ব্রয়লার মুরগির খাদ্য

এসএসসি(ভোকেশনাল) - পোল্ট্রি রিয়ারিং অ্যান্ড ফার্মিং-১ - প্রথম পত্র (নবম শ্রেণি) | NCTB BOOK

মাংসল ভারী জাতের মোরগ-মুরগির মধ্যে প্রজনন ঘটিয়ে ব্রয়লার সৃষ্টি করা হয়, যাদের মাংস সুস্বাদু এবং অধিক খাদ্য রূপান্তর দক্ষতা ও দৈহিক বৃদ্ধি হার এর কারণে ৪-৫ সপ্তাহে প্রায় ৪-৫ কেজি খাদ্য খেয়ে ২-২.৫ কেজি ওজন হয়।

এ অধ্যায়ের পাঠ শেষে আমরা-

  • খাদ্য ও সুষম খাদ্য কী বলতে পারব
  • ব্রয়লার খাদ্যের পুষ্টি উপাদান সমূহ বর্ণনা করতে পারব
  • ব্রয়লারে জন্য ব্যবহৃত খাদ্য উপকরণের নাম বলতে পারব
  • খাদ্য তৈরিতে ব্যবহৃত বিভিন্ন খাদ্য উপকরণের পুষ্টি উপাদান মাত্রা বর্ণনা করতে পারব
  • ব্রয়লারের বিভিন্ন পর্বের সুষম খাদ্য সম্পর্কে বলতে পারব
  • সুষম খাদ্য তৈরির বিবেচ্য বিষয়সমূহ ব্যাখ্যা করতে পারব 
  • সুষম খাদ্য ও পানি সরবরাহ করতে পারব
  • ব্রয়লার ষ্টার্টার ও গ্রোয়ার রেশন তৈরির হিসাব করতে পারব
  • ব্রয়লারের সুষম খাদ্য তৈরি ও সরবরাহ কৌশল বর্ণনা করতে পারব
  • পানির উৎস ও গুণগতমান ব্যাখ্যা করতে পারব

 

৩.১ খাদ্য

যে সমস্ত আহার্য দ্রব্য পোল্ট্রির শরীরের ক্ষয়পূরণ, বৃদ্ধিসাধন, উৎপাদন, প্রজনন ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলে তাকে খাদ্য বলে। একটি ব্রয়লার খামারে মোট খরচের শতকরা ৬৫-৭০ ভাগই খাদ্য বাবদ খরচ হয়।

সুষম খাদ্য (Balanced diet):

পোল্ট্রির দেহের নির্বাহী কার্য পরিচালনা, শারীরিক বৃদ্ধি, উৎপাদন, পালক গঠন ও দেহের অন্যান্য কার্যক্রম সম্পাদনের জন্য চাহিদা অনুপাতে প্রয়োজনীয় বিভিন্ন উপাদানের সমন্বয়ে তৈরিকৃত খাদ্যকে সুষম খাদ্য বলে।

 

৩.২ খাদ্যের পুষ্টি উপাদান সমূহ ও কাজ

ব্রয়লার খাদ্যের পুষ্টি উপাদান (Nutrients in broiler food): 

১. শর্করা বা কার্বোহাইড্রেট 

২. আমিষ বা প্রোটিন 

৩. চর্বি বা স্নেহ জাতীয় পদার্থ বা ফ্যাট 

৪. ভিটামিন বা খাদ্যপ্ৰাণ 

৫. খনিজ পদার্থ বা মিনারল ও 

৬. পানি

আমিষ বা প্রোটিন (Protein): 

পোল্ট্রির দেহ গঠন ও ডিম উৎপাদনে আমিষ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পোল্ট্রির দেহে আমিষ উপাদানের ২২ টি অ্যামাইনো অ্যাসিডে বিশ্লেষিত হয়। এর মধ্যে কিছু অ্যামাইনো অ্যাসিড মুরগির দেহে উৎপন্ন হতে পারে না। এদেরকে অত্যাবশ্যকীয় অ্যামাইনো অ্যাসিড হিসাবে বিবেচিত করা হয়। খাদ্যে এদের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে অতিরিক্ত হিসাবে কৃত্রিমভাবে তৈরি অ্যামাইনো অ্যাসিড সংযোজন করতে হয় ।

