সপ্তদশ অধ্যায়
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে খ্রিষ্টানদের অংশগ্রহণ
১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে আমাদের দেশ স্বাধীন করার জন্য যারা যুদ্ধ করেছেন তাঁদের জন্য আমরা সত্যিই গর্বিত । সেখানে কোনো ধর্মের ভেদাভেদ ছিল না। আমরা জানি, সেই মুক্তিযুদ্ধে দেশের অনেক খ্রিষ্টান মানুষও অংশগ্রহণ করেছিলেন। এবার আমরা তাদের বিষয়ে জানব ।
প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ খ্রিষ্টান মুক্তিযোদ্ধা
মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ দুই রকমের ছিল। কেউ কেউ প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণ করেছিলেন আবার কেউ কেউ পরোক্ষভাবে অংশগ্রহণ করেছিলেন। সেই মুক্তিযোদ্ধাগণ প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ করেছিলেন যাঁরা অস্ত্র নিয়ে শত্রুর মোকাবিলা করেছিলেন। আমাদের দেশের অনেক খ্রিষ্টান যুবক প্রতিবেশী দেশ ভারতে গিয়ে যুদ্ধের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছিলেন। এরপর অস্ত্র নিয়ে দেশে ফিরে এসে বিভিন্ন স্থানে যুদ্ধ করেছেন। তাঁদের একটা তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে, কিন্তু অনেক মুক্তিযোদ্ধার নাম সেখানে বাদ পড়েছে। মোটামুটিভাবে বলা যায়, প্রায় ১৫০০ জন খ্রিষ্টান মুক্তিযোদ্ধা প্রত্যক্ষভাবে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন। তাঁদের মধ্যে ৩ জন কাথলিক যাজকসহ অন্তত ২৪ জন যুদ্ধক্ষেত্রে শহিদ হয়েছেন, কেউ কেউ পরে মৃত্যুবরণ করেছেন আবার অনেকে এখনো বেঁচে আছেন।
পরোক্ষভাবে অগণিত বাঙালি খ্রিষ্টান লোক মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন। পরোক্ষ অংশগ্রহণগুলো নিম্নলিখিত ধরনের ছিল :
১। নিজের সন্তানদের বা ভাইবোনদের বা স্বামীদের মুক্তিবাহিনীতে যাওয়ার অনুমতি দিয়ে, ত্যাগস্বীকার করার মাধ্যমে
২। মুক্তিবাহিনীদের আশ্রয় ও খাওয়াদাওয়া সরবরাহ করে
৩। অসুস্থ ও আহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা করার মাধ্যমে
৪। মুক্তিযোদ্ধাদের অস্ত্র গোপন স্থানে লুকিয়ে রেখে এবং এক স্থান থেকে অন্য স্থানে নিয়ে গিয়ে ৫। মুক্তিবাহিনীদের কাছে গোপন সংবাদ পৌঁছে দেওয়ার মাধ্যমে
৬। নিজের আত্মীয়স্বজন এবং বিষয়সম্পদ হারিয়ে যাওয়া সত্ত্বেও তা সহ্য করার মাধ্যমে
৭। মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারীদের উৎসাহ দিয়ে
৮। মুক্তিবাহিনীদের সফলতা কামনা করে প্রার্থনা করার মাধ্যমে
৯। মুক্তিযোদ্ধাদের উৎসাহ দেওয়ার জন্য অনুপ্রেরণামূলক গান গেয়ে
১০। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে সংবাদ প্রচার করে।
মাতৃভূমিকে রক্ষা করা
মাতৃভূমিকে রক্ষা করা আমাদের প্রত্যেকের পবিত্র দায়িত্ব ও কর্তব্য। মাতৃভূমি আমাদের জন্য ঈশ্বরের দান। কারণ:
