একমাত্র মাংস উৎপাদনের উদ্দেশ্যে পালিত দ্রুত দৈহিক বর্ধনশীল নরম ও তুলতুলে মাংসল বক্ষবিশিষ্ট ৪-৫ সপ্তাহ বয়সের স্ত্রী অথবা পুরুষ মুরগি ব্রয়লার নামে পরিচিত। ব্রয়লারের খাদ্য রুপান্তর দক্ষতা সাধারণত ২:১ অনুপাতে হয়ে থাকে, তবে এ অনুপাত পালন ব্যবস্থাপনা এবং অপরাপর সংশ্লিষ্ট বিষয়াদির উপর অনেকাংশেই নির্ভরশীল। ভিন্ন দুটি খাঁটি জাতের মোরগ-মুরগীর মধ্যে সংকরায়ণের মাধ্যমে ব্রয়লারের জাত (ভ্যারাইটি বা স্ট্রেইন হিসাবে পরিচিত) সৃষ্টি করা হয়। অতি দ্রুত দৈহিক বৃদ্ধির হার, খাদ্য রুপান্তর ক্ষমতা, মাংসের স্বাদ, নরম ঋণ ও চমকপ্রদ রঙের বিষয়াদি সুবিবেচনায় রেখে দুটি খাঁটি ভিন্ন জাতের মোরগ-মুরগীর মধ্যে সংকরারণের মাধ্যমে ব্রয়লার ভ্যারাইটি বা স্ট্রেইন সৃষ্টি করা হয়। তুলনামূলক হিসাবে অতি অল্প সময়ে (২৮-৩২ দিনে) দৈহিক বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়ে আশানুরূপ লাভ প্রদান করে বিধায় ব্রয়লারের পালন প্রযুক্তি অনেকটা দক্ষতার সাথে প্রয়োগ করা প্রয়োজন ।
এই অধ্যায় পাঠ শেষে আমরা-
ক) মাথা (Head): ঠোঁট, নাকের ছিদ্র, কান, কানের লতি, ঝুঁটি, ওয়াটল ইত্যাদির সমন্বয়ে গঠিত দেহের অগ্রভাগ ।
খ) চোখ (Eye): মাথার, দুই পার্শ্বে দুটি গোল চোখ ।
গ) ঝুঁটি (Comb): মাথার উপর একসাথে ঝুঁটি থাকে ।
ঘ) ওয়াটল (Wattle): ঠোঁটের কাছে দুইপাশে দুটো লাল রঙের মাংসপিন্ডই ওয়াটল ৷
ঙ) কানের লতি (Earlobe): প্রত্যেক কান থেকে একটা চামড়ার মত লতি ঝুলে থাকে ।
চ) গ্রীবা বা গল (Neck): গ্রীবা মাথা ও ধড়কে সংযুক্ত করে, এর সাহায্যে মাথা এদিক ওদিক ঘোরাতে পারে। গলদেশের দুইপাশে সরু পালক থাকে।
ছ)খাদ্য থলি (Crop): গলার নিচের অংশে খাদ্য জমা হওয়ার থলি অবস্থিত। খাদ্য প্রথমে এখানে জমা হয় ৷
জ) পাখা (Wings): পিঠের উপর দুইদিকে বিস্তৃত দুটি ডানা থাকে, যা উড়তে সাহায্য করে ।
ঝ) পালক (Feathers): পাখায় যে পালক থাকে তা উড়বার কাজে লাগে ।
ঞ) পা (Feed): মোরগের পশ্চাৎভাগে দুইটি পা থাকে। পায়ের উপরের অংশকে উরু, নিচের অংশকে শ্যাংক এবং উরু ও শ্যাংকের মাঝের গাটকে হক (Hock) বলে ।
ট) বুক (Chest): গলার নিচের দিকে দেহের তলদেশের মাংসল অংশই হলো বুক ।
ঠ) পায়ের আঙুল(Toes): প্রতি পায়ে ৪টি আঙুল থাকে। সামনের দিকে ৩টি ও পিছনের দিকে ১টি আঙুল । আঙুলের আগায় নখ থাকে ।
ড) স্পার (Spur): মোরগের বয়স হলে পেছনের আঙুলের উপর কাটার মত বর্ধিত অংশ তৈরি হয়।
ব্রয়লার মুরগীর বাহ্যিক অঙ্গ সমূহ:
ব্রয়লার মুরগীর সব বাহ্যিক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ব্রয়লার মোরগের মতই তবে,
ক) খুঁটি মোরগের থেকে ছোট থাকে।
খ) পায়ে স্পার থাকে তবে ছোট।
গ) গলার ফুল অপেক্ষাকৃত ছোট।
ঘ) দেহের আকার অপেক্ষাকৃত ছোট।
ঙ) দেহের বৃদ্ধির হার অপেক্ষাকৃত কম ।
চ) পালকের বৃদ্ধির হার কম এবং দেরীতে দেহ পালক দ্বারা আবৃত হয়।
পরিপাকতন্ত্র (Digestive System):
ব্রয়লার মুরগির শরীরের যে সমস্ত অঙ্গ প্রত্যঙ্গের সমষ্টি খাদ্য গ্রহন পরিপাক পরিশোষণ সহ পুষ্টি সাধন করে তাকে পরিপাকতন্ত্র বলে।
নিচে পরিপাক তন্ত্রের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দেওয়া হলো:
১. মুখগহ্বর (Mouth Cavity): গরু মহিষের মতো মোরগ-মুরগির দাঁত নেই। এর পরিবর্তে দুটি চঞ্চ আছে। জিহ্ববার অগ্রভাগ সরু ও পশ্চাতের দিকটা কিছুটা খসখসে। চঞ্চুর সাহায্যে খাদ্যগ্রহণ করার পর জিহ্বা খাদ্য গলাধঃকরণে সাহায্য করে। এ সময় মুখ থেকে খুব কম লালা নিঃসরণ হয়।
২. খাদ্যনালী (Esophagus): মুখগহ্ববর থেকে খাদ্যথলি পর্যন্ত অংশ খাদ্যনালী। গলাধঃকরণের পর খাদ্য এ নালী দিয়ে খাদ্যথলিতে এসে জমা হয়।
৩.খাদ্যথলি (Crop): এ থলিতে প্রথমত: খাদ্য জমা হয়। পরে অল্প পরিমাণ করে খাদ্য এ থলি থেকে পাকস্থলীতে পৌঁছে। খাদ্যথলিতে থাকাকালে খাদ্য কিছুটা নরম হয়। কিন্তু কোনো পরিপাক ক্রিয়া এখানে সম্পন্ন হয় না।