আমিষ বা প্রোটিনের কাজ-

  • দেহের কাঠামো গঠন করে । 
  • দেহের বৃদ্ধি ও পেশীর ক্ষয়পূরণ করে। 
  • তাপ ও শক্তি উৎপাদন এবং ডিম গঠন করে । 
  • পালক ও রক্ত গঠন করে। 
  • বীর্য উৎপাদন করে । 
  • গ্রন্থি নিঃসৃত রস উৎপাদন করে ।

শর্করা বা শ্বেতসারের কাজ (Functions of Carbohydrates):

  • দেহে তাপ ও শক্তি উৎপন্ন করে। 
  • দেহের বৃদ্ধি, পুষ্টি ও ডিম উৎপাদনের জন্য শক্তি সরবরাহ করে। 
  • দেহকে কর্মক্ষম রাখে । 
  • নির্বাহী কার্য পরিচালনা করে ।
  • চর্বি উৎপাদনে ব্যবহৃত হয় ।

 

চর্বি বা স্নেহ পদার্থের কাজ (Functions of Fats): 

চর্বি সরাসরি অথবা শর্করা হতে রূপান্তরিত হওয়ার পর পাওয়া যায়, যা শক্তির আধার হিসাবে শরীরে জমা থাকে ।

  • তাপ ও শক্তি সরবরাহ করে।
  • দেহে চর্বির পরিমাণ বৃদ্ধি করে ।
  • হাড়ের সন্ধিতে মসৃণতা রক্ষা করে ।
  • দেহের লাবণ্যতা রক্ষা করে।
  • চর্বিতে দ্রবণীয় ভিটামিন ব্যবহারে সাহায্য করে।
  • চর্বি থেকে আমিষ ও শর্করা অপেক্ষা ২.২৫ গুণ বেশি শক্তি পাওয়া যায় ।

ভিটামিন বা খাদ্যপ্রাণ (Functions of Vitamins ) : 

ভিটামিনকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়, যথা- 

(ক) চর্বিতে দ্রবণীয়: ভিটামিন এ, ভিটামিন ডি, ভিটামিন ই এবং ভিটামিন কে । 

(খ) পানিতে দ্রবণীয়: ভিটামিন বি-কমপ্লেক্স ও ভিটামিন সি।

 

ভিটামিন এর কাজগুলো নিম্নরূপ-

  • দেহের বৃদ্ধি ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে । 
  • ডিমের উৎপাদন ও উর্বরতা ক্ষমতা বৃদ্ধি করে । 
  • খাদ্য পরিপাকে সাহায্য করে। 
  • উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি করে । 
  • শরীরকে সবল ও সুস্থ রাখে ।

খনিজ পদার্থ বা মিনারেল (Functions of Minerals):

দেহে খনিজ পদার্থের বহুবিদ কাজ রয়েছে। যেমন হাড় ও ডিমের গঠন ঠিক রাখা, দেহে এসিড ক্ষারের সমতা ঠিক রাখা এবং কোষের অসমোটিক চাপ নিয়ন্ত্রণ রাখা। বিপাক প্রক্রিয়ায় এদের অধিক কাজ রয়েছে।

প্রয়োজনের ভিত্তিতে খনিজ পদার্থকে ২ ভাগে ভাগ করা যায়। যথা- - 

১. মূখ্য: ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, সালফার, পটাসিয়াম, সোডিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ইত্যাদি। 

২. গৌণ: আয়রন, কপার, কোবাল্ট, জিংক, ম্যাঙ্গানিজ, সেলেনিয়াম ইত্যাদি ।

 

খনিজ এর কাজগুলো নিম্নরূপঃ

  • শরীরের কাঠামো গঠন করে । 
  • হাড় ও ডিমের খোসা তৈরিতে সাহায্য করে । 
  • পালক ও ব্লাড সেল গঠন করে। 
  • গ্রন্থি নিঃসৃত রস উৎপাদনে ব্যবহৃত হয়। 
  • হজম কাজে সাহায্য করে ।

পানির কাজ : 

পানি শরীরের হজম বিপাক এবং শ্বসনে সাহায্য করে। মুরগির বিপাক এবং পুষ্টির জন্য পানি একটি অপরিহার্য উপাদান। পানি মুরগির শরীরে পুষ্টি উপাদান (ভিটামিন, মিনারেল, এমাইনো এসিড) বহনে, এনজাইমেটিক এবং রাসায়নিক বিক্রিয়ায় সাহায্য করে।

