ব্রয়লার মুরগির মৃত্যুর হার খুব বেশি হলে একজন ব্রয়লার পালনকারীর কাছে তা বিরাট সমস্যা। মৃত্যুর হার বেশি দেখে যেকোনো পালনকারী নিরুৎসাহ বোধ করাই স্বাভাবিক। তবে সতর্ক দৃষ্টি ও ভাল ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে মৃত্যুর হার কমানো যায়। মাত্র কয়েকটি রোগ ছাড়া বেশির ভাগ রোগকে নিরাময় করা যায় না। তাই যেকোনো রোগের চিকিৎসার চেয়ে রোগ প্রতিরোধের ব্যবস্থা করা অত্যন্ত জরুরি।
এ অধ্যায় পাঠ শেষে আমরা-
পর্যাপ্ত খাদ্য ও উপযুক্ত পরিবেশ দেওয়ার পরও যদি শরীরের অস্বাভাবিকতা দেখা দেয় তবে তাকে রোগ বলে। অর্থাৎ যেকোনো প্রাণির স্বাভাবিক অবস্থা থেকে অস্বাভাবিক অবস্থায় রুপান্তরকেই রোগ বলে ।
ব্রয়লার মুরগির অর্থনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ রোগগুলোকে নিম্নরূপে শ্রেণিবিভাগ করা যা:
সংক্রামক রোগ (Contagious Disease)
যে সমস্ত রোগ জীবাণু মাধ্যমে অসুস্থ পাখি থেকে সুস্থ পাখিতে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে সেগুলোকে সংক্রামক রোগ বলে। এদেরকে নিম্নলিখিত ভাবে ভাগ করা যায়, যথা-
২. অসংক্রামক রোগ (Non-contagious diseases) :
যে সমস্ত রোগ জীবাণু বা জীবিত বস্তুর উপস্থিতি ছাড়া জীব দেহে হঠাৎ যে অস্বাভাবিক অবস্থার সৃষ্টি হয় তাকে অসংক্রামক রোগ বলে।
৩. পরজীবী (Parasites) জনিত রোগ:
পরজীবী এক ধরনের জীব যা অন্য জীব দেহে বসবাস করে জীবন ধারন করে। যে জীবের দেহের উপর এরা জীবন ধারন করে তাদেরকে হোস্ট বা গোষক বলে। কিছু পরজীবী আছে যারা পোষকের দেহের ভিতরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গে বসবাস করে ক্ষতিসাধন করে। এদেরকে দেহাভ্যন্তরের পরজীবী বলে। আবার কিছু পরজীবী আছে যারা পোষকের দেহের বাহিরের অঙ্গে বসবাস করে ক্ষতি সাধন করে । এদেরকে বহিঃদেহের পরজীবী বলে। উভয় পরজীবী আক্রমণের ফলে পোল্ট্রি শিল্প ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। এরা পাখির দেহে বসবাস করে পাখি কর্তৃক খাওয়া পুষ্টিকর খাদ্য নিজেরা খেয়ে ফেলে, ফলে আক্রান্ত পাখি পুষ্টি হীনতায় ভোগে। অনেক পরজীবী পাখির দেহে বসবাস করে রক্ত তবে নেয়, ফলে আক্রান্ত পাখির দেহে রক্তশূন্যতা দেখা দেয়।
পরজীবী দুই প্রকার:
১. অন্তঃপরজীবী: কৃমি
২. বহিঃপরজীবী: উকুন, আটালী, মাইট।
অপুষ্টি জনিত রোগ (Malnutrition):
