সরকার রাষ্ট্রের মূল চালিকা শক্তি। সরকারের মাধ্যমেই রাষ্ট্র যাবতীয় কাজ সম্পাদন করে। সরকার ছাড়া রাষ্ট্র চলতে পারে না। রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য সরকার বিভিন্ন কাজ করে। যেমন, নাগরিক হিসাবে আমাদের জন্য খাদ্য, শিক্ষা, চিকিৎসা ও নিরাপত্তার ব্যবস্থা করে। জনগণের অধিকার ও কল্যাণের জন্য আইন প্রণয়ন করে। কেউ সে আইন অমান্য করলে শাস্তির ব্যবস্থা করে। এ ধরনের আরও অনেক কাজ আছে যা সরকার করে থাকে। সরকারের এ কাজগুলো সম্পাদনের জন্য তিনটি বিভাগ রয়েছে। এগুলো হলো (১) আইন বিভাগ (২) শাসন বিভাগ এবং (৩) বিচার বিভাগ ।
সরকারের বিভিন্ন অঙ্গ ও এদের গঠন :
নিচের ছকে বাংলাদেশ সরকারের তিনটি বিভাগ-সংশ্লিষ্ট তিনটি ছবি :
প্রথম ছবিটি জাতীয় সংসদ ভবনের। এটি ঢাকার শেরেবাংলা নগর-এ অবস্থিত। জাতীয় সংসদে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা দেশ পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়ন করেন এবং অন্যান্য নীতি নির্ধারণী সিদ্ধান্ত নেন।
দ্বিতীয় ছবিটি বাংলাদেশ সচিবালয়ের। সংসদে যে সকল আইন প্রণয়ন করা হয় সে অনুযায়ী নীতিনির্ধারণ ও সরকারের শাসনকাজ পরিচালিত হয় সচিবালয় থেকে।
শেষের ছবিটি সুপ্রিম কোর্টের। এটি বাংলাদেশের বিচার বিভাগের সর্বোচ্চ স্তর।
সরকারের এ তিনটি বিভাগের রূপরেখা সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো : আইন বিভাগ : বাংলাদেশের আইনসভা এক কক্ষবিশিষ্ট। এর নাম জাতীয় সংসদ। মোট ৩৫০ জন সদস্য নিয়ে এটি গঠিত। এর মধ্যে ৩০০ জন সদস্য দেশের ৩০০ টি নির্বাচনি এলাকা থেকে নাগরিকদের প্রত্যক্ষ ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত হয়ে থাকেন। বাকি ৫০টি আসন মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত। প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত সদস্যদের দ্বারা তাঁরা নির্বাচিত হয়ে থাকেন। অর্থাৎ সংরক্ষিত আসনের মহিলা সাংসদগণ পরোক্ষভাবে নির্বাচিত হন। তবে ৩০০টি নির্বাচনি এলাকার যে কোনো আসনে মহিলারা সরাসরি প্রতিদ্বন্দ্বিতার মাধ্যমে নির্বাচিত হতে পারেন। জাতীয় সংসদের মেয়াদ পাঁচ বছর। একজন স্পিকার জাতীয় সংসদের অধিবেশন সংক্রান্ত সকল কার্যক্রম পরিচালনা করেন। ডেপুটি স্পিকার তাঁকে এ কাজে সহায়তা করেন। এছাড়া স্পিকারের অনুপস্থিতিতে তিনি সংসদ অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন। দুজনই সংসদ সদস্যদের মধ্য থেকে ভোটে নির্বাচিত হন ।
আইন সভা বা জাতীয় সংসদ রাষ্ট্রের সাধারণ আইন তৈরি ও পরিবর্তন করে; দেশের জনমতকে প্রকাশ করে; সরকারের আয়-ব্যয় নিয়ন্ত্রণ করে; সংবিধান প্রণয়ন ও সংশোধন করে। রাষ্ট্রপতির বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ উত্থাপিত হলে আইন বিভাগ তা বিচার বিবেচনা করে। এছাড়া দেশের জাতীয় তহবিলের অভিভাবক হিসাবে দায়িত্ব পালন করে। জাতীয় বাজেট অনুমোদন ও কর ধার্য করে ।
শাসন বিভাগ : রাষ্ট্রের শাসন সংক্রান্ত কার্যাবলি পরিচালনার দায়িত্ব শাসন বিভাগের। ব্যাপক অর্থে, শাসন বিভাগ বলতে রাষ্ট্রের শাসন কাজে নিয়োজিত সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীকে বোঝায়। এ অর্থে রাষ্ট্রপ্রধান থেকে শুরু করে গ্রামের একজন চৌকিদার পর্যন্ত সকলেই শাসন বিভাগের অংশ। তবে প্রকৃত অর্থে রাষ্ট্রপ্রধান, সরকার প্রধান, মন্ত্রিপরিষদ ও প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের নিয়েই শাসন বিভাগ গঠিত। শাসন বিভাগ আইন বিভাগ কর্তৃক প্রণীত আইন বাস্তবায়ন করে এবং সে অনুযায়ী দেশ পরিচালনা করে। দেশের অভ্যন্তরে শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখতে কাজ করে। দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করে এবং বিদেশের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলে ।
বিচার বিভাগ : সরকারের যে অঙ্গ বা বিভাগ ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য সংবিধান ও আইন অনুযায়ী বিচার কাজ পরিচালনা করে থাকে তাকে বলা হয় বিচার বিভাগ। বাংলাদেশের বিভিন্ন বিচারালয়ের বিচারকদের নিয়ে এ বিভাগ গঠিত। বিচার বিভাগের সর্বোচ্চ স্তর হলো সুপ্রিম কোর্ট। এর প্রধানকে ‘বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি' বলা হয়। রাষ্ট্রপতি তাঁকে নিয়োগ দেন। সুপ্রিম কোর্টের রয়েছে দুইটি বিভাগ। আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগ। এই দুইটি বিভাগের বিচারপতিগণ ও রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিযুক্ত হন এবং দেশের প্রচলিত আইন অনুসারে বিচার কাজ পরিচালনা করে থাকেন । দুষ্টের দমন, অপরাধীর শাস্তি বিধান ও ন্যায় প্রতিষ্ঠা করে নাগরিক জীবনকে সুন্দর ও সহজ করে তোলে। বিভিন্ন দেওয়ানি ও ফৌজদারি মামলা মোকদ্দমার মীমাংসামূলক রায় দেয়। সংবিধানের বিভিন্ন ধারা বা আইনের ব্যাখ্যা দেয়। দেশের সংবিধান ও নাগরিক অধিকার রক্ষা করে এবং বিভিন্ন ধরনের তদন্তমূলক কাজ করে । উপরের আলোচনায় আমরা লক্ষ করেছি যে, সরকারের প্রতিটি বিভাগের নিজস্ব কাজ ও পরিধি আছে। সে অনুযায়ী বিভাগগুলো পরিচালিত হয়। সকল বিভাগের সম্মিলিত রূপই হলো সরকার এবং সকল বিভাগের কাজ সরকারি কাজের অন্তর্ভুক্ত।
কাজ-১ : বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন অঙ্গের রূপরেখার একটি সংক্ষিপ্ত প্রতিবেদন তৈরি কর ।
কাজ-২ : নিচের ছকে সরকারের কয়েকটি কাজ উল্লেখ করা হয়েছে। কোনটি কোন বিভাগের কাজ চিহ্নিত কর ও নিচে লেখ ।
আরও দেখুন...