রাতুল আদর্শগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী। চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে রাতুল ভগ্নাংশ সম্পর্কে জেনেছিল, তাই যখনই সম্ভব হয়, রাতুল ভগ্নাংশের ধারণা ব্যবহার করে হিসাব করে। কারণ ভগ্নাংশের মাধ্যমে আমরা খুব সহজেই নিজেদের মধ্যে জিনিস ভাগাভাগি করে নিতে পারি আবার পূর্ণ সংখ্যায় প্রকাশ করা যায় না এমন বিষয়গুলো বোঝার ক্ষেত্রে ভগ্নাংশ আমাদের সাহায্য করে। যেমন সেদিন রাতুলের মা পিঠা তৈরি করেছিলেন, সেখানে পাঁচটি পিঠা ছিল। রাতুল ঐ পাঁচটি পিঠা তার বোন রিয়ার সাথে ভাগ করে নিল। রিয়া তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী। প্রথমে রাতুল নিজে দুইটি পিঠা নিল এবং রিয়াকেও দুইটি পিঠা দিল। এরপর ৫নং পিঠাটি রাতুল দুইটি সমান ভাগে ভাগ করে নিল। তারপর অর্ধেক পিঠা রিয়াকে দিল এবং বাকি অর্ধেক নিজের জন্য রাখল। রাতুল আর রিয়ার এই পিঠার ভাগাভাগি দেখে মা খুব খুশি হলেন।
চিন্তা করে বলো তো রাতুলের মতো কোন কোন ক্ষেত্রে তোমরা এভাবে ভগ্নাংশ ব্যবহার করেছ?
রাতুল আর রিয়া ভাগ করে যে পিঠা পেল তা যদি সংখ্যায় লিখে প্রকাশ করি কেমন হবে বলো তো? রাতুল জানত যে একটি পিঠার অর্ধেককে আমরা লিখতে পারি। এরপর পিঠা খাওয়ার সময় রাতুল রিয়াকে জিজ্ঞেস করল এখন যদি এই অর্ধেক পিঠাকে আবার সমান দুই ভাগ করি (ছবি ১) তাহলে তা একটি পূর্ণ পিঠার কত অংশ হবে?
রাতুলের প্রশ্ন শুনে রিয়া তার অর্ধেক পিঠাটিকে আবার সমান দুই ভাগে ভাগ করল এবং রাতুলের পিঠার পাশে রেখে দিল। দেখা গেল যে চারটি সমান ভাগ একসাথে করলে একটি।
সম্পূর্ণ পিঠা পাওয়া যায় (ছবি ২)। সুতরাং আমরা বলতে পারি, এই প্রতিটি অংশ ঐ পিঠাটির চার ভাগের এক ভাগ অথবা ।আবার, এই চার ভাগ একসাথে করলে অথবা ১টি পূর্ণ পিঠা পাওয়া যায়।
রিয়া আর রাতুল পিঠা খেতে খেতে আরও আলোচনা করতে থাকল। আমরা যদি একটি পিঠার চারটি সমান ভাগের তিন ভাগ নেই তাহলে আমরা বলব (ছবি ৩)।
আবার যদি আমরা পিঠাকে ছয়টি সমান ভাগে ভাগ করে তিন ভাগ নেই তখন হবে (ছবি ৪)।
রিয়া তখন চিন্তা করে দেখল ভগ্নাংশ (Fraction) হলো এমন এক ধরনের সংখ্যা যা একটি পূর্ণ বস্তুর (Whole) (যেমন : এক্ষেত্রে পিঠা) অংশকে (Part) প্রকাশ করতে আমাদের সাহায্য করে। রাতুল খেয়াল করে দেখল যে, ভগ্নাংশে প্রকাশ করার জন্য পূর্ণ বস্তুর অংশগুলোকে সমান ভাগে ভাগ (equal) করা হয় যেমন: তারা পিঠাটিকে সমান দুই ভাগে এবং পরে সমান চার ভাগে ভাগ করেছিল।