৪.পাকস্থলী (Proventriculus) : খাদ্য থলির দুই বা তিন ইঞ্চি পরেই পাকস্থলীর অবস্থান । প্রকৃতপক্ষে এটি খাদ্য নালীরই একটি বর্ধিত অংশ। এর ভেতরের দেয়ালে অসংখ্য গ্রন্থি রয়েছে। খাদ্যদ্রব্য পাকস্থলী পৌঁছালে এ গ্রস্থি হতে এক প্রকার পাচকরস নিঃসৃত হয়ে খাদ্যের সাথে মিশ্রিত হয়। এ রসে পেপসিন নামক এক প্রকার জারক রস ও হাইড্রোক্লোরিক এসিড থাকে। এই জারকরস আমিষজাতীয় খাদ্যদ্রব্য পরিপাকে সহায়তা করে। হাইড্রোক্লোরিক এসিড খাদ্য অবস্থিত রোগ জীবাণু ধ্বংস করে এবং খাদ্য নরম কাদার মতো করে ফেলে।
৫. গিজার্ড (Gizard): পাকস্থলীর নিকটেই শক্ত মাংসপেশী দিয়ে প্রস্তুত গোলাকার কালচে লাল আকৃতির অংশটির নামই গিলা বা গিজার্ড। এর দু'টি মুখ। একটি উপরের দিকে পাকস্থলীর সাথে ও অপরটি নিচের ডিওডেনামের সাথে সংযুক্ত। এর প্রধান কাজ হলো শক্ত দানাদার খাদ্যকে গুঁড়া করে নরম করে দেয়া, যাতে পরবর্তী পর্যায়ে পরিপাকে সুবিধা হয়। এটি ঝিনুক, শামুক, পাথরের কণা পর্যন্ত গুঁড়া করতে সক্ষম।
৬. ক্ষুদ্রাস্ত্র (Small Intestine): এটি গিলা হতে সিকা পর্যন্ত বিস্তৃত তিন- চার ফুট লম্বা। এর তিনটি অংশ রয়েছে। ডিওডেনাম, জেজুনাম ও ইলিয়াম। পুষ্টিনালীর এ অংশেই হজম ও শোষণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। ক্ষুদ্রান্ত্র আন্ত্রিকরস নামক বেশ কয়েক প্রকার জারকরস ক্ষরণ করে। এ স্থানে আমিষজাতীয় খাদ্যের শেষ পরিণতি এমাইনো এসিড, শর্করাজাতীয় খাদ্য ভেঙে গ্লুকোজ ও চর্বিজাতীয় খাদ্য ফ্যাটি এসিডে পরিণত হয়ে ক্ষুদ্রান্ত্রের গায়ে অবস্থিত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র শোষক যন্ত্রের সাহায্যে রক্ত স্রোতে প্রবেশ করে। হজম ও শোষণ প্রক্রিয়া মোরগ মুরগির ক্ষেত্রে অন্যান্য প্রাণীর চেয়ে অনেক দ্রুত সম্পন্ন হয়। প্রক্রিয়া দুটি সম্পন্ন হতে মাত্র তিন ঘন্টার কম সময় লাগে। সমস্ত শোষণযোগ্য খাদ্য ক্ষুদ্রান্ত্রে শোষিত হয়ে অবশিষ্ট অসার অংশ পানির সাথে মিশে বৃহদান্ত্রে প্রবেশ করে।
৭. সিকা (Ceaca): ক্ষুদ্রান্ত্র ও বৃহদান্ত্রের সংযোগ স্থলের দু'দিকে থলির মতো বর্ধিত অংশ আছে- এ দু'টিকে সিকা বলে। সিকা লম্বায় প্রায় ১০-১৫ সেন্টিমিটার। এখানে কোনো পরিপাক ক্রিয়া সম্পন্ন হয় না বললেই চলে, তবে আঁশজাতীয় খাদ্যদ্রব্য ব্যাকটেরিয়ার সাহায্যে কিঞ্চিত পরিমাণ হজম হতে পারে। এটি মূলত: রোগ প্রতিরোধ তন্ত্র হিসাবে কাজ করে ।
৮. বৃহদান্ত্র (Colon): এটির দৈর্ঘ্য ১০-১২ সেন্টিমিটার । এখানে খাদ্যের অসার অংশ হতে পানি শোষিত হয়।
৯. ক্লোয়েকা (Cloaca): বৃহদান্ত্র হতে মল, বৃক্ক হতে মূত্র এবং প্রজননতন্ত্র হতে ডিম বা বীর্য এই একই সাধারণ নির্গমণ পথ দিয়ে বের হয়। এটি বৃহদান্ত্রের এক বর্ধিত অংশ। সাধারণত মোরগ-মুরগির মল ও প্রস্রাব একত্রে বের হয়। মলের সাথে যে সাদা অংশ দেখতে পাওয়া যায় তা প্রধানত ইউরিক এসিড যা প্রস্রাবেরই একটি অংশ। ক্লোয়েকার বহিরাংশকে মলমূত্রদ্বার বলা হয়। মলমূত্রদ্বারের উপরিভাগে বারসা অব ফেব্রিসিয়ার অবস্থান। এটি মোরগ-মুরগির দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উৎস।
এছাড়া পরিপাকতন্ত্রে নিম্নলিখিত সাহায্যকারী গ্রন্থি রয়েছে:
ক) যকৃত (Liver)
খ) অগ্ন্যাশয় (Pancreas)
গ) প্লীহা (Spleen)
ক) যকৃত (Liver):
এটি গিজার্ড ও ডিওডেনামের ভাঁজের পাশেই অবস্থিত। এর দুটি বাদামি রঙের বড় অংশ রয়েছে। যকৃত দেহের বৃহত্তম গ্রন্থি। এটি পিত্তরস নামক এক প্রকার জারকরস সৃষ্টি করে। যকৃতের দুটি অংশ হতে পিত্তরস প্রস্তুত হয়ে দুটি পিত্তনালী দিয়ে ডিওডেনামের নিচের অংশে এসে খাদ্যদ্রব্যের সাথে মিশ্রিত হয়। ডান পাশের পিত্তনালীটি কিছুটা মোটা হয়ে একটি থলি সৃষ্টি করে এবং এতে পিত্তরস প্রয়োজন মিটানোর জন্য জমা থাকে। বাম দিকের পিত্তনালীটি পিত্তরস সরাসরি ডিওডেনামে সরবরাহ করে। পিত্তরস দেখতে সবুজ রঙের খাদ্যে এসিডিয় ভাব দূর করে পাচক রসের কাজ করার পরিবেশ সৃষ্টি করে এবং চর্বিজাতীয় খাদ্যদ্রব্য পরিপাক করতে সাহায্য করে ।