  • খাদ্য পরিপাক, পাচন ও পুষ্টি পরিবহন করে। 
  • বর্জ্য পদার্থ নিষ্কাশন ও শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। 
  • পানি মূলত দেহাভ্যন্তরে একটি মাধ্যম হিসাবে কাজ করে ।

 

শ্রেণির তাত্ত্বিক কাজ: 

চর্বিতে ও পানিতে দ্রবণীয় ভিটামিনগুলোর নাম লেখ ।

 

৩.২ ব্রয়লারের জন্য ব্যবহৃত খাদ্য উপকরণ 

ব্রয়লারের জন্য ব্যবহৃত বিভিন্ন খাদ্য উপকরণের মধ্যে বিভিন্ন প্রকার পুষ্টি উপাদান বিভিন্ন মাত্রায় উপস্থিত থাকে। যে উপকরণের মধ্যে যে উপাদান বেশি মাত্রায় বিদ্যমান থাকে তাকে সেই উপাদান যুক্ত খাদ্য বলে । পুষ্টি উপাদানের অধিক্যের ভিত্তিতে খাদ্য উপকরণকে ৫ ভাগে ভাগ করা যায় । যেমন:

 ১. শর্করা জাতীয় উপকরণ 

২. আমিষ জাতীয় উপকরণ 

৩. চর্বি বা তৈল জাতীয় উপকরণ 

৪. খনিজ পদার্থ জাতীয় উপকরণ 

৫. ভিটামিন জাতীয় উপকরণ

শর্করা জাতীয় উপকরণ আবার দুইভাগে বিভক্ত, যেমন-

  • দানা জাতীয় খাদ্য 
  • আঁশ জাতীয় খাদ্য
দানা জাতীয় খাদ্য আঁশ জাতীয় খাদ্য
ভুট্টা, গম, চাল, কাওন, চালের খুদ, সরগম, যবচালের মিহি কুড়া, গমের ভুষি, বিভিন্ন ধরণের শাকসবজি

 

আমিষ জাতীয় উপকরণ দুইভাবে বিভক্ত, যেমন-

  • প্রাণিজ আমিষ খাদ্য 
  • উদ্ভিজ আমিষ খাদ্য
প্রাণিজ আমিষ খাদ্যউদ্ভিজ আমিষ খাদ্য
বিভিন্ন মাছের শুঁটকি, মৎস্য উপজাত, চিংড়ি মাছ ও তার উপজাত পশুর নাড়িভুঁড়ি ও হাড়ের গুঁড়া-প্রোটিন কনসেনট্রেট, রক্তের গুঁড়া, হাঁস-মুরগির উপজাত, হ্যাচারি উপজাত, ঝিনুক ও শামুকের মাংস, কেঁচো মিল ও ননীযুক্ত গুঁড়া দুধ ।সয়াবিন খৈল, তিলের খৈল, নারিকেল খৈল, তিসির খৈল, তুলা বীজের খৈল ।

 

চর্বি জাতীয় উপকরণ:

চর্বি জাতীয় উপকরণ
সয়াবিন মিল,হাঁস-মুরগির তেল, তিলের খৈল, গবাদিপশুর চর্বি (তাল্লু), নারিকেল মিল, মাছের তেল সূর্যমুখী তেল

 

খনিজ পদার্থ জাতীয় উপকরণ:

খনিজ পদার্থ জাতীয় উপকরণ :
ঝিনুক খোসা চূর্ণ, শামুক খোসার চূর্ণ, বোন মিল, ডিমের খোসা চূর্ণ, ফিস মিল,ডাই ক্যালসিয়াম ফসফেট (ডিসিপি), চুনা পাথর, ক্যালসিয়াম কার্বনেট, সাধারণ লবণ, ম্যাঙ্গানিজ লবণ

 

ভিটামিন জাতীয় উপকরণ: 

শাকসবজি, মাছের তেল, অংকুরিত গম ও ছোলা, হলুদ ভুট্টা, সবুজ ঘাস, চালের মিহি কুড়া ইত্যাদিতে কমবেশি বিভিন্ন প্রকার ভিটামিন থাকে। তারপরও খাদ্যের সাথে কৃত্রিম ভিটামিন প্রিমিক্স হিসাবে ব্যবহার করতে হয়।

 