এখন মনে করো, তুমি আর তোমার ৫ জন বন্ধু মিলে বাজার থেকে একই আকারের তিনটি তরমুজ কিনলে। এরপর ছবির মতো করে তোমাদের কেনা তরমুজগুলো কাটা হলো।
এবার তোমার নাম এবং তোমার ৫ জন বন্ধুর নাম লেখো এবং একটি তরমুজকে সম্পূর্ণ বা ১ অংশ বিবেচনা করে নিচের ছবিতে কে কত অংশ তরমুজ পেল তা প্রতিটি ঘরে ভগ্নাংশ আকারে লেখো।
এখন তোমাকে যদি প্রশ্ন করা হয় তুমি ও তোমার ৫ বন্ধুর মধ্যে কোন বন্ধুকে বেশি তরমুজ দেয়া হলো? এই প্রশ্নের উত্তর খুব সহজেই তুমি খুঁজে বের করতে পারবে যদি নিচের খেলাটি নিয়ম মেনে খেলতে পারো।
খেলার নাম: ভগ্নাংশের তুলনাপ্রয়োজনীয় উপকরণ : ছক-কাটা কাগজ, রঙ পেন্সিল। নির্দেশনা : খেলার ধাপগুলো বুঝে নিতে শ্রেণিকক্ষে শিক্ষকের সহায়তা নিতে পারো। যদি তুমি বাসায় খেলাটি খেলতে চাও বাবা/মা/বড় ভাইবোনের কাছ থেকেও নিয়মটি বুঝে নিতে পারো। খেলার ধাপসমূহ : 🔸ছক কাটা কাগজ থেকে দুইটি স্ট্রিপ কেটে নাও। তারপর একটি স্ট্রিপকে সমান তিন ভাগে ভাগ করে দুই ভাগ রঙ করবে। অর্থাৎ, অংশ রঙ করবে। একইভাবে, আরেকটি স্ট্রিপ সমান চার ভাগ করে,তিন ভাগ খাতায় বসিয়ে রঙ করে ফেলবে। অর্থাৎ, অংশ রঙ করবে (নিচের ছবি লক্ষ করো)। 🔸এবার রঙ করা অংশ দুইটি তুলনা করো- কোনটি বড় কোনটি ছোট। দেখবে যে তুলনা করতে পারছ না। কারণ, দুইটি স্ট্রিপ্রেই ভাগ করা অংশ এবং রঙ করা অংশ আলাদা। 🔸এবার তাহলে সমান সাইজের দুইটি আয়তাকার ছক আঁকো। ছক দুইটিকে ছক ক ও ছক খ এই দুইটি নাম দাও। প্রয়োজনে শিক্ষকের নির্দেশনা অনুসরণ করো। এরপর, ছক “ক” কে লম্বালম্বিভাবে তিন ভাগ করে তার দুই ভাগ রঙ করবে (অর্থাৎ, অংশ)। ছক “খ” তে আড়াআড়িভাবে চারটি দাগ দিয়ে তার তিন ভাগ রঙ করবে (অর্থাৎ, অংশ)। 🔸এর পরের ধাপে ছক- ক এর দাগগুলোর সমান করে ছক- খ তে আঁকো এবং ছক- খ এর দাগগুলোর সমান করে ছক- ক তে আঁকো (পরের ছবি লক্ষ করো)। তোমরা পর্যবেক্ষণ করবে যে দুইটি ছকের ঘর সংখ্যা একই। যেমন: উপরিউক্ত চিত্রের ভাগসংখ্যা হয়ে যাবে ১২টি (নিচের ছবি)। মোট ঘর সংখ্যাকে হর বলতে পারি এবং এই সংখ্যাটিকে ছকের উপরে লেখা ভগ্নাংশের হরের স্থানে লিখে ফেলো। 🔸এবার তোমরা তোমাদের রঙ করা অংশের ঘর সংখ্যা গুনে বের করো। তোমরা গুনে যেই সংখ্যাটা পাবে সেই সংখ্যাটাকে উপরে লিখো। যেমন: নিচের ছবিতে ক ছকে রঙ করা অংশ ৮টি এবং খ ছকে রঙ করা অংশ ৯টি। এই সংখ্যা দুইটি, ভগ্নাংশ দুইটির লব। এবার নিচের ছবির মতো করে লেখো। |
