এই অধ্যায় শেষে শিক্ষার্থীরা নিচের বিষয়গুলো সম্পর্কে জানতে পারবে-
আমরা আমাদের দৈনন্দিন কথাবার্তায় অনেকভাবে ‘বল’ শব্দটা ব্যবহার করি, কিন্তু বিজ্ঞানের ভাষায় বল কথাটার একটা নির্দিষ্ট অর্থ আছে। সত্যি কথা বলতে কি তোমরা এর মধ্যে বিজ্ঞানের ভাষায় বল বলতে কী বোঝায় সেটা জেনে গেছেন
যেটা কোনো কিছুর গতি পরিবর্তন করতে পারে অর্থাৎ কোনো কিছুর মধ্যে ক সৃষ্টি করতে পারে। সেটা (Force)
তোমরা যখন একটু উপরের ক্লাসে নিউটনের জগদ্বিখ্যাত সূত্রগুলো পড়বে, তখন দেখতে পাবে বলকে। কীভাবে ত্বরণের সাহায্যে ব্যাখ্যা করা যায়!
বস্তুর গতি পরিবর্তন ছাড়াও বল আরও একটি কাজ করতে পারে, সেটি অনেক সময় একটা বস্তুর আকার পরিবর্তন বা বিকৃত করতে পারে। তোমরা বলপ্রয়োগ করে একটা রডকে বাঁকা করতে পারবে, একটা স্প্রিংকে লম্বা করতে পারবে কিংবা একটা তারকে প্যাঁচাতে পারবে। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে আমরা প্রতিমুহূর্তে বল ব্যবহার করতে থাকি। কখনও কখনও আমরা সরাসরি বল প্রয়োগ করি, তখনও কখনও কোনো একটা যন্ত্র দিয়ে বল ব্যবহার করি, আবার কখনও কখনও অপ্রয়োজনীয় বল থেকে নিজেদের রক্ষা করি।
বস্তুটি একটি নির্দিষ্ট জ্বরণে নিচে পড়তে থাকে। একটা ঢালু তলে। কোনো কিছু গড়িয়ে পড়তে দিয়েও আমরা এই বলকে ব্যবহার করতে পারি। কতটুকু ঢালু হবে, সেটা বাড়িয়ে কমিয়ে আমরা বলটাকেও বাড়াতে কিংবা কমাতে পারি।
মাধ্যাকর্ষণ বল ছাড়াও আমরা আমাদের চারপাশের নানা ধরনের বল দেখতে পাই। তোমরা এর মধ্যে জেনে গেছ, আমরা যখন কোনো কিছুকে ধাক্কা নেই কিংবা কোনো কিছুকে টানি তখন আমরা আসলে বল প্রয়োগ করি। একটা স্প্রিংয়ের মাঝে কিছু ঝুলিয়ে দিলে স্প্রিংটি একটা বলে বস্তুটিকে নিজের দিকে আকর্ষণ করে। তোমরা নিশ্চয়ই কখনও না কখনও চুম্বক ব্যবহার করেছ। চুম্বক লোহাকে একটা বল দিয়ে আকর্ষণ করে। শুধু আকর্ষণ নয়, একটা চুম্বক দিয়ে অন্য একটা চুম্বকের সমমেরুকে বিকর্ষণও করা যায়। তোমরা শীতের দিনে চিরুনি দিয়ে চুল আচড়ানো পর সেই চিরুনি দিয়ে কাগজের টুকরাকে একধরনের বলে আকর্ষণ করতে দেখেছ। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে দেখতে পাই না এরকম কয়েক ধরনের বলও প্রকৃতিতে কাজ করে, বড় হয়ে সেগুলো সম্পর্কে তোমরা জানতে পারবে।।
