বাংলাদেশের সামাজিক সমস্যা

অষ্টম শ্রেণি (দাখিল) - বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় - NCTB BOOK

সামাজিক সমস্যা হলো সমাজে বিরাজিত একটি অবস্থা, যা জনগণের উপর ক্ষতিকর প্রভাব বিস্তার করে এবং এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণের জন্য কিছু সংখ্যক ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গ সম্মিলিতভাবে প্রচেষ্টা চালায়। বাংলাদেশে নানা সামাজিক সমস্যা রয়েছে। তার মধ্যে কিশোর অপরাধ ও মাদকাসক্তি দুটি বড় সমস্যা। বর্তমানে এ দুটি সমস্যা সবার জন্যই উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এ অধ্যায় পাঠ শেষে আমরা-
• কিশোর অপরাধের ধারণা ব্যাখ্যা করতে পারব;
• কিশোর অপরাধের কারণ ও প্রভাব বর্ণনা করতে পারব;
• কিশোর অপরাধ প্রতিকারের উপায় সম্পর্কে বর্ণনা করতে পারব;
• মাদকাসক্তির ধারণা ব্যাখ্যা করতে পারব;
• মাদকাসক্তির কারণ ও প্রভাব বর্ণনা করতে পারব;
• মাদকাসক্তি প্রতিরোধের উপায় সম্পর্কে বর্ণনা করতে পারব; সমাজ জীবনে কিশোর অপরাধ ও মাদকাসক্তির প্রভাব সম্পর্কে সচেতন       হব এবং এসব সমস্যা সমাধানের উপায় খুঁজব এবং শৃঙ্খলাপূর্ণ আচরণে উদ্বুদ্ধ হব।

Content added || updated By

কিশোর অপরাধের ধারণা ও কারণ

সাধারণভাবে রাষ্ট্র বা সমাজ স্বীকৃত নয় এমন কাজকে অপরাধ বলে । অপ্রাপ্তবয়স্ক ছেলেমেয়ে বা কিশোরদের দ্বারা সংগঠিত বিভিন্ন ধরনের অপরাধকেই বলা হয় কিশোর অপরাধ । কোন বয়স পর্যন্ত অপরাধীকে কিশোর অপরাধী বলা হবে তা নিয়ে অবশ্য বিভিন্ন দেশের সমাজবিজ্ঞানী ও আইনবিদদের মধ্যে মতপার্থক্য রয়েছে । বাংলাদেশ, ভারত ও শ্রীলঙ্কায় ৭ থেকে ১৬ বছর বয়সী কিশোরদের অপরাধমূলক কাজকে কিশোর অপরাধ বলা হয় । অন্যদিকে পাকিস্তান ও থাইল্যান্ডে কিশোর অপরাধীর বয়স ৭ থেকে ১৮ বছর । আর জাপানে এ বয়সসীমা ১৪ থেকে ২০ বছর । কিশোর বয়সে এরা রাষ্ট্র ও সামজের আইন ও নিয়ম ভাঙে বলেই তারা কিশোর অপরাধী।

কিশোর অপরাধীরা সাধারণত যে সব অপরাধ করে থাকে, সেগুলো হচ্ছে চুরি, খুন, জুয়া খেলা, স্কুল পালানো, বাড়ি থেকে পালানো, পরীক্ষায় নকল করা, বিদ্যালয় ও পথেঘাটে উচ্ছৃঙ্খল আচরণ, পকেটমারা, মারপিট করা, বোমাবাজি, গাড়ি ভাংচুর, বিনা টিকিটে ভ্রমণ, পথেঘাটে মেয়েদের উত্যক্ত করা, এসিড নিক্ষেপ, নারী নির্যাতন, অশোভন ছবি দেখা, মাদক গ্রহণ ইত্যাদি। আমাদের দেশের কিশোর অপরাধীরাও সাধারণত এ ধরনের অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকে।

