বাংলাদেশে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক স্থান ও নিদর্শন আছে। এই নিদর্শনগুলো থেকে আমরা অতীতের সংস্কৃতি ও সভ্যতা সম্পর্কে জানতে পারি ।
মহাস্থানগড়
খ্রিষ্টপূর্ব তৃতীয় শতক থেকে পরবর্তী পনেরো শত বছরের বেশি সময়কালের বাংলার ইতিহাসের সাক্ষ্য বহন করে এই নিদর্শন। মৌর্য আমলে এই স্থানটি 'পুণ্ড্রনগর’ নামে পরিচিত ছিল। বগুড়া শহর থেকে প্রায় ১৮ কিলোমিটার উত্তরে করতোয়া নদীর তীরে মহাস্থানগড় অবস্থিত।
এখানে প্রাপ্ত নিদর্শনগুলোর মধ্যে রয়েছে:
• চওড়া খাদবিশিষ্ট প্রাচীন দুর্গ
• প্রাচীন ব্রাহ্মী শিলালিপি
• মন্দিরসহ অন্যান্য ধর্মীয় ভগ্নাবশেষ
• পোড়ামাটির ফলক, ভাস্কর্য, ধাতব মুদ্রা, পুঁতি
• ৩.৩৫ মিটার লম্বা 'খোদাই পাথর'
উয়ারী-বটেশ্বর
নরসিংদী জেলার উয়ারী ও বটেশ্বর নামক দুইটি গ্রামে খ্রিষ্টপূর্ব ৪৫০ অব্দের মৌর্য আমলের পূর্বের নিদর্শন পাওয়া গেছে। এই সভ্যতাটি সমুদ্র বাণিজ্যের সাথে সম্পর্কিত ছিল। প্রাচীন নগরসভ্যতার নিদর্শনস্বরূপ এখানে প্রাচীন রাস্তাঘাটও পাওয়া গেছে। এখানে প্রাপ্ত জিনিসের মধ্যে রয়েছে রৌপ্যমুদ্রা, হাতিয়ার এবং পাথরের পুঁতি।
ক. এসো বলি
প্রাচীন নিদর্শনগুলো রক্ষা করা প্রয়োজন কেন, শিক্ষকের সহায়তায় আলোচনা কর। জাদুঘরে সংরক্ষিত নিদর্শনগুলো থেকে আমরা কী জানতে পারি?
খ. এসো লিখি
পাথরে খোদাই করা বুদ্ধের দন্ডায়মান চিত্রটি লক্ষ কর। যারা এটা দেখেনি, তাদের জন্য এটি সম্পর্কে বর্ণামূলক একটি রচনা লেখ।
গ. আরও কিছু করি
পর্যটকদের জন্য আকর্ষণীয় পোস্টার তৈরি কর। মহাস্থানগড়ের কোন কোন জিনিস মানুষকে আকৃষ্ট করবে?
ঘ. যাচাই করি
উপযুক্ত শব্দ দিয়ে শূন্যস্থান পূরণ কর:
দুইটি নিদর্শনই খ্রিষ্টপূর্ব ………………… অব্দের কাছাকাছি …………. সম্রাজ্যের ইতিহাস বহন করে।
পাহাড়পুর
এই ঐতিহাসিক নিদর্শনটি ৭৮১-৮২১ খ্রিস্টাব্দে পাল রাজা ধর্মপালের শাসনামলে নির্মিত হয়। পাহাড়পুর রাজশাহী বিভাগের নওগাঁ জেলায় অবস্থিত। এখানে ২৪ মিটার উঁচু গড় রয়েছে, এটি 'সোমপুর মহাবিহার নামেও পরিচিত।
এই চমৎকার বৌদ্ধ বিহারের চারপাশে ১৭৭টি ভিক্ষুকক্ষ আছে। এছাড়া এখানে মন্দির, রান্নাঘর, খাবার ঘর এবং পাকা নর্দমা আছে। এখানে পাওয়া গেছে জীবজন্তুর মূর্তি ও টেরাকোটা।
ময়নামতি
অষ্টম শতকের রাজা মাণিক চন্দ্রের স্ত্রী ময়নামতির কাহিনী এই জায়গার ইতিহাসের সঙ্গে জড়িত। বাংলাদেশের দক্ষিণ- পূর্ব অঞ্চলে কুমিল্লা শহরের কাছে ময়নামতি অবস্থিত।
এটি বৌদ্ধ সভ্যতার অন্যতম কেন্দ্ৰ ছিল। তবে এখানে হিন্দু ও জৈন ধর্মেরও নিদর্শন পাওয়া গেছে। এখানে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের আবাসন সুবিধাসহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নিদর্শন পাওয়া গেছে। এখানকার অন্যান্য নিদর্শনের মধ্যে রয়েছে জীবজন্তু অঙ্কিত পোড়ামাটির ফলক, যেমন বেজির সঙ্গে যুদ্ধরত গোখরা সাপ, আগুয়ান হাতি ইত্যাদি। এখানকার জাদুঘরে বিভিন্ন মুদ্রা ও পাথরের ফলকের নিদর্শনও আছে।
ক. এসো বলি
পাহাড়পুর ও ময়নামতির মধ্যে কোন স্থানটি তোমরা দেখতে যেতে চাও তা জোড়ায় আলোচনা কর। স্থানটি দেখতে চাওয়ার কারণগুলো কী কী?
কীভাবে তোমার পরিবারের সদস্যদের এ স্থানটিতে যেতে রাজি করাবে?
খ. এসো শিখি
ছবিতে দেওয়া এই চমৎকার পোড়ামাটির ফলকটি পাহাড়পুরে পাওয়া গেছে। পর্যটকদের উদ্দেশে প্রকাশিত লিফলেটের জন্য ফলকটি সম্পর্কে একটি উপযুক্ত বাক্য তৈরি কর।
গ. আরও কিছু করি
মনে কর, তুমি একজন প্রত্নতাত্ত্বিক এবং ভূমি পাহারপুর অধিকার করেছ। সেখানে এমন করার পর তুমি যা যা খুঁজে পেজে পার সেগুলোর বর্ণনা দাও।
ঘ. যাচাই করি
নিচের নিদর্শনগুলো বিভিন্ন ঐতিহাসিক স্থানে পাওয়া গেছে। যে বিশ্বরটি যে স্থানের, ছকে সে অনুযায়ী লেখ।
উঁচুগড় বৌদ্ধ ধর্মীয় নিদর্শন গোপন কুঠুরি
অষ্টম শতক বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চল বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চল
| পাহাড়পুর | পাহাড়পুর ও ময়নামতি | ময়নামতি |
|---|---|---|
সোনারগাঁও
সোনারগাঁও ও লালবাগ কেল্লা সতের শতকের ঐতিহাসিক নিদর্শন। সোনারগাঁও ঢাকার দক্ষিণ-পূর্ব দিকে নারায়ণগঞ্জ জেলায় মেঘনা নদীর তীরে অবস্থিত। সোনারগাঁও প্রাচীন বাংলার মুসলমান সুলতানদের রাজধানী ছিল। এখনও সেখানে সুলতানি আমলের অনেক সমাধি রয়েছে, যার একটি গিয়াসউদ্দিন আযম শাহের মাজার।