - 

বৃহত্তর জেলা কুষ্টিয়া, যশোর, খুলনা ও বরিশাল ইত্যাদি এলাকায় উৎপন্ন পাটকে সফট ডিস্ট্রিক্ট পার্ট বলে। সফট ডিস্ট্রিক্ট পাটের আঁশ তুলনমূলকভাবে কিছুটা নরম হয়। তৈলাক্ততা ও রং-এর উজ্জ্বলতা অপেক্ষাকৃত কম থাকে।

৩) নর্দান পাট (Northern jute ) - 

বৃহত্তর জেলা রংপুর, দিনাজপুর, বগুড়া ও রাজশাহী এলাকায় উৎপন্ন পাটকে নর্দান ডিস্ট্রিক্ট পার্ট বলে। নর্দান পাটের আঁশের শক্তি কম। কিছুটা ফাঁপা ও মোটা জালের ঘনত্ব কম ও অধিক কাটিং যুক্ত, তৈলাক্ততা কম, পাক্কা প্যাকিং -এর পর সাধারণত নর্দান পাটের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায় না। সাদা পাটের রং সাধারণত মেটে ও তোষা পাটের মেটে তামাটে ও মেটে শ্যামলা হয়ে থাকে।

ছুট উৎপাদনকারী দেশসমূহ- 

নিম্নে জুট উৎপাদনকারী দেশসমূহের নাম দেওয়া হলো- 
* বাংলাদেশ, ভারত 
* বার্মা, চায়না, ব্রাজিল এবং নেপাল 
পৃথিবীর প্রায় শতকরা ৮৫ ভাগ পাট ভারত ও বাংলাদেশে জন্মে।

পাটের দোষ-ত্রুটি (Defects of jute)

গোড়াময় পাট (Rooty fibres )- 
গোড়ার দিককার অংশ, পচনের স্বল্পতার কারণে, বাকল ও আঠালো পদার্থ সম্পূর্ণ দূরীভূত না হওয়ায় এই প্রকার ত্রুটি দেখা দেয়। এর গোড়ার অংশ কেটে নিম্নমানের পাটের সাথে নিম্নমানের সুতা তৈরির কাজে ব্যবহার করা চলে ।

দাগী পার্ট (Specky fibres ) - 

পচন ও ধোয়া যথোপযুক্ত না হলে আঁশের সঙ্গে বাকলের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশ লেগে থাকতে দেখা যায় এবং রং -এর অসমতা সৃষ্টি করে। ইমালশন প্রয়োগের পর অধিক সময় পাইলিং এবং উপযুক্ত কার্ডিং করলে ভালো ফল পাওয়া যায়।

আগাশুদ্ধ পাট (Croppy fibres ) - 

এই ধরনের পাট আঁশের প্রাপ্ত আঠালো খসখসে, পাট গাছ ভিজানোর অর্থাৎ পচনের সময় পার্ট -এর মাথা পানির ওপরে থাকলে এবং আঁশ ছাড়িয়ে নেওয়ার সময় বিশেষ সতর্ক না হলে এই ধরনের ত্রুটির কারণ ঘটায়। এই ত্রুটিযুক্ত অগ্রভাগ কেটে নিয়ে নিম্নমানের সুতার জন্য ব্যবহার করা হয়।

কাস্টময় পার্ট (Sticky fibres )- 

কোনো কারণে পূর্ণতা প্রাপ্তির পূর্বেই পাট কেটে নিলে এ থেকে পাট ছাড়িয়ে নেওয়া সুবিধাজনক। পাট আঁশ পাটকাঠি থেকে ছাড়িয়ে নেওয়ার সময় কিছু কিছু ক্ষুদ্র পাটকাঠির অংশ লেগে থাকে। উপযুক্ত কার্ডিং করে ইহা দূর করা হয়।

গেরোময় পাট (Knotty fibres ) - 

পাট গাছ ছোট অবস্থায় পোকার দংশনে এই ধরনের ত্রুটির সৃষ্টি হয়। আঁশগুলি গোছা গোছা এক সঙ্গে থাকে, পাট আঁশ আলাদা করার ক্ষেত্রে অসুবিধা ঘটায় এবং কার্ডিং-এ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র আঁশে পরিণত হয়। প্রয়োজনবোধে কেটে নিম্নমানের সুতা তৈরির ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়।

মরা পাট (Dead fibres)- 

পচনের পরিমাণ বেশি হলে অথবা পার্ট ভিজা অবস্থায় অনেক দিন ধরে গুদামজাত করে রাখলে আঁশের রং ফ্যাকাসে হয় এবং শক্তি লোপ পায়। এরূপ পাট নিম্নমানের সুতা তৈরির ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়।

হুক্কা পাট (Hunka fibres ) - 

শক্ত শুষ্ক বাকলযুক্ত পাট এই ত্রুটির কারণ। শুষ্ক অংশ কেটে পুনরায় ইমালশন যোগে পাইলিং করে নিম্নমানের সুতা প্রস্তুত করা সম্ভব।

কমজোর পাট (Weak fibres ) - 

অতিরিক্ত পচন অথবা ভিজা অবস্থায় গাঁইট বাঁধা ইত্যাদি বিভিন্ন কারণে পাটের শক্তি কমে যেতে পারে। বেশি শক্তিসম্পন্ন পাটের সাথে মিশিয়ে ব্যবহার করা যেতে পারে।

শেওলাযুক্ত পাট (Mossy fibres ) - 

আবদ্ধ জলে উৎপাদিত পাট গাছে শেওলা থাকতে পারে। পাটের শেওলাযুক্ত আঁশ কেটে আলাদা করে নিম্নমানের পার্টের সাথে ব্যবহার করা প্রয়োজন ।

লোমশ পাট (Runners fibres ) - 

অসম পচন ও অসতর্কভাবে ধোয়া এবং আঁশ ছড়ানোর জন্য এই প্রকার ত্রুটি হতে পারে। এই প্রকার পাট পৃথক অর্থাৎ আলাদা আলাদা আঁশ সৃষ্টিতে বাধা প্রদান করে ।

আন্ত:বিনষ্ট (Heart damage fibres ) - 

গাঁইট বাঁধার সময় অতিরিক্ত জলীয় বাষ্প থাকলে কিছুদিনের মধ্যেই গাইটের ভিতরের কিছু অংশ নরম হয়ে পড়ে, কোনো কোনো ক্ষেত্রে ভিতরের পার্ট গুঁড়ো গুঁড়ো হয়ে যায়। এ ধরনের পাটকে আন্তঃবিনষ্ট পাট বলে।

বহিঃবিনষ্ট (Exterior damage) - 

স্থানান্তর করার সময় পাটের গাইটগুলি জাহাজের পার্শ্বের দিকে রাখলে অতিরিক্ত জলীয় বাষ্প ও উত্তাপের প্রভাবে বাইরের দিকের পার্ট বিনষ্ট হয়ে যায়। উপযুক্ত বাছাইয়ের পর বিনষ্ট পার্ট নিম্নমানের পাটের সাথে ব্যবহার করা যেতে পারে।

পাটের ভৌত গুণাবলি (Physical properties of Jute fibre) -

পাট -এর ব্যবহার (Uses of jute ) -

  • পাট আঁশ সস্তা, শক্তিশালী, মোটামুটি টেকসই -এর কারণে ব্যাগ, থলে ও কম্বল -এর জন্য খুবই সুবিধাজনক 
  • পাট ফাইবার/সুতা বুনন কার্পেট, টানা ও পড়েন পাইল এবং টাফটেট কার্পেটের জন্য ব্যবহৃত হয়। ইহা ছাড়া সি বি সি -এর জন্যও ব্যবহৃত হয়। 
  • গৃহস্থালি কাজের জন্য দড়ি, কর্ডেজ, সুতলি এবং টোয়াইন সুতার জন্য ব্যবহৃত হয়। 
  • পাটের অপচয় ক্যাডিস, গাড়ির সিটের নিচে ফোম-এর বিকল্প হিসেবে ব্যবহৃত হয়। 
  • ভালো কাপড় পর্দা, ওয়াল ম্যাট, ফার্নিশিং কাপড় তৈরির জন্য ব্যবহার করা হয়। 
  • বিভিন্ন পোশাকে ব্যবহারের জন্য লাইনিং -এর জন্য ব্যবহৃত হয়। 
  • ভালো পাট ও অ্যালকালীর সাথে প্রক্রিয়াজাত করে উলের সাথে মিশ্রিত করা হয়। বিছানা ও বালিশের লাইনিং এবং ব্যান্ডেল কাপড় তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। 
  • জুটেক্স (জুট+কটন) তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। 
  • কাগজ তৈরির মণ্ড হিসেবে সবুজ পাট ব্যবহৃত হয়।
Content added By

সিল্ক ফাইবার

সিল্ক একটি প্রাকৃতিক ফিলামেন্ট ফাইবার। সিল্ককে রেশমও বলা হয়ে থাকে। রেশম ফিলামেন্টের স্থিতিস্থাপকতা গুণ অনেক বেশি। ইহা বেশ নমনীয় এবং আর্দ্রতা ধারণ ক্ষমতা বেশ ভালো অর্থাৎ শতকরা ১১ ভাগ। এক জাতীয় পোকার লালা থেকে সিদ্ধ ফাইবারের উৎপত্তি। রেশম পোকা বা পলু পোকা তার নিজের মুখ থেকে নিঃসৃত রেজিন সাদৃশ্য লালা দিয়ে শরীরের চারপাশে একটি বেষ্টনী তৈরি করে ছোট গুটি তৈরি করে। এ ছোট গুটিকে কোকুন (Cocoon) বলা হয়। এ কোকুন থেকেই পরবর্তী প্রক্রিয়ায় রেশম সুতা/ফিলামেন্ট আকারে সংগ্রহ করা হয়।

রেশম সর্বপ্রথম চীন দেশে আবিষ্কার হয়। পরবর্তীতে আস্তে আস্তে পৃথিবীর অনেক দেশে ছড়িয়ে পড়ে। বর্তমানে বাংলাদেশেও রেশম চাষ হচ্ছে। রেশম চাষ দুটি ভাগে বিভক্ত। ভুঁত গাছ চাষ ও পলু পোকা পালন। পলু পোকার খাদ্য হিসেবে তুঁত গাছের পাতা ব্যবহার করে বলে রেশম চাষে পলু পালনের পাশাপাশি ভূত পাছ চাষও খুবই প্রয়োজনীয়।

বিভিন্ন প্রকার লিঙ্ক (Classification of silk)-

সিল্ক ইন্ডাস্ট্রিতে সমগ্র সিল্ককে দুই ভাগে ভাগ করা হয়।

১) মালবেরি (Mulberry silk) 
২) নন-মালবেরি (Non Mulberry silk)।

নন-মালবেরি সিল্কসমূহকে আবার তিন ভাগে ভাগ করা হয়।

ক) র সিঙ্ক (Tassor silk) 
খ) ইরি (Eri) সিল্ক 
গ) মুগা (Muga silk) সিল্ক

উপরোক্ত চারটি ভ্যারাইটির মধ্যে মোট উৎপাদনের ৮০% মালবেরি সিল্ক ইন্ডাস্ট্রিতে উৎপাদনের জন্য ব্যবহৃত হয়।

১) মালবেরি সিল্ক (Mulberry silk) -

মালবেরি পাতা খেয়ে পঙ্গু পোকা যে সিদ্ধ ফাইবার উৎপন্ন করে তাই মালবেরি সি। এ ভ্যারাইটির সিঙ্ক মানের দিক থেকে খুবই উন্নত এবং বৈচিত্র্য পূর্ণ কাপড় তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। বিভিন্ন ধরনের শাড়ি যেমন- কাঞ্চিপুরম, কাশ্মীরি, বানারস ও মাইশার শাড়ি তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।

 তসড় সিল্ক (Tassor silk)-
সাই, অর্জুন নামে বন্য গাছে এ ভ্যারাইটির সিল্ক পাওয়া যায়। ইহা মানের দিক থেকে কিছুটা নিম্নমানের কিন্তু চাকচিক্যতা বেশি।

ইরি (Eri silk) সিল্ক- 
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, চীন ও পূর্ব ভারতে এ ধরনের সিল্ক পাওয়া যায়। সাধারণত পাহাড়ি অঞ্চলে যেখানে শীতের সময় ১২০ সে. তাপমাত্রা সীমাবদ্ধ থাকে সে অঞ্চলে এ ধরনের সিল্ক উৎপন্ন হয়। আর্দ্রতা ৮০-১০০% -এর মধ্যে হবে। এ ধরনের সিল্ক সাধারণত বাড়িতে উৎপন্ন করা হয় না।

গ) মুগা (Muga silk) সিল্ক- 
ভারতের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলে এ ধরনের সিদ্ধ পাওয়া যায়। মুগা পোকা দ্বারা সোনালি হলুদ সিন্ধ উৎপাদন করা হয়। এ মুগা পোকা সম (Som) এবং সোলু (Solu) পাতা খেয়ে সোনালি হলুদ সিল্ক উৎপাদন করে।

সিল্ক উৎপাদনকারী দেশসমূহ-
এশিয়ার দেশসমূহের মধ্যে যখন ব্যাপকভাবে রেশম চাষ শুরু হয় তখন রেশম পোকার বিভিন্ন ধরনের রোগের আবির্ভাব ঘটে। ফলে ত্রুটিযুক্ত কোকুন উৎপাদন হয়। যা ফিলামেন্ট সংগ্রহের জন্য সুবিধাজনক নয়। 

জাপানই সর্বপ্রথম বিজ্ঞানসম্মতভাবে রেশম পোকার চাষ ও ত্রুটিমুক্ত কোকুন সংগ্রহের মাধ্যমে ভালো রেশম উৎপাদনের মাধ্যমে সর্বোচ্চ উৎপাদনের দেশ হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। পরবর্তীতে নিম্নলিখিত দেশ সমুহেও বিজ্ঞানসম্মতভাবে রেশম পোকার চাষ শুরু করে এবং পরিচিতি লাভ করে। 

চীন, ভারত, ইতালি, স্পেন, ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া, ইরান, তুরস্ক, গ্রিস, সোভিয়েত রাশিয়া, সাউথ কোরিয়া, ব্রাজিল, সিসিলি, সিরিয়া, বুলগেরিয়া ইত্যাদি। রেশম চাষ ও পলু পালনের জন্য খুব ভালো দেখা শোনার প্রয়োজন এবং ফিলামেন্ট সংগ্রহের ক্ষেত্রে দক্ষ শ্রমিকের প্রয়োজন রয়েছে।

কাঁচা সিল্ক (Raw silk) -

কাঁচা সিল্ক যা গামসহ থাকে সে সিদ্ধকে হার্ড সিল্ক এবং ডিগ্রামিং করার পর সিল্ককে সফট সিল্ক বলে।

কাঁচা সিল্ক ফাইবারে গাম বা সেরিছিন নামক প্রাকৃতিক অপদ্রব্য থাকে, যা সিল্ক -এর অন্যতম প্রাকৃতিক অপদ্রব্য। এ সেরিছিনের পরিমাণ প্রায় সমগ্র সিল্কের ওজনের ২০% । উপরোক্ত অপদ্রব্য ছাড়াও কিছু প্রাকৃতিক মোম, চর্বি ও কালার পিগমেন্ট থাকে। সিল্কের সেরিছিন ও অন্যান্য অপদ্রব্য স্কাওয়ারিং- -এর প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দূর করা হয়। এ প্রক্রিয়াকে সিল্ক ডিগামিং বলে।

সিল্ক ডিগামিং বা স্কাওয়ারিং এজেন্ট হিসেবে সাধারণত ১) সাবান ২ ) সোডিয়াম কার্বনেট ও বাই কার্বনেটের মিশ্রণ ৩) সিনথেটিক ডিটারজেন্ট ব্যবহৃত হয়।

সেরিকালচার এর সংজ্ঞা-
সিল্ক কোকুন ও সিল্ক ওয়ার্ম চাষ পদ্ধতিসমূহকেই সেরিকালচার বলা হয়েছে। রেশম পোকাকে আমাদের দেশের পলু পোকা বলে। এই পলু পোকা পালনপূর্বক গুটি উৎপাদনকেই ইংরেজিতে সেরিকালচার বলে।

বাংলাদেশে রেশম চাষ পদ্ধতি - 
রেশম পোকা বা পলু পোকা পালনের জন্য চারটি অবস্থা রয়েছে, ডিম্ব থেকে শুরু করে পুনরায় ডিম্ব এ চলে আসাকে নিয়ে একটি জীবন চক্র তৈরি করা হয়েছে। পলু পোকার জীবন চক্র নিচে প্রদত্ত হলো।

ডিম্ব (Egg) -

ডিম্বগুলো বেছে বেছে ভালোগুলো নির্ধারণ করে ডিম পাড়ার পর কমপক্ষে ছয় সপ্তাহ কোল্ড স্টোরে রেখে দিতে হবে। অতঃপর ডিম্বগুলো ১২ থেকে ১৫ দিন ইনকিউবেটরে রেখে দিতে হবে। ইনকিউবেটরে তাপে ডিমগুলো থেকে সিল্ক কীট বের হয়ে আসে। সাধারণত ১ আউন্স ডিম থেকে প্রায় ৩৬০০০ সিল্ক কাঁট বের হয় । কীট বের হওয়ার পর একটি ছিদ্রযুক্ত কাগজ দ্বারা কীটগুলো ঢেকে দিতে হবে। কীটগুলো তখন থেকে সরবরাহকৃত তুঁত পাতা খেতে শুরু করে এবং আস্তে আস্তে ছিদ্র থেকে ছিদ্রযুক্ত কাগজের উপর বের হয়ে আসে নিচে তলার উপর অপদ্রব্য ও ডিমের খোসাসমূহ থেকে যায়।

পলু পোকা (Caterpiller)-

ডিম থেকে পলু পোকা বের হওয়ার পর এটি ২০ থেকে ৩০ দিন দৈনিক ৫ বার তুঁত (Mullberry) পাতা খেতে থাকে। এ সময় পলু পোকা খুব ক্ষুধার্ত থাকে, তখন এরা প্রায় ১/৪ ইঞ্চি লম্বা থাকে। এ সময় পলু পোকার ভালো পরিচর্যার প্রয়োজন। এ অবস্থায় তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা নিয়ন্ত্রিত অবস্থায় রাখা প্রয়োজন। সঠিক তাপমাত্রায় ২৫° c. এবং আর্দ্রতা ৭৫ থেকে ৮০% এ সময়ে পলু পোকা বা রেশম পোকার একমাত্র কাজ তুঁত পাতা খাওয়া এবং এটি চারবার তার খোলস বা স্কিন (Skin) পরিবর্তন করে। পোকা খোলস বদলানোর সময় পাতা খাওয়া বন্ধ করে নিস্তেজ হয়ে পড়ে এবং পাতা থেকে মুখ তুলে চুপচাপ থাকে। পরপর চারবার খোলস পরিবর্তন করার পর পশম অবস্থায় পলু পোকা প্রায় ১০ দিন এক নাগাড়ে শুধু পাতা খায়। এ সময় পোকার দৈর্ঘ্য প্রায় ৩ ইঞ্চি লম্বা ও ৫ গ্রাম ওজনের হয়। পঞ্চম অবস্থায় শেষ দিকে পলু পোকা গুটি তৈরির জন্য প্রস্তুত হয় । এ সময় পোকার শরীর স্বচ্ছ থাকে। আস্তে আস্তে ফিলামেন্ট তৈরি করতে থাকে। সিল্ক ওয়াম -এর মাথায় একটি টিউবের (স্পিনারেটের মতো) মধ্য দিয়ে দুটি ফিলামেন্ট বের হয় এবং পলু পোকার শরীরের চারদিকে জড়ানো থাকে। প্রতিটি ফিলামেন্ট পরস্পর গায়ে লেগে থাকার জন্য একটি আলাদা পদার্থ (যা সেরিসিন নামে পরিচিত) ব্যবহৃত হয়। আস্তে আস্তে সিল্ক ওয়ার্ম নিজের চারদিকে একটি শক্ত আবরণে আবৃত করে ফেলে এবং কোকুন গঠন করে। এ প্রক্রিয়া সাধারণত ২ থেকে ৩ দিন ধরে চলে।

পিউপা (Pupa)- 

কোকুন তৈরি সমাপ্ত হওয়ার পর ৮-১০ দিনের মধ্যে ফিলামেন্টসমূহ সংগ্রহ করা না হলে সিল্ক ওয়ার্ম প্রজাপতি (Moth) হয়ে কোকুন কেটে বের হয়ে আসে। তখন কোকুন অর্থাৎ গুটিতে একটা গর্ত তৈরি হয় ফলে উক্ত গুটি দ্বারা ফিলামেন্ট সংগ্রহ করা সম্ভব হয় না। কারণ গুটি কাটার ফলে ফিলামেন্টসমূহ হাজার টুকরা হয়ে যায়। কোকুন উৎপাদনের পর কারখানায় নিয়ে কোকুন থেকে রেশম ফিলামেন্ট উত্তোলন করা হয়। কোকুন থেকে কিছু ভালো কোকুন বেছে রেখে দেওয়া হয়, যা পরবর্তীতে প্রজাপতি আকারে বংশ বিস্তার করে।

মথ (Moth)- 

পরিপূর্ণ কোকুন থেকে যে পোকা বেরিয়ে আসে তাকে মথ বলে। মথগুলোর মধ্যে স্ত্রী ও পুরুষ উভয়ই থাকে। মথ অবস্থায় -এরা তখনও চোখে দেখে না। এ অবস্থায়ই একে অপরের সাথে মিলন ঘটায় এবং স্ত্রী মথগুলো ডিম পাড়ে এবং পরবর্তী জীবনচক্র আবার শুরু হয়। স্ত্রী মথ একাধারে ৩৫০-৪০০ ডিম পাড়ে। ডিম পাড়ার পর মথ মারা যায়।

সিল্ক বাছাই পদ্ধতি- 

অন্য সমস্ত প্রাকৃতিক ফাইবার থেকে সিল্ক ফাইবার সম্পূর্ণ আলাদা। অন্য সমস্ত প্রাকৃতিক ফাইবার ছোট দৈর্ঘ্যের থাকে কিন্তু সিল্ক ওয়ার্ম - এর কোকুন থেকে টুইন ফিলামেন্ট সংগ্রহ করা হয়। যার দৈর্ঘ্য প্রায় এক মাইলের মতো হয়ে থাকে। কোকুন থেকে অবিচ্ছিন্ন দৈর্ঘ্যের ফিলামেন্ট সংগ্রহ করার পর এটি পাকানো হয় এবং একটি নির্দিষ্ট ব্যাসের বা কাউন্টের সুতা তৈরি করা হয়। কোকুন থেকে ফিলামেন্ট সংগ্রহ কয়েকটি ধাপে সংঘটিত হয়।

স্টিফন্সিং (Stifling)- 

প্রথমেই কোকুনের অভ্যন্তরে জীবিত মথকে স্টিম অথবা গরম পানি দ্বারা মেরে ফেলা হয়। তাতে ফিলামেন্ট সংগ্রহ করতে সুবিধা হয়।

সর্টিং অথবা গ্রেডিং (Sorting or grading)- 

সুষম ও ভালো মানের সিল্ক সুতা পাওয়ার জন্য সিল্ককে গ্রেডিং করা হয়। কোকুন বিভিন্ন আকারের হয়। একই আকারের বা গ্রেডিংয়ের রঙের কোকুন আলাদা আলাদা গ্রুপ করা হয়। নষ্ট হওয়া বা ভালোভাবে পরিপক্ক না হওয়ায় কোকুন বাদ দেওয়া হয়, যা ওয়েস্ট ইন্ডাস্ট্রিতে ব্যবহৃত হয়।

কুকিং (Cooking)- 

ফিলামেন্টের সাথে প্রকৃতিগতভাবেই আঠালো পদার্থ লেগে থাকে যা সেরিসিন (Sericin) বা সিল্ক গাম নামে পরিচিত। এ সেরিসিন নরম না করলে ফিলামেন্ট সংগ্রহ করা সম্ভব হয় না। একটি পাত্রে ১% সাবানের দ্রবণ ৯০°c. তাপমাত্রায় তাপ দেওয়া হয়। তাতে সেরিসিন নরম হয় এবং এ প্রক্রিয়া মাত্র কয়েক মিনিটের জন্য করা হয় ।

ব্রাশিং (Brushing)- 

কুকিং-এর পর রিলিং-এর পূর্বে ফ্লোস (Floss), ব্রাশের মাধ্যমে দূর করা হয়, যতক্ষণ না পর্যন্ত ফিলামেন্ট -এর প্রাপ্ত না পাওয়া যায়। কোকুনের উপরের এলোমেলো বা টুকরা ফাইবারসমূহকে ফ্লোস বলে। এ ফ্লোস রেশম ওয়েস্ট ইন্ডাস্ট্রিতে ব্যবহৃত হয়।

রিলিং Reeling- 

কোকুনকে ব্রাশিং -এর পর একটি বেসিনে নেওয়া হয়। যাতে ৬০°C তাপমাত্রায় পানি থাকে। রিলিং-এ কর্মরত শ্রমিকের অভিজ্ঞতা ও দক্ষতার প্রয়োজন রয়েছে। সুন্দর ও সুশৃঙ্খলভাবে ফিলামেন্ট সংগ্রহের জন্য অতি যত্নসহকারে প্রতিটি কোকুনের প্রাপ্ত নিয়ে রিলিং -এর মাধ্যমে রেশম সংগ্রহ করা হয়। 

যে প্রক্রিয়ায় কোকুন থেকে ফিলামেন্ট উত্তোলন করা হয় তাকে রিলিং বলা হয়। কোকুনের ফিলামেন্ট - -এর ব্যাস কোকুন থেকে কোকুনের আলাদা হয়। কাজেই ফিলামেন্ট সংগ্রহ করার সময় ও সুতা তৈরির সুবিধার্থে একসঙ্গে ১৫ থেকে ১৮টি ফিলামেন্ট রিলিং করা হয়। যাতে ২৮ থেকে ৩০ ডেনিয়ার সুতা প্রস্তুত হয়। রিলিং প্রক্রিয়ায় প্রাপ্ত ফিলামেন্ট বান্ডেলে রূপান্তরিত করা হয়। বান্ডেলের ওজন ৫ থেকে ১০ কেজি এবং বেইল- এর ওজন সাধারণত ৬০ কেজি হয়।

সিল্কের রাসায়নিক গুণাবলি (Chemical properties of Silk ) -

১) অ্যাসিডে ক্রিয়া                           :  উলের মতো। ঘন শক্তিশালী অ্যাসিড সিল্ক ধ্বংস করে। কিন্তু হালকা অ্যাসিডে কোনো ক্ষতি হয় না।

২) অ্যালকালিতে ক্রিয়া                    : উলের চেয়ে অ্যালকালিতে প্রতিরোধ ক্ষমতা ভালো। গরম সোডিয়াম হাইড্রক্সাইড (NaOH) সিল্ক দ্রবীভূত করে।

৩) রিচ এ ক্রিয়া                                : অক্সিডাইজিং ব্লিচ কোনো ক্ষতি করে না। কিন্তু অক্সিডাইজিং এজেন্ট, ক্লোরিন সল্ট ক্ষতি করে।

৪) আলোর প্রতিরোধক ক্ষমতা          : ভালো নয়।

৫) জৈবিক দ্রাবক                             : প্রতিরোধ ক্ষমতা ভালো।

৬) মিলডিউ-এ প্রতিরোধ ক্ষমতা       : কিছুটা আক্রান্ত হয়।

৭) পোকামাকড়ে প্রতিরোধ ক্ষমতা     : ভালো, পোকামাকড় কোনো আক্রমণ করে না।

৮) রং করার ক্ষমতা                           : অত্যন্ত ভালো। সাধারণত অ্যাসিড ডাই দ্বারা রং করা হয় ।

সিঙ্কের ব্যবহার- 

  • যেহেতু বাইরের আবহাওয়া থেকে শরীরকে রক্ষা করে, কাজেই ইহা শীতকালীন অ্যাপারেল হিসেবে ব্যবহৃত হয়। 
  • হার্ড সিল্ক দ্বারা জর্জেট, শীপন, ক্রেপ ফেব্রিক্স তৈরি হয়। 
  • মালবেরি সিল্ক থেকে ইহার নমনীয়তার জন্য খুব উন্নতমানের এবং বৈচিত্র্যপূর্ণ কাপড়, শাড়ি যেমন- কাঞ্চিপুরম, কাশ্মীরি, বানারস, মাইশারি সিল্ক তৈরি হয়। 
  • তসর সিল্ক (Tossor) দিয়ে বিভিন্ন ধরনের শৌখিন পোশাক, সজ্জামূলক কাপড় ইত্যাদি তৈরি হয়। স্পান সিল্ক থেকে পাইল ফেব্রিক, ড্রেস ম্যাটারিয়াল, লাইনিং, ভেলভেট, ইনসুলেটিভ ম্যাটারিয়াল ইত্যাদি তৈরি হয়। 
  • বন্য সিল্ক (Wild silk) খুবই টেকসই ও মোটা থাকার কারণে বিভিন্ন ধরনের সাধারণ কাপড় তৈরি হয়। 
  • সিল্ক নয়েল দ্বারা খেলাধুলার পোশাক, পর্দার কাপড়, ঝালর ইত্যাদি তৈরি হয়।
Content added By

বস্ত্রে ব্যবহৃত সুতা

কাপড় তৈরির জন্য যে কাঁচামাল ব্যবহার করা হয় তাই সুতা (Yarn)। যে সুতা দ্বারা কাপড় তৈরি করা হয় উক্ত কাপড়ের গুণাবলি কিছুটা সুতার গুণাবলির উপর নির্ভরশীল অর্থাৎ সুতা কাপড়ের গুণাবলিকে নিয়ন্ত্রিত ও প্রভাবিত করে । একটি সুতার গুণাবলির আদর্শ মান বজায় থাকলেই কেবল তা দ্বারা কাঙ্ক্ষিত মানসম্পন্ন কাপড় তৈরি করা যায়। বর্তমানে প্রতিযোগিতামূলক বাজারে সুতার ভালো গুণের উপরই উৎপাদিত কাপড়ের চাহিদা বৃদ্ধি করবে ।

ওভেন কাপড় তৈরির জন্য সাধারণত ২ সিরিজ সুতার প্রয়োজন। এক সিরিজ টানা সুতা ও অপর সিরিজ পড়েন। সুতা। এই দুই সিরিজ টানা ও পড়েন সুতা পরস্পর সমকোণে বন্ধনীর মাধ্যমে ওভেন কাপড় তৈরি করে। পাশাপাশি লুপ গঠনের মাধ্যমে নিটেড কাপড়ও জমাট বাঁধিয়ে ফেলটেড কাপড় প্রস্তুত করা হয়। ওভেন কাপড় তৈরির জন্য ব্যবহৃত টানা ও পড়েন সুতার গুণাগুণ ভিন্ন থাকে। সাধারণত টানা সুতার শক্তি বেশি ও পড়েন সুতার শক্তি কম থাকে। স্পিনিং, ওয়ান্ডিং বিভাগ হতে প্রাপ্ত সুতা বিভিন্ন প্যাকেজ আকারে পাওয়া যায়। যেমন কোন (Cone), স্কুল (Spool), চিজ (Cheese), হ্যাংক (Hank) ইত্যাদি। যা বস্ত্র তৈরির কাজে ব্যবহৃত হয়।

সুতার সংজ্ঞা (Definition of yarn) - 
নির্দিষ্ট নিয়মে টেক্সটাইল ফাইবারকে টুইস্ট দিয়ে যথেষ্ট দৈর্ঘ্যবিশিষ্ট দ্রব্য তৈরি করা হয়। যার দৈর্ঘ্যের তুলনায় ব্যাস খুবই নগণ্য এবং পর্যাপ্ত শক্তিসম্পন্ন এইরূপ দ্রব্যকে সুতা বা ইয়ার্ন বলা হয় ।

সুতার বৈশিষ্ট্য (Characteristics of Yarn ) - 
ওভেন ও নিটেড কাপড় প্রস্তুতের জন্য ব্যবহৃত সুতার নিম্নলিখিত গুণাগুণ থাকা প্রয়োজন ।

কাউন্ট (Count)-
কাপড় তৈরির জন্য ব্যবহৃত সুতা চাহিদা মোতাবেক সঠিক কাউন্টের হতে হবে।

সুসমতা (Uniformity)- 
সুতা অবশ্যই সুসম হতে হবে নতুবা উৎপাদিত কাপড় সুসম অর্থাৎ ভালো মানের হবে না।

শক্তি (Strength)- 
সুতার প্রয়োজনীয় শক্তি এবং পাশাপাশি শক্তির সমতা থাকতে হবে ।

সুতার মোটা ও চিকন জায়গা (thick and thin place)-
 সুতার মোটা ও চিকন জায়গা ও স্লাব কম থাকতে হবে।