শিশু-কিশোররা নানা কারণে অপরাধী হয়ে উঠে। আমাদের দেশে কিশোর অপরাধের অন্যতম প্রধান কারণ দারিদ্র্য। দরিদ্র পরিবারের কিশোরদের অনেক সাধ বা ইচ্ছাই অপূর্ণ থেকে যায়। এর ফলে তাদের মধ্যে বাড়ে হতাশা এবং এ হতাশাই তাদের অপরাধের দিকে ঠেলে দেয় ৷ সুস্থ পারিবারিক জীবন ও সুষ্ঠু সামাজিক পরিবেশের অভাবেও শিশু-কিশোররা অপরাধী হয়ে উঠতে পারে। বাড়ির বাইরে বা কর্মস্থলে অতি ব্যস্ততার কারণে মাতাপিতার পক্ষে তাঁদের সন্তানদের যথেষ্ট সময় বা মনোযোগ দিতে না পারা, আদর-যত্নের অভাব, মাতাপিতার অকাল মৃত্যু বা বিবাহবিচ্ছেদ, এমনকি অভিভাবকদের অতিরিক্ত শাসনের কারণেও অনেক কিশোর ধীরে ধীরে অপরাধী হয়ে উঠে।

চিত্তবিনোদনের অভাবের কারণেও অনেক কিশোর-কিশোরী অপরাধী হয়ে উঠে। ছোটবেলা থেকেই খেলাধুলা, সংগীত, ছবি আঁকা, শরীর চর্চা ও বিভিন্ন ধরনের সাংস্কৃতিক কার্যাবলির সঙ্গে জড়িত শিশু- কিশোররা সাধারণত আনন্দময় পরিবেশে সুস্থভাবে বেড়ে উঠে। অন্যদিকে যারা এসবের সুযোগ পায় না তারা মানসিক অস্থিরতা থেকে মুক্তির অন্য পথ খোঁজে। তারাই পরে নানা রকম অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে।

শহরের বিভিন্ন এলাকায় ও শিল্পাঞ্চলে বস্তি রয়েছে। বস্তির পরিবেশ ও সেখানকার নানা খারাপ অভিজ্ঞতা শিশু-কিশোরদের অপরাধী করে তোলে। সঙ্গদোষে এবং অভাবের তাড়নায়ও বস্তির শিশু-কিশোররা অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। দরিদ্র পরিবারের শিশু-কিশোররা অল্পবয়সেই নানা রকম কাজ করে টাকা উপার্জন করতে বাধ্য হয়। এই টাকায় কখনো কখনো তারা জুয়া খেলে, মাদক সেবন করে এবং অশোভন ছবি দেখে। অর্থ উপার্জন করতে গিয়ে বা লোভে পড়েও তারা অনেক সময় অপরাধের দিকে ঝুঁকে পড়ে।

শারীরিক-মানসিক ত্রুটি বা বৈকল্য শিশুমনে হীনমন্যতার জন্ম দেয়। এর ফলেও অনেকে অপরাধী হতে পারে। আবার বেশি রকম আবেগপ্রবণ বা প্রতিভাবান শিশু-কিশোররাও অনেক সময় অপরাধী হয়ে উঠে। কারণ এ ধরনের শিশু-কিশোরদের মানসিক গঠন সাধারণের চেয়ে জটিল হয়। তারাও তাদের প্রতিভা বিকাশের উপযুক্ত পরিবেশের অভাবে অপরাধী হয়ে উঠতে পারে।

যেসব মাতাপিতা বারবার কর্মস্থল পরিবর্তন করেন তাদের সন্তানেরা কেউ কেউ নতুন পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে পারে না। সঙ্গী বা বন্ধু নির্বাচনে তাদের সমস্যা হয়। এভাবে সঙ্গদোষেও কেউ কেউ অপরাধী হতে পারে। বর্তমানে মোবাইল ও ইন্টারনেটের অপব্যবহারের ফলেও সমাজে এক ধরনের কিশোর অপরাধ দেখা যাচ্ছে।

