কোনো কিছু তৈরি করতে হলে প্রথমেই ভাবতে হবে জোড়া নেওয়ার কথা, কারণ জোড়া ছাড়া অধিকাংশ ক্ষেত্রে কোন যন্ত্র বা যন্ত্রাংশ তৈরি করা যায় না। শিল্পক্ষেত্রে যত প্রকারের জোড়া দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। ওয়েন্ডিং তাদের মধ্যে অন্যতম। এমন কোন শিল্প কারখানা নেই যেখানে ধাতুকে স্থায়ীভাবে জোড়া লাগানোর জন্য ওয়েন্ডিং এর ব্যবস্থা নেই। সকল প্রকার নির্মাণ এবং মেরামত কারখানায় ওরেঙ্কিং এর প্রয়োজনীয়তা অপরিহার্য। শিল্প কারখানায় দক্ষ ওয়েল্ডারদের দেশের শিল্পায়নে যথেষ্ট ভূমিকা রয়েছে।
ওয়েল্ডিং হলো স্থায়ীভাবে জোড়া দেয়ার প্রণালী। পূর্বে যে সকল ছোড়া রিভেটের সাহায্যে দেয়া হত এখন উহা ওয়েল্ডিং এর সাহায্যে দেয়া হয়। জাহাজ, পুল, সেতু, ষ্টীলের কাঠামো, ট্যাংক, পাইপ লাইন, বিমান, মহাশূন্যযান, মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ কাজে ওয়েল্ডিং প্রায় অবিচ্ছেদ্য অঙ্গরূপে ব্যবহৃত হচ্ছে। ২.১.১ ওয়েভিং এর পদ্ধতি:
গ্রীল তৈরির দোকানে হরেক রকমের গ্রীল তৈরি হয়, সেখানে একাধিক ধাতুষভকে জোড়া লাগনো হয়। আবার কামারশালার ধাতুখণ্ডকে উত্তর করে অর্ধগলিত অবস্থায় এনে হাতুড়ির সাহায্যে পিটিয়ে শিকল বানানো হয়। উভয়ক্ষেত্রে জোড়া হয় স্থায়ী, তবে গ্রীল তৈরির দোকানে জোড়া লাগানোর জন্য জোড়াস্থানে চা প্রয়োগ করতে হয় না, কিন্তু কামারশালায় শিকল বানাতে জোড়াস্থানে হাতুড়ির আঘাত বা চাপ প্রয়োগ করতে হয়। আমরা এরূপ জোড়া দেওয়াকে ওয়েল্ডিং করা বলি। সুতরাং ওয়েল্ডিং এর সংজ্ঞা হলো- দুই বা ততোধিক ধাতব খণ্ডকে ( একই জাতীয় ধাতু কিংবা ভিন্ন জাতীয় ধাতু) অনেক ক্ষেত্রে অধাতব খন্ডে তাপ প্রয়োগ করে পূর্ণগলিত অথবা অর্ধগলিত অবস্থায় এনে জোড়া স্থানে পরিপুরক ধাতু যুক্ত করে অথবা না করে চাপ প্রয়োগ করে অথবা বিনা চাপে স্থায়ীভাবে জোড়া দেয়ার পদ্ধতিকে ওয়েল্ডিং বলে।
বিহুল প্রচলিত ওয়েল্ডিং পদ্ধতিগুলি হলো:
• ফোর্স ওয়েল্ডিং
• গ্যাস ওয়েন্ডিং
• আর্ক ওয়েন্ডিং
• থারমিট ওয়েন্ডিং
• টিগ ওয়েল্ডিং
• মিগ ওয়েন্ডিং
• ইলেকট্রিক রেজিষ্ট্যাল ওয়েল্ডিং
অনুসন্ধানমূলক কাজ ১: তোমার শ্রেণিকক্ষের জ্বালালার গ্রীল তৈরি করতে ধাতুর খন্ড গুলোকে কোন পদ্ধতিতে জোড়া দেওয়া হয়েছে খুঁজে বের করা।
বহুল প্রচলিত ওয়েল্ডিং পদ্ধতির শ্রেণিবিন্যাস নিচে উল্লেখ করা হলো-
১ প্রেসার ওয়েল্ডিং বা ননফিউশন ওয়েল্ডিং (Pressure Welding or Nonfusion Welding )
২ নন প্রেসার ওয়েল্ডিং বা ফিউশন ওয়েল্ডিং (Nonpressure Welding or Fusion Welding)
উপরের প্রধান শ্রেণি দু'টিকে আবার বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যেমন-
১. প্রেসার ওয়েল্ডিং বা ননফিউশন ওয়েল্ডিং
(ক) ফোর্স ওয়েল্ডিং (Forge Welding )
হ্যামার ওয়েল্ডিং (Hammer Welding )
ডাই ওয়েল্ডিং (Die Welding )
রোল ওয়েল্ডিং (Roll Welding )
(খ) ইলেকট্রিক রেজিস্ট্যান্স ওয়েল্ডিং
বাট ওয়েল্ডিং (Butt Welding)
সিম ওয়েল্ডিং (Seam Welding )
স্পট ওয়েল্ডিং (Spot Welding)
প্রজেকশন ওয়েল্ডিং (Projection Welding)
পারকাশন ওয়েল্ডিং (Percussion Welding)
ফ্লাশ ওয়েল্ডিং (Flush Welding)
২. নন প্রেসার ওয়েল্ডিং বা ফিউশন ওয়েল্ডিং
(ক) আর্ক ওয়েল্ডিং (Are Welding )
• শিল্ডেড মেটাল আর্ক ওয়েল্ডিং (SMAW)
টিগ ওয়েল্ডিং (TIG / GTAW)
মিগ ওয়েল্ডিং (MIG / GMAW)
(খ) গ্যাস ওয়েল্ডিং (Gas Welding )