🔹দুইটি ভগ্নাংশের ভাগ সংখ্যা (হর) একই। তাহলে, শুধুমাত্র রঙ করা অংশ (লব) দেখেই বলে দেয়া যাচ্ছে কোন ভগ্নাংশটি বড় হবে। এখানে , সুতরাং হবে। 🔹এরকম আরও কয়েকটি উদাহরণ অনুশীলন করো। তোমার কাজটি শিক্ষককে দেখিয়ে নাও। |
উপরের আলোচনা থেকে আগের প্রশ্নের উত্তর কী পেলে?ছবি-৫ আরেকবার দেখো এবং নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।প্রশ্ন- ১ : বন্ধু- ১ এবং বন্ধু- ৪ এর তরমুজের অংশ তুলনা করে বলো, কে বেশি অংশ পেলো? উত্তর : প্রশ্ন- ২ : বন্ধু- ২ এবং বন্ধু- ৫ এর তরমুজের অংশ তুলনা করে বলো, কে বেশি অংশ পেলো? উত্তর : প্রশ্ন- ৩ : বন্ধু- ১ এবং বন্ধু- ৫ এর তরমুজের অংশ তুলনা করে বলো, কে বেশি অংশ পেলো? উত্তর : |
এবার একটি মজার বিষয় খেয়াল করো, প্রশ্ন-১ ও প্রশ্ন-২ নং এ তোমরা খুব সহজেই উত্তর খুঁজে বের করতে পারলে, কিন্তু প্রশ্ন-৩ এর ক্ষেত্রে তোমরা একই নিয়মে উত্তর খুঁজে পেলে না, তাই না? প্রশ্ন-৩ এর ক্ষেত্রে কী পার্থক্য পেয়েছিলে চিন্তা করো।
পার্থক্যটি হলো এখানে প্রতিটি ভগ্নাংশের হর আলাদা। এদের মধ্যে তুলনা করতে হলে প্রতিটি ভগ্নাংশের হরকে একই হরে পরিণত করতে হবে। একই হরে পরিণত করতে হলে আমাদের প্রথমে ঐ দুইটি হরের লসাগু বের করতে হবে। কীভাবে লসাগু, হিসাব করতে হয় তা তোমরা আগের শ্রেণিতে জেনে এসেছো।
উদাহরণস্বরূপ, এবং ভগ্নাংশ দুইটির হর আলাদা। এই দুইটির মধ্যে কোনটি বড় আমরা যদি বের করতে চাই তাহলে প্রথমে আমাদের ৩ ও ১০ এর লসাগু বের করতে হবে। ৩ ও ১০ এর লসাগু হলো ৩০। তাহলে প্রতিটি ভগ্নাংশের হরকে ৩০ বানাতে হবে। ভগ্নাংশের হরকে ৩০ বানানোর জন্য এর লব ও হরকে ১০ দ্বারা গুণ করতে হবে। তাহলে , পরিণত হবে। একইভাবে, হবে । এবার তুলনা করে দেখা যাচ্ছে যে, এবং এর মধ্যে ভগ্নাংশটি বড়। সুতরাং, এবং ভগ্নাংশ দুইটির মধ্যে ভগ্নাংশটি বড়।
অপ্রকৃত ভগ্নাংশ ও মিশ্র ভগ্নাংশ |