Content added || updated By

কিশোর অপরাধের প্রভাব ও প্রতিরোধ

বাংলাদেশে কিশোররা সাধারণত যেসব অপরাধ করে তার মধ্যে রয়েছে চুরি, পকেটমার, বিনা টিকিটে রেলভ্রমণ; মানুষ, দোকানপাট, বাড়িঘর ও যানবাহনের উপর হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও অন্যান্য নাশকতামূলক কাজ এবং মেয়েদের উত্যক্ত করা প্রভৃতি । এছাড়াও কিশোর অপরাধীরা অনেক সময় দলবেঁধে ডাকাতি এবং ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে জোরপূর্বক চাঁদা আদায় করে থাকে। কখনো কখনো তারা খুন পর্যন্ত করে। যে পরিবারে এ রকম কিশোর অপরাধী আছে তাদের পারিবারিক শান্তি বিনষ্ট হয়। কখনো কখনো বাংলাদেশের শহর ও গ্রামাঞ্চল সর্বত্রই কিশোর অপরাধীদের দ্বারা মেয়েদের উত্যক্ত করার ঘটনা শোনা যায়। তারা মেয়েদের প্রতি অশ্লীল ও অশোভন উক্তি করে। এদের কারণে মেয়েরা নিরাপদে স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসায় যাতায়াত করতে পারে না। বখাটে কিশোরদের অন্যায় প্রস্তাবে সাড়া না দিলে তারা মেয়েদের অপহরণ, শারীরিক নির্যাতন বা তাদের উপর এসিড নিক্ষেপ করে। প্রতিবাদ করতে গিয়ে অনেক সময় অভিভাবকরাও তাদের আক্রমণের শিকার হয়। এসব বখাটের উৎপাতে কখনো কখনো ছাত্রীদের পড়ালেখা বন্ধ হয়ে যায়। কিশোর অপরাধীরা অনেক সময় মাদকাসক্তি ও অন্যান্য খারাপ অভ্যাসের সঙ্গে জড়িত থাকে।

 

প্রতিরোধের উপায় 

বাংলাদেশে কিশোর অপরাধ প্রবণতা দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে। এ সমস্যার প্রতিরোধে নিম্নোক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন :

অভিভাবক সচেতনতা ও দায়িত্ব

কিশোরদের অপরাধ প্রবণতার ধরন, তার কারণ ও প্রতিকার সম্পর্কে মাতাপিতা ও পরিবারের বয়োজ্যেষ্ঠরা যদি সচেতন থাকেন তবে তাঁরা সহজেই কিশোরদের অপরাধ থেকে দূরে রাখতে বা সে পথ থেকে সরিয়ে আনতে পারবেন। এজন্য পরিবারে সন্তানদের সুস্থ মানসিক বিকাশের উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। তাদের চলাফেরার উপর নজর রাখতে হবে। তাদের বন্ধু ও সাথিদের সম্পর্কে খোঁজ-খবর রাখতে হবে। সন্তানদের সঙ্গে সহজ ও স্বাভাবিক সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে।

আর্থ-সামাজিক কর্মসূচি কিশোরদের অপরাধ প্রবণতার একটি প্রধান কারণ পরিবারের দারিদ্র্য। সেজন্য অভিভাবকদের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি ও পরিবারের আর্থিক অবস্থার উন্নতি ঘটাতে হবে। এ ব্যাপারে সরকার এবং বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থাকে এগিয়ে আসতে হবে।

শিক্ষার সুযোগ
সকল শিশু-কিশোরকে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার আওতায় আনতে হবে। এতে তারা একদিকে শিক্ষার প্রভাবে সুস্থ ও সুন্দর জীবন-যাপনে আগ্রহী হবে। অন্যদিকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিবেশ তাদেরকে অপরাধ থেকে দূরে রাখবে ।