গৃহপালিত পাখি পালনের মাধ্যমে বাণিজ্যিকভাবে লাভবান হওয়ার অন্যতম প্রধান শর্ত হল পাখিকে সুষম খাদ্য প্রদান করা। পাখির মাংস ও ডিম উৎপাদন এবং দৈনিক বৃদ্ধি সাধনের জন্য সুষম খাদ্যের প্রয়োজন। খাদ্যের মধ্যে যেকোনো খাদ্যে উপকরণের অভাব হলে মুরগির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়, দৈহিক বৃদ্ধি ব্যাঘাত ঘটে, ডিম ও মাংস উৎপাদন ক্ষমতা কমে যায় এমনকি পাখির মৃত্যুও হতে পারে। অপুষ্টি জনিত রোগঃ জেরোপথ্যালামিয়া, প্যারালাইসিস, পেরোসিস, ক্যানাবলিজম, রিকেট ।
শ্রেণির তাত্ত্বিক কাজ -১ (জীবাণু ঘটিত রোগ)
শ্রেণির তাত্ত্বিক কাজ-২ (পরজীবী নাম)
৪.২.১ রাণীক্ষেত রোগ (Newcastle Disease):
রাণীক্ষেত ব্রয়লার মুরগির ভাইরাসজনিত তীব্র ছোঁয়াচে রোগ। পৃথিবীর কমবেশি প্রত্যেক দেশে এ রোগের প্রকোপ রয়েছে। বাংলাদেশের মুরগির রোগগুলোর মধ্যে রাণীক্ষেত সবচেয়ে মারাত্মক ও গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিবছর এ রোগে দেশের বিরাট অর্থনৈতিক ক্ষতি সাধিত হয়। এ রোগের ব্যাপকতা এবং ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এত বেশি যে, মুরগি পালনের জন্য রাণীক্ষেত রোগ একটি প্রধান অন্তরার। বয়স্ক অপেক্ষা বাচ্চা মুরগি এতে বেশি আক্রান্ত হয়। সাধারণত: শুল্ক আবহাওয়ায়, যেমন- শীত ও বসন্তকালে এ রোগটি বেশি দেখা যায়। তবে, বছরের অন্যান্য সময়েও এ রোগ হতে পারে। এ রোগটি সর্বপ্রথম ইংল্যান্ডের নিউক্যাসল নামক শহরে শনাক্ত করা হয়। তাই তাকে নিউক্যাসল ডিজিলও বলা হয়। তাছাড়া এ উপমহাদেশে ভারতের রাণীক্ষেত নামক স্থানে সর্বপ্রথম এ রোগটির অস্তিত্ব ধরা পড়ে বলে এ রোগকে রাণীক্ষেত রোগ বলা হয় ।
রোগের কারণঃ
রাণীক্ষেত রোগ বলা হয় । প্যারামিক্সোভিরিডি পরিবারের নিউক্যাসল ডিজিজ ভাইরাস নামক এক প্রজাতির প্যারামিক্সোভাইরাস এ রোগের কারণ।
রোগ সংক্রমণ -
নিম্নলিখিতভাবে এ রোগের জীবাণু সংক্রমিত হতে পারে। যেমন-
রোগের লক্ষণ: রাণীক্ষেত রোগের প্রধানত তিন প্রকৃতির লক্ষণ প্রকাশ পায় । যথা-
ক. ভেলোজেনিক (Velogenic) প্রকৃতি লক্ষণ ।
খ. মেসোজেনিক (Messogenic) প্রকৃতি লক্ষণ ।
গ. লেন্টোজেনিক (Lentogenic) প্রকৃতি।
ক. ভেলোজেনিক প্রকৃতি লক্ষণ :
এ প্রকৃতির রাণীক্ষেত রোগ সবচেয়ে মারাত্বক। এতে অনেক সময় অত্যন্ত দ্রুত জীবাণু সংক্রমনের ফলে লক্ষণ প্রকাশের পূর্বেই মুরগি মারা যেতে পারে। তবে তা না হলে নিম্নলিখিত লক্ষণ প্রকাশ পায়। যেমন-
খ. মেসোজেনিক প্রকৃতি লক্ষণ:
মেসোজেনিক প্রকৃতিতে আক্রান্ত মুরগিতে রোগের লক্ষণ ততটা তীব্র নয়। তবে, নিম্নলিখিত লক্ষণ দেখা যায়।
গ. লেপ্টোজেনিক প্রকৃতি
এতে মৃদু প্রকৃতির লক্ষণ প্রকাশ পায়। যথা-
রোগ নির্ণয়:
ময়নাতদন্তে নিম্নলিখিত লক্ষন দেখা যায়-
চিকিৎসা:
এ রোগের কোনো চিকিৎসা নেই। তবে, আক্রান্ত পাখিতে ব্যাকটেরিয়ার মাধ্যমিক সংক্রমণ রোধে অ্যান্টিবায়োটিক বা সালফোনেমাইড জাতীয় ওষুধ ব্যবহার করা যেতে পারে। এছাড়াও ০.০১% পটাসিয়াম পারম্যাঙ্গানেট পানির সঙ্গে মিশিয়ে আক্রান্ত পাখিকে দৈনিক ২/৩ বার খাওয়ানো যেতে পারে।
রোগ প্রতিরোধ :
রাণীক্ষেত রোগ প্রতিরোধ দু'ধরনের টিকা ব্যবহার করা হয়। যথা- বি.সি.আর.ডি.ভি এবং আর. ডি. ভি।
বি.সি.আর.ডি.ভি:
এ টিকাবীজের প্রতিটি শিশি বা ভায়ালে হিম শুষ্ক অবস্থায় ১ মি. লি. মূল টিকাবীজ থাকে। প্রতিটি শিশির টিকাবীজ ৬ মি.লি. পরিস্রুত পানিতে ভালোভাবে মিশাতে হয়। এরপর ৭ দিন ও ২১ দিন বয়সের প্রতিটি বাচ্চা মুরগির এক চোখে এক ফোটা করে ড্রপারের সাহায্য নিতে হবে।
আর. ডি. ভি:
এ টিকাবীজের প্রতিটি ভায়ালে ০.৩ মি.লি. মূল টিকাবীজ হিম শুষ্ক অবস্থায় থাকে। এ টিকা দু'মাসের অধিক বয়সের মুরগির জন্য উপযোগী। প্রথমে ভায়ালের টিকাবীজ ১০০ মি:লি: পরিস্রুত পানির সঙ্গে ভালভাবে মিশিয়ে নিতে হবে। এরপর তা থেকে ১ মি.লি. করে নিয়ে প্রতিটি মুরগির রানের মাংসে ইনজেকশনের মাধ্যমে প্রয়োগ করতে হবে। ছয় মাস পরপর এ টিকা প্রয়োগ করতে হবে। টিকা ছাড়া খামার থেকে রোগ দমনের জন্য নিম্নলিখিত বিষয়গুলো মেনে চলতে হবে । যথা-
শ্রেণির তাত্ত্বিক কাজ
গামবোরো বাচ্চা মুরগির মারাত্বক সংক্রমণ রোগ। পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই এর প্রাদুর্ভাব রয়েছে। এ রোগে মুরগির রোগ প্রতিরোধক অঙ্গ অর্থাৎ বার্সা ফ্যাব্রিসিয়াস আক্রান্ত হয় বলে প্রতিরোধক ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়। তখন এরা সহজেই অন্য যেকোনো রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ে। তাই এ রোগকে বাৰ্ড এইডস না পোল্ট্রি এইডসও বলা হয়। এই রোগটি সর্ব প্রথম যুক্তরাষ্ট্রের ডেলওয়ার অঙ্গরাজ্যের গামবোরো অঙ্গ রাজ্যে শনাক্ত করা হয় বলে একে গামবোরো রোগ বলে। কিন্তু এর মূল নাম ইনফেকশাস বার্সাইটিস বা ইনফেকশাস বার্সাল ডিজিজ। এ রোগে সাধারণত ২-৬ সপ্তাহ বয়সের বাচ্চা বেশি আক্রান্ত হয়। আক্রান্তের হার খুব বেশি (১০০% পর্যন্ত), তবে মৃত্যু হার খুব কম (৫-১৫%)। তবে কোনো কোনো সমর আক্রান্ত বাচ্চার ৫০% ও মারা যেতে পারে। এ রোগ থেকে সেরে ওঠা মুরগির উৎপাদন ক্ষমতা অত্যন্ত কমে যায়।