হেয়ারিনেস (Hairiness ) - 

সুতায় হেয়ারিনেস কম থাকতে হবে। অতিরিক্ত হেয়ারিনেস কাপড়ের মান খারাপ করে।

সুতার গিঁট (Knot)- 
সুতার গিঁট আদর্শ ধরন ও আকারের হতে হবে। যাতে উক্ত সুতা দ্বারা কাপড় বয়নের সময় উক্ত সুতা সাটেলের মধ্য দিয়ে সহজেই অতিক্রম করতে পারে।

পরিষ্কার (Clean)- 
কাপড় তৈরির জন্য ব্যবহৃত সুতা অবশ্যই পরিষ্কার হতে হবে।

সুতার প্রয়োজনীয় আর্দ্রতা (Relative humidity)- 
সুতায় প্রয়োজনীয় পরিমাণ আর্দ্রতা থাকতে হবে। নতুবা কাপড় বয়নের সময় সুতা ছেঁড়ার হার বৃদ্ধি পাবে।

সুতার শ্রেণি বিভাগ (Classification of yarn) - 
সুতাকে সাধারণত দুইভাগে ভাগ করা যায়। যথা- 
১) স্ট্যাপল সুতা (Staple yarn) 
২) ফিলামেন্ট সুতা (Fillament yarn)

স্ট্যাপল সুতা (Staple yarn) - 
এক্ষেত্রে সুতা তৈরির জন্য এবং তৈরি সুতা পাকানোর জন্য ফাইবারের দৈর্ঘ্য একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সাধারণত প্রকৃতি থেকে যে সমস্ত ফাইবার পাওয়া যায়, তা স্ট্যাপল আকারে পাওয়া যায় (শুধু রেশম ব্যতীত)। তবে কৃত্রিম ফিলামেন্ট হিসেবে পাওয়া ফাইবারকে প্রয়োজনমতো কেটে ছোট ছোট টুকরো অর্থাৎ স্ট্যাপল আকারে নিয়ে স্ট্যাপল সুতা তৈরি করা হয়। টেক্সটাইল ফাইবারের স্ট্যাপল লেংথ ১ সেন্টিমিটারের কম হয় না। স্ট্যাপল ফাইবার সাধারণত প্রাকৃতিক, কৃত্রিম ও ফিলামেন্ট টো হিসেবে পাওয়া যায়। স্ট্যাপল ফাইবারের তৈরি সুতাকেই স্পান ইয়ার্ন বলা হয়।

ফিলামেন্ট সুতা (Fillament yarn) - 
দীর্ঘ অবিচ্ছিন্ন ফাইবারকে ফিলামেন্ট সুতা বলা হয়। ফিলামেন্ট দুইভাবে ব্যবহার হয়। মনো ফিলামেন্ট ও মাল্টি ফিলামেন্ট। যদি এককভাবে একটি ফিলামেন্টকে সুতা হিসেবে ব্যবহার করা হয় তা মনো ফিলামেন্ট। আবার একাধিক ফিলামেন্টকে একত্রিতভাবে বা পাক দিয়ে সুতা তৈরির ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়। তখন একে মাল্টি ফিলামেন্ট বলে।

প্রাকৃতিকভাবে প্রাপ্ত শুধু রেশম ফাইবারকেই ফিলামেন্ট আকারে পাওয়া যায়। কিন্তু কৃত্রিম উপায়ে তৈরি সকল প্রকার ফাইবার রাসায়নিক পদার্থ থেকে উৎপত্তি। প্রতিটি ফাইবার স্পিনারেট এর ছিদ্র দ্বারা লম্বা ও অবিচ্ছিন্নভাবে তৈরি হয় অর্থাৎ কৃত্রিমভাবে তৈরি স্পিনারেট থেকে টেনে বের করা হয়। এ ফাইবারগুলোকে ফিলামেন্ট বলা হয়।

উইভিং -এ ব্যবহৃত সুতার গুণাগুণ- 

• সুতাকে অবশ্যই সুষম হতে হবে। 
• সুতাকে অবশ্যই পরিষ্কার হতে হবে। 
• কাপড় বয়নের সময় এবং ঘর্ষণ এ যাতে অতিরিক্ত সুতা ছিড়ে না যায় সে রকম মজবুত অবশ্যই হতে হবে।
• সুতার গিঁট আদর্শ ধরন ও আকারের হতে হবে। যাতে শানা ও মাকুর মধ্য দিয়ে সহজেই অতিক্রম করতে পারে। 
• টানা সুতায় মাড় দিতে হবে এবং মাড়ের পরিমাণ এমন হতে হবে যাতে বয়নের সময় শানা ও ঝাপের ঘর্ষণ হতে টানা সুতাকে রক্ষা করতে পারে । 
• টানা সুতা লুমের বিমে সমান্তরাল আকারে জড়াতে হবে যাতে প্রতিটি সুতায় সমান টান থাকে। 
• প্রতিটি টানা সুতা সঠিক দৈর্ঘ্যের হতে হবে এবং সেখানে কোনো ছেঁড়া সুতা থাকা চলবে না । 
• সুতা অবশ্যই স্থিতিস্থাপক গুণসম্পন্ন হতে হবে। 
• পড়েন সুতাকে অবশ্যই যথাসম্ভব গিঁট মুক্ত হতে হবে। 
• সুতাকে অবশ্যই কম হেয়ারিনেস হতে হবে।

সুতার ত্রুটি (Yarn faults)-

সুতায় সাধারণত নিম্নলিখিত ত্রুটি দেখতে পাওয়া যায়।
• স্লাব ( Slub)
• র্স্নাল (Snarl) 
• সফট ইয়ার্ন (Soft Yarn) 
• ওয়েল স্টেইন ইয়ার্ন (Oil stain yarn) 
• ক্র্যাকার্স (Crackers ) 
• ব্যাড পিসিং (Bad Piecing) 
• হেয়ারিনেস (Hairiness ) 
• কিটি ইয়ার্ন (Kitty yarn) ফরেইন ম্যাটারস (Foreign matters ) 
• থিক অ্যান্ড থিন প্লেস ( Thick and thin place ) 
• নেপি ইয়ার্ন (Neppy yarn) 
• স্পান ইন ফ্লাই (Spun in fly) ওয়েলি স্লাব (Oily slub ) 
• কর্ক স্ক্রু (Cork screw yarn)

স্মাৰ (Slub ) - 
সাধারণের চেয়ে অনেক মোটা গুচ্ছ ফাইবারযুক্ত সুতা যাতে পাক কম থাকে।

পরিণতি- 

• পরবর্তী প্রসেসে সুতা ছেঁড়ার হার বৃদ্ধি পায়। 
• কাপড়ের পৃষ্ঠদেশ খারাপ দেখায় কোথাও কোথাও গর্ত দৃষ্টিগোচর হয়। 
• রংকৃত কাপড়ে শেডের তারতম্য লক্ষ্য করা যায়।

কারণ- 

• মেশিনের অংশে একত্রে ফ্লাই জমা হয়ে সুতার সাথে জড়িয়ে যায়। 
• কার্ডিং যথাযথ না হলে।
• খারাপ পিসিং হলে। 
• টপ রোলার ক্লিয়ারার ঠিকমতো কাজ না করলে।
• প্রতিকার - মেশিনের পৃষ্ঠদেশ সব সময় পরিষ্কার রাখতে হবে।
• কার্ডিং মেশিনে যাতে যথাযথ কার্ডিং হয় তার প্রতি দৃষ্টি দিতে হবে। 
• সঠিক পিছিং করতে হবে। টপ রোলার ক্লিয়ারার যাতে সঠিকভাবে কাজ করে তার প্রতি দৃষ্টি দিতে হবে।

 

র্স্নাল (Snarl)-

সুতায় টুইস্ট দেওয়ার পর পরিমিত টেনসনে না রাখার ফলে এরূপ স্নার্স -এর সৃষ্টি হয়।

পরিণতি- 

• পার্শ্ববর্তী সুতার সাথে জড়িয়ে সুতা ছেঁড়ার হার বৃদ্ধি পায়। 
• কাপড়ের পৃষ্ঠদেশে ক্ষতি সাধন করে । 
• রঙিন কাপড়ের শেডের তারতম্যের সৃষ্টি করে।

কারণ- 
• প্রয়োজনীয় পাকের চেয়ে বেশি পাক প্রদান করলে। 
• যদি খুব বড় লম্বা চিকন সুতা থাকে।

প্রতিকার- 

• সুতায় প্রয়োজনীয় পরিমাণ পাক প্রদান করতে হবে। 
• চিকন সুতা কমানোর লক্ষ্যে ড্রাফটিং জোন ঠিক রাখতে হবে। 
• সুতা তৈরির পর কন্ডিশনিং করতে হবে। 
• সুতা যথাযথ টেনশনে রাখতে হবে।

সফট ইয়ার্ন (Soft Yarn)- 
সুতার কম পাকের কারণে দুর্বল দৃষ্টিগোচর হয়।

পরিণতি- 
• সুতা ছেঁড়ার হার বৃদ্ধি পায় । 
• ডাইং -এর পর শেডের তারতম্য দেখা দেয়।

কারণ - 

• টেপ টিলা ও জকি পুলি ময়লাযুক্ত থাকলে 
• স্পিন্ডেলে ববিন বসানো সঠিক না হলে। 
• সুতায় পাক কম দিলে

প্রতিকার -

• টেপ সঠিকভাবে লাগোনো ও পুলি পরিষ্কার রাখতে হবে। 
• স্পিডেলে ৰবিন সঠিকভাবে বসাতে হবে। 
• সুভায় পাক যথাযথভাবে প্রদান করতে হবে ।

ওরেল স্টেইন ইয়ার্ন (Oll stain yarn)- 
সুতার তৈলের দাগ থাকা।

পরিণতি -

• কাপড়ের পৃষ্ঠদেশ খারাপ হওয়া ।
• কাপড়ের উপর কালো দাগ পড়া

কারণ -

• বিভিন্ন মুভিং পার্টস ওভারহেড গুলি ইত্যাদিতে ওয়েলিং -এর সময় সতর্ক না থাকলে । 
• ময়লা ও তৈলাক্তযুক্ত হাত দ্বারা পিছিং করলে। 
• সুভা ও সুতার প্যাকেজ হ্যান্ডলিং -এ সতর্ক না হলে।

প্রতিকার- 

• সুতা ও সুতার প্যাকেজ হ্যান্ডলিং -এ সতর্ক হতে হবে। 
• শুরেগিং করার সময় সতর্ক হতে হবে

ক্র্যাকারস (Crackers)-

খুব ছোট ছোট ফার্ল -এর মতো এবং স্প্রিং-এর মতো দেখতে সুভাকে ক্র্যাকারস বলে।

পরিণতি- 

• ওয়াইভিং -এ সুভা ছেঁড়ার হার বৃদ্ধি পায়। 
• পলিয়েস্টার ও কটন ব্লেন্ডেড সুতায় বেশি দেখা যায়।

কারণ -

• যদি মাত্রাতিরিক্ত বড় ও ছোট দৈর্ঘ্যের আঁশের মিক্সিং করা হয়। 
• রোলার সেটিং খুব কাছাকাছি হলে। 
• কটন সুতায় বেশি পাক দিলে।

প্রতিকার - 

• কাছাকাছি দৈর্ঘ্যের আঁশের সাথে মিক্সিং করতে হবে। 
• রোলার সেটিং সঠিকভাবে করতে হবে। 
• সুতার পাক যথাযথ হতে হবে।

ব্যাড পিসিং (Bad Piecing)- 

খারাপভাবে পিছিং করার কারণে সুতায় মোটা অংশ বৃদ্ধি পায়। 

পরিণতি- 

• পরবর্তী প্রক্রিয়ায় সুতা ছেঁড়ার হার বৃদ্ধি পায় । 
• হার্ড ওয়েস্ট বৃদ্ধি পায়। 

কারণ-

• স্পিনারের অবিভক্ততার অভাবের কারণে পিছিং -এ ডাবল সুতার কারণে সুতায় মোটা অংশ বৃদ্ধি পায়। 
• সুতায় গিড়া দেওয়ার পরিবর্তে পাক দিয়ে ছিঁড়ে দিলে । 

প্রতিকার- 

• সঠিকভাবে পিছিং করতে হবে। 
• স্পিনিং ফ্রেমে সেপারেটর রাখতে হবে।

হেয়ারিনেস (Hairiness ) -
মূল সুতার স্ট্রাকচারের সাথে আলগা আঁশের পরিমাণ বৃদ্ধি পেলে।

পরিণতি- 

• ওয়াইন্ডিং -এ সুতা ছেঁড়ার হার বৃদ্ধি পায়। 
• কাপড়ের পৃষ্ঠদেশ অসম হয়। 
• পলিয়েস্টার কটন ব্লেন্ডেড কাপড়ে গুটি গুটি বিড -এর সৃষ্টি হয়। 

কারণ- 

• কাছাকাছি গুণাগুণসম্পন্ন আঁশের মিশ্রণ না হলে । 
• স্পিনিং ফ্রেমে ভাঙা রিং ও হালকা ট্রাভেলার ব্যবহার করলে। 
• আর্দ্রতা কম, রোলার সেটিং কাছাকাছি এবং স্পিন্ডেলের গতি বেশি হলে। 

প্রতিকার- 

• মিক্সিং -এ সতর্ক থাকতে হবে। 
• স্পিনিং-এ রিং ট্রাভেলার ইত্যাদি যথাযথ থাকতে হবে। 
• আপেক্ষিক আর্দ্রতা যথাযথ রাখতে হবে। 
• রোলার সেটিং, স্পিন্ডেলের গতি নিয়ন্ত্রিত রাখতে হবে। 

কিটি ইয়ার্ন (Kitty yarn) - 
ট্রাস, পাতার টুকরা, ভাঙা বীজ, কালো দাগ ইত্যাদি সুতার মধ্যে থেকে যাওয়া।

পরিণতি- 

• কাপড় খারাপ হবে 
• ডাইং এর সময় কাপড়ের ক্ষতি হতে পারে নিটিং -এ নিডেল ভেঙে যেতে পারে। । 
 • ওয়াইন্ডিং-এ খারাপ ফলাফল আসতে পারে। 

কারণ- 

• ব্লো-রুম ও কার্ডিং -এ ক্লিনিং যথাযথ না হলে । 
• খুব বেশি ট্রাস যুক্ত তুলা ব্যবহার করলে। 

প্রতিকার- 

• ব্লো-রুম ও কার্ডিং -এ ক্লিনিং দক্ষতা বৃদ্ধি করতে হবে। 
• আর্দ্রতা যথাযথ রাখা নিশ্চিত করতে হবে।

ফরেইন ম্যাটারস (Foreign matters ) -
ধাতুর টুকরো, পাটের আঁশ ও অন্যান্য দ্রব্যাদি সুতায় পাওয়া যায়।

পরিণতি- 

• ওয়াইন্ডিং-এ সুতা ছেঁড়ার হার বৃদ্ধি পায়। 
• কাপড়ের পৃষ্ঠে গর্ত ও দাগ তৈরি হয়। 
• কাপড়ের পৃষ্ঠদেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। 

কারণ- 

• ট্রাভেলারের হ্যান্ডলিং যথাযথ না হলে। 

• মিক্সিং -এ প্রস্তুতি যথাযথ না হলে। 

প্রতিকার- 

• মিক্সিং-এর প্রস্তুতিতে ফরেন ম্যাটার দূর করতে হবে। 
• ব্রো-রুমে ম্যাগনেটিক ব্যবস্থার মাধ্যমে ধাতুর টুকরা দূর করতে হবে।

থিক এন্ড পিন প্লেস (Thick and thin place ) - 
সুতার মধ্যে মোটা ও চিকন থাকা

পরিণতি- 

• ওয়াইন্ডিং-এ সুতা ছেঁড়ার হার বৃদ্ধি পায়। 
• কাপড়ের পৃষ্ঠদেশ খারাপ দেখায়। 
• নিটিং -এ কাপড় ভালো হয় না।

কারণ- 

• টপ ও বটম রোলার এক্সসেনট্রিক হলে। 
• টপ রোলারের প্রেসার সঠিক না হলে। 
• অ্যাপ্রোন খারাপ হলে। 
• গিয়ার হুইলের দাঁত ভাঙা থাকলে। 

প্রতিকার- 

• টপ ও বটম রোলারের এক্সসেনট্রিক দূর করতে হবে। 
• টপ রোলারের প্রেসার সঠিক রাখতে হবে। 
• অ্যাপ্রোন ও গিয়ার পরিবর্তন করে নতুন লাগাতে হবে

নেপি ইয়ার্ন (Neppy yarn)- 
সুতার সাথে ছোট গুটি আকারে নেপ জড়িয়ে থাকে। 

পরিণতি - 

কাপড়ের পৃষ্ঠদেশ খারাপ দেখায়। 

কারণ- 

• ব্রো-রুমে যথাযথ ওপেনিং না হলে। 
• সেটিং সঠিক না থাকার কারণে কার্ডিং যথাযথ না হলে। 
• কম মাইক্রোনিয়ার যুক্ত কটন ব্যবহার করলে। 
• ব্লো-রুমে বাইপাসে খুব বেশি ইউ (U) টার্ন থাকলে । 

প্রতিকার- 

* রো-রুমের ওপেনিং সঠিক করতে হবে। 
* সেটিং সঠিক করে যথাযথ কার্ডিং করতে হবে। 
* ম্যাচিউর কটন ব্যবহার করতে হবে। 
* ব্রো-রুমের বেশি ইউ টার্ন কমাতে হবে।

স্পান ইন ফ্লাই (Spun in fly)- 
সুতা টুইস্ট দেওয়ার সময় ফ্লাই উড়ে এসে সুতার পৃষ্ঠে লেগে যায়।

পরিণতি- 

* ওয়াইন্ডিং বিভাগে সুতা ছেঁড়ার হার বৃদ্ধি পায় । 

কারণ- 

* মেশিনের বিভিন্ন অংশের ফ্লাই জমা থাকলে । 
* যথাযথ ক্লিনিং না হলে। 
* হিউমিডিফিকেশন প্লান সঠিক কাজ না করলে।

প্রতিকার- 

• মেশিনারি সর্বক্ষণ পরিষ্কার রাখতে হবে। 
• ওভারহেড ক্লিনিং সঠিক রাখতে হবে। 
• হিউমিডিফিকেশন যথাযথ করতে হবে। 

ওয়েলি স্লাব (Oily slub)- 

• সুতার পৃষ্ঠে ওয়েল যুক্ত স্লাব থাকলে ।

পরিণতি -

• পরবর্তী প্রসেসে সুতা ছেঁড়ার হার বৃদ্ধি পায় । 
• কাপড় খারাপ হয়।
• রংকরণে শেডের ভারতম্য হয়। 

কারণ- 
• মেশিনের পৃষ্ঠে তৈলযুক্ত ফ্লাই সুতার গায়ে লেগে গেলে । 
• ওয়েলিং ও লুব্রিকেটিং সিস্টেম খারাপ হলে। 

প্রতিকার- 

• সুতা উৎপাদন চলাকালীন সময়ে যাতে ফ্লাই সুতার পৃষ্ঠে লেগে না যায় তার বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। 
• ওয়েলিং ও লুব্রিকেটিং যথাযথভাবে করতে হবে।

কর্ক ইয়ার্ন (Cork screw yarn) - 
ডাবল সুতা অর্থাৎ একটি সুতা সোজা ও অপরটি পেঁচানো থাকে।

পরিণতি

• ওয়াইন্ডিং-এ সুতা ছেঁড়ার হার বৃদ্ধি পায়। 
• উৎপাদিত কাপড় খারাপ দেখায়। 

কারণ- 

• রিং-এ একটি রোভিং -এর স্থলে দুটি রোভিং ফিড করলে। 
• রিং ফ্রেমে সুতা উৎপাদনের সময় পার্শ্ববর্তী সুতা জড়িয়ে গেলে

প্রতিকার-

• রোভিং ফিডিং যথাযথ করতে হবে।
• নিউমোফিল সংগ্রহ ও বাতাসের প্রবাহ সঠিক কিনা তা পরীক্ষা করে যথাযথ রাখতে হবে।

সুতার ত্রুটির উপর নির্ভর করে গ্রেডিং- 

উপরে উল্লিখিত সুতার বিভিন্ন প্রকার ত্রুটিসমূহ বিশ্লেষণ করে একটি নির্দিষ্ট লটের উপর সুতার গ্রেডিং করা হয়। এই গ্রেডিং সাধারণত মিল থেকে মিল কিছুটা আলাদা করে হিসাব করা হয়। ইহা ছাড়াও ক্রেতার চাহিদার প্রতি দৃষ্টি রেখে সুতার গ্রেডিং করা হয়। তবে, সাধারণ নিয়মে সুতার লক্ষণীয় ত্রুটি বিশ্লেষণ করে সুতাকে নিম্নলিখিত গ্রেডিং-এ ভাগ করা হয়েছে।

  • গ্রেড-এ (Grade - A ) কোনো বড় নেপ থাকতে পারবে না। তবে সুতা অতিরিক্ত হেয়ারি নয় এরকম সুষম সুতা। 
  • গ্রেড-বি (Grade 8 ) কোনো বড় নেপ থাকতে পারবে না তবে ছোট নেপ কিছুটা গ্রহনযোগ্য। 
  • গ্রেড সি ( Grade-C ) কিছুটা অনিয়মিত সুতা, কিছু কিছু বড় ও ছোট নেপ থাকতে পারে। অন্যান্য অপদ্রব্যও সুভার মধ্যে কিছুটা থাকতে পারে। 
  • গ্রেড-ডি (Grade D) কিছু স্লাব, অনেক নেপ, অনেক মোটা চিকন থাকতে পারে। সর্বোপরি সুতার বহিরাবরণ সুন্দর নয় । এমন সুতা গ্রহণযোগ্য। 

সুতার লট নম্বর- 

যে কোনো স্পিনিং ইন্ডাস্ট্রিতে সুতার উৎপাদন একটি নির্দিষ্ট ব্যাচ বা লট হিসেবে উৎপাদিত হয়। এক একটি লটে এক এক ধরনের কাউন্ট বা পরিমাণ থাকে। সাধারণত ক্রেতার চাহিদার প্রতি দৃষ্টি রেখে ব্যাচ নির্ধারণ করা হয়। স্পিনিং বিভাগে রিং ফ্রেম থেকে উক্ত নির্দিষ্ট লটের সুতা উৎপাদন হওয়ার সাথে সাথে আলাদাভাবে ওয়াইন্ডিং বা রিলিং বিভাগে পাঠানো হয়। ওয়াল্ডিং বা রিলিং বিভাগের কর্মকর্তাগণ উক্ত লটের সুতা দ্বারা আলাদা কোন বা হ্যাংক তৈরি করে। সাধারণত রঙিন সুতা বা মার্ক দ্বারা সুতার লট আলাদাভাবে শনাক্ত করা সম্ভব হয়। উৎপাদিত কোন বা হ্যাংককে পরে বান্ডিল বা বেইল তৈরি করা হয়। বান্ডিল বা বেইল তৈরি করার পর উক্ত বান্ডিল বা বেইল -এর পৃষ্ঠে বেইল মার্ক প্রদান করা হয়। বেইল মার্কে নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের মার্কিং ও বিভিন্ন সতর্কতার কথা উল্লেখ থাকে। যার কিছু প্রতীক (Symbol) দ্বারা উল্লেখ করা থাকে। এভাবে বান্ডিল বা বেইলকে লট আকারে আলাদা আলাদাভাবে রপ্তানি অথবা ক্রেতার কাছে পাঠানো হয়। নিচে একটি বান্ডিলের নমুনা দেওয়া হলো। 

ক্রমিক নং-: *** 
কাউন্ট : ৮০/১• কম্বড কটন 
মোট ওজন : ৫০.৩৭ কেজি (১১১ পা.) 
নিট ওজন : ৪৫.৩৬ কেজি (১০০ পা.) 
উৎপাদনের তারিখ : ******** 
কোন/হ্যাংক সংখ্যা ৪০টি কোন। 

বিভিন্ন লটে সুতা মিশে যাওয়ার অসুবিধাসমূহ- 

• মিশ্রিত সুতা দ্বারা কাপড় প্রস্তুত করলে উক্ত কাপড়ের মান খারাপ হবে যা ব্যবহার বা রপ্তানি করার উপযোগী হবে না। 
• নিম্নমানের সুতার লটের মধ্যে উচ্চমানের সুতা মিশে লটের মান খারাপ হবে। পাশাপাশি মিল আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। 
• মিশ্রিত সুতা দ্বারা কাপড় তৈরি করলে উক্ত কাপড়ে নিম্নমানের বা উচ্চমানের সুতার বারের সৃষ্টি হবে 
• যা কাপড়ের মানের জন্য হুমকিস্বরূপ। 
• মিশে যাওয়ার পর মিক্সিং সুতা শনাক্ত করা গেলেও তা পুনরায় আলাদা করা কষ্টসাধ্য । কাজেই উক্ত উৎপাদিত সুতা অপচয় মাত্রা বৃদ্ধি করে।

Content added || updated By

সুতার কাউন্ট

সুতার কাউন্টকে লিনিয়ার ডেনসিটিও বলা হয়ে থাকে। সুতার কাউন্ট বলতে সুতার সূক্ষ্মতাকে বোঝানো হয় । কোনো বস্তুর সূক্ষ্মতা ঐ বস্তুর ব্যাস ও প্রস্থচ্ছেদের অনুপাতকে বোঝায়। সুতার সূক্ষ্মতা বোঝাতে সুতার ব্যাস ও দৈর্ঘ্যের অনুপাতকে বোঝানো হয়েছে। আবার কাউন্ট দ্বারা সুতার ওজন অথবা চিকন বা সূক্ষ্ম মোটা ইত্যাদি সহজেই অনুধাবন করা যায়। একজন টেক্সটাইল প্রযুক্তিবিদের কাউন্ট সম্বন্ধে ভালো ধারণা থাকা প্রয়োজন ।

কাউন্টের সংজ্ঞা (Definition of Count ) - 
কাউন্টের সংজ্ঞা সরাসরি বলতে হলে একক দৈর্ঘ্যের ভর অথবা একক ভরের দৈর্ঘ্যকে বোঝায়। ইংরেজিতে যাকে 'Length per unit weight or weight per unit length' বলে।

উপরোক্ত সংজ্ঞা বাদেও বিভিন্ন সুতার জন্য বিভিন্ন ধরনের কাউন্ট রয়েছে। যেমন- কটন কাউন্ট, জুট কাউন্ট, ডাইরেক্ট সিস্টেমে কাউন্ট ও ইনডাইরেক্ট সিস্টেমে কাউন্ট ইত্যাদি যা পরবর্তীতে আলোচনা করা হয়েছে।

সুতার কাউন্টের শ্রেণিবিভাগ (Classification of Yarn count)- 
সুতার কাউন্ট নির্ণয়ে প্রধানত দুইটি পদ্ধতি। যথা- 
১। পরোক্ষ পদ্ধতি (Indirect system ) 
২। প্রত্যক্ষ পদ্ধতি (Direct System)

পরোক্ষ পদ্ধতি (Indirect system ) - 
পরোক্ষ পদ্ধতিতে সুতার একক ভরের দৈর্ঘ্যকে কাউন্ট বলে। সুতার কাউন্ট যত বেশি হবে সুতা তত চিকন বা সূক্ষ্ম হবে । আর কাউন্ট যত কম হবে সুভা তত মোটা হবে। পরোক্ষ পদ্ধতিতে প্রতিটি সুতার ক্ষেত্রেই একটি নির্দিষ্ট দৈর্ঘ্য আছে আবার ওজনেরও একক আছে যা দ্বারা সহজেই সুতার কাউন্ট বের করা সম্ভব। উদাহরণস্বরূপ ১০০ কটন কাউন্টের সুতার চেয়ে ১০ কটন কাউন্টের সুতা অনেক মোটা। কটন, উল, উরস্টেড, লিনেন ইত্যাদি আঁশের তৈরি সুতার জন্য এই পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়। নিম্নের সূত্রের সাহায্যে সহজেই সুতার কাউন্ট নির্ণয় করা সম্ভব।

প্রত্যক্ষ পদ্ধতি (Direct System)-
প্রত্যক্ষ পদ্ধতিতে সুতার একক দৈর্ঘ্যের ভরকে কাউন্ট বলে। সুতার কাউন্ট যত বেশি হবে সুতা তত মোটা হবে এবং কাউন্ট যত কম হবে তত সূক্ষ্ম অর্থাৎ চিকন হবে। এই পদ্ধতিতেও একটি নির্দিষ্ট দৈর্ঘ্যের একক ও ওজনের একক আছে যা দ্বারা সহজেই সুতার কাউন্ট বের করা যায়। উদাহরণস্বরূপ- ২৪ পাউণ্ডস / স্পাইন্ডেল সুতার চেয়ে ৮ পাউন্ডস/স্পাইন্ডেলের সুতা অনেক চিকন। সাধারণত জুট, সিল্ক, উল, হেম্প, পলিয়েস্টার, নাইলন ইত্যাদির জন্য ব্যবহৃত হয়।






Content added By

কাপড় প্রস্তুতের বিভিন্ন ধাপ

উইভিং বিভাগে বিভিন্ন ধাপে সুতার প্যাকেজসমূহে টানা ও পড়েনে প্রস্তুত করা হয় । তাঁত নামক যন্ত্রের সাহায্যে কাপড়ে রূপান্তরিত করা হয়। তাঁত ছাড়াও অন্য উপায়েও কাপড় প্রস্তুত করা যায়। শিক্ষার্থীদের এ সম্বন্ধেও ধারণা থাকা প্রয়োজন। নিম্নলিখিত পদ্ধতিতে কাপড় প্রস্তুত করা যায়। 

• উইভিং (Weaving) 
• নিটিং (Knitting) 
• ফেলটিং (Felting)

উইভিং (Weaving) 
টানা ও পড়েন ২ সারি সুতা দ্বারা তাঁত নামক যন্ত্র বা মেশিনের সাহায্যে পরস্পর সমকোণে বন্ধনীর মাধ্যমে কাপড় তৈরির প্রক্রিয়াকে উইভিং (Weaving) বলে।

নিটিং (Knitting) 
যে প্রক্রিয়ায় নিটিং মেশিন বা নিডলের সাহায্যে এক বা একাধিক সুতার মাধ্যমে লুপ তৈরি করে এবং উৎপাদিত লুপগুলোকে পরস্পর লম্বালম্বি বা সমান্তরালভাবে সংযোজিত করে কাপড় তৈরির প্রক্রিয়াকে নিটিং (Knitting) বলে।

ফেলটিং (Felting) 
টেক্সটাইল ফাইবার দ্বারা শিট প্রস্তুত করে উক্ত শিটকে জমাট বাঁধিয়ে বা আঠালো পদার্থ দ্বারা সন্নিবেশিত করে এবং স্টিচিং করে পরস্পর আটকিয়ে যে কাপড় তৈরি করা হয় তাকে ফেলটিং (Felting) বলে।

কাপড় ফেলটেড নিম্নলিখিতভাবে হয়ে থাকে- 
১) আঠালো পদার্থের সাহায্যে 
2) তাপের সাহায্যে। 
৩) স্টিচিং -এর সাহায্যে।

ওভেন কাপড়ের বৈশিষ্ট্য (Characteristics of woven fabric) 
• বস্ত্রের অভ্যন্তরে দুই সিরিজ সুতা থাকতে হবে। এক সিরিজ টানা ও অপর সিরিজ পড়েন।
• প্রতিটি ওভেন কাপড়ে একটি নির্দিষ্ট ডিজাইন থাকতে হবে। 
• সাধারণত ওভেন কাপড়ে ভাঁজ পড়ে। 
• সাধারণত ওভেনের পূর্বে টানা সুতায় মাড় দিতে হয় । 
• দুই সারি সুতা সমকোণে বন্ধনীর মাধ্যমে ওভেন কাপড় তৈরি হয়। 
• কাপড়ের টানা ও পড়েন সুতার কাউন্ট, শক্তি, প্রতি ইঞ্চিতে পাক ইত্যাদি গুণ একই অথবা ভিন্ন হতে পারে।
• ওভেন কাপড়ের সদর এবং পিছনের অংশ একই অথবা ভিন্ন হতে পারে। 
• এই কপাড়ের প্রাপ্ত গুটিয়ে যায় না।
• তাঁতের সাহায্যে বুননের সময় বিভিন্ন প্রকার রঙিন সুতার সাহায্যে স্ট্রাইপ, চেক, ক্রসওভার এবং বিভিন্ন প্রকার ইফেক্ট তৈরি করা যায়। 
• ওভেন কাপড়ের একদিকে বা উভয় দিকে কাট অথবা আনকাট পাইল থাকতে পারে। 
• ওভেন কাপড়ের একদিকে বা উভয় দিকে ল্যামিনেটেড করা থাকতে পারে। 
•ওভেন কাপড় সিঙ্গল, ডাবল বা ট্রিপল ইত্যাদি প্লাই বিশিষ্ট হতে পারে। 
ওভেন ফেব্রিক -এর একদিকে বা উভয় দিকে আঁশ রেইজিং করা থাকতে পারে। যেমন-ফ্লানেল কাপড় ।