৩.৩ খাদ্য উপকরণের পুষ্টিমাণ

 

৩.৪ সুষম খাদ্য তৈরির বিবেচ্য বিষয়সমূহ

১. খাদ্য সামগ্রী বা উপকরণের সহজ প্রাপ্যতা:

সুষম খাবার তৈরিতে পরিচিত ও সহজলভ্য উপকরণ নির্বাচন করা উচিত। পরিচিত উপকরণের গুণগতমান সহজে জানা যায় । স্থানীয় মূল্য যাচাই করা যায়। কোনো উপকরণের ঘাটতি পড়লে সহজে সংগ্রহ করা যায় । সহজলভ্য উপকরণের পরিবহন খরচ কম হয়। বিভিন্ন মৌসুমে উৎপাদিত দ্রব্য স্থানীয়ভাবে সংগ্রহ ও মজুদ করা যায়।

২. খাদ্যের গুণগতমান 

প্রস্তুত খাদ্য অবশ্যই গুণগতমানের হওয়া উচিত, খাদ্য প্রস্তুতের পূর্বে প্রতিটি উপকরণের পুষ্টিগত গুণাগুণ ও ভৌত অবস্থা (পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা, বর্ণ, গন্ধ, স্বাদ) পরীক্ষা করতে হয়। কোনো প্রকার পচা, ছত্রাকযুক্ত, পোকা যুক্ত অথবা গন্ধযুক্ত খাবার ব্যবহার করা যাবে না। খাদ্য বা খাদ্য উপাদানসমূহে যেন কোনো অবস্থাতেই ঢাকা লেগে না থাকে সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে। 

যে সমস্ত কারণে খাদ্যের গুণগত মান নষ্ট হয়, তা হলো-

  • সঠিকভাবে সংরক্ষণ না করলে
  • উপকরণে আর্দ্রতা (১২% এর উপরে হলে) বেশি থাকলে
  • বেশি পুরোনো হলে 
  • সঠিকভাবে প্রক্রিয়াজাত না করার ফলে 
  • পোকা ও ইঁদুরের আক্রমণে
  • ঘরের মেঝে ভিজা ও আর্দ্র থাকলে 
  • আবহাওয়ার তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা বেশি থাকলে 
  • খাদ্য সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাত করার সময় কীটনাশক ব্যবহার করলে
  • ভেজাল থাকলে 
  • ছত্রাক ও মোল্ডযুক্ত খাদ্য উপকরণ ব্যবহার করলে

৩. উপকরণের মূল্য: 

খাদ্য উপকরণ যত সস্তায় সংগ্রহ করা যায়, খাদ্য প্রস্তুতে খরচের তত সাশ্রয় হয়। ফলে মাংস ও ডিম উৎপাদনে খরচ কমে যায়। খামারে মোট খাদ্য খরচের ৬৫-৭৫ ভাগ পর্যন্ত খরচ হয় খাদ্যের জন্য। মানুষের খাদ্য উপকরণের সাথে প্রতিযোগিতা কমাতে যথদূর সম্ভব সস্তায় বিকল্প খাদ্য উপকরণ ব্যবহার করা উচিত ।

৪. খাদ্যের পরিপাচ্যতা ও সুস্বাদুতা : 

রুচিসম্মত খাদ্য না হলে পোল্ট্রি খায় না। দানা জাতীয় খাদ্য বেশি মিহি হলে পোল্ট্রি কম খায়। কোনো উপকরণের দানা বড় থাকলে পোল্ট্রি বেছে বড় দানা আগে খায়, ফলে অন্যান্য উপাদান তলে পড়ে থাকে। বেশি আঁশযুক্ত খাদ্য ব্যবহার করা উচিত নয়। উপকরণের মিশ্রণ সুষম হতে হবে এবং প্রতিটি উপাদানের দানা যতদূর সম্ভব সুষম হতে হবে। খাদ্যে ভেজাল মিশ্রিত থাকলে এবং খাদ্য পচা ও ছত্রাকযুক্ত হলে ব্রয়লার মুরগি খাদ্য পছন্দ করবে না। ক্রাম্বল ও পিলেট খাদ্য ব্রয়লার মুরগি বেশি পছন্দ করে।

৫. জাত: 