রোগের কারণ:
বিরনা ভিরিডি পরিবারের অন্তর্গত বিরনা ভাইরাসের সেরোটাইপ-১ এ রোগের জন্য দায়ী। এ ভাইরাসের দুটো স্ট্রেইন রয়েছে। যেমন- ক্ল্যাসিকাল ও ভেরিয়েন্ট স্ট্রেইন।
সংক্রামণঃ
নিম্নলিখিতভাবে এ রোগটি অসুস্থ্য মুরগি থেকে সুস্থ্য মুরগিতে সংক্রমিত হতে পারে। যেমন-
গামবোরো রোগে আক্রান্ত লক্ষণ দেখা যায়:
রোগ নির্ণয়:
মৃত বাচ্চার ময়না তদন্তে নিম্নলিখিত প্যাথলজিক্যাল পরিবর্তন দেখে গামবোরো রোগ সনাক্ত করা যায়-
চিকিৎসা:
এ রোগের কোন চিকিৎসা নেই । তবে আক্রান্ত পাখিগুলোকে ৩-৫ দিন স্যালাইন পানি (৫ লিটার পানি + ২৫০ গ্রাম আখের গুড় + ১০০ গ্রাম লবণ) পান করালে এদের পানিশূন্যতা রোধ হয়। এরা পায়ে শক্তি পায় এবং রক্তপড়া বন্ধ হতে পারে।
রোগ প্রতিরোধঃ রোগপ্রতিরোধই এ রোগ নিয়ন্ত্রণের একমাত্র পন্থা। এজন্য খামারে সবসময় সাহাসম্মত পরিবেশ বজায় রাখতে হবে। ঘরলোর, খাঁচা ও অন্যান্য যন্ত্রপাতি জীবাণুনাশক, যেমন ফরমালিন (ফরমালিন : পানি = ১:৯), আরোসান বা সুপারসেন্ট দিয়ে ধৌত করতে হবে। বাংলাদেশে পামবোরোর বেশ কয়েক ধরনের টিকা আমদানি করা হয় যেমন:
এখনো প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের নির্দেশিত মাত্রায় নির্দিষ্ট বয়সে পাখিতে প্রয়োগ করতে হবে। তবে, ১৪-১৮ দিন বয়সে প্রথমবার ও ২৪-২৮ দিন বয়সে বুষ্টার হিসেবে চোখে ড্রপ বা মুখের মাধ্যমে পান করিয়ে এ টিকা প্রয়োগ করলে ভাল ফল পাওয়া যায়।
এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা রোগের কারণ:
এটি ভাইরাসজনিত রোগ। এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা নামক ভাইরাস এরোগের কারণ। মানুষে ছড়ালে একে বা ফ্লু বলে। মানুষে সংক্রমণের কারণে বার্ড ফ্লু বর্তমানে সর্বাধিক আলোচিত রোগ। এ রোগে ব্রয়লার মুরগির মৃত্যুর হার ১০০% পর্যন্ত হতে পারে।
রোগের বিস্তার:
রোগাক্রান্ত মুরগির প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সংস্পর্শ, মুরগির মল, লালা ইত্যাদি ব্যবহৃত খাদ্য, পানি, যন্ত্রপাতি, পাত্র, ইত্যাদির মাধ্যমে রোগটি ছড়াতে পারে।
এছাড়া আক্রান্ত খামারের যানবাহন, ব্যক্তি, পরিদর্শনকারী ইত্যাদির মাধ্যমে রোগটি ছড়াতে পারে ।
রোগের লক্ষণ:
পোস্টমর্টেম লক্ষণঃ
শরীরের বিভিন্ন অংশে ও মাংসপেশিতে রক্তক্ষরণ দেখা যায়। চামড়ার নিচে, শ্বাসনালী, ফুসফুসে রক্তক্ষরণ ও যা দেখা যায়। সঠিকভাবে রোগ নির্ণয়ের জন্য প্রতিষ্ঠিত ল্যাবে পাঠাতে হবে।
প্রতিরোধের উপায়ঃ
জৈব নিরাপত্তা সঠিকভাবে মেনে চলতে হবে। এছাড়া কোনো খামারে এ রোগ দেখা দিলে সম্মিলিতভাবে বৈজ্ঞানিক উপারে সমক ব্রয়লার মুরগিকে ধ্বংস করতে হবে। কোন ভাবেই আক্রান্ত মুরগি খামার থেকে বের করা যাবে না।
রোগের কারণ:
এভিয়ান করোনা ভাইরাস এ রোগের কারণ। সাধারণত বাচ্চা মুরগির এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। সাদা জাতের মুরগিতে এ রোগের প্রাদুভাব বেশি। মৃত্যুহার ১০-১৫% পর্যন্ত হতে পারে। বাচ্চা মৃত্যুর হার ১০% পর্যন্ত হতে পারে ।
রোগের বিস্তার:
বাতাসের মাধ্যমে আক্রান্ত মুরগি ও তার ব্যবহৃত যন্ত্রপাতির মাধ্যমে এ রোগ ছড়ায়।
রোগের লক্ষণ:
পোস্টমর্টেম লক্ষণ:
শ্বাসনালীতে প্রচুর শ্লেম্মা ও মৃদু রক্তক্ষরণ দেখা দিবে। অস্বাভাবিক ডিমের কুসুম দেখা যাবে।
প্রতিরোধ :
নিয়মমতো টিকা প্রদান করতে হবে এবং জৈব নিরাপত্তা ব্যবস্থা কঠোরভাবে পালন করতে হবে।
চিকিৎসা:
কার্যকরী চিকিৎসা নেই। দ্বিতীয় পর্যায়ে সংক্রমণ এড়াতে অ্যান্টিবায়োটিক (মাইক্রোনিড, ডক্সাসিল ভেট) প্রয়োগ করতে হবে।
শ্রেণির তাত্ত্বিক কাজ
ককসিডিয়া নামক প্রটোজোয়া দ্বারা সৃষ্ট রোগসমূহকে ককসিডিওসিস বলে। অল্প বয়সের মুরগি বিশেষ করে ৪-৮ সপ্তাহের ব্রয়লার মুরগি এ রোগে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়। তবে বেশি বয়সী মুরগিতেও কখনও কখনও এ রোগ দেখা দেয়। আমাদের দেশে আইমেরিয়া টেনেলা ও আইমেরিয়া নেকাট্রিক্স নামে ২টি জীবাণু দ্বারা রক্ত আমাশয় হয়। মুরগির বাচ্চার মড়কের কারণগুলোর মধ্যে এই রোগ অন্যতম।
রোগের লক্ষণঃ
পোস্টমর্টেম লক্ষণঃ
আক্রান্ত মুরগিতে রক্তমিশ্রিত পায়খানা থাকে। অন্ত্রের আক্রান্ত স্থানে ক্ষত চিহ্ন দেখা যায় ও অন্ত্রের দেয়ালের বাইরে থেকে রক্ত আবরণের চিহ্ন দেখা যায়। সিকামে রক্ত মিশ্রিত তরল বিষ্ঠা থাকবে।
প্রতিরোধ:
চিকিৎসা:
খাদ্যের যেকোনো এক বা একাধিক খাদ্যোপাদানের ঘাটতির কারণে ব্রয়লার মুরগির বৃদ্ধি ও উৎপাদন ব্যাহত হয়, এমনকি মৃত্যুও হতে পারে। নিচে ব্রয়লারে বিভিন্ন ভিটামিনসমূহের অভাবজনিত রোগ, তাদের চিকিৎসা ও প্রতিকারের বর্ণনা দেওয়া হলো