কতিপয় প্রয়োজনীয় সংজ্ঞা 

কাপড় (Fabric) 
টানা ও পড়েন ২ সিরিজ সুতা পরস্পর সমকোণে বন্ধনীর মাধ্যমে অথবা নিডেলের সাহায্যে লুপ তৈরি করে অথবা ফাইবারের শিটকে জমাট বাঁধিয়ে বা আঠালো পদার্থ দ্বারা সন্নিবেশিত করে যে পাতলা শিট প্রস্তুত করা হয় তাকে কাপড় বলে। 

তাঁত (Loom) 
টানা ও পড়েন সুতা পরস্পর সমকোণে বন্ধনীর মাধ্যমে কাপড় তৈরি করার জন্য যে মেশিন বা যন্ত্র ব্যবহার করা হয় তাকে তাঁত বলে। 

পাওয়ার লুম (Power loom ) 
যে সমস্ত তাঁত কোনো যান্ত্রিক অথবা বৈদ্যুতিক শক্তি দ্বারা চালিত হয় তাকে শক্তিচালিত তাঁত বা পাওয়ার লুম বলে। 

হ্যান্ড হুম (Hand loom ) 
মানব শক্তি দ্বারা অর্থাৎ হাত দ্বারা যে তাঁত চালানো হয় তাকে হস্তচালিত তাঁত বা হ্যান্ড লুম বলে । 

কনভেনশনাল লুম (Conventional loom) 
যে সমস্ত কাপড় প্রস্তুতিতে পড়েন প্রবেশের জন্য মাকু (Shuttle) ব্যবহার করা হয় সে সমস্ত তাঁতকে কনভেনশনাল লুম বলা হয় । 

আধুনিক লুম (Modern loom ) 
যে সমস্ত তাঁতে কাপড় প্রস্তুতিতে পড়েন প্রবেশের জন্য মাকু ব্যবহার না করে অন্য কোনো মধ্যম ব্যবহার করা হয় সে সমস্ত তাঁতকে আধুনিক তাঁত বলে। 

অরডিনারি লুম (Ordinary loom ) 
যে সমস্ত কনভেনশনাল লুমের গতি কম, মাকু বা পার্ন পরিবর্তনের কোনো ব্যবস্থা নেই অর্থাৎ খুবই সাধারণ মানের তাঁত সে সমস্ত লুমকে অরডিনারি লুম বলে। 

অটোমেটিক লুম (Automatic loom) 
যে সমস্ত তাঁতে স্বয়ংক্রিয়ভাবে পড়েন পরিবর্তনের ব্যবস্থা আছে, সে সমস্ত তাঁতকে অটোমেটিক লুম বলে। শাটল পরিবর্তনের মাধ্যমে ও পার্ন পরিবর্তনের মাধ্যমে পড়েন পরিবর্তন করা সম্ভব।

তাঁতের গতি (Motion of loom ) 
তাঁতকে সচল রাখা ও পর্যায়ক্রমিকভাবে কাপড় তৈরির জন্য আলাদা আলাদাভাবে ও বিভিন্নভাবে বিভিন্ন অংশ নাড়াচাড়া করানো হয়। এই অংশসমূহকে একত্রে তাঁতের গতি বলা হয়। 

অক্সিলারি মোশন (Auxiliary motion) 
পাওয়ার লুমকে ত্রুটিমুক্ত কাপড় তৈরির উপযোগী করার জন্য কিছু কিছু আলাদা মোশন ব্যবহার করা হয়, যা তাঁতকে স্বয়ংক্রিয় করে এবং তাঁতও কাপড়কে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে। উপরোক্ত কাজগুলো সম্পন্ন করার জন্য যে অতিরিক্ত মোশনসমূহ ব্যবহার করা হয়, তাকে টারসিয়ারি মোশন বলে।

টুইস্টিং (Twistimg) 
সুতা তৈরির সময় পাক (twist) দেওয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। একমাত্র ছোট ছোট আঁশগুলোকে একত্রে ধরে রাখার জন্য টুইস্ট দেওয়া হয়। যখন অধিক মোটা শক্তিশালী সুতার প্রয়োজন হয় তখন একাধিক সুতাকে একত্রে টুইস্ট করে নেওয়া হয়। 

ওয়াইন্ডিং (Winding) 
কাপড় বয়নের সুবিধার্থে বাজারে প্রাপ্ত হ্যাংক আকারের সুতাকে পড়েন সুতার জন্য নলি বা কপ এবং টানা সুতার জন্য স্কুল, কোনো, চিজ, ববিন ইত্যাদি প্যাকেজে জড়ানো হয়। বিভিন্ন প্যাকেজে সুতা জড়ানোর পদ্ধতিতে ওয়াইন্ডিং বলে। 

ক্রিলিং (Creeling) 
টানা বিম তৈরি করার জন্য ওয়াইন্ডিং প্যাকেজগুলো যে প্রক্রিয়ায় ক্রিলের হোল্ডারের মধ্যে রাখা হয় তাকে ক্রিলিং বলে। 

ওয়ার্সিং (Warping) 
যে কাপড় তৈরি করতে হবে তার বহরে যতগুলো টানা সুতার প্রয়োজন হয় ততগুলো সুতা কাপড়ের দৈর্ঘ্য অনুযায়ী মেপে লম্বারদি সাজিয়ে নিয়ে বিমে জড়ানোর প্রক্রিয়াই ওয়াপিং। 

বিমিং (Beaming) 
স্পিনিং ফ্রেমে সুতা তৈরি হওয়ার পর টানা সুতাগুলোকে স্থুল বা কোনো ওয়াইল্ডিং মেশিনের সাহায্যে স্কুল বা কোণের আকারে জড়ানো হয়। এ ওয়ার্প সুতার প্যাকেজ হাতে কাপড় তৈরি করার উদ্দেশ্যে বিম তৈরি করা হয়। ওয়ার্পের সুতাকে এভাবে বিমে জড়ানোর প্রক্রিয়াকে বিমিং বলে। 

সাইজিং (Sizing) 
যান্ত্রিক বা কায়িক উপায়ে টানা সুতাকে বিভিন্ন প্রকারের মাড়ের উপকরণ যুক্ত করে সুতার উপর বিদ্যমান বাড়তি আঁশগুলোকে সুতার পৃষ্ঠে মিশিয়ে দিয়ে সুতাকে চকচকে ওজন বৃদ্ধি ও শক্তিশালী করার প্রক্রিয়াকে সাইজিং বা মাড় প্রকরণ বলে। 

ড্রইং-ইন (Drawing-in) 
ওয়ার্পের সুতাগুলোকে উইভার্স বিমে জড়ানোর পর এটার অপর প্রান্ত ডিজাইন অনুসারে পরপর কতগুলো । ঝাঁপের বা চক্ষুর মধ্য দিয়ে ড্রইং হুকের সাহায্যে টেনে নেওয়া হয়। এই প্রক্রিয়াকে ড্রইং-ইন বা ড্রাফটিং বলে। 

ডেন্টিং (Denting) 
যে পদ্ধতিতে রিডের প্রতিটি ডেন্টের মধ্য দিয়ে টানা সুতাকে ডিজাইন অনুযায়ী ড্রইং হুকের সাহায্যে টেনে নেওয়া হয়। এ পদ্ধতিকেই ডেন্টিং বলা হয়। সাধারণত প্রতিটি ডেন্টের মধ্য দিয়ে দুই বা ততোধিক সুতা প্রবেশ করানো হয়। 

লুমিং (Looming) 
উইভিং -এর প্রস্তুতির জন্য সর্বশেষ প্রক্রিয়াই হলো লুমিং। ড্রইং-ইন এবং ডেন্টিং-এর পর ওয়ার্প বিষকে লুমের নির্দিষ্ট স্থানে অর্থাৎ পিছনের ব্রাকেটে বসানো হয়। তারপর ঝাঁপ ও শানা বসানো হয়। অতঃপর শানার সামনের আলগা সুতাগুলো ক্লথ বিমের সাথে বাঁধা হয়। যে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিমকে আনুষঙ্গিক উপকরণসহ লুমে স্থাপন করা হয় তাকে লুমিং বলে।

উইভিং (Weaving) 
কাপড় বয়নের সময় কতগুলো টানা সুতাকে ঝাঁপের সাহায্যে উপরে ওঠানো হয় এবং কতকগুলো নিচে নামানো হয়। এর ফলে যে কোণাকৃতি ফাঁকের সৃষ্টি হয় তাকে শেড বলে। এ শেডের মধ্য দিয়ে মাকু হতে একটি পড়েন সুতাকে ফেলে রাখার পর শানা অর্থাৎ দক্তি দ্বারা ঠেলে দেওয়া হয়। এরূপ একটির পর একটি সুতা প্রবেশ করিয়ে কাপড় প্রস্তুত করা হয়। উপরোক্ত প্রক্রিয়াকেই উইভিং বলে। 

ফেব্রিক চেকিং ( Inspection of fabric) 
কাপড় তৈরির পর কাপড়ে কমবেশি দোষত্রুটি থাকে। টেবিলের উপর কাপড় রেখে হাত দ্বারা বা মেশিনের সাহায্যে এক প্রাপ্ত হতে টেনে কাপড়ের দোষত্রুটি যাচাই-বাছাই করে মানসম্পন্ন কাপড় পরবর্তী প্রক্রিয়ার জন্য প্রস্তুত করার নামই ফেব্রিক চেকিং। 

ক্যালেন্ডারিং অ্যান্ড ফোল্ডিং (Calendering and folding) 
কাপড়ের চাকচিক্যতার বৃদ্ধি ও কাপড়কে আকর্ষণীয় করে তোলার জন্য কাপড়কে চাপে ও তাপে মসৃণ করা হয় ও পরবর্তীতে মেশিনের মাধ্যমে ভাঁজ করাকে ক্যালেন্ডারিং অ্যান্ড ফোল্ডিং বলে। 

বেইলিং (Bailing) 
ইহা সর্বশেষ প্রক্রিয়া। ফোল্ডিং করার পর কাপড়কে স্তরে স্তরে সাজিয়ে প্রেসের সাহায্যে চাপ দিয়ে আয়তন কমিয়ে বেইল তৈরি করার নাম বেইলিং। কাপড় বাজারজাত ও গুদামজাত করার সুবিধার্থে বেইল তৈরি করা হয়। 

চেক/স্ট্রাইপ কাপড় তৈরিতে উইডিং-
এর অতিরিক্ত ধাপ চেক বা স্ট্রাইপ কাপড় তৈরির জন্য উইভার্স বিমে রঙিন সুতা স্তরে স্তরে সাজাতে হবে এবং পড়েন সুতা ডিজাইন অনুযায়ী রং পরিবর্তন করে কাপড় বুনতে হবে। 

প্রথমত ক্রিলে বিভিন্ন রঙের ফ্লাজ ববিন ডিজাইনের টানা সুতার সংখ্যা অনুযায়ী সাজাতে হবে। তবে রঙিন টানা সুতার সংখ্যা হিসাব করে পূর্বেই ফ্লাঞ্জ ববিন প্রস্তুত করে নিতে হবে। রঙিন সুতা দ্বারা চেক ও স্ট্রাইপ কাপড় তৈরির জন্য নিম্নলিখিত অতিরিক্ত ধাপ অনুসরণ করতে হবে। 

• রঙিন ফ্রাঞ্জ ববিন প্রস্তুতকরণ। 
• ডিজাইনের সংখ্যা অনুযায়ী ক্রিলে রঙিন সুতাপূর্ন ববিন সাজানো । 
• ডিজাইনের সংখ্যা অনুযায়ী ড্রামে টানা সুতার স্তর সৃষ্টি করা। 
• ড্রাম থেকে রঙিন ও সাদা সুতার স্তর বিমে জড়ানো। 

স্ট্রাইপ কাপড় তৈরি করার পদ্ধতি- 
স্ট্রাইপ কাপড়ের জন্য টানা করা- ৪০” নম্বর শানা ব্যবহার করে ৩৬" বহরের ১টি কাপড় যদি বিভিন্ন রঙের সুতা টানিয়ে নিচে বর্নিত নিয়মে ব্যবহার করা হয় তবে টানা করার নিয়ম নিম্নরূপ হবে।

৮ সুভা-সাদা।                               ৮ সুভা-সাদা। 
৮ সুতা-সবুজ।                              ১৬ সুতা-কমলা।
এখানে দেখা যায় সাদা ও রং করা সুতা মিলিতভাবে ৪০টি সুতা পর্যায়ক্রমে কাপড়ে থাকবে। শানার নম্বর ৪০। কাজেই ৪০টি সুতায় ১ ইঞ্চি। উপরে বর্নিত সুতা যে নিয়মে আছে ঐ নিয়মে সুতা রেখে টানা করলে বিম করার সময় কোনো প্রকার অসুবিধার কারণ থাকবে না। আর যদি প্রত্যেক রং -এর সুতা দ্বারা পৃথক পৃথক টানা করা হয় তবে বিম করার পূর্বে টানা করার জন্য শানা গাঁথার সময় ঐ নিয়মে সুতা শানার মধ্যে পরপর গাঁথা হলে তবু কাজ চলবে। আর যদি সম্ভব হয় তবে বুক ক্রিলে নিয়ম অনুসারে সুতার ববিন সাজিয়ে টানা করতে পারলে ভালো হয়। 

কাপড়ে যে নিয়মে বিভিন্ন রঙের সুতা থাকবে বুক ক্রিলে সেই নিয়মে প্রথমে পরপর সাদা সুতার ববিন ৮টি, এরপর সবুজ সুতার ববিন ৮টি, তারপর সাদা সুতার ববিন ৮টি এবং পরে কমলা সুতার ববিন ১৬টি সাজাতে হবে। প্রথমে সুতার ববিন থেকে সুতার মাথাগুলো নিয়ে সেলেটে একটি চোখ ও ১টি ফাঁকে এই নিয়মে ধারাবাহিকভাবে গেঁথে নিতে হবে। সাদার পর সবুজ আবার সাদার পরে কমলা সুতা গাঁথার পর সকল সুতার মাথা একত্রে গিঁট দিয়ে পাথালি ড্রামের তারকাটায় আটকাতে হবে এবং উপরোক্ত নিয়মে টানা করে শানা গাঁথার পর বিম করার কাজ সম্পন্ন করতে হবে। এই নিয়মে টানা করে যদি পড়েনে এক রং -এর বা শুধু সাদা সুতা ব্যবহার করে কাপড় বুনা হয় তবে এটাকে স্ট্রাইপ কাপড় বলা হয়। এ কাপড় বিভিন্ন কাজে যথা লুঙ্গি, শাড়ি, শার্ট, বিছানার চাদর ইত্যাদি নানাবিধ কাজে ব্যবহৃত হয়।

চেক কাপড় তৈরির বিভিন্ন পদ্ধতি- 
টানা ও পড়েন বিভিন্ন রঙিন সুতা নিয়মিত সাজিয়ে একই রঙের সুতায় চৌকোনাকার ঘর সৃষ্টি করে বুনা কাপড়ে এক প্রকার আকর্ষণীয় নকশা ফুটে ওঠে। এই প্রকার কাপড় তৈরির জন্য টানা করার সময় যদি ৮ সুতা সাদা, ৮ সুতা সবুজ, ৮ সুতা সাদা ও ১৬ সুতা কমলা এই রুপ সাজানো হয় এবং এই নিয়মে টানা করার পর কাপড় বুনার সময় যদি টানার নিয়মে পড়েন সাদা ও রঙিন সুতা ব্যবহার করে রুনা হয় তবে এটি চেক কাপড়ে পরিণত হবে। অর্থাৎ পড়েনের দিকেও ৮ সুতা সাদা, ৮ সুতা সবুজ, ৮ সুতা সাদা ও ১৬ সুতা কমলা এই নিয়মে সুতা ব্যবহার করে কাপড় বুনা হলে তবে ঐ কাপড়কে খাঁটি চেক কাপড় বলা হবে। চেক কাপড় স্ট্রাইপ কাপড়ের মত বিভিন্ন কাজে ব্যবহার হয়। তবে লুঙ্গি ও শাটিং এ সমধিক প্রচলন দেখা যায়। বর্তমানে বিভিন্ন কাজে চেক কাপড় ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

Content added By

ওয়াইন্ডিং

স্পিনিং বিভাগের রিং স্পিনিং ফ্রেম থেকে প্রাপ্ত রিং ববিনের সুতা দ্বারা সরাসরি কাপড় প্রস্তুত করা সম্ভব নয় । অর্থাৎ তাঁতে ব্যবহার করা যায় না। তাঁতে কাপড় প্রস্তুতের জন্য ব্যবহারের পূর্বে কতগুলি ধাপ অতিক্রম করতে হয়। এই ধাপসমূহের প্রথমটি হচ্ছে ওয়াইন্ডিং। 

রিং ববিনের সুতাসমূহ থেকে কিছু কিছু ত্রুটি ওয়ান্ডিং বিভাগে দূর করা হয় । ত্রুটিসমূহ হলো- স্লাব, নেপস্ মোটা চিকন ইত্যাদি । ওয়াইন্ডিং বিভাগ উপরোক্ত ত্রুটিসমূহ দূর করে। পরবর্তীতে ব্যবহারের সুবিধার্থে সুতাকে কোনো, স্কুল, পার্ন, চিজ ইত্যাদি প্যাকেজে রূপান্তর করা হয়। ওয়াইন্ডিং শব্দের অর্থ জড়ানো। বিভিন্ন প্যাকেজে সুতা জড়ানোর পদ্ধতিকে ওয়াইন্ডিং বলে। 

ওয়াইন্ডিং-এর সংজ্ঞা-
 যে পদ্ধতিতে সুতার ছোট প্যাকেজ (রিং ববিন) থেকে বিভিন্ন উদ্দেশ্যে ব্যবহারের জন্য বড় প্যাকেজে রূপান্তরিত করা হয় তাকে ওয়াইন্ডিং বলে। উপরোক্ত সংজ্ঞায় ছোট প্যাকেজ বলতে রিং ববিন ও বড় প্যাকেজ বলতে কোন, চিজ, পার্ন, স্কুল ইত্যাদিকে বোঝানো হয়েছে। 

ওয়াইন্ডিং-এর উদ্দেশ্য (Objects of Winding ) 
১। স্পিনিং থেকে প্রাপ্ত সুতাকে সুবিধাজনক আকার ও সুবিধাজনক অবস্থায় বিভিন্ন প্যাকেজ যেমন- কোন, চিজ, স্কুল, পার্নে রূপান্তরিত করা। 
২। স্পিনিং বিভাগ হতে প্রাপ্ত স্বল্প দৈর্ঘ্যের সুতা হতে এক সাথে অনেক লম্বা দৈর্ঘ্যের সুতা পাওয়ার জন্য । 
৩। স্পিনিং সুতার বিভিন্ন স্থানে যে ত্রুটি থাকে যেমন- স্লাবস নেপস, ফ্লাই ফাইবার ইত্যাদি ওয়াইন্ডিং -এর ক্লিনিং ডিভাইসের মাধ্যমে দূর করে সুতাকে রেগুলার করা। 
৪। স্পিনিং বিভাগ হতে প্রাপ্ত সুতার ময়লা-ধুলাবালি ইত্যাদি দূর করা। 
৫। সুতার প্যাকেজে যথাযথ ঘনত্ব (Proper density) প্রদান করা এবং প্যাকেজের ওজন বৃদ্ধি করা 
৬। পরবর্তী প্রসেসের দক্ষতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করা। 

ওয়াইন্ডিং -এর শ্রেণিবিভাগ (Classification of Winding ) 
প্যাকেজের গঠন ও প্রকৃতির উপর নির্ভর করে ওয়াইন্ডিং প্রক্রিয়াকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়। 
১। প্যারালাল ওয়াইন্ডিং প্যাকেজ (Parallel Winding package) 
২। নিয়ার প্যারালাল ওয়াইন্ডিং প্যাকেজ (Near Parallel Winding package ) 
৩। ক্রস ওয়াইন্ডিং প্যাকেজ (Cross Winding package) 

১। প্যারালাল ওয়াইন্ডিং প্যাকেজ (Parallel Winding package ) 
এ ধরনের প্যাকেজ সাধারণত একটার পর আর একটা সুতা পরস্পর সমান্তরালভাবে পাশাপাশি অবস্থানে থাকে।

২। নিয়ার প্যারালাল ওয়াইন্ডিং প্যাকেজ (Near Parallel Winding package) 
এ ধরনের প্যাকেজের সুতাগুলো পরস্পরের সাথে প্রায় সমান্তরালভাবে অবস্থান করে এবং সুতার স্তরগুলো ক্রমান্বয়ে প্যাকেজের দিকে অবস্থান করে। 

৩। ক্রস ওয়াইন্ডিং প্যাকেজ (Cross Winding package) 
আড়াআড়িভাবে সুতাটি একটি নির্দিষ্ট কোণে একের পর এক অবস্থান করে প্যাকেজের উপর স্তর সৃষ্টি করে। এ ধরনের প্যাকেজের ঘনত্ব কম হয়, ফলে তুলনামূলক ওজনও কম হয়। ব্যবহারের উপর ভিত্তি করে ওয়াইন্ডিং প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন ধরনের প্যাকেজ প্রস্তুত করা হয়। 

প্যাকেজ প্রস্তুতের উপর ভিত্তি করে ওয়ান্ডিং প্রক্রিয়াকে ৫ ভাগে ভাগ করা যায়। 

১। কোন ওয়াইন্ডিং মেশিন (Cone Winding Machine) 
২। স্থুল ওয়াইন্ডিং মেশিন (Spool Winding Machine ) 
৩। চিজ ওয়াইন্ডিং মেশিন (Cheese Winding Machine 
৪। পার্ন ওয়াইন্ডিং মেশিন (Pirn Winding Machine) 
৫। কপ ওয়াইন্ডিং মেশিন (Cop Winding Machine) 

কোন ওয়াইন্ডিং 
যে পদ্ধতিতে সুতার ছোট প্যাকেজ (রিং ববিন) থেকে পরবর্তী বিভিন্ন উদ্দেশ্য সাধনের জন্য সুতার বড় প্যাকেজ অর্থাৎ কোন আকারে সুতায় জড়ানো হয় তাকে কোন ওয়াইন্ডিং বলে। কোন ওয়াইন্ডিং পদ্ধতিতে যে ইয়ার্ণ প্যাকেজ প্রস্তুত হয় তাকে কোন বলে। কোন সাধারণত টানা সুতা হিসেবে ব্যবহৃত হয় । 

পার্ন ওয়াইন্ডিং 
যে পদ্ধতিতে পড়েন সুতা মাকুতে প্রবেশের উদ্দেশ্যে খালি নলি/পার্ন -এ সুতা জড়ানো হয় তাকে পান ওয়াইন্ডিং বলে। সাধারণত পড়েন সুতা হিসেবে ব্যবহৃত হয় এবং পার্ন মাকুতে প্রবেশ করানো হয়। 

চিজ ওয়াইন্ডিং 
যে পদ্ধতিতে সুতার ছোট প্যাকেজ থেকে পরবর্তী সুবিধাজনক কাজে ব্যবহারের উদ্দেশ্যে সুতার বড় প্যাকেজ অর্থাৎ চিজ আকারে সুতা জড়ানো হয় তাকে চিজ ওয়াইল্ডিং বলে। সুতা বহন করার সুবিধার্থে চিজ তৈরি করা হয়। 

স্থুল ওয়াইন্ডিং 
যে পদ্ধতিতে সুতার ছোট প্যাকেজ থেকে পরবর্তী সুবিধাজনক কাজে ব্যবহারের উদ্দেশ্যে সুতার বড় প্যাকেজ অর্থাৎ স্কুল তৈরি করা হয় তাকে স্কুল ওয়াইন্ডিং বলে। স্কুল সাধারণত জুট ইন্ডাস্ট্রিতে তৈরি করা হয়। বিম তৈরির উদ্দেশ্যে টানা সুতা হিসেবে স্কুল ব্যবহৃত হয়। 

বিভিন্ন প্রকারের ইয়ার্ন প্যাকেজের তালিকা নিচে দেওয়া হলো-

ক- মোটর 
খ- মোটর পুলি 
গ- মেশিন পুলি 
ঘ- গ্রুভ রোলার কোনো 
চ- গাইড 
ছ- টেনশনার - ববিন 

কোন ওয়াইন্ডিং মেশিনের বইনা 
কোন ওয়াইন্ডিং মেশিনে সাধারণত সুতা ভর্তি রিং ববিন হতে কোনে জড়ানো হয়। প্রথমে সুতাকে রিং ববিন হতে নির্দিষ্ট টেনশনে কোনো সুতা জড়ানোর জন্য টেনশন ডিভাইসের মধ্যে দিয়ে আনা হয় এবং টেনশন অ্যাডজাস্ট করা হয়। এতে সুতার দুর্বল স্থানগুলো ছিঁড়ে যায়। সুতার ত্রুটিসমূহ যেমন নেপথ, স্লাবস এবং মোটা জায়গা দূর করার জন্য এক স্রাব ক্যাচারের মধ্যে দিয়ে আনা হয় যার ফলে সুতার মধ্যের উল্লিখিত ত্রুটিসমূহ দূর করা যায়। স্লাব ক্যাচিং বা অন্য কোনো কারণে সুতা ছিঁড়ে গেলে হাত দ্বারা বা স্বয়ংক্রিয়ভাবে সুতার গিরা দেওয়া হয়।

চিত্র: পার্ন ওয়াইন্ডিং মেশিন 
ক- সুতাপূর্ণ কোন 
খ- গাইড 
গ- টেনশনার 
ঘ-স্টপ মেকানিজম ৫- পাইড 
চ- ট্রাভার্স মেকানিজম ছ- পার্ন

কোন ওয়াইন্ডিং -এ সাধারণত কোনকে খাজকাটা ড্রামের সঙ্গে গাইডের মাধমে সেট করা যায় । এটা ড্রামের ফিকশ- নাল কন্টাক্টে ঘূর্ণন গতিতে ঘুরে এবং কোন সুতা জড়ায়। সুতার গায়ে লেগে থাকা ধুলাবালি ময়লা দূর করার জন্য একে ড্রামের মধ্যে দিয়ে পাস করানো হয়। সুতার সাপ্লাই ববিনের (রি ববিন) সুতা শেষ হয়ে গেলে পুনরায় নতুন ববিন লাগানো হয়। আবার নির্দিষ্ট দৈর্ঘ্য বা ওজনের সুতা কোন জড়ানো শেষ হলে অটোমেটিকভাবে বা হাত দ্বারা ভর্তি কোন অপসারণ করে সুতা খালি কোন মেশিনে লাগানো হয়। কোন সাধারণত কাঠের বা পেপারের তৈরি হয়। এভাবে কোন ওয়াইন্ডিং প্রক্রিয়ায় সুতা জড়ানো হয়।

পার্ন ওয়াইন্ডিং মেশিনের বর্ণনা 

কাপড়ের পড়েন সুতা সরবরাহের জন্য পার্নের প্রয়োজন হয়। এই পড়েন সুতাকে সাটেলে প্রবেশ করানোর জন্য একটি সুবিধাজনক প্যাকেজ তৈরি করতে হয় যা হতে কোনো বাধা ছাড়াই বুননের সময় নির্দিষ্ট টেনশনে সুতা অপসারিত হয়ে আসতে পারে। এই প্যাকেজকেই পার্ন বলে এবং যে প্রক্রিয়ায় এ পার্নে সুতা জড়ানো হয় তাকে পার্ন ওয়াইন্ডিং বলা হয়। 

একটি বড় প্যাকেজ যেমন- কোন বা চিজ হতে সুতাকে নির্দিষ্ট টেনশনে পার্ন ববিনে নির্দিষ্ট সাইজ অনুযায়ী জড়ানো হয়ে থাকে। পার্ন ববিন স্পিন্ডলের সাহায্যে বা গ্রিফের সাহায্যে ঘূর্ণন গতি প্রাপ্ত হয়। সুতাকে বড় প্যাকেজ হতে গাইড টেনশনিং ডিভাইসের মধ্য দিয়ে গ্রিফারের সাহায্যে পার্ন ববিনে জড়ানো হয়। এই গ্রিফার ক্যামের সাহায্যে টু অ্যান্ড ফ্রো মোশন প্রাপ্ত হয় এবং ধীরে ধীরে পার্নের এক প্রান্ত হতে অন্য পান্ত পর্যন্ত ক্রমান্বয়ে সুতা জড়াতে সাহায্য করে। ববিনে সুতার ডায়ামিটার বৃদ্ধি পেলে টেনশন যাতে বেড়ে না যায় সে জন্য অ্যাডজাস্ট্যাবল টেনশন ডিভাইস ব্যবহৃত হয়। পার্ন ববিনে নির্দিষ্ট ডায়ামিটার পর্যন্ত সুতা ভর্তি হয়ে গেলে এটা একটি ফিলারের সংস্পর্শে এসে তাকে ধাক্কা দিয়ে থাকে। ফলে মেশিন অটোমেটিক্যালি বন্ধ হয়ে যায় এবং ভরা পার্ন অপসারিত হয়ে খালি পার্ন অটোমেটিকভাবে সেট হয় এবং মেশিন চলতে শুরু করে। এভাবে পার্ন ওয়াইন্ডিং মেশিন কাজ করে। 

ইয়ার্ন প্যাকেজের ত্রুটিসমূহ- 
স্পিনিং ও ওয়াইন্ডিং বিভাগে প্রস্তুতকৃত বিভিন্ন ইয়ার্ন প্যাকেজে নিম্নলিখিত ত্রুটিসমূহ পাওয়া যায়। 

  • স্লাও অফ (Slough off) 
  • রিং কার্ট (Ring cut) 
  • লো কপ কন্টেন্ট (Low cop content ) 
  • ইমপ্রপার বিল্ড (Improper build) 
  • স্টিচিং অব কোন (Stitching of cone) 
  • রিবন ওউন্ড কোন (Ribbon wound cone) 
  • সফট বিল্ড অন কোন (Soft build on cone) 
  • বেল সেইফ কোন (Bell safe cone) 
  • নোজ বালজিং (Nose bulging) 
  • কলাপস কোন (Collapsed cone) 
  • রিং সেইফ কোন (Ring safe cone) 
  • ইমপ্রপার লিজিং (Improper Teasing) 
  • লেস থ্রেডস ইন হ্যাংকস (Less threads in hanks) 
  • লুজ অ্যান্ড ইন হ্যাংকস (Loose ends in hanks) 
  • লং/শর্ট টাই ইয়ার্ন (Long / short the yarns ) hanks) 
  • মোর থ্রেড ইন হ্যাংক (More threads in '
  • এনন্টাংগেল থ্রেড (Entangle threads) 
  • লেজার হ্যাংক ইন নট (Lesser hanks in knots) 
  • লেজার লেন্থ ইন ইয়ার্ন ( Lesser length of yarn)

স্লাও অফ (Slough off) 
রিং ববিনে সুতা ওয়াইন্ডিং করার সময় কিছু সুতা ববিন থেকে বের হয়ে যায়। 

পরিণতি 

  • পরবর্তী প্রক্রিয়ায় সুতা ছেঁড়ার হার বৃদ্ধি পায়।  
  • সুতার অপচয় বৃদ্ধি পায় । 

কারণ

  • রিং স্পিনিং ফ্রেমের রিং রেইল উপরে-নিচে ওঠানামা সঠিক না হলে। 
  • বিল্ডার ক্যাম ভাঙা থাকলে। 
  • ববিন সঠিকভাবে বসানো না হলে। 
  • টেপ ঢিলা থাকলে। 

প্রতিকার 

  • সঠিকভাবে রিং রেইল বসাতে হবে। 
  • ওয়াইন্ডিং-এর হার সঠিক রাখতে হবে। 
  • খালি বসানোয় সতর্ক থাকতে হবে।

রিং কার্ট (Ring cut) 

রিং ববিনের পৃষ্ঠে সুতার স্তর ড্যামেডজ হয়।

পরিণতি 

  • ওয়াইন্ডিং বিভাগে সুতা ছেঁড়ার হার বৃদ্ধি পায়। 
  • ওয়াইন্ডিং বিভাগে হার্ড ওয়েস্টেজ বৃদ্ধি পায়। 

কারণ 

  • খুব শক্ত ও দৃঢ় ট্রাভেলার ব্যবহার করলে। 
  • র‍্যাচেট হুইল সঠিক না হলে। 
  • স্পিন্ডেলের ঘূর্ণন এক্সসেনট্রিক হলে। 

প্রতিকার 

  • ট্রাভেলার ব্যবহার সঠিক হতে হবে। 
  • র‍্যাচেট হুইল সঠিক আছে কিনা তা পরীক্ষা করে ব্যবস্থা নিতে হবে। 
  • স্পিন্ডেলের ঘূর্ণন সঠিক রাখতে হবে। 

লো কপ কন্টেন্ট (Low cop content ) 
রিং ববিনে অল্প পরিমাণ সুতা জড়ানো থাকলে । 

পরিণতি 

  • রিং ফ্রেমের দক্ষতা কমে যায় । 
  • ওয়াইন্ডিং দক্ষতা কমে যায় ।  
  • নির্দিষ্ট দৈর্ঘ্যে নট- -এর সংখ্যা বেশি হয়।

