ব্যাংকের উদ্দেশ্যাবলি

নবম-দশম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং - ব্যাংকিং ব্যবসা ও তার ধরন | NCTB BOOK

ব্যাংকের সাথে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন গোত্রের প্রেক্ষাপটে ব্যাংকের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন। আমরা এখানে ব্যাংকের সাথে সংশ্লিষ্ট তিনটি গোত্রের প্রেক্ষাপটে ব্যাংকের উদ্দেশ্য আলোচনা করব।

ক) ব্যাংকের মালিক ও ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের প্রেক্ষাপটে ব্যাংকের উদ্দেশ্যাবলি

খ) সরকার এবং রাষ্ট্রীয় পক্ষের প্রেক্ষাপটে ব্যাংকের উদ্দেশ্যাবলি

গ) ব্যাংক গ্রাহকদের প্রেক্ষাপটে ব্যাংকের উদ্দেশ্যাবলি

ক) ব্যাংকের মালিক ও ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের প্রেক্ষাপটে ব্যাংকের উদ্দেশ্যাবলি

(১) তহবিলের বিনিয়োগ ও মুনাফা অর্জন : ব্যাংকের মালিক, অংশীদার ও শেয়ার হোল্ডারদের সঞ্চিত অর্থের সঠিক বিনিয়োগ করা ব্যাংকের একটি উদ্দেশ্য। এই উদ্দেশ্য যথাযথ পালন করতে ব্যাংকের শেয়ারহোল্ডারদের কাঙ্ক্ষিত হারে মুনাফা অর্জন করা প্রয়োজন। প্রতিটি বিনিয়োগের একটি সুযোগ ব্যয় আছে, অন্তত সেই হারে মুনাফা অর্জন না করতে পারলে এই উদ্দেশ্য ব্যাহত হয়।

২) সুনাম অর্জন : যথাযথ ব্যাংকিং করে প্রতিষ্ঠানের সুনাম বৃদ্ধি করতে পারলে তাতে করে মালিকপক্ষের সুনাম বৃদ্ধি পায়।

৩) উন্নয়নে অংশগ্রহণ : ব্যাংক বিভিন্ন খাতে অর্থ বিনিয়োগ করে দেশে উৎপাদন এবং জাতীয় আয় বৃদ্ধিতে সচেষ্ট হয়। এতে মালিকপক্ষের বিনিয়োগ সার্থক হয়। গ্রাহককে বিভিন্ন রকম সেবা দান করা ব্যাংকের একটি উদ্দেশ্য।

৪) সামাজিক অবদান : বিভিন্ন রকম সামাজিক কার্মকাণ্ডের মাধ্যমে এবং অর্জিত মুনাফার একটি অংশ সামাজিক উন্নয়নে ও সমাজ গঠনমূলক কাজে ব্যয় করা তাদের একটি উদ্দেশ্য।

খ) সরকার এবং রাষ্ট্রীয় পক্ষের প্রেক্ষাপটে ব্যাংকের উদ্দেশ্যাবলি

১) নোট ও মুদ্রার প্রচলন : নোট ও মুদ্রা প্রচলন করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বাংলাদেশে কেন্দ্রীয় ব্যাংক হিসেবে একমাত্র বাংলাদেশ ব্যাংক টাকা প্রচলন করে। ব্যাংক চেক কখনো বিনিময়ের মাধ্যমে হিসেবে এবং মুদ্রার বিকল্প হিসেবে কাজ করে সরকারের মুদ্রা প্রচলনের কাজটি সহজ করে দেয়।

২) মূলধন গঠন : সমাজের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সঞ্চয়কে ব্যাংক আমানতের মাধ্যমে সংগ্রহ করে তা বড় বড় ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানকে বিনিয়োগের জন্য ঋণ দেয়। দেশে মূলধন গঠনে সাহায্য করা এবং সঞ্চয়ে উদ্বুদ্ধ করা ব্যাংকের একটি প্রধান উদ্দেশ্য।

৩) বিনিয়োগ ও শিল্পায়ন : ব্যাংক যেকোনো কারবারে ঋণ দেবার আগে ওই কারবারের খাতের গুরুত্ব বিবেচনা করে। সরকার নিয়মিতভাবে তার অগ্রাধিকারের খাতগুলো দেশ ও জাতির সামনে তুলে ধরে। ব্যাংক সেই অগ্রাধিকারযুক্ত খাতে অর্থায়ন করে সরকারের সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে অংশগ্রহণ করে ।

৪) মুদ্রাবাজার নিয়ন্ত্রণ : সরকার তথা কেন্দ্রীয় ব্যাংক দেশের দ্রব্যমূল্য বা মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য সর্বদা মুদ্রাবাজার নিয়ন্ত্রণ করে। এই কাজটি কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিচ্ছিন্নভাবে একা একা সাফল্যের সাথে সম্পাদন করতে পারে না। দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংক এক্ষেত্রে মুদ্রাবাজার নিয়ন্ত্রণে সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংককে সাহায্য করে।