চিত্তবিনোদন
শিশু-কিশোরদের মানসিক বিকাশের জন্য পাড়া ও মহল্লায় পাঠাগার, ব্যায়ামাগার প্রভৃতি স্থাপন করা
প্রয়োজন । এছাড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও আবাসিক এলাকায় খেলার মাঠ থাকতে হবে ।
উল্লিখিত কার্যক্রম ছাড়াও শিশু-কিশোরদের সব রকম খারাপ কাজ থেকে দূরে রাখতে হবে। এজন্য টেলিভিশনে ও অন্যান্য মাধ্যমে তাদেরকে জ্ঞান-বিজ্ঞান ও তথ্যমূলক এবং সুস্থ আনন্দদায়ক দেশি ও বিদেশি ছায়াছবি দেখানোর ব্যবস্থা করতে হবে। অশোভন ছবি প্রদর্শন এবং প্রকাশনা সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করে দিতে হবে। শিশুশ্রম নিষিদ্ধ করতে হবে। শিশু-কিশোররা যেন খারাপ সংস্পর্শে না পড়ে সে ব্যাপারে তাদের নিজেদের যেমন সতর্ক থাকতে হবে, তেমনি অভিভাবকদেরও এ ব্যাপারে সব সময় সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।

কাজ : কিশোর অপরাধ রোধে কী কী কাজ করা যেতে পারে? আলোচনা করো।

Content added By

মাদকাসক্তির ধারণা ও কারণ

মাদকাসক্ত-সঙ্গীদের সাথে মেলামেশার মধ্য দিয়েই প্রধানত মাদকাসক্তির সূত্রপাত ঘটে। মাদকের ক্ষতিকর দিকগুলো সম্পর্কে না জেনেই, কেবল সাময়িক উত্তেজনা লাভের জন্য ও বন্ধুদের প্ররোচনায় কিশোর-কিশোরীরা মাদকদ্রব্য সেবন করে। পরে তা তাদের মরণনেশায় পরিণত হয়। কিশোরমন স্বভাবতই কৌতূহলপ্রবণ। ফলে শুধুমাত্র কৌতূহলের বশেও অনেকে মাদক গ্রহণ করা শুরু করে। পিতা বা বাড়ির অন্য বয়স্কদের পকেট থেকে বিড়ি-সিগারেট চুরি করে শিশু-কিশোররা অনেক সময় তাদের কৌতূহল মিটায়। এই কৌতূহল থেকে একসময় তাদের ধূমপানের অভ্যাস গড়ে উঠে এই ধূমপান থেকেই তারা পরে অন্যান্য নেশাদ্রব্য যেমন-গাঁজা, ফেনসিডিল, হেরোইন, ইয়াবা প্রভৃতিতে আসক্ত হয়ে পড়ে । বেকারত্ব, নিঃসঙ্গতা, প্রিয়জনের মৃত্যু, পারিবারিক অশান্তি ইত্যাদি কারণে অনেকের মনে হতাশার সৃষ্টি হয়। আর এই হতাশা থেকে মুক্তি লাভের আশায় প্রথমে বন্ধুবান্ধবের পরামর্শে বা তাদের দেখাদেখি অনেকে মাদকদ্রব্য গ্রহণ করতে শুরু করে। পরে এটা তাদের নেশায় পরিণত হয়। মাতাপিতার স্নেহ ও মনোযোগ থেকে বঞ্চিত হয়ে কিংবা পারিবারিক অশান্তি ও ঝগড়াবিবাদ থেকেও অনেক সময় শিশু-কিশোরদের মনে হতাশা জন্ম নেয়। এক পর্যায়ে তারা মাদকে আসক্ত হয়ে পড়ে।

অপসংস্কৃতির প্রভাবও মাদকাসক্তির পিছনে একটি বড় কারণ হিসাবে কাজ করে। চলচ্চিত্র, টিভি চ্যানেল, ইন্টারনেট প্রভৃতির মাধ্যমে আজকাল এক দেশের সংস্কৃতি সহজেই অন্য দেশের সংস্কৃতি ও জনজীবনকে প্রভাবিত করছে। দুই ভিন্ন সংস্কৃতির টানাপোড়েনে পড়েও যুব সমাজের একটা অংশ বিভ্রান্ত ও লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে মাদকে আকৃষ্ট হচ্ছে।