কারণ 

  • একই ফ্রেমে ববিনের উচ্চতা একই না হলে। 
  • কয়েল/ইঞ্চি এর সংখ্যা কম হলে। 
  • ববিন/কপ বটম ব্রাকেট যথাযথ সেট না হলে। 
  • র‍্যাচেট/পল মুভমেন্ট-এর নির্বাচন সঠিক না হলে। 

প্রতিকার 

  • একই আকারের ববিন লাগাতে হবে। 
  • র‍্যাচেট পল মুভমেন্ট সঠিকভাবে নির্বাচন করতে হবে। 
  • ব্রাকেট যথাযথভাবে সেট করতে হবে।

ইমপ্রপার বিল্ড (Improper build)
ববিন/কপে সুতা ধাপে ধাপে জড়ানো আকারে দেখায়। 

পরিণতি 

  • ওয়াইন্ডিং-এ সুতা ছেঁড়ার হার বৃদ্ধি পায়। 
  • ওয়াইন্ডিং বিভাগে হার্ড ওয়েস্টের পরিমাণ বৃদ্ধি পায় । 

কারণ 

  • র‍্যাচেট ও পলের কম্বিনেশন সঠিক না হলে । 
  • রিং রেইল কাঁপতে থাকলে। 

প্রতিকার 

  • পোকার রড-এর ওয়েলিং বা গ্রিজিং যথাযথ করতে হবে। 
  • ব্র্যাচেট ও র‍্যাচেট পলের কম্বিনেশন যথাযথ করতে হবে

স্টিচিং অব কোন (Stitching of cone) 
কোন -এর উপর সুতা জড়ানোর সময় যখন সুতার গতিপথ পরিবর্তন করে তখন সুভা যথাযথ ওয়াইন্ডিং না হয়ে কোন -এর পার্শ্ব থেকে বের হয়ে যায়। 

পরিণতি 

  • পরবর্তী প্রক্রিয়ায় সুতা ছেঁড়ার হার বেড়ে যায়। 
  • সুতার ওয়েস্টেজের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। 

কারণ 

  • কোন হোল্ডার যথাযথ সেট না করলে । 
  • ভুল স্থানে সুতার ট্রাভার্স ঠিক করলে। 
  • টেনশন ব্রাকেট-এর পজিশন ড্রামের সাথে সামঞ্জস্য না করলে।

প্রতিকার 

  • কোন হোন্ডার যথাযথভাবে সেট করতে হবে। 
  • টেনশন ব্রাকেটের পজিশন ড্রামের সাথে সামঞ্জস্য রাখতে হবে। 
  • সুতার ট্রাভার্স সঠিক স্থানে দিতে হবে।

রিবন ওউন্ড কোন (Ribbon wound cone) 
কোন -এর পরিধিব্যাপী রিবন আকারে জড়ানো থাকে । 

পরিণতি 

  • আন ওয়াইন্ডিং করতে অসুবিধার সৃষ্টি হয়। 
  • স্টিচিং অব কোন ইয়ার্নের অপচয় বৃদ্ধি পায়। 
  • প্যাকেজ ডাইং করার সময় সুষম ডাইং হয় না । 

কারণ  

  • ওয়াইন্ডিং স্পিন্ডেল মুক্তভাবে না ঘুরলে । 
  • কোন হোল্ডার যথাযথভাবে সেট না হলে। 
  • ক্যাম সুইচ ত্রুটিযুক্ত হলে । 

প্রতিকার 

  • মেশিনকে ওভারহোলিং করে ত্রুটিমুক্ত করতে হবে। 
  • কোন হোল্ডার যথাযথভাবে সেট করতে হবে।

সফট বিল্ড অন কোন (Soft build on cone) 
নরম স্ট্রাকচারে কোন তৈরি হওয়া। 

পরিণতি 

  • প্যাকেজের ঘনত্ব কমে যায়। 
  • প্যাকেজের ওজন কম সুতার পরিমাণ কম থাকে। 

কারণ 

  • কোন ড্রামের সাথে ওয়াইন্ডিং স্পিন্ডেল ঠিকমতো স্পর্শ না করলে । 
  • ওয়াইন্ডিং টেনশন কম হলে। 

প্রতিকার 

  • ওয়াইন্ডিং টেনশন বাড়াতে হবে। 
  • কোন ড্রামের সাথে ওয়াইন্ডিং স্পিন্ডেল যাতে ঠিকমতো সেট হয় তার ব্যবস্থা করতে হবে। 

বেল সেইফ কোন (Bell safe cone) 
ঘণ্টার মতো আকারের কোন তৈরি হয়। 

পরিণতি 

  • পরবর্তী প্রসেসে সুতা ছেঁড়ার হার বৃদ্ধি পায়।

কারণ

  • ওয়াইন্ডিং-এ ইয়ার্ন টেনশন বেশি হলে । 
  • কোন হোল্ডার যথাযথ সেট না হলে। 
  • পেপার কোন কেন্দ্রে ড্যামেজড থাকলে। 

প্রতিকার 

  • পেপার কোন ক্রয় করার সময় যথাযথ মানের আছে কি না তা দেখে নিতে হবে। 
  • ওয়াইন্ডিং টেনশন যথাযথ করতে হবে।

নোজ বালজি‍ (Nose bulging) 
কোনের নাকের দিকে উঁচু হয়ে উঠে থাকা । 

পরিনতি

  • ওয়াপিং-এর সময় ওয়েস্টেজ বৃদ্ধি পায়। কারণ- 
  • ওয়াইন্ডিং হোল্ডারের সাথে কোন হোন্ডারের সেটিং ঠিকমতো না হলে। 
  • পেপার কোনের নোজ ড্যামেজড থাকলে 

প্রতিকার 

  • ওয়াইভিং ড্রামের সাথে কোন হোল্ডারের সেটিং যথাযথ করতে হবে। 
  • পেপার কোন সঠিকভাবে লাগাতে হবে।

কলাপস কোন (Collapsed cone)- 
কোন কোণা অথবা স্ট্রাকচারের কোন অংশ ড্যামেজড বা ভাঙা থাকলে। 

পরিণতি 

  • ওয়ার্সিং-এর সময় সুতা ছেঁড়ার হার বেড়ে যায়। 
  • হার্ড ওয়েস্ট বৃদ্ধি পায়। 

কারণ 

  • পেপার কোন ভাঙা বা খারাপ থাকলে । 
  • সাবধানে হ্যান্ডলিং না করলে। 

প্রতিকার 

  • পেপার কোনের সঠিক ব্যবহার করতে হবে। 
  • সাবধানে হ্যান্ডলিং করতে হবে।

রিং সেইফ কোন (Ring safe cone) 
কোনের মাঝামাঝি অবস্থানে পরিধিব্যাপী রিং এক আকারে এক স্থানে অনেক সুতা জড়ানো থাকে । 

পরিণতি 

  • পরবর্তী প্রসেসে সুতা ছেঁড়ার হার বৃদ্ধি পায়। 
  • আন ওয়াইন্ডিং করতে অসুবিধার সৃষ্টি হয়। 

কারণ

  • কোন হোল্ডার সঠিকভাবে সেটিং করা না হলে । 
  • টেনশনার সঠিক অবস্থানে না থাকলে । 
  • ড্রামের গ্রুন্ড ভাঙা থাকলে। 

প্রতিকার 

  • কোন হোন্ডার সঠিকভাবে 
  • সেটিং করতে হবে। 
  • টেনশনার সঠিক অবস্থানে রাখতে হবে। 
  • ড্রামের গ্রুন্ড ভাঙা থাকলে তা পরিবর্তন বা মেরামত করতে হবে।

ইমপ্রপার লিজিং (Improper Teasing) 
এক অথবা একের অধিক হ্যাংক লিজিং-এর বাইরে থেকে যায়। 

পরিণতি 

  • রিং লিজিং-এর পর সুতা ব্যবহারের সময় ওয়েস্টেজের বৃদ্ধির সম্ভাবনা থাকে। 

কারণ 

  • রিলিং-এর পর শ্রমিকের অবহেলার কারণে । 
  • দক্ষতার অভাবে শুরুর অথবা শেষের হ্যাংককে লিজিং থেকে বাদ দেওয়া। 

প্রতিকার 

  • দক্ষ শ্রমিক দ্বারা লিজিং করালে এ ধরনের সমস্যা কম হয়।

লেস প্রেডস ইন হ্যাংকস (Less threads in hanks) 
হ্যাকে সুতার সংখ্যা কম থাকা। 

পরিণতি 

  • পরবর্তী প্রক্রিয়ায় হার্ড ওয়েস্টেজ সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। 

কারণ 

র‌্যাক ও ইনডেক্স হুইলের সেটিং যথাযথ না হলে । 

ইনডেক্স হুইল ভাঙা হলে। 

প্রতিকার 

  • র‌্যাক ও ইনডেক্স হুইল যথাযথভাবে সেটিং করতে হবে ।

লুজ অ্যান্ড ইন হ্যাংকস (Loose ends in hanks) 
ছেঁড়া সুতা অথবা হ্যাংকের মধ্যে বাঁধা না থাকা 

পরিণতি

  • প্রান্ত জোড়া দেওয়া কষ্টসাধ্য। 
  • পরবর্তী প্রসেসে হার্ড ওয়েস্ট বৃদ্ধি পায় । 

কারণ

  • সুইফট ড্যামেজড থাকলে । 
  • ববিন অথবা কাপ পরিবর্তন করার সময় সঠিক প্রান্ত জোড়া না ।

প্রতিকার 

  • সুইফট ভাঙা থাকলে তা মেরামত বা পরিবর্তন করা। 
  • লিজিং -এ কপ সাবধানে জোড়া দিতে হবে।

লং/শর্ট টাই ইয়ার্ন (Long / short the yarns) 
লিজিং-এর পর খুব লম্বা বা খুব খাটো সুতা ছিঁড়ে দেওয়া। 

পরিণতি 

  • পার্শ্ববর্তী সুতার সাথে লম্বা বাঁধা সুতা জড়িয়ে যায় । 
  • সুতা খোলার জন্য অনেক বেশি সময়ের প্রয়োজন হয়। 

কারণ

  • সঠিকভাবে হ্যাংক বাঁধার কারণে । 

প্রতিকার 

  • শ্রমিক দক্ষতা বাড়ানোর জন্য বারবার বাঁধার অনুশীলন করতে হবে।

মোর থ্রেড ইন হ্যাংক (More threads in hanks)- 
একটি অথবা বেশি লিতে বেশি সুতা জড়ানো।

পরিণতি 

  • পরবর্তী প্রক্রিয়ায় হার্ড ওয়েস্টের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। 

কারণ 

  • ফুল ডফ স্টপ মোশন সঠিকভাবে কাজ না করলে । 
  • ওয়ার্ম অথবা ওয়ার্ম হুইল রিলে ভাঙা দাঁত থাকলে। 

প্রতিকার  

  • ডফিং সঠিক করতে হবে। 
  • ওয়ার্ম ভাঙা থাকলে তা পরিবর্তন করতে হবে।

এনটাংগেল গ্রেড (Entangle threads) 
লি এর ভিতর অথবা পার্শ্বে ক্রস অবস্থায় সুতা থাকলে । 

পরিণতি  

  • আন ওয়াইন্ডিং-এ সময় বেশি লাগে। 
  • হার্ড ওয়েস্টের পরিমাণ বৃদ্ধি পায় । 

কারণ

থ্রেড গাইড খারাপ থাকলে । ববিন সরানোর পর পরবর্তী ববিনের সুতার পিট না দিলে ।

প্রতিকার 

  • থ্রেড পাইড ইত্যাদি খারাপ থাকলে তা মেরামত বা পরিবর্তন করতে হবে। 
  • ববিন থেকে ববিনের প্রান্ত সুতায় গিঁট (knot) দিতে হবে।

ক্ষুদ্রতর হ্যাংক ইন নট (Lesser hanks in knots) 
বান্ডেলিং-এ কম হ্যাংক একসঙ্গে বাঁধা থাকা। 

পরিণতি 

  • গড় কাউন্টের হিসাব সঠিক হয় না। 

কারণ 

  • হ্যাংক গ্রুপিং করে বাঁধার ক্ষেত্রে ত্রুটি হলে । 

প্রতিকার 

  • হ্যাংক কাউটিং-এর ক্ষেত্রে মনোযোগী হতে হবে।

ক্ষুদ্রতর লেন্থ ইন ইয়ার্ন (Lesser length of yarn) 
রিলিং-এ হ্যাংকের দৈর্ঘ্য কম থাকে। 

পরিণতি 

  • পরবর্তী প্রক্রিয়ায় হার্ড ওয়েস্ট বেড়ে যায়। 

কারণ 

  • সুইফটের বিভিন্ন অংশের পরিধির মাপ সঠিক না হলে। 
  • ব্রেক ও ডফ স্টপ সঠিক না হলে। 

প্রতিকার 

  • সুইফটের ব্যাস পরীক্ষা করে পরিবর্তন করতে হবে। 
  • ব্রেক ও ফুল ডফ স্টপ মোশন যাতে সঠিকভাবে কাজ করে তা নিশ্চিত করতে হবে।
Content added || updated By

টানা প্রকরণ

যে পদ্ধতিতে অনেকগুলো সুতার প্যাকেজ যেমন- কোন স্কুল, চিজ ইত্যাদি হতে সুতাগুলো নির্দিষ্ট বহরে ও নির্দিষ্ট দৈর্ঘ্যে সমান্তরালভাবে সাজিয়ে অবিচ্ছিন্ন সুতায় শিট তৈরি করা হয়, যা একটি খালি বিমে জড়ানো হয় তাকে ওয়ার্সিং বলে।

ওয়ার্নিং-এর উদ্দেশ্য (Object of warping) 

১। নির্দিষ্ট দৈর্ঘ্য ও প্রস্থের অবিচ্ছিন্ন সুতার শিট তৈরি করা । 
২। শিটের প্রতিটি সুতা পূর্ণ প্রস্থের সমদূরত্বে রাখা 
৩। শিটের সমস্ত সুতা সমটানে জড়ানো নিশ্চিত করা। 
৪। বিমের পূর্ণ প্রস্থে ও সুতা জড়ানোর প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত সুতার ঘনত্ব সমভাবে রক্ষা করা। 
৫। পরবর্তী প্রক্রিয়া অর্থাৎ উইভিং -এর জন্য একটি টানা বিম তৈরি করে প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করা।

ওয়াপিং -এর শ্রেণিবিভাগ (Classification of warping)
হস্তচালিত নিয়মে ওয়ার্সিং ৫ প্রকার। যথা

১। এক খেই টানা । 
২। ক্রিলের টানা। 
৩। পেগ টানা। 
৪। পাথালি ড্রামে টানা। 
৫। খাড়া ড্রামে টানা বা বল ওয়ার্সিং

এক খেই টানা

এ ধরনের ওয়ার্পিং হ্যান্ড লুমের জন্য ব্যবহৃত হয়ে থাকে এবং সাধারণত গ্রামের স্ত্রী লোকেরাই হেঁটে হেঁটে এ টানা প্রস্তুত করে থাকে। দৈর্ঘ্য ১০ থেকে ২৫ গজের বেশি হয় না বা করা যায় না। 

টানার দুই প্রান্ত ২ ফুট লম্বা মজবুত খুঁটি মাটিতে শক্ত করে আটকানো থাকে, এক বা দুই গজ পরপর মধ্যবর্তী স্থানে এক জোড়া করে লিজ (Lease) রাখা হয়। খুঁটির এক প্রান্তে একটি শক্ত ছোট হুক শক্ত করে বাঁধা থাকে।

মিল ওয়ার্সিং 

সাধারণত অধিক সংখ্যক ওয়ার্ল্ড ইয়ার্নের দ্বারা ওয়ার্সিং করার ক্ষেত্রে মিল ওয়ার্সিং-এর প্রয়োজন হয়। এ পদ্ধতি খুবই দ্রুত গতিসম্পন্ন। এক সাথে বিমিং ও সাইজিং করা হয়। কাপড় তৈরির উদ্দেশ্যে যে পদ্ধতিতে ক্রিলে স্থাপিত সুতার প্যাকেজ হতে সমান্তরালভাবে খালি বিমে নির্দিষ্ট সংখ্যক ওয়ার্ল্ড সুতাকে জড়ানো হয় এবং পরবর্তীতে অধিক সংখ্যক ওয়ার্প সুতার জন্য কয়েকটি ওয়ার্স বিমের সুতাকে একত্রে সাইজিং করে নির্দিষ্ট বহরে ও নির্দিষ্ট দৈর্ঘ্যে সমান্তরালভাবে সাজিয়ে অবিচ্ছিন্ন সুতার শিট তৈরি করা হয় তাকে মিল ওয়াপিং বলে।

টানা প্রকরণের ত্রুটি ও তার প্রতিকার (Faults of warping and their remedies) 

১. বিমে টানা সুতা অফসেন্টার হওয়া (Warp ofcentre of the beam ) 
অসতর্কতার কারণে এ ধরনের ত্রুটি দেখা দিতে পারে। সতর্কতার সাথে সুতা গণনা করে এবং উত্তমরূপে প্রক্রিয়া সম্পন্ন করলে ত্রুটি দূর করা যায়। 

২. টানা সুতা বাদ যাওয়া (Missing ends ) 
ওয়ার্নিং-এর সময় মাঝে মাঝে দু-একটি টানা সুতা Missing হতে পারে। সঠিক গণনার মাধ্যমে তা খুঁজে বের করে ত্রুটিমুক্ত করা যায়। 

৩. ঢিলা এবং শক্ত টানা (Loose and tight warp beam ) 
অসম টেনশনের কারণে এ ধরনের ত্রুটি দেখা যায়। টেনশন ডিভাইসের ত্রুটিপূর্ণ সেটিং-এ ত্রুটির জন্য দায়ী। ভালো টেনশন ডিভাইস ব্যবহার করে এবং সঠিক টেনশনিং-এর সাহায্যে এ ত্রুটি দূর করা যায়। 

৪. অসম ও মোটা গিট (Unevent and coarse knot)- 
অনেক সময় ওয়ার্নিং-এ অসম এবং মোটা গিঁট দেখা যায়। এদেরকে স্লাব ক্যাচার ব্যবহার করে বা হাতের সাহায্যে এ ত্রুটি দূর করা যায়।

৫. টানা সুতার অধিস্থাপন (Lapped ends) 
অনেক সময় ওয়ার্সিং-এর সময় এক সুতা অন্য সুতার সাথে জড়িয়ে যায়, এদেরকে ল্যাপড এন্ডস (Lapped ends) বলে। এদেরকে খুঁজে বের করে যথাস্থানে এনে এ ত্রুটি দূর করা যায়। 

৬. বিমে কোণাকৃতিভাবে সুতা জড়ানো (Conical winding on the beam) 
সুতার লাইন এবং ঘূর্ণন সোজা না থাকলে এ ত্রুটি দেখা দিতে পারে। সুতার লাইন এবং বিমের অবস্থান ঠিক রেখে এ ত্রুটি দূর করা যায়। 

৭. ওয়ার্সিং -এ অপ্রকৃত সুতার দৈর্ঘ্য (Improper length of warping yarn) 
ওয়ার্নিং-এ অনেক সময় পর্যাপ্ত সুতা পাওয়া যায় না। সঠিক দৈর্ঘ্যের সুতা পছন্দ করে ওয়ার্সিং করলে এ অসুবিধা দূর করা যায়। 

৮. লম্বা এবং বড় স্লাব এবং অন্যান্য আবর্জনা (Long and large slub and other impurities) 
এগুলো হাতের সাহায্যে দূর করা যায়।

Content added By

মাড় প্রকরণ

স্পিনিং ও ওয়াইন্ডিং বিভাগ হতে প্রাপ্ত সুতায় তৈরি ওয়াপাস বিম দ্বারা সরাসরি উইভিং করা যায় না। সুতার ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র আঁশ বাইরের দিকে বের হয়ে থাকে। এছাড়া ঝাঁপ ও চক্ষু দ্বারা শেড গঠনের জন্য টানা সুতা বারবার ঘষা খায়। ফলে এর হেয়ারিনেস বৃদ্ধি পায় ও সুতার শক্তি কমে যায়। অনেক সময় সুতার পাঁক কম থাকে, সুতা দুর্বল থাকে যার কারণে তাঁতের বিভিন্ন মোশন, ঝাঁপের ওঠানামা মাকু -এর ঘর্ষণ সহ্য করতে পারে না। ইত্যাদি কারণে উইভিং করার সময় টানা সুতা ছিঁড়ে যায়, উৎপাদন ব্যাহত হয়। উৎপাদন খরচ বেড়ে যায়, কাপড়ও ত্রুটিপূর্ণ হয়। উপরোক্ত অসুবিধাসমূহ দূর করার জন্য ওয়াপাস বিমের টানা সুতায় মাড় দেওয়া হয়। মাড় প্রকরণে প্রাথমিক উদ্দেশ্য হলো টানা সুতার ন্যূনতম কোনো ক্ষতি সাধন না করে কাপড় বয়ন অর্থাৎ উইভিং করা। মাড় প্রকরণ সুতা ও কাপড়ের বৈশিষ্ট্য পরিবর্তন করে কাপড়ের দৃঢ়তা ও ওজন বৃদ্ধি করে। সর্বোপরি সুতার শক্তি ও মসৃণতা বৃদ্ধি করে টানা সুতা ছেঁড়ার হার কমিয়ে দেয়।

মাড়ের সংজ্ঞা 
টানা সুতার শক্তি বৃদ্ধি ও অন্যান্য গুণাগুণ বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে বিমিং করা টানা সুতায় মসৃণ করার উদ্দেশ্যে আঠালো পদার্থ দ্বারা মসৃণ করা হয়। উক্ত আঠালো পদার্থসমূহকে মাড় বলে।

মাতৃপ্রকরণের সংজ্ঞা 
টানা সুতার শক্তি বৃদ্ধি ও ঘর্ষণজনিত কারণে সুতা ছেঁড়ার হাত থেকে রক্ষা করার জন্য বিমিং করা টানা সুতার পৃষ্ঠব্যাপী আঠালো পদার্থ দ্বারা মসৃণ করার প্রণালিকে মাড় প্রকরণ বা সাইজিং বলে।

সাইজিং -এর উদ্দেশ্য 

১. টানা সুতার ঘর্ষণজনিত প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করা।

২. টানা সুতাকে কোমল, মসৃণ ও উজ্জ্বল করা। 

৩. টানা সুতার বাইরের দিকে বেরিয়ে থাকা ভাসমান আঁশগুলো সুতার পৃষ্ঠে লাগিয়ে দিয়ে সুতাকে মসৃণ করা ও শক্তি বৃদ্ধি করা।

৪. দুর্বল ও কম শক্তিসম্পন্ন সুতাকে ব্যবহার উপযোগী করা। 

৫. সুতার উপর প্রতিরোধকারী পাতলা আবরণ দেওয়া। 

৬. সুতার শক্তি বৃদ্ধি করা। 

৭. সুতার ওজন বৃদ্ধি করা। 

৮. পলিয়েস্টার মিশ্রিত সুতায় যে স্থির বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয় তা হ্রাস করা।

মাড়ের উপাদানসমূহ 
মাড় বা সাইজ তৈরির জন্য বিভিন্ন উপাদানের প্রয়োজন। প্রতিটি উপাদানেরই আলাদা আলাদা গুণাগুণ রয়েছে। সুতার গুণাগত মান ও প্রকারের উপর নির্ভর করে বিভিন্ন প্রকার মাড়ের উপাদান প্রয়োগ করা হয়। নিম্নে মাড়ের উপদানসমূহ উল্লেখ করা হলো।

১) শ্বেতসারযুক্ত উপাদান (Adhesive substance) 
2) সফেনিং এজেন্টস (Softening Agents ) 
৩) হাইগ্রোসকোপিক এজেন্টস (Hygroscopic Agents ) 
৪) অ্যান্টিসেপটিক এজেন্টস (Anticeptics ) 
৫) নিউট্রালাইজিং এজেন্টস (Neutralizing Agents )
৬) অ্যান্টিফোমিং এজেন্টস (Antifoaming Agents ) 
৭) টিনটিং বা রঞ্জক উপাদান (Tinting of Colouring Agents ) 
৮) ওয়েটিং এজেন্টস (Weighting Agents)

উপাদানসমূহের বিবরণ 
শ্বেতসারযুক্ত উপাদান (Adhesive substance) 
একে মাড়/সাইজের মূল উপাদানও বলা হয়। এ উপাদানের জন্য মাড় আঠালো হয় । এ শ্বেতসারযুক্ত উপাদানের সাথে পানি মিশ্রিত করে তাপ প্রয়োগ করলে আঠালো পদার্থের পেস্ট (Paste) এ পরিণত হয়। উদাহরণ: মেইজ স্টার্চ (Maise starch), তেঁতুলের বিচির পাউডার (Tamarind seed powder), টপিওকা স্টার্ট (Topioca starch), ময়দা (Flour), সাগু স্টার্চ (Sagoo starch), আলুর প্যালো (Potato starch), রাইচ স্টার্চ (Rice starch) ইত্যাদি প্রাকৃতিক স্টার্চ। 
আবার সিএমসি (Carboxy Methyl Cellulose), পিভিএ (Polyvenyle Alcohol), পলিঅ্যাক্রাইলিক অ্যাসিড ইত্যাদি কৃত্রিম স্টার্চ বা অ্যাডহেসিভ ।

সফেনিং এজেন্টস (Softening Agents) 
সফেনিং এজেন্টকে কোমল রাখার উপাদানও বলা হয়। টানা সুতা কখনও কখনও শক্ত, অমসৃণ ও ভঙ্গুর হয়। এছাড়া সুতার খসখসে ভাব ও নমনীয়তা দূর করার জন্য সফেনিং এজেন্ট ব্যবহার করা হয়। উদাহরণ: মাটন ট্যালো (Mutton tallow), টেলটেক্স (Teltex), নারিকেল তেল (Coconut oil), ক্যাস্টর অয়েল, তিলের তেল, তালের তেল, তুলার বীজের তেল, জলপাই এর তেল, রেড়ির তেল, প্যারাফিন ওয়াক্স (Parafin wax), চায়না মোম (China wax), সুগার ক্যান ওয়াক্স ( Sugarcane wax), ওয়াক্স (Wax), সফট সোপ (Soft soap) ইত্যাদি।

হাইগ্রোসকোপিক এজেন্টস (Hygroscopic Agents ) 
সুতাকে আর্দ্র রাখার জন্য হাইপ্রোসকোপিক এজেন্ট ব্যবহার করা হয়। আর্দ্র রাখার উপাদানসমূহ বাতাস হতে জলীয় বাষ্প গ্রহণ করে থাকে। এ এজেন্টস ব্যবহার করার ফলে টানা সুতা অপেক্ষাকৃত বেশি পরিমাণ আর্দ্রতা শোষণ করে সুতাকে নমনীয় রাখতে সাহায্য করে। উদাহরণ: ম্যাগনেসিয়াম ক্লোরাইড (MgCl2), ক্যালসিয়াম ক্লোরাইড (CaCl2), গ্লিসারিন, জিঙ্ক ক্লোরাইড (ZnCl2), ডাই ইথিলিন গ্লাইকল, সরবিটল ইত্যাদি।

অ্যান্টিসেপটিক এজেন্টস (Anticeptics) 
একে বাংলায় প্রতিষেধক উপাদান বল হয়। মিলডিউ অর্থাৎ ছত্রাক আক্রমণ থেকে রক্ষার জন্য প্রতিষেধক উপাদান ব্যবহার করা হয়। সাধারণত সমস্ত স্টার্চই ছত্রাক দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে।

কাজেই কার্বন সুতা সাইজিং করার প্রয়োজনে স্টার্চ -এর পাশাপাশি অ্যান্টিসেপটিকস প্রয়োগ করার প্রয়োজন হয়। 
উদাহরণ: জিঙ্ক ক্লোরাইড (ZnCl2), কপার সালফেট (CuSO4), সেলিসাইটিক অ্যাসিড (CH (OH) COOH), সোডিয়াম সিলকো ক্লোরাইড, বিটা নেপথলস, কার্বোলিক অ্যাসিড ইত্যাদি।

নিউট্রালাইজিং এজেন্টস (Neutralizing Agents) 
মাড় দ্রবণ প্রস্তুত করার সময় দ্রবণের pH মাত্রা পরিবর্তিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কাজেই দ্রবণকে নিউট্রাল করার জন্য নিউট্রালাইজিং এজেন্টস যোগ করা হয়। যতক্ষণ পর্যন্ত দ্রবণের pH মাত্রা ৬.৮ না হয় ততক্ষণ পর্যন্ত অল্প অল্প করে এ এজেন্টস ব্যবহার করা হয়। উদাহরণ: সোডা অ্যাশ।

অ্যান্টিফোমিং এজেন্টস (Antifoaming Agents ) 
মাড় দ্রবণ অথবা মাড় পেস্ট প্রস্তুত করার সময় দ্রবণে ফেনা হবার সম্ভাবনা দেখা যায়। যার ফলে উক্ত দ্রবণ টানা সুতায় প্রয়োগ করতে অসুবিধার সৃষ্টি হয়। এ জন্য মাড় দ্রবণে অ্যান্টিফোমিং এজেন্টস ব্যবহার করা হয়। যা মাড়, পেস্ট বা দ্রবণে ফেনা উৎপন্ন হতে বাধা প্রদান করে। উদাহরণ: অ্যাসিটিক অ্যাসিড (CH3COOH), কেরোসিন, টার্পেন্টাইন, পাইন অয়েল, অ্যামাইল, অ্যালকোহল, সিলিকন ডিফোমার ইত্যাদি।

টিনটিং বা রঞ্জক উপাদান (Tinting of Colouring Agents ) 

টানা সুতা ও উৎপাদিত কাপড়ের প্রাকৃতিক রংকে নিউট্রালাইজড করার জন্য এ এজেন্ট ব্যবহৃত হয়। সাধারণত যে সমস্ত কাপড় গ্রে অবস্থায় বিক্রি হবে উক্ত কাপড় প্রস্তুত করতে টানা সুতায় মাড় দেওয়ার সময় টিনটিং এজেন্ট প্রয়োগ করা হয়ে থাকে। উদাহরণ : টিনাপল (Tinapol) আলট্রা মেরিন ব্লু, অ্যাসিড ডাই ও অপটিক্যাল ব্রাইটেনিং এজেন্ট ইত্যাদি।

ওয়েটিং এজেন্টস (Weighting Agents) 
সুতা ও উৎপাদিত কাপড়ের ওজন বৃদ্ধি করার জন্য যে পদার্থ ব্যবহার করা হয় সেগুলোই ওয়েটিং এজেন্ট। শুধু গ্রে অবস্থায় বিক্রি করার জন্যই এ ধরনের এজেন্ট ব্যবহার করা হয়ে থাকে। উদাহরণ: চায়না ক্লে (China clay), চক বা খড়িমাটি (CaCO3), ফ্রেঞ্চ চক (French Chalk), ম্যাগনেসিয়াম সালকেট (MgSO4), সোডিয়াম সালফেট (Na2SO4), ম্যাগনেসিয়াম ক্লোরাইড (MgCl2) ইত্যাদি।

সাইজিং পদ্ধতির শ্রেনিবিভাগ- 
সাইজ-এর প্রয়োগ পদ্ধতি ও ড্রাই পদ্ধতির ওপর ভিত্তি করে সাইজিং মেশিনকে শ্রেণিবিভাগ করা হয় । সাইজিং পদ্ধতির উপর ভিত্তি করে সাইজিং মেশিনসমূহকে চার ভাগে ভাগ করা যায়। যথা- 

১) সিলিন্ডার ড্রাইং (Cylinder drying ) 
ক) দুই সিলিন্ডার বিশিষ্ট (Two cylinder type)
খ) বহু সিলিন্ডার বিশিষ্ট (Multi cylinder type) 

২) হট এয়ার ড্রাইং (Hot air dyeing) 

৩) ইনফ্রারেড ড্রাইং (Infrared dyeing) 

৪) কম্বাইন্ড পদ্ধতি (Combind system) 

প্রয়োগ পদ্ধতির উপর ভিত্তি করে মাড়করণ বা সাইজিং এ নিম্নলিখিত পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়। যথা- 

১) টেপ অথবা স্লেশার সাইজিং (Tape or Slasher sizing ) 
২) হট মেল্ট সাইজিং (Hot melt sizing )
৩) হাই প্রেসার সাইজিং (High pressure sizing ) 
8) ফোম সাইজিং (Foam sizing ) 
৫) সলভেন্ট সাইজিং (Solvent sizing ) 
৬) ইলেকট্রোস্ট্যাটিক সাইজিং (Electrostatic sizing ) 
৭) পলিমার ইমালশন সাইজিং (Polymer emulsion sizing ) 
৮) কম্বাইন্ড সাইজিং (Combind sizing )

সাইজিং-এর সময় গৃহীত সতর্কতাসমূহ
 সাইজিং-এর সময় নিম্নলিখিত সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। 