অক্সি অ্যাসিটিলিন ওয়েল্ডিং (Oxy Acetylene Welding
অক্সি হাইড্রোজেন ওয়েল্ডিং (Oxy Hydrogen Welding )
এয়ার অ্যাসিটিলিন ওয়েল্ডিং (Air Acetylene Welding)
(গ) থারমিট ওয়েল্ডিং (Thermit Welding)
২.২.১ শিল্টেড মেটাল আর্ক ওয়েল্ডিং- এ প্রক্রিয়ায় ইলেকট্রোড এবং কার্ষবস্তুর মধ্যে বৈদ্যুতিক আর্ক সৃষ্টির মাধ্যমে তাপ সৃষ্টি করে ধাতুকে পূর্ণ পলিত জবস্থায় এনে জোড়া দেয়ার কাজ সম্পাদিত হয়। এক্ষেত্রে ইলেকট্রোড নিজে গলে জোড়ার স্থানে পরিপুরক ধাতু সরবরাহ করে অথবা আলাদা পরিপুরক ধাতু সরবরাহ করা হয়।
২.২.২ স্পট ওয়েন্ডিং-এর কার্যনীতি- স্পট ওয়েন্ডিং মেশিনে দুটি আমার তৈরী রকার আর্মস বা ইলেকট্রোড থাকে। একটি পজেটিভ (+) টারমিনাল অপরটি নিগেটিভ (-) টারমিনাল। এই দু'টি ইলেক্ট্রোডের মধ্যে একটি চলনশীল আর অন্যটি স্থির (Fixed)। বিদ্যুৎ প্রবাহ এই দু'টি ইলেকট্রোডের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়।
যে অংশটি জোড়া দেওয়া হবে সেই খাছু পাতের দুটি একটির উপর অন্যটি অর্থাৎ ওভারল্যাপিং (Overlapping) অবস্থায় রেখে নিগেটিভ (-) পজিটিভ (+) ইলেকট্রোডের বা রকারের কিদুটিতে রেখে হালকা চাপ দিলে ইলেকট্রোডের দিয়ে বিদ্যুৎ প্রবাহ ৰাধা পেয়ে সামান্য উত্তাপে স্থানটি স্পটেড বা একটি বিন্দুতে আটকে যায়।
বৈদ্যুতিক সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হলে গলিত উপাদানের 'নাপেট' (Nugget) সংযোগস্থলকে শক্ত করে দেয়। তাপ উৎপাদনের জন্য ভাসার ইলেকট্রো উপকরণসমূহের মধ্য দিয়ে তড়িৎ প্রেরণ করে। তাল উৎপাদন নির্ভর করে বৈদ্যুতিক রোধ, ধাতুর ভাগ পরিবাহকত্ব এবং ভড়িৎ প্রবাহ চলার সময়ের উপর।
বিজ্ঞানী জুল (Joule) এর তাপীয় সূত্র অনুসারে, উৎপন্ন তাপ নিচের সমীকরণ দ্বারা প্রকাশ করা হয়-
H=I2xRxT
এখানে, H = উৎপাদিত মোট ভাগ (ভুল)
I = তড়িৎ প্রবাহ (জ্যাম্পিয়ার)
R = তড়িৎ রোধ (ওহম) এবং
T – তড়িৎ প্রবাহের সময় (সেকেন্ড)
অন্যান্য ধাতুর তুলনায় কপারের রোধ কম ও ভাল পরিবাহী ক্ষমতা বেশি হওয়ায় স্পট ওয়েল্ডিং এ একে ইলেকট্রোড হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। ফলে যে ভাগ উৎপন্ন হয়, তা ইলেকট্রোড এ না হয়ে বেশি রোধবিশিষ্ট কার্যবস্তুর মধ্যেই হয়।
• এটি দ্বারা উচ্চ গতিতে ওয়েন্ডিং সম্পন্ন করা যায়।
• এর দ্বারা সহজেই উচ্চ হারে উৎপাদন করা যায়।
• উপযুক্ত বা স্বয়ংক্রিয়ভাবে কাজ করা যায়।
• স্পট ওয়েন্ডিং এ নির্দিষ্ট স্পট ছাড়া অন্য জায়গায় শিট এর কোন ক্ষতি হয় না।
• স্পট ওয়েস্টিং অন্যান্য ওয়েল্ডিং এর চেয়ে দুর্বল ওয়েল্ভিং হয়।
গ্যাস টাংস্টেন আর্ক ওয়েন্ডিং এবং মার্ক ওয়েন্ডিং- একই নীতিতে কাজ করে। টাংস্টেন ইলেকট্রোড এবং ওয়ার্কপিলের মধ্যে ইলেকট্রিক আর্ক সৃষ্টি করে তা উপর করা হয়। পার্ক, ইলেকট্রোড এবং ে নিচ্ছিন্ন গ্যাসের আবরণে ঢাকা থাকে যা সহজে অন্য উপাদানের সাথে মিশ্রিত হয় না ফলে ওয়েঙ্ক এলাকা বায়ুস্থিত অক্সিজেন দ্বারা কলুষিত হওয়া থেকে প্রতিরোধিত হয়। টাংস্টেন ইলে প্রকৃত সম্ম ভবে পুড়ে ধীরে ধীরে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়। প্রয়োজনবোধে অক্সি অ্যাসিটিলিন ওয়েল্ডিং -এর ন্যায় পৃথকভাবে ফিলার ওয়্যার ব্যবহৃত হয়।