৫) কর্মসংস্থান : দেশের বেকারত্ব দূরীকরণের জন্য সরকারকে সাহায্য করা ব্যাংক ব্যবস্থার একটি কাজ। ব্যাংকগুলো সেসব কারবারকে অর্থায়ন করতে পারে, যেগুলো অধিকহারে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে। যেমন: মূলধননির্ভর প্রযুক্তির বদলে শ্রমনির্ভর প্রযুক্তিতে অর্থায়ন করে ব্যাংক অধিকতর কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে সরকারকে সাহায্য করে।

গ) ব্যাংক গ্রাহকদের প্রেক্ষাপটে ব্যাংকের উদ্দেশ্যাবলি

১) আমানত : গ্রাহকদের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সঞ্চয় সংগ্রহ করে ব্যাংকগুলো বিভিন্ন ধরনের আমানত সৃষ্টি করে। চলতি আমানতে সুদ নেই, কিন্তু অনেক ধরনের সেবা পাওয়া যায়। সঞ্চয়ী আমানতে প্রায় ৫% থেকে ৭% হারে সুদ পাওয়া যায় আবার যখন প্রয়োজন টাকা তুলে ফেলা যায়। মেয়াদি আমানতের সুদের হার প্রায় ১২% থেকে ১৩% তবে সাধারণত মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার আগে টাকা তোলা তেমন লাভজনক হয় না। মেয়াদি আমানত নিম্নে ১ মাস এবং ঊর্ধ্বে যেকোনো সময়ব্যাপী হতে পারে। আমানতকারীকে তার সুবিধামতো আমানত সৃষ্টিতে সাহায্য করা ব্যাংকের একটি মৌলিক উদ্দেশ্য।

২) নিরাপত্তা : গ্রাহকের অর্থ ও মূল্যবান সামগ্রীর নিরাপত্তা প্রদান করা ব্যাংকের একটি উদ্দেশ্য। আমাদের সমাজে নিজের কাছে বা বাসায় অনেক অর্থ, সোনা-গহনা বা অন্যান্য মূলবান সামগ্রী রাখা নিরাপদ নয়। এসব সামগ্রী নিরাপদে গচ্ছিত রাখা ব্যাংকের একটি উদ্দেশ্য।

৩) উপদেষ্টা ও পরামর্শদাতা : ব্যাংক যখন কোনো প্রকল্পে অর্থ লগ্নি করে, তখন প্রকল্পের লাভজনকতা মূল্যায়ন করে সে ব্যাপারে নিশ্চিত হলেই অর্থায়নে জড়িত হয়। প্রকল্পটির লাভজনকতা ঋণের আবেদনকারীর জন্য যেমন গুরুত্বপূর্ণ, ব্যাংকের জন্য তেমন গুরুত্বপূর্ণ। ব্যাংকের পেশাগত দক্ষতা প্রকল্পের লাভজনকতার ব্যাপারে আবেদনকারীর ধারণাকে শক্তিশালী করে। প্রকল্পটি যদি পরিবর্ধন পরিমার্জন করতে হয়, ব্যাংক সে পরামর্শ প্রদান করে। আরও বিভিন্ন রকম আর্থিক এবং অর্থসংক্রান্ত পরামর্শ ব্যাংক গ্রাহককে দিয়ে থাকে।

৪) প্রতিনিধি ও অছি : সেবার মূল্য গ্রহণের বিনিময়ে মক্কেলের পক্ষে প্রতিনিধি/অছি হিসাবে কাজ করা ব্যাংকের একটি উদ্দেশ্য। ব্যাংক গ্রাহকের পক্ষে ব্যবসায়িক চুক্তিতে অংশগ্রহণ করে, বিনিময় বিলে সই করে, বাসা ভাড়া সংগ্রহ করে।

৫) অর্থ স্থানান্তর : ব্যাংকিং সেবার মাধ্যমে গ্রাহকের নির্দেশ মোতাবেক অর্থ দেশ ও বিদেশে স্থানান্তর করে থাকে।

৬) জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন ও সহজীকরণ : গ্রাহকের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নকল্পে ব্যাংক বিভিন্ন ধরনের নতুন নতুন সেবা ও পণ্য সৃষ্টি করে। ক্রেডিট কার্ড দিয়ে একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত গ্রাহক নগদ টাকা ছাড়াই পণ্য ক্রয় করতে পারে। এটিএম মেশিন থেকে নগদ টাকা তোলা যায়।বর্তমানে দেশের সব বড় শহরের বিভিন্ন এলাকায় ২৪ ঘণ্টা বিভিন্ন ধরনের ব্যাংকিং সেবা ব্যবস্থা চালু আছে। তাছাড়া মোবাইল ব্যাংকিং ও ইন্টারনেট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ব্যাংকিং সেবা সহজ করা হয়েছে।

Content added || updated By
Promotion