খ). অগ্ন্যাশয় (Pancreas):
ক্ষুদ্রান্ত্রের ডিওডেনাম নামক যে অংশ রয়েছে এর ভাঁজে এটি অবস্থিত। মোরগের অগ্ন্যাশয় আকারে অপেক্ষাকৃত বড়। গিজার্ড হতে এখানে খাদ্য প্রবেশ করলে অগ্ন্যাশয়ের সাধারণ গ্রন্থি হতে এক প্রকার পাচকরস নিঃসৃত হয় এবং অগ্ন্যাশয় নালীর মাধ্যমে ডিওডেনামে এসে খাদ্যের সাথে মিশ্রিত হয়- একে ক্লোমরস বলে। এই রসে তিন প্রকার জারকরস রয়েছে। যথা-এমাইলেজ, ট্রিপসিন ও লাইপেজ। এ রসসমূহ যথাক্রমে শর্করা, আমিষ ও চর্বিজাতীয় খাদ্যদ্রব্য পরিপাকে সহায়তা করে। অগ্ন্যাশয় হতে ইনস্যুলিন নামক আর এক প্রকার প্রাণরস নিঃসৃত হয়। এ রস অগ্ন্যাশয়ের মধ্যস্থিত বিটা সেল হতে ক্ষরিত হয় ও সরাসরি রক্তের সাথে মিশ্রিত হয়। অতঃপর গ্লুকোজ যথাযথ দহন করতে সাহায্য করে দেহে কর্মশক্তি ও উত্তাপ সৃষ্টি করে। এছাড়া উদ্বৃত্ত শর্করা গ্লাইকোজেন ও চর্বি রূপে দেহে জমা থাকে ।
গ) প্লীহা (Spleen):
যকৃত, গিলা ও পাকস্থলীর সাহায্যে সৃষ্ট ত্রিভুজাকৃতি স্থানে এ লালচে বাদামি রঙের ছোট গোলাকার প্লীহা অবস্থিত। এর কার্যকলাপ সম্পর্কে সঠিকভাবে এখনও জানা যায়নি। তবে এটি ক্ষয়প্রাপ্ত লোহিত কণিকা দেহ হতে দূরীভূত করে এবং কিছু পরিমাণ রক্ত ও লোহাজাতীয় খনিজ পদার্থ জমা করে রাখতে পারে ।
নতুন বা পুরাতন যে ঘর হোক না কেন, “অল ইন অল আউট” পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে। একটি ঘরে এক ব্যাচ ব্রয়লার পালন করে বিক্রয় করার কমপক্ষে ১৪ দিন পর অন্য ব্যাচ উঠাতে হবে। এ পদ্ধতি শুধু রোগ প্রতিরোধই করে না রোগের জীবাণুকেও ধ্বংস করতে সহায়তা করে।
ব্রয়লার খামারে বাসস্থান তৈরি
ব্রয়লারের বাসস্থান ত্রুটিপূর্ণভাবে তৈরি হলে ব্রয়লার পালন করে আশানুরূপ ভাবে লাভজনক হওয়া যায় না। তাই ব্রয়লারের জন্য ঘর তৈরির সময় নিম্নলিখিত বিষয়গুলো অবশ্যই বিবেচনায় রাখতে হবে-
(ক)ঘরের অবস্থান:
(খ) ঘরের প্রশস্ততাঃ
লিটার পদ্ধতিতে ঘরের প্রশস্ততা সর্বনিম্ন ১০ ফুট এবং সর্বাধিক ২৫ ফুট করা হয়।
(গ) ঘরের দৈর্ঘ্য:
(ঘ) ঘরের উচ্চতা:
ঙ) ঘরের চাল:
(চ) ঘরের মেঝে :
(ছ) ঘরের দরজা:
(জ) খাবার ও পানির পাত্রের মধ্যে যাতে বাচ্চা প্রবেশ করতে না পারে সে ব্যবস্থা করতে হবে ।
(ঝ) বাচ্চা উঠানোর ১৫ দিন আগে ঘরটি রোগ-জীবাণুমুক্ত করে নিতে হবে ।
(ঞ) বাচ্চা ছাড়ার ১২-২৪ ঘন্টা পূর্বে ব্রুডার জ্বালিয়ে ঘর কাঙ্খিত মাত্রায় গরম করতে হবে।
(ট) বাচ্চা যখন ঘরে ছাড়া হয় তখন পানি ও খাবার পাত্রগুলো সমদুরে সঠিক ভাবে স্থাপন করতে হবে।
ব্রয়লার আবদ্ধ অবস্থায় তিন পদ্ধতিতে পালন করা যায়। যথা :-
ক) লিটার পদ্ধতি
খ) খাঁচা পদ্ধতি
খ) মাচা পদ্ধতি
যে পদ্ধতিতে খামারি ব্রয়লার পালন করতে ইচ্ছুক তার উপর নির্ভর করে ঘর তৈরি করা উচিত ।
(ক) লিটারে ব্রয়লার পালন পদ্ধতি:
এই পদ্ধতিতে ব্রয়লারের ঘরের মেঝেতে লিটার বিছিয়ে পালন করা হয়। লিটারের দ্রব্য হিসেবে ধানের তুষ, কাঠের গুঁড়া ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়। লিটারের পুরুত্ব ২.০-৩.০ ইঞ্চি হতে হবে। লিটার প্রতি সপ্তাহে অন্তত একবার করে উল্টিয়ে দিতে পারলে ভালো এবং কেকের মত আকার ধারণ করলে তা ভেঙে দিতে হবে। এতে বিভিন্ন প্রকারের ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া, প্রোটোজোয়া এবং প্যারাসাইট-এর প্রকোপ কমে যাবে। প্রয়োজনে পুরাতন লিটারের উপর নতুন লিটার যোগ করতে হবে।
(খ) পাঁচায় ব্রয়লার পাল: (Broller Cage Raising)
