ব্যাকটেরিয়া (গ্রিক শব্দ, Bakterion = ছোট দন্ড) একধরনের এককোষী আণুবীক্ষণিক জীব । জীবজগতে এগুলোই সরলতম ও ক্ষুদ্রতম জীব বলে পরিচিত। ১৬৭৫ খ্রিস্টাব্দে ওলন্দাজ বিজ্ঞানী অ্যান্টনি ভ্যান লিউয়েনহুক (Antony Van Leeuwenhock) সর্বপ্রথম তাঁর আবিষ্কৃত অণুবীক্ষণযন্ত্রের নিচে এক ফোঁটা পানিতে ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেন। এগুলোর নাম দেন animaleule বা ক্ষুদ্র প্রাণী। তাই তাঁকে ব্যাকটেরিওলজির জনক বলা হয় ।
লিউয়েনহুক আবিষ্কৃত এসব অণুজীব পরবর্তী প্রায় ২০০ বছর অজানাই রয়ে যায়। ১৮২৯ সালে জার্মান বিজ্ঞানী এরেনবার্গ (C.G. Ehrenberg) সর্বপ্রথম "bacteria" শব্দটি ব্যবহার করেন। পরবর্তীকালে ১৮৬৪ খ্রিস্টাব্দে ফরাসী বিজ্ঞানী লুই পাস্তুর ( Louis Pasteur) ও ১৮৭৬ খ্রিস্টাব্দে জার্মান চিকিৎসক বিজ্ঞানী রবার্ট কচ (Robert Koch) প্রমাণ করেন যে অত্যন্ত ক্ষুদ্র আণুবীক্ষণিক জীব বিভিন্ন প্রাণিদেহে নানা রকম রোগ সৃষ্টিতে সক্ষম। ১৮৭৯ খ্রিস্টাব্দে ইলিয়ন বিশ্ববিদ্যালয়ের বার্জিস নামক একজন গবেষক সর্বপ্রথম প্রমাণ করেন ব্যাকটেরিয়া নামক ক্ষুদ্র জীব উদ্ভিদেও রোগ সৃষ্টি করে।(ব্যাকটেরিয়া হচ্ছে কোষীয় অঙ্গাণুবিহীন, জটিল কোষপ্রাচীর ও আদিপ্রকৃতির (prokaryotic ) নিউক্লিয়াস বিশিষ্ট ক্ষুদ্রতম সরল প্রকৃতির এককোষী আণুবীক্ষণিক জীব।
বিস্তৃতি ও আবাসস্থল : ব্যাকটেরিয়ার বিস্তৃতি প্রায় বিশ্বব্যাপী। এরা মাটি, বায়ু, পানি, জীবদেহের ভিতর ও বাইরে অবস্থান করে। মানুষের অন্ত্রেও এদের পাওয়া যায়। এর মধ্যে Ecoli ভিটামিন বি-কমপ্লেক্স সরবরাহ করে। প্রকৃতিতে ১৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা থেকে শুরু করে ৮০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা পর্যন্ত ব্যাকটেরিয়া বেঁচে থাকতে পারে। পানি বা মাটিতে জৈব পদার্থ বেশি থাকলে ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যাও সেখানে অধিক থাকে। জৈব পদার্থসমৃদ্ধ আবাদী মাটিতে ব্যাকটেরিয়া পর্যাপ্ত থাকে। মাটির গভীরে ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা হ্রাস পেতে থাকে। বাতাসে থাকলেও বায়ুস্তরের অনেক উচুঁতে ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি তেমন নেই।
ব্যাকটেরিয়ার সাধারণ বৈশিষ্ট্য
১. ব্যাকটেরিয়া কোষীয় জীবদের মধ্যে অতি ক্ষুদ্র (০.২-৫.০um), সরল এবং আণুবীক্ষণিক
২. এরা একক বা দলবদ্ধ হয়ে বাস করে।
৩. ব্যাকটেরিয়ার প্রোটোপ্লাজম আদি নিউক্লিয়াসযুক্ত (prokaryotic nucleus), অর্থাৎ নিউক্লিয়াসে নিউক্লিয়ার ঝিল্লি, নিউক্লিওলাস ও ক্রোমাটিন জালিকা থাকে না। শুধু একটি প্যাঁচানো দ্বিসূত্রক DNA তন্তু থাকে। সেজন্য ব্যাকটেরিয়ার নিউক্লিয়াসকে নিউক্লিয়ার বস্তু বা নিউক্লিওয়েড (nucleoid) বলে।
৪. প্রোটোপ্লাজমে কেবল রাইবোজোম (70S) ও মেসোজোম থাকে। একক পর্দাবৃত কোনো কোষ অঙ্গাণু নেই ।
৫. ব্যাকটেরিয়া কোষে কোষঝিল্লির বাইরে একটি সুগঠিত কোষপ্রাচীর রয়েছে, যার প্রধান উপাদান মিউকোপেপটাইড বা পেপটাইডোগ্লাইক্যান, সাথে পলিস্যাকারাইড, মুরামিক এসিড ও টিকোয়িক এসিড থাকে।
৬. অধিকাংশ ব্যাকটেরিয়া পরভোজী ( heterotrophic), কিছু স্বভোজী (autotrophic)। স্বভোজী ব্যাকটেরিয়ার দেহে বিভিন্ন সালোকসংশ্লেষীয় রঞ্জক, যেমন-ব্যাকটেরিওক্লোরোফিল, ব্যাকটেরিওভিরিডিন বা ক্লোরোবিয়াম ক্লোরোফিল এবং ক্যারোটিনয়েড উপস্থিত থাকে।
৭. এদের কতনা বাধ্যতামূলক অবায়বীয় (obligate anaerobes) অর্থাৎ অক্সিজেন থাকলে বাঁচতে পারে না। কতক সুবিধাবাদী অবায়বীয় (facultative anaerobes) অর্থাৎ অক্সিজেনের উপস্থিতিতেও বাঁচতে পারে এবং কতক বাধ্যতামূলক বায়বীয় (obligate aerohes) অর্থাৎ অক্সিজেন ছাড়া বাঁচতে পারে না ।
৮. প্রচন্ড ঠান্ডা (-১৭°C) থেকে শুরু করে ৮০°C তাপমাত্রায় ব্যাকটেরিয়া বাঁচতে পারে।
৯. ক্রোমোজোম থাকায় ব্যাকটেরিয়ায় মাইটোসিস ও মিয়োসিস কোষবিভাজন ঘটে না ।
১০. এদের বংশবৃদ্ধির প্রধান প্রক্রিয়া বিভাজন (binary fission)।
১১. ফাজ ভাইরাসের প্রতি এরা খুবই সংবেদনশীল ।
১২. এদের অধিকাংশই অজৈব লবণ জারিত করে শক্তি সংগ্রহ করে।
১৩. প্রতিকূল পরিবেশে টিকে থাকার জন্য এন্ডোস্পোর (cndospore) গঠন করে ।
১৪. ব্যাকটেরিয়া সাধারণত বেসিক রং (গ্রাম পজিটিভ বা গ্রাম নেগেটিভ) ধারণ করতে পারে।
আরও দেখুন...