  • সাইজিং চলাকালীন সময়ে সাইজ দ্রবণের ঘনত্ব যেন কমে না যায়। 
  • যে নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় সাইজিং করতে হবে তা যেন কম না হয়। 
  • মাড়ের দ্রবণের তাপমাত্রা ৬০° C এ রাখতে হবে। 
  • সাইজ বক্সের সাইজিং রোলারের প্রেসার যাতে কম অথবা বেশি না হয় তার দিকে দৃষ্টি রাখতে হবে। 
  • মাড় শুকানোর জন্য ড্রাইং সিলিন্ডারে যেন অতিরিক্ত তাপ না দেওয়া হয় যাতে কড়া সাইজিং হয় । 
  • ভেজা অবস্থায় যেন উইভার্স বিম তৈরি না হয়। 
  • টানা সুতা একটার সঙ্গে অন্যটা না জড়িয়ে থাকে, সে বিষয়ে লক্ষ রাখতে হবে।
Content added By

ব্যবহারিক

১. পরীক্ষার নাম : রক্ষণাবেক্ষণে ব্যবহৃত বিভিন্ন যন্ত্রপাতির সাথে পরিচিত্তি।

সংজ্ঞা রক্ষণাবেক্ষণ
কোনো যন্ত্র বা মেশিনপত্রকে নিয়মতান্ত্রিকভাবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে প্ররোজনীর অংশে তেল, গ্রিজ ইত্যাদি প্রয়োগসহ সার্বিক যত্ন নেওয়া অর্থাৎ শিল্পকারখানা বা প্লান্টের মেশিনপত্র, সরঞ্জামাদি, কাঁচামাল ও উৎপাদিত পণ্যের প্রস্তুতকারকের নির্দেশ মোতাবেক পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা, ভৈল প্ররোপসহ সার্বিক যত্ন দেওয়ার যথোপযুক্ত প্রক্রিরাই হচ্ছে রক্ষণাবেক্ষণ।

রক্ষণাবেক্ষণে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি
মেশিনের পরিচর্যা বা রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রচুর যন্ত্রপাতি পাওয়া যায়। তার একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা নিম্নে দেওয়া হলো।
ক) হ্যান্ড টুলস - 
* হ্যামার 
* ফাইল 
* চিলে
* বেঞ্চ
* ডিভাইডার 
* অ্যাডজাস্টেবল রেঞ্চ 
* পাইপ রেঞ্চ 
* প্যানার 
* বক্স রেঞ্চ 
* টর্ক রেফ

২. পরীক্ষার নাম : নির্দিষ্ট কাজের জন্য নির্দিষ্ট যন্ত্রের পরিচিতি।

সংজ্ঞা
ক) মেরামত : কোনো মেশিন/যন্ত্রপাতি কোনো কারণে যদি পূর্বের ন্যায় কাজ করতে অক্ষম হয়, তবে তাকে পূর্বের ন্যায় কাজ করা সক্ষম করে তোলার জন্য যে কাজটি করা হয় তাই মেরামত । 
খ) পরিষ্কারকরণ উৎপাদনমুখী কর্মকাণ্ডে ব্যবহৃত মেশিন/যন্ত্রপাতি ইত্যাদির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করতে কাজের পূর্বে ও পরে ধুলা, ময়লা, আবর্জনা দূর করার প্রক্রিয়াই হচ্ছে পরিষ্কারকরণ। 
গ) অয়েলিং ও গ্রিজিং : ইঞ্জিনের বিভিন্ন যন্ত্রাংশকে সচল ও ভালো রাখা, ঘর্ষণজনিত ক্ষয় হ্রাস ও বিশেষ উদ্দেশ্য সাধনের জন্য অয়েল/লুব্রিক্যান্ট ও গ্রিজ প্রদান করার পদ্ধতিকে অয়েলিং ও গ্রিজিং বলে।

ওয়েলিং, গ্রিজিং-
এ যন্ত্রপাতির তালিকা : 
* অয়েল পাম্প 
* গ্রিজ গান 
* অয়েল ক্যান্ট
* হ্যান্ড পাম্প। 

সতর্কতা 
* স্প্যানার, এলকি ইত্যাদি নাম্বার অনুযায়ী ব্যবহার করা উচিত। নির্দিষ্ট নাম্বারের জন্য নির্দিষ্ট টুলস / সরঞ্জাম রয়েছে। 
* স্টিলের হ্যামার পরিহার করে কাঠের অথবা প্লাস্টিকের হ্যামার ব্যবহার করা উচিত। 
* সাবধানতার সঙ্গে সরঞ্জাম নাড়াচাড়া করা উচিত। 

মন্তব্য/উপসংহার

৩. পরীক্ষার নাম : ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি ব্যবহারের পর পরিষ্কারকরণ। 

সংজ্ঞা :
ক) পরিষ্কারকরণ : উৎপাদনমুখী কর্মকাণ্ডে ব্যবহৃত মেশিনসমূহ ভালো রাখার তাগিদে ও এর সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করতে কাজের পূর্বে ও পরে এবং নির্দিষ্ট সময় অন্তর অন্তর পরিষ্কার রাখার প্রক্রিয়াকেই পরিষ্কারকরণ বলা হয়।

ব্যবহারের পর ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি সংরক্ষণ 
রক্ষণাবেক্ষণ কাজের শেষে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতিসমূহ এখানে সেখানে না রেখে প্রতিটি টুলস বা যন্ত্রকে যত্ন সহকারে পরিষ্কার করে নির্দিষ্ট স্থানে সাজিয়ে রাখতে হবে। প্রয়োজন অনুযায়ী যাতে সহজেই উক্ত টুলস বা যন্ত্রপাতি হাতের কাছে পাওয়া যায়।

সতর্কতা 
* যে কোনো যন্ত্রপাতি বা টুলস ব্যবহারের পর এখানে সেখানে ফেলে রাখা উচিত নয় । 
* টুলস বা যন্ত্রপাতি পরিষ্কার না করলে যন্ত্রপাতি মরিচা ধরে বা নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
* সাবধানতার সঙ্গে প্রতিটি টুলস নির্দিষ্ট স্থানে যত্ন সহকারে রেখে দেওয়া উচিত। 

মন্তব্য

৪. পরীক্ষার নাম : রক্ষণাবেক্ষণে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি ব্যবহারে সতর্কতা 

সংজ্ঞা
ক) দুর্ঘটনা : যে ঘটনাপ্রবাহ দ্বারা কর্মের স্বাভাবিক প্রক্রিয়া ও ধারাবাহিকতা ব্যাহত হয় তাকে দুর্ঘটনা বলে। দুর্ঘটনা হলো একটি অপরিকল্পিত, অনিয়ন্ত্রিত, অপ্রত্যাশিত হঠাৎ ঘটে যাওয়া ঘটনা, যার দ্বারা জান ও মালের ক্ষয়ক্ষতি হয়। 

(খ) নিরাপত্তা কোনো শিল্প প্রতিষ্ঠান চলমান সকল কাজকর্ম যাতে কোনো প্রকার অনাকাঙ্ক্ষিত বা অবাঞ্ছিত ঘটনার উদ্ভব না হতে পারে তার জন্য পরিকল্পিতভাবে কর্মী, যন্ত্রপাতি, মেশিন ও কর্মশালায় বিভিন্ন স্বীকৃত বিধিব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় এবং এর যথাযথ প্রয়োগের মাধ্যমে কর্মস্থলে সম্ভাব্য দুর্ঘটনা প্রতিহত করাকে নিরাপত্তা বলে ।

নির্দিষ্ট যন্ত্রপাতির জন্য নির্দিষ্ট সতর্কতা 
* প্রথমেই কাজের ধরন অনুযায়ী উপযুক্ত মানের বা উপযুক্ত মাপের যন্ত্রপাতি নির্বাচন করতে হবে। 
* যেখানে ব্যবহার করবে তার সম্বন্ধে ভালো জ্ঞান বা অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। 
* আঘাত করা বা যন্ত্র দ্বারা চাপ দেওয়ার পূর্বে নির্দিষ্ট করতে হবে যে কতটুকু আঘাত বা চাপ প্রয়োগ করতে হবে। 
* ঠিক কোনো স্থানে যন্ত্রপাতি বা টুলস ফিট করবে তা নিশ্চিত করতে হবে। 
* সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে তবে যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা সহজ হবে। 

মন্তব্য :

৫. পরীক্ষার নাম : কটন ফাইবারের পরিচিতি ও শনাক্তকরণ। 

সংজ্ঞা
ক) শনাক্তকরণ : বিভিন্ন পরীক্ষার মাধ্যমে ফাইবার চেনার জন্য যে পদ্ধতি ব্যবহার করে ফাইবার এর গুণাগুণ যাচাই করে ফাইবার এর নামকরণ নির্দিষ্ট করা হয় তাকে বলা হয় শনাক্তকরণ।

কটন ফাইবারের প্রাথমিক পরিচিতি 
কটন ফাইবার প্রাকৃতিক ফাইবারের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ ফাইবার। ব্যবহারের দিক থেকেও সবচেয়ে জনপ্রিয়। পানি শোষণ ক্ষমতা বেশি বলে এই ফাইবারের তৈরি পোশাক খুবই স্বাস্থ্যসম্মত। এ ফাইবার কোমল ও নমনীয় গুণের অধিকারী। ইহা দ্বারা আকর্ষণীয় ও আরামদায়ক পোশাক তৈরি করা সম্ভব। কটন ফাইবারের রং সাদা বা সাদার কাছাকাছি। ফাইবারের দৈর্ঘ্য ১০ মিমি থেকে ৬৫ মিমি পর্যন্ত হয়।

ফাইবার শনাক্তকরণের উপকরণ
ক) কাউন্টিং গ্লাস 
খ) অণুবীক্ষণ যন্ত্র।
গ) মোমবাতি ও ম্যাচ
ঘ) সালফিউরিক অ্যাসিড
ঙ) হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড 
চ) ফেনল
ছ) টেস্ট টিউব
জ) পিপেট

শনাক্তকরণের ধাপ
ক) ভৌত পরীক্ষা 
খ) রাসায়নিক পরীক্ষা 
গ) আনুবীক্ষণিক পরীক্ষা।

সতর্কতা
• নমুনা সংগ্রহ করার সময় সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত। নমুনা সঠিক না হলে পরীক্ষার ফলাফলও সঠিক হবে না। 
• জ্যাসিড জাতীয় রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহারে অতিমাত্রায় সতর্ক থাকা উচিত। নতুবা যে কোনো রকম দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

মন্তব্য/উপসংহার

৬. পরীক্ষার নাম জুট ফাইবারের পরিচিতি ও শনাক্তকরণ। 

ফুট ফাইবারের পরিচিত্তি
ফুট সেলুলোজিক ফাইবার। তবে তুলার তুলনায় ছুটে সেলুলোজের পরিমাণ কম। জুট ফাইবার কিছুটা শক্ত ও খসখসে। ফুট ফাইবার ছালজাতীয় ফাইবার ফুট ও জুটের তৈরি দ্রব্য সহজেই পচনশীল मय পাঁচ থেকে সাত মাসের মধ্যেই ইহা মাটির সাথে মিশে যায়। ফলে পরিবেশের কোনো ক্ষতি করে না। এ জন্য ফুটকে পরিবেশবন্ধু বলা হয়। জুট দেখতে সোনালি ও সাদা। কম স্থিতিস্থাপকসম্পন্ন। সহজেই রং করা যায়। কাগজ তৈরির মত হিসেবে সবুজ পাট ব্যবহার করা হয়।

ফাইবার শনাক্তকরণের উপকরণ 
ক) অণুবীক্ষণ যন্ত্র। 
খ) মোমবাতি ও ম্যাচ
গ) সালফিউরিক অ্যাসিড
ঘ) হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড
ঙ) টেস্ট টিউব
চ) পিপেট

শনাক্তকরণের ধাপ 
ক) ভৌত পরীক্ষা 
খ) রাসায়নিক পরীক্ষা 
গ) আণুবীক্ষণিক পরীক্ষা। 

ক) ভৌত পরীক্ষা : 
ভৌত পরীক্ষায় কোনো সगाরে প্রয়োজन না। আর এই ভৌত পরীক্ষা নিম্নলিখিতভাবে ভাগ করা যায়। 
(১) স্পর্শ পরীক্ষা 
(২) আগুনে পুড়ে পরীক্ষা।

১) স্পর্শ পরীক্ষা : 
স্পর্শ পরীক্ষা সাধারণত অভিজ্ঞতা ও দক্ষতার উপর নির্ভর করে। জুট- গরম, স্মিতিস্থাপক ও কর্কশ। 

২) আগুনে পুড়ে পরীক্ষা : 
বিভিন্ন টেক্সটাইল ফাইবারের গঠনগত উপাদানের কারণে আগুনে পোড়ার পর ফাইবারের আচরণও ভিন্ন ভিন্ন পরিলক্ষিত হয়। ফলে উক্ত আচরণ শনাক্ত করে ফাইবারকে চেনা যায়।

জুট-
আগুনে সহজেই পুড়ে যায়। 
হলুদ শিখাসহ তাড়াতাড়ি পুড়ে যায়। 
হালকা ধূসর ছাই পাওয়া যায় ।

খ) রাসায়নিক পরীক্ষা : 
সাধারণত দুইটি রাসায়নিক পরীক্ষার মাধ্যমে ফাইবার শনাক্তকরণ করা হয়। 
১) স্টোইন টেস্ট 
২) সলভেন্ট টেস্ট 

গ) অণুবীক্ষণিক পরীক্ষা : 
অণুবীক্ষণের নিচে জুট আঁশ ধরে নিম্নলিখিত অবস্থা দৃষ্টিগোচর হয়। 

ফলাফল : 

মন্তব্য :

৭. পরীক্ষার নাম : সিল্ক ফাইবারের পরিচিতি ও শনাক্ত করণ। 

সিল্ক ফাইবারের পরিচিতি
সিল্ক প্রানিজ ফাইবার এবং একমাত্র প্রাকৃতিক ফিলামেন্ট ফাইবার। সিল্ক ফাইবার তার আকর্ষণীয় সৌন্দর্য ও আভিজাত্যের জন্য কুইন অব ফাইবার বলে পরিচিত। সিল্ক ফাইবারের স্থিতিস্থাপকতা গুণ অনেক বেশি। ইহা বেশ নমনীয়, আর্দ্রতা ধারণ ক্ষমতাও বেশ ভালো। ইহা শতকরা ১১ ভাগ আর্দ্রতা ধারণ করতে পারে। সিল্ক ফাইবারের তৈরি বস্ত্র খুব আরামদায়ক। গ্রীষ্মকালীন পোশাক হিসেবে সিল্কের বস্ত্র ব্যবহৃত হয়।

ফাইবার শনাক্তকরণের উপকরণ

ক) অণুবীক্ষণ যন্ত্র। 
খ) মোমবাতি ও ম্যাচ
গ) সালফিউরিক অ্যাসিড 
ঘ) হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড
ঙ) ফেনল 
চ) সোডিয়াম হাইড্রক্সাইড
ছ) টেস্ট টিউব
জ) পিপেট ইত্যাদি

শনাক্তকরণের ধাপ 
ক) ভৌত পরীক্ষা 
খ) রাসায়নিক পরীক্ষা 
গ) আণুবীক্ষণিক পরীক্ষা।

ক) ভৌত পরীক্ষা :
১) স্পর্শ পরীক্ষা : গরম, মসৃণ ও স্থিতিস্থাপক সিঙ্ক ফাইবার 
২) আগুনে পুড়ে পরীক্ষা: ধীরে ধীরে পুড়ে, আগুন থেকে সরালে জ্বলে না। পালক বা চুল পোড়ার হালকা গছ । কালো গুটি বা দানা আকারের ছাই হয়। সিল্ক ফাইবার 
১) স্পর্শ পরীক্ষা : স্পর্শ পরীক্ষা সাধারণত অভিজ্ঞতা ও দক্ষতার উপর নির্ভর করে। 
২) আগুনে পুড়ে পরীক্ষা: বিভিন্ন টেক্সটাইল ফাইবারের পঠনগত উপাদানের কারণে আগুনে পোড়ার পর ফাইবারের আচরণও ভিন্ন ভিন্ন পরিলক্ষিত হয়। ফলে উক্ত আচরণ শনাক্ত করে ফাইবারকে চেনা যায়। 

খ) রাসায়নিক পরীক্ষা : 
সলভেন্ট টেস্ট: 
• গাছ ও উষ্ণ হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিডের (HCI) সাথে বিক্রিয়া করলে কোনো পরিবর্তন হয় না। 
• ঠাণ্ডা ও ঘন H2SO4 এর সাথে বিক্রিয়া করলে কোনো পরিবর্তন হয় না। 
• ফেনল এর সাথে বিক্রিয়া করলে কোনো পরিবর্তন হয় না উল বা সিল্ক হতে পারে। 
• ৫০% NaOH এর দ্রবণে উত্তপ্ত করলে দ্রবীভূত হয় সিল্ক ফাইবার হতে পারে। 
• ঘন ঠান্ডা NaOH অ্যাসিডে বিক্রিয়া করলে সিল্ক ফাইবার দ্রবীভূত হয়। 

ফলাফল: সিল্ক ফাইবার নিশ্চিত।

মন্তব্য।

৮. পরীক্ষার নাম : বিভিন্ন প্রকার সুতার কাউন্ট নির্ণয় ।

সংজ্ঞা
ক)কাউন্ট: কাউন্ট হচ্ছে এমন একটি সংখ্যা যা একক দৈর্ঘ্যের স্তর অথবা একক স্তরের দৈর্ঘ্যকে বোঝায় । 

প্রত্যক্ষ পদ্ধতি (Direct system) : 
প্রত্যক্ষ পদ্ধতিতে সুতার একক দৈর্ঘ্যের ভরকে কাউন্ট বলে। এ পদ্ধতিতে ফুট, উল, সিল্ক ইত্যাদি সুতার কাউন্ট নির্ণয় করা যায়। নিম্নের সূত্রের সাহায্যে প্রত্যক্ষ পদ্ধতিতে সুতার কাউন্ট নির্ণয় করা যায় ।

মন্তব্য:

৯। পরীক্ষার নাম ব্যালেলের সাহায্যে সুতার কাউন্ট নির্ণয় । 

সুতার কাউন্ট নির্ণয়ের জন্য ব্যালেন্স :
সুতার কাউন্ট নির্ণয়ের জন্য বিভিন্ন ধরনের ব্যালেন্স হয়েছে। তবে সরাসরি নির্ণয়ের জন্য খুব অল্প সংখ্যক ব্যালেন্স রয়েছে। যেমন- মোরেলস ব্যালেন্স, কোয়াডেন্ট ব্যালেন্স, বিজলিস ইয়ার্ন ব্যালেন্স ইত্যাদি।

এ ধরনের ব্যালেন্সে একটি বিম ব্যালেন্স থাকে যার পিছনে এমন একটি আলাদা রড থাকে যার আকৃতি এ ধরনের যে এতে ৫টি দিক রয়েছে। এতে বিভিন্ন কাউন্ট রেঞ্জের জন্য কাউন্ট ফেল খোদাই করে দাগাঙ্কিত থাকে। এ ক্ষেলের দুটি প্যান থাকে যার বাম দিকের প্যানে চিহ্নিত ওজন দেওয়া হয় ও বিয়ে নির্দিষ্ট রাইডার রাখা হয় এবং ডান দিকের প্যানে সুতার লি রাখা হয় ।

ধরা যাক, একটি কটন সুতার কাউন্ট নির্ণয় করতে হবে এবং উক্ত সুতার কাউন্ট আনুমানিক ৩২ বিবেচনা করা হয়। তাহলে ছেলের চিহ্নিত দিক সামনে ঘুরিয়ে আনতে হবে এবং নাম প্যানে নির্দিষ্ঠ ওজন স্থাপন করে বিমে রাইডার রাখতে হবে। এ অবস্থায় বিষকে ব্যালেন্সড করার জন্য রাইডারকে বিমের উপর সামনে-পিছনে সরিয়ে অ্যাডজাস্ট করা হয়। এ অবস্থায় সরাসরি স্কেল হতে সুতার কাউন্টের পাঠ দেওয়া হয়। এ ধরনের কয়েকটি পাঠ নিয়ে সুতার গড় কাউন্ট বের করা হয় ।

কোয়াডেন্ট ব্যালেন্স: 
কোয়ার্ডেন্ট ব্যালেন্স এক-চতুর্থাংশ। এ যন্ত্রটিতে যে ব্যালেন্স ব্যবহৃত হয় তা বৃত্তের এক-চতুর্থাংশের ন্যায় বলে এর নাম কোয়ার্ডেন্ট ব্যালেন্স। একটি ধাতুর বা কাঠের নির্মিত পায়া এর উপর আটকানো দণ্ড-এর উপর স্কেল বসানো থাকে। তাতে সুতা ঝুলানোর জন্য একটি হুক এবং কাউন্ট নির্দেশের জন্য একটি পয়েন্টার স্কেলের সাথে বিন্দুতে এমনভাবে আটকানো থাকে যে, হুকের উপর সুতা ঝুলালে তা হুকের সাথে সাথে স্কেলের দিকে সরে যায়।

যে সুতার কাউন্ট নির্ণয় করতে হবে তার নির্দিষ্ট দৈর্ঘ্যের সুতা হুকে স্থাপন করলেই নির্দেশকটি স্কেলের মধ্যে একটি বিন্দু নির্দেশ করবে যা সরাসরি উক্ত সুতার কাউন্ট নির্দেশ করে। এভাবে কয়েকটি পাঠ নিয়ে গড় করলেই সুতার কাউন্ট পাওয়া যায়।

এ যন্ত্রটিতে সাধারণত তিনটি স্কেল থাকে যার সাহায্যে ৪ গজ স্লাইভার নমুনা ঝুলিয়ে এর হ্যাংক বের করা যায় যা সাধারণত ০.১ থেকে ১০ হ্যাং পর্যন্ত পাঠ দান করে। দ্বিতীয়টি ২০ গজ রেডিং নমুনা ঝুলিয়ে এর হ্যাংক বের করা যায় যা ০.১ থেকে ৬.০ পর্যন্ত পাঠ দেয়। তৃতীয় স্কেলটি সুতার জন্য ব্যবহৃত হয়, যেখানে ৮৪০ গজ সুতা ঝুলিয়ে এর কাউন্ট নির্ণয় করা যায়। এ স্কেলে সাধারণত ৪' কাউন্ট থেকে ৮০' কাউন্ট পর্যন্ত সুতার কাউন্ট নির্ণয় করা যায়।

বিজলিস ইয়ার্ন ব্যালেন্স
 সুতার ছোট ছোট টুকরা বা কাপড় হতে সংগৃহীত সুতার কাউন্ট বের করার জন্য এ যন্ত্রটি ব্যবহার করা হয়।।

পরীক্ষার শুরুতে নির্দেশকটি স্কেলের গায়ে ডেটাম লাইনের সাথে লেভেল করা হয়। এরপর যে সুতার কাউন্ট নির্ণয় করতে হবে সে ধরনের সুতার একটি আদর্শ ওজন বিমের খাঁজে খাঁজে বসিয়ে দেওয়া হয়। এতে নির্দেশকটি ডেটাম লাইনের নিচে পড়ে যায়।

যে ধরনের সুতার কাউন্ট নির্ণয় করতে হবে তা টেমপ্লেটের চিহ্নিত দিক হতে কয়েক টুকরো মেপে কেটে হুকে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। এভাবে যন্ত্রটির নির্দেশককে ডেটাম লাইনে আনতে যতগুলো সুতার প্রয়োজন পড়ে পরীক্ষিত সুতার কাউন্ট তত।

  • সতর্কতা 
    সুতার দৈর্ঘ্য ও ওজন নিতে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। 
  • ব্যালেন্স সঠিকভাবে স্থাপন করতে হবে। 
  • মনোযোগের সঙ্গে পরীক্ষা করতে হবে।

১০। পরীক্ষার নাম : টুইস্ট টেস্টারের সাহায্যে সুতা টিপিআই (টুইস্ট/ইঞ্চি) নির্ণয়করণ।

সংজ্ঞা
ক) টুইস্ট : সুতা তৈরির উদ্দেশ্যে প্রয়োজনীয় সংখ্যক কতগুলো ফাইবারকে একসাথে তাদের অগ্রভাগে যে মোচড় দেওয়া হয় তাকেই পাঁক পা টুইস্ট বলে।
ফাইবারগুলো সুতার অক্ষের চারপাশে ঘুরে ঘুরে অবস্থান নেয় বলে সুতা পাক বা টুইস্ট হয়। সুতার পাঁক ডান দিকে অথবা বাম দিকে হতে পারে। ডানদিকের পাক অর্থাৎ ঘড়ির কাঁটা যে দিকে ঘোরে সে দিকের টুইস্টকে জেড টুইস্ট ও বামদিকে পাক অর্থাৎ ঘড়ির কাঁটার বিপরীত দিকে টুইস্টকে এস টুইস্ট বলে ।

টুইস্ট পরিমাপের যন্ত্র 
ক) অর্ডিনারি টুইস্ট টেস্টার
সুতার পাক নির্ণয় করার জন্য অর্ডিনারি টুইস্ট টেস্টার সবচেয়ে বেশি প্রচলিত। এই যন্ত্রের সাহায্যে সিঙ্গেল ও প্লাই সুতার পাক নির্ণয় করা যায়।

পরীক্ষণীয় দৈর্ঘ্য অনুযায়ী প্রথমে চলনশীল বাঁটকে নির্ধারিত স্থানে আটকাতে হবে। তারপর পরীক্ষণীয় সুতাকে ক্লাম্পে আটকানো হয়। সুতার পাক যে দিকে ঘুরবে ক্লাম্পের হাতল ও হুইলের সাহায্যে তার উল্টা দিকে ঘুরানো হয়। এই পদ্ধতি প্লাই সুতার ক্ষেত্রে দৈর্ঘ্য ১০ ইঞ্চি এবং সিঙ্গেল সুতার ক্ষেত্রে দৈর্ঘ্য ১ ইঞ্চি হয়। সুতার সম্পূর্ণ পাক খুলেছে কি না তা দেখার জন্য পরীক্ষণীয় সুতার মধ্য দিয়ে একটি নিডেল টেনে দিতে হয় পাক খোলার জন্য। ক্লাম্প কতবার ঘুরবে তা ডায়ালের উপর পয়েন্টারের অবস্থান থেকে জানা যায় এবং সুতার পরীক্ষণীয় দৈর্ঘ্য দিয়ে ভাগ করলে ইঞ্চি প্রতি পাক সংখ্যা পাওয়া যায়। এভাবে ১০ থেকে ২০টি নমুনা পরীক্ষা করে পাক বের করা সম্ভব।

খ) টেনশন টুইস্ট টেস্টার 
এ পদ্ধতিতে সুতার পাক খোলা এবং পুনরায় পাক দেওয়া পদ্ধতিও বলা হয়। এ ধরনের টেনশন টাইপ টুইস্ট টেস্টার পাক সংকোচন নীতিতে কাজ করে। এ জাতীয় যন্ত্র কটন বা ফিলামেন্ট সুতার পাক নির্ণয়ের জন্য ব্যবহৃত হয়। যখন কোনো ফাইবার গুচ্ছকে পাক প্রদান করা হয় তখন তা দৈর্ঘ্যে সংকুচিত হয়ে পড়ে। ডান পাকের সুতাকে বাম দিকে ঘুরালে পাক খুলে যাবে এবং দৈর্ঘ্যে প্রসারিত হবে, যা পাক প্রদানের জন্য যতটুকু সংকুচিত হয়েছিল তার সমান। এখন যদি সুতাটিকে বাম দিকে ঘুরানো অব্যাহত রাখা হয় তবে সুতাটি পূর্বের তুলনায় বিপরীত দিকে পাক নিবে এবং পুনরার সংকুচিত হয়ে পড়বে। যতটি পাক খোলার পরে এটি প্রসারিত হয়েছিল ঠিক ততটি পাক প্রদান করলে পূর্বের মূল দৈর্ঘ্য পাওয়া যাবে। শুরু হতে শেষ পর্যন্ত যতবার ঘুরানোর ফলে সুতার মূল দৈর্ঘ্য পাওয়া যাবে সে সংখ্যাকে পরীক্ষিত দৈর্ঘ্য (ইঞ্চি) এবং ২ দ্বারা ভাগ করলে প্রতি ইঞ্চি পাক সংখ্যা পাওয়া যাবে।

সতর্কতা: 
• সুতার প্রাপ্ত মেশিনে ভালোভাবে আটকাতে হবে। 
• সুতার পাক নিউট্রাল হয়ে থাকে আবার উল্টো দিকে থাকে যাতে পাক না হয়ে যায়, তা খেয়াল রাখতে হবে। 

মন্তব্য :

১১। পরীক্ষার নাম: হাতে চরকা ও চরকি প্রস্তুত করা।

ভূমিকা
হ্যান্ডলুম অধ্যুষিত অঞ্চলে সাধারণত কাঠ, পেরেক ও স্পিডেলের জন্য লোহার রড দ্বারা কাঠমিস্ত্রিরা চরকা ও চরকি প্রস্তুত করে থাকেন। হাতের তৈরি চরকা ও চরকি বর্তমানে ব্যবহৃত হচ্ছে।

উপকরণ 
ক) কাঠ 
খ) লোহার রড 
গ) পেরেক 
ঘ) সাইকেল/রিকশার অব্যবহৃত চাকা 
ঙ) কাঠমিস্ত্রির টুলস এবং সরঞ্জামসমূহ 
চ) বাঁশ

প্রস্তুত প্রণালী
চিত্রানুযায়ী চরকা ও চরকির যাবতীয় অংশ কাঠ দ্বারা প্রস্তুত করে জোড়া লাগানো হয়। শিক্ষার্থীরা বারবার অনুশীলন করে অভিজ্ঞতা অর্জন করে চরকা-চরকি প্রস্তুত করতে পারে ।

সতর্কতা 
সতর্কতার সঙ্গে কাজ করতে হবে যাতে কাঠের জোড়া লাগানো সঠিক হয়।

মন্তব্য/উপসংহার

১২। পরীক্ষার নাম : আম্বর চরকার ব্যবহার।

ভূমিকা 
আম্বর চরকা সাধারণ চরকার অনুরূপ তবে আম্বর চরকা তুলনামূলক বড়। চরকার এক প্রান্তে ঝুলন মশ স্পিন্ডেল ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দড়ি পাকানো হয়।

পদ্ধতি 
সাধারণত কয়ের (Coir) ফাইবার দড়ি (কাতা) পাকানোর ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়। কয়ের ফাইবার অর্থাৎ নারিকেলের ছোবড়া দ্বারা স্পিন্ডেলের সাথে ঝুলিয়ে, স্পিন্ডেলকে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে ছোবড়ার দড়ি (কাতা) পাকানো হয় ।

ব্যবহার 
কয়ের ফাইবার (নারিকেলের ছোবড়া) দ্বারা দড়ি (কাতা) পাকানো হয়, যা গ্রামাঞ্চলে প্রচুর কাজে ব্যবহৃত হয়। পাকানো দড়ি দ্বারা পাপোস তৈরি করা হয়।

১৩। পরীক্ষার নাম : সুতা রিলিং করা সম্পর্কে দক্ষতা অর্জন ।

সংজ্ঞা
ক) রিলিং : 
নির্দিষ্ট পরিধির অর্থাৎ জানা পরিধির ঘূর্ণায়মান সুইফট -এর চারদিকে নির্দিষ্ট দৈর্ঘ্য পর্যন্ত সুতা জড়ানোর প্রক্রিয়াকে রিলিং বলে।

রিলিং -এর পদ্ধতি : 
সাধারণত তিনটি পদ্ধতিতে রিলিং ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। 
ক) সেভেন লি অথবা স্ট্রেইট রিলিং (Seven Lea or straight reeling) 
খ) ক্রস রিলিং (Cross reeling)। 
গ) ডায়মন্ড অথবা স্কেইন রিলিং (Diamond or skin reeling)

ক) সেভেন লি অথবা স্ট্রেইট রিলিং (Seven Lea or straight reeling)
এ পদ্ধতিতে প্রতিটি ১২০ গজের ৭টি সেট দ্বারা এক সঙ্গে লি করা হয় বলে এ ধরনের রিলিং মেশিনকে সেভেন লি অথবা স্ট্রেইট রিলিং বলা হয়। এখানে প্রতিটি লি সুইফট -এর ওপর সমদূরত্বে জড়াতে হয়, যার জন্য গাইড ওয়ার প্রতিটি লি থেকে একটু একটু দূরত্ব রেখে মুভ করে থাকে। প্রতি ৮০ বার ঘূর্ণনের পর গাইড ওয়ার -এর মুভমেন্ট স্বয়ংক্রিয় বন্ধ হয়ে যায়। এ লি গুলোকে আলাদা আলাদা রাখার জন্য একটির পর অন্যটি রঙিন সুতা দ্বারা বাঁধা হয় যাতে সহজেই শনাক্ত, বিক্রি ও রপ্তানি করা যায়।