কাজ : শিশু-কিশোরদের মাদকাসক্ত হওয়ার পিছনে কী কী কারণ কাজ করে? আলোচনা করো।

Content added By

মাদকাসক্তির প্রভাব ও প্রতিরোধ

আমাদের সমাজজীবনে মাদকাসক্তি বর্তমানে একটি ভয়াবহ সমস্যা হিসাবে দেখা দিয়েছে। এটি আমাদের সামাজিক ও নৈতিক জীবনেও মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। শারীরিক ক্ষতির মধ্যে একজন মাদক গ্রহণকারীর হৃদরোগ, যক্ষ্মা, ক্যান্সার ও শ্বাসকষ্ট হতে পারে। তার মানসিক স্বাস্থ্যও এর ফলে দুর্বল হয়ে পড়ে। মাদক গ্রহণকারীরা হতাশা ও হীনমন্যতায় ভোগে। নিজেদের ক্ষতি তো এরা করেই, উপরন্তু ভয়, উৎকণ্ঠা ও উত্তেজনার শিকার হয়ে সমাজেও নৈরাজ্য সৃষ্টি করে।

পারিবারিক জীবনে মাদকের প্রভাব নানা জটিল সমস্যা সৃষ্টি করে। পুরো পরিবারের সুখ-শান্তিকে নষ্ট করে। যে পরিবারে একজনও মাদকাসক্ত সন্তান থাকে সে পরিবারে ঝগড়াঝাঁটি লেগেই থাকে । প্রতিবেশীদের কাছে ঐ পরিবারের মর্যাদা থাকে না। মাদকের টাকার যোগান দিতে গিয়ে অনেক সময় পরিবারটি একেবারে নিঃস্ব হয়ে যায়। তাছাড়া হত্যা, আত্মহত্যা, বাড়ি থেকে পালানো বা নিরুদ্দেশ হওয়ার মতো ঘটনাও ঘটে। যে দেশে সহজেই মাদক পাওয়া যায় সেখানে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, রাহাজানি ও হত্যার ঘটনাও বেশি ঘটে। মাদকের প্রভাবে সামাজিক অস্থিরতা ও মূল্যবোধের অবক্ষয় দেখা দেয়। মাদকের হাত থেকে সমাজের মানুষকে রক্ষা করার জন্য তাই মাদকাসক্তি প্রতিরোধ ও মাদক নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। এ জন্য নিম্নোক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে :

 

প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা

মাদকাসক্তি রোধে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থাই সবচেয়ে ভালো ও কার্যকর। এ জন্য সমাজে নৈতিক শিক্ষাকে গুরুত্ব দিতে হবে। সন্তানদের ছোটবেলা থেকেই ধর্মীয় ও নৈতিক মূল্যবোধ শেখানোর জন্য অভিভাবক ও পরিবারের বয়োজ্যেষ্ঠ সদস্যদের সচেষ্ট হতে হবে। মোটকথা ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষার মধ্য দিয়ে ও অন্যান্য উপায়ে মাদক বিরোধী সচেতনতা ও সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। 

শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও স্থানীয় পর্যায়ের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান এবং ক্লাব সমিতি প্রভৃতি সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া সংস্থাগুলো নৈতিক শিক্ষার মাধ্যমে মাদকাসক্তি প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। নানা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে 'মাদককে না বলুন’-এই প্রতিজ্ঞায় জনগণ বিশেষ করে তরুণদের উদ্বুদ্ধ করতে পারে। এছাড়াও পাঠ্যপুস্তক, সংবাদপত্র, রেডিও, টেলিভিশন, চলচ্চিত্র, পোস্টার, বিলবোর্ড ও লিফলেট ইত্যাদির মাধ্যমেও মাদকাসক্তির বিরুদ্ধে সচেতনতা সৃষ্টি করা যেতে পারে। 