১। এই মাটির উৎপাদিত ফসলাদি খেয়ে আমরা বাঁচি। ২। পানির আর এক নাম জীবন। এই মাটি থেকে পানি তুলে আমরা পান করি ।
৩। এই খনিজ পদার্থ আমাদের জীবন নির্বাহের জন্য আবশ্যক।
৪। এই দেশের আলো-বাতাস আমাদের বাঁচিয়ে রাখে। ৫। এই দেশের সৌন্দর্য আমাদের নয়ন জুড়ায়।
মাতৃভূমি রক্ষাকাজে আমরা কীভাবে অংশগ্রহণ করতে পারি মাতৃভূমিকে রক্ষা করার কর্তব্য শুধু মুখে মুখে বললেই শেষ হয়ে যায় না। কাজের মাধ্যমে এর প্রমাণ দেখাতে হবে।
নিম্নোক্তভাবে আমরা মাতৃভূমির প্রতি আমাদের দায়িত্ব পালন করতে পারি:
(ক) ভালোমত পড়াশুনা করে নিজেকে দেশ সেবার জন্য প্রস্তুত করার মাধ্যমে
(খ) মূল্যবোধ অর্জনের মাধ্যমে সুন্দর ব্যক্তিত্ব গঠন করে (গ) দেশের সম্পদ নষ্ট না করে বরং সম্পদ রক্ষা করে
(ঘ) দরিদ্র ও অভাবীদের সাহায্য করার মাধ্যমে
(ঙ) দুর্বলদের পড়াশুনার ব্যাপারে সহায়তা করার মাধ্যমে (চ) বিভিন্ন জাতীয় অনুষ্ঠানগুলোতে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণের মাধ্যমে।
(ছ) যারা দেশ শাসন ও পরিচালনা করে, যারা বিদেশি শত্রুদের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করে তাদের জন্য প্রার্থনা করার মাধ্যমে ।
অনুশীলনী
১। শূন্যস্থান পূরণ কর
(ক) বাংলাদেশ স্বাধীন করার জন্য- --খ্রিষ্টাব্দে যারা যুদ্ধ করেছেন তাদের জন্য আমরা গর্বিত।
(খ) মুক্তিযুদ্ধে কোনো----------------ভেদাভেদ ছিল না ।
(গ) দেশের সৌন্দর্য আমাদের----------------জুড়ায়।
(ঘ) মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ রকমের ছিল।
(ঙ) মাতৃভূমিকে রক্ষা করা প্রত্যেকের----------------দ্বায়িত্ব ও কর্তব্য ।
৩। সঠিক উত্তরটিতে টিক (√) চিহ্ন দাও
৩.১ কিসের মাধ্যমে আমরা মাতৃভূমির প্রতি কর্তব্য পালন করি?
(ক) ব্যবহারে
(খ) অলসতায়
(গ) ব্যবহার ও কাজে
(ঘ) সেবার মাধ্যমে
৩.২ মুক্তিযুদ্ধে কতজন খ্রিষ্টান শহিদ হয়েছেন ?
(ক) ২০ জন
(খ) ২৪ জন
(গ) ২৮ জন
(ঘ) ৩২ জন
৩.৩ কতজন খ্রিষ্টান মুক্তিযোদ্ধা প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণ করেছেন ?
(ক) ১৫০০ জন
(খ) ১২০০ জন
(গ) ১০০০ জন
(ঘ) ৮০০ জন
৩.৪ কতজন যাজক মুক্তিযুদ্ধে শহিদ হয়েছেন ?
(ক) ১ জন
(খ) ২ জন
(গ) ৩ জন
(ঘ) ৪ জন
৩.৫ প্রত্যক্ষ মুক্তিযোদ্ধাগণ কী নিয়ে শত্রুর মোকাবিলা করেছেন?
(ক) অস্ত্র
(খ) লাঠি
(গ) খালি হাতে
(ঘ) পতাকা
৪। সংক্ষেপে নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও
(ক) কত খ্রিষ্টাব্দে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল?
(খ) খ্রিষ্টান যুবকেরা কেন ভারতে গিয়েছিলেন?
(গ) স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে কী প্রচার করা হতো?
৫। নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও
(ক) মাতৃভূমি রক্ষার কাজে আমরা কীভাবে অংশগ্রহণ করতে পারি?
(খ) পরোক্ষভাবে কীভাবে বাঙালি খ্রিষ্টানেরা মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছে?
সমাপ্ত
আরও দেখুন...