ব্যাংক হিসাব সংরক্ষণ

এইচএসসি (বিএমটি) ভোকেশনাল - ফিন্যান্সিয়াল কাস্টমার সার্ভিসেস-১ - NCTB BOOK

সোবহান সাহেব একজন গরিব কৃষক। তিনি পরের জমিতে বর্গা চাষ করেন। তিনি প্রতি সপ্তাহে উৎপাদিত ফসল বিক্রয় করে যা পান তা নিরাপত্তার জন্য গ্রামের মহাজন আলম সাহেবের কাছে জমা রাখেন। আবার তার প্রয়োজনে আলম সাহেবের কাছ থেকে টাকা নিয়ে খরচ করেন। এভাবে প্রতি সপ্তাহে টাকা জমা ও উত্তোলন করে থাকেন। এর নাম হচ্ছে লেনদেন। কিন্তু এ লেনদেনে সোবহান সাহেব টাকা জমা ও উত্তোলনের সঠিক হিসাব পাচ্ছেন না । এই সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য তিনি গ্রামের স্কুল শিক্ষক জনাব নজরুলের সাথে আলোচনা করলে তিনি ব্যাংকের সাথে যোগাযোগ করতে বলেন। সোবহান সাহেব ব্যাংকের সাথে যোগাযোগ করলে ব্যাংক তাদের শাখায় হিসাব খুলে অর্থ জমা ও উত্তোলনে যাবতীয় সুবিধাসমূহের কথা বলে। এ উপ-অধ্যায়ে আমরা ব্যাংক লেনদেনের ধারণা, ব্যাংক হিসাবে অর্থ জমা ও উত্তোলনের নিয়ম সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করতে পারব।

Content added By

ব্যাংক লেনদেনের ধারণা

লেনদেন বলতে বোঝায় কোনো কিছুর আদান-প্রদান করা। অর্থাৎ প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন এবং অর্থের মূল্যে পরিমাপ করা যায় এমন কোনো দ্রব্য বা সেবার আদান-প্রদানকেই লেনদেন বলে । মি. করিম একজন পোল্ট্রি খামারি। তিনি মুরগীর বাচ্চা উৎপাদনের জন্য একটি মেশিন ক্রয় করে চেকের মাধ্যমে এক লক্ষ টাকা প্রদান করেন। পণ্য বিক্রেতা উক্ত চেকটি ব্যাংকে জমার মাধ্যমে তার টাকা তুলে নেন। এতে তার আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন হয়। ফলে এটি একটি লেনদেন। সুতরাং, যখন কোনো ঘটনাকে অর্থ দ্বারা পরিমাপ করা যায় তখন তাকে লেনদেন বলে ।

ব্যাংক হিসাবে অর্থ জমা দেয়ার নিয়ম

ব্যাংকে বিভিন্ন প্রকার হিসাবে টাকা জমা দেয়ার জন্য পৃথক পৃথক ছাপানো জমা রসিদ থাকে। আমানতকরীরা উক্ত জমা রসিদের মাধ্যমে ব্যাংকে নগদ টাকা, চেক, পে-অর্ডার, বিল ইত্যাদি জমা করে থাকে। এগুলো জমা দেয়ার জন্য নিম্নলিখিত তিনটি ধাপ অনুসরণ করতে হয়—