এবার আমরা রাতুলের কাছে ফিরে যাই। রাতুল পরের দিন স্কুলের টিফিনে মায়ের তৈরি ৫টি পিঠা নিয়ে গেল। টিফিনের সময় তার বন্ধু মিলি, হারুন, তানিয়ার সাথে পিঠা ভাগ করে খাবে। কিন্তু এই ৫টি পিঠাকে ৪ জনের মধ্যে কীভাবে ভাগ করবে – রাতুল ভাবতে লাগল। তখন তানিয়া বলল, এখানে ৫টি পিঠা আছে এবং আমরা ৪ জন এর মধ্যে ভাগ করব, তাহলে আমরা প্রত্যেকে ১টি করে পিঠা নিব এবং সর্বশেষ পিঠাটি ৪ ভাগ করে প্রত্যেকে ১ ভাগ করে নিব। তাহলে তারা প্রত্যেকে পিঠার কত অংশ পাবে সেটা কি যোগ করে বের করা সম্ভব? তোমরা পঞ্চম শ্রেণিতে ভগ্নাংশের যোগ ও বিয়োগ সম্পর্কে জেনেছ। সেই অনুসারে নিচের যোগটি করে খালি ঘরে লেখো।
উপরের আলোচনা থেকে আমরা বুঝতে পারলাম যে রাতুল ও তার বন্ধুরা প্রত্যেকে পিঠার অংশ পাবে। এখানে একটি বিষয় খেয়াল করে দেখো, ভগ্নাংশটির লব হরের চেয়ে বড়। এ ধরনের ভগ্নাংশ অপ্রকৃত ভগ্নাংশ (Improper fraction) নামে পরিচিত। আবার ভগ্নাংশটিকে আমরা ভেঙ্গে আকারে লিখতে পারি, যেখানে ভগ্নাংশটিকে একটি পূর্ণ সংখ্যা ও একটি ভগ্নাংশের সমন্বয়ে লেখা হয়েছে। এরূপ, একটি পূর্ণ সংখ্যা এবং একটি ভগ্নাংশ মিলে যে ভগ্নাংশ পাওয়া যায় তা হলো মিশ্র ভগ্নাংশ (Mixed fraction)। ভগ্নাংশটি একটি মিশ্র ভগ্নাংশ । সুতরাং আমরা বুঝতে পারলাম যে মিশ্র ভগ্নাংশ আলাদা কিছু নয়। আবার ভগ্নাংশটিকে আমরা ভেঙ্গে ১ আকারে লিখতে পারি, যেখানে ভগ্নাংশটিকে 8 একটি পূর্ণ সংখ্যা ও একটি ভগ্নাংশের সমন্বয়ে লেখা হয়েছে। এরূপ, একটি পূর্ণ সংখ্যা এবং একটি ভগ্নাংশ মিলে যে ভগ্নাংশ পাওয়া যায় তা হলো মিশ্র ভগ্নাংশ (Mixed fraction)। ১ - ভগ্নাংশটি একটি মিশ্র ভগ্নাংশ । সুতরাং আমরা বুঝতে পারলাম যে 8 মিশ্র ভগ্নাংশ আলাদা কিছু নয়। |
অপ্রকৃত ভগ্নাংশকে ( ) আমরা মিশ্র ভগ্নাংশ আকারে () প্রকাশ করতে পারি।
এবার চলো মিশ্র ভগ্নাংশ থেকে কীভাবে অপ্রকৃত ভগ্নাংশ পাওয়া যায় তা দেখে নেই।
👤 একক কাজ : নিচের সমস্যাগুলো তোমার খাতায় করে শিক্ষকের কাছে জমা দাও । |
---|
১। নিচের রঙ করা অংশগুলো ভগ্নাংশ আকারে লিখে প্রকাশ করো।
২। ছবির পাশে দেয়া ভগ্নাংশগুলো প্রকাশের জন্য ছবির নির্দিষ্ট অংশ রঙ করো। একটি করে দেখানো হলো।
৩। নিচের ৪ জোড়া ভগ্নাংশের মধ্যে কোনটি বড় এবং কোনটি ছোট খুঁজে বের করো।
৪) নিচের মিশ্র ভগ্নাংশগুলোকে কাগজে গ্রিড এঁকে অপ্রকৃত ভগ্নাংশে প্রকাশ করো।
ক)
খ)
গ)
চলো গ্রিডের সাহায্যে ভগ্নাংশের যোগ ও বিয়োগের কৌশল জেনে নেই।