তোমরা এর মধ্যে জেনে গেছে যে যদি ধর্ষণের জন্য একটা বস্তুর গতিবেগ কমে না যেত, তাহলে সেটি অনন্তকাল চলতে থাকত। সে কারণেই তোমাদের অনেকের ধারণা হতে পারে, ঘর্ষণের ব্যাপারটাও বুঝি একধরনের ক্ষতিকর বল। কিন্তু সেটি পুরোপুরি সত্যি নয়। আমাদের জীবনের কিছু কিছু ক্ষেত্রে আমরা ঘর্ষণ বল কমানোর চেষ্টা করি আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে ঘর্ষণ বল বাড়ানোর চেষ্টা করি। সেই বিষয়গুলো দেখার আগে আমরা ঘর্ষণ বল কোথা থেকে আসে সেটি এককথায় বুঝে নিই।
তুমি যদি খুবই মসৃণ টেবিলে একটা কাঠের টুকরাকে রেখে সেটাকে বাম দিক থেকে ডান দিকে ঠেলে দাও, তাহলে সেই টুকরার উপরে ডান থেকে বাম দিকে পাল্টা একটা বল কাজ করবে, যেটা তোমার দেওয়া বলটিকে কমিয়ে দেবে। তুমি যদি কাঠের টুকরাটিকে ডান দিক থেকে বাম দিকে ঠেলে দাও, তাহলে কাঠের টুকরাটি বাম দিক থেকে ডান দিকে কাজ করে তোমার দেওয়া বলটিকে কমিয়ে দেবে। অর্থাৎ তুমি যেদিক থেকেই বল প্রয়োগ করো এটি সবসময় তার বিপরীত দিক থেকে কাজ করে বলটিকে কমিয়ে দেবে। এটাই হচ্ছে ধর্ষণ বল ।
কেন ঘর্ষণ বল এভাবে কাজ করে সেটা বোঝার জন্য কাঠের টুকরাটি যেখানে টেবিলকে স্পর্শ করেছে সেই অংশটি অণুবীক্ষণ যন্ত্র দিয়ে বহুগুণে বড় করে দেখলে তুমি দেখতে পাবে, কাঠের যে টুকরা বা টেবিলের যে অংশটাকে মসৃণ ভেবে এসেছ, সেটি আসলে মোটেও মসৃণ নয়। সেই অংশগুলো এবড়ো খেবড়ো এবং সেখানে অসংখ্য উঁচুনিচু খাঁজ রয়েছে। কাজেই যখন একটা খাঁজ হরিয়া দেখলে মসৃণ একটি অপকেও বা মেকারো মনে হয় কাটা এবড়ো থেবড়ো অংশ একই ধরনের অন্য অংশের ওপর বসে তখন একটি খাঁজ অন্য খাঁজের ভেতরে ঢুকে যায়। যখন ধাক্কা দেওয়া হয়, তখন এই ক্ষুদ্র অংশগুলো ভেঙেচুরে নিয়ে যেতে হয়। খুবই স্বাভাবিক ভাবে আমরা তখন এক ধরনের বাধার সম্মুখীন হই, যে বাধাটিকে আমরা ঘর্ষণ বল বলে থাকি। যদি কাঠের উপরে ভারী কিছু রেখে চাপ দেওয়া হয় তাহলে ঘর্ষণ বলের পরিমাণ বেড়ে যায়। কারণ, যত চাপ দেওয়া হবে উপরের অংশের এবড়ো থেবড়ো এবং খাঁজগুলো নিচের এবড়ো থেবড়ো অংশ এবং খাঁজের ভেতর তত গভীরভাবে ঢুকে গিয়ে ঘর্ষণ বল তত বাড়িয়ে দেবে।
অনেক সময়ই আমরা ঘর্ষণ বল কমাতে চাই। ঘর্ষণের কারণে তাপ সৃষ্টি হয়—শীতকালে আমরা হাত ঘষে গরম করে থাকি। গাড়ির সিলিন্ডারে ঘর্ষণের জন্য তাপ সৃষ্টি হয়— ভাপ সৃষ্টি হওয়ার অর্থ শক্তি নষ্ট হওয়া। তা ছাড়া তাপটুকু সরাতে না পারলে গাড়ির ইঞ্জিন উত্তপ্ত হয়ে যায়, সে জন্য সেখানে ঘর্ষণ কমাতে হয়। গাড়ি কিংবা বিমান সব সময় এমনভাবে তৈরি করা হয় যেন বাতাসের ঘর্ষণ কম থাকে। সমুদ্রে জাহাজ কিংবা সমুদ্রের তলদেশের সাবমেরিনেও পানির সঙ্গে ঘর্ষণ কমানোর চেষ্টা করা হয়। নিচে ঘর্ষণ কমানোর কয়েকটি পদ্ধতি কথা বলা হলো:
১. মসৃণ পৃষ্ঠে ঘর্ষণ কম হয় তাই যে পৃষ্ঠদেশে ঘর্ষণ হয়, সেটাকে মসৃণ করার চেষ্টা করা হয়।
২. দর্ষণরত দুটি তলের মধ্যে তেল, মবিল বা গ্রিজ জাতীয় পদার্থ দিয়ে ঘর্ষণ কমানো যায়।
৩. ঢাকা যেহেতু ছোট এক জায়গায় স্পর্শ করে, তাই ঢাকা ব্যবহার করে ধর্ষণ কমানো যায়।
৪. ঘুরন্ত ঢাকায় বল বিয়ারিং ব্যবহার করে ঘর্ষণ কমানো যায়।
আমরা অনেক সময়ই ঘর্ষণ বাড়াতে চাই। উদাহরণ দেওয়ার জন্য বলা যায়, ঘর্ষণ না থাকলে আমরা হাঁটতে পারতাম না, হাঁটার চেষ্টা করলে পিছলে পড়ে যেতাম। আমরা গাড়ির চাকার সঙ্গে রাস্তার ঘর্ষণ বাড়াতে চাই যেন গাড়িগুলো দৃঢ়ভাবে রাস্তা আঁকড়ে থেকে দ্রুত যেতে পারে। বাতাসের ঘর্ষণ ব্যবহার করে আমরা প্যারাসুট নিয়ে নিরাপদে নিচে নামতে পারি। নিচে ঘর্ষণ বাড়ানোর কয়েকটি পদ্ধতির কথা বলা হলো;
১. যে দুটো তলে ঘর্ষণ হয়, সেই দুটো তলকে আরও খসখসে করা।
২. যে দুটো তলে ঘর্ষণ হয়, সেই দুটো তল জোরে চেপে ধরা।
৩. ধর্ষণরত তলের মাঝে খাঁজ কাটা জুতার তলা কিংবা গাড়ির চাকায় যেটা করা হয়।
৪. ঘর্ষণরত তল দুটি স্থির থাকলে ঘর্ষণ বেশি হয় বলে সেগুলোকে স্থির রাখার ব্যবস্থা করা।
তোমরা কি জানো ২০১৫ সালে বাংলাদেশে যে বিল্ডিং কোড সরকারিভাবে পাস করা হয়েছে সেই কোড অনুযায়ী সব বিল্ডিংয়ের প্রবেশপথে একটি ramp বা হেলানো তল বসানো বাধ্যতামূলক, যেন হুইলচেয়ার ব্যবহারকারী যে কোনো মানুষ কারও সাহায্য ছাড়া নিজে নিজে বিল্ডিংয়ের ভেতর প্রবেশ করতে পারে। ramp বা হেলানো তল এক ধরনের সরল যন্ত্র, এটি ব্যবহার করে এক ধরনের যান্ত্রিক সুবিধা পাওয়া যায়।
একটি ভারী বস্তু বা হুইলচেয়ারকে উপরে তোলা খুব সহজ নয়। কিন্তু যদি একটি হেলানো তল বা ramp ব্যবহার করা হয়, তাহলে বেশ সহজেই একটি হুইলচেয়ার বা অন্য ভারী বস্তুকে উপরে তোলা যায়, বা আমরা বলতে পারি একধরনের যান্ত্রিক সুবিধা পাওয়া যায়।
সরল হয় বলতে আমরা এই ধরনের যন্ত্রকে বোঝ ঠ মেটা ব্যবহার করে ব্যবহারের সুবিধার জন্য প্রয়োগ করা বলকে বৃদ্ধি করতে পারি বা বল প্রয়োগের দিক পরিবর্তন করতে পারি। সরল যন্ত্র ব্যবহারের সুবিধাটুকুকে আমরা যান্ত্রিক সুবিধা বলে থাকি।
আমাদের চারপাশে যে সরল যন্ত্র রয়েছে আমরা সেগুলো কে ৬টি ভাগে ভাগ করতে পারি। সেগুলো হচ্ছে :
তোমরা নিশ্চয়ই পার্কে ছেলেমেয়েদের উপর-নিচ করে খেলায় কাঠের তক্তার তৈরি সি-স (see-saw) দেখেছ। এটি দুই পাশে মুক্তভাবে নড়ার জন্য মাঝাখানে একটু উঁচু করে বসানো হয়, তখন দুই পাশে দুজন সমান ওজনের শিশু উঠে সেটাকে নিজেদের ইচ্ছামতো উপর-নিচ করতে পারে। যদি এটির এক