সুস্থ চিত্তবিনোদনের ব্যবস্থা করে শিশু-কিশোরদের সেদিকে আকর্ষণ করতে হবে যাতে তারা মাদক গ্রহণ ও অন্যান্য খারাপ অভ্যাসের দিকে ঝুঁকে না পড়ে। একই সঙ্গে অশোভন চলচ্চিত্র প্রচার বন্ধ করা দরকার। এছাড়াও মাদকাসক্তি প্রতিরোধে বিদ্যমান আইনি পদক্ষেপগুলো গ্রহণ ও কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে।

 

মাদকাসক্তি নিয়ন্ত্রণে আইনসমূহ:

বাংলাদেশে বর্তমানে মাদকাসক্তি একটি ভয়াবহ জটিল সমস্যা। বাংলাদেশ সরকার মাদকাসক্তি প্রতিরোধে জাতিসংঘের মাদক নিয়ন্ত্রণের ০৩টি কনভেনশনে স্বাক্ষর করেছে। বাংলাদেশ সরকার ১৯৯০ সালে মাদক বিরোধী সার্ক কনভেনশনেও স্বাক্ষর করেছে।

বাংলাদেশ সরকার তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) সম্পর্কে সর্বশেষ বিধিমালা ২০১৩, প্রণয়ন করে তামাকজাত দ্রব্য পাবলিক প্লেসে এবং পাবলিক পরিবহনে ব্যবহার করলে এর শাস্তির বিধান রেখেছে। বিধিতে বলা হয়েছে, অফিস আদালত, গ্রন্থাগার, লিফট, আচ্ছাদিত কর্মক্ষেত্র, হাসপাতাল ও ক্লিনিক, বিমান বন্দর, নৌবন্দর, সমুদ্রবন্দর, রেলওয়ে স্টেশন, বাস টার্মিনাল, প্রেক্ষাগৃহ, প্রদর্শনী ক্ষেত্র, থিয়েটার হল, বিপনী বিতান, আবদ্ধ রেস্তোরা, পাবলিক টয়লেট, শিশু পার্ক, মেলা, পাবলিক পরিবহনের জন্য অপেক্ষার স্থান এবং প্রয়োজন অনুযায়ী সরকার ঘোষিত স্থান সমূহে ধূমপান দণ্ডনীয় অপরাধ হিসাবে গণ্য হবে। কোনো ব্যক্তি পাবলিক প্লেস ও পাবলিক পরিবহনে ধূমপান করতে পারবেন না। শাস্তির ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, ‘এই বিধান কেউ লঙ্ঘন করিলে তিনি অনধিক ৩ শত টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হইবেন এবং উক্ত ব্যক্তি দ্বিতীয় বা পুনঃ পুনঃ একই ধরনের অপরাধ করিলে তিনি পর্যায়ক্রমিকভাবে উক্ত দণ্ডের দ্বিগুণ হারে দণ্ডনীয় হইবেন ।

তামাকজাত ও নেশাজাতীয় দ্রব্যের উৎপাদন ও বিজ্ঞাপন প্রচার বন্ধ করতে হবে। সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে নেশা বা মাদকের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে প্রচার চালাতে হবে । মাদক উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত শ্রমিকদের জন্য বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে । ছাত্রদের সামনে শিক্ষকের ধূমপানকে অপরাধ হিসাবে গণ্য করতে হবে । ঔষধ হিসাবে উৎপাদিত ও ব্যবহৃত মাদকজাতীয় দ্রব্যের বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে হবে ।
কাজ : আমাদের সমাজে মাদকাসক্তি রোধে কী কী ব্যবস্থা নেওয়া যায়? আলোচনা করো ।

Content added By

আরও দেখুন...

Promotion