এ পদ্ধতিতে তারের জালের তৈরি খাঁচার মুরগি পালন করা হয়। মেঝের দিকে তারের জাল থাকাতে পায়খানা করলে নিচে পড়ে। নিচে টিনের বা কাঠের ই সেরা থাকলে ময়লা তার মধ্যে জমা হয়। চা তলা একটু সামনের দিকে চালু থাকে, ফলে ভিন্ন পড়িয়ে সামনের দিকে চলে আসতে পারে। এ খাঁচা কয়েক তলা পর্যন্ত করা যেতে পারে । বর্তমানে শহরাঞ্চলে এ পদ্ধতিতে মুরগি পালন বেশি জনপ্রিয়। কারন এতে এর জারণার বেশি মুরগি পালন করা যায়। এটি খোপে পরিমাণের ভিন্নতার উপর ভিত্তি করে ১-৪ টি মুরগি রাখা যায়।
(গ) মাচায় পালন পদ্ধতি (Broller Slat Raising)
যে সব এলাকার বৃষ্টির পানি জমে বা মাটি অধিক না থাকে সেই সব এলাকাতে মাচা পদ্ধতিতে ব্রয়লার পালন করা প্রয়োজন। বাঁশ বা কাঠ দিয়ে সহজেই মাচা তৈরি করা যায়। মাচার বাঁশ বা কাছের বাচ্চা ৩.৫ ইঞ্চি করে ফাঁকা রাখা হয় যাতে ব্রয়লারের বিষ্ঠা নিচে পতে পারে। মাচায় উচ্চতা মাটি থেকে ২.৫-৩.০ ফুট হতে হবে যাতে করে মাচার নিচ দিয়ে বাতাস প্রবাহিত হয়ে মুরগির বিষ্ঠা শুকাতে পারে। মাচা পদ্ধতিতে উলম্ব এবং আড়াআড়ি বাতাস প্রবাহের কারণে ঘরে স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ বজায় থাকে এবং এরগার আরামবোধ করে। এই পদ্ধতিতে লিটার দ্রব্যের দরকার হয় না এবং রোগব্যাধিও কম হয়। মাচা পদ্ধতিতে ব্রয়লার পালনের ক্ষেত্রে মাচার নিচের বর্জ্য পদার্থ নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে এবং চুন ছিটিয়ে দিয়ে মাটি জীবাণুমুক্ত করতে হবে। ৫০০ ব্রয়লার পালনের জন্য উপযোগী ঘরের মাচার নিচে ৩০-৩৫ কেজি চুন ছিটিয়ে জীবাণুযুক্ত করতে হবে।
ব্রয়লার ঘর পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্ত করতে নিম্নলিখিত ধাপগুলো অনুসরণ করতে হবে:
ব্রয়লার বাসস্থান এবং আশেপাশের স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ বজায় রাখতে নিম্নলিখিত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে-
পোল্ট্রি পালনে লিটারের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আবদ্ধ অবস্থায় পোল্ট্রি পালনের ক্ষেত্রে লিটার পদ্ধতিতে মুরগির বিছানা হিসাবে লিটার ব্যবহার করা হয়। পোল্ট্রি লিটার অন্যান্য কাজেও ব্যবহার করা যায়। লিটার এক দিকে যেমন পোল্ট্রি উৎপাদনে সহায়তা করে ঠিক তেমনি সঠিক ভাবে লিটারের যত্ন না নিলে এ থেকে বিভিন্ন রোগেরও সৃষ্টি হতে পারে। পশুপাখির বিছানাকেই ইংরেজিতে লিটার (Litter) বলে অর্থাৎ লিটার বলতে পোল্ট্রির ঘরে শয্যা হিসেবে ব্যবহৃত নানাবিধ বস্তুকেই বোঝায়। এক কথায় বাসস্থান আরামদায়ক করার জন্য পোল্ট্রির ঘরে যে বিছানা ব্যবহার করা হয় তাকে লিটার বলে।
আদর্শ লিটারের বৈশিষ্ট্য (Features of Standard Litter):
লিটার হিসাবে ব্যবহৃত উপকরণগুলোর নাম :
লিটারের প্রয়োজনীয়তা (Litter Requirements):
নিম্নলিখিত কারণে পোল্ট্রির ঘরে লিটার বিছানোর প্রয়োজন পড়ে। যথা-
লিটারের শ্রেণিবিন্যাস (Classifications of Litter)
সাধারণত তিনটি বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে লিটারের শ্রেণিবিন্যাস করা হয়ে থাকে । যথা-
ক. কোন ধরনের উপকরণ ব্যবহার করা হয়েছে তার ওপর ভিত্তি করে।
খ. লিটারের পুরুত্বের ওপর ভিত্তি করে।
গ. লিটারের স্থায়ীত্বকালের ওপর ভিত্তি করে।
ক. কোন ধরনের উপকরণ ব্যবহার করা হয়েছে তার ওপর ভিত্তি করে লিটার দুধরনের হয়ে থাকে। যথা:-
১.জৈবিক লিটার (Organic litter): যখন জৈব পদার্থ, যেমন- কাঠের গুঁড়ো, আঁখের ছোবড়া ইত্যাদি লিটার হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
২.অজৈবিক লিটার (Inorganic litter): যখন অজৈব পদার্থ, যেমন- ছাই, বালি ইত্যাদি লিটার হিসেবে ব্যবহার করা হয় ।
খ. পুরুত্বের ওপর ভিত্তি করে লিটার দু'ধরনের হয়ে থাকে। যথা-
১. সাধারণ লিটার (Normal litter): এ ধরনের লিটার সাধারণত: ৫-৭ সে.মি. পুরু হয়ে থাকে। ব্রয়লার উৎপাদনের ক্ষেত্রে এ ধরনের লিটার ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