২.৩.১ গ্যাস টাংস্টেন পার্ক ওয়েল্ডিং এর ধারনা (Definition of Gas Tungsten Arc Welding): গ্যাস টাংস্টেন জার্ক ওয়ে (GTAW) বা (TIG) টাংস্টেন ইনাট গ্যাস। এটি একটি বিশেষ ধরনের ওয়েজিং পদ্ধতি। এতে বিশেষ ধরনের টর্চে ক্ষীন (Non Consumable) ইলেকট্রোড ব্যবহৃত হয়। তি অক্সিজেনের দূষণ হতে জোড় স্থানকে রক্ষা করার জন্য নিচ্ছিন্ন গ্যাস যেমন: আর্গন, হিলিয়াম ইত্যাদি হয় । প্রয়োজনবোধে আলাদাভাবে ফিলার মেটাল ব্যবহার করা হয়। এই বিশেষ পদ্ধতির ওয়েল্ডিং ই গ্যাস টাংস্টেন আর্ক।
২.৩.২ গ্যাস টাংস্টেন আর্ক ওয়েল্ডিং এর বৈশিষ্ট্যসমূহ
• ওয়েল্ড মেটালের পুর্ণতা উচ্চমান সম্পন্ন
• কোন স্প্যাটার না।।
• স্লাগ সৃষ্টি হয় না।
• ধোঁয়া উৎপন্ন হয় না।
যে সব ধাতু অন্যান্য পদ্ধতিতে ওয়েল্ডিং করা সুবিধাজনক নয় সে ক্ষেত্রে গ্যাস টাংষ্টেন আর্ক ওয়েল্ডিং সুবিধাজনক।
২.৩.৩ গ্যাস টাংস্টেন আর্ক ওয়েল্ডিংয়ের সুবিধা ও অসুবিধাসমূহ (Advantages and Disadvantages of GasTungsten Arc Welding)
১) এ পদ্ধতিতে মূল ধাতুর গুণাগুণ অক্ষুন্ন থাকে।
২) অ্যালুমিনিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, কপার, নিকেল, স্টেইনলেস স্টিল, মাইল্ড স্টিলসহ প্রায় সব শংকর ধাতু ওয়েল্ডিং করা যায়।
৩) জোড়া স্থান মসৃণ ও সমতল পাওয়া যায়।
৪) কোনো প্রকার স্প্যাটার (Spatier) বা স্লাগ জাতীয় ত্রুটি থাকে না।
৫) ছিদ্রময়তা বা ধাতব বিকৃতি হয়না।
৬) অধিক দ্রুত ওয়েল্ডিং করা যায়।
৭) হস্তচালিত/স্বয়ংক্রিয় উভয়ভাবেই কাজ করা যায়।
৮) অধিকাংশ ক্ষেত্রে ফিলার রড ছাড়া আবার প্রয়োজন ফিলার রড ব্যবহার করে কাজ করা যায়।
১০) খুবই পাতলা সেকশনে ওয়েল্ডিং উপযোগী ।
১) ওয়েল্ডিং সরঞ্জামাদি জটিল থাকায় স্থানান্তরযোগ্যতা কম।
২) সরঞ্জামাদি ব্যয়বহুল এবং বাহিরের কাজের জন্য উপযোগী কম।
৩) কারেন্ট, ভোল্টেজ, ওয়েল্ডের গতি ও সঠিক ইলেকট্রোড নির্বাচন জটিল বিষয় তবে এ গুলো সঠিক নির্বাচন না হলে ওয়েল্ড দুর্বল হবে।
৪) ৬ মিমি. এর অধিক পুরুত্বের পাতের জন্য ব্যবহার করা হয় না।
৫) দক্ষ ওয়েল্ডার প্রয়োজন।
৬) অপারেটরের অধিক নিরাপত্তা প্রয়োজন হয়।
৭) অতিবেগুনি রশ্মি ওয়েল্ডারের জন্য ক্ষতিকর।
গ্যাস মেটাল আর্ক ওয়েন্ডিং, আর্ক ওয়েল্ডিং এর মতো একই নীতিতে কাজ করে। এটি H=KIRT এ মূল নীতিতে কাজ করে। এখানে, বৈদ্যুতিক চাপ কমিয়ে বৈদ্যুতিক প্রবাহ বৃদ্ধি করা হয় ফলে অধিক পরিমান তাপ সৃষ্টি হয়। এতে ফ্লাক্স এর আবরণবিহীন ফিলার মেটালের একটি তারের কুলী (Spool) থেকে যথাযথ হোল্ডারের মধ্য দিয়ে অবিরত ফিলার মেটাল সরবরাহ করা হয়। উক্ত ফিলার মেটাল ইলেকট্রোড হিসাবে কাজ করে, যা বিদ্যুৎ প্রবাহিত করার মাধ্যমে তারের প্রান্ত ও কার্যবস্তুর মধ্যে আর্ক উৎপন্ন করে প্রয়োজনীয় তাপ সৃষ্টি করে এবং পূর্ণগলিত অবস্থায় জোড়া স্থানে পরিপুরক ধাতু সরবরাহ করে। হোল্ডারের নজলের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় নিস্ক্রিয় গ্যাস সরবরাহেরর মাধ্যমে আর্ক ও ওয়েল্ড এলাকা আচ্ছাদিত করে রাখে। এ কার্যাদি অর্ধ স্বয়ংক্রিয় (Semi - Automatic) বা স্বয়ংক্রিয় (Automatic) পদ্ধতিতে সম্পন্ন হয়।
২.৪.১ গ্যাস মেটাল আর্ক ওয়েল্ডিং যে আর্ক ওয়েন্ডিং পদ্ধতিতে অবিরতভাবে সরবরাহকৃত ধাতব ক্ষয়িষ্ণু ইলেকট্রোড ও কার্যবস্তুর মধ্যে উৎপন্ন আর্কের মাধ্যমে উত্তপ্ত করে, আর্ক, ইলেকট্রোড ও গলিত ধাতুকে নিষ্ক্রিয় গ্যাস (Inert Gas) যেমন- আর্গন, হিলিয়ন, কার্বন-ডাই-অক্সাইড অথবা এদের মিশ্রিত গ্যাস দ্বারা আচ্ছাদিত রেখে কোন ফ্লাক্স (Flux) ব্যবহার না করে ওয়েন্ডিং করা হয়, তাকে গ্যাস মেটাল আর্ক ওয়েল্ডিং বা মেটাল ইনার্ট গ্যাস ওয়েন্ডিং (মি) বলা হয়। গ্যাস মেটাল আর্ক ওয়েন্ডিং প্রক্রিয়ায় প্রায় 7000°C তাপমাত্রায় ওয়েন্ডিং করা হয়।
