আবহাওয়ার প্রতিটি উপাদান প্রতিনিয়তই পরিবর্তিত হচ্ছে। আবহাওয়ার কোনো উপাদান যখন অস্বাভাবিকভাবে পরিবর্তিত হয় তখন আমরা বিরূপ আবহাওয়া দেখতে পাই। বিরূপ আবহাওয়ার কারণে আমরা বিভিন্ন ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হই। যেমন— মানুষের জীবন ও সম্পদের ক্ষতি হয়। কখনো কখনো মানুষ মারা যায়।
তাপদাহ ও শৈত্যপ্রবাহ
অতি গরম আবহাওয়ার দীর্ঘস্থায়ী অবস্থাই হলো তাপদাহ। আমরা প্রতি বছরই তাপদাহ অনুভব করি। তবে অস্বাভাবিক ও অসহনীয় তাপদাহ শত বছরে একবার দেখতে পাওয়া যায় । অস্বাভাবিক তাপদাহের ফলে ফসল উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়। আবার এই তাপদাহের কারণে কখনো কখনো মানুষসহ হাজার হাজার জীবের মৃত্যু হয়।
উত্তরের শুষ্ক ও শীতল বায়ু আমাদের দেশের উপর দিয়ে প্রবাহের ফলে শীতকালে তাপমাত্রা কখনো কখনো অস্বাভাবিকভাবে কমে যায়। এই অবস্থাই হলো শৈত্যপ্রবাহ। তবে উদ্ভিদ ও প্রাণীর জন্য অসহনীয় শৈত্যপ্রবাহ বাংলাদেশে খুব কমই দেখা যায়।
বন্যা ও খরা
বর্ষাকালে অর্থাৎ জুন থেকে সেপ্টেম্বর মাসে বাংলাদেশের এক পঞ্চমাংশ পানিতে তলিয়ে যায়। তবে ভয়াবহ বন্যার সময় বাংলাদেশের দুই তৃতীয়াংশ পানির নিচে তলিয়ে যায়। বাংলাদেশের জলবায়ু ও ভূপ্রকৃতির কারণে এমনটি হয়ে থাকে।
অনেক লম্বা সময় শুষ্ক আবহাওয়া থাকলে খরা দেখা দেয়। অস্বাভাবিক কম বৃষ্টিপাত ও উচ্চ তাপমাত্রাই হলো খরার কারণ। বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলে খরা সৃষ্টি হয়।
কালবৈশাখী
গ্রীষ্মকালে আমাদের দেশে যে বজ্রঝড় হয় তাই কালবৈশাখী নামে পরিচিত। স্থলভাগ অত্যন্ত গরম হওয়ার ফলেই কালবৈশাখীর সৃষ্টি হয়। সাধারণত বিকেল বেলায় কালবৈশাখী ঝড় বেশি হয়। এ ঝড় সর্বোচ্চ ২০ কিলোমিটার এলাকা পর্যন্ত বিস্তৃত হতে পারে। সঞ্চারণশীল ধূসর মেঘ সোজা উপরে উঠে গিয়ে জমা হয়। পরবর্তীতে এই মেঘ ঘনীভূত হয়ে ঝড়ো হাওয়া, ভারী বৃষ্টি, বজ্রবৃষ্টি, শিলাবৃষ্টি ইত্যাদি সৃষ্টি করে। এটাই কালবৈশাখী।
টর্নেডো
টর্নেডো হলো সরু, ফানেল আকৃতির ঘূর্ণায়মান শক্তিশালী বায়ুপ্রবাহ। এই বায়ুপ্রবাহ আকাশের বজ্রমেঘের স্তর থেকে ভূপৃষ্ঠ পর্যন্ত বিস্তৃত হয়। টর্নেডো আকারে সাধারণত এক কিলোমিটারের কম হয়। টর্নেডোর ফলে বিভিন্ন ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হয়ে থাকে। যেমন— ঘরবাড়ির ছাদ উড়িয়ে নিয়ে যেতে পারে, দেয়াল ভেঙে যেতে পারে এবং ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হতে পারে। শক্তিশালী টর্নেডো বড় বড় স্থাপনা ভেঙে ফেলতে পারে।
ঘূর্ণিঝড় বা সাইক্লোন
ঘূর্ণিঝড় হলো নিম্নচাপের ফলে সৃষ্ট ঘূর্ণায়মান সামুদ্রিক বজ্রঝড়। এটি ৫০০ থেকে ৮০০ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত হয়। অত্যধিক গরমের ফলে ভারত মহাসাগর ও বঙ্গোপসাগরের পানি ব্যাপক হারে বাষ্পে পরিণত হয়। এর ফলে ঐ সকল স্থানে সৃষ্ট নিম্নচাপ থেকেই তৈরি হয় ঘূর্ণিঝড়। ঘূর্ণিঝড়ের সময় দমকা হাওয়া বইতে থাকে ও মুষলধারে বৃষ্টি হতে থাকে। কখনো কখনো ঘূর্ণিঝড়ের ফলে জলোচ্ছ্বাসের সৃষ্টি হয়।
ঘূর্ণিঝড়ের ফলে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে লোকালয় প্লাবিত হয়ে ব্যাপক ক্ষতি হয়। মাঝে মাঝে জলোচ্ছ্বাসের ফলে সমুদ্র উপকূলবর্তী অঞ্চলে তীব্র জোয়ারের সৃষ্টি হয় এবং সবকিছু ভাসিয়ে নিয়ে যায় ৷
Read more