২. ডিপ লিটার (Deep litter): এ ধরনের লিটার সাধারণত ১৫-২৩ সে.মি. (৬-৯ ইঞ্চি) পুরু হয়ে থাকে । ডিমপাড়া মুরগি পালনের ক্ষেত্রে এ ধরনের লিটার ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
গ.স্থায়ীকালের ওপর ভিত্তি করে লিটার দু'ধরনের হয়ে থাকে। যথা-
১. তাজা লিটার (Fresh litter): সাধারণত ২ মাস সময়কাল পর্যন্ত লিটার প্রায় পরিষ্কার থাকে । তাই একে তাজা লিটার বলে ।
২. বিল্ট আপ লিটার (Built up litter): সাধারণত ৬ মাসের পুরোনো লিটারকে বিল্ট আপ লিটার বলে ।
মুরগির ঘরে লিটার স্থাপন ও ব্যবস্থাপনাঃ
শ্রেণির তাত্ত্বিক কাজ
ক্রমিক নং- মুরগির ঘরে লিটার স্থাপন ও ব্যবস্থাপনার ৫টি কাজ লেখ।
উৎপাদিত বাচ্চার শরীরের তাপমাত্রা ১০৩ ডিগ্রি ফারেনহাইট, যেখানে একটি প্রাপ্ত বয়স্ক মুরগির শরীরের তাপমাত্রা ১০৭ ডিগ্রি ফারেনহাইট। বাচ্চার দেহের এই তাপ নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা গড়ে না ওঠা পর্যন্ত সতর্কতার সাথে প্রতিপালন করতে হয়। তাই পীড়নের হাত থেকে বাচ্চাদের রক্ষা করার জন্যই ব্রুডিং করা হয়। যে যন্ত্রের সাহায্যে কৃত্রিম উপায়ে বাচ্চাকে তাপ দেওয়া হয় তাকে ব্রুডার বলে।
ব্রুডিংঃ
ডিম ফুটে বাচ্চা বের হওয়ার পর তারা তাদের দেহের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। কারন তার শরীরে পর্যাপ্ত পালক থাকে না । মুরগির বাচ্চাকে কৃত্রিমভাবে তাপ দিয়ে লালন পালন করাকে ব্রুডিং বলে।
ব্রুডিং কালীন সময়ে ব্রুডারে তাপের উৎস:
ব্রুডিং কালীন সময়ে ব্রুডারে তাপের উৎস হিসাবে বিভিন্ন ধরনের জ্বালানি ব্যবহৃত হয়ে থাকে, যেমন-
ব্রুডার হাইজে প্রথম সপ্তাহে সাধারণত ১৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট তাপমাত্রা দিয়ে ব্রুডিং আরম্ভ করা হয় এবং পর্যায়ক্রমে তা কমিয়ে আনা হয়।
উপরে যে তাপমাত্রা উল্লেখ করা হয়েছে তা ব্রুডারের তাপমাত্রা। হোতার ও চিক গার্ডের মাঝখানে মেঝে থেকে প্রায় ৬ ইঞ্চি উঁচুতে থার্মোমিটার ঝুলিয়ে এই তাপমাত্রা নিরূপণ করা যায় ।
থার্মোমিটার ছাড়াও ব্রুডারের তাপ সঠিক হয়েছে কিনা তা ব্রুডারে বাচ্চার অবস্থান এবং চলাফেরা পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে বোঝা যায় ।
ক) কাম্য তাপমাত্রা (Expected Temperature):
যে তাপমাত্রায় বাচ্চাগুলো আরাম বোধ করে ও স্বাচ্ছন্দ্যে চলাফেরা করে তাই কাম্য তাপমাত্রা । কাম্য তাপমাত্রার লক্ষণ: বাচ্চা চিক গার্ডের মধ্যে সর্বত্র সমভাবে বিস্তৃত থাকবে ও চলাফেরা করবে। খাদ্য ও পানি গ্রহণের স্বাভাবিক প্রবণতা দেখা যাবে। বাচ্চাগুলোর চলাফেরায় চঞ্চলতা পরিলক্ষিত হবে।
খ) অতিরিক্ত ঠান্ডা:
যদি ব্রুডারে তাপমাত্রা কাম্য তাপমাত্রার তুলনায় কম হয় তখন বাচ্চাগুলো ঠান্ডা অনুভব করে । কম তাপমাত্রার লক্ষণ: ব্রুডারের নিচে তাপের উৎসের কাছে সমস্ত বাচ্চা জড়ো হয়ে থাকবে। চি চি শব্দ করে ঘাড় ছোট করে গুটি সুটি মেরে থাকে। একটির উপর আরেকটি বাচ্চা উঠার প্রবণতা দেখা যায় অর্থাৎ গাদাগাদি করে থাকে। খাদ্য ও পানি খাওয়ার প্রবণতা কমে যায় ৷
প্রতিকারঃ ব্রুডার পর্যাপ্ত তাপ উৎপাদনে সক্ষম কিনা তা খতিয়ে দেখতে হবে এবং প্রয়োজনীয় পরিমাণ তাপ উৎপাদনে সক্ষম ব্রুডার ব্যবহার করতে হবে। অতিরিক্ত ব্রুডারের তৎক্ষণাৎ ব্যবস্থা করা এবং ঠান্ডা বাতাস যাতে প্রবেশ করতে না পারে তার ব্যবস্থা নিতে হবে ।
গ) অতিরিক্ত গরম:
ব্রুডারের কাম্য তাপমাত্রার তুলনায় অধিক তাপমাত্রা থাকলে বাচ্চা গুলো অধিক গরম অনুভব করে ।
অতিরিক্ত তাপমাত্রার লক্ষণ: বাচ্চাগুলো তাপের উৎস হতে দুরে সরে গিয়ে চিকগার্ডের কাছাকাছি অবস্থান করে।মুখ হাঁ করে শ্বাস নিতে থাকে। খাদ্য গ্রহণের প্রবণতা কমে যায় ।
প্রতিকারঃ তাপের উৎসের সুইচ বন্ধ করে দিতে হবে। ঘর ঠান্ডা করার জন্য বেড়া দেয়া পর্দা তুলে দিতে হবে।