চিত্র : ব্যাংকে অর্থ জমা দেওয়ার রসিদ

প্রথম ধাপ (First step) : এই পর্যায়ে আমানতকারী যে ব্যাংকে টাকা জমা দিবে সেই ব্যাংকের যেকোনো শাখা হতে ব্যাংক কর্তৃক সরবরাহকৃত হিসাবের জমা রসিদ সংগ্রহ করতে হয়। আমানতকারী সংগৃহীত রসিদের মাধ্যমে নগদ টাকা, চেক, বিনিময় বিল, পে-অর্ডার, প্রতিজ্ঞাপত্র ইত্যাদি জমা দিয়ে থাকে। সাধারণত জমা রসিদের পাতা দুই ভাগে বিভক্ত থাকে। প্রতিটি অংশে একই বিষয় ও তথ্যাদি লেখা থাকে। নির্ধারিত স্থানসমূহে জমাকারীকে লিখতে হয় : ব্যাংকের শাখার নাম, জমাকারীর নাম, হিসাব নম্বর, তারিখ, টাকার পরিমাণ (অংকে ও কথায়) ইত্যাদি। নগদ টাকা জমার ক্ষেত্রে জমাকৃত টাকার নোটের মূল্যমান অনুযায়ী সংখ্যা উল্লেখ করতে হয়। চেক জমার ক্ষেত্রে জমা রসিদে উভয় অংশের বিবরণ ঘরে জমাকৃত চেকের চেক নম্বর, শাখার নাম, চেকের তারিখ ও টাকার পরিমাণ উল্লেখ করতে হয়। অন্যান্য বিষয় অপরিবর্তীত থাকে।

দ্বিতীয় ধাপ (Second step) : এই পর্যায়ে আমানতকারী পূরণকৃত জমা রসিদ ও নগদ অর্থ বা দাগকাটা চেকটি জমা দিবে। নগদ টাকা জমার ক্ষেত্রে ব্যাংকের নগদ কাউন্টারে জমা দিবে। চেকের ক্ষেত্রে ব্যাংকের নিকাশ শাখায় জমা রসিদসহ চেকটি জমা দিবে।

তৃতীয় ধাপ (Third step) : ব্যাংকে রসিদটি জমা দিলে শেষ বা তৃতীয় পর্যায়ের কাজ ব্যাংক কর্তৃপক্ষ সম্পন্ন করবে। নগদ কাউন্টারে জমা রসিদ ও টাকা জমা দিলে ব্যাংকের কর্মকর্তা তা গ্রহণ করে কম্পিউটার সফটওয়্যারে আমানতকারীর হিসাবে এন্ট্রি দিবেন। এন্ট্রি দেওয়া শেষে জমা রসিদে তার স্বাক্ষর ও সিল দিয়ে ব্যাংক কপি নিজে সংরক্ষণ করবেন এবং কাস্টমার কপি আমানতকারীকে ফেরত প্রদান করবেন। এরপর ব্যাংকে আমানতকারীর তালিকাভুক্ত মোবাইল নম্বরে টাকা জমার ম্যাসেজ যাবে। এটি দেখে আমানতকারী নিশ্চিত হবেন তার হিসাব টাকা জমা হয়েছে।

উল্লেখ্য যে, চেক বা বিল জমা দিতে হলেও উপরোক্ত নিয়মে জমা দিতে হয়। চেকের ক্ষেত্রে বিবরণের ঘরে চেক নম্বর, ব্যাংকের নাম, শাখার নাম, তারিখ ও টাকার পরিমাণ (কথায় ও অংকে) লিখে ক্লিয়ারিং শাখায় জমা দিতে হয়। ব্যাংকিং সময় দুপুর ১২.০০ টার পূর্বে জমা দিলে চেকটি নিকাশ পদ্ধতি অনুসারে উল্লেখিত নিকাশকৃত অর্থ আমানতকারীর হিসাবে ঐ দিনে ক্রেডিট করে। অবশ্য এরূপ ক্ষেত্রে নিকাশ খরচ হিসেবে ব্যাংক কিছু অর্থ কেটে রাখে। অর্থ আমানতকারীর হিসাবে টাকা জমা হলে ম্যাসেজের মাধ্যমে তা জানা যায় ।