হালকা জাতের ব্রয়লারের জন্য ২ প্রকার মিশ্রণ ব্যবহার করা হয় ২ ধাপে। ভারী জাতের ব্রয়লারের জন্য ৩ ধাপে ৩ প্রকারের খাদ্য ব্যবহার করা হয়। 

৬. লিঙ্গ: 

পুরুষ ব্রয়লার স্ত্রী ব্রয়লারের তুলনায় ২০-২৫% বেশি খাদ্য খায়, দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং দ্রুত খাদ্যকে মাংসে রূপান্তর করতে পারে । 

৭. ওজন: 

ব্রয়লারের ওজন বৃদ্ধি সমানুপাতে না হলে খাদ্যে আমিষের হার বৃদ্ধি করতে হয়। দেহে চর্বির পরিমাণ বৃদ্ধির জন্য খাদ্যে চর্বি জাতীয় উপাদানের ব্যবহারের হার পুনঃবিন্যাস করতে হয়। 

৮. আবহাওয়াঃ 

পারিপার্শ্বিক আবহাওয়ায় তাপমাত্রা বৃদ্ধি হলে খাদ্য খাওয়ার পরিমাণ কমে যায়। ফলে শরীরের চাহিদার সাথে সামঞ্জস্য রেখে খাদ্যে পুষ্টিমান পুনঃবিন্যাস করতে হয়।

 

৩.৫ ব্রয়লারের বিভিন্ন বয়সের পুষ্টির চাহিদা:

 

৩.৬ বিভিন্ন খাদ্য উপকরণ ব্যবহারের প্রয়োগ মাত্ৰা :

 

৩.৭ ব্রয়লারের রেশন তৈরিতে ব্যবহৃত খাদ্য উপাদানের আনুপাতিক হার ও পরিমাণ নির্ধারন

খাদ্য উপাদানের আনুপাতিক হার

 

ব্রয়লার ষ্টার্টার রেশন তৈরির হিসাব:

 

ব্রয়লার ফিনিসার রেশন তৈরির হিসাব:

 

শ্রেণির তাত্ত্বিক কাজ:

ব্রয়লার ষ্টার্টার রেশন তৈরি করো , যার বিপাকীয় শক্তি ৩০০০ (কিলোক্যালোরি) ক্রুড প্রোটিন ২২%

 

৩.৮ সুষম খাদ্য প্রস্তুতকরণ 

ব্রয়লারের সুষম খাদ্য তৈরি ধাপ:

  • প্রথমে ঘরের মেঝে ঝাড়ু দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে
  • যে সকল খাদ্য উপাদান অধিক পরিমাণে লাগে যেমন- ভুট্টা, গম, কুড়া, সয়াবিন মিল, প্রোটিন কনসেনট্রেট সেগুলো ওজন করতে হবে ও মেঝেতে ঢালতে হবে
  • খাদ্য উপাদান প্রতিটি ঢালার পর হাত দিয়ে সমান করে ছড়িয়ে দিতে হবে
  • পরিমাণে কম লাগে এমন উপাদান (ভিটামিন, ভিসিপি, লাইসিন, মিথিওনিন, লবণ, খনিজ মিশ্রণ) ওভান করে এক সঙ্গে ভালোভাবে মেশাতে হবে
  • এ মিশ্রণকে পূর্বের খাদ্য উপাদানের স্তূপের উপর সমানভাবে ছড়িয়ে দিতে হবে
  • এর পর হাত দিয়ে বা মেশিনের সাহায্যে ৩-৪ বার খাদ্য ভালোভাবে মেশাতে হবে
  • সমস্ত মিশ্রণকে বস্তার ভরে মজ্জুদ করতে হবে এবং প্রয়োজন অনুসারে ব্যবহার করতে হবে
  • এ ধরনের মিশ্রিত গুড়া খাদ্যকে ম্যাশ খাদ্য বলে

 

মুরগির জন্য ৩ প্রকৃতির খাদ্য ব্যবহার করা হয়, যথা-

ম্যাশ খাদ্য-

সমস্ত উপকরণ একত্রে মিলানোকে ম্যাশ খাদ্য বলে। হাতে মিশ্রণ করলে প্রথমে পরিমাণে অল্প উপকরণসমূহ একত্রে মিশাতে হয়। ক্রমান্বয়ে বেশি উপকরণের সাথে একত্র করতে হবে। যন্ত্রের সাহায্যে মিশালে সুষম হয়।

 