প্রথমে এটা আগর্ন গ্যাসের আবরণীর সাহায্যে কেবলমাত্র অ্যালুমিনিয়াম ওয়েল্ডিং এর জন্য ব্যবহৃত হয়েছিল। কার্বন-ডাই-অক্সাইড কার্বন ষ্টীলের জন্য অধিকতর সম্ভা শিল্ডিং গ্যাস হিসাবে আবিস্কার না হওয়া পর্যন্ত আর্গনের অধিক ক্রয়মূল্যের দরুন এর ব্যবহার সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু উন্মুক্ত স্থান ছাড়া আবদ্ধ স্থানে কার্বন-ডাই-অক্সাইড (CO2) গ্যাস দ্বারা ওয়েল্ডিং করতে গ্যাস এক্সট্র্যাক্টর (Gas Extractor) ব্যবহার করা উচিত নতুবা ওজনের কারণে CO কার্বন মনোঅক্সাইড গ্যাস ৭% থেকে ১২% (শতকরা ৭ থেকে ১২ ভাগ) নীচে বসে থাকে, এবং পরে আস্তে আস্তে উপরের দিকে উঠার সময় শ্বাস প্রশ্বাসে মানুষের শরীরের ঢুকে কর্মরত Welder এর মৃত্যু ঘটা অস্বাভাবিক নয়। উন্মুক্ত স্থানে কার্বন-ডাই-অক্সাইড (CO2) গ্যাস ব্যবহার ব্যয় সংকোচন করে বলে এর ব্যবহার এখন পর্যন্ত নিষিদ্ধ করা হয়নি।
গ্যাস মেটাল আর্ক ওয়েন্ডিং প্রক্রিয়া অন্যান্য ওয়েন্ডিং প্রক্রিয়ার চেয়ে অধিক দ্রুততর।
গভীর অনুপ্রবেশ বিশিষ্ট ওয়েন্ডিং জোড়া পাওয়া যায়। পাতলা এবং পুরু উভয় প্রকার কার্যবস্তুকে সফলভাবে ওয়েল্ডিং করা যায়।
• সহজেই যান্ত্রিকভাবে পরিচালিত করা যায়।
গ্যাস মেটাল আর্ক ওয়েল্ডিং প্রক্রিয়ায় ওয়েস্তে ধাতু অবক্ষেপ (Deposit) হার অধিক পাওয়া
সম্ভব।
• সকল পজিশনে নিখুত ও অধিক দ্রুতিতে অবিরত ওয়েল্ডিং করা যায়।
ফ্রান্স ব্যবহারের প্রয়োজন হয় না।
অপারেটরের দক্ষতা কম হলেও চলে।
কার্বন ডাই-অক্সাইড ওয়েন্ডিংয়ে খরচ কম হ
• গভীর অনুপ্রবেশযুক্ত (Good Penetration) উন্নত মানের ওয়েল্ডিং পাওয়া যায়।
অন্যান্য ওয়েন্ডিং প্রক্রিয়ার তুলনায় মিল ওয়েন্ডিং পদ্ধতি অনেকটা জটিল। মেকানিজম বা যন্ত্রপাতিসমূহের খরচ বেশি।
• আর্কের স্থায়িত্ব কম।
যে কোন একটি দাহ্য গ্যাস ও অক্সিজেনের জ্বলন্ত মিশ্রণ হতে সরবরাহকৃত উত্তাপের মাধ্যমে যে ওয়েন্ডিং করা হয় তাকে গ্যাস ওয়েল্ডিং বলে। এই পদ্ধতিতে ওয়েল্ডিং টর্চের মাধ্যমে অক্সিজেন ও এসিটিলিন বা অন্য যে কোন দাহ্য গ্যাস প্রয়োজনীয় অনুপাতে মিশ্রিত করে নজেলের মাধ্যমে উচ্চ বেগে প্রবাহিত করে স্পার্ক লাইটারের সাহায্যে জ্বালিয়ে শিখা তৈরি করা হয়, উক্ত শিখার উত্তাপে ওয়েষ্টিং করা হয়। গ্যাস ওয়েল্ডিং এ অক্সিজেন ও এসিটিলিন গ্যাস সবচাইতে বেশি ব্যবহৃত হয় ।
যে সকল গ্যাস অক্সিজেন সহযোগে প্রথমিত হয়ে প্রচুর পরিমান তাপ ও আলোক শক্তি উৎপন্ন করে সেই সকল পাসিকে দাহ্য গ্যাস বলে। দাহ্য গ্যাস সমূহের মান এদের ক্যালরিফিক ভ্যালুর উপর নির্ভর করে। সাধারনত প্রজ্জ্বলন কালে দূর্গন্ধ ও ধোঁয়া তৈরী করে না এবং দামে সস্তা এমন গ্যাস সমূহকে গ্যাস ওয়েডিং এর জন্য উত্তম মনেকরা হয়। নিম্নে কয়েকটি দাহ্য গ্যাসের নাম উল্লেখ করা হল।
এসিটিলিন (Acetylene), হাইড্রোজেন (Hydrogen), মিথেন (Methane), ইথেন (Ethen), প্রোপেন (Propane), বিউটেন (Butane), LPG ও বেনজন (Benzol) ইত্যাদি।
২.৫.২ সাহায্যকারী গ্যাস
যে সকল গ্যাস প্রজ্জ্বলনের সময় নিজে জ্বলে না কিন্তু অন্যকে জ্বলতে সাহায্য করে সেই সকল গ্যাসকে সাহায্যকারী গ্যাস বলা হয়। গ্যাস ওয়েল্ডিং এর ক্ষেত্রে একমাত্র সাহায্যকারী গ্যাস অক্সিজেন গ্যাস। মুক্ত অবস্থায় অক্সিজেন রঙ, গন্ধ ও স্বাদহীন একটি গ্যাস। অক্সিজেনের অন্যতম একটি বৈশিষ্ট্য হল সে নিজে জ্বলে না কিন্তু অন্যকে জ্বলতে সাহায্য করে। অক্সিজেনের এই বৈশিষ্ট্যের কারণে একে সাহায্যকারী গ্যাস হিসেবে নামকরণ করা হয়েছে।