কতদিন পর্যন্ত মুরগিগুলো এই ভিটামিনের অভাবে ভুগছে তার উপর ভিত্তি করে ভিটামিন-‘এ' এর অভাবে সৃষ্ট লক্ষণ প্রকাশ পায়। বয়স্ক মুরগিতে লক্ষণ দেখা দিতে কয়েক মাস সময় লাগতে পারে। কিন্তু ব্রয়লার মুরগিতে ২/৩ সপ্তাহে মধ্যে লক্ষণ প্রকাশ পায়। ভিটামিন-‘এ' এর অভাবজনিত লক্ষণগুলো অবস্থা ও বয়স ভেদে ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে ।
অভাবজনিত লক্ষণ :
অভাব নিরূপণ:
প্রতিকার ও চিকিৎসঃ
খাদ্যে এন্টি অক্সিডেন্ট ব্যবহার করা প্রয়োজন। শাকসবজি, ভূট্টা, গম, ছোট মাছ, ফলমুল, ফলমূলের খোসা, হাঙ্গর মাছের তেল খাওয়ানে ভিটামিন-এ এর অভাব দূর হয়। লক্ষণ দেখা দিলে প্রতিদিন বাজারে প্রাপ্ত ভিটামিন এ.ডি. প্রবণ প্রস্ততকারকের নির্দেশমত খাদ্য বা পানির সাথে পর্যাপ্ত পরিমাণ সরবরাহ করতে হবে।
শরীরের হাড় এবং ডিমের খোসার গঠনের জন্য অর্থাৎ ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস-এর কার্যকারিতার জন্য এই ভিটামিন অত্যন্ত জরুরি। সালফার জাতীয় ঔষধ ব্যবহার করলে বা খাবার দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করলে ভিটামিন- দ্ধি নষ্ট হয়ে যার ফলে মুরগি খাবার হতে প্রয়োজনীয় পরিমাণ ভিটামিন-ডি পায় না।
অভাব্জনিত লক্ষণঃ
রোগ নিরূপণ :
ক)লক্ষণ দেখে রোগ নিরূপণ তথা ভিটামিন-ডি এর অভাব বোঝা যায় ।
খ) খাদ্যে ভিটামিনের পরিমাণ পরিমাপ করে এবং
গ) সন্দেহজনক মুরগিকে যদি ভিটামিন-ডি সরবরাহ করে ভালো ফল লাভ করা যায় তাহলে বুঝতে হবে মুরগিগুলো ভিটামিন-ডি এর অভাবে ভুগছিল ।
সতর্কতাঃ
অতিরিক্ত মাত্রায় ভিটামিন-ডি খাদ্যে দীর্ঘদিন ধরে প্রয়োগ করলে মুরগির কিডনি নষ্ট হয়ে যেতে পারে ।
প্রতিরোধ ও চিকিৎসা:
পানিতে দ্রবণীয় এ ভিটামিনটির অভাবে খুব তাড়াতাড়ি রোগের লক্ষণ প্রকাশ পায়। খাদ্যে অধিক পরিমাণে শর্করা বা কার্বোহাইড্রেট এবং সেই অনুযায়ী প্রয়োজনীয় পরিমাণ ভিটামিন-বি-১ বিদ্যমান না থাকলে এর অভাবজনিত লক্ষণ দেখা যায় ।
অভাবজনিত লক্ষণঃ
রোগ নির্ণয় :
প্রতিরোধ ও চিকিৎসাঃ
সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি এবং খাবার পানির পিএইচ ভিটামিন বি-২ কে নষ্ট করে ফেলতে পারে। তাই খাদ্যে এর অভাব দেখা দিতে পারে।
অভাবজনিত লক্ষণ
বাচ্চা অবস্থায় প্রথম কয়েক সপ্তাহ ও ভিটামিনটির অভাব হলে মুরগির মধ্যে-
রোগ নিরূপনঃ
রোগের লক্ষণ দেখে ভিটামিন বি-২ সরবরাহ করলে যদি লক্ষণগুলো দ্রুত চলে যায় তবে বুঝতে হবে মুরগিগুলো ঐ ভিটামিনের অভাবে ভুগছিল ।
