ভূমিকম্প এমন একটি ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ যা মাত্র কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে কোনো একটি দেশ বা অঞ্চল পুরোপুরি ধ্বংস করে দিতে পারে। এমনকি বড় ভূমিকম্প নদীর গতিপথও পরিবর্তন করতে পারে। ১৭৬২ সালে এক ভয়াবহ ভূমিকম্পের ফলে আমাদের অন্যতম প্রধান নদী ব্রহ্মপুত্রের গতিপথ বদলে গিয়েছিল। আমাদের দেশে এখন পর্যন্ত বড় ধরনের ভূমিকম্প না হলেও বিশেষজ্ঞদের মতে বাংলাদেশ বড় ধরনের ভূমিকম্প ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।
পাশের ছবিতে বাংলাদেশ এবং তার আশপাশের ঘটে যাওয়া ভূমিকম্পগুলো দেখানো হয়েছে। ছবিতে নিশ্চয়ই দেখছ, বাংলাদেশের ভেতরে সাম্প্রতিককালে কোনো বড় ভূমিকম্প হয়নি, শুধু আশপাশের দেশে ঘটে যাওয়া ভূমিকম্পন অনুভূত হয়েছে। যেহেতু অতীতে এই অঞ্চলে বড় ভূমিকম্প হয়েছে, তাই আমাদের ধরে নিতে হয় ভবিষ্যতেও হতে পারে। সেটি কখন হবে যেহেতু আমাদের জানা নেই, তাই সব সময়েই প্রস্তুত থাকতে হবে।
বন্যা বা ঘূর্ণিঝড়ের মতো ভূমিকম্পের জন্য আগে থেকে কোনো সতর্ক বার্তা পাওয়া সম্ভব নয়। এটি যে কোনো জায়গায় যে কোনো সময়ে আঘাত হানতে পারে, তাই ভূমিকম্পের জন্য সব সময় সতর্ক থাকতে হয়। ভূমিকম্পের বেলায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো নিয়ম মেনে ঘর-বাড়ি ও অন্যান্য স্থাপনা তৈরি করা। আমাদের দেশে যে সকল বড় বড় দালান-কোঠা তৈরি করা হয়, সেখানে অবশ্যই ভূমিকম্প প্রতিরোধক নীতিমালা মেনে তৈরি করতে হবে। তা না হলে বড় ধরনের ভূমিকম্প হলে তা ভয়াবহ পরিণাম ডেকে আনতে পারে। সাধারণভাবে ভূমিকম্পের নিরাপত্তার জন্য নিচের বিষয়গুলো মেনে চলা যেতে পারে।
১. বাসায় আগুন নেভানোর ব্যবস্থা রাখতে হবে।
২. প্রাথমিক চিকিৎসা কিট, শুকনা খাবার এবং পানি রাখার ব্যবস্থা করতে হবে।
৩.বাসায় গ্যাস, ইলেকট্রিসিটি এবং পানির সরবরাহ কীভাবে বন্ধ করতে হয় সেটি জেনে রাখতে হবে।
১. আমাদের দেশে প্রায় সব সময়েই আমরা শত শত কিলোমিটার দূরের কোনো ভূমিকম্পের রেশ অনুভব করে থাকি। কাজেই কোনো অবস্থাতেই অহেতুক ভয়ে এবং আতঙ্কে দিগ্বিদিক জ্ঞানশূন্য হওয়া যাবে না। মাথা ঠান্ডা রাখলে বড় ভূমিকম্পের বিপদ থেকে নিজেকে রক্ষা করা সম্ভব।
২. যদি ভূমিকম্পটি একটি বড় ভূমিকম্প হয়, তুমি যদি ঘরের ভেতরে থাকো, তাহলে ভিতরেই থাকো, বাইরে যাওয়ার চেষ্টা কোরো না। কখনোই লিফট দিয়ে নামার চেষ্টা কোরো না। কাচের জানালা থেকে দূরে থাকো এবং দেয়ালের পাশে দাড়াও। প্রয়োজনে শক্ত টেবিলের নিচে আশ্রয় নাও।
৩. তুমি যদি ঘরের বাইরে থাকো, তাহলে বাইরেই থাকো, ঘরের ভেতরে ঢোকার চেষ্টা কোরো না। ইলেকট্রিক পোল কিংবা বড় বিল্ডিং থেকে দূরে সরে যাও, উপর থেকে মাথার উপর কিছু পড়তে পারে।
8. কোনোভাবেই ম্যাচ জ্বালিও না, গ্যাস পাইপ ভেঙে বাতাসে গ্যাসের মিশ্রণ আগুনের জন্যে খুবই বিপজ্জনক।
১. বড় ভূমিকম্প হয়ে থাকলে এবং কেউ আহত হলে তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দাও। গুরুতর আহত হলে হাসপাতালে নাও, তবে মনে রেখো সত্যিকারের বড় ভূমিকম্প হলে হাসাপাতালে অসংখ্য মানুষকে জরুরি চিকিৎসা দিতে হয়। কাজেই হাসপাতালে যার প্রয়োজন বেশি তাকে আগে চিকিৎসা দেয়া হবে ।
২. পানি, ইলেকট্রিসিটি, গ্যাস লাইন পরীক্ষা করো, যদি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকে সরবরাহ বন্ধ করে দাও। বাসায় গ্যাসের গন্ধ পেলে ঘরের দরজা-জানালা খুলে ঘরের বাইরে যাও।
৩. রেডিওতে খবর শোনার চেষ্টা করো। টেলিফোন খুব কম ব্যবহার করবে। জরুরি কাজের জন্য ত্রাণ বাহিনীকে টেলিফোন নেটওয়ার্ক ব্যবহার করতে দাও।
৪. ক্ষতিগ্রস্ত বিল্ডিংয়ের বাইরে থেকো। ভাঙা কাচ ইত্যাদিতে যেন পা কেটে না যায়, সে জন্য খালি পায়ে হাঁটাহাঁটি করবে না।
৬. ধ্বংসপ্রাপ্ত বিল্ডিংয়ের নিচে আটকা পড়লে উদ্ধারকারী দল এলে তাদের সংকেত দেয়ার জন্য কোনো কিছুতে নিয়মিতভাবে আঘাত দিয়ে শব্দ করে দৃষ্টি আকর্ষণ করো।
৭. বড় ভূমিকম্প হলে পরে, আফটার শক হিসেবে আরো ভূমিকম্প হতে পারে, সে জন্যে প্রস্তুত থেকো।
আরও দেখুন...