মাথায় একটি শিশু কিন্তু অন্য মাথায় শিশুটির থেকে অনেক বেশি ওজনের একজন বড় মানুষ বসে যায়, তাহলে শিশুটি সেটাকে আর ইচ্ছামতো উপর-নিচে করতে পারে না। সিস মাঝখানে যেখানে বসানো থাকে, সেটার নাম ফালক্রম। শিশুটিকে তার জায়গাতে বসিয়ে রেখেই বড় মানুষটিকে যদি ফালক্রমের কাছাকাছি নিয়ে আসা যায় তাহলে কিন্তু শিশুটি খুব সহজেই তার থেকে অনেক বেশি ওজনের একজন বড় মানুষকে উপর-নিচে করতে পারবে। তার কারণ, ফালক্রমের অবস্থান দিয়ে লিভারের একধরনের যান্ত্রিক সুবিধা পাওয়া যায়।
লিভারের যান্ত্রিক সুবিধা একটি সহজ সূত্র দিয়ে বের করা যায়। ছবিতে দেখানো উপায়ে ফালক্রমের দুই পাশের দূরত্ব যদি x এবং y হয়, তাহলে y দূরত্বটি x থেকে যতগুণ বেশি হবে, ছোট বল প্রয়োগ করে ততগুণ বেশি বড়। বলকে সামাল দেওয়া যাবে।
তোমাদের স্কুলের জাতীয় পতাকা তোলার সময় তোমরা নিশ্চয়ই লক্ষ করেছ, তোমাদের শিক্ষক একটি দড়িকে নিচের দিকে টানছেন, তখন অন্যদিকে পতাকাটি উপর দিকে উঠে যাচ্ছে। কারণ, পতাকাকে বাঁধা দড়িটি একটি কপিকলের ভেতর দিয়ে ঘুরে এসেছে। পাশের ছবিতে তোমাদের দুটি কপিকলের ব্যবহার দেখানো হয়েছে। প্রথম ছবিতে কপিকলের এক পাশে একটি ১০ কেজি ওজন আছে। অন্য পাশ থেকে একজন দড়ি দিয়ে ভজনটিকে টেনে উপরে তুলছে। এখানে যখন দড়িটি টেনে নামানো হচ্ছে, তখন ওজনটি উপরে উঠে যাচ্ছে। এখানে আমরা বল প্রয়োগের দিক পরিবর্তন করে ফেলছি, নিচের দিকে বলপ্রয়োগ করে ওজনটিকে উপরে তুলে ফেলেছি— এটি একধরনের যান্ত্রিক সুবিধা হতে পারে।
দ্বিতীয় ছবিতে ওজনটি ঝোলানো আছে কপিকল থেকে, কিন্তু সেটি কোথাও লাগানো নেই বলে মুক্তভাবে নিড়তে পারে। এখানে ওজনটিকে উপরে তুলতে হলে আমাদের দড়িটিকে উপরে টানতে হবে। দড়িটি টেনে যতটুকু উপরে তোলা হবে ওজনটি তার অর্ধেক দূরত্ব উপরে উঠবে। সে জন্য আমরা একটি যান্ত্রিক সুবিধা পার ওজনটিকে অর্ধেক বল প্রয়োগ করে উপরে তুলে ফেলতে পারব।
এই অধ্যায়ের শুরুতে হুইলচেয়ারে বিল্ডিংয়ের ঢোকার জন্য ramp বা হেলানো তল নামে সরল যন্ত্রের কথা ইতোমধ্যে তোমাদের বলা হয়েছে। তোমরা নিজেরা নিশ্চয়ই লক্ষ করেছ, একটা খাড়া ঢাল বেয়ে ওঠা যথেষ্ট কষ্টসাধ্য: কিন্তু যদি তলটির ঢাল অনেক কম হয়, সেটা দিয়ে উপরে ওঠা তুলনামূলকভাবে সহজ। কাজেই একটা যান্ত্রিক সুবিধা বের করার জন্য কতটুকু দূরত্ব অতিক্রম করে কতটুকু উচ্চতায় ওঠা যায়, তার তুলনা বের করতে হয়।