উল্লেখ্য যে, ব্রুডার ঘরে অতিরক্তি ঠান্ডা যেমন ক্ষতিকর তেমনিই অতিরিক্ত গরমও বাচ্চার জন্য ক্ষতিকর। উভয় ক্ষেত্রেই বাচ্চার দেহে পীড়ন পড়ে ও বাচ্চা সহজেই বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হতে পারে। কাজেই ব্রুডার ঘরের কাম্য তাপমাত্রা সবসময় বজায় রাখতে হবে।
ঘ) অসম তাপমাত্রা (Hetrogeneous temperature)
যদি ব্রুডারে অসম তাপমাত্রা বিদ্যমান থাকে তখন বাচ্চাগুলো যে পাশে তাপমাত্রা কাঙ্খিত থাকে যে পাশে সরে যায়।
প্রতিকারঃ চিক গার্ডের ভেতরে সব জায়গায় কাঙ্খিত তাপমাত্রা নিশ্চিত করতে হবে।
মুরগি পালনে ঘরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য বেশ কিছু কাজ করতে হয়। নিচে এ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হল-
১। গরমের দিনে মুরগি পালন করা হলে মুরগির ঘরের ছাদ টিন বা ধাতব কোন উপাদানের হয় তাহলে রোদের তাপমাত্রা থেকে মুরগিগুলোকে রক্ষা করার জন্য ঘরের ছাদে ভারী কোন কাপড় বা চটের থলি পানিতে ভিজিয়ে দিয়ে বিছিয়ে দিতে হবে। এতে মুরগির ঘরে রোদের তাপ কমে যাবে ও তাপমাত্রা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে থাকবে ।
২। গরমের দিনে মুরগির ঘরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য ঘরের চারদিকের পর্দা উঠিয়ে রাখতে হবে। এতে মুরগির ঘরের সহজেই বাতাস চলাচল করতে পারবে ও ঘরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকবে ।
৩। গরমের সময়ে মুরগি পালনে মুরগির ঘনত্ব কমিয়ে আনতে হবে। মুরগির ঘরে ঘনত্ব কম থাকলে ঘরের তাপমাত্রা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
৪। অত্যধিক গরম থেকে মুরগিগুলোকে রক্ষা করার জন্য ঘরের নির্দিষ্ট স্থান পর পর ফ্যানের ব্যবস্থা করে দিতে পারলে ভালো হয়। এতে ঘরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকবে ও মুরগিগুলোর তেমন কোন সমস্যা হবে না।
৫। গরমের সময় মুরগির ঘরে কিছুক্ষণ পর পর সামান্য পরিমাণে পানি স্প্রের মতো করে ছিটিয়ে দিতে পারলেও ঘরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
৬। এছাড়াও শীতের দিনে মুরগির ঘরের চারপাশ বন্ধ রেখে পর্দা নামিয়ে দিতে হবে। আর ঘরের ভিতরে তাপমাত্রা ঠিক রাখার জন্য বৈদ্যুতিক বাল্বের ব্যবস্থা করতে হবে এবং ঘরের আপেক্ষিক আর্দ্রতা ৪০-৭০% রাখতে হবে।
ব্রুডারে তাপের উৎস থেকে উৎপন্ন কার্বন মনো-অক্সাইড ও বাচ্চা কর্তৃক নির্গত কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্যাস ঘরে জমা হয়ে বিষক্রিয়া সৃষ্টি করে। এছাড়া মলমূত্র থেকে সৃষ্ট অ্যামোনিয়া গ্যাস ঘরে দূর্গন্ধ সৃষ্টি করে । তাই ঘরে বায়ু প্রবাহ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য নিম্নে বর্ণিত বিষয়গুলো অনুসরণীয়-
বর্তমান বিশ্বে খামার সংশ্লিষ্ট সকলের কাছে জৈব নিরাপত্তা বা বায়োসিকিউরিটি একটি বহুল আলোচিত শব্দ। খামার স্থাপনের পরিকল্পনা থেকে শুরু করে খামার পরিকল্পনা, উৎপাদন ও উৎপাদিত দ্রব্যের বাজারজাতকরণ, এমনকি ভোক্তার কাছে উৎপাদিত দ্রব্য পৌছে দেওয়া পর্যন্ত প্রক্রিয়াগুলি আধুনিক বিজ্ঞানসম্মত তথা জীবাণুমুক্ত ও অন্যান্য ক্ষতিকর উপাদানের প্রভাবমুক্তভাবে সম্পন্ন করাই জৈব নিরাপত্তা ব্যবস্থা ।
জৈব নিরাপত্তা ব্যবস্থার উদ্দেশ্য (The Purposes of Bio - Security System):
১) বহিরাগত রোগজীবাণু যেমন: রানীক্ষেত রোগ, বার্ড ফ্লু জাতীয় রোগের কেবল থেকে খামার রক্ষা করা ।
২) মানুষের মাধ্যমে ছড়ায় এমন রোগ ও জীবাণু যেমন- সালমোনেলা থেকে খামারকে রক্ষা করা ।
৩)খামারের সার্বিক স্বাস্থ্য সুরক্ষা প্রদান ।
৪) রোগ প্রতিরোধের মাধ্যমে চিকিৎসা ব্যয় কমানো, লাভজনক উপায়ে খামার গড়ে তোলা, জনস্বাস্থ্যের প্রতি ঝুঁকি কমানো