খ) ক্রস রিলিং (Cross Reeling)। 
এ পদ্ধতিতে র্যাক আলাদা রাখা হয়। টি রোলার শ্যাফট এর উপর একটি রিভার থাকে যা বেভেল - এর মাধ্যমে রিলিং মেশিনকে চালনা করে থাকে। যখন সুইফট ঘুরতে থাকে তখন ২” হতে ৩" এর মধ্যে একটি দ্রুত তির্যক গতি পেয়ে থাকে, যা প্রয়োজনীয় পূর্ণ প্রস্থ জুড়ে স্তর গঠন করতে থাকে। এই প্রকার রিলিং মেশিনে যে কোনো দৈর্ঘ্যর সুতা জড়ানো হয়। 

গ) ডায়মন্ড অথবা স্কেইন রিলিং (Diamond or skin reeling)। 
এটি ক্রস রিলিং -এর অনুরূপ, তবে পার্থক্য এই যে, সুতা যাতে আড়াআড়ি না হয় তার জন্য বিশেষভাবে ক্রসিং করা হয়। এই পদ্ধতির সুবিধা হলো এই প্রকার বান্ডেলকে বাইরে অথবা ভেতরে বাঁধা হয়। ওয়েট প্রসেসিং -এর জন্য এই পদ্ধতির বান্ডেল খুবই সুবিধাজনক। এটি সাধারণত মূল্যবান সুতার জন্য ব্যবহৃত হয়।

রিলিং প্রসেসের বর্ণনা 
সুতাকে রিলিং করার পর হ্যাংক সুতাকে ভাঁজ করা এবং বহন করা সহজ হয়। স্পিনিং মিলসমূহে শেষ ব্যবহারের উপর নির্ভর করে রিং ববিন থেকে কোন অথবা রিলিং মেশিনে হ্যাংক উৎপাদন করা হয় । রিলিং মেশিনের সুইফট মেশিনের উভয় পার্শ্বে বা এক পার্শ্বে থাকে। রিল করার সময় সুতার কোন বা ববিনকে মেশিনের উপর অবস্থিত স্পিন্ডেলের উপর বসানো হয়। ববিনের থেকে সুতার প্রান্ত বের করে ইয়ার্ন গাইডের মধ্য দিয়ে সুইফট বা রিলের উপর জড়ানো হয়। এভাবে পাশাপাশি যতগুলো ইয়ার্ন গাইড রয়েছে প্রতিটি ইয়ার্ন গাইডের মধ্য দিয়ে সুতা এনে সুইফটে লাগানো হয় । নির্দিষ্ট পরিমাণে সুতা রিলের পৃষ্ঠে জড়ানোর 1 পর রিলিং মেশিন চালু করা হয়। রিলিং মেশিনে প্রতি গোছায় ২ হ্যাংক পরিমাণ অর্থাৎ (৮৪০ x ২) = ১৬৮০ গঞ্জ সুতা জড়ানোর পর মেশিনটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ হয়ে যায়। এ ধরনের নির্দিষ্ট দৈর্ঘ্যের সুতাকে লি বা লাছা বা কাট বলে। প্রতিটি কাট বা লাছাকে মোটা সুতা দ্বারা আলাদা আলাদাভাবে বেঁধে রাখা হয় যাতে রিলের সুতাগুলো এলামেলো হয়ে না যায়। কটন স্পিনিং মিলসমূহে প্রতিটি রিলিং মেশিনে ৪০টি করে কোন অথবা রিং ববিন স্পিন্ডেলে বসানো থাকে। প্রতিটি কোন থেকে ১৬৮০ গজ এর লাছা তৈরি করা হয়। জুট স্পিনিং মিলসমূহে প্রতিটি রিলিং মেশিনে ২৪টি কোন অথবা স্পিনিং ববিন রিলিং মেশিনের স্পিন্ডেলে বসানো হয়। প্রতিটি ববিন থেকে ৩০০ গজ -এর এক একটি কাট তৈরি করা হয়। উপরোক্ত মোড়াসমূহ পরবর্তীতে একত্র করে বান্ডেলিং প্রেস মেশিনের সাহায্যে বান্ডেলে পরিণত করা হয়।

সতর্কতা : 
> লক্ষ রাখতে হবে সুতার নট ঠিকভাবে দেওয়া ও নট ছোট হওয়া। 
> সুতার নট না দিয়ে বান্ডেল বা নলী এর সুতা পেঁচিয়ে দেওয়া উচিত নয়। 
> রিং ববিনের অল্প সুতা কেটে ফেলে দেওয়া উচিত নয়। 

মন্তব্য :

১৪। পরীক্ষার নাম : বিভিন্ন প্রকার নলীর সাথে পরিচিতি

সংজ্ঞা : 
(ক) নদী (Pirn) 
কাপড় তৈরির জন্য টানা ও পড়েন সুতা ব্যবহৃত হয়। পড়েন সুতা প্যাকেজ আকারে জড়িয়ে মাকুতে স্থাপন করে শেডের মধ্যে চালনা করা হয়। মাকুতে স্থাপন করার জন্য চরকা বা পার্ন ওয়াইন্ডিং মেশিনের মাধ্যমে পড়েন সুতার যে প্যাকেজ তৈরি করা হয় তাই নলী বা পার্ন। 

(খ) কপ (Cop) 
জুট ইন্ডাস্ট্রিতে সাটেল এর মধ্যে যে প্যাকেজ স্থাপন করা হয় তাকে কপ বলে । তবে কটন নলীর মতো জুটের নলীতে কোনো কাঠের খালি নলী অর্থাৎ খালি পার্নের ব্যবহার প্রয়োজন নেই। কপ এমনভাবে তৈরি করা হয় যাতে কোনো কাঠের দণ্ডের প্রয়োজন হয় না।

সতর্কতা 
০ নলীতে যাতে সুতা ধারাবাহিকভাবে পেঁচানো হয় তার দিকে লক্ষ রাখতে হয়। 
• যে কাঠিতে পার্ন তৈরি করা হবে তা যেন ত্রুটিমুক্ত হয়। 

মন্তব্য :

১৫। পরীক্ষার নাম: হ্যাংক থেকে নলী প্রস্তুতকরণ। 

সংজ্ঞা : 
হ্যাংক রিলিং মেশিনের সুইফট এর পরিধির সমান অর্থাৎ ১.৫ গজ দৈর্ঘ্যের পরিধির ৫৬০ বার ঘূর্ণনের ফলে ৮৪০ গজ দৈর্ঘ্যের এক একটি হ্যাংক তৈরি হয়ে থাকে। হ্যাংক থেকে চরকা-চরকির মাধ্যমে হাতের সাহায্যে নলী বা পার্ন তৈরি করা হয়। 

হ্যাংক থেকে নদী প্রস্তুত 
সাধারণত হ্যান্ডলুম ইন্ডাস্ট্রিতে চরকার সাহায্যে হ্যাংক থেকে নলী প্রস্তুত করা হয়। চরকার বড় পরিধির খাঁচায় হ্যাংক লাগানো হয় এবং স্পিন্ডেলে খালি নলী লাগানো হয়। অতঃপর হ্যাংক থেকে সুতা বের করে নলীতে হালকাভাবে এক অথবা দুই প্যাঁচ প্যাঁচিয়ে হ্যান্ডেল ঘুরিয়ে আস্তে আস্তে নলীর এক প্রান্ত থেকে অনা প্রান্ত পর্যন্ত জড়ানো হয় । 

সতর্কতা 
০ চরকিতে যাতে সুতা প্যাচ না লাগে সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে 
০ প্যাচানোর গতি সমান রাখতে হবে। 
০ নলীতে যাতে ধারাবাহিকভাবে সুতা প্যাচানো হয় তার দিকে লক্ষ রাখতে হবে। 

মন্তব্য-

১৬। পরীক্ষার নাম : কাপড়ের ডিজাইন অনুযায়ী সুতার হিসাব নির্ণয়করণ ও ক্রিলে কোনো/চিজ স্থাপনকরণ । 

সংজ্ঞা : 
টেক্সটাইল ডিজাইন টেক্সটাইল সংক্রান্ত বুনন যা কাগজে অথবা কাপড়ে প্রতিফলিত করণকেই টেক্সটাইল ডিজাইন বলা হয়। 

সুতার হিসাব নির্ণয় - 
মনে করা যাক ২২" বহরের ১০০ গজ টানা প্রস্তুত করতে হবে। যদি ইঞ্চি প্রতি টানা সুতার সংখ্যা ৪০ ধরা হয়। তবে নিম্নের সূত্রের সাহায্যে মোট কত হ্যাংক সুতার প্রয়োজন হবে তা বের করা সম্ভব। রিড কাউন্ট/ শানা নম্বর ৪০

১৭। পরীক্ষার নাম: তাতে বিম ভোলা। 

সংজ্ঞা : 
(ক) তাঁত 
যে যন্ত্রে দুই বা ততোধিক সারির কতগুলো সুতা লম্বালম্বি ও আড়াআড়িভাবে স্থাপন করে বুনন কার্য সম্পন্ন করা হয় তাকে তাঁত বা লুম বলে। 

(খ) বিম 
কাপড় তৈরি করার প্রয়োজনে কাপড়ের বহর অনুযায়ী লম্বালম্বিভাবে টানা সুতা সাজানোর প্রয়োজনে যে বস্তু ব্যবহার করা হয় সেটাই বিম।

তাঁতে বিম তোলার পদ্ধতি 
উইভার্স বিষকে ড্রইং ইন ও ডেন্টিং -এর পর লুম -এর পিছনে নির্দিষ্ট ব্রাকেটের উপর বসানো হয়। বিম তাতে তোলার জন্য ক্যারিয়ার অথবা লিফটার ব্যবহার করা হয়। তবে হ্যান্ড লুমে বিম তোলার জন্য দুইজন শ্রমিক হাত দ্বারা তুলে তাঁতের পিছনে ব্রাকেটের উপরে বসিয়ে দেয়। হ্যান্ড লুমের জন্য যে বিম তৈরি করা হয়। তা ওজনে হালকা করে তাঁতে টানা সুতার দৈর্ঘ্য কম থাকে। 

মন্তব্য

১৮। পরীক্ষার নাম: ক্রিলে সুতা সাজানো। 

সংজ্ঞা : 
(ক) ক্রিল ওয়ার্সিং-
এ বিমে সুতা জড়ানোর জন্য একসঙ্গে অনেক সুতার প্রয়োজন হয়। এই সুতা ড্রামে সাজানোর পূর্বে খাঁচার মতো করে তৈরি করে ফ্রেমে শলা বা কাঠির সাহায্যে অনেকগুলো সুতাপূর্ণ ফ্রাঞ্জ ববিন একসঙ্গে সাজানো থাকে। এই ফ্রেমটিকে ক্রিল বলে। 

(খ) ক্রিল 
ববিনগুলো আড়াআড়ি ও লম্বালম্বি স্তরে স্তরে ফ্রেমে সাজানো হয়। ক্রিলে সুতা বা ববিন সাজানোর জন্য একটি নির্দিষ্ট নিয়ম বা পদ্ধতি মেনে চলা হয় । এই পদ্ধতিকেই ক্রিল বলে । 

(গ) ফ্রাঞ্জ ববিন 
পাথলি ড্রামে টানা সাজানোর পূর্বে টানা সুতাকে ক্রিলে সাজানোর সুবিধার্থে কাঠের তৈরি যে দণ্ডে সুভা জড়ানো হয় উক্ত দণ্ডটিকে ববিন বলে। 

পদ্ধতি
 উইভার্স বিম তৈরির জন্য টানা সুতার হিসাব অনুযায়ী টানা সুতার দৈর্ঘ্যের সাথে সামঞ্জস্য রেখে ফ্লাঞ্জ ববিনে সুতা জড়ানো হয়। ক্রিলে ববিন সাজানোর পূর্বে টানা সংখ্যা হিসাব করে সে অনুযায়ী অর্থাৎ টানায় মোট সুতা ৩০০টি হলে ১৫টি ববিন ৬ বার বাঁধন ঠিক করে ড্রামে সুতা স্থানান্তর করতে হবে। কাজেই ক্রিলে সুতা পূর্ণ ববিন ফ্রেমের খাঁচায় শলা বা কাঠিতে উপর নিচ পাশাপাশি সাজাতে হবে।

১৯। পরীক্ষার নাম ক্রিল থেকে ড্রামে সুতা স্থানাস্তর।

ড্রামে সুতা নেওয়া
ড্রামের পিছনে একটি ক্রিলের মধ্যে সুতাপূর্ণ ববিনগুলো সাজানো থাকে। শানার ইঞ্চি প্রতি কতটুকু সুতার প্রয়োজন ততটি ববিন নিয়ে কাজ করতে হবে। ববিন থেকে প্রতিটি সুতা প্রান্ত সেলেটের কাঠির চোখে ১টি ও ২টি কাঠির ফাঁকে ১টি এই নিয়মে টেনে একত্রে গিঁট দিয়ে পেরেকের সাথে আটকিয়ে ড্রামটি ঘূর্ণন শুনে গুনে ঘোরাতে হবে। লক্ষ রাখতে হবে যেন প্রতি ২টি পেরেকের মধ্যস্থলে ইঞ্চি প্রতি টানার দৈর্ঘ্যের সমতা ঠিক থাকে। পরিমিত পরিমাণ টানা নেওয়ার পর সেলেটের সাহায্যে সুতায় জো তুলতে হবে।

সর্তকতা 
০ লক্ষ রাখতে হবে যাতে প্রতি সেকশনে সুতার সংখ্যা সঠিক। 
০ ড্রামে ঘুরানোর সময় ঘূর্ণনের সংখ্যা সঠিক রাখতে হবে। নতুবা অপচয়ের হার বেড়ে যাবে।

২০। পরীক্ষার নাম মেশিন থেকে বিম নামানো।

ভূমিকা
ওয়ার্সিং মেশিনে উইভার্স বিম তৈরি হওয়ার পর সতর্কতার সঙ্গে বিম ক্যারিয়ার অথবা দুইজন শ্রমিক দুই পার্শ্ব থেকে হাত দ্বারা তুলে বিষ নামিয়ে আনেন। তবে উচ্চ গতিসম্পন্ন ওয়ার্নিং মেশিনের বিম প্রস্তুত হওয়ার পর বিমের দুই পার্শ্বের সাপোর্ট ব্রাকেট খুলে বিম ক্যারিয়ার অথবা লিফটার ওপরে সুতাপূর্ণ উঠানো হয় এবং বিম ক্যারিয়ারের মাধ্যমে উইভার্স বিমকে বিমের নির্দিষ্ট স্থানে সাজিয়ে রাখা হয়। কখনও কখনও ওভারহেড ক্রেনের সাহায্যে ভারী উইভার্স বিম স্থানান্তর করা হয়।

ওয়ার্সিং মেশিন হতে বিম নামানোর পদ্ধতি
উচ্চগতি সম্পন্ন সাইজিং মেশিনে বিম তৈরি হওয়ার পর উক্ত সুতাপূর্ণ উইভার্স বিমের গঠন ও ওজন অনুসারে ১৭২ কেজি থেকে ১ টন বা তদাপেক্ষা বেশি ওজনের হয়ে থাকে। এ ক্ষেত্রে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ৪টি সুইচের মাধ্যমে বিম নামানো ও খালি বিম ওঠানোর কার্য সমাধা করা হয়ে থাকে। এ ক্ষেত্রে মাত্র ২ মিনিট সময়ের প্রয়োজন হয়।

সতর্কতা 
• বিম তৈরির সময় সতর্ক থাকতে হবে যাতে বিমের ব্যাস ফ্রাঞ্জের ব্যাসের তুলনায় বেশি না হয় । 
০ বিম তৈরির সময় ফ্রাঞ্জের দূরত্ব সঠিক রাখতে হবে। 
০ বিম নামানোর সময় সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে নতুবা দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা থাকে।

২১। পরীক্ষার নাম : বিভিন্ন প্রকার সাইজিং ম্যাটারিয়ালস সমন্ধে পরিচিতি।

সংজ্ঞা 
যে পদ্ধতিতে টানা সুতাকে বিভিন্ন প্রকার মাড়ের উপকরণ যুক্ত করে সুতার উপর বিদ্যমান বাড়তি আঁশগুলোকে সুতার পৃষ্ঠে মিশিয়ে দিয়ে সুতাকে চকচকে, ওজন বৃদ্ধি, মসৃণ ও শক্তিশালী করা হয় সে পদ্ধতিকে সাইজিং বলে।

বিভিন্ন প্রকার সাইজিং ম্যাটারিয়ালস

শ্বেতসারযুক্ত উপাদান (Adhesive substance)
একে মাড়/সাইজের মূল উপাদানও বলা হয়। এ উপাদানের জন্য মাড় আঠালো হয়। এ শ্বেতসারযুক্ত উপাদানের সাথে পানি মিশ্রিত করে তাপ প্রয়োগ করলে আঠালো পদার্থের পেস্ট (Paste) এ পরিণত হয় । উদাহরণ- মেইজ স্টার্ট (Maise starch), তেঁতুলের বিচির পাউডার (Tamarind seed powder), টপিওকা স্টার্চ (Topioca starch), ময়দা (Flour ), সাঞ্চ স্টার্চ (Sagoo starch), আলুর প্যালো (Potato starch), রাইচ স্টার্চ (Rice starch) ইত্যাদি প্রাকৃতিক স্টার্চ। আবার সিএমসি (Carboxy Methyl Cellulose), পিডিএ (Polyvenyle Alcohol), পলিঅ্যাক্রাইলিক অ্যাসিড ইত্যাদি কৃত্রিম স্টার্চ বা অ্যাডহেসিভ।

সফেনিং এজেন্টস (Softening Agents) 
সফেনিং এজেন্টকে কোমল রাখার উপাদানও বলা হয়। টানা সুতা কখনও কখনও শক্ত, অমসৃণ ও ভঙ্গুর হয় । এছাড়া ও সুতার খসখসে ভাব ও নমনীয়তা দূর করার জন্য সফেনিং এজেন্ট ব্যবহার করা হয়। উদাহরণ- মাটন ট্যালো (Mutton tallow), টেলটেক্স (Teltex), নারিকেল তেল (Coconut oil), ক্যাস্টর অয়েল, তিলের তেল, তালের তেল, তুলার বীজের তেল, জলপাই এর তেল, রেডির তেল, প্যারাফিন ওয়াক্স (Parafin wax), চায়না মোম (China wax), সুগার ক্যান ওয়াক্স (Sugarcane wax), ওয়াক্স (Wax), সফট সোপ (Soft soap) ইত্যাদি।

হাইগ্রোসকোপিক এজেন্টস (Hygroscopic Agents) 
সুতাকে আর্দ্র রাখার জন্য হাইগ্রোসকোপিক এজেন্ট ব্যবহার করা হয়। আর্দ্র রাখার উপাদানসমূহ বাতাস হতে জলীয় বাষ্প গ্রহণ করে থাকে। এ এজেন্টস ব্যবহার করার ফলে টানা সুতা অপেক্ষাকৃত বেশি পরিমাণ আর্দ্রতা শোষণ করে সুতাকে নমনীয় রাখতে সাহায্য করে। উদাহরণ- ম্যাগনেসিয়াম ক্লোরাইড (MgCl2), ক্যালসিয়াম ক্লোরাইড (CaCl2), গ্লিসারিন, জিঙ্ক ক্লোরাইড (ZnCl2), ডাই ইথিলিন গ্লাইকল, সরবিটল ইত্যাদি।

অ্যান্টিসেপটিক এজেন্টস (Anticeptics ) 
একে বাংলায় প্রতিষেধক উপাদান বলা হয়। মিলডিউ অর্থাৎ ছত্রাকের আক্রমণ থেকে রক্ষার জন্য প্রতিষেধক উপাদান ব্যবহার করা হয়। সাধারণত সমস্ত স্টার্চই ছত্রাক দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্ক্ষা থাকে। কাজেই কার্বন সুতা সাইজিং করার প্রয়োজনে স্টার্চ -এর পাশাপাশি অ্যান্টিসেপটিকস প্রয়োগ করার প্রয়োজন হয়। উদাহরণ- জিঙ্ক ক্লোরাইড (ZnCl2), কপার সালফেট (CuSO4), সেলিসাইটিক অ্যাসিড (CaHa(OH)COOH), সোডিয়াম সিলকো ক্লোরাইড, বিটা নেপথলস, কার্বোলিক অ্যাসিড ইত্যাদি।

নিউট্রালাইজিং এজেন্টস (Neutralizing Agents) 
মাড় দ্রবণ প্রস্তুত করার সময় দ্রবণের (PH) মাত্রা পরিবর্তিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কাজেই দ্রবণকে নিউট্রাল করার জন্য নিউট্রালাইজিং এজেন্টস যোগ করা হয়। যতক্ষণ পর্যন্ত দ্রবনের (PH) মাত্রা ৬.৮ না হয় ততক্ষণ পর্যন্ত অল্প অল্প করে এ এজেন্টস ব্যবহার করা হয়। উদাহরণ- সোডা অ্যাশ।

অ্যান্টিফোমিং এজেন্টস (Antifoaming Agents) 
মাড় দ্রবণ অথবা মাড় পেস্ট প্রস্তুত করার সময় দ্রবণে ফেনা হবার সম্ভাবনা দেখা যায়। যার ফলে উক্ত দ্রবণ টানা সুতায় প্রয়োগ করতে অসুবিধার সৃষ্টি হয়। এ জন্য মাড় দ্রবণে অ্যান্টিফোমিং এজেন্টস ব্যবহার করা হয় । যা মাড়, পেস্ট বা দ্রবণে ফেনা উৎপন্ন হতে বাধা প্রদান করে । উদাহরণ-অ্যাসিটিক অ্যাসিড (CH3COOH), কেরোসিন, টার্পেন্টাইন, পাইন অয়েল, অ্যামাইল, অ্যালকোহল, সিলিকন ডিফোমার ইত্যাদি ।

টিনটিং বা রঞ্জক উপাদান (Tinting of Colouring Agents ) 
টানা সুতা ও উৎপাদিত কাপড়ের প্রাকৃতিক রংকে নিউট্রালাইজড করার জন্য এ এজেন্ট ব্যবহৃত হয়। সাধারণত যে সমস্ত কাপড় যে অবস্থায় বিক্রি হবে উক্ত কাপড় প্রস্তুত করতে টানা সুতায় মাড় দেওয়ার সময় এ এজেন্ট প্রয়োগ করা হয়ে থাকে। উদাহরণ- টিনাপল (Tinapol) আলট্রা মেরিন ব্লু, অ্যাসিড ডাই ও অপটিক্যাল ব্রাইটেনিং এজেন্ট ইত্যাদি।

ওয়েটিং এজেন্টস (Weighting Agents) 
সুতা ও উৎপাদিত কাপড়ের ওজন বৃদ্ধি করার জন্য যে পদার্থ ব্যবহার করা হয় সেগুলোই ওয়েটিং এজেন্ট। শুধু গ্রে অবস্থায় বিক্রি করার জন্যই এ ধরনের এজেন্ট ব্যবহার করা হয়ে থাকে। উদাহরণ- চায়না ক্লে (China clay), চক বা খড়িমাটি (CaCO3), ফ্রেঞ্চ চক (French Chalk), ম্যাগনেশিয়াম সালফেট ( MgSO4), সোডিয়াম সালফেট (Na2SO4), ম্যানেশিয়াম ক্লোরাইড (MgCl2) ইত্যাদি।

সতর্কতা 
• সাইজিং -এর প্রতিটি উপাদানের গুণাগুণ ভালোভাবে জানতে হবে। 
• কোনো উপাদান কী কাজ করে সে বিষয়ে জ্ঞান থাকা ভালো। 
০। পরবর্তী সাইজ নির্বাচনের সময় সতর্ক থাকতে হবে। 

মন্তব্য

২২। পরীক্ষার নাম : সাইজিং -এর রেসিপি নির্বাচন। 

সংজ্ঞা : 

রেসিপি

সাইজিং করার জন্য সাইজের কোন উপাদান নেওয়া হবে এবং উপাদানের কোনটি কতটুকু পরিমাণ নেওয়া হবে এটাই সাইজিং -এর রেসিপি। সাইজিং -এর রেসিপি নির্বাচনের বিবেচ্য বিষয়সমূহ ঃ 

• যে সুতাকে সাইজিং করা হবে তার ধরন 

• উপকরণের মূল্য 

• ভিসকোসিটি অর্থাৎ আঠালোভাবে স্থায়িত্ব 

০ আঠালো জাতীয় পদার্থ 

০ ডিসাইজিং -এর সময় সহজেই অপসারণের যোগ্যতা

উপরোক্ত মাড় দ্রবণ বা পেস্ট সাধারণত ১০০ ভাগ কটন সুতার জন্য প্রয়োগ করা হয়ে থাকে। 

সতর্কতা 
০ সাইজের নির্বাচনে সঠিক উপাদান বাছাই করা। 
০ আঠালো উপাদান ও প্রতিষেধক উপাদান যেন সঠিক হয়। 

উপসংহার /মন্তব্য

২৩। পরীক্ষার নাম : হ্যাংক সুতায় মাড় করার প্রস্তুতপ্রণালি।

ভূমিকা

হ্যান্ডলুম ফ্যাক্টরি বা কুটির শিল্পের তাঁতিদের মধ্যে হ্যান্ড সাইজিং প্রচলিত। এ ক্ষেত্রে মাড়ের শ্বেতসার হিসেবে খৈ, চালের গুঁড়া এবং ময়দাই সাধারণত ব্যবহৃত হয়ে থাকে। তবে খুব অল্প সুতার ক্ষেত্রে ভাতের মাড়ও ব্যবহার করা হয়।

উপাদান 
মিহি সুতার জন্য থৈ -এর মাড়ই উৎকৃষ্ট। মোটা বা মাঝারি সুতার জন্য চালের মাড় উৎকৃষ্ট। সিদ্ধ চালের চেয়ে আতপ চাল হলে ভালো হয়। কখনও কখনও তাঁতিরা মাড়ের সাথে একটু চুন, এক/আধ ফোঁটা কার্বলিক অ্যাসিড, ফরমালডিহাইড অথবা জিংক ফ্লোরাইড ব্যবহার করে।

উপরোক্ত সাইজিং উপাদানের কাজ

থৈ বা চালের গুঁড়া আঠালো পদার্থের জন্য চুন ব্যবহার করার ফলে মাড় আরও একটু আঠালো হয় এবং ফাঁকে নষ্ট করে না। তুঁতে ব্যবহার করার কারণে টানা সুতা পোকায় কাটে না। কার্বনিক অ্যাসিড ও জিংক ক্লোরাইড ব্যবহার করায় ইঁদুরে কাটে না ও টানায় মিলডিউ ধরে না।

প্রস্তুতপ্রণালি 
পরিমিত পরিমাণ থৈ একটি পাত্রে ৫ মিনিট ভিজিয়ে রাখবে। পরে ঐ পাত্র থেকে থৈ উঠিয়ে অন্য পাত্রে ভালো করে চটকাতে হবে। চটকানো শেষ হলে কাপড় দিয়ে ছেঁকে নিয়ে মণ্ড বের করবে। মণ্ডের সাথে অন্য কেমিক্যাল মিশিয়ে যখন বেশ আঠালো বোধ হবে তখন টানা সুতায় প্রয়োগ করতে হবে।

সতর্কতা

• মাড় প্রস্তুত করার সতর্ক থাকতে হবে 
• মাড় যাতে ঘন আঠালো হয় তার প্রতি যত্নবান হতে হবে। 
• কৃষ্ণ মাতৃ বেশিদিন ফেলে রাখা যাবে না।

Content added || updated By

রক্ষণাবেক্ষণে ব্যবহৃত বিভিন্ন যন্ত্রপাতির সাথে পরিচিত্তি।

সংজ্ঞা রক্ষণাবেক্ষণ
কোনো যন্ত্র বা মেশিনপত্রকে নিয়মতান্ত্রিকভাবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে প্ররোজনীর অংশে তেল, গ্রিজ ইত্যাদি প্রয়োগসহ সার্বিক যত্ন নেওয়া অর্থাৎ শিল্পকারখানা বা প্লান্টের মেশিনপত্র, সরঞ্জামাদি, কাঁচামাল ও উৎপাদিত পণ্যের প্রস্তুতকারকের নির্দেশ মোতাবেক পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা, ভৈল প্ররোপসহ সার্বিক যত্ন দেওয়ার যথোপযুক্ত প্রক্রিরাই হচ্ছে রক্ষণাবেক্ষণ।

রক্ষণাবেক্ষণে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি
মেশিনের পরিচর্যা বা রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রচুর যন্ত্রপাতি পাওয়া যায়। তার একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা নিম্নে দেওয়া হলো।
ক) হ্যান্ড টুলস - 
* হ্যামার 
* ফাইল 
* চিলে
* বেঞ্চ
* ডিভাইডার 
* অ্যাডজাস্টেবল রেঞ্চ 
* পাইপ রেঞ্চ 
* প্যানার 
* বক্স রেঞ্চ 
* টর্ক রেফ

Content added || updated By

নির্দিষ্ট কাজের জন্য নির্দিষ্ট যন্ত্রের পরিচিতি।

সংজ্ঞা
ক) মেরামত : কোনো মেশিন/যন্ত্রপাতি কোনো কারণে যদি পূর্বের ন্যায় কাজ করতে অক্ষম হয়, তবে তাকে পূর্বের ন্যায় কাজ করা সক্ষম করে তোলার জন্য যে কাজটি করা হয় তাই মেরামত । 
খ) পরিষ্কারকরণ উৎপাদনমুখী কর্মকাণ্ডে ব্যবহৃত মেশিন/যন্ত্রপাতি ইত্যাদির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করতে কাজের পূর্বে ও পরে ধুলা, ময়লা, আবর্জনা দূর করার প্রক্রিয়াই হচ্ছে পরিষ্কারকরণ। 
গ) অয়েলিং ও গ্রিজিং : ইঞ্জিনের বিভিন্ন যন্ত্রাংশকে সচল ও ভালো রাখা, ঘর্ষণজনিত ক্ষয় হ্রাস ও বিশেষ উদ্দেশ্য সাধনের জন্য অয়েল/লুব্রিক্যান্ট ও গ্রিজ প্রদান করার পদ্ধতিকে অয়েলিং ও গ্রিজিং বলে।

ওয়েলিং, গ্রিজিং-
এ যন্ত্রপাতির তালিকা : 
* অয়েল পাম্প 
* গ্রিজ গান 
* অয়েল ক্যান্ট
* হ্যান্ড পাম্প। 

সতর্কতা 
* স্প্যানার, এলকি ইত্যাদি নাম্বার অনুযায়ী ব্যবহার করা উচিত। নির্দিষ্ট নাম্বারের জন্য নির্দিষ্ট টুলস / সরঞ্জাম রয়েছে। 
* স্টিলের হ্যামার পরিহার করে কাঠের অথবা প্লাস্টিকের হ্যামার ব্যবহার করা উচিত। 
* সাবধানতার সঙ্গে সরঞ্জাম নাড়াচাড়া করা উচিত। 

মন্তব্য/উপসংহার

Content added By

ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি ব্যবহারের পর পরিষ্কারকরণ।

সংজ্ঞা :
ক) পরিষ্কারকরণ : উৎপাদনমুখী কর্মকাণ্ডে ব্যবহৃত মেশিনসমূহ ভালো রাখার তাগিদে ও এর সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করতে কাজের পূর্বে ও পরে এবং নির্দিষ্ট সময় অন্তর অন্তর পরিষ্কার রাখার প্রক্রিয়াকেই পরিষ্কারকরণ বলা হয়।

ব্যবহারের পর ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি সংরক্ষণ 
রক্ষণাবেক্ষণ কাজের শেষে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতিসমূহ এখানে সেখানে না রেখে প্রতিটি টুলস বা যন্ত্রকে যত্ন সহকারে পরিষ্কার করে নির্দিষ্ট স্থানে সাজিয়ে রাখতে হবে। প্রয়োজন অনুযায়ী যাতে সহজেই উক্ত টুলস বা যন্ত্রপাতি হাতের কাছে পাওয়া যায়।

সতর্কতা 
* যে কোনো যন্ত্রপাতি বা টুলস ব্যবহারের পর এখানে সেখানে ফেলে রাখা উচিত নয় । 
* টুলস বা যন্ত্রপাতি পরিষ্কার না করলে যন্ত্রপাতি মরিচা ধরে বা নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
* সাবধানতার সঙ্গে প্রতিটি টুলস নির্দিষ্ট স্থানে যত্ন সহকারে রেখে দেওয়া উচিত। 

মন্তব্য

Content added || updated By

রক্ষণাবেক্ষণে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি ব্যবহারে সতর্কতা

সংজ্ঞা
ক) দুর্ঘটনা : যে ঘটনাপ্রবাহ দ্বারা কর্মের স্বাভাবিক প্রক্রিয়া ও ধারাবাহিকতা ব্যাহত হয় তাকে দুর্ঘটনা বলে। দুর্ঘটনা হলো একটি অপরিকল্পিত, অনিয়ন্ত্রিত, অপ্রত্যাশিত হঠাৎ ঘটে যাওয়া ঘটনা, যার দ্বারা জান ও মালের ক্ষয়ক্ষতি হয়। 