যান্ত্রিক সুবিধা= অতিক্রান্ত দূরত্ব/ অতিক্রান্ত উচ্চতা
একটি হুইল চেয়ার ওঠানোর জন্য যান্ত্রিক সুবিধা কমপক্ষে ১২ হওয়া প্রয়োজন।
তোমরা সবাই ঢাকা দেখেছ এবং সবাই জানো যে চাকা একটা অক্ষের সাপেক্ষে ঘোরে। যদি একটা চাকার ব্যাসার্ধ বড় হয় এবং তার তুলনায় অক্ষের ব্যাসার্ধ ছোট হয়, তাহলে এই অক্ষ ঢাকার সমন্বয়টি একটা সরল যন্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা যায়। কল্পনা করে নাও একটা বড় চাকা এবং তার অক্ষদও দুটিতেই এমনভাবে দড়ি প্যাঁচানো আছে যে বড় চাকার দড়ি। টেনে সেটাকে ঘোরালে অক্ষদণ্ডটি ঘুরতে থাকে এবং সেখানে অন্য একটা দড়ি প্যাঁচাতে থাকো। এখন তুমি যদি অক্ষদণ্ডে একটা ভারী ওজন বেঁধে দাও তাহলে দেখবে বড় চাকাটিকে দড়ি টেনে ঘুরিয়ে তুমি সহজেই সেটাকে টেনে তুলতে পারবে। যদি বড় চাকার ব্যাসার্ধ অক্ষদণ্ডের ব্যাসার্ধের দশ গুণ হয় তাহলে তুমি ১০ কেজি ওজনকে ১ কেজির সমান বলপ্রয়োগ করে টেনে তুলতে পারবে। অর্থাৎ যান্ত্রিক সুবিধা হচ্ছে:
যান্ত্রিক সুবিধা= বড় চাকার ব্যাসার্ধ/ অক্ষদণ্ডের ব্যাসার্ধ
প্রশ্ন: নিচে নানা ধরনের যন্ত্রের ছবি দেওয়া হয়েছে, কোনটি কোন ধরনের সরল যন্ত্র বলতে পারবে?
আমরা সবাই শক্তি শব্দটার সঙ্গে পরিচিত। কোনো কিছুর ক্ষমতা অনেক বেশি হলে আমরা সেটাকে শক্তিশালী কিংবা বলশালী বলি। তোমরা কি জানো বিজ্ঞানের ভাষায় কিন্তু শক্তি এবং বল কথা দুটোর সুনির্দিষ্ট অর্থ রয়েছে এবং শক্তি এবং বল সম্পূর্ণ ভিন্ন বিষয় বুঝিয়ে থাকে।
বল বলতে কী বোঝায় তোমরা সেটা এর মধ্যে জেনে গেছ। যেটি গতি পরিবর্তন করতে পারে সেটা হচ্ছে বল। যেটা কোনো ধরনের কাজ করতে পারো সেটা হচ্ছে শক্তি। এখানে কাজ বলতে বল প্রয়োগ করে কোনো কিছুকে নাড়ানো বোঝানো হয়। উপরের ক্লাসে উঠে তোমরা এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবে।
পৃথিবীতে নানা ধরনের শক্তি আছে। যেমন তাপ এক ধরনের শক্তি, আলো এক ধরনের শক্তি, বিদ্যুৎ এক ধরনের শক্তি, শব্দ একধরনের শক্তি। কিন্তু আমাদের সবচেয়ে পরিচিত শক্তি হচ্ছে গতি শক্তি।। যে কোনো বস্তুকে গতিশীল করলেই তার ভেতরে এক ধরনের শক্তি সৃষ্টি হয়, সেই শক্তিটার নাম হচ্ছে। গতি শক্তি। তোমরা নিশ্চয়ই বিষয়টা নানাভাবে অনুভব করেছ, একটা ইটের ওপর একটা হাতুড়ি রাখলে কিছুই হয় না, কিন্তু তুমি যদি হাতুড়িটাকে প্রচণ্ড বেগে ইটের ওপর আঘাত করো, এটা চূর্ণ বিচূর্ণ হয়ে যাবে। তার কারণ গতি শক্তির কারণে হাতুড়িটার মধ্যে একটা শক্তি সৃষ্টি হয়েছে। একটা বস্তুর ভর যদি it হয় আর সেটা যদি v বেগে যায়, তাহলে তার গতি শক্তি হবে;