২.৫.৩ গ্যাস ওয়েল্ডিং ফ্রেম
অক্সিজেন ও এসিটিলিন গ্যাসের জালনের ফলে যে ফ্লেম তৈরি হয় সেটাই অক্সি এসিটিলিন ফ্লেম। অক্সি- এসিটিলিন ফ্রেম তিন প্রকার, যথা-
ক) কার্বুরাইজিং ফ্লেম (Carburizing Flame ) যে অক্সি-এসিটিলিন ফ্লেমে অক্সিজেনের চেয়ে এসিটিলিনের পরিমাণ বেশি থাকে তাকে কার্বুরাইজিং ফ্লেম বলে। ইনার হোয়াইট কোন ও আউটার ইনভেলপ এর মধ্যবর্তী পালক আকৃতির ফ্লেম দেখে কার্বুরাইজিং ফ্লেম চেনা যায়। এই ফ্লেমে অক্সিজেন ও এসিটিলিন গ্যাসের অনুপাত ০.৯:১। কার্বুরাইজিং ফ্রেমের আরেক নাম রিডিউসিং ফ্লেম। কার্বুরাইজিং ফ্লেমের সর্বাধিক তাপমাত্রা প্রায় ২৭০০-২৯০০ ডিগ্রী সে.। এটি প্রজ্জ্বলন কালে পত পত শব্দ করে। ধাতব পৃষ্ঠ হাড়েনিং করার কাজে এটির ব্যবহার ব্যাপক। ব্রেজিং, এলুমিনিয়াম ও মোনেল মেটাল ওয়েল্ডিং-এ এটি ভাল ফল দেয়।
খ) নিউট্রাল ফ্রেম (Neutral Flame ) যে অক্সি-এসিটিলিন ফ্লেমে অক্সিজেন ও এসিটিলিনের পরিমাণ সমান থাকে, তাকে নিউট্রাল ফ্লেম বলে। এই ফ্লেমের ইনার হোয়াইট কোন ছোট ও তীক্ষ্ণ শিখার রং হালকা বেগুনী হয়। পরিমাণ সমান হওয়ায় কোন গ্যাস এককভাবে কোন ধাতুর উপর প্রভাব বিস্তার করতে পারে না। গ্যাস ওয়েল্ডিং কাজে নিউট্রাল ফ্লেম সর্বাধিক ব্যবহৃত হয়। নিউট্রাল ফ্লেমের সর্বাধিক তাপমাত্রা ৩১০০-৩২৫০ ডিগ্রী সে.। গ্যাস ওয়েল্ডিং-এ সময় এটি মৃদু শব্দ সহকারে জ্বলে। নিউট্রাল ফ্লেম দিয়ে সকল ধরনের ধাতু ওয়েল্ডি করা যায়।
গ) অক্সিডাইজিং ফ্লেম (Oxidizing Flame )
যে অক্সি-এসিটিলিন ফ্রেমে এসিটিলিনের চেয়ে অক্সিজেনের পরিমাণ বেশী থাকে তাকে অক্সিডাইজিং ফ্লেম বলে। স্টীলের ক্ষেত্রে এটি খুব বেশি ব্যবহৃিত হয়না। এই ফ্রেমের ইনার হোয়াইট কোন খুব ছোট ও তীক্ষ্ণ শিখার রং হালকা বেগুনী হয়। এই ফ্লেমে অক্সিজেন ও এসিটিলিন গ্যাসের অনুপাত ১.৫:১ এবং ফ্রেমের সর্বাধিক তাপমাত্রা ৩৩০০-৩৪৮০ ডিগ্রী সে.। গ্যাস ওয়েল্ডিং-এ সময় এটি হিস হিস ফ্লেম পিতল ও কাশা ওয়েল্ডিং এর ক্ষেত্রে বেশি ব্যবহৃত হয়। শব্দ সহকারে জ্বলে। অক্সিডাইজিং।
ওয়েল্ডিং এর কাজ শিখতে এসে একজন শিক্ষানবিস বা নবীন ওয়েন্ডারকে কতিপয় শব্দ বার বার শুনতে হয়। উক্ত শব্দগুলির পরিভাষা জানা এবং বুঝতে পারা তার জন্য অতি প্রয়োজন। এ দিক বিবেচনা করে নিচে কতিপয় বহুল প্রচলিত ওয়েন্ডিং পরিভাষা সম্পর্কে লিখা হয়।
বেস মেটাল বা প্যারেন্ট মেটাল (Base Metal):
যে ধাতুকে ওয়েন্ডিং করা হচ্ছে তাকে বেস মেটাল বা প্যারেন্ট মেটাল বলে ।
ফিলার মেটাল (Filler Metal) : পরিপুরক ধাতু হিসেবে ওয়েল্ডিং এর সময় জোড়া স্থানে এটা প্রয়োগ করা হয়।
রান (Run ) : ইলেকট্রোড বা রোপাইপকে একবার মূলধাতুর উপর দিয়ে টেনে নেয়ার পর, বেসমেটালের উপর যে ধাতু জমা হয় তাকে রান বলে। একে অনেক সময় বিডও বলা হয়।
রুট (Route): ওয়েল্ডিং করার জন্য প্রস্তুতকৃত ধাতু খন্ডদ্বয়ের মুখোমুখি মিলন স্থলকে রুট বলে।
ফিলেট ওয়েল্ড (Fillet Weld): ত্রিকোণাকৃতি প্রস্থচ্ছেদ বিশিষ্ট ওয়েল্ডিংকে ফিলেট বলে।
লেগলেংথ (Leg Length): ফিলেটের রুট হতে টো পর্যন্ত দূরত্ব।
ছোট থিকনেস (Throat Thickness) : রুট হতে ‘টো’দ্বয়ের মধ্যবর্তী বিন্দুদ্বয়ের লম্ব দূরত্ব।