(খ) নিরাপত্তা কোনো শিল্প প্রতিষ্ঠান চলমান সকল কাজকর্ম যাতে কোনো প্রকার অনাকাঙ্ক্ষিত বা অবাঞ্ছিত ঘটনার উদ্ভব না হতে পারে তার জন্য পরিকল্পিতভাবে কর্মী, যন্ত্রপাতি, মেশিন ও কর্মশালায় বিভিন্ন স্বীকৃত বিধিব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় এবং এর যথাযথ প্রয়োগের মাধ্যমে কর্মস্থলে সম্ভাব্য দুর্ঘটনা প্রতিহত করাকে নিরাপত্তা বলে ।

নির্দিষ্ট যন্ত্রপাতির জন্য নির্দিষ্ট সতর্কতা 
* প্রথমেই কাজের ধরন অনুযায়ী উপযুক্ত মানের বা উপযুক্ত মাপের যন্ত্রপাতি নির্বাচন করতে হবে। 
* যেখানে ব্যবহার করবে তার সম্বন্ধে ভালো জ্ঞান বা অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। 
* আঘাত করা বা যন্ত্র দ্বারা চাপ দেওয়ার পূর্বে নির্দিষ্ট করতে হবে যে কতটুকু আঘাত বা চাপ প্রয়োগ করতে হবে। 
* ঠিক কোনো স্থানে যন্ত্রপাতি বা টুলস ফিট করবে তা নিশ্চিত করতে হবে। 
* সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে তবে যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা সহজ হবে। 

মন্তব্য :

Content added || updated By

কটন ফাইবারের পরিচিতি ও শনাক্তকরণ।

সংজ্ঞা
ক) শনাক্তকরণ : বিভিন্ন পরীক্ষার মাধ্যমে ফাইবার চেনার জন্য যে পদ্ধতি ব্যবহার করে ফাইবার এর গুণাগুণ যাচাই করে ফাইবার এর নামকরণ নির্দিষ্ট করা হয় তাকে বলা হয় শনাক্তকরণ।

কটন ফাইবারের প্রাথমিক পরিচিতি 
কটন ফাইবার প্রাকৃতিক ফাইবারের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ ফাইবার। ব্যবহারের দিক থেকেও সবচেয়ে জনপ্রিয়। পানি শোষণ ক্ষমতা বেশি বলে এই ফাইবারের তৈরি পোশাক খুবই স্বাস্থ্যসম্মত। এ ফাইবার কোমল ও নমনীয় গুণের অধিকারী। ইহা দ্বারা আকর্ষণীয় ও আরামদায়ক পোশাক তৈরি করা সম্ভব। কটন ফাইবারের রং সাদা বা সাদার কাছাকাছি। ফাইবারের দৈর্ঘ্য ১০ মিমি থেকে ৬৫ মিমি পর্যন্ত হয়।

ফাইবার শনাক্তকরণের উপকরণ
ক) কাউন্টিং গ্লাস 
খ) অণুবীক্ষণ যন্ত্র।
গ) মোমবাতি ও ম্যাচ
ঘ) সালফিউরিক অ্যাসিড
ঙ) হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড 
চ) ফেনল
ছ) টেস্ট টিউব
জ) পিপেট

শনাক্তকরণের ধাপ
ক) ভৌত পরীক্ষা 
খ) রাসায়নিক পরীক্ষা 
গ) আনুবীক্ষণিক পরীক্ষা।

সতর্কতা
• নমুনা সংগ্রহ করার সময় সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত। নমুনা সঠিক না হলে পরীক্ষার ফলাফলও সঠিক হবে না। 
• জ্যাসিড জাতীয় রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহারে অতিমাত্রায় সতর্ক থাকা উচিত। নতুবা যে কোনো রকম দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

মন্তব্য/উপসংহার

Content added By

জুট ফাইবারের পরিচিতি ও শনাক্তকরণ।

ফুট ফাইবারের পরিচিত্তি
ফুট সেলুলোজিক ফাইবার। তবে তুলার তুলনায় ছুটে সেলুলোজের পরিমাণ কম। জুট ফাইবার কিছুটা শক্ত ও খসখসে। ফুট ফাইবার ছালজাতীয় ফাইবার ফুট ও জুটের তৈরি দ্রব্য সহজেই পচনশীল मय পাঁচ থেকে সাত মাসের মধ্যেই ইহা মাটির সাথে মিশে যায়। ফলে পরিবেশের কোনো ক্ষতি করে না। এ জন্য ফুটকে পরিবেশবন্ধু বলা হয়। জুট দেখতে সোনালি ও সাদা। কম স্থিতিস্থাপকসম্পন্ন। সহজেই রং করা যায়। কাগজ তৈরির মত হিসেবে সবুজ পাট ব্যবহার করা হয়।

ফাইবার শনাক্তকরণের উপকরণ 
ক) অণুবীক্ষণ যন্ত্র। 
খ) মোমবাতি ও ম্যাচ
গ) সালফিউরিক অ্যাসিড
ঘ) হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড
ঙ) টেস্ট টিউব
চ) পিপেট

শনাক্তকরণের ধাপ 
ক) ভৌত পরীক্ষা 
খ) রাসায়নিক পরীক্ষা 
গ) আণুবীক্ষণিক পরীক্ষা। 

ক) ভৌত পরীক্ষা : 
ভৌত পরীক্ষায় কোনো সगाরে প্রয়োজन না। আর এই ভৌত পরীক্ষা নিম্নলিখিতভাবে ভাগ করা যায়। 
(১) স্পর্শ পরীক্ষা 
(২) আগুনে পুড়ে পরীক্ষা।

১) স্পর্শ পরীক্ষা : 
স্পর্শ পরীক্ষা সাধারণত অভিজ্ঞতা ও দক্ষতার উপর নির্ভর করে। জুট- গরম, স্মিতিস্থাপক ও কর্কশ। 

২) আগুনে পুড়ে পরীক্ষা : 
বিভিন্ন টেক্সটাইল ফাইবারের গঠনগত উপাদানের কারণে আগুনে পোড়ার পর ফাইবারের আচরণও ভিন্ন ভিন্ন পরিলক্ষিত হয়। ফলে উক্ত আচরণ শনাক্ত করে ফাইবারকে চেনা যায়।

জুট-
আগুনে সহজেই পুড়ে যায়। 
হলুদ শিখাসহ তাড়াতাড়ি পুড়ে যায়। 
হালকা ধূসর ছাই পাওয়া যায় ।

খ) রাসায়নিক পরীক্ষা : 
সাধারণত দুইটি রাসায়নিক পরীক্ষার মাধ্যমে ফাইবার শনাক্তকরণ করা হয়। 
১) স্টোইন টেস্ট 
২) সলভেন্ট টেস্ট 

গ) অণুবীক্ষণিক পরীক্ষা : 
অণুবীক্ষণের নিচে জুট আঁশ ধরে নিম্নলিখিত অবস্থা দৃষ্টিগোচর হয়। 

ফলাফল : 

মন্তব্য :

Content added || updated By

সিল্ক ফাইবারের পরিচিতি ও শনাক্ত করণ।

সিল্ক ফাইবারের পরিচিতি
সিল্ক প্রানিজ ফাইবার এবং একমাত্র প্রাকৃতিক ফিলামেন্ট ফাইবার। সিল্ক ফাইবার তার আকর্ষণীয় সৌন্দর্য ও আভিজাত্যের জন্য কুইন অব ফাইবার বলে পরিচিত। সিল্ক ফাইবারের স্থিতিস্থাপকতা গুণ অনেক বেশি। ইহা বেশ নমনীয়, আর্দ্রতা ধারণ ক্ষমতাও বেশ ভালো। ইহা শতকরা ১১ ভাগ আর্দ্রতা ধারণ করতে পারে। সিল্ক ফাইবারের তৈরি বস্ত্র খুব আরামদায়ক। গ্রীষ্মকালীন পোশাক হিসেবে সিল্কের বস্ত্র ব্যবহৃত হয়।

ফাইবার শনাক্তকরণের উপকরণ

ক) অণুবীক্ষণ যন্ত্র। 
খ) মোমবাতি ও ম্যাচ
গ) সালফিউরিক অ্যাসিড 
ঘ) হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড
ঙ) ফেনল 
চ) সোডিয়াম হাইড্রক্সাইড
ছ) টেস্ট টিউব
জ) পিপেট ইত্যাদি

শনাক্তকরণের ধাপ 
ক) ভৌত পরীক্ষা 
খ) রাসায়নিক পরীক্ষা 
গ) আণুবীক্ষণিক পরীক্ষা।

ক) ভৌত পরীক্ষা :
১) স্পর্শ পরীক্ষা : গরম, মসৃণ ও স্থিতিস্থাপক সিঙ্ক ফাইবার 
২) আগুনে পুড়ে পরীক্ষা: ধীরে ধীরে পুড়ে, আগুন থেকে সরালে জ্বলে না। পালক বা চুল পোড়ার হালকা গছ । কালো গুটি বা দানা আকারের ছাই হয়। সিল্ক ফাইবার 
১) স্পর্শ পরীক্ষা : স্পর্শ পরীক্ষা সাধারণত অভিজ্ঞতা ও দক্ষতার উপর নির্ভর করে। 
২) আগুনে পুড়ে পরীক্ষা: বিভিন্ন টেক্সটাইল ফাইবারের পঠনগত উপাদানের কারণে আগুনে পোড়ার পর ফাইবারের আচরণও ভিন্ন ভিন্ন পরিলক্ষিত হয়। ফলে উক্ত আচরণ শনাক্ত করে ফাইবারকে চেনা যায়। 

খ) রাসায়নিক পরীক্ষা : 
সলভেন্ট টেস্ট: 
• গাছ ও উষ্ণ হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিডের (HCI) সাথে বিক্রিয়া করলে কোনো পরিবর্তন হয় না। 
• ঠাণ্ডা ও ঘন H2SO4 এর সাথে বিক্রিয়া করলে কোনো পরিবর্তন হয় না। 
• ফেনল এর সাথে বিক্রিয়া করলে কোনো পরিবর্তন হয় না উল বা সিল্ক হতে পারে। 
• ৫০% NaOH এর দ্রবণে উত্তপ্ত করলে দ্রবীভূত হয় সিল্ক ফাইবার হতে পারে। 
• ঘন ঠান্ডা NaOH অ্যাসিডে বিক্রিয়া করলে সিল্ক ফাইবার দ্রবীভূত হয়। 

ফলাফল: সিল্ক ফাইবার নিশ্চিত।

মন্তব্য।

Content added By

বিভিন্ন প্রকার সুতার কাউন্ট নির্ণয় ।

সংজ্ঞা
ক)কাউন্ট: কাউন্ট হচ্ছে এমন একটি সংখ্যা যা একক দৈর্ঘ্যের স্তর অথবা একক স্তরের দৈর্ঘ্যকে বোঝায় । 

প্রত্যক্ষ পদ্ধতি (Direct system) : 
প্রত্যক্ষ পদ্ধতিতে সুতার একক দৈর্ঘ্যের ভরকে কাউন্ট বলে। এ পদ্ধতিতে ফুট, উল, সিল্ক ইত্যাদি সুতার কাউন্ট নির্ণয় করা যায়। নিম্নের সূত্রের সাহায্যে প্রত্যক্ষ পদ্ধতিতে সুতার কাউন্ট নির্ণয় করা যায় ।

মন্তব্য:

Content added By

ব্যালেলের সাহায্যে সুতার কাউন্ট নির্ণয় ।

সুতার কাউন্ট নির্ণয়ের জন্য ব্যালেন্স :
সুতার কাউন্ট নির্ণয়ের জন্য বিভিন্ন ধরনের ব্যালেন্স হয়েছে। তবে সরাসরি নির্ণয়ের জন্য খুব অল্প সংখ্যক ব্যালেন্স রয়েছে। যেমন- মোরেলস ব্যালেন্স, কোয়াডেন্ট ব্যালেন্স, বিজলিস ইয়ার্ন ব্যালেন্স ইত্যাদি।

এ ধরনের ব্যালেন্সে একটি বিম ব্যালেন্স থাকে যার পিছনে এমন একটি আলাদা রড থাকে যার আকৃতি এ ধরনের যে এতে ৫টি দিক রয়েছে। এতে বিভিন্ন কাউন্ট রেঞ্জের জন্য কাউন্ট ফেল খোদাই করে দাগাঙ্কিত থাকে। এ ক্ষেলের দুটি প্যান থাকে যার বাম দিকের প্যানে চিহ্নিত ওজন দেওয়া হয় ও বিয়ে নির্দিষ্ট রাইডার রাখা হয় এবং ডান দিকের প্যানে সুতার লি রাখা হয় ।

ধরা যাক, একটি কটন সুতার কাউন্ট নির্ণয় করতে হবে এবং উক্ত সুতার কাউন্ট আনুমানিক ৩২ বিবেচনা করা হয়। তাহলে ছেলের চিহ্নিত দিক সামনে ঘুরিয়ে আনতে হবে এবং নাম প্যানে নির্দিষ্ঠ ওজন স্থাপন করে বিমে রাইডার রাখতে হবে। এ অবস্থায় বিষকে ব্যালেন্সড করার জন্য রাইডারকে বিমের উপর সামনে-পিছনে সরিয়ে অ্যাডজাস্ট করা হয়। এ অবস্থায় সরাসরি স্কেল হতে সুতার কাউন্টের পাঠ দেওয়া হয়। এ ধরনের কয়েকটি পাঠ নিয়ে সুতার গড় কাউন্ট বের করা হয় ।

কোয়াডেন্ট ব্যালেন্স: 
কোয়ার্ডেন্ট ব্যালেন্স এক-চতুর্থাংশ। এ যন্ত্রটিতে যে ব্যালেন্স ব্যবহৃত হয় তা বৃত্তের এক-চতুর্থাংশের ন্যায় বলে এর নাম কোয়ার্ডেন্ট ব্যালেন্স। একটি ধাতুর বা কাঠের নির্মিত পায়া এর উপর আটকানো দণ্ড-এর উপর স্কেল বসানো থাকে। তাতে সুতা ঝুলানোর জন্য একটি হুক এবং কাউন্ট নির্দেশের জন্য একটি পয়েন্টার স্কেলের সাথে বিন্দুতে এমনভাবে আটকানো থাকে যে, হুকের উপর সুতা ঝুলালে তা হুকের সাথে সাথে স্কেলের দিকে সরে যায়।

যে সুতার কাউন্ট নির্ণয় করতে হবে তার নির্দিষ্ট দৈর্ঘ্যের সুতা হুকে স্থাপন করলেই নির্দেশকটি স্কেলের মধ্যে একটি বিন্দু নির্দেশ করবে যা সরাসরি উক্ত সুতার কাউন্ট নির্দেশ করে। এভাবে কয়েকটি পাঠ নিয়ে গড় করলেই সুতার কাউন্ট পাওয়া যায়।

এ যন্ত্রটিতে সাধারণত তিনটি স্কেল থাকে যার সাহায্যে ৪ গজ স্লাইভার নমুনা ঝুলিয়ে এর হ্যাংক বের করা যায় যা সাধারণত ০.১ থেকে ১০ হ্যাং পর্যন্ত পাঠ দান করে। দ্বিতীয়টি ২০ গজ রেডিং নমুনা ঝুলিয়ে এর হ্যাংক বের করা যায় যা ০.১ থেকে ৬.০ পর্যন্ত পাঠ দেয়। তৃতীয় স্কেলটি সুতার জন্য ব্যবহৃত হয়, যেখানে ৮৪০ গজ সুতা ঝুলিয়ে এর কাউন্ট নির্ণয় করা যায়। এ স্কেলে সাধারণত ৪' কাউন্ট থেকে ৮০' কাউন্ট পর্যন্ত সুতার কাউন্ট নির্ণয় করা যায়।

বিজলিস ইয়ার্ন ব্যালেন্স
 সুতার ছোট ছোট টুকরা বা কাপড় হতে সংগৃহীত সুতার কাউন্ট বের করার জন্য এ যন্ত্রটি ব্যবহার করা হয়।।

পরীক্ষার শুরুতে নির্দেশকটি স্কেলের গায়ে ডেটাম লাইনের সাথে লেভেল করা হয়। এরপর যে সুতার কাউন্ট নির্ণয় করতে হবে সে ধরনের সুতার একটি আদর্শ ওজন বিমের খাঁজে খাঁজে বসিয়ে দেওয়া হয়। এতে নির্দেশকটি ডেটাম লাইনের নিচে পড়ে যায়।

যে ধরনের সুতার কাউন্ট নির্ণয় করতে হবে তা টেমপ্লেটের চিহ্নিত দিক হতে কয়েক টুকরো মেপে কেটে হুকে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। এভাবে যন্ত্রটির নির্দেশককে ডেটাম লাইনে আনতে যতগুলো সুতার প্রয়োজন পড়ে পরীক্ষিত সুতার কাউন্ট তত।

  • সতর্কতা 
    সুতার দৈর্ঘ্য ও ওজন নিতে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। 
  • ব্যালেন্স সঠিকভাবে স্থাপন করতে হবে। 
  • মনোযোগের সঙ্গে পরীক্ষা করতে হবে।
Content added By

টুইস্ট টেস্টারের সাহায্যে সুতা টিপিআই (টুইস্ট/ইঞ্চি) নির্ণয়করণ।

সংজ্ঞা
ক) টুইস্ট : সুতা তৈরির উদ্দেশ্যে প্রয়োজনীয় সংখ্যক কতগুলো ফাইবারকে একসাথে তাদের অগ্রভাগে যে মোচড় দেওয়া হয় তাকেই পাঁক পা টুইস্ট বলে।
ফাইবারগুলো সুতার অক্ষের চারপাশে ঘুরে ঘুরে অবস্থান নেয় বলে সুতা পাক বা টুইস্ট হয়। সুতার পাঁক ডান দিকে অথবা বাম দিকে হতে পারে। ডানদিকের পাক অর্থাৎ ঘড়ির কাঁটা যে দিকে ঘোরে সে দিকের টুইস্টকে জেড টুইস্ট ও বামদিকে পাক অর্থাৎ ঘড়ির কাঁটার বিপরীত দিকে টুইস্টকে এস টুইস্ট বলে ।

টুইস্ট পরিমাপের যন্ত্র 
ক) অর্ডিনারি টুইস্ট টেস্টার
সুতার পাক নির্ণয় করার জন্য অর্ডিনারি টুইস্ট টেস্টার সবচেয়ে বেশি প্রচলিত। এই যন্ত্রের সাহায্যে সিঙ্গেল ও প্লাই সুতার পাক নির্ণয় করা যায়।

পরীক্ষণীয় দৈর্ঘ্য অনুযায়ী প্রথমে চলনশীল বাঁটকে নির্ধারিত স্থানে আটকাতে হবে। তারপর পরীক্ষণীয় সুতাকে ক্লাম্পে আটকানো হয়। সুতার পাক যে দিকে ঘুরবে ক্লাম্পের হাতল ও হুইলের সাহায্যে তার উল্টা দিকে ঘুরানো হয়। এই পদ্ধতি প্লাই সুতার ক্ষেত্রে দৈর্ঘ্য ১০ ইঞ্চি এবং সিঙ্গেল সুতার ক্ষেত্রে দৈর্ঘ্য ১ ইঞ্চি হয়। সুতার সম্পূর্ণ পাক খুলেছে কি না তা দেখার জন্য পরীক্ষণীয় সুতার মধ্য দিয়ে একটি নিডেল টেনে দিতে হয় পাক খোলার জন্য। ক্লাম্প কতবার ঘুরবে তা ডায়ালের উপর পয়েন্টারের অবস্থান থেকে জানা যায় এবং সুতার পরীক্ষণীয় দৈর্ঘ্য দিয়ে ভাগ করলে ইঞ্চি প্রতি পাক সংখ্যা পাওয়া যায়। এভাবে ১০ থেকে ২০টি নমুনা পরীক্ষা করে পাক বের করা সম্ভব।

খ) টেনশন টুইস্ট টেস্টার 
এ পদ্ধতিতে সুতার পাক খোলা এবং পুনরায় পাক দেওয়া পদ্ধতিও বলা হয়। এ ধরনের টেনশন টাইপ টুইস্ট টেস্টার পাক সংকোচন নীতিতে কাজ করে। এ জাতীয় যন্ত্র কটন বা ফিলামেন্ট সুতার পাক নির্ণয়ের জন্য ব্যবহৃত হয়। যখন কোনো ফাইবার গুচ্ছকে পাক প্রদান করা হয় তখন তা দৈর্ঘ্যে সংকুচিত হয়ে পড়ে। ডান পাকের সুতাকে বাম দিকে ঘুরালে পাক খুলে যাবে এবং দৈর্ঘ্যে প্রসারিত হবে, যা পাক প্রদানের জন্য যতটুকু সংকুচিত হয়েছিল তার সমান। এখন যদি সুতাটিকে বাম দিকে ঘুরানো অব্যাহত রাখা হয় তবে সুতাটি পূর্বের তুলনায় বিপরীত দিকে পাক নিবে এবং পুনরার সংকুচিত হয়ে পড়বে। যতটি পাক খোলার পরে এটি প্রসারিত হয়েছিল ঠিক ততটি পাক প্রদান করলে পূর্বের মূল দৈর্ঘ্য পাওয়া যাবে। শুরু হতে শেষ পর্যন্ত যতবার ঘুরানোর ফলে সুতার মূল দৈর্ঘ্য পাওয়া যাবে সে সংখ্যাকে পরীক্ষিত দৈর্ঘ্য (ইঞ্চি) এবং ২ দ্বারা ভাগ করলে প্রতি ইঞ্চি পাক সংখ্যা পাওয়া যাবে।

সতর্কতা: 
• সুতার প্রাপ্ত মেশিনে ভালোভাবে আটকাতে হবে। 
• সুতার পাক নিউট্রাল হয়ে থাকে আবার উল্টো দিকে থাকে যাতে পাক না হয়ে যায়, তা খেয়াল রাখতে হবে। 

মন্তব্য :

 

Content added || updated By

হাতে চরকা ও চরকি প্রস্তুত করা।

ভূমিকা
হ্যান্ডলুম অধ্যুষিত অঞ্চলে সাধারণত কাঠ, পেরেক ও স্পিডেলের জন্য লোহার রড দ্বারা কাঠমিস্ত্রিরা চরকা ও চরকি প্রস্তুত করে থাকেন। হাতের তৈরি চরকা ও চরকি বর্তমানে ব্যবহৃত হচ্ছে।

উপকরণ 
ক) কাঠ 
খ) লোহার রড 
গ) পেরেক 
ঘ) সাইকেল/রিকশার অব্যবহৃত চাকা 
ঙ) কাঠমিস্ত্রির টুলস এবং সরঞ্জামসমূহ 
চ) বাঁশ

প্রস্তুত প্রণালী
চিত্রানুযায়ী চরকা ও চরকির যাবতীয় অংশ কাঠ দ্বারা প্রস্তুত করে জোড়া লাগানো হয়। শিক্ষার্থীরা বারবার অনুশীলন করে অভিজ্ঞতা অর্জন করে চরকা-চরকি প্রস্তুত করতে পারে ।

সতর্কতা 
সতর্কতার সঙ্গে কাজ করতে হবে যাতে কাঠের জোড়া লাগানো সঠিক হয়।

মন্তব্য/উপসংহার

Content added || updated By

আম্বর চরকার ব্যবহার।

ভূমিকা 
আম্বর চরকা সাধারণ চরকার অনুরূপ তবে আম্বর চরকা তুলনামূলক বড়। চরকার এক প্রান্তে ঝুলন মশ স্পিন্ডেল ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দড়ি পাকানো হয়।

পদ্ধতি 
সাধারণত কয়ের (Coir) ফাইবার দড়ি (কাতা) পাকানোর ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়। কয়ের ফাইবার অর্থাৎ নারিকেলের ছোবড়া দ্বারা স্পিন্ডেলের সাথে ঝুলিয়ে, স্পিন্ডেলকে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে ছোবড়ার দড়ি (কাতা) পাকানো হয় ।

ব্যবহার 
কয়ের ফাইবার (নারিকেলের ছোবড়া) দ্বারা দড়ি (কাতা) পাকানো হয়, যা গ্রামাঞ্চলে প্রচুর কাজে ব্যবহৃত হয়। পাকানো দড়ি দ্বারা পাপোস তৈরি করা হয়।

Content added || updated By

সুতা রিলিং করা সম্পর্কে দক্ষতা অর্জন ।

সংজ্ঞা
ক) রিলিং : 
নির্দিষ্ট পরিধির অর্থাৎ জানা পরিধির ঘূর্ণায়মান সুইফট -এর চারদিকে নির্দিষ্ট দৈর্ঘ্য পর্যন্ত সুতা জড়ানোর প্রক্রিয়াকে রিলিং বলে।

রিলিং -এর পদ্ধতি : 
সাধারণত তিনটি পদ্ধতিতে রিলিং ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। 
ক) সেভেন লি অথবা স্ট্রেইট রিলিং (Seven Lea or straight reeling) 
খ) ক্রস রিলিং (Cross reeling)। 
গ) ডায়মন্ড অথবা স্কেইন রিলিং (Diamond or skin reeling)

ক) সেভেন লি অথবা স্ট্রেইট রিলিং (Seven Lea or straight reeling)
এ পদ্ধতিতে প্রতিটি ১২০ গজের ৭টি সেট দ্বারা এক সঙ্গে লি করা হয় বলে এ ধরনের রিলিং মেশিনকে সেভেন লি অথবা স্ট্রেইট রিলিং বলা হয়। এখানে প্রতিটি লি সুইফট -এর ওপর সমদূরত্বে জড়াতে হয়, যার জন্য গাইড ওয়ার প্রতিটি লি থেকে একটু একটু দূরত্ব রেখে মুভ করে থাকে। প্রতি ৮০ বার ঘূর্ণনের পর গাইড ওয়ার -এর মুভমেন্ট স্বয়ংক্রিয় বন্ধ হয়ে যায়। এ লি গুলোকে আলাদা আলাদা রাখার জন্য একটির পর অন্যটি রঙিন সুতা দ্বারা বাঁধা হয় যাতে সহজেই শনাক্ত, বিক্রি ও রপ্তানি করা যায়।

খ) ক্রস রিলিং (Cross Reeling)। 
এ পদ্ধতিতে র্যাক আলাদা রাখা হয়। টি রোলার শ্যাফট এর উপর একটি রিভার থাকে যা বেভেল - এর মাধ্যমে রিলিং মেশিনকে চালনা করে থাকে। যখন সুইফট ঘুরতে থাকে তখন ২” হতে ৩" এর মধ্যে একটি দ্রুত তির্যক গতি পেয়ে থাকে, যা প্রয়োজনীয় পূর্ণ প্রস্থ জুড়ে স্তর গঠন করতে থাকে। এই প্রকার রিলিং মেশিনে যে কোনো দৈর্ঘ্যর সুতা জড়ানো হয়। 

গ) ডায়মন্ড অথবা স্কেইন রিলিং (Diamond or skin reeling)। 
এটি ক্রস রিলিং -এর অনুরূপ, তবে পার্থক্য এই যে, সুতা যাতে আড়াআড়ি না হয় তার জন্য বিশেষভাবে ক্রসিং করা হয়। এই পদ্ধতির সুবিধা হলো এই প্রকার বান্ডেলকে বাইরে অথবা ভেতরে বাঁধা হয়। ওয়েট প্রসেসিং -এর জন্য এই পদ্ধতির বান্ডেল খুবই সুবিধাজনক। এটি সাধারণত মূল্যবান সুতার জন্য ব্যবহৃত হয়।

রিলিং প্রসেসের বর্ণনা 
সুতাকে রিলিং করার পর হ্যাংক সুতাকে ভাঁজ করা এবং বহন করা সহজ হয়। স্পিনিং মিলসমূহে শেষ ব্যবহারের উপর নির্ভর করে রিং ববিন থেকে কোন অথবা রিলিং মেশিনে হ্যাংক উৎপাদন করা হয় । রিলিং মেশিনের সুইফট মেশিনের উভয় পার্শ্বে বা এক পার্শ্বে থাকে। রিল করার সময় সুতার কোন বা ববিনকে মেশিনের উপর অবস্থিত স্পিন্ডেলের উপর বসানো হয়। ববিনের থেকে সুতার প্রান্ত বের করে ইয়ার্ন গাইডের মধ্য দিয়ে সুইফট বা রিলের উপর জড়ানো হয়। এভাবে পাশাপাশি যতগুলো ইয়ার্ন গাইড রয়েছে প্রতিটি ইয়ার্ন গাইডের মধ্য দিয়ে সুতা এনে সুইফটে লাগানো হয় । নির্দিষ্ট পরিমাণে সুতা রিলের পৃষ্ঠে জড়ানোর 1 পর রিলিং মেশিন চালু করা হয়। রিলিং মেশিনে প্রতি গোছায় ২ হ্যাংক পরিমাণ অর্থাৎ (৮৪০ x ২) = ১৬৮০ গঞ্জ সুতা জড়ানোর পর মেশিনটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ হয়ে যায়। এ ধরনের নির্দিষ্ট দৈর্ঘ্যের সুতাকে লি বা লাছা বা কাট বলে। প্রতিটি কাট বা লাছাকে মোটা সুতা দ্বারা আলাদা আলাদাভাবে বেঁধে রাখা হয় যাতে রিলের সুতাগুলো এলামেলো হয়ে না যায়। কটন স্পিনিং মিলসমূহে প্রতিটি রিলিং মেশিনে ৪০টি করে কোন অথবা রিং ববিন স্পিন্ডেলে বসানো থাকে। প্রতিটি কোন থেকে ১৬৮০ গজ এর লাছা তৈরি করা হয়। জুট স্পিনিং মিলসমূহে প্রতিটি রিলিং মেশিনে ২৪টি কোন অথবা স্পিনিং ববিন রিলিং মেশিনের স্পিন্ডেলে বসানো হয়। প্রতিটি ববিন থেকে ৩০০ গজ -এর এক একটি কাট তৈরি করা হয়। উপরোক্ত মোড়াসমূহ পরবর্তীতে একত্র করে বান্ডেলিং প্রেস মেশিনের সাহায্যে বান্ডেলে পরিণত করা হয়।

সতর্কতা : 
> লক্ষ রাখতে হবে সুতার নট ঠিকভাবে দেওয়া ও নট ছোট হওয়া। 
> সুতার নট না দিয়ে বান্ডেল বা নলী এর সুতা পেঁচিয়ে দেওয়া উচিত নয়। 
> রিং ববিনের অল্প সুতা কেটে ফেলে দেওয়া উচিত নয়। 

মন্তব্য :

Content added By

বিভিন্ন প্রকার নলীর সাথে পরিচিতি

সংজ্ঞা : 
(ক) নদী (Pirn) 
কাপড় তৈরির জন্য টানা ও পড়েন সুতা ব্যবহৃত হয়। পড়েন সুতা প্যাকেজ আকারে জড়িয়ে মাকুতে স্থাপন করে শেডের মধ্যে চালনা করা হয়। মাকুতে স্থাপন করার জন্য চরকা বা পার্ন ওয়াইন্ডিং মেশিনের মাধ্যমে পড়েন সুতার যে প্যাকেজ তৈরি করা হয় তাই নলী বা পার্ন। 

(খ) কপ (Cop) 
জুট ইন্ডাস্ট্রিতে সাটেল এর মধ্যে যে প্যাকেজ স্থাপন করা হয় তাকে কপ বলে । তবে কটন নলীর মতো জুটের নলীতে কোনো কাঠের খালি নলী অর্থাৎ খালি পার্নের ব্যবহার প্রয়োজন নেই। কপ এমনভাবে তৈরি করা হয় যাতে কোনো কাঠের দণ্ডের প্রয়োজন হয় না।

সতর্কতা 
০ নলীতে যাতে সুতা ধারাবাহিকভাবে পেঁচানো হয় তার দিকে লক্ষ রাখতে হয়। 
• যে কাঠিতে পার্ন তৈরি করা হবে তা যেন ত্রুটিমুক্ত হয়। 

মন্তব্য :

Content added || updated By

হ্যাংক থেকে নলী প্রস্তুতকরণ।

সংজ্ঞা : 
হ্যাংক রিলিং মেশিনের সুইফট এর পরিধির সমান অর্থাৎ ১.৫ গজ দৈর্ঘ্যের পরিধির ৫৬০ বার ঘূর্ণনের ফলে ৮৪০ গজ দৈর্ঘ্যের এক একটি হ্যাংক তৈরি হয়ে থাকে। হ্যাংক থেকে চরকা-চরকির মাধ্যমে হাতের সাহায্যে নলী বা পার্ন তৈরি করা হয়। 

হ্যাংক থেকে নদী প্রস্তুত 
সাধারণত হ্যান্ডলুম ইন্ডাস্ট্রিতে চরকার সাহায্যে হ্যাংক থেকে নলী প্রস্তুত করা হয়। চরকার বড় পরিধির খাঁচায় হ্যাংক লাগানো হয় এবং স্পিন্ডেলে খালি নলী লাগানো হয়। অতঃপর হ্যাংক থেকে সুতা বের করে নলীতে হালকাভাবে এক অথবা দুই প্যাঁচ প্যাঁচিয়ে হ্যান্ডেল ঘুরিয়ে আস্তে আস্তে নলীর এক প্রান্ত থেকে অনা প্রান্ত পর্যন্ত জড়ানো হয় । 