নিম্নলিখিত বিষয়গুলি প্রতি খেয়াল রাখলে জৈব নিরাপত্তা ব্যবস্থা সঠিকভাবে মেনে চলা যাবে :
১. খামারের স্থান নির্বাচন:
২. রোগ জীবাণুর উৎস ও প্রতিরোধের উপায় নির্বাচন:
রোগ জীবাণুর উৎস
১) বাহক পাখি, বাইরে থেকে আমদানিকৃত জীবাণুবাহী ডিম ও ১ দিন বয়সের বাচ্চা, আক্রান্ত ডিম ও পাখি, মানুষের হাত পা ও পোশাকাদি, ধুলবালি, পালক, বিষ্ঠা, ও জৈব বর্জ্য, বন্যপাখি, শিকারি জীবজন্তু, ইঁদুর ইত্যাদি ।
২) দূষিত পানি, খাদ্য, বাতাস ইত্যাদি।
৩) রোগ জীবাণু যুক্ত সরবরাহের যন্ত্রপাতি যথা-ট্রাক, খাচা, ডিমের পাত্র ইত্যাদি ।
রোগ বিস্তার প্রতিরোধের উপায়:
(ক) যাতায়াত নিয়ন্ত্রণ :
খ) খামারে অবাধ প্রবেশাধিকার নিয়ন্ত্রণ:
> দর্শনার্থীদের জন্য একটি তথ্য বই সংরক্ষণ করতে হবে। খামার পরিদর্শনকারীর নাম-পরিচয়, সাক্ষাৎকারের তারিখ-সময় ইত্যাদি তথ্য বইয়ে লিপিবদ্ধ করে খামারের নির্দিষ্ট স্থানের বাইরে অবাধ যাতায়াত নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
> খামারকর্মী ও খামার পরিদর্শনকারী বহিরাগত উভয়কেই কাজ করার সময় বা খামার পরিদর্শনের সময় জীবাণুমুক্ত জুতা ও পোশাকাদি পরিধান করতে হবে। খামার পরিদর্শন ও কাজের শেষে পুনরায় এদের জীবাণুমুক্ত করা আবশ্যক।
> উপকরণ সরবরাহকারী বাস/ট্রাক ড্রাইভার ও সংশ্লিষ্ট শ্রমিকদেরও উপরোক্ত উপায়ে যথাসম্ভব জীবাণু মুক্ত রাখতে হবে।
> বন্যপাখি নিয়ন্ত্রণের জন্য খামার ঘরের চারদিকে আলো বিকিরণকারী অ্যালুমিনিয়ামের ফয়েল বেঁধে দিতে হবে ।
গ) চিকিৎসক বা স্বাস্থ্যকর্মীর তৎপরতা:
> পোল্ট্রি খামারের সার্বিক ব্যবস্থাপনা অথবা চিকিৎসার কাজে নিয়োজিত চিকিৎসক অথবা স্বাস্থ্যকর্মীকে জৈব-নিরাপত্তা ব্যবস্থা সম্পর্কে পূর্ণ সচেতন থাকতে হবে।
> প্রতিটি আলাদা শেডে ঢোকার পূর্বে ও পরে জীবাণুনাশক ঔষধ দিয়ে হাত-পা ধৌত করতে হবে। সম্ভব হলে আলাদা অ্যাপ্রন, হাত পায়ের মোজা ও মাথার আবরণী ব্যবহার করতে হবে ।
> খামারে নিয়োজিক কর্মী (বৃন্দ) খামারে প্রবেশকারী যানবাহন, তাদের চালক ও সংশ্লিষ্ট সহায়ক কর্মীবৃন্দের যে কোনো ধরনের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলবেন।
> ময়নাতদন্ত করার জন্য বাতাসের অনুকুলে এমন জায়গা বেছে নিতে হবে যেখান থেকে বাতাসের মাধ্যমে খামারে জীবাণু প্রবেশের কোনে সম্ভাবনা নেই। ময়নাতদন্ত শেষে স্থানটি জীবাণুনাশক দিয়ে ধুয়ে দিতে হবে।
৩. নিয়মিত টিকা প্রয়োগ (Regular Vaccination) :
খামারে মোরগ-মুরগিকে টিকা প্রয়োগের রোগ-মুক্ত রাখা একটি আধুনিক, জটিল ও অত্যন্ত বিজ্ঞানসম্মত প্রক্রিয়া। আধুনিক কালে পোল্ট্রি শিল্পের সাফল্য সময়মত ও সফলভাবে টিকা প্রয়োগ ছাড়া সম্ভব নয়। তাই টিকা প্রয়োগ কালে সর্বোচ্চ সতর্কতা পালন করা বাঞ্ছনীয়। টিকা প্রদানের সময় নিম্মলিখিত বিষয়গুলো মেনে চলতে হবে-
৪. নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা (Regular Health Check-up):
৫. নিয়মিত পরিচ্ছন্নতা (Regular Cleaning:
পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা লাভজনক খামারের পূর্বশর্ত। তাই খামারের ভেতরের ও বাইরের চারিদিকে পরিষ্কার- পরিচ্ছন্নতা অপরিহার্য্য। মেঝে বা লিটার পদ্ধতির ঘরের ক্ষেত্রে প্রতি ব্যাচে নতুন লিটার দেয়া ও ঘর সম্পূর্ণ পরিষ্কার করা উচিত। খামারের সকল যন্ত্রপাতি, যেমন- মুরগির খাঁচা, ডিম রাখার পাত্র, খাবার ও পানি পাত্র ইত্যাদি নিয়মিত জীবাণুনাশক দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে। বছরে অন্তত একবার শেডসহ সকল যন্ত্রপাতি জীবাণুনাশক দিয়ে ধুতে হবে অথবা ফিউমিগেশন করে পরিষ্কার করতে হবে। খামার পরিষ্কার রাখার জন্য নিচের পদক্ষেপগুলো অনুসরণ করা যেতে পারে- খামারে ব্যবহৃত পুরোনো লিটার যথাসম্ভব নিরাপদ দূরত্বে সরিয়ে নিতে হবে। অপসারণ কালে ব্যবহৃত লিটার দ্বারা কোনোভাবেই যেন খামারের পরিবেশ নষ্ট না হয় সেদিকে নজর রাখতে হবে।