ট্যাক ওয়েল্ড (Tack Weld): যে ধাতব খন্ড দুটির উপর ওয়েন্ডিং করা হবে সে খন্ড দুটি যেন তাপের প্রভাবে বা অন্য কোনো বস্তুর ধাক্কা লেগে সরে যেতে বা বাঁকা হতে না পারে সেজন্য পাত দু'টিতে ছোট ছোট রানের ওয়েল্ডিং করা হয় তাকে ট্যাক ওয়েল্ডিং বলে।
আর্ক (Arc): ইলেকট্রোড এবং জবের কারেন্ট বাহিত ধাতব বাষ্পের একটি স্রোত। লং আর্ক (Long Arc): আর্ক এর দৈর্ঘ্য বেশি হলে তাকে লং আর্ক বলে। শর্ট আর্ক (Short Arc): যে আর্কের দৈর্ঘ্য কম তাকে শর্ট আর্ক বলে, এটি সাধারণত ইলেকট্রোডের কোরের ব্যাসের সমান হয়।
হিট অ্যাফেকটেড জোন (Heat Affected Zone)
ওয়েন্ডিং বা কাটিং কাজের সময় তাপের প্রভাবে জবের যে অংশটুকু ধাতুর ভিতরের গঠনের পরিবর্তন হয় তাকে হিট অ্যাফেকটেড জোন বলে।
ফিউশান জোন (Fusion Zone): মূল ধাতুর যে অংশটুকু উত্তাপের প্রভাবে গলে ওয়েল্ড মেটালের সাথে
মিশে যায় সে অংশটুকুকে ফিউশান জোন বলে ।
ফ্রান্স (Flux): এটা এক প্রকার রাসায়নিক যৌগিক পদার্থ যা ওয়েল্ডিং, সোল্ডারিং বা ব্রেজিং এর সময় প্রয়োগ করা হয়। এটা জোড়াস্থানে বায়ুর অক্সিজেনের সাথে ক্রিয়া করে অক্সাইড তৈরিতে বাধা দেয় ও জোড়াকে শক্ত করে দ্রুত গলন কাজ সমাধা করে।
প্রিহিটিং (Pre Heating): ওয়েল্ডিং করার পূর্বে মূল ধাতুকে তাপ প্রয়োগ করাকে প্রিহিটিং বলে।
পোষ্ট হিটিং (Post Heating): ওয়েল্ডিং করার পর জবে তাপ প্রয়োগ করাকে পোষ্ট হিটিং বলে।
যখন ধাতবপাতের বা জবের গুরুত্ববৃদ্ধি পায় তখন উহার পার্শ্বদেশ প্রস্তুত না করলে ভাল পেনিষ্ট্রেশন হয় না ১.৫ মিলিমিটার হতে ৬ মিলিমিটার পুরুত্বের ধাতুকে ওয়েল্ডিং করতে জোড়ার পার্শ্বদেশ প্রস্তুত না করলেও কাজ চলতে পারে, তবে ৬ মিলিমিটার গুরুত্বের বেশী সকল জবের পার্শ্বদেশ অবশ্যই প্রস্তুত করতে হবে। উপযুক্তভাবে পার্শ্বদেশ প্রস্তুত না করলে জোড়ার শক্তি সন্তোষজনক হবে না এবং জোড়া বেঁকে যাওয়ার সম্ভাবনাও থাকবে।
কোনো জোড়ের পার্শ্বদেশ প্রযুক্তির পূর্বে বিবেচনা করতে হবে তা কোন পদার্থের তৈরি, কি প্রকারের জোড়া হবে কোন পদ্ধতির ওয়েল্ডিং করা হবে ইত্যাদি।
জোড়ার পার্শ্বদেশ প্রস্তুতির পদ্ধতিগুলি হল:
• গ্রাইন্ডিং করে (Grinding )
ফাইলিং করে (Filing)
• চিপিং করে (Chipping)
• আর্ক কাটিং প্রক্রিয়ায় (Are Cutting)
গ্যাস কাটিং প্রক্রিয়া (Gas Cutting)
প্লাজমা কাটিং (Plasma Cutting)
শিয়ার মেশিনে কেটে (Shearing)
কখনও কখনও জোড়ার পার্শ্বদেশ প্রস্তুতির কাজ একাধিক পদ্ধতির সমন্বয়ে করা হয়। যেমন চিপিং করার পর গ্রাইন্ডিং করে, অথবা চিপিং করার পর ফাইলিং করে।
(ক) ছোট আকৃতির জবগুলিকে হাতে ধরে গ্রাইন্ডিং মেশিনে গ্রাইন্ডিং করে নিলেই চলে। কিন্তু বড় জৰ অৰ্থাৎ যে জবকে নাড়ানো, চড়ানো অসুবিধাজনক সেখানে পোর্টেবল হ্যান্ড গ্রাইন্ডার ব্যবহার করে কাজ করতে হয়।
(খ) ফাইলিং করে জোড়ার পার্শ্বদেশ প্রস্তুতিতে ইহা অত্যন্ত উপযুক্ত পদ্ধতি। যে ক্ষৰকে ভাইসে ৰাখা সম্ভ সেটিকে ভাইসে ৰেখে ফাইল দিয়ে ধাতুর করে পার্শ্বদেশ প্রস্তুত করা হয়।
কিন্তু ভাইস রাখা না গেলে জবকে সুবিধাজনক অবস্থায় নিয়ে ফাইলিং করে পার্শ্বদেশ প্রভুত করা যায়।
(গ) চিপিং করে মোটা জব অর্থাৎ বেশ খানিকটা ধাতু যেখানে। কেটে জোড়ার পার্শ্বদেশ প্রস্তুত করতে হবে সেখানে চিপিং করে পার্শ্বদেশ প্রস্তুত করতে হয়। এই পদ্ধতিতে কোন চিজেলের মাথায় হাতুড়ী দিয়ে আঘাত করে ধাতু কর্তন করতে হৰে হয়। কর্তনের পূর্বে অবশ্যই যে স্থানের মেটাল কাটতে হবে সে স্থানে ভালভাবে মার্কিং করে নিতে হবে। চিপিং করার পর অধিকাংশ ক্ষেত্রে গ্রাইন্ডিং অথবা ফাইলিং করার প্রয়োজন হয়।
(ঘ) আর্ক কাটিং পদ্ধতি
(১) মেটাল আর্ক কাটিং পদ্ধতি
আর্ক ওয়েল্ডিং এ যেমন ধাতু জোড়া দেওয়া হয় তেমনি কাটাও যায়। এই পদ্ধতিতে কাটার সময় কারেন্টের পরিমাণ ওয়েন্ডিং করার সময়ের চেয়ে বেশী লাগে এবং কাটার কাজে ইলেকট্রোড ব্যবহৃত হয় তার ব্যাস ৪ মিলিমিটার এর কম হওয়া উচিত নয়। ওয়েল্ডিং পদ্ধতির মত আর্ক কাটিং পদ্ধতিতেও মোটা ধাতু কাটতে বেশী কারেন্ট ও বেশী ব্যাসের ইলেকট্রোন্ড এবং চিকন বা অল্প গুরুত্বের ধাতু কাটতে কম কারেন্ট ও খানিকটা চিকন ইলেকট্রোড ব্যবহার করতে হয়।
(২) অগ্নি আর্ক কাটিং পদ্ধতি
যে সমস্ত জবের পার্শ্বদেশ সাধারণ মেটালিক আর্ক কাটিং অথবা গ্যাস কাটিং পদ্ধতিতে কাটা অসুবিধাজনক যেমন হাই ক্রোমিয়াম ভীল, ক্রোমিয়াম নিকেল ষ্টীল, স্টেইনলেস ষ্টীল, ব্রোঞ্জ, কপার, এলুমিনিয়াম, ইত্যাদি সেই সকল ধাতুকে সুবিধাজনকভাবে এই পদ্ধতিতে কাটা যায়। এই পদ্ধতিতে ব্যবহৃত ইলেকট্রোভটির মাঝে একটি ছিদ্র থাকে ঐ ছিদ্র পথে ধাতু কাটার জন্য প্রয়োজনীয় অক্সিজেন সরবরাহ করা হয়। ছিদ্র বিশিষ্ট ইলেকট্রোভটি আর্ক সৃষ্টি করে এবং আর্কের উত্তাপে ধাতু গলে। হলো ইলেকট্রোডের মাঝ দিয়ে যে অক্সিজেন সরবরাহ করা হয় সেই অক্সিজেনের চাপে ধাতু কাটার কাজ সম্পন্ন হয়।
(ঙ) স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে গ্যাস কাটিং প্রক্রিয়া:
স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে অক্সিজেন এবং অ্যাসিটিলিন গ্রাসের শিখার সাহায্যে ধাতুকে উত্তপ্ত করে তখন অর্ধগলিত ধাতু অক্সিজেনের সাথে বিক্রিয়া করে দ্রুত অক্সাইড তৈরি করে, অক্সাইডের গলন তাপমাত্র মূলধাতুর চেয়ে কম লাগে তাই ঐ সময় উচ্চচাপে বিশুদ্ধ অক্সিজেন সরবরাহ করলে অক্সাইড যুক্ত ধাতু ছিটকে পড়ে এবং ধাতু কর্তন সম্পন্ন হয়। এই পদ্ধতিতে জবের পার্শ্বদেশ প্রভুত করতে সময় কম লাগে।
(চ) প্লাজমা কাটিং
সাধারণত পদার্থ যখন ঠান্ডা থাকে তখন কঠিন, এটিকে উত্তপ্ত করলে তরুল, এটিকে আরো উত্তপ্ত করলে এটি গ্যাসীয়/বায়বীয় এবং এটিকে যখন ভীষন ভাবে উত্তপ্ত করা হয় তখন এটি প্লাজমাতে পরিণত হয়। তাপমাত্রা বৃদ্ধি পদার্থের অণু, পরমাণু সমূহকে পরস্পর হতে বিচ্ছিন্ন হতে বা দূরে সরে যেতে চাপ দেয়। আর এই ভাবেই অত্যধিক ভাপ গ্যাসকে প্লাজমাতে রূপান্তর করে।
প্লাজমা আর্ক কাটিং এর সময়, প্লাজমা টর্চের ভেতরে একটি টাংস্টেন ইলেকট্রোডের মাধ্যমে প্রচন্ড উত্ত একটি আর্ক সৃষ্টি হয়। এই উষপ্ত আর্কের সংস্পর্শে উচ্চ চাপে বাভাসকে নজেলের মাধ্যমে প্রবাহিত করা হলে এটি উচ্চ তাপের সংস্পর্শে এসে আয়োনাইজড হয়ে প্লাজমাতে রূপ নেয়। আর এই উত্তপ্ত প্লাজমা একটি সংকীর্ণ পথ/নজেল দিয়ে ধাতু কাটার স্থানে প্রবাহিত করা হয়। এই উচ্চ ভাগে (প্রায় ২০০০০ডিগ্রী সে:) ও চাপযুক্ত আয়োনাইজড গ্যাস বা প্লাজমা অতি সহজেই ধাতু কর্তন করতে সক্ষম হয়। প্লাজমা আর্ক কাটিং এ টর্চ টিপকে ঠান্ডা রাখার জন্য ওয়াটার কুলির ব্যবস্থা রাখা হয়।
(ছ) শিয়ার মেশিনে কেটে
অল্প গুরুত্বের ধাতুকে ব্রেঞ্চ শিয়ার মেশিনে কেটেও জোড়া স্থানের পার্শ্বদেশ প্রস্তুত করা যায়,
তবে ওয়েল্ডিং ওয়ার্কশপে জোড়া পার্শ্বদেশ প্রস্তুতির জন্য চিপিং ফাইলিং এবং গ্রাইন্ডিং পদ্ধতি খুব বেশী ব্যবহৃত করা হয়। জোড়ার পার্শ্বদেশ প্রস্তুতির চিত্র নিচে দেখান হল । অ্যাঙ্গেল অৰ বিভেল (Angle of bevel)