Content added By

ব্যাংক হতে অর্থ উত্তোলনের নিয়ম

ব্যাংক আমানতকারীদের আমানত দ্বারা ব্যবসায় করে থাকে। তাই আমানতকারীদের আমানত ফেরত দিতে ব্যাংক বাধ্য থাকে। এই কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ব্যাংক আমানতকারীদের ব্যাংক হিসাব খোলার সময় একটি চেক বই প্রদান করে যাতে আমানতকারী চেক ইস্যু করে আমানত থেকে অর্থ তুলতে পারে। ব্যাংকের চলতি হিসাব ও সঞ্চয়ী হিসাব হতে অর্থ উত্তোলনের জন্য নিম্নলিখিত তিনটি ধাপ অনুসরণ করতে হয়-

চিত্র : ব্যাংক থেকে অর্থ উত্তোলনের নমুনা চেক

প্রথম ধাপ (First step) : আমানতকারী যে ব্যাংকের হিসাব থেকে টাকা উত্তোলন করতে চান, সেই ব্যাংক কর্তৃক সরবরাহকৃত MICR (Magnetic Ink Character Recognition) চেক পূরণ করতে হবে। চেকের যথাস্থানে টাকা উঠানোর তারিখ, Pay to-এর ঐ খালি জায়গায় উত্তোলনকারীর নাম (অবশ্য উত্তোলনকারী আমানতকারী নিজে হলে ঐ খালি জায়গায় 'Self' কথাটি লিখতে হয়), টাকার পরিমাণ কথায় ও অংকে সঠিকভাবে লিখতে হবে এবং চেকের নিচে ডানদিকে Please Sign Above This Line এর উপরের খালি জায়গায় হিসাবধারীর নমুনা স্বাক্ষরের অনুরূপ স্বাক্ষর প্রদান করতে হবে।

দ্বিতীয় ধাপ (Second step) : এই পর্যায়ে চেকটি আমানতকারী বা বাহক ব্যাংকের নগদ কাউন্টারে জমা দিবেন। চেক জমা দিলে ব্যাংক কর্মকর্তা বাহককে একটি নির্দিষ্ট নম্বর বিশিষ্ট টোকেন দিবেন। টোকেন দেওয়ার সময় প্রাপককে চেকের উল্টো পিঠে স্বাক্ষর দিতে হয়।

তৃতীয় ধাপ (Third step) : এই পর্যায়ের কাজ ব্যাংক কর্তৃপক্ষ সম্পন্ন করবেন। চেক জমা দেওয়ার পর ব্যাংক কর্মকর্তা (ক্যাশিয়ার) তার নিজস্ব কম্পিউটারের সফটওয়্যার-এর মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট চেকের হিসাবে উল্লেখিত পরিমাণ টাকা আছে কিনা তা যাচাই করবেন। সমপরিমাণ টাকা না থাকলে চেকটি ফেরত দিবেন। সমপরিমাণ টাকা থাকলে নমুনা স্বাক্ষর যাচাই করে চেকের তথ্যসমূহ হিসাবধারীর আইডিতে এন্ট্রি দিবেন। চেকে ইনিশিয়াল স্বাক্ষর প্রদান করে অন্য আরেকজন কর্মকর্তার কাছে তথ্য যাচাই ও অথরাইজ করার জন্য দিবেন। তিনি তার কম্পিউটারে সংরক্ষিত হিসাবধারীর যাবতীয় তথ্য মিলিয়ে দেখে চেকটি অথরাইজের মাধ্যমে পাশ করে ক্যাশিয়ারের নিকট ফেরত পাঠাবেন। ক্যাশিয়ার আমানতকারীর হিসাব হতে চেকে উল্লেখিত টাকা ডেবিট করে চেকের পিছনে পুনরায় বাহকের স্বাক্ষর নিয়ে টাকা প্রদান করবেন। টাকা প্রদান শেষে আমানতকারীর কাছে টাকা উত্তোলনের একটি ম্যাসেজ যাবে। এভাবে টাকা উত্তোলনের কাজটি সমাপ্ত হবে।

Content added By
Promotion