সতর্কতা 
০ চরকিতে যাতে সুতা প্যাচ না লাগে সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে 
০ প্যাচানোর গতি সমান রাখতে হবে। 
০ নলীতে যাতে ধারাবাহিকভাবে সুতা প্যাচানো হয় তার দিকে লক্ষ রাখতে হবে। 

মন্তব্য-

Content added By

কাপড়ের ডিজাইন অনুযায়ী সুতার হিসাব নির্ণয়করণ ও ক্রিলে কোনো/চিজ স্থাপনকরণ ।

সংজ্ঞা : 
টেক্সটাইল ডিজাইন টেক্সটাইল সংক্রান্ত বুনন যা কাগজে অথবা কাপড়ে প্রতিফলিত করণকেই টেক্সটাইল ডিজাইন বলা হয়। 

সুতার হিসাব নির্ণয় - 
মনে করা যাক ২২" বহরের ১০০ গজ টানা প্রস্তুত করতে হবে। যদি ইঞ্চি প্রতি টানা সুতার সংখ্যা ৪০ ধরা হয়। তবে নিম্নের সূত্রের সাহায্যে মোট কত হ্যাংক সুতার প্রয়োজন হবে তা বের করা সম্ভব। রিড কাউন্ট/ শানা নম্বর ৪০

Content added || updated By

তাতে বিম তোলা।

সংজ্ঞা : 
(ক) তাঁত 
যে যন্ত্রে দুই বা ততোধিক সারির কতগুলো সুতা লম্বালম্বি ও আড়াআড়িভাবে স্থাপন করে বুনন কার্য সম্পন্ন করা হয় তাকে তাঁত বা লুম বলে। 

(খ) বিম 
কাপড় তৈরি করার প্রয়োজনে কাপড়ের বহর অনুযায়ী লম্বালম্বিভাবে টানা সুতা সাজানোর প্রয়োজনে যে বস্তু ব্যবহার করা হয় সেটাই বিম।

তাঁতে বিম তোলার পদ্ধতি 
উইভার্স বিষকে ড্রইং ইন ও ডেন্টিং -এর পর লুম -এর পিছনে নির্দিষ্ট ব্রাকেটের উপর বসানো হয়। বিম তাতে তোলার জন্য ক্যারিয়ার অথবা লিফটার ব্যবহার করা হয়। তবে হ্যান্ড লুমে বিম তোলার জন্য দুইজন শ্রমিক হাত দ্বারা তুলে তাঁতের পিছনে ব্রাকেটের উপরে বসিয়ে দেয়। হ্যান্ড লুমের জন্য যে বিম তৈরি করা হয়। তা ওজনে হালকা করে তাঁতে টানা সুতার দৈর্ঘ্য কম থাকে। 

মন্তব্য

Content added By

ক্রিলে সুতা সাজানো।

সংজ্ঞা : 
(ক) ক্রিল ওয়ার্সিং-
এ বিমে সুতা জড়ানোর জন্য একসঙ্গে অনেক সুতার প্রয়োজন হয়। এই সুতা ড্রামে সাজানোর পূর্বে খাঁচার মতো করে তৈরি করে ফ্রেমে শলা বা কাঠির সাহায্যে অনেকগুলো সুতাপূর্ণ ফ্রাঞ্জ ববিন একসঙ্গে সাজানো থাকে। এই ফ্রেমটিকে ক্রিল বলে। 

(খ) ক্রিল 
ববিনগুলো আড়াআড়ি ও লম্বালম্বি স্তরে স্তরে ফ্রেমে সাজানো হয়। ক্রিলে সুতা বা ববিন সাজানোর জন্য একটি নির্দিষ্ট নিয়ম বা পদ্ধতি মেনে চলা হয় । এই পদ্ধতিকেই ক্রিল বলে । 

(গ) ফ্রাঞ্জ ববিন 
পাথলি ড্রামে টানা সাজানোর পূর্বে টানা সুতাকে ক্রিলে সাজানোর সুবিধার্থে কাঠের তৈরি যে দণ্ডে সুভা জড়ানো হয় উক্ত দণ্ডটিকে ববিন বলে। 

পদ্ধতি
 উইভার্স বিম তৈরির জন্য টানা সুতার হিসাব অনুযায়ী টানা সুতার দৈর্ঘ্যের সাথে সামঞ্জস্য রেখে ফ্লাঞ্জ ববিনে সুতা জড়ানো হয়। ক্রিলে ববিন সাজানোর পূর্বে টানা সংখ্যা হিসাব করে সে অনুযায়ী অর্থাৎ টানায় মোট সুতা ৩০০টি হলে ১৫টি ববিন ৬ বার বাঁধন ঠিক করে ড্রামে সুতা স্থানান্তর করতে হবে। কাজেই ক্রিলে সুতা পূর্ণ ববিন ফ্রেমের খাঁচায় শলা বা কাঠিতে উপর নিচ পাশাপাশি সাজাতে হবে।

Content added || updated By

ক্রিল থেকে ড্রামে সুতা স্থানাস্তর।

 

ড্রামে সুতা নেওয়া
ড্রামের পিছনে একটি ক্রিলের মধ্যে সুতাপূর্ণ ববিনগুলো সাজানো থাকে। শানার ইঞ্চি প্রতি কতটুকু সুতার প্রয়োজন ততটি ববিন নিয়ে কাজ করতে হবে। ববিন থেকে প্রতিটি সুতা প্রান্ত সেলেটের কাঠির চোখে ১টি ও ২টি কাঠির ফাঁকে ১টি এই নিয়মে টেনে একত্রে গিঁট দিয়ে পেরেকের সাথে আটকিয়ে ড্রামটি ঘূর্ণন শুনে গুনে ঘোরাতে হবে। লক্ষ রাখতে হবে যেন প্রতি ২টি পেরেকের মধ্যস্থলে ইঞ্চি প্রতি টানার দৈর্ঘ্যের সমতা ঠিক থাকে। পরিমিত পরিমাণ টানা নেওয়ার পর সেলেটের সাহায্যে সুতায় জো তুলতে হবে।

সর্তকতা 
০ লক্ষ রাখতে হবে যাতে প্রতি সেকশনে সুতার সংখ্যা সঠিক। 
০ ড্রামে ঘুরানোর সময় ঘূর্ণনের সংখ্যা সঠিক রাখতে হবে। নতুবা অপচয়ের হার বেড়ে যাবে।

Content added By

মেশিন থেকে বিম নামানো।

ভূমিকা
ওয়ার্সিং মেশিনে উইভার্স বিম তৈরি হওয়ার পর সতর্কতার সঙ্গে বিম ক্যারিয়ার অথবা দুইজন শ্রমিক দুই পার্শ্ব থেকে হাত দ্বারা তুলে বিষ নামিয়ে আনেন। তবে উচ্চ গতিসম্পন্ন ওয়ার্নিং মেশিনের বিম প্রস্তুত হওয়ার পর বিমের দুই পার্শ্বের সাপোর্ট ব্রাকেট খুলে বিম ক্যারিয়ার অথবা লিফটার ওপরে সুতাপূর্ণ উঠানো হয় এবং বিম ক্যারিয়ারের মাধ্যমে উইভার্স বিমকে বিমের নির্দিষ্ট স্থানে সাজিয়ে রাখা হয়। কখনও কখনও ওভারহেড ক্রেনের সাহায্যে ভারী উইভার্স বিম স্থানান্তর করা হয়।

ওয়ার্সিং মেশিন হতে বিম নামানোর পদ্ধতি
উচ্চগতি সম্পন্ন সাইজিং মেশিনে বিম তৈরি হওয়ার পর উক্ত সুতাপূর্ণ উইভার্স বিমের গঠন ও ওজন অনুসারে ১৭২ কেজি থেকে ১ টন বা তদাপেক্ষা বেশি ওজনের হয়ে থাকে। এ ক্ষেত্রে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ৪টি সুইচের মাধ্যমে বিম নামানো ও খালি বিম ওঠানোর কার্য সমাধা করা হয়ে থাকে। এ ক্ষেত্রে মাত্র ২ মিনিট সময়ের প্রয়োজন হয়।

সতর্কতা 
• বিম তৈরির সময় সতর্ক থাকতে হবে যাতে বিমের ব্যাস ফ্রাঞ্জের ব্যাসের তুলনায় বেশি না হয় । 
০ বিম তৈরির সময় ফ্রাঞ্জের দূরত্ব সঠিক রাখতে হবে। 
০ বিম নামানোর সময় সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে নতুবা দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা থাকে।

Content added By

বিভিন্ন প্রকার সাইজিং ম্যাটারিয়ালস সমন্ধে পরিচিতি।

সংজ্ঞা 
যে পদ্ধতিতে টানা সুতাকে বিভিন্ন প্রকার মাড়ের উপকরণ যুক্ত করে সুতার উপর বিদ্যমান বাড়তি আঁশগুলোকে সুতার পৃষ্ঠে মিশিয়ে দিয়ে সুতাকে চকচকে, ওজন বৃদ্ধি, মসৃণ ও শক্তিশালী করা হয় সে পদ্ধতিকে সাইজিং বলে।

বিভিন্ন প্রকার সাইজিং ম্যাটারিয়ালস

শ্বেতসারযুক্ত উপাদান (Adhesive substance)
একে মাড়/সাইজের মূল উপাদানও বলা হয়। এ উপাদানের জন্য মাড় আঠালো হয়। এ শ্বেতসারযুক্ত উপাদানের সাথে পানি মিশ্রিত করে তাপ প্রয়োগ করলে আঠালো পদার্থের পেস্ট (Paste) এ পরিণত হয় । উদাহরণ- মেইজ স্টার্ট (Maise starch), তেঁতুলের বিচির পাউডার (Tamarind seed powder), টপিওকা স্টার্চ (Topioca starch), ময়দা (Flour ), সাঞ্চ স্টার্চ (Sagoo starch), আলুর প্যালো (Potato starch), রাইচ স্টার্চ (Rice starch) ইত্যাদি প্রাকৃতিক স্টার্চ। আবার সিএমসি (Carboxy Methyl Cellulose), পিডিএ (Polyvenyle Alcohol), পলিঅ্যাক্রাইলিক অ্যাসিড ইত্যাদি কৃত্রিম স্টার্চ বা অ্যাডহেসিভ।

সফেনিং এজেন্টস (Softening Agents) 
সফেনিং এজেন্টকে কোমল রাখার উপাদানও বলা হয়। টানা সুতা কখনও কখনও শক্ত, অমসৃণ ও ভঙ্গুর হয় । এছাড়া ও সুতার খসখসে ভাব ও নমনীয়তা দূর করার জন্য সফেনিং এজেন্ট ব্যবহার করা হয়। উদাহরণ- মাটন ট্যালো (Mutton tallow), টেলটেক্স (Teltex), নারিকেল তেল (Coconut oil), ক্যাস্টর অয়েল, তিলের তেল, তালের তেল, তুলার বীজের তেল, জলপাই এর তেল, রেডির তেল, প্যারাফিন ওয়াক্স (Parafin wax), চায়না মোম (China wax), সুগার ক্যান ওয়াক্স (Sugarcane wax), ওয়াক্স (Wax), সফট সোপ (Soft soap) ইত্যাদি।

হাইগ্রোসকোপিক এজেন্টস (Hygroscopic Agents) 
সুতাকে আর্দ্র রাখার জন্য হাইগ্রোসকোপিক এজেন্ট ব্যবহার করা হয়। আর্দ্র রাখার উপাদানসমূহ বাতাস হতে জলীয় বাষ্প গ্রহণ করে থাকে। এ এজেন্টস ব্যবহার করার ফলে টানা সুতা অপেক্ষাকৃত বেশি পরিমাণ আর্দ্রতা শোষণ করে সুতাকে নমনীয় রাখতে সাহায্য করে। উদাহরণ- ম্যাগনেসিয়াম ক্লোরাইড (MgCl2), ক্যালসিয়াম ক্লোরাইড (CaCl2), গ্লিসারিন, জিঙ্ক ক্লোরাইড (ZnCl2), ডাই ইথিলিন গ্লাইকল, সরবিটল ইত্যাদি।

অ্যান্টিসেপটিক এজেন্টস (Anticeptics ) 
একে বাংলায় প্রতিষেধক উপাদান বলা হয়। মিলডিউ অর্থাৎ ছত্রাকের আক্রমণ থেকে রক্ষার জন্য প্রতিষেধক উপাদান ব্যবহার করা হয়। সাধারণত সমস্ত স্টার্চই ছত্রাক দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্ক্ষা থাকে। কাজেই কার্বন সুতা সাইজিং করার প্রয়োজনে স্টার্চ -এর পাশাপাশি অ্যান্টিসেপটিকস প্রয়োগ করার প্রয়োজন হয়। উদাহরণ- জিঙ্ক ক্লোরাইড (ZnCl2), কপার সালফেট (CuSO4), সেলিসাইটিক অ্যাসিড (CaHa(OH)COOH), সোডিয়াম সিলকো ক্লোরাইড, বিটা নেপথলস, কার্বোলিক অ্যাসিড ইত্যাদি।

নিউট্রালাইজিং এজেন্টস (Neutralizing Agents) 
মাড় দ্রবণ প্রস্তুত করার সময় দ্রবণের (PH) মাত্রা পরিবর্তিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কাজেই দ্রবণকে নিউট্রাল করার জন্য নিউট্রালাইজিং এজেন্টস যোগ করা হয়। যতক্ষণ পর্যন্ত দ্রবনের (PH) মাত্রা ৬.৮ না হয় ততক্ষণ পর্যন্ত অল্প অল্প করে এ এজেন্টস ব্যবহার করা হয়। উদাহরণ- সোডা অ্যাশ।

অ্যান্টিফোমিং এজেন্টস (Antifoaming Agents) 
মাড় দ্রবণ অথবা মাড় পেস্ট প্রস্তুত করার সময় দ্রবণে ফেনা হবার সম্ভাবনা দেখা যায়। যার ফলে উক্ত দ্রবণ টানা সুতায় প্রয়োগ করতে অসুবিধার সৃষ্টি হয়। এ জন্য মাড় দ্রবণে অ্যান্টিফোমিং এজেন্টস ব্যবহার করা হয় । যা মাড়, পেস্ট বা দ্রবণে ফেনা উৎপন্ন হতে বাধা প্রদান করে । উদাহরণ-অ্যাসিটিক অ্যাসিড (CH3COOH), কেরোসিন, টার্পেন্টাইন, পাইন অয়েল, অ্যামাইল, অ্যালকোহল, সিলিকন ডিফোমার ইত্যাদি ।

টিনটিং বা রঞ্জক উপাদান (Tinting of Colouring Agents ) 
টানা সুতা ও উৎপাদিত কাপড়ের প্রাকৃতিক রংকে নিউট্রালাইজড করার জন্য এ এজেন্ট ব্যবহৃত হয়। সাধারণত যে সমস্ত কাপড় যে অবস্থায় বিক্রি হবে উক্ত কাপড় প্রস্তুত করতে টানা সুতায় মাড় দেওয়ার সময় এ এজেন্ট প্রয়োগ করা হয়ে থাকে। উদাহরণ- টিনাপল (Tinapol) আলট্রা মেরিন ব্লু, অ্যাসিড ডাই ও অপটিক্যাল ব্রাইটেনিং এজেন্ট ইত্যাদি।

ওয়েটিং এজেন্টস (Weighting Agents) 
সুতা ও উৎপাদিত কাপড়ের ওজন বৃদ্ধি করার জন্য যে পদার্থ ব্যবহার করা হয় সেগুলোই ওয়েটিং এজেন্ট। শুধু গ্রে অবস্থায় বিক্রি করার জন্যই এ ধরনের এজেন্ট ব্যবহার করা হয়ে থাকে। উদাহরণ- চায়না ক্লে (China clay), চক বা খড়িমাটি (CaCO3), ফ্রেঞ্চ চক (French Chalk), ম্যাগনেশিয়াম সালফেট ( MgSO4), সোডিয়াম সালফেট (Na2SO4), ম্যানেশিয়াম ক্লোরাইড (MgCl2) ইত্যাদি।

সতর্কতা 
• সাইজিং -এর প্রতিটি উপাদানের গুণাগুণ ভালোভাবে জানতে হবে। 
• কোনো উপাদান কী কাজ করে সে বিষয়ে জ্ঞান থাকা ভালো। 
০। পরবর্তী সাইজ নির্বাচনের সময় সতর্ক থাকতে হবে। 

মন্তব্য

Content added || updated By

সাইজিং -এর রেসিপি নির্বাচন

সংজ্ঞা : 

রেসিপি

সাইজিং করার জন্য সাইজের কোন উপাদান নেওয়া হবে এবং উপাদানের কোনটি কতটুকু পরিমাণ নেওয়া হবে এটাই সাইজিং -এর রেসিপি। সাইজিং -এর রেসিপি নির্বাচনের বিবেচ্য বিষয়সমূহ ঃ 

• যে সুতাকে সাইজিং করা হবে তার ধরন 

• উপকরণের মূল্য 

• ভিসকোসিটি অর্থাৎ আঠালোভাবে স্থায়িত্ব 

০ আঠালো জাতীয় পদার্থ 

০ ডিসাইজিং -এর সময় সহজেই অপসারণের যোগ্যতা

উপরোক্ত মাড় দ্রবণ বা পেস্ট সাধারণত ১০০ ভাগ কটন সুতার জন্য প্রয়োগ করা হয়ে থাকে। 

সতর্কতা 
০ সাইজের নির্বাচনে সঠিক উপাদান বাছাই করা। 
০ আঠালো উপাদান ও প্রতিষেধক উপাদান যেন সঠিক হয়। 

উপসংহার /মন্তব্য

Content added By

হ্যাংক সুতায় মাড় করার প্রস্তুতপ্রণালি।

ভূমিকা

হ্যান্ডলুম ফ্যাক্টরি বা কুটির শিল্পের তাঁতিদের মধ্যে হ্যান্ড সাইজিং প্রচলিত। এ ক্ষেত্রে মাড়ের শ্বেতসার হিসেবে খৈ, চালের গুঁড়া এবং ময়দাই সাধারণত ব্যবহৃত হয়ে থাকে। তবে খুব অল্প সুতার ক্ষেত্রে ভাতের মাড়ও ব্যবহার করা হয়।

উপাদান 
মিহি সুতার জন্য থৈ -এর মাড়ই উৎকৃষ্ট। মোটা বা মাঝারি সুতার জন্য চালের মাড় উৎকৃষ্ট। সিদ্ধ চালের চেয়ে আতপ চাল হলে ভালো হয়। কখনও কখনও তাঁতিরা মাড়ের সাথে একটু চুন, এক/আধ ফোঁটা কার্বলিক অ্যাসিড, ফরমালডিহাইড অথবা জিংক ফ্লোরাইড ব্যবহার করে।

উপরোক্ত সাইজিং উপাদানের কাজ

থৈ বা চালের গুঁড়া আঠালো পদার্থের জন্য চুন ব্যবহার করার ফলে মাড় আরও একটু আঠালো হয় এবং ফাঁকে নষ্ট করে না। তুঁতে ব্যবহার করার কারণে টানা সুতা পোকায় কাটে না। কার্বনিক অ্যাসিড ও জিংক ক্লোরাইড ব্যবহার করায় ইঁদুরে কাটে না ও টানায় মিলডিউ ধরে না।

প্রস্তুতপ্রণালি 
পরিমিত পরিমাণ থৈ একটি পাত্রে ৫ মিনিট ভিজিয়ে রাখবে। পরে ঐ পাত্র থেকে থৈ উঠিয়ে অন্য পাত্রে ভালো করে চটকাতে হবে। চটকানো শেষ হলে কাপড় দিয়ে ছেঁকে নিয়ে মণ্ড বের করবে। মণ্ডের সাথে অন্য কেমিক্যাল মিশিয়ে যখন বেশ আঠালো বোধ হবে তখন টানা সুতায় প্রয়োগ করতে হবে।

সতর্কতা

• মাড় প্রস্তুত করার সতর্ক থাকতে হবে 
• মাড় যাতে ঘন আঠালো হয় তার প্রতি যত্নবান হতে হবে। 
• কৃষ্ণ মাতৃ বেশিদিন ফেলে রাখা যাবে না।

Content added By

প্রশ্নমালা

অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন 
১. টেক্সটাইল ফাইবার বলতে কী বোঝায় ? 
২. প্রাকৃতিক ফাইবারের সংজ্ঞা দাও । 
৩. ফাইবারের শক্তির একক কী? 
৪. শক্তি প্রয়োগ করলে ফাইবার প্রসারিত হয় এবং শক্তিযুক্ত করলে ফাইবার আবার পূর্বের অবস্থানে ফিরে আসে' ফাইবারের কোনো গুণাগুণের ফলে এরূপ অবস্থার সৃষ্টি হয়? 
৫. ঘনত্বের একক কী? 
৬. উদ্ভিজ প্রাকৃতিক ফাইবারের কয়েকটি উদাহরণ দাও। 
৭. গ্লাস ও অ্যাসবেস্টস কোনো ধরনের ফাইবার? 
৮. ১০০ ভাগ কৃত্রিম ফাইবারের ৩টি উদাহরণ দাও । 
৯. পৃথিবীতে প্রচুর পরিমাণে ব্যবহৃত হচ্ছে এ রকম ১টি বীজ ফাইবারের নাম লেখ। 
১০. কোন ফাইবারের প্রাকৃতিক ফিলামেন্ট থাকে। 
১১. ফাইবারের উৎস কী? 
১২. কটন ফাইবারের আর্দ্রতা ধারণ ক্ষমতা কত? 
১৩. তুলা আঁশের গ্রেডিং কিসের উপর নির্ভর করে ? 
১৪. ট্রাসের পরিমাণ নির্ণয়ের জন্য কোন যন্ত্রের সাহায্য নেওয়া হয় ? 
১৫. কটন উৎপাদনকারী কয়েকটি দেশের নাম লেখ । 
১৬. যে কোনো ৫টি তুলার দোষত্রুটির নাম লেখ। 
১৭. কটন ফাইবারের দৈর্ঘ্য কত? 
১৮. পাটের রাসায়নিক সংকেত লেখ। 
১৯. পাটের বোটানিক্যাল নাম লেখ। 
২০. পাটের আর্দ্রতা ধারণ ক্ষমতা কত? 
২২. সিদ্ধ ফাইবারের সেরিছিনের পরিমাণ কত? 
২৩. সফট সিল্ক কী? 
২৪. সিল্কের আর্দ্রতা ধারণ ক্ষমতা কত? 
২৫. কোকুন কী? 
২৬. সেরিকালচার বলতে কী বোঝায় ? 
২৭. সিল্ক উৎপাদনকারী কয়েকটি দেশের নাম লেখ । 
২৮. সুতার সংজ্ঞা দাও । 
২৯. সুতার কাউন্ট নির্ণয়ের কয়টি পদ্ধতি ও কী কী? 
৩০. পরোক্ষ পদ্ধতিতে কোন মান স্থির থাকে? 
৩১. প্রত্যক্ষ পদ্ধতিতে সুতার কাউন্ট নির্ণয়ের সূত্রটি লেখ। 
৩২. কটন সুতার প্রতিটি হ্যাংক দৈর্ঘ্য কত? 
৩৩. ফিলামেন্ট সুতা বলতে কী বোঝায়?
৩৪. মাল্টি ফিলামেন্ট ইয়ার্ন কী? 
৩৫. স্পার্ন ইয়ার্ন কাকে বলে? 
৩৬. ইংলিশ কটন কাউন্ট-এর সংজ্ঞা দাও । 
৩৭. 'Ne'-এর ব্যাখ্যা দাও। 
৩৮. সুতার যে কোনো ৫টি ত্রুটির নাম লেখ। 
৩৯. ওয়াইন্ডিং বলতে কী বোঝায় ? 
৪০. কোন ওয়াইন্ডিং -এর সংজ্ঞা দাও। 
৪১. পার্ন কোথায় ব্যবহার করা হয় এবং কেন? 
৪২. কয়েকটি ইয়ার্ন প্যাকেজের নাম লেখ। 
৪৩. ইয়ার্ন প্যাকেজের যে কোনো ৫টি ত্রুটির নাম লেখ। 
৪৪. ঢালা প্রকরণের সংজ্ঞা দাও। 
৪৫. ক্রিলের সংজ্ঞা দাও । 
৪৬. মিল ওয়াশিং কী? 
৪৭. সাইজ ও সাইজিং-এর সংজ্ঞা দাও। 
৪৮. কটন ইন্ডাস্ট্রিতে সাধারণত কোন ধরনের অ্যাডহেসিভ ব্যবহার করা হয় নাম লেখ। 
৪৯. কয়েকটি সফেনিং এজেন্টের উদাহরণ দাও। 
৫০. জুট ইন্ডাস্ট্রিতে আঠালো জাতীয় পদার্থ হিসেবে কী ব্যবহার করা হয় লেখ। 
৫১. মাড় দ্রবণের pH কত রাখা হয়? 
৫২. মাড়ে ব্যবহৃত প্রতিষেধক উপাদানগুলোর নাম লেখ। 

সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন 
১. প্রাকৃতিকভাবে প্রাপ্ত সকল ফাইবারই টেক্সটাইল ফাইবার নয় কেন? 
২. ক্রিম ফাইবারের একটি প্রাকৃতিক গুণ। এই ক্রিম থাকার কারণে টেক্সটাইল ফাইবার কী 
৩. প্রাকৃতিক ফাইবারের গুরুত্বপূর্ণ ৫টি গুণাবলির নাম লেখ। 
৪. কৃত্রিম ফাইবার বলতে কী বোঝায়? -এর শ্রেণিবিভাগ কর? 
৫. প্রাকৃতিক ফাইবার ও মানুষের তৈরি ফাইবারের পার্থক্য লেখ। 
৬. প্রাকৃতিক ফাইবারের ব্যবহার লেখ। 
৭. তুলার বোটানিক্যাল নামসহ শ্রেণিবিভাগ কর। 
৮. আমেরিকান তুলার গ্রেডিং দেখাও । 
৯. কটনের ভৌত গুণাবলি লেখ। 
১০. তুলা আঁশের রাসায়নিক গুণাবলি লেখ। 
১১. তুলার ব্যবহার লেখ। 
১২. পাটকে কেন পরিবেশের বন্ধু বলা হয়? 
১৩. তোষা পাটের গ্রেভিং কর। 
১৪. পাটের উপাদান লেখ । 
১৫. পাটের ব্যবহার লেখ। 
১৬. সিল্ক-এর উপাদানসমূহের নাম শতকরা হারসহ লেখ। 
১৭. সিল্ক-এর ভৌত গুণাবলি লেখ।
১৮. সিল্ক-এর রাসায়নিক গুণাবলি লেখ। 
১৯. সিল্ক-এর ব্যবহার লেখ। 
২০. প্রত্যক্ষ পদ্ধতিতে কাউন্টের সংজ্ঞা সূত্রসহ লেখ। 
২১. পরোক্ষ পদ্ধতিতে কাউন্টের সংজ্ঞা সূত্রসহ লেখ। 
২২. সুতার যে কোনো ৩টি ত্রুটি, কারণ ও প্রতিকারসহ লেখ। 
২৩. কাপড় বুননের ফ্লো চার্ট লেখ । 
২৪. ওয়াইল্ডিং -এর শ্রেণিবিভাগ দেখাও। 
২৫. কোন ও চিজ ওয়াইন্ডিং -এর মধ্যে পার্থক্য লেখ। 
২৬. টানা প্রকরণের উদ্দেশ্য লেখ। 
২৭. ওয়ার্সিং - -এর শ্রেণি বিভাগ কর। 
২৮. সেকশনাল ওয়ার্দিং ও মিল ওয়ার্সিং -এর মধ্যে পার্থক্য লেখ। 
২৯. সাইজিং -এর উদ্দেশ্যাবলি কী? 
৩০. সাইজিং -এর উপাদানসমূহ কী কী? 
৩১. সাইজিং -এর সময় কী কী ধরনের সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয় লেখ । 
৩২. যে কোনো একটি আদর্শ মাড়ের রেসিপি লেখ। 
৩৩. সাইজিং -এর উপাদান নির্বাচন কী কী বিষয়ের উপর নির্ভর করে ? 

রচনামূলক প্রশ্ন 
১. টেক্সটাইল ফাইবারের গুণাবলি বিস্তারিত লেখ । 
২. প্রাকৃতিক ফাইবারের গুণাবলি বিস্তারিত লেখ। 
৩. টেক্সটাইল ফাইবারের বৈশিষ্ট্যসমূহ বিস্তারিত লেখ । 
৪. উৎস হিসেবে টেক্সটাইল ফাইবারের শ্রেণিবিভাগ দেখাও। 
৫. প্রাকৃতিক ফাইবার ও কৃত্রিম ফাইবারের পার্থক্য লেখ। 
৬. কটন ফাইবারের গ্রেডিং বিস্তারিত বর্ণনা কর। 
৭. তুলার দোষত্রুটি বিস্তারিত লেখ। 
৮. পাটের গ্রেডিং-এর বর্ণনা দাও। 
৯. জুট ফাইবারের কী কী দোষত্রুটি পাওয়া যায় আলোচনা কর। 
১০. রেশম পোকা পালন বিস্তারিত লেখ। 
১১. বাংলাদেশে রেশম চাষ পদ্ধতির বর্ণনা দাও। 
১২. সিন্ধ বাছাই পদ্ধতির বিস্তারিত আলোচনা কর। 
১৩. উইভিং-এ ব্যবহৃত সুতার গুণাগুণ বর্ণনা কর । 
১৪. সুতার কাউন্ট নির্ণয়ের পদ্ধতিসমূহের বর্ণনা দাও। 
১৫. কাপড়ের বৈশিষ্ট্যের উপর সুতার ভূমিকা কী লেখ । 
১৬. বিভিন্ন পদ্ধতিতে সুতার কাউন্টের সংজ্ঞা দাও এবং এদের সূত্রসমূহ লেখ। 
১৭. বিভিন্ন কাউন্ট পদ্ধতির মধ্যে সম্পর্ক দেখাও । 
১৮. কাপড় বুননের বিভিন্ন ধাপসমূহ ব্যাখ্যা কর। 
১৯. চিত্রসহ পার্ন ওয়াইন্ডিং -এর বর্ণনা দাও । 
২০. যে কোনো ৫টি ইয়ার্ন প্যাকেজের নামকরণ ও প্রতিকারসহ লেখ। 
২১. সাইজিং উপাদানসমূহ উদাহরণসহ লেখ।

Content added By

Read more

প্রথম পত্র (নবম শ্রেণি) টেক্সটাইল ফাইবার প্রাকৃতিক ফাইবার কটন ফাইবার জুট ফাইবার সিল্ক ফাইবার বস্ত্রে ব্যবহৃত সুতা সুতার কাউন্ট কাপড় প্রস্তুতের বিভিন্ন ধাপ ওয়াইন্ডিং টানা প্রকরণ মাড় প্রকরণ ব্যবহারিক রক্ষণাবেক্ষণে ব্যবহৃত বিভিন্ন যন্ত্রপাতির সাথে পরিচিত্তি। নির্দিষ্ট কাজের জন্য নির্দিষ্ট যন্ত্রের পরিচিতি। ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি ব্যবহারের পর পরিষ্কারকরণ। রক্ষণাবেক্ষণে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি ব্যবহারে সতর্কতা কটন ফাইবারের পরিচিতি ও শনাক্তকরণ। জুট ফাইবারের পরিচিতি ও শনাক্তকরণ। সিল্ক ফাইবারের পরিচিতি ও শনাক্ত করণ। বিভিন্ন প্রকার সুতার কাউন্ট নির্ণয় । ব্যালেলের সাহায্যে সুতার কাউন্ট নির্ণয় । টুইস্ট টেস্টারের সাহায্যে সুতা টিপিআই (টুইস্ট/ইঞ্চি) নির্ণয়করণ। হাতে চরকা ও চরকি প্রস্তুত করা। আম্বর চরকার ব্যবহার। সুতা রিলিং করা সম্পর্কে দক্ষতা অর্জন । বিভিন্ন প্রকার নলীর সাথে পরিচিতি হ্যাংক থেকে নলী প্রস্তুতকরণ। কাপড়ের ডিজাইন অনুযায়ী সুতার হিসাব নির্ণয়করণ ও ক্রিলে কোনো/চিজ স্থাপনকরণ । তাতে বিম তোলা। ক্রিলে সুতা সাজানো। ক্রিল থেকে ড্রামে সুতা স্থানাস্তর। মেশিন থেকে বিম নামানো। বিভিন্ন প্রকার সাইজিং ম্যাটারিয়ালস সমন্ধে পরিচিতি। সাইজিং -এর রেসিপি নির্বাচন হ্যাংক সুতায় মাড় করার প্রস্তুতপ্রণালি। প্রশ্নমালা
Promotion