V- Preparation for SMAW on MS Plates 30° to 35°
U- Preparation for SMAW on MS Plates 80 to 12°
V- Single bevel-50" J-Preparation 10° to 20°
আমেরিকান সোসাইটি অব মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং (ASME) এবং আমেরিকান ওয়েংি সোসাইটি (AWS) ওয়েল্ডিং জোড়াকে ০৫ (পাঁচ) ভাগে বিভক্ত করেন। যেমন:-
আমেরিকান সোসাইটি অব মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং (ASME) এবং আমেরিকান ওয়েন্ডিং সোসাইটি (AWS) ওয়েল্ডিং পজিশনগুলোকে সংখ্যা ও বর্ণ একত্রিত করে প্রকাশ করে, যেমন- 1F, 1G, 2F, 2G ইত্যাদি। এখানে, সংখ্যা দিয়ে ওয়েন্ডিং পজিশন এবং বর্ণ দিয়ে ওরেন্স এর আকৃতি, প্রকৃতি এবং জোড়ার প্রস্তুতির ধরনকে নির্দেশ করে। যেমন-
ফিলেট ওয়েল্ড সাধারণত চারটি অবস্থানে ওয়েল্ডিং করা যায়। যথা-
1F = সমতল অবস্থানে জোড়া দেওয়া (Flat position )
2F = অনুভূমিক অবস্থানে জোড়া দেওয়া (Horizontal position) 3F = উলম্ব অবস্থানে জোড়া দেওয়া (Vertical position)
4F = ওভার হেড অবস্থানে (Overhead Position) জোড়া দেওয়া অর্থাৎ জবের তলদেশে জোড়া দেওয়া
অনুরূপ ভাবে, খুঁত বা বিভেল আকৃতির ওয়েভ চারটি অবস্থানে ওয়েল্ডিং করা যায়। যথা-
1G = সমতল অবস্থানে জোড়া দেওয়া (Flat position)
2G = আনুভূমিক অবস্থানে জোড়া দেওয়া (Horizontal position) 3G = উলম্ব অবস্থানে জোড়া দেওয়া (Vertical position)
4G = ওভার হেড অবস্থানে জোড়া দেওয়া অর্থাৎ জবের তলদেশে জোড়া দেওয়া (Overhead position)
চারটি পজিশনে গুড ও ফিলেট ওয়েল্ড পাশাপাশি রেখে বিভিন্ন ধরনের ওয়েল্ডিং জোড়া দেখানো হলো-
পাইপ এর ক্ষেত্রে নিখুঁত জোড়ার গুরুত্ব সর্বাধিক। কারণ, পাইপের মাধ্যমে জ্বালানী গ্যাস, জ্বালানী তেল ও রাসায়নিক পদার্থ উচ্চ চাপে পরিবহন বা সঞ্চালন করা হয়। তাই এক্ষেত্রে অধিক নিশ্চয়তা ও নিরাপত্তার জন্য ত্রুটিমুক্ত ওয়েল্ডিং জোড়া প্রয়োজন। এক্ষেত্রে পাইপের জোড়া ওয়েন্ডিং করতে ওয়েল্ডারের অধিক দক্ষতার প্রয়োজন হয়। তবে পাইপের ওয়েল্ডিং পজিশন জেনে ওয়েন্ডিং অনুশীলন করলে দ্রুত দক্ষতা অর্জন সম্ভব। ৩জি ও ৪জি অবস্থানে পাইপ ওয়েল্ডিং করার প্রয়োজন পড়ে না। সাধারণত পাইপ ওয়েল্ডিং এ ভ ওয়েষ্ট হয় তবে বিশেষ ক্ষেত্রে ফিলেট ওয়েল্ড করার দরকার পড়ে।
• ১জি অনুভূমিক পাইপের অবস্থান (Horzontal Pipe Position) : যখন পাইপটি ধারাবাহিকভাবে ঘুরানো হয় যাতে পাইপের অবস্থান অনুভূমিক থাকে এবং ০ থেকে ১৫° মধ্যে থেকে ওয়েল্ডিং সম্পাদিত হয়।
• ২জি উলম্ব পাইপের অবস্থান (Vertical pipe position): পাইপটি উপর অবস্থানে থাকে, ওয়েল্ডারকে পাইপের চারিদিকে ঘুরে অনুভূমিক অবস্থানে থেকে ওরেস্টিং করতে যায়।
• ৫জি- অনুভূমিক পাইপের অবস্থান (পাইল ফিক্সড) (Horizontal pipe position, fixed): পাইল অনুহুমিকের সাথে সমান্তরাল থাকে এবং ওয়েন্ডারকে পাইপের চারিদিকে অবস্থানে থেকে ওয়েন্ডিং করতে হয় ।
• ৬জি- ৪৫০ ঢালু অবস্থানে পাইপ (পাইপ ফিক্সড) ( 45° Inclined pipe position, fixed): 880 ঢালু অবস্থানে পাইপ ফিক্সড রেখে ওয়েন্ডিং করতে হয়।
• ৬ জি আর - ৪৫° ঢালু অবস্থানে পাইলে রিং ওয়েল্ডিং ( 45° Inclined pipe position with a Restriction Ring (fixed): ৪৫* ঢালু অবস্থানে পাইল ফিক্সড রেখে পাইপে বিভেল করে রিং স্থাপন করে ওয়েন্ডিং করতে হয়।
আরও দেখুন...