গতিশক্তি = ½ m(v*v)
একটি গাড়ি যদি ঘণ্টায় 40 কিলোমিটার বেগে যায় তাহলে তার একটা গতিশক্তি থাকবে। গাড়িটার গতিবেগ যদি দ্বিগুণ করে ফেলা যায়, তাহলে তার শক্তি কিন্তু দ্বিগুণ বাড়বে না, সেটি বাড়বে চার গুণ। এ জন্য গাড়ি দুর্ঘটনার ক্ষয়ক্ষতির একটা বড় কারণ গতিবেগ। একটা গাড়ি যখনই বেশি গতিতে যাওয়ার কারণে দুর্ঘটনায় পড়ে তখন ক্ষয়ক্ষতি হয় অনেক বেশি।
শক্তির কিন্তু ধ্বংস নেই, আবার সৃষ্টিও নেই, এটির শুধু রূপান্তর আছে। কাজেই যদি একটা পাড়ি স্থির অবস্থা থেকে শুরু করে ধীরে ধীরে গতিশীল হয়, তাহলে তার মধ্যে যে শক্তি সৃষ্টি হয়েছে, সেটা নিশ্চয়ই অন্য কোনো শক্তি থেকে রূপান্তরিত হয়েছে। তুমি কি বলতে পারবে সেই শক্তিটি কোথা থেকে রূপান্তরিত হয়েছে?
একটু চিন্তা করলেই বুঝতে পারবে সেই শক্তিটি সৃষ্টি করেছে গাড়ির ইঞ্জিন এবং সেটি সৃষ্টি করার জন্য ইঞ্জিন ব্যবহার করেছে গাড়ির জ্বালানি- পেট্রোল, ডিজেল অথবা গ্যাস। এই জ্বালানিতে যে শক্তি সঞ্চিত আছে আমরা সেটাকে বলি রাসায়নিক শক্তি। এই রাসায়নিক শক্তিটাও এসেছে বহু লক্ষ বছরে পৃথিবীর তাপ এবং চাপ থেকে।
রাসায়নিক শক্তি আমাদের পরিচিত শক্তি। আমাদের টেলিফোনের ব্যাটারির মধ্যে যে রাসায়নিক শক্তি সঞ্চিত থাকে, ব্যবহারের সময় সেটা বৈদ্যুতিক শক্তি হিসেবে বের হয়ে আসে। যখন সঞ্চিত রাসায়নিক শক্তি কমে আসে, তখন ব্যাটারি চার্জ করার সময় আমরা বিদ্যুৎপ্রবাহ করিয়ে বিদ্যুৎ শক্তিকে আবার রাসায়নিক শক্তি হিসেবে জমা করে রাখতে পারি।
আমরা যখন ঘরে বাতি জ্বালাই তখন বৈদ্যুতিক শক্তিকে আলোতে রূপান্তর করি, যখন হিটার ব্যবহার করি তখন তাপে রূপান্তর করি, যখন লাউডস্পিকারে পান শুনি তখন সেটাকে শব্দে রূপান্তরিত করি, যখন ফ্যান চালাই তখন তাকে গতি শক্তিতে রূপান্তর করি। কাজেই তোমরা একটু চিন্তা করলেই দেখবে শক্তির জন্ম নেই কিংবা ধ্বংস নেই; কিন্তু এটি শুধু এক রূপ থেকে অন্য রূপে রূপান্তরিত হয়।
একটা ব্যাটারির ভেতর শক্তিকে রাসায়নিক শক্তি হিসেবে জমা রাখা যায় এবং প্রয়োজনে সেটাকে ব্যবহার করা যায়। আমরা চাইলে অন্যভাবেও এভাবে শক্তি জমা করতে পারি। একটা ছোট পাথরের টুকরা মেঝের ওপরে থাকলে সেটার ভেতরে কোনো শক্তি নেই কিন্তু যদি পাথরের টুকরাটাকে তুলে একটা টেবিলের ওপর রাখা হয়, তাহলে সঙ্গে সঙ্গে কিন্তু পাথরের টুকরোর মধ্যে এক ধরনের স্থিতি শক্তি জমা হয়ে যাবে। কারণ, আমরা যদি টোকা দিয়ে পাথরের টুকরাটিকে টেবিল থেকে নিচে ফেলে। দিই, তাহলে নিচে পড়ার সময় সেটির ভেতরে গতি সৃষ্টি হবে—যত বেশি নিচে পড়বে, তত বেশি। গতিশীল হবে। আমরা এখন জানি, গতি থাকলেই গতিশক্তি থাকে, কাজেই পাথরের টুকরাটির মধ্যে গতিশক্তি সৃষ্টি হবে। এই গতিশক্তি সৃষ্টি হওয়া সম্ভব হয়েছে পাথরের টুকরাটি টেবিলের উপরে তোলার কারণে।
স্থিতি শক্তিকে ব্যবহার করে বিদ্যুৎ তৈরি করা হয় জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রে। যেখানে নদী অথবা হ্রদে বাঁধ দিয়ে পানি জমা করে রাখা হয়, তারপর অনেক উচ্চতা থেকে সেই পানি নিচে নামিয়ে এনে সেই শক্তিকে ব্যবহার করে সেটা দিয়ে জেনারেটর ঘুরিয়ে বিদ্যুৎ তৈরি করা হয়।
শক্তির এককের নাম জুল। প্রতি সেকেন্ডে এক জুল শক্তি বায় করা হলে, সেটাকে বলে ওয়াট। তোমরা জুল এককটির নাম না শুনে থাকলেও নিশ্চয়ই ওয়াট শব্দটির নাম শুনেছ। যে কোনো ব্যবহারিক বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি কিনলে তুমি দেখবে, সেখানে লেখা থাকে সেই যন্ত্রটির জন্য কত ওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে হয়।
আমরা যত ধরনের শক্তির সঙ্গে পরিচিত তার মধ্যে ব্যবহার করার জন্য সবচেয়ে সহজ শক্তিটির নাম হচ্ছে বিদ্যুৎ। বিদ্যুৎ ব্যবহার করে খুব সহজে লাইট জ্বালানো যায়, ফ্যান ঘোরানো যায়, ফ্রিজ চালানো যায়, কম্পিউটার ব্যবহার করা যায়। সে কারণে শহরে গ্রামে এমনকি দুর্গম অঞ্চলেও আমাদের সবার বাসায় বিদ্যুৎ সরবরাহের ব্যবস্থা করা হয়। সে জন্য বিদ্যুৎকে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় নিতে হয় এবং সেটাকে সকল বাসা, কলকারখানা, অফিস বা স্কুল এবং কলেজে ছড়িয়ে দিতে হয়। তোমরা নিশ্চয়ই দেখেছ বিদ্যুতের লাইন দিয়ে খুব যত্ন করে এবং সতর্কভাবে সব জায়গায় বিদ্যুৎ বিতরণ করা হয়। আমরা গ্যাসকেও পাইপ দিয়ে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় সরবরাহ করি এবং বিতরণ করি। গ্যাস সরাসরি শক্তি না হলেও এটার সঞ্চিত শক্তি থেকে তাপ সৃষ্টি হয়, সেই তাপ দিয়ে অন্য শক্তি সৃষ্টি করা হয়।
১। স্পর্শ না করে বল প্রয়োগ করা সম্ভব এরকম কয়েকটি বলের উদাহরণ দাও।
২। পৃথিবীতে যদি ঘর্ষণ বল না থাকতো তাহলে তোমার দৈনন্দিন জীবনটি কেমন এতো বর্ণনা করে
৩। ১ কেজি ভরকে শক্তিতে রূপান্তরিত করলে সেই শক্তি দিয়ে কতগুলো ১০০ ওয়াটের বালাকে ২৪ ঘণ্টা জ্বালিয়ে রাখা যাবে?
আরও দেখুন...