পিলেট:  

খাদ্যকে লোহার জালিযুক্ত ছাকনির মধ্য দিয়ে যন্ত্রের সাহায্য চাপ প্রয়োগ করলে পিলেট তৈরি হয়। পিলেট ব্যবহার করলে খাদ্যের অপচয় কমে ও মুরগি বেশি পছন্দ করে। ব্রয়লারের জন্য এ খাদ্য বেশি ব্যবহার হয়।

ক্রাম্বল খাদ্য: 

ম্যাশ খাদ্যের অন্য প্রকৃতি ক্রাম্বল খাদ্য। ক্রাম্বল খাদ্যের লানা সিলেট দানার চেয়ে ছোট। এ খাদ্য ব্যবহারে খাদ্যের অপচয় কম হয়। পিলেটের মতই যন্ত্রের সাহায্যে ক্রাম্বল খাদ্য তৈরি করা হয়। ব্রয়লারের উচিার রেশন হিসাবে এই খাদ্য ব্যবহার করা হয়।

 

৩.০৯ ব্রয়লারের সুষম খাদ্য সংরক্ষণ ও সরবরাহঃ

সংরক্ষণ: 

স্থানীয় ভাবে তৈরিকৃত খাদ্য ৭-১০ দিন, কারখানার তৈরিকৃত খাদ্য ০-৪৫ দিন সংরক্ষণ করা হয়।

সরবরাহঃ

  • ব্রয়লারের খাবার পাত্রে সবসময় খাদ্য রাখতে হবে
  • ব্রয়লার স্বাধীনভাবে খাদ্য খাবে
  • গরমের দিনে খাদ্যকে ২৫:২৫:৫০ অনুপাতে সকাল, দুপুর ও বিকালে সরবরাহ করতে হবে
  • শীতের দিনে ২০:৫০:৩০ অনুপাতে সকাল, দুপুর ও বিকালে সরবরাহ করতে হবে

ব্রয়লারের খাদ্য পাত্রের ধরন ও সংখ্যা

 

৩.০৯ পানির উৎস ও গুনগতমান 

ব্রয়লারের সুস্বাস্থ্য ও রোগ প্রতিরোধের জন্য বিষদ্ধ ও জীবাণুযুক্ত পানি সরবরাহ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অনেক পানিবাহিত রোগের ও কৃমির হাত থেকে নিস্তার পাওয়া যার বিশুদ্ধ ও জীবাণুমুক্ত পানি সরবরাহ করলে। তাই খামারি যে পানি নিজে পান করেন ঠিক সে পানি পোস্ট্রিকে সরবরাহ করতে হবে। পানির উন্ন ও গুণগতমান সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হলো :

  • ব্রয়লার খাদ্য ছাড়া কয়েক দিন বেঁচে থাকতে পারে। কিন্তু পানি ছাড়া কয়েক ঘন্টার মধ্যেই মারা যেতে পারে
  • ব্রয়লার অপেক্ষাকৃত ঠান্ডা পানি পান করতে পছন্দ করে। কিন্তু বাচ্চার প্রথম দিকে স্বাভাবিক তাপমাত্রার পানি ব্যবহার করা উচিত
  • সাধারণভাবে পানি গ্রহণের পরিমাণ খাদ্য গ্রহণের বিষণ হয়। তবে গরমের সময় ৩-৪ গুণ হয়
  • ব্রুডারে বাচ্চা দেওয়ার ৩ ঘন্টা পূর্বে পানি দিতে হয় ও ব্রডার চালু করতে হয়। এতে পানি কিছুটা গরম হয়। বাচ্চার জন্য প্রথম পানি ঠান্ডা হওয়া উচিত নয়
  • বৎসরে ১-২ বার পানির গুণাগুণ পরীক্ষা করানোর ভালো
  • পানিতে অতিরিক্ত খনিজ দ্রব্য থাকলে পানির স্বাদ কমে যায়। ফলে ব্রয়লার পানি পান করা কমিয়ে দিতে পারে। তাই পানিতে ক্ষারতা পরীক্ষা করে পানি খাওয়াতে হবে
  • ব্রয়লারের পানীয় জল ঠান্ডা, পরিষ্কার, বিশুদ্ধ ও লবণযুক্ত হওয়া বাঞ্চনীয়
  • পানির পাত্র প্রতিদিন জীবাণুনাশক দ্বারা পরিষ্কার করতে হবে, না হলে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করলেও তা পরিষ্কার থাকবে না
  • পানির পাত্রের উপর লোহার গ্রিল দিলে বাচ্চা পাত্রের উপর উঠতে পারে না বা মল ত্যাগ করে পানিকে দূষিত করতে পারে না
  • প্রতিদিন পুরাতন পানি বদলিয়ে নতুন বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করতে হবে
  • পানি শোধনের জন্য ব্লিচিং পাউডার বা ক্লোরিন ব্যবহার করা হয়, যেমন- ব্লিচিং পাউডার, ১০০ লিটার পানিতে ৫ গ্রাম ব্লিচিং পাউডার ব্যবহার করতে হবে। অথবা যে কোনো পানি বিশোধক বড়ি মেশানো যেতে পারে।
  • ভ্যাকসিন বা ঔষধ খাওয়ানোর সময় ক্লোরিন পানি ব্যবহার করা উচিত নয়
  • পানি গরম হলে তা ঘন ঘন পরিবর্তন করে দিতে হবে
  • ডিপ টিউবয়েলের পানিতেও কলিফর্ম ব্যাকটেরিয়া থাকতে পারে। তাই এই পানির মান পরীক্ষা করতে হবে। তবে টিউবয়েলের পানি সর্বোৎকৃষ্ট
  • পানিতে pH কন্ট্রোলার ব্যবহার পানির p কমিয়ে ৫ এ আনা যায়। এতে পানিতে মেশানো ভিটামিন ও অ্যান্টিবায়োটিকের কার্যক্রম বৃদ্ধি পাবে

বয়স অনুযায়ী ব্রয়লারের পানির পাত্রের ধরন ও সংখ্যাঃ

 

শ্রেণির তাত্ত্বিক কাজ

  • পানিশোধনের জন্য কি ব্যবহার করা হয়?
  • ভ্যাকসিন বা ঔষধ খাওয়ানোর সময় কি পানির সাথে ব্যবহার করা উচিত নয়?

 

জব-৩ ব্রয়লার খাদ্য উপকরসমূহ সনাক্তরণ

পারদর্শিতার মানদণ্ড 

১) ব্রয়লার রেশনে ব্যবহৃত বিভিন্ন খাদ্য উপকরণ সনাক্ত করা 

২) খাদ্য উপকরণ সমূহের প্রয়োজনীয় পুষ্টি তথ্য চিহ্নিত করা 

৩) খাদ্য উপকরণসমূহের গুণগত মান নিশ্চিত করা

ক) ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম (PPE)

খ) প্রয়োজনীয় কাঁচামাল:

 

প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি:

 

কাজের ধারাঃ 

১. বাজার ও বিভিন্ন উৎস থেকে ব্রয়লার খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত খাদ্য উপকরণ সমূহ সংগ্রহ করো; 

২. খাদ্য উপকরণ সমূহের সঠিক পুষ্টিমান বই পুস্তক, ম্যাগাজিন, জার্নাল বা গবেষণা প্রতিষ্ঠান থেকে সংগ্রহ করো 

৩. খাদ্য উপাদান সমূহের উৎকৃষ্ট মান যাচাই করো, যেমন- দানাদার অবস্থা, আর্দ্রতা, পদ, বৰ্ণ ইত্যাদি সঠিক ভাবে আছে কিনা যাচাই করো; 

বাংলাদেশে সাধারনত নিম্নলিখিত খাদ্য উপাদানসমূহ পোল্ট্রি খাদ্য তৈরীতে ব্যবহৃত হয়। যাদের পুষ্টিমানের তালিকা নিম্নে প্রদান করা হল

এছাড়াও পোল্ট্রি খাদ্যে বিভিন্ন প্রকার কৃত্রিম ভিটামিন ও খনিজ উৎস, ছত্রাক ও টক্সিন বাইন্ডার, এনজাইম, কৃত্রিম এমাইনো এসিড ইত্যাদি ব্যবহার করব। যেমন:

ক) ভিটামিন-মিনারেল প্রিমিক্স- জি এস, ডব্লিউ এস 

খ) ছত্রাক বাইন্ডার- মোল্ড ষ্টপ, সরবাটক্স 

গ) টক্সিন বাইন্ডার-ডট, ইএসবি-৩ 

ঘ) কৃত্রিম অ্যামাইনো এসিড- লাইসিন, মিথিওনিন 

ঙ) ইলেকট্রোলাইট ইত্যাদি

৪. প্রতিটি উপাদানের পুষ্টিমান সঠিক ভাবে জেনে নিয়ে মান ও ব্যবহার অনুযায়ী গ্রুপে ভাগ করে লিপিবদ্ধ করো; 

৫. এরপর প্রতিটি খাদ্য উপাদানের নমুনা পৃথক ভাবে স্বচ্ছ প্লাস্টিকের জারে রেখে তার গায়ে নাম লিখে রাখ; 

৬. কাজ শেষে কক্ষটি পরিস্কার করে খাদ্য উপাদানসহ প্লাস্টিকের জার গুলো সুন্দর ভাবে শুষ্ক ও ঠান্ডা জায়গায় সাজিয়ে রাখ ।

 

সতর্কতাঃ 

১) নির্ভরযোগ্য উৎস হতে খাদ্যের পুষ্টিমান সংগ্রহ করো । 

২) খাদ্য উপকরণ সমূহ সঠিকভাবে লেবেলিং করে শুষ্ক ও ঠান্ডা জায়গায় রাখ যাতে সহজে নষ্ট না হয় । 

৩) কোন ভাবেই ভেজাল বা নিম্নমানের খাদ্য উপকরণ সংগ্রহ করবে না ।

 

জব- ৫ ব্রয়লারের সুষম রেশন তৈরি 

পারদর্শিতার মানদন্ড 

  • বরস অনুসারে বিভিন্ন ধরণের সুষম রেশন তৈরি করা
  • অর্থনৈতিক ভাবে লাভজনক খাদ্য সরবরাহ করা
  • খামারে সর্বোচ্চ উৎপাদন নিশ্চিত করা

ক) ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম (PPE):

খ) প্রয়োজনীয় কাঁচামাল 

গ) প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি:

অন্যান্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি (যদি প্রয়োজন হয়) :

কাজের ধারাঃ 

১) বয়স ও উৎপাদন অনুযায়ী ব্রয়লার রেশনের প্রয়োজনীয় পুষ্টিমানের তালিকা সংগ্রহ করো 

২) বিভিন্ন ধরনের খাদ্য উৎপানের পুষ্টি তালিকা সংগ্রহ করো 

৩) সকল ধরনের পুষ্টি উপাদান যুক্ত খাদ্য উপকরণ সমূহ ব্যবহার করে সুষম রেশন ফরমুলেশন করো 

৪) ফরমুলেশনকৃত তালিকা অনুযায়ী খাদ্য উপাদান সমূহ মেপে পৃথক পৃথক পাত্রে রাখ 

৫) কম পরিমানে ব্যবহৃত খাদ্য উপাদান সমূহ একত্রে ভাল ভাবে মিশাও । 

৬) এরপর কম পরিমানে ব্যবহৃত উপাদান সমূহ পর্যায়ক্রমে বেশী পরিমানে উপাদান সমূহের সাথে মিশাও । 

৭) খাদ্য উপাদান মিশানো শেষ হলে পুনরায় ভালভাবে উল্টেপাল্টে মিশাও যাতে সকল উপাদান সমভাবে মিশ্রিত হয়। 

৮) তৈরীকৃত খাদ্য ঠান্ডা ও শুস্ক জায়গায় বস্তায় সংরক্ষণ করি। উক্ত মিশ্রিত খাদ্য ঋতু ভেদে ৭-১০ দিন সংরক্ষণ করা যাবে ।

 

৯) নিম্নে ব্রয়লার মুরগির নমুনা খাদ্য তালিকা অনুযায়ী রেশন তৈরি করব। 

ব্রয়লার খাদ্য তালিকা:

 

সতর্কতাঃ 

১) কম পরিমাণে ব্যবহৃত উপাদান সমূহ খুবই সাবধানতার সাথে মাপ ও মিশাও যাতে সকল খাদ্যের সাথে সমভাবে মিশে যায় । 

২) রেশন ফরমূলেশনের সময় হিসাব বারবার যাচাই কর যেন ভুল না হয় ও অর্থনৈতিক ভাবে লাভজনক হয়।

 

 

Content added || updated By
Please, contribute to add content into অনুশীলনী.
Content

আরও দেখুন...

Promotion