৬.স্বাস্থ্য সম্মত ও আদর্শ খাদ্য প্রদান:
বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া যেমন- সালমোনেলোসিস ও ছত্রাকজনিত যেমন- এসপারজিলোসিস, আফলা টক্সিকোসিস রোগের জীবাণু খামারের মাধ্যমে পরিবাহিত হয়। সত্যিকারের ভালো খাবার বলতে জীবাণুমুক্ত ও সুষম খাদ্যের প্রয়োজনীয় উপাদানসমূহের সমন্বয়ে গঠিত খাদ্যকে বোঝায়।
৭. মুরগির ঘরের স্বাস্থ্যসম্মত ব্যবস্থাপনা:
ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাস ধ্বংসকারী জীবাণুনাশক অপেক্ষাকৃত উষ্ণ তাপমাত্রাতেই বেশি কার্যকর। বাতাসের তাপমাত্রা ৭০ডিগ্রি ফা. এর উপরে এবং আর্দ্রতা ৭৫% এর উপরে থাকলে ফরমালডিহাইড গ্যাস সবচেয়ে কার্যকর ।
ক) ক্লোরক্স (সোডিয়াম হাইপো ক্লোরাইড দ্রবণ):
১ কন্টেইনার ক্লোরক্স দিয়ে ৮০ লিটার জীবাণুনাশক দ্রবণ তৈরি করা যায়। বাঁশের তৈরি মুরগির ঘরের মেঝে, চালা ইত্যাদি জীবাণুমুক্ত করার জন্য ক্লোরক্স খুবই কার্যকরী।
খ) ভায়োডিন (আয়োডিন দ্রবণ):
১ বোতল ভায়োডিন ১০% সলিউশন দিয়ে ৫ লিটার জীবাণুনাশক দ্রবণ তৈরি করা যায়। গামবোরো ভাইরাস মারা, হাত পা জীবাণুমুক্ত এবং মুরগির জন্য আয়োডিন যৌগ ক্লোরক্স হতে উত্তম।
গ) চুন:
চুন দিয়ে মাচার নিচের মাটি জীবাণুমুক্ত করা খুবই জরুরি। ১০০-২০০ মুরগি পালন উপযোগী একটি ঘরের মাঁচার নিচের মাটি জীবাণুমুক্ত করার জন্য ২০ কেজি পাউডার চুন ছিটিয়ে মাটির সাথে ভালোভাবে মিশাতে হবে।
৮.বিশুদ্ধ খাবার পানি এবং পানির পাত্রের সঠিক ব্যবস্থাপনা:
১) পান করার জন্য মুরগির খামারে টিউবওয়েলের পানি অথবা বাতাস দূষিত নয় এমন এলাকার সঠিক উপায়ে রাখা বৃষ্টির পানি অথবা পৌর কর্তৃপক্ষ সরবরাহকৃত পানি অথবা ছাঁকা অথবা ১০০ লিটার পানির সাথে অন্তত ৩০০ মি. গ্রা. ক্লোরিন পাউডার মিশ্রিত করে ৩-৬ ঘণ্টা সংরক্ষণ করার পর সেই পানি সরবরাহ করা উচিত।
২) শেডে মুরগি থাকা অবস্থায় সপ্তাহে একবার বেকিং সোডা (সোডিয়াম বাই কার্বনেট) প্রয়োগ করা যেতে পারে। এতে ড্রিংকার, বাল্ব ও পাইপ লাইনে আঠালো বস্তু জমতে পারবে না। পানির সাথে অ্যান্টিবায়োটিক বা ভিটামিন দেয়ার ঠিক পূর্বেই বেকিং সোডা মিশ্রিত পানি পরিচালনা করতে হবে। প্রতি গ্যালন মজুদ দ্রবণের সাথে এক টেবিল চামচ বেকিং সোডা দিতে হবে।
৩) লিটার পদ্ধতিতে মুরগি পালনে পানি সরবরাহের সঠিক ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হবে।
৯. নতুন ব্যাচের ব্যবস্থাপনা:
পুনরায় মুরগি বা বাচ্চা তোলার পূর্বে ঘর এবং যন্ত্রপাতি ব্যবহার উপযোগী হয়েছে কিনা যাচাইয়ের জন্য নিম্নবর্ণিত চূড়ান্ত বা বাচ্চা তোলার পূর্বে ঘর এবং যন্ত্রপাতি ব্যবহার উপযোগী হয়েছে কিনা যাচাইয়ের জন্য নিম্নবর্ণিত পর্যবেক্ষণ প্রয়োজন-
১) সমস্ত বৈদ্যুতিক সংযোগ/সরবরাহ লাইন পরীক্ষা করতে হবে। মেরামতের প্রয়োজন হলে তাৎক্ষণিক ভাবে করতে হবে।
২) মুরগির খাঁচা, খাদ্য পাত্র, পানির পাত্র, মেঝে, দেয়াল ইত্যাদি পরিষ্কার করতে হবে। ভালোভাবে পরিষ্কার করার জন্য উচ্চ চাপযুক্ত পানির প্রবাহ নিশ্চিত করতে হবে ।
৩) পানির পাত্র ও সরবরাহ লাইন প্রয়োজনে মেরামত করতে হবে।
৪) থার্মোমিটার, থার্মোস্ট্যাট, গ্যাস ব্রুডার, স্টোভ ইত্যাদি ব্যবহার উপযোগী করতে হবে।
৫) আগের ব্যাচের মুরগির বিষ্ঠাগুলি পুড়িয়ে ফেলতে হবে বা জীবাণুমুক্ত করতে হবে অথবা কম্পোস্ট বা জৈব সার তৈরির কাজে লাগাতে হবে ।
৬) মুরগির খাঁচা, খাদ্যপাত্র, পানির পাত্র, মেঝে, দেয়াল ইত্যাদি জীবাণুনাশক দিয়ে ধুয়ে দিতে হবে।
৭) টিন, লোহা বা তামার তৈরি দ্রব্যসমূহ জীবাণুনাশক দেয়ার কয়েক ঘন্টা পর ধৌত করে ফেলতে হবে ।
৮) দ্রব্যসমূহ ভালোভাবে শুকানোর পর নতুন বাচ্চা তুলতে হবে ।
পারদর্শিতার মানদন্ডঃ
ক) ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম (PPE)।
আরও দেখুন...