প্রতিরোধ ও চিকিৎসা:
খাবারের মধ্যে অধিক পরিমাণে প্রোটিন জাতীয় পদার্থ থাকলে সাধারণত এ ভিটামিনটির অভাবজনিত সমস্যা দেখা যায় । কারণ এটি প্রোটিনের বিপাকে সাহায্য করে ।
অভাবজনিত লক্ষণ:
রোগ নির্ণয়:
খাদ্যে ভিটামিনের পরিমাণ নির্ণয় করে ও রোগের লক্ষণ দেখে প্রাথমিকভাবে ধারণার ভিত্তিতে ভিটামিন বি-৬ সরবরাহ করলে যদি ভালো ফল পাওয়া যায় তবে বুঝতে হবে ঐ ঝাঁকের মুরগিগুলি ভিটামিন বি-৬ এর অভাবে ভুগছিল ।
প্রতিকার ও চিকিৎসা:
আমিষ, শ্বেতসার, চর্বি এবং ভিটামিনের মতো পাখির খাদ্যে খনিজ পদার্থের একান্ত প্রয়োজন। পাখির বা মুরগির দৈহিক বৃদ্ধি,স্বাস্থ্য রক্ষা এবং প্রজননের জন্য খনিজপদার্থ অত্যাবশ্যক। তবে অধিক পরিমাণে খনিজপদার্থ বিষক্রিয়া সৃষ্টি করে।তাই পরিমিত পরিমাণ খনিজপদার্থ খাদ্যের সাথে সরবরাহ করতে হয় ।
ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস এর কাজ:
ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস এর অভাবজনিত লক্ষণ :
প্রতিরোধ ও চিকিৎসা:
সোডিয়াম এর অভাবজনিত রোগ :
সোডিয়ামের কাজঃ
সোডিয়ামের অভাবজনিত লক্ষণ :
প্রতিকার ও চিকিৎসা:
খাদ্যে সাধারণ লবণ সরবরাহ করে এর অভাব দূর করা যায় ।
জিংক এর অভাবজনিত রোগ
জিংকের কাজ
জিংকের অভাবজনিত লক্ষণ:
প্রতিকার ও চিকিৎসা:
মুরগির খাদ্যে জিংকের বা জিংক সমৃদ্ধ উপকরণের পরিমাণ বাড়িয়ে দিতে হবে ।
সেলেনিয়াম এর কাজ ও অভাবজনিত রোগ
সেলেনিয়ামের কাজঃ
সেলেনিয়ামের অভাবজনিত লক্ষণ :
প্রতিকার ও চিকিৎসা:
ছোলা জাতীয় খাদ্যের পরিমাণ বাড়িয়ে দিলে বা খাদ্যে সেলেনিয়াম যুক্ত করলে এর অভাব দূর হয় ।
লৌহ ও কপার এর অভাবজনিত রোগ
অভাবজনিত লক্ষণ :
প্রতিকার ও চিকিৎসা:
শাকসবজি, ঘাস, মাছের গুঁড়া ইত্যাদি খাওয়াতে হবে। খাদ্যে ফেরাস সালফেট ও কপার সালফেট সংযোজন করতে হবে।
কলিন এর অভাবজনিত রোগ
ব্রয়লার শরীরে বিভিন্ন শরীরবৃত্তীয় ক্রিয়াকলাপে কলিন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। শারীরিক অসাড়তা দূর ও শরীরের বৃদ্ধির জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এটি দেহের বিভিন্ন টিস্যু বা কলার গঠনে এবং স্নায়ুতন্ত্র সচল রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। মুরগির খাদ্যে যথেষ্ট পরিমাণে কলিন সরবরাহ করা বাঞ্ছনীয় ।
অভাবজনিত লক্ষণ :
রোগ নির্ণয় :
লক্ষণ দেখে এবং পোস্টমর্টেমের মাধ্যমে রোগ নির্ণয় করা সম্ভব। এছাড়াও খাদ্যস্থিত কলিন বৃদ্ধি করে যদি ফল পাওয়া যায় তবে ধরতে হবে কলিনের অভাব ছিল।
প্রতিরোধ ও চিকিৎসা:
খাবারের তালিকায় যথেষ্ট পরিমাণ সয়াবিন মিল, গম ভাঙা, ফিস মিল ইত্যাদি থাকায় ব্রয়লার মুরগিতে কলিনের অভাব সাধারণত হয় না। কারণ সয়াবিন মিল ও ফিসমিলে প্রচুর পরিমাণে কলিন থাকে। বাজারে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে যে কলিন বা কলিন ক্লোরাইড পাওয়া যায়, তা প্রয়োজন মত খাবারে মিশিয়ে দিতে হবে। তবেই কলিনের অভাজনিত রোগ প্রতিরোধ সম্ভব।
টিকা বীজ হচ্ছে রোগের প্রতিরোধক যা রোগের জীবাণু বা জীবাণুর অ্যান্ট্রিজেনিক উপকরণ দ্বারা তৈরী করা হয়। পাখির দেহের ভিতর রোগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলার জন্য টিকাবীজ প্রয়োগ করতে হয়। টিকা বীজ প্রয়োগের ফলে দেহের ভিতর রক্ত বা রক্তরসে একপ্রকার ইমিউনোগ্লোবিউলিন নামক আমিষ পদার্থ তৈরী হয়। যাকে অ্যান্টিবডি বলা হয়। এ অ্যান্টিবডিই হচ্ছে রোগ প্রতিরোধ পদার্থ। এজন্য কৃত্রিম উপায়ে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্যে সুনির্দিষ্ট সময়ের ব্যাবধানে টিকা প্রদানের যে সিডিউল তৈরী করা হয় তাই টিকা দান কর্মসূচী।
বর্তমানে খামারিগণ নিম্নলিখিত টিকা প্রদান কর্মসূচি ব্যাপকভাবে অনুসরণ করেন-
পারদর্শিতার মানদণ্ড:
ক) ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরাম (PPE):
খ) প্রয়োজনীয় কাঁচামাল:
গ) প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি:
কাজের ধারাঃ
১) বিশ্বস্থ উৎস হতে রানীক্ষেত ও গামবোরো রোগের টিকা সংগ্রহ করা
২) নিরাপত্তামূলক পোষাক যেমন- অ্যাপ্রন, দস্তানা ও গামবুট পরিধান করা ।
৩) টিকা প্রদানে যন্ত্রপাতি পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্ত করা ।
৪) সূচি মোতাবেক ব্রয়লার শেডে যাওয়া ।
৫) দিনে ঠান্ডা অংশে (সকাল বা সন্ধ্যা) ছায়াযুক্ত স্থানে টিকা প্রস্তুত কারী প্রতিষ্ঠানে নির্দেশ মোতাবেক পাতিত পানির সাথে মিশ্রিত করা।
৬) এর পর বাচ্চা মুরগিকে সঠিক ভাবে ধরে আয়ত্তে এনে নিম্নলিখিত ভাবে টিকা প্রদান করা ।
রানীক্ষেত টিকা প্রদান পদ্ধতিঃ
চিত্র ৪.১৬: রাণীক্ষেত টিকা
গামবোরো টিকা প্রদান:
৭) টিকাদানকৃত বাচ্চাকে পৃথক রাখ ।
৮) গরম কালে ১ ঘন্টা ও শীত কালে ২ ঘন্টার মধ্যে টিকাদান শেষ করো ।
৯) অবশিষ্ট টিকা ও ভায়াল মাটির নিচে পুতে ফেল